কভি হার, কভি জিৎ : রমিত চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ০৬ মার্চ ২০২৪ | ১৬১৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৫
আর দায় নেই চুপটি থাকার, বলব যা আজ চাইবে মন,
ভক্তকূলও ঝুঁকিয়ে মাথা, ঘুরবে পিছে সর্ব ক্ষণ।
গান্ধীবাড়ির হিসাব জিগাই, ঠিক ভুলে যাই আম্বানি,
নীরব, মেহুল ? - দূর মহাশয়, সবার কি আর নাম জানি?
নারদাতেও যেমনি টাকা, নেয়নি মোটে ভোন্দুও,
গ্রিটিংস কার্ডেই খাম ভরা সব, পাঠিয়েছিল বন্ধু ওর।
মহারাজা ছনেন্দ্রনাথের রংবেলুন ও একপাটি চটির গল্প : রমিত চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : দোল | ২৬ মার্চ ২০২৪ | ১৬৯৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ২২
যাইহোক, নিচের পরিস্থিতি দেখে ছেনু ঠিক করল, আহত সৈন্যদের বোমা মারার কোনো মানে হয়না। তাদের আশেপাশের কিছু বাড়ির ছাদ থেকেও মাঝে সাঝে শেলিং হচ্ছে, তাই যেসব সৌভাগ্যবান সেসব এড়িয়ে তাদের বাড়ি পর্যন্ত বেরঙিন, বেদাগ জামায় আসতে পেরেছে, শুধুমাত্র তাদেরকেই সে নিশানা করবে। পুঁচকে হলেও তার হাতের টিপ মারাত্মক। সে রেলিংয়ের ফাঁক দিয়ে তাক করে টপাটপ রং-বেলুন ছুঁড়ছে আর গায়ে ঠিকমতো পড়লেই বারান্দা থেকে ছুট। এভাবে অন্তত গোটা ছাব্বিশ লোককে সে উজালার খরিদ্দার বানালেও দুঃখের বিষয় উজালা কোম্পানি এতবড় উপকারের প্রতিদান কোনো দিনই তাকে দিতে পারেনি, হয়ত বিষয়টা তাদের গোচরেই আসেনি, কে জানে।
মহারাজ ছনেন্দ্রনাথ ও মার্কণ্ডেয়র চিঠি : রমিত চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১২৭৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৮
এক ঝিমধরা চৈত্রের আধবিকেলে ভুরুদুটো কুঁচকে ও মুখটা গোমড়া করে মহারাজ ছনেন্দ্রনাথ ওরফে ছেনু একলা ছাদে উঠে বসেছিলেন আর মাঝেমাঝে আকাশের দিকে তাকিয়ে কি জানি কি ভাবছিলেন। হাওয়ায় এখনো গরম তেমন নেই, সূর্যটা ঝাপসা মেঘে ঢাকা কিন্তু চারদিকে একটা গুমোট ভাব চেপে বসেছে। এমনি সময় কাঁধে কেউ একটা হাত এসে হাত রাখায় মহারাজ পিছন ফিরে তাকালেন, এ হল তাঁর পেয়ারের কোটাল বেনারসিপ্রসাদ যাকে তিনি আদর করে বেনা বলে ডাকেন।
-কি হল বাবু, একলা ছাদে এসে বসে আছো, যাও যাও খেলোগে যাও।
-আমার আর ভাল্লাগে না।
-ভাল্লাগেনা? কেন কি হয়েছে?
ভুলভুলাইয়ায় ছনেন্দ্রনাথ : রমিত চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : গপ্পো | ২৭ এপ্রিল ২০২৪ | ১০৭০ বার পঠিত | মন্তব্য : ২১
সেদিন সকালে তেতলার পিসিমার ঘরে বসে এক মনে ড্রয়ার ঘাঁটছিল ছেনু। ওটা আসলে মহারাজ ছনেন্দ্রনাথের রত্ন ভান্ডার। যত রাজ্যের উদ্ভট জিনিসের ভিড় থেকে মনমতো জিনিসগুলো নেড়েচেড়ে দেখতে দেখতে একটা বল্টু লাগানো লম্বা স্ক্রু ভারি পছন্দ হয়েছে, বল্টুটা খুলতে যাবে, ঠিক এমন সময় দোতলা থেকে হইচই কানে এল। শেয়ালদার মতো ব্যস্ত এলাকায় হট্টগোল তো সর্বক্ষণ লেগেই আছে, কিন্তু এই হইচই এর শব্দটা ভারি মিঠে, আর তার মধ্যে একটা চেনা চেনা গলাও উঁকি দিচ্ছে, তাই ছেনু আর থাকতে পারলো না, স্ক্রুটা ফেলে রেখে সিঁড়ি দিয়ে এক দৌড়ে নিচে নেমে এল।
মহারাজ ছনেন্দ্রনাথের নামরহস্য : রমিত চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : গপ্পো | ২৫ মে ২০২৪ | ৮৬৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩০
ব্যস, এই সুযোগের অপেক্ষাতেই তো ছেনু ছিল, এক ছুটে দুধের গ্লাস হাতে তেতলার সিঁড়িতে উঠে পড়ল। এবার পা টিপে টিপে এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে সিঁড়ি দিয়ে তেতলায় পৌঁছে ভালো করে তাকিয়ে দেখে নিলো কেউ আছে কিনা। যখন দেখতে পেল চারিদিক ফাঁকা, কেউ তার দিকে নজর রাখছে না, তখন গ্লাস থেকে এমন করে এক চুমুক দুধ খেলো, যাতে চলকে কিছুটা দুধ মুখ বেয়ে নেমে আসে, তারপর একটা বিচ্ছিরি মুখ করে কোনোক্রমে ঢোঁক গিলে সেই এক চুমুক দুধ গলা দিয়ে চালান করে নিচু হয়ে বসে ড্রেনের মুখটায় বাকি দুধটা আস্তে করে ঢালতে লাগল। ঢালতে ঢালতেও কড়া নজর চারদিকে, এই বুঝি কেউ দেখে ফেলল। ধীরে ধীরে পুরো দুধটাই ঢালা হয়ে গেলে আস্তে করে উঠে আবার সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এল।
মহারাজ ছনেন্দ্রনাথ ও বিদেশি চকলেটের বাক্স : রমিত চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : গপ্পো | ১৫ জুন ২০২৪ | ১৪৮৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৮
আজকে সকালে তেতলার পিসিমার কাছে যে চিঠিটা এল, দাদা মানে পিসিমার ছেলে অনেকক্ষণ ধরে পিসিমাকে পড়ে পড়ে শোনাচ্ছে। ছেনু গিয়ে দু'বার দরজার সামনে থেকে ঘুরেও এল, কত লম্বা চিঠি রে বাবা! শেষে আর থাকতে না পেরে ছেনু গিয়ে পিসিমাকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করেই ফেলল, কার চিঠি গো? দেখা গেল অদ্ভুত ব্যাপার, পিসিমা হাসছে, অথচ চোখের কোণে জল, পিসিমা হেসে বলল, কে আসছে জানিস? কান্টু আসছে রে কান্টু, তোর কান্টু দাদা। এদ্দিন পর ও আসছে, শুনে বিশ্বাসই করতে পারছি না, তাই তো বারবার করে শুনছি।
ছেনু ছোট্ট থেকে পিসিমার কাছে কান্টুদার অনেক গল্প শুনেছে, কিন্তু কোনোদিন কান্টুদাকে চোখে দেখেনি আজ পর্যন্ত। অবশ্য দেখবেই বা কি করে, ছেনুর জন্মের আগেই তো পিসিমার বড় ছেলে কান্টুদা সেই সাত সমুদ্দুর তেরো নদী পার করে কি একটা দেশ আছে, কানাডা না কি নাম, সেইখানে চলে গিয়েছিল। সেই থেকে সেখানেই থাকে আর মাঝে মধ্যে চিঠি লিখে খবরাখবর জানায়। শুরুর দিকে বাংলায় লিখত বটে কিন্তু পরে কি জানি কেন শুধু ইংরেজিতেই চিঠি পাঠায়, তাই অন্যরা পিসিমাকে তর্জমা করে পড়ে পড়ে শোনায় কি লিখেছে।
মহারাজ ছনেন্দ্রনাথ, খেলনাবাড়ি আর পক্ষীরাজ ঘোড়ার গল্প : রমিত চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : গপ্পো | ১৩ জুলাই ২০২৪ | ৯০৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৩
ছেনু দেখল, সত্যিই তো, পকাইকে তো এবার চড়তে দিতেই হয়, বেচারি এতক্ষণ ধরে অপেক্ষায় রয়েছে। তার ওপর ওরই ঘোড়া যখন। আজ সকালে পকাইদের বাড়ি এই ঘোড়াখানা আসতেই পকাই তাড়াতাড়ি ছেনুকে ডেকে এনেছে। সেই ঘোড়াখানা দেখেই তো ছেনু আনন্দে আত্মহারা। উফ্, ঘোড়া বটে একখানা। কি সুন্দর লালের ওপর সাদা,কালো, হলুদ দিয়ে রং করা, পিঠের উপর চওড়া করে বসার আসন পাতা, ঘাড়ের কাছে কেশরের পাশ দিয়ে আবার ধরার জন্য দুটো হাতল রয়েছে, খাড়া খাড়া কান, সাথে তেমনি টানা টানা চোখ - দেখেই চোখ জুড়িয়ে চায়। এ যা ঘোড়া, পক্ষীরাজ না হয়ে যায় না! সত্যিই, মহারাজ যেন এমন একটা ঘোড়ারই সন্ধানে ছিলেন এতদিন ধরে। তাই সে ঘোড়া দেখে আর লোভ সামলাতে পারেননি, পকাইয়ের জন্য আনা ঘোড়ায় নিজেই টপ করে বসে পড়েছেন। আর ঘোড়ায় চেপে টগবগ টগবগ করে সেই যে ছুটিয়েছেন, ডানা মেলে এদিক ওদিক ঘোরার মধ্যে আর সময়ের হুঁশ ছিল না। পকাই ধৈর্য হারিয়ে আবার ঘরে চলে গিয়েছিল, ফিরে এসেও যখন দেখল মহারাজের ঘোড়ায় চড়া শেষ হয়নি, তখন চিৎকার জুড়তেই ছেনুর টনক নড়ল।
মহারাজ ছনেন্দ্রনাথ আর বিরাট রাজার মাঠ : রমিত চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : গপ্পো | ২৭ জুলাই ২০২৪ | ৯৭১ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৫
বড়দা তখন আর কথা বলবে কি, চোখের সামনে যেন দেখতে পাচ্ছে মাঠটা পুরো গমগম করছে, ভাঙা বাড়িটাও গোটা হয়ে গিয়ে ঝকঝকে তকতকে, লোকে লোকে জায়গাটা ছয়লাপ। মাঠ জুড়ে বড় বড় টেবিল পাতা, পাশে সার দিয়ে চেয়ার। ওয়েটাররা রান্নাঘর থেকে প্লেটে করে সব গরমাগরম খাবার দাবার এনে টেবিলে রেখে যাচ্ছে। বড় ঘরটা জুড়েও সব বড় বড় শ্বেত পাথরের টেবিল রাখা।
সেখানেও লোক ভর্তি। ওয়েটাররা এদিক সেদিক ছোটাছুটি করছে। রান্নাঘরে বিশাল বিশাল হাঁড়ি, ডেকচি, কড়া নিয়ে ঠাকুররা সব রান্না করছে। বাড়িটার সামনে জ্বল জ্বল করছে নাম- 'শিয়ালদা রেস্টুরেন্ট'। বড় ঘরের এক কোণায় সাদা গদি পাতা। তাতে বালিশে হেলান দিয়ে আয়েশ করে বাবা বসে আছেন। পাশের টেবিলে ক্যাশ বাক্স সামলিয়ে হিসেব দেখছে জগন্নাথদা। ওয়েটাররা এসে মুখস্ত হিসেব বলছে আর সেই অনুযায়ী লিখে নিচ্ছে পরপর। ঠিক যেন কালকের ঘটনা।
মহারাজ ছনেন্দ্রনাথ ও চলচ্চিত্তচঞ্চরি : রমিত চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : গপ্পো | ১০ আগস্ট ২০২৪ | ৯১১ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৮
কিন্তু সিনেমা ছেনুকে ছাড়লে তবে তো। আবার কিছুদিন পর একদিন খবর এলো জামাইবাবুদের অফিস থেকে নাকি পূরবীতে 'ঝিন্দের বন্দি'-র স্পেশ্যাল শো এর বন্দোবস্ত করা হয়েছে। জামাইবাবু ছেনুকে এসে বলল, "দেখো এটাতে কিন্তু ভূতটুত কিচ্ছুটি নেই। খুব বিখ্যাত সিনেমা, ভীষণ ভালো লাগবে। আর সিনেমাহলে ভয় পাওয়ার দুর্নাম ঘোচানোর এটাই সুবর্ণ সুযোগ।" তা ছেনুও সেই শুনে রাজি। জামাইবাবুর অফিসের অনুষ্ঠান বলে কথা, সেজেগুজে যেতে হবে। এই বারের পুজোয় ওকে যে সুন্দর কোটটা কিনে দিয়েছিল জামাইবাবু, ওটাই পরে যাওয়া মনস্থির করল। যাওয়ার দিন সকাল থেকে ছেনু চান টান করে চুল আঁচড়ে তৈরি। হাফ প্যান্টের সাথে কোটটা মানিয়েছেও খুব ভালো। টাইম মতো জামাইবাবু চলে এলো ওকে নিতে। ওখানে গিয়ে হলটা দেখে তো ছেনুর ভারি ভালো লাগল। অনেক লোকও এসেছে। সবার সাথে প্রথম বারের মতো ছেনু কোনো সিনেমা হলের মধ্যে ঢুকল। ঢুকেই দেখে সামনে বিশাল সাদা পর্দা। এখানেও সেই ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট এর মতো পরপর চেয়ার পাতা। প্রথমে বেশ কয়েকজন মিলে প্রদীপ জ্বালানোর পর, হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান শুরু হল। সেটা শেষ হতেই নানারকম গুরুগম্ভীর বক্তৃতা। একে একে সব মিটলে, শুরু হল আসল আকর্ষণ - সিনেমা।
নীলাচলে ছনেন্দ্রনাথ : রমিত চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : গপ্পো | ২৪ আগস্ট ২০২৪ | ১০০৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৮
ওদিকে বেড়ানোর গন্ধে গন্ধে ছোদ্দি আর ছেনু চলে এসেছে দৌড়ে দৌড়ে। ছেনু বলল, আমার তো আপিস আর কলেজ কিচ্ছুটি নেই, আমিই নিয়ে যাব তোমায়। আর ছোদ্দি জানাল তার রোজ রোজ ইস্কুল যেতে মোটেই ভাল্লাগেনা। তাই ক'দিন ঘুরতে যাওয়ার প্রস্তাবে তার ভোট সবচে আগে পড়বে।
কিন্তু আমাদের মহারাজ যতই বীরপুরুষ হন, সেনাপতি না থাকলে কি আর যুদ্ধযাত্রায় বেরোনো যায়! তাই সবার সম্মতিক্রমে এই যাত্রার সেনাপতি হিসেবে বেনাকেই মনোনীত করা গেল। তার ওপরই দায়িত্ব পড়ল হলিডে হোম ঠিক করে সবাইকে নিয়ে পুরী ঘুরিয়ে আনার। বেনা তো এই দায়িত্ব পেয়ে খুব খুশি। সেও কোনোদিন পুরী যায়নি, নতুন জায়গা দেখা হবে, ঘোরাঘুরি হবে। বড়দা এরমধ্যে ওদের ট্রেনের টিকিটও কেটে নিয়ে এসেছে। ট্রেনের নাম আগেই বলেছি, পুরী এক্সপ্রেস, সেকেন্ড ক্লাস সিটিং, মানে বসে বসে যেতে হবে। যাক শেষ মুহূর্তে টিকিট পাওয়া গেছে এই ঢের।
ছোড়দার আগেই পুরী ঘোরা। খুব ছোট্টবেলায় মামা আর দিদিমার সাথে গিয়েছিল। তখন তো এরকম হলিডে হোম ছিল না, পাণ্ডার বাড়িতে আট আনা দিয়ে থাকত। ছেনু গিয়ে তাই ছোড়দার কাছে প্রশ্নের ঝাঁপি খুলে ফেলেছে," হ্যাঁরে, মা বলছিল, ওখানে নাকি এত্ত জল?"
- জল আছে তো, এত বড় সমুদ্র, জল থাকবে না!
- সমুদ্রটা কত বড়? আমাদের এই বাবুঘাটের গঙ্গার মতো?
- না না, বিশাল, বিশাল বড়। আর তাতে সব দোতলা সমান ঢেউ আসে। এক ঝাপটায় লোককে উড়িয়ে নিয়ে চলে যায়। আর সমুদ্রের ধারটা কেমন জানিস তো, পুরো বালি দিয়ে ঢাকা। ওই সামনের বাড়িটা তৈরি হওয়ার সময় এত বালি এসেছিল মনে আছে? তার থেকে অনেক অনেক বেশি বালি ওখানে।
- বাবুঘাটের মতো সবাই নাকি ওখানে গিয়েও চান করে? অত ঢেউ হলে চান করে কি করে?
- ওখানে বেশি দূর যেতেই নেই, গেলেই ভাসিয়ে নিয়ে চলে যাবে। নুলিয়ারা আছে, ওরা বাচ্চাদের ধরে ধরে সেই গভীর সমুদ্রে চান করাতে নিয়ে যায়, তারপর তাদের কি হয় কেউ জানেনা। খুব সাবধান! আর জলটা এমন নোনতা, চোখে মুখে ঢুকে গেলেই জ্বালা করে। আর ঢেউ এসে গেলে ওমনি ছুট্টে পালিয়ে যেতে হয়।
মহারাজ ছনেন্দ্রনাথের ধানবাদ অভিযান : রমিত চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : গপ্পো | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৭৮৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৫
একি! এখানেও এত জন উঠবে নাকি? আমরা তালে বসব কোথায়?, মহারাজ রীতিমতো ঘাবড়ে গিয়েছেন কাণ্ড দেখে। ঘাবড়ে যাওয়ার কারণ আছে বৈকি। এইটুকু ট্যাক্সির সামনের সিটে টপাটপ চার জনকে উঠে বসতে দেখে তিনি হাঁ হয়ে গেছেন। আগের গাড়িগুলোতেও কেমন আট দশজন করে লোক ঠেসেঠুসে উঠে পড়ছিল। এই গাড়িতে যে এত লোক ধরতে পারে এটাই মহারাজের ভাবনার বাইরে। এবার কি হবে ভেবেই ওনার দম আটকে আসছে। মামা পাশ থেকে আশ্বাস দিলো, না না, চিন্তা নেই, পেছনে শুধু চার জনই উঠবে আমাদের গাড়িতে, একটা সিট বেশি নেওয়া হয়েছে দিদিমার জন্য। পিছনে মহারাজ ছনেন্দ্রনাথ, মামা আর দিদিমাকে ঠেলেঠুলে আরও এক জন এসে চেপে বসল। মালপত্র যা কিছু ছিল সব ডিকিতে ঢুকিয়ে দেওয়া গেছে। ওদিকে সামনে চারজন বসেছে বললে ভুল হয়, কোনমতে এঁটে গেছেটাই সঠিক কথা, কিন্তু এর পর ড্রাইভারকাকুই বা বসবে কোথায়? দেখা গেল ড্রাইভার তো উঠলই আরেকজন লোকও উঠে পড়ল, সে নাকি সামনে নেমে যাবে। উঠে তো সবাই পড়েছে, এদিকে গাড়ির দরজা তো কিছুতেই বন্ধ হয়না। মহারাজ ভাবছিলেন, এ নিয়ে সবাই বুঝি ভয়ানক চিন্তায় পড়বে, কিন্তু কোথায় কি, দিব্যি নিশ্চিন্ত মনে একটা মোটকা মতো নারকেলের দড়ি বের করে ড্রাইভারকাকু খুব কষে দরজাটা আটকে দিল। আটকে দিল মানে একেবারে গাড়ির সথে ফট করে লেগে গেল, তা কিন্তু নয়, দরজা হাওয়াতেই দাঁড়িয়ে, তবু গাড়ির ফ্রেমের কিছুটা কাছাকাছি আনা গেল, সেটাই সান্ত্বনা। গাড়ি জোরসে ঝাঁকুনি দিলে কেউ অন্তত যাতে ছিটকে পড়ে না যায়। পড়ে গেলে ড্রাইভারেরই মুশকিল, একটা সিটের টাকা মার যাবে, তাই এই ব্যবস্থা - মামা উবাচ। এদিকে ড্রাইভারকাকুও অর্ধেক সিটের বাইরে বেরিয়ে আছে, কোনোমতে বাঁ হাত বাড়িয়ে স্টিয়ারিং ধরে আছে। ওইদিকটা পরের গাড়ির ড্রাইভার এসে শক্ত করে বেঁধে দিয়ে গেছে। শেষমেশ দড়িদরা বেঁধেছেঁদে গাড়ি ধানবাদ স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করল। রাস্তায় একগাদা ধুলো ওড়াতে ওড়াতে গাড়ি ছুটে চলেছে আর খানাখন্দে চাকা পড়লেই সব যাত্রীরা মিলে শূন্যে লাফিয়ে উঠছে।
পুজোর ভিড়ে ছনেন্দ্রনাথ : রমিত চট্টোপাধ্যায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : গপ্পো | ১০ নভেম্বর ২০২৪ | ৪৬৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৬
"ও কাকিমা, ওরা আমায় কিছুতেই ঢুকতে দিচ্ছে না, তুমি একটু বলে দাও না।"
ছেনুর মা ভেতরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে কার সাথে যেন কথা বলছিলেন, হঠাৎ পিছন থেকে এরকম ডাক শুনে অবাক হয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখেন কাঁদো কাঁদো মুখে হাফপ্যান্ট পরা একটা বাচ্চা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে, কোঁকড়া কোঁকড়া চুল, ছেনুর মতো একই বয়স বা এক দু বছর বড় হবে হয়তো।
ছেনুর মা, তাকে ডেকে বললেন, কি হয়েছে? তোমার নাম কি?
সে আরো কাঁদো কাঁদো মুখে জানাল, তার নাম চন্দন।
তার কথা থেকে জানা গেল প্যান্ডেলের সামনে হুটোপাটি করে খেলাধুলোর সময় ছেনু নাকি তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছে, এবং সে টাল সামলাতে না পেরে পড়বি তো পড় প্যান্ডেলের ওপর গিয়ে পড়েছে। এবং সেই পতনের ফলে প্যান্ডেলের এক জায়গার কাগজের সাজসজ্জা ফর ফর করে ছিঁড়ে যায়। প্যান্ডেলের লোকজন সেই অবস্থায় দেখতে পেয়ে চেপে ধরে বকাবকি করে, কিন্তু চন্দন পেছনে মুখ ঘুরিয়ে দেখে আসল অপরাধী পগারপার। ফলে এক তরফা সব বকুনি তাকেই শুনতে হয় আর প্যান্ডেলের ডেকোরেশন নষ্ট করার জন্য প্যান্ডেলের কাছে খেলাও বারণ হয়ে যায়। আজ যেই সে ওখানে খেলতে গেছিল, ওমনি ডেকরেটরের লোকজন হাতুড়ি নিয়ে তাড়া করেছে।