ফিট আছি হে.. : অম্লানকুসুম চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : স্বাস্থ্য | ৩১ আগস্ট ২০২১ | ৩৮৮৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
কয়েকবছর হল, জীবনের দুটো নিয়ন্ত্রককে আমরা বরণ করে নিয়েছি বেশ। প্রথমটা ছোট্ট একটা স্ক্রিন বসানো রবারের ব্যান্ড। কব্জিতে তা এঁটে রাখতে হয় চব্বিশ ঘণ্টা। হ্যাঁ, স্নান করার সময়ও খোলা নিষ্প্রয়োজন। পোশাকি নাম ফিটনেস ট্র্যাকার। আপনার চলন, শয়ন, স্বপন-বপন সব কিছু সেই ১৫ গ্রামের ছোট্ট ডিভাইস মন দিয়ে পর্যবেক্ষণ করবে। স্মার্ট ফোনের লেজুড় হয়ে কল, এসএমএস, হোয়্যাটসঅ্যাপের নোটিফিকেশন তো পাঠাবেই, ডায়ালের তলায় রাখা ইনফ্রারেড আলো আপনার অক্সিজেন স্যাচুরেশন মাপবে, হৃৎস্পন্দন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করবে।
র্যাপিংকাহন : অম্লানকুসুম চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : পরিবেশ | ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ | ১৩৪৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
কত র্যাপিং কাগজ ব্যবহার করি আমরা? যে পরিমাণ র্যাপিং পেপার উপহারের গায়ে আটকে দেওয়া হয়, তার সিংহভাগই যে ঠাঁই পায় ময়লার ভ্যাটে—তা আঁচ করার জন্য বেশি মাথা ঘামানোর দরকার নেই। কয়েকটি পরিসংখ্যানের দিকে নজর দিলেই উত্তর মেলে। পশ্চিমি দেশগুলোতে উপহার আদানপ্রদানের সেরা সময় হল বড়দিন। মার্কিন মুলুকে শুধুমাত্র বড়দিনের মরসুমে যে পরিমাণ র্যাপিং কাগজ ব্যবহার করা হয়, তার পরিমাণ নাকি চার মিলিয়ন টন। অন্য তথ্য বলে, ইংল্যান্ডে এই উৎসবের মরসুমে ব্যবহৃত র্যাপিং কাগজগুলোকে পরপর মেলে ধরলে যে দৈর্ঘ্য হয়, তা দু’লক্ষ মাইলকেও ছাপিয়ে যায় হেলায়। গ্রহের সবকটি দেশ এবং তাদের উৎসবপক্ষে ব্যবহার করা র্যাপিং কাগজের যদি হিসেব নিতে বসা যায়, তাহলে চোখে ঝিলমিল লেগে যায়।
সবকিছু আছে বেশ, বেডটুকু ছাড়া : অম্লানকুসুম চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : স্বাস্থ্য | ২১ জুন ২০২২ | ১৯২৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন ধ্বনির মধ্যে হয়তো আশা বেঁচেছিল তখনও। রাস্তার এপাশ ওপাশ দিয়ে, এ গাড়ি ও গাড়ি কাটিয়ে যখন এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালের দিকে যাচ্ছিল সেই আপৎকালীন যান, রোগীর পরিবারের সদস্যদের মনে প্রায় নিভে আসা সলতের আগুনের মত হয়তো উষ্ণতা ভর করে ছিল, তখনও। দুটো হাসপাতাল ঘোরা হল। শয্যা পেলেন না হৃদরোগে ভোগা ৭৫ বছরের বৃদ্ধ। অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের মধ্যে বিষাদ মাখছিল ক্রমশ।
নাইতো বুবু ‘ছাতা’ বানান : অম্লানকুসুম চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : শিক্ষা | ২৮ জুন ২০২২ | ১৮৩১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
যাকে ঘিরে এত আয়োজন, শোনা গিয়েছে নদীয়ার ওই ছাত্রীটি নাকি ভাল নেই একদম। খবরের কাগজ জানান দিচ্ছে, টিটকিরির শরশয্যার মধ্যেই সে শুয়ে রয়েছে আজকাল। ইউটিউবে ভিডিওটির জন্ম নেওয়ার পর থেকেই কার্যত সে ঘর বন্দি। মাত্র এ কদিনের মধ্যে তিন তিন বার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছে। নিজেকে শেষ করে দেওয়ার বাসনা কতটা উদগ্র হলে সপ্তাহখানেকের মধ্যে কেউ তিন বার এমন কাজ করার চেষ্টা করে, তা আঁচ করা যায়। বাড়িতে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েও যে ও বেঁচে গিয়েছে, তা বলা ভুল হবে। অজ্ঞতার জন্য হঠাৎ বিখ্যাত হয়ে ওঠা মেয়েটির বাড়ির সামনেও ভীমরুলের মত ছোবল মেরে চলেছে রঙ্গ ব্যঙ্গ টিটকিরি। রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে জনতার একাংশ ছুঁড়ে দিচ্ছেন উল্টোপাল্টা মন্তব্য। ভার্চুয়াল দুনিয়ার কথা না হয় ছেড়েই দেওয়া গেল, মেয়েটির বাড়ির দেওয়ালেও হয়তো প্রতিদিনই লেখা হয়ে চলেছে অজস্র কমেন্ট।
সদা থাকো আনন্দে : অম্লানকুসুম চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সমাজ | ০১ আগস্ট ২০২২ | ১৬৮২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
ইন্ডিয়া নামক পর্দার আড়ালে যে একেবারে হদ্দ গরীব ভারতটা লুকিয়ে রয়েছে, তার অধিকাংশ সন্ধ্যেবেলা এমনভাবেই কাটে। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস। বছর ঘোরে। দোকানের বাঁধা খরিদ্দারের তালিকা দীর্ঘায়িত হয়। আবগারি দফতরের আদায় করা রাজস্বের খতিয়ান তার আগের বছরের হিসাবকে দশ গোল দেয়। দেশি মদ তৈরি করে যে সংস্থাগুলো, তারা গলদঘর্ম হয়ে গিয়ে প্রায় হাত জোড় করে বলে, ‘আর পারছি না।’ ট্যাঙ্কের পর ট্যাঙ্ক খালি হয়ে যায় নিমেষে।
শেষ থেকে শুরুর কথা : অম্লানকুসুম চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সমাজ | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ২২৭৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
আজাদির ৭৫ বছরের অমৃত মহোৎসব, খিদের সূচকে আমাদের দেশকে শেষ বেঞ্চের ছাত্র-র তকমা দিয়েছে। তবে আত্মহত্যাকারীদের সংখ্যায় আমরা জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন পেয়েছি। ‘বেটি বঁচাও বেটি পড়াও’-এর দৌলতে মুখ ঢেকেছে সরকারি বিজ্ঞাপনে, পোস্টার-ব্যানার-ফ্লেক্সে। কিন্তু সেই একই দেশের মহিলাদের মধ্যে আত্মহননের হার বাকি পৃথিবীর মহিলাদের দ্বিগুণ।
এনসিআরবি-র রিপোর্টের প্রতিটা পাতার প্রতিটা অক্ষর আমাদের কার্যত মুখ লুকোবার জন্য হাতছানি দেয়। এক পরিচিত মনোবিদকে বলতে শুনেছিলাম, ‘এক সুস্থ ব্যক্তিকে অবসাদগ্রস্ত করে তোলার জন্য এই রিপোর্টের পাতাগুলোর সঙ্গে এক ঘণ্টার সান্নিধ্যই যথেষ্ট।’ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, শূন্যের দিকে তাকিয়ে এর পরে বলেছিলেন, ‘অথচ আমরা কিছুই করতে পারছি না।’
কী করবেন মাস্টারমশাই : অম্লানকুসুম চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ০৩ অক্টোবর ২০২২ | ১৭৬৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
কোকিলের মতো ডেকে উঠল পিনাকীবাবুর মোবাইল ফোন। এসএমএস এলে এমন ধ্বনি বাজে। উনি জানেন এই এসএমএসে কি লেখা আছে। ‘পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসুন। গাছ লাগান প্রাণ বাঁচান।’ প্রতিদিন সন্ধেবেলা এই এসএমএসটা ঢোকে। আর এগুলো পড়েই পিনাকীবাবু কোনও সিদ্ধান্তে আসতে পারছেন না।
ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন দীপা, মানে পিনাকীবাবুর স্ত্রী। বললেন, ‘তাহলে আমার মডিউলার কিচেনটা আর হল না, তাই তো? ভাগ্য করে এমন এক আধপাগলার সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিল আমার বাবা। তুমি মোবাইল চালাও নাকি মোবাইলটা তোমাকে চালায়? অদ্ভুত মানুষ বটে।’ দীর্ঘশ্বাস ফেলে, আঁচল দিয়ে কপালের ঘাম মুছে ঘরে ফিরে গেলেন দীপা। রাত্রিবেলার খাবারদাবারের যোগাড়যন্ত্র করতে হবে এবারে।
হর হর ট্যাবলেট : অম্লানকুসুম চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : শিক্ষা | ১৯ ডিসেম্বর ২০২২ | ২১৮৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
সমাজ চিত্র বলে, ট্যাবলেট তার কাজ করে গিয়েছে নীরবে নিভৃতে। গায়ের মধ্যে সামান্য যে আঁচড় পড়েছিল, তা এখন ঘা হয়ে গিয়েছে অনেকক্ষেত্রেই। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের টেস্টের খাতা দেখে শিক্ষকদের চোখ কপালে উঠেছে। বিদ্যায়-বুদ্ধিতে-জ্ঞানে এমন বহু পরীক্ষার্থী হার মানিয়েছে বেসরকারি স্কুলে পড়া পঞ্চম-ষষ্ঠ শ্রেণীর পড়ুয়াদেরও। টেস্টের ফলাফল দেখে আক্ষরিক অর্থেই ভীত ও সন্ত্রস্ত শিক্ষক শিক্ষিকারা বলছেন, ‘টেস্টেই যদি এমন হাল হয়, ধারাবাহিক পড়াশোনার এই যদি নমুনা হয়, বোর্ডের পরীক্ষায় যে ভরাডুবি হবে।’ জানতে পারলাম, কল্পতরুর মতো নম্বর দিয়েও নাকি পাশ করানো যাচ্ছে না বহু পড়ুয়াকে।
ঘ্যাঁক করার পরে : অম্লানকুসুম চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | অন্যান্য | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ৪০৭১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫৭
পুষে রাখা সারমেয়র যত্ন কিভাবে করা যায়, তা নিয়ে প্রায়ই পড়ি খবরের কাগজে। কালীপুজোর রাতে বাজির প্রবল আওয়াজে বাড়ির কুকুরটি যেন ভয় না পায়, জানালার সামনে মাইক বাজিয়ে ডিজে সঙ্গীত হলে প্রিয় সারমেয়টি যেন আতঙ্কিত না হয়, তা নিয়ে বহু টোটকা দেন পশু বিশেজ্ঞরা। হৃদযন্ত্রের সমস্যার ভোগা আপনার মানুষ-প্রিয়জনকে এই অত্যাচারের হাত থেকে থেকে কিভাবে নিরাপদ রাখা যায়, তার তুলনায় অনেক বেশি নিউজপ্রিন্ট খরচ হয় পোষ্যের যত্নের সন্ধানে। কিন্তু ঘরে পুষে রাখা অবাধ্য পশুকে কিভাবে লাগাম দিতে হয়, তা নিয়ে চোখে পড়ে না কিছু। অন্যের শরীরে দাঁত বসিয়ে দিলেও দিনের শেষে সেই সারমেয় ‘অবলা’ই থেকে যায়।
বাসতেই হবে ভালো : অম্লানকুসুম চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সমাজ | ২২ জুন ২০২৩ | ১৬২৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
বাইনারি দুনিয়ায় কোনও লিঙ্কে ক্লিক করতে না করতেই দেখি, পর্দাজুড়ে হুটোপাটি করছে শেয়ার করার বিভিন্ন আয়োজন। আমার এক কবিবন্ধুর কথায়, “সুরাসিক্ত লিঙ্ক আঁকশি বাড়িয়ে বিষ-আলিঙ্গনের কথা বলে।” যখন কোনও খবর পড়ি, পনেরো সেকেন্ড যেতে না যেতেই দেখি, লাইক করার হরেক টুল নেমে আসছে স্ক্রিন জুড়ে। পড়া স্তব্ধ করে দিয়ে বলে, লাইক করো আগে। কিভাবে করতে চাও বলো। তুবড়ির ফুলকির মতো উড়ে আসে হোয়্যাটসঅ্যাপ, ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম আর ইমেলে শেয়ার করার আইকন। কোনও বিষন্ন খবরে তুমুল রেগে এমন অপশন বন্ধ করে দিয়ে দেখেছি, দশ সেকেন্ড পরে ফের হাজির হয়েছে অপশন অমনিবাস। মানেটা হল, শুধু আমি পড়লেই হবে না, মেঘের ওপাশ থেকে গর্জনের মতো তা বিলিয়ে দিতে হবে বিশ্বচরাচরে। আমি জানি, প্রতিটি লিঙ্কের পর্দার ওপারের ডেটাবেস আমার শেয়ার করার দলিলের খবর রাখে। যত বেশি শেয়ার করব, সংস্থার আরও বড় প্রিয়পাত্র হব আমি। আমার সোশ্যাল মিডিয়ার দেওয়ালে ফুটে উঠবে ওই সংস্থার এমন খবরের আরও, আরও ফিড। পালাবার পথ নেই।
এত কালো মেখেছি দু'হাতে : অম্লানকুসুম চক্রবর্তী
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সমাজ | ১৯ আগস্ট ২০২৩ | ১৪৯৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
ফেসবুকের ওই পোস্টটার মধ্যে হয়তো আঠা ছিল। আর স্ক্রল ডাউন করতে পারলাম না। একজন লিখেছেন, ‘স্বপ্নদীপের মৃত্যু নিয়ে এই শোরগোলের আয়ু আর মাত্র কয়েকদিন, যে কদিনের মধ্যে নতুন কিছু এসে এই ঘটনাকে চাপা না দিয়ে দেয়।’ দিন তিনচারেক আগের সেই পোস্টের ভবিষ্যৎ-বাণী ফলতে দেখেছি ইতিমধ্যেই। স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবের পাতাজোড়া বিজ্ঞাপন, বিগ ডে মহা-ধামাকায় তেলের সঙ্গে আটা ফ্রি আর অনলাইন খুচরো বিপণিতে নতুন কোনও ফোন উদ্বোধনের লিমিটেড টাইম ডিলের গর্জনে ক্রমশ আড়ালে চলে যাচ্ছে স্বপ্নদীপের মৃত্যু। কবীরের সুমনের গানে ছিল, 'শ্লোগান পাল্টে হয়ে যায় ফিসফাস'। এমন শিরোনামও ক্রমশ পর্যবসিত হবে টুকরো খবরে। তারপরে, আমাদের মন থেকে স্রেফ মুছে যাবে এই অকালপ্রয়াণ। পুজো এগিয়ে আসছে ক্রমশ। আশ্বিনের শারদপ্রাতে, বেঁচে থাকার শ্রেষ্ঠ উৎসবে নিজেদের গায়ে জরির ঝালর পরব সবাই। আজকে যে খবরে মন উথালপাথাল, তা জাঙ্ক হতে দেরি নেই আর।