মুনাফেক : নাসরিন সিরাজ
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব ২০১৪ | ১৯ অক্টোবর ২০১৪ | ১০৪৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
ঢাকায় মদ বেশ দামী। বিশেষত বিদেশী মদের ওপর আবগারী শুল্কের হার অত্যন্ত বেশি। অবশ্য, রেজিস্টার্ড বারের বাইরে শস্তার মদও মেলে। ঢাকাতে আমি সর্বত্র দেখেছি “বাংলা মদ” নামে ঘরে তৈরি সবচেয়ে শস্তার মদ তৈরি এবং বিক্রি হতে। ঢাকার পুরনো এলাকাগুলোতে এই বাংলা মদ এখনও মেলে। এক লিটারের দাম ৩০০ টাকা। এর মূলত খরিদ্দাররা হল ঝাড়ুদার, চামার, ডোম, দেহব্যবসায়ী এবং ইঞ্জিনীয়ারিং আর মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা। আসলে এটা হল জীবনদায়ী ওষুধ বানাবার জন্য শস্তায় বিদেশ থেকে আমদানী করা মিথাইল মেশানো অ্যালকোহল। প্রত্যেক বছর এই বিষাক্ত মেথিলেটেড স্পিরিট খেয়ে প্রচুর লোকের মৃত্যু ঘটে।
অবশ্য, ঢাকায় খানদানী মদ্যপায়ীর সংখ্যাও কম নেই। তাদের কেউ কেউ সামাজিক স্তরের অনেক ওপরের দিকে বাস করেন, ঢাকার খানদানী এলাকায় তাঁদের বাড়ি, দামি গাড়ি, বিদেশি পাসপোর্ট থাকে তাঁদের কাছে, অথবা খানদানী ক্লাব বা ডিলারদের সঙ্গে তাঁদের ওঠাবসা থাকে। বাকিরা হল মুখ্যত নতুন প্রজন্ম, যারা কর্পোরেট মিডিয়া হাউস, মোবাইল ফোন কোম্পানি, এনজিও বা বিজ্ঞাপন এজেন্সির হাত ধরে বড় হয়েছে। এই বিশাল মাইনের প্রফেশনালরা খুব দ্রুত বেড়ে উঠেছে ১৯৯০-এর মাঝামাঝি থেকে, সামরিক শাসনের শেষ হবার পরে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের সাথে সাথে।
লং মার্চের ডায়েরি - পঞ্চম কিস্তি : নাসরিন সিরাজ
বুলবুলভাজা | অপর বাংলা | ১৮ এপ্রিল ২০১১ | ৭৩৮ বার পঠিত
সমাবেশস্থলে পৌঁছে প্রথমেই আমার নজরে পড়ল পথসভায় যোগদানকারীদের পায়ের কাছে পড়ে থাকা হলুদ রঙের গাঁদা ফুলের পাপড়ির ওপর। বুঝলাম জাতীয় কমিটির স্থানীয় কর্মীরা ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে লং মার্চের যাত্রীদের স্বাগত জানিয়েছেন। খেয়াল করে দেখি শাড়ী পরা, পরিপাটি করে চুল বাঁধা, আর কপালে মেরুন রঙের টিপ পরা একজন তরুণী তখনও একটি ডালা থেকে ফুলের পাপড়ি ছিটাচ্ছেন। ফুল দিয়ে অতিথিদের বরণ করে নেওয়ার রেওয়াজটি এর আগে আমি বিয়ে আর গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে দেখেছি। এ ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ এটিই আমার প্রথম। তাই এক্ষেত্রেও রেওয়াজটি সাধারণ কি না তা নিয়ে আমার মনে সন্দেহ দেখা দিল। তবে স্কুলে থাকতে টেলিভিশনে দেখতাম, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সামরিক শাসক হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদকে গলায় ফুলের মালা দিয়ে বরণ করা হত। সে এতো মালা পেত যে তাতে তার মুখ ঢাকা পড়ে যেত।
লং মার্চের ডায়েরি - নবম কিস্তি : নাসরিন সিরাজ
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ১৯ নভেম্বর ২০১১ | ৮৩২ বার পঠিত
স্বাধীনতা স্কয়ারে ততক্ষনে নেতৃবৃন্দ এসে হাজির। আহবায়কের মাইক্রোবাসে আজকের দিনের পত্রিকাগুলো রাখা। উপস্থিত নেতৃবৃন্দ কেউ সেই পত্রিকা পড়ছেন, কেউ চা খাচ্ছেন। এর মধ্যে স্থানীয় একজন লোক আমাদের কাছাকাছি এসে কি বলে যেন হৈ চৈ করতে থাকলো। আমরা যেদিকটায় দাঁড়ানো সেদিকটায় গায়ে গায়ে লাগানো মিষ্টির দোকান, নাপিতের দোকান আর ধোপার দোকান। দোকানগুলো খোলা ছিল। সিরাজগঞ্জবাসী যারা দোকানগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁরা হৈ চৈ করা লোকটিকে মাতাল বলে তাড়িয়ে দিলেন। এদিকে, আনু স্যার আমাকে দেখে নূর মোহাম্মদ ভাইকে আমার লেখা প্রকাশের কথাটা বললেন। সত্যি বলতে কি খসড়া তৈরী থেকে শুরু করে প্রকাশিত হবার আগ পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই আনু স্যার আমাকে লেখাটার অগ্রগতি বিষয়ে জিজ্ঞেস করতেন। নূর মোহাম্মদ ভাই সাথে সাথে পড়ে ফেললেন লেখাটা। তারপর আমার সাথে গল্প জুড়ে দিলেন যে আমি ফুলবাড়ীর খনি বিরোধী আন্দোলনের অংশগ্রহণকারীদের কার্যকারণ বুঝতে ঐধরণের প্রত্যয় ব্যবহার করেছি কি না। কথার ফাঁকে ফাঁকে আমরা দুজনেই অন্যান্য পত্রিকাগুলোর উপর চোখ বুলাচ্ছিলাম। সিরাজগঞ্জের স্থানীয় একটি প্রত্রিকায় গতরাতের সমাবেশের খবর ছেপেছে কিন্তু ঢাকাবাসী এলিটরা যে পত্রিকাগুলো পড়েন অর্থাৎ প্রথম আলো ও ডেইলী স্টার সেগুলোতে লংমার্চের খবর আসেনি। নিউ এইজ পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক আমাদের সাথে ভ্রমন করছেন তাই নিশ্চিত হয়েই বলা যায় যে তারা লংমার্চের দৈনিক খবরাখবর ছাপাচ্ছে। কিন্তু সেই কাগজ দেখার আগেই স্বাধীনতা স্কয়ারে মিছিল শুরু হয়।
লং মার্চের ডায়েরি - ষষ্ঠ কিস্তি : নাসরিন সিরাজ
বুলবুলভাজা | অপর বাংলা | ২০ জুন ২০১১ | ৯৬৪ বার পঠিত
ভাওয়াল কলেজে পৌঁছে দেখি এলাহী কাণ্ড। স্কুলের ক্লাসরুমের বেঞ্চগুলোকে বিছানার মত ব্যবহার করছেন অনেকে। অনেকে আবার বেঞ্চ সরিয়ে ঘর ফাঁকা করে মেঝেতে কার্পেট বিছিয়ে ঘুমানোর ব্যবস্থা করেছেন। রান্না করা হয়েছে ভাত, ডাল আর ডিমের তরকারি। প্লেট হাতে সারি ধরে দাঁড়িয়েছেন মার্চাররা। আনু স্যার এর মধ্যে আমাকে বললেন, "এই সবে শুরু। সামনে আরো অনেকবার ডিম খেতে হবে।' আমিও একমত হলাম। এতো মানুষের জন্য খাবারের আয়োজন করতে ডিমের মত শস্তা ও সহজ তরকারি আর হয় না। লাইনে দাঁড়িয়ে খাবার পেতে বেশীক্ষণ লাগে না। কোন রকম হৈ চৈ ছাড়াই খাবার বিতরণ তদারকি করছেন স্বেচ্ছাসেবকরা। আর মার্চাররাও খাবার নিয়ে কেউ বেঞ্চে বসেছেন, কেউ কেউ গোল হয়ে বসেছেন নিজ দলের সাথে স্কুলের মাঠে চাঁদের আলোয়। খেতে খেতে কেউ বা ছোট খাটো সাংগঠনিক মিটিংও সেরে নিচ্ছিলেন।
লং মার্চের ডায়েরি - সপ্তম কিস্তি : নাসরিন সিরাজ
বুলবুলভাজা | অপর বাংলা | ২৯ আগস্ট ২০১১ | ৯৮৫ বার পঠিত
"ক্যান আই আসক ইউ এ কোয়েশ্চেন?' আচমকা এই সময়ে এই প্রশ্নে আমার চিন্তায় ব্যাঘাত ঘটে। তাকিয়ে দেখি আমার এক সহযাত্রী আমাকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করছেন। ইনি ঢাকা থেকেই আমাদের সাথে এসেছেন প্রায় ২০ জনের একটি দল নিয়ে। প্রথম থেকেই লক্ষ্য করছি বাসের আসন দখল নিয়ে ক্ষণে ক্ষণে অন্যদের সাথে তারা বাক বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ছেন। তাদের প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন আমার কাছে প্রথম দিনই ব্যতিক্রম লেগেছিল কারণ সেগুলো অন্যদের মত পোস্টার পেপারে হাতে লেখা না বরং "ডিজিটাল প্রিণ্ট' করে আনা। আমার প্রশ্নবোধক চোখে তাকিয়ে থাকা দেখে প্রশ্নকর্তা আবার বললেন, "আপনার পোশাক আশাক চাল চলন "ইউরোপিয়ানদের' মত। কাল রাতে দেখলাম আপনি স্মোকিংএও অ্যাডিকটেড। আমি কি আপনাকে প্রশ্ন করতে পারি?' সাধারণত বাংলাদেশের রাস্তাঘাটে অতি আগ্রহী পুরুষদের যেভাবে আমি উত্তর করি সেভাবে মুখটা শক্ত করে তাকে বললাম, "না আপনি প্রশ্ন করতে পারেন না।' ভয়ে আমার বুকটা ঢিপ ঢিপ করছিল আর মনে মনে ভাবছিলাম, "আল্লাহ তুমি আমাকে এই লোকের হাত থেকে বাঁচাও।' আমার প্রার্থনা শুনেই যেন বাসের অপর মেয়ে সহযাত্রীটি বাসে উঠল তখন। মেয়েটিরও পরনে ছিল "পশ্চিমা' ধাঁচের পোশাক মানে জিন্সের প্যান্ট আর টি-শার্ট। তার সাথে তার ছাত্র সংগঠনের বন্ধুরা। তারা সকালের নাস্তায় খিচুড়ি খেতে না পারা নিয়ে আলাপ করতে করতে যার যার আসনে বসল। বাসটা চলতে শুরু করলে আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ৯:১০ বাজে।
লং মার্চের ডায়েরি - চতুর্থ কিস্তি : নাসরিন সিরাজ
বুলবুলভাজা | অপর বাংলা | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১ | ৮২২ বার পঠিত
আমার সাথে মিশু আপার যতবারই দেখা হয়েছে ততবারই তিনি, "হ্যালো কমরেড' বলে হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করেছেন, কুশলাদি বিনিময় করেছেন। বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যে পরস্পরকে অনেকে কমরেড বলে সম্বোধন করেন। আমি কোন বাম রাজনৈতিক দলের সদস্য না তারপরও কেন মিশু আপা আমাকে কমরেড ডাকেন সেটা কখনও জিজ্ঞেস করিনি বা করার প্রয়োজনও বোধ করিনি। কারণ তার সম্বোধনের মধ্যে আছে উষ্ণ আন্তরিকতার প্রকাশ। বেশ কয়েকবার আমি তার বক্তৃতা শুনেছি। আমার কাছে তার বক্তৃতার ঢং ও বেশ আকর্ষণীয় লাগে। তার বেশীরভাগ বক্তৃতার সারমর্ম হয় এরকম- এই রাষ্ট্র, সরকার সবাই হল মালিক পক্ষের। তারা শ্রমিকের রক্ত চুষে আজকে গাড়ী হাঁকায়, এসির বাতাসে ঘুমায়। এই সব লুটেরাদের আমাদের চ্যালেঞ্জ করতে হবে। তাদেরকে আস্তাকুঁড়ে ছুড়ে ফেলতে হবে। শ্রমিক শ্রেণীর জয় সুনিশ্চিত।
লং মার্চের ডায়েরি - প্রথম কিস্তি : নাসরিন সিরাজ
বুলবুলভাজা | অপর বাংলা | ২৩ নভেম্বর ২০১০ | ৭৬৪ বার পঠিত
প্রেস ব্রিফিং-এ সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে মাত্র তিনটি প্রশ্ন আসে। প্রশ্নগুলো নির্দিষ্ট কোন তথ্য জানার উদ্দেশ্য থেকে করা হয় না। বরং প্রশ্নগুলো শুনে ধারণা হয় যে এরা উত্তরদাতাদের কাছ থেকে সরকারের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক ও অসহিষ্ণু মন্তব্য কামনা করে। যেমন, একটি প্রশ্ন ছিল সরকার যদি আপনাদের কর্মসূচীতে বাধা দেয় তাহলে আপনারা কি করবেন। আনুষ্ঠানিকভাবে আনু এই প্রশ্নের উত্তরে প্রথমে হাসি দিয়ে প্রশ্নকারীর উত্তেজনা প্রশমন করেন। পরে তিনি ব্যাখ্যা করেন যে সরকার শুধু জাতীয় কমিটির না তার নিজ দলের সমর্থকদেরও ক্ষতি করছে। তাই সরকারী দলের সমর্থকদেরও উচিত তাড়াতাড়ি লং মার্চে অংশগ্রহণ করা। উল্লেখ্য যে ন দিগন্ত, দিগন্ত টেলিভিশন, ইসলামিক টেলিভিশনের মত সরকার বিরোধী পত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিকদের উপস্থিতি লং মার্চের প্রস্তুউতি পর্বে নিয়মিত ছিল। আর জাতীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ পত্রিকায় লীড নিউজ হবার ফাঁদ থেকে সদা সতর্ক ছিলেন। যেমন এই প্রশ্নটি নিয়েই যখন প্রেস ব্রিফিং পরবর্তী চা চক্রে নেতৃবৃন্দ আলোচনা করেন তখন একজন সরস মন্তব্য করেন, প্রশ্নটা শুনে আমার মাথায় তো একটা শ্লোগান এসেছিল। বাধা দিলে বাঁধবে লড়াই, এ লড়াইয়ে জিততে হবে। আরেক জন মন্তব্য করেন, এই সাংবাদিকরা মনে করে এই রকম ঢ়্ৎড়াড়শরহম প্রশ্ন করলে আমরা বুঝি তোফায়েলের (আওয়ামী লীগের একজন নেতা) মত জবাব দেবো।
লং মার্চের ডায়েরি - দ্বিতীয় কিস্তি : নাসরিন সিরাজ
বুলবুলভাজা | অপর বাংলা | ২৮ নভেম্বর ২০১০ | ৮৩১ বার পঠিত
২১ অক্টোবর জাতীয় কমিটি লং মার্চ পরিচালনার জন্য স্বেচ্ছাসেবকদের দলে আমাকে অন্তর্ভুক্ত করে। এটি ছিল কমিটির পক্ষ থেকে আমাকে দেওয়া দারুণ এক চমক উপহার। শরীক দলগুলোর ভেতর থেকে বাছাই করা কর্মী নিয়ে প্রায় ৫০ জন সদস্যের এই স্বেচ্ছাসেবক দল তৈরী হয়। মেহেদী এই দলের নেতার দায়িত্ব পান। এই দলটিকে মিছিলের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা রক্ষা, খাবার পরিবেশন, পরিবহন বন্টন, লিফলেট বিতরণ, চিকিৎসা সেবা, গণমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ-- এ রকম দায়িত্ব দিয়ে ছোট ছোট দলে বিভক্ত করা হয়। তিন সদস্য নিয়ে মিডিয়া সেল-এর দল নেতার দায়িত্ব পাই আমি।