কিংবদন্তীর আড়ালে যা কিছু থাকতে পারে : বিপুল দাস
বুলবুলভাজা | বাকিসব : মোচ্ছব | ০১ জানুয়ারি ২০২০ | ১৮১১ বার পঠিত
কখনও পূর্ণচাঁদের আলোয়, কখনও সন্ধ্যার প্রায়ান্ধকারে একটা ঘোড়া ছুটে যায়। ঘোড়ার পিঠে দীর্ঘকায় এক পুরুষ। তার হাতে বন্দুক, আর তার কোলে নাকি এক সুন্দরী নারী বসে থাকে। ঘোড়াছুটেযাওয়া ওই পথের দুপাশ জুড়ে ছড়িয়ে যায় জমাটবাঁধা অসংখ্য ধূলিপিন্ড। প্রতিটি খন্ডের ভেতরে গল্প শোনা যায়। সেই গল্প কাঁধে তুলে নেয় কোনও পাগল কিংবা প্রেমিক। লোকজীবনের হাটেমাঠে, সিদলমাখা গরম ভাতের সঙ্গে, পালাগানের আসরে সেই গল্প শোনে জাপান ঘোষ, পূর্ণিমা বর্মন, ইছুপ মন্ডল।
নিভন্ত এই চুল্লিতে মা : বিপুল দাস
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ০৬ মে ২০১৬ | ১২২৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৮
তখনই সবাই জানতে পারে যে, এই দু’মুখো যন্ত্রটি আদতে ফরেনের মাল। সাগরবালার শ্বশুর অর্থাৎ অজাত ফরেনের বাবা ফরেন শব্দটির ধ্বনিমাধুর্যে বিমোহিত হয়ে পড়ে। খেতে নিড়ানি দিতে দিতে, পিঠের দাদ চুলকোতে গিয়ে, এমন কী রাতে বিছানায় তার বউ মালতীকে সোহাগ করার সময় ফলুই বর্মন ‘ফরেন’ শব্দের মায়ায় আচ্ছন্ন হয়। শব্দটি নিয়ে সে মুখের ভেতরে এধার ওধার করে। তখন ধানের গোছ, দাদনিসৃত রস ও মালতীর শরীরের উষ্ণতা পার হয়ে সে নতুন এক রকম সুখ টের পাচ্ছিল। মালতী সন্তানসম্ভবা সে ঠিক করে ব্যাটাছুয়া যদি জন্মায়, তবে তার নাম হবে ফরেন বর্মন। বিশেষত তার নিজের নাম ফলুই হওয়ায় ‘ফ’-এর বংশানুক্রমিক ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। এ-ও ঠাকুরের এক লীলা।
প্রলয় আসবে : বিপুল দাস
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১৪ অক্টোবর ২০১৬ | ১১২০ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
অরূপ প্রথমে ভেবেছিল কম্পিউটারে বেশিক্ষণ কাজ করার জন্য চোখে ব্যথা হচ্ছে। সবাই যেমন বলে, টানা কিছুক্ষণ কাজ করার পর একটু বিশ্রাম, সবুজ গাছপালার দিকে তাকিয়ে থাকা – সে রকম করতে শুরু করেছিল। তারপর একদিন দোল-পূর্ণিমার রাতে ছাদে বসে নীপার সঙ্গে গলা মিলিয়েছিল – ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান। হঠাৎ আকাশে তাকিয়ে সে দেখতে পেয়েছিল চাঁদের চারপাশে রামধনুর সাত রং নিয়ে একটা বৃত্ত। সে কথা শুনে নীপা খুব অবাক হয়ে বলেছিল – কই, না তো। তারপর একদিন বাসের হেডলাইটের চারপাশে সে রকম রঙিন বৃত্ত দেখল। কিন্তু অরূপ খুব অবাক হয় যে, এই রামধনু নীপা দেখতে পায় না।
অলীক মানুষঃ সৌন্দর্য ও বিষাদের প্রতিমা নির্মাণ : বিপুল দাস
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২০ আগস্ট ২০১৭ | ১১৭২ বার পঠিত
উপন্যাসটি বিবৃত হয় কখনও সহজ বর্ণনায়, কখনও লম্বা-নেকো সেপাই নামের এক পাহারাদারকে আচাভুয়ার মত দাঁড় করিয়ে মনোলগের আকারে, কখনও টুকরো সংলাপে। উপন্যাসে বিধৃত হয় মাটির মায়াবন্ধন, ভোগবাসনার এই দুনিয়া, জীবনের রহস্যময়তা, শফির ক্রমাগত মেটামরফোসিস, ক্রমশ কিংবদন্তীর দিকে উড্ডীন এক নাচার পিরের অসহায় আত্মসমর্পন এবং জীবনের প্রতি ঘৃণা ও ভালোবাসার টানাপোড়েনে তৈরি একটি আলো ও অন্ধকারের নকশাদার জামদানি। কিন্তু আশ্চর্য এই যে, ওই নক্শায় আলো ও অন্ধকারের চৌখুপি সমান উজ্জ্বল। এমন কী, অন্ধকার যেন তীব্রতায় আচ্ছন্ন করে প্রচলিত সমস্ত বোধ, আমাদের বেস্ট-সেলার গ্যাদগেদে রচনাসমূহ। নির্মাণকৌশলের ভেতরে চারিয়ে যাওয়া Negetivism এক অসামান্য দক্ষতায় প্রচলিত, মান্য এবং তথাকথিত শাশ্বত জীবনবোধকে অতিক্রম করে। অন্য এক অপরিচিত ভয়ংকর সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করায় পাঠককে। সাদা জিন ও কালো জিন সমস্ত উপন্যাসজুড়ে অদৃশ্য দোরঙা সুতোর বিনুনি বুনতে থাকে। লৌকিক আর অলৌকিকের দ্বন্দ্বে জমিনে ফোটে বিস্ময়কর কুসুম।
এই সব সন্দেহ : বিপুল দাস
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৮ এপ্রিল ২০১৮ | ১৮১৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
একটু বাদেই শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে অয়্যারলেসে খবর চালাচালি শুরু হয়ে যায়। হ্যালো চার্লি, নাম্বারপ্লেট ছাড়া একটা রহস্যজনক ওভারলোডেড ট্রাক কিছুতেই ধরা যাচ্ছে না। কোনও শব্দ না করে মুহূর্তে গাড়িটা ভ্যানিশ হয়ে যাচ্ছে। ওভার। হঠাৎ গুছাইতবাড়ি থানায় কারও মোবাইল থেকে একটা ফোন আসে। ভদ্রলোকের কালো মারুতি, শহরের বাইরে আম্বেদকর পার্কের সামনে উনি গাড়ির ভেতরে বসে ছিলেন। স্ত্রীকে স্টেশনে পৌঁছে দেবার জন্য ভদ্রলোক নিম্বার্ক হাউজিং কম্প্লেক্স থেকে রওনা হচ্ছিলেন। হঠাৎ দেখতে পান একটু দূরে ঝাঁকড়া শিরীষ গাছের নীচে মস্ত বড়, যেন অনেকটা অন্ধকার জমাট বেঁধে রয়েছে, যেন কালো প্লাস্টিকে-মোড়া একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে। ভদ্রলোক তার নিজের গাড়ির হেড-লাইট জ্বালাতেই আলো গিয়ে সেই গাড়ির সামনে পড়ল। তখনই তিনি দেখতে পান অনেক উঁচুতে ঝকঝকে দুটো আলো জ্বলে উঠল। কোনও শব্দ হল না, কিন্তু গাড়িটা এক সেকেন্ডেরও কম সময়ে উধাও হয়ে গেল।
রমাপদ চৌধুরীর ‘ভারতবর্ষ’ : বিপুল দাস
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩১ আগস্ট ২০১৮ | ২৪১৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
রমাপদ চৌধুরীর একটি বিখ্যাত ছোটগল্প ‘ভারতবর্ষ’। গল্পটি বহুচর্চিত। আপাত একটি গল্পের আড়ালে যে বার্তা তিনি দিয়েছেন, সেটি চিরকালের সংকটের কথা। একটি সার্থক গল্পের ভেতরে তো সব সময় অন্য একটি গল্প লুকিয়ে থাকে। একটি অন্তর্লীন মেসেজ থাকে মননশীল পাঠকের জন্য। নইলে গল্প তো ঘটনার হুবহু বর্ণনায় খবরের কাগজের রিপোর্টিং হয়ে যেত। এই গল্পেও সেই বার্তাটুকু রয়েছে। একটি জনজাতি, এ গল্পে প্রোটাগনিস্ট তাকেই ‘ভারতবর্ষ’ বলেছেন, মাহাতোগাঁয়ের কালো কালো মানুষগুলো কেমন করে ভিখারি হয়ে গেল – খুব নিরপেক্ষ ভঙ্গিতে সেই আখ্যান বর্ণিত হয় এই গল্পে।
অমিয়ভূষণঃ এক বিরল প্রজাতির লেখক : বিপুল দাস
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৯ মার্চ ২০১৮ | ৬৮২৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬২
অমিয়ভূষণ মজুমদারের জন্ম ১৯১৮ সালের ২২শে মার্চ। এ বছর তাঁর জন্মের শতবর্ষ পূর্ণ হতে চলেছে। কিন্তু এ কথাও আমাদের জানা এই বিরল প্রজাতির লেখকের জন্মশতবর্ষ সাহিত্যসংস্কৃতি জগতের প্রখর আলোর নীচে আসবে না। বিপণন কৌশলের অন্যতম শর্ত হয় সাধারণ্যে গ্রহণযোগ্যতা। প্রতিষ্ঠান তাই চায়। জনচিত্তজয়ী লেখমালা, চলচ্চিত্র, ক্রীড়া ও অন্যান্য বিনোদনের জন্য প্রচারের পাদপ্রদীপের আলো আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, তাকে আরও মহিমা দান করে কৌশলী প্রতিষ্ঠান। ব্যতিক্রমী স্রষ্টার জন্য থাকে কিছু মননশীল পাঠক, ব্যতিক্রমী সৃষ্টির গৌরবকে তাঁরা অনুধাবন করতে পারে, সেই রচনাকে তাঁরা কুর্নিশ জানায়। এই সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে নগণ্য। কিন্তু কালোত্তীর্ণ মহৎ সৃষ্টির তাতে কিছু আসে যায় না। সেখানেই অমিয়ভূষণ সৃষ্টি আলাদা হয়ে গেছে চলাচলের নিরাপদ পথ থেকে। আর এক মজুমদার, কমলকুমারের মতই তাকেও বিদগ্ধ পাঠক এবং সমালোচক ‘লেখকদের লেখক’ হিসেবে গণ্য করেছেন।
গল্পের ভাষা, ভাষার গল্প : বিপুল দাস
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১১ অক্টোবর ২০১৫ | ১৪০০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
আরও একটা ফ্যাক্টর কাজ করে। সেটা হল অনিশ্চয়তা আর রহস্যময়তা। কথক এমন ভাবে তার কথকতার জাল ছড়াতে থাকেন, সাদামাটা ঘরোয়া দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার বাইরে যেন একটা জাদুকরি কুহকজড়ানো বাতাস বইতে থাকে কথকতার আসরজুড়ে। রোজকার ঘামঝরানো পরিশ্রমের বাইরে কথক হয়তো এক জাদুগালিচার গল্প বলেন। হয়তো এক সন্তের গল্প বলেন যার কৃপায় বোবা কথা বলে, কাটামুন্ড জোড়া লেগে যায়। এমন জুতোর গল্প বলেন যেটা পায়ে দিয়ে ইচ্ছেমত দেশভ্রমণ করা যায়। এ অভিজ্ঞতা তো আপনাদের সবার আছে। মানুষের বুকের ভেতরে যে অসম্ভব বাসনাগুলো গোপনে লুকিয়ে থাকে, যে ফ্যান্টাসি আমরা গোপনে লালন করি, গল্পের রহস্যময়তা তাকে স্পর্শ করে। যেন ভারচুয়াল রিয়ালিটির ভেতর দিয়ে আমাদের বাসনার নিবৃত্তি হয়। এই আধো বুঝতে পারা, আধো বুঝতে না পারার ভেতরে স্ট্রেস থাকে। এই স্ট্রেস থেকে বেরিয়ে আসার জন্য যে গল্প শোনে, সে না-বোঝা রহস্যময়তার ভেতর থেকে আরও গল্প নিজের মত করে বিনির্মাণ করে নেয়। আর, অনিশ্চয়তা তো থাকবেই। কথক যদি কী হতে পারে, আসলে সেটা বিশাল একটা সাপ নয়, একটা মোটা দড়ি, কুমির নয়, শেষ পর্যন্ত দেখা গেল একটা গাছের গুঁড়ি – এসব আগেই বলে দেন, তবে তো সেটি আর গল্প থাকে না, সাংবাদিকসুলভ নিছক ঘটনার বিবরণ হয়ে ওঠে। নীরস সেই গল্প যেন ফোটোগ্রাফিক রিয়েলিটির মত কঠিন সত্য, গল্পের যে মাধুরী মানুষকে চিরকাল আবিষ্ট করে রেখেছে, সেই প্রাণলাবণ্যটুকু আর থাকে না।
পুনরুত্থান : বিপুল দাস
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : নববর্ষ ২০১৪ | ১৫ এপ্রিল ২০১৪ | ২৩৩৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
লাইব্রেরিতে সোভিয়েত দেশ খুব একটা কেউ পড়ত না। বরং ‘কালনাগিনীর প্রতিহিংসা’ কিংবা ‘মরণগুহার ভয়ংকর’ খোঁজ করেও পাওয়া যেত না। আমার কিন্তু সোভিয়েত দেশ ভালো লাগত। কী মসৃণ ঝকঝকে কাগজ, কী সুন্দর রঙিন ছবি। তখন অন্য কোনও পত্রিকায় রঙিন ছবি প্রায় দেখাই যেত না। নতুন পত্রিকা এলেই আমি প্রথমে পৃষ্ঠা খুলে গন্ধ শুঁকতাম। কাগজ থেকে, অক্ষর থেকে রাশিয়ার বাতাস ফুসফুস ভরে টেনে নিতাম। বুকের ভেতরটা বিশ্বাসে ভরে উঠত। মনে হত আমার শরীরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে লেনিনগ্রাদ, মস্কো, বাকু, আজারবাইজান, তাসখন্দের বাতাস। আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করতাম পৃথিবীর ভেতরে শ্রেষ্ঠ দেশ হচ্ছে ইউ এস এস আর। পত্রিকায় এক একজন লেখকের নাম খুঁজে পাই, লাইব্রেরি থেকে তাদের বই খুঁজে নিয়ে পড়ি। বাংলায় অনুবাদ। তুর্গেনিভ, গোগোল, তলস্তয়, দস্তয়েভস্কি। নিকোলাই অস্ত্রয়েভস্কির ‘ইস্পাত’ পড়ে তো দু’রাত ঘুমই হল না। আমারও ইচ্ছে করত মাতৃভূমি না বলে আমাদের দেশকে পিতৃভূমি বলে ডাকতে। সেই লেনিনগ্রাদ থেকে ভারখায়ানস্ক – পৃথিবীর আদ্ধেকটা জুড়ে তো ওরাই রয়েছে। যুদ্ধ হলে শুধু একটা বোতাম টিপবে, আমেরিকা ফিনিশ।
এই সময়ের ছোটগল্প : বিপুল দাস
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৫ আগস্ট ২০১৪ | ৯৯২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
লেখককে তো ইতিহাসসচেতন হতেই হয়। না হলে কীভাবে তিনি এই সভ্যতার, মানুষের মানুষ হয়ে ওঠার কথা লিখবেন। মানুষ কত দীর্ঘপথ পাড়ি দিল। কত ধর্মযুদ্ধের নামে অন্যায় যুদ্ধ, এখনও ডাইনির মাংসপোড়া গন্ধে উল্লাস শোনা যায়, কত সাম্রাজ্যের উত্থানপতন হল। এসব কিছু মন্থন করে জীবনের রহস্যময়তার কথা, কোনও এক সার সত্যের সন্ধান করে যান লেখক। পুরাণের নতুন পাঠ, মঙ্গলপাঠের নবনির্মাণ, যে পাশ্চাত্য লেখনরীতিকে মডেল করে একসময় আধুনিকতার সংজ্ঞা ঠিক করা হয়েছিল, তাকে অতিক্রম করে দেশজ পাঁচালি, ব্রতকথা, পুরাণ, মঙ্গলকাব্যের বিনির্মানের মধ্য দিয়ে,আমাদের লোককথা, উপকথাকে নতুন আঙ্গিকে লিখছেন অনেকেই। অন্যরকম শৈলীতে যারা লিখছেন, তাদের ভেতর রবিশঙ্কর বল, রামকুমার মুখোপাধ্যায়, গৌতম সেনগুপ্ত উল্লেখযোগ্য।
বর্ণসংকর : বিপুল দাস
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৪ এপ্রিল ২০২০ | ১৯৭১ বার পঠিত
রাধি, আজ ভরাপূর্ণিমা। চল, রাস খেলি।
কুঠিয়ালের গোমস্তা হয়তো তার প্রিয় এক নারীকে এমন কিছুই বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তখন আট দিক থেকে কুকুরের ডাক ভেসে এসেছিল। গোল চাঁদের দিকে মুখ তুলে ওরা কেন যে একসঙ্গে কাঁদে, কে জানে। রায়মশাই শুনলেন হাজারও বেজম্মার দল এক সঙ্গে হাসছে। সঙ্গে সঙ্গে টের পেলেন পরনের কাপড় নীচের দিকে ভেসে যাচ্ছে। দুর্গন্ধে ঘর ভরে গেছে। পিঠের ওপর কে যেন শক্ত জুতো দিয়ে চাপ দিচ্ছে। কে হাসছে ? রাধি ? রাধি, আমাকে শক্ত করে চেপে ধরে রাখ। আমি বেঁকে যাচ্ছি, ধনুকের মত বেঁকে যাচ্ছি। আঃ রাধি, সরে যা। আমার লজ্জা করছে।
বিছানা ভেসে যাচ্ছিল। মলমূত্র কোথা দিয়ে বেরোয় – সবাই জানে। কিন্তু প্রাণপাখি যে নবদ্বারের কোন দ্বার দিয়ে বেরোয় – কেউ সঠিক বলতে পারে না। রাধিকা খুব অবাক হয়ে দেখছিল তখনও বাবুর শরীরের গর্মি বোঝা যাচ্ছে।
কুয়াশা ও লালিগুরাস : বিপুল দাস
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ০৬ নভেম্বর ২০২০ | ২৪৬১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
আমার ফুলফুল ছিটওয়ালা জামায় নোংরা লেগেছে। হাত দিয়ে জামার ধুলো পরিষ্কার করছিলাম আমি। নিচু হয়ে জামার ওপর দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে দেখলাম যেখানে আমার শরীর ভয়ঙ্করভাবে ক্রমশ পাহাড়চুড়া হয়ে উঠছে, সেখানে কালো রং লেগে রয়েছে। কখন ? কখন এখানে কালো রং লেগেছে, কিছুই টের পাইনি। কাল রাতে এই কালো রং দিয়েই তো ফরেস্ট বাংলোর দেয়ালে বীরু লিখেছে – ওয়েলকাম টু গোর্খাল্যান্ড। আমার হঠাৎ মনে হল এই শরীর, শরীরে ফুটেওঠা লালিগুরাস, ঝাউপাতার মত আমার মাথার চুল, পাহাড়ি ঝোরার মত কখনও শুকনো, কখনও ভরাট আমার হাসিকান্না, শরীরের উপত্যকাজুড়ে চা-বাগান, অর্কিড-ক্যাকটাসের নার্সারি, মকাই-এর খেত – আমিই গোর্খাল্যান্ড।
উৎসকথা : বিপুল দাস
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : ইদের কড়চা | ২৮ মে ২০২১ | ২৪৬৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
এবার বাহাত্তর দেখল দিঘির মাঝখানে জল সামান্য পাক খাচ্ছে। ফাল্গুন চৈত্রে ফাঁকা মাঠে যেমন শুকনো বাতাসের ঘুর্ণি ওঠে, ধুলোবালি, শুকনো পাতা, ছেঁড়া কাগজ – সব শূন্যে তুলে নেয় সেই বাতাস, পুকুরের মাঝখানে ঠিক তেমন একটা জলের ঘুর্ণি আস্তে আস্তে নীচের দিকে টান দিতে শুরু করেছে। বাহাত্তরের কত বার ইচ্ছে হয়েছে গরম বাতাসের সেই ঘুর্ণির ‘চোখ’-এ ঢুকে পড়তে। দেখি না, কী হয়। যদি বাতাস তাকে শূন্যে উড়িয়ে নিয়ে যায়, যদি অনেক দূরের এক অচেনা দেশে নিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়, যেখানে কেউ তাকে হারামজাদা বলবে না, বাপঠাকুরদার নাম জানতে চাইবে না।