নিশুতি রাত। সাড়ে বারোটা বাজে। উত্তর কলকাতার এক তস্য গলি। তার ভিতর পুরনো লজঝরে একটি বাড়ির দোতলায় চিলের ছাদে কুপকুপে অন্ধকার ঘর। পায়ায় ইঁট সাজিয়ে বসানো এক ভাঙ্গা তক্তপোষের ওপর দুজন শুয়ে। মামা আর ভাগ্নে। একজনের বয়স আট। আর একজন আটত্রিশ। - আচ্ছা মামু, তুমি আমায় এত ভালোবাসো কেন বলতো? - আমি তোকে ভালবাসি, কে বলল? - আমায় তো সব্বাই বলে। তোর মামু তোকে ... ...
বছরখানেক হল নাড়ু মামা রাজ্য সরকারি চাকরি থেকে রিটায়ার করেছে। ভজাদার চায়ের দোকানে মামার সঙ্গে সেদিন দেখা হয়ে গেল। চা সিগারেট সবই আমার পয়সায়... কিছু মনে করি না। যাকগে, রিটায়ার মানুষ। চা খেতে খেতে কথায় কথায় বললাম, "ঠিক সময়ে রিটায়ার করেছ। তাই না? ... ...
দেশ স্বাধীনতার আগে এই বাঙালিরা নাকি মহা তেজস্বী ছিল! বিশ্বাস করতে মনের মধ্যে ভীষণ কষ্ট হয়। কিছুতেই বুঝে উঠতেই পারিনা বা বলা ভাল মেলাতে পারি না। রাস্তার কেলো কুকুরটাকে দেখিয়ে যদি কেউ বলেন, ওটা আগে জার্মান শেফার্ড ছিল। এটা শুনে যেরকম মনে হবে, ঠিক তেমনটাই আমার মনে হয়। মাঝে মাঝে নিজেকেও আয়নার সামনে নিয়ে গিয়ে দেখি, যা ভাবছি তা কতটা সত্যি? আয়না প্রমাণ করে দেয়, আমার ভাবনা নির্ভেজাল সত্যি। নিজের অজান্তেই হাত চলে যায় পিঠে। টের পাই ঈশ্বরদত্ত শিরদাঁড়াটা ক্রমে ক্রমে বিলুপ্তির পথে। এমন দিন বেশিদূর নেই যেদিন এই জাতির সাথে কেঁচো বা কেন্নোর তুলনা করা হবে। আর তাও নাহলে ... ...
অনেকেরই হয়ত মনে আছে সেই আশির দশকে ড্রাগের নেশা ভারতের যুবসমাজকে প্রায় শেষ করে ফেলেছিল। নেশার বিরুদ্ধে সেসময়ে কেন্দ্র সরকার নানানভাবে বিভিন্ন সমাজ সচেতনতার প্রচারকে হাতিয়ার করেছিল। আশির দশকে যুবসমাজকে নেশার কবল থেকে মুক্ত করতে বলিউডি বেশ কিছু ফিল্মও তৈরি হয়েছিল। সকলের মিলিত প্রচেষ্টায় দেশের যুবসমাজ সেই সময়ে নেশার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জিতেছিল। এই কয়েকদিন আগেই বাংলা টেলিভিশনের পর্দায় হয়ত অনেকেই দেখেছিলেন, বিভিন্ন স্কুলের সামনে ক্যান্ডি বিক্রেতার সাজে ড্রাগ লজেন্স বিক্রি করার চক্র জাল বিছিয়ে ছিল। পুলিশি তৎপরতায় সেই জাল বেশিদূর বিস্তার করার হয়ত সুযোগ পায়নি। ভাবা যায়? স্কুল পড়ুয়া বাচ্চাদের পর্য্যন্ত নেশার বেওসাদারদের হাত থেকে নিস্তার নেই! দুধের শিশুগুলোকে কিংবা ... ...
বেশ কয়েকদিন ধরে আমাদের পাড়ার সরুদাকে খুঁজছিলুম। সরুদা মানে সরগম সরখেল। ছোটবেলায় সরুদা নাকি এমন কাঁদত তার শব্দ ঠিক রাগরাগিণীর সরগমের মতই শোনাতো। সেই কান্নার শব্দ শুনেই সরুদার দাদু হরদম সরখেল এই নাম রাখেন। সরুদার দাদুর নাম শুনে হাসছেন? আসলে ওনার নাম হরিদাম। তার অপভ্রংশ ঘটে হয়েছিল হরদম। এই সূত্রে সরুদার বাবার নামটিও বলে রাখি। সরগরম সরখেল। এই নামেরও ইতিহাস আছে। সরুদার বাবা জন্ম থেকেই নাকি সারা বাড়ি মাতিয়ে রাখতেন, তাই হরদম দাদু ছেলের নাম দিয়েছিলেন সরগরম। এই সরখেল পুরো বংশটাই বেচুবাবু। তবে শুনুন ওই বংশের শেষ বেচুবাবুর কীর্তি.. বেলা এগারোটায় বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলুম এক প্রকাশককে ধরবার ... ...
আমার প্রয়োজন শেষ। ক্রমশ ফুরিয়ে চলেছি, এটা বেশ কয়েক বছর ধরেই বুঝতে পারছি। যুগের সাথে প্রয়োজন বদলায়। তাই চাহিদাও পরিবর্তনশীল। তাই বলে এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাব, ভাবতেই পারি নি। যাদের বুকের ওপর বসতাম তারাই যেন ক্রমশ লুপ্তপ্রায় হতে বসেছে। তাদের রাজত্বই ক্ষীণ হয়ে আসছে। তারা থাকলে তবে তো আমি। ঝরণা কলমের মত। কলমের কালির মত। আমিও ফুরিয়ে যাচ্ছি... ... ...
বাংলার সাহিত্যাকাশে রায়চৌধুরী অর্থাৎ রায় পরিবারের অবদান অপরিসীম। সেই উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী থেকে শুরু। বলা যায় তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ কীর্তি হল, "সন্দেশ" পত্রিকার সৃষ্টি। ১৯১৩ সালে সন্দেশ জন্মের পর উপেন্দ্রকিশোর মাত্র দুই বছর বেঁচে ছিলেন। তাঁর পর সুযোগ্য পুত্র সুকুমার রায় প্রায় ৮ বছর সন্দেশকে এগিয়ে নিয়ে যান। তাঁর অকাল প্রয়ানে হাল ধরেন ভাই সুবিনয়। তাঁর পরে সত্যজিৎ হয়ে সন্দীপ রায় বর্তমান। এবছর ১৪২৭ শারদীয়া সংখ্যার সন্দেশে পালিত হয়েছে সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষ। সন্দীপ পুত্র সৌরদীপ এই প্রথম সন্দেশের কাজে হাত রেখেছেন। পিতা ও পুত্রের পরিকল্পনায় সেজে উঠেছে এবারের শারদীয়া সন্দেশের প্রচ্ছদ। অর্থাৎ সন্দেশ এমন একটি পত্রিকা যাতে রায় পরিবারের পঞ্চম প্রজন্মও ... ...
নারী ও শিশু পাচারে পশ্চিমবঙ্গের স্থান সারা ভারতের চেয়ে এগিয়ে। এই হিসেব জাতীয় অপরাধ তথ্য-পরিসংখ্যান দপ্তরের, যা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সরকার ভুল বলে দাবি করেছিল।কেন্দ্রীয় সরকারের নারী ও শিশুকল্যাণ দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী সংসদে একদা বেশ জোরের সঙ্গে জানিয়েছিলেন, বাল্য বিবাহ এবং নারী ও শিশু পাচারে পশ্চিমবঙ্গ সারা দেশের সমস্ত রাজ্যের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে। এবং প্রতি বছরই নারী পাচারের সংখ্যাটা বাড়ছে৷ ২০১৫-১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গ নারী ও শিশু পাচারে পয়লা নম্বরে ছিল৷ ২০১৫ সালে নারী পাচারের সংখ্যাটি ২১০০ এর ধারেকাছে ছিল। পরের বছর সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬০০ জনের কমবেশিতে৷ শিশু পাচার ২০১৫ সালে ছিল ১৮০০ জনের ধারেকাছে। ২০১৮ সালে সেটা প্রায় তিন থেকে ... ...
১ম পর্বের পর... ১৯৮৪ সালে শিব ভট্টাচার্য মারা যাওয়ার পর তরুণ অপেরা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। শান্তিগোপাল বাবুর কথায়, “তিনি আমার বাবার মতো ছিলেন। শিবুবাবুই আমার দল পরিচালনা করেছিলেন। তাঁকে ছাড়া, আমি দল চালিয়ে যেতে পারতাম না… এখন, আমার বন্ধুরা এবং পাড়ার ছেলেরা আমাকে মঞ্চে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে চায়।” কথাগুলো বলেছিলেন ৬৫ বছর বয়সী শান্তিগোপাল। হিটলারের মতো মেকআপে নিজের একটি ছবির দিকে তাকিয়ে।সেই সময়টিতে আবার হিটলার হওয়ার জন্য শান্তিগোপাল, ফুয়েরারের আত্মজীবনী, মেইন ক্যাম্প এবং বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী বই, উইলিয়াম শিরার্স এর লেখা রাইজ অ্যান্ড ফল অফ দ্য থার্ড রাইখ-এর মতো বইগুলোর সৌজন্যে স্বৈরশাসকের মানসিকতার মধ্যে তলিয়ে যেতেন।নিউ ব্যারাকপুরে একটি ছোট জনতা গত সপ্তাহে ... ...
গত শতকের সাতের দশকের শুরুর বছরগুলি। গ্রাম বাংলা দাপিয়ে হইহই করে চলেছে যাত্রা সম্রাট শান্তিগোপালের কালজয়ী পালা 'লেনিন'। কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক সংগীতের পাশাপাশি এই যাত্রায় ছিল আরও ১০ টি গান। গ্রামীণ বাংলার আমজনতার মুখে মুখে ঘুরছে এই গানগুলি। স্বচ্ছল গৃহস্থ কিনে নিয়ে যাচ্ছে এলপি রেকর্ড। 'লেনিনের' এই তুমুল জনপ্রিয়তার খবর পৌঁছে গেল মস্কোতে। 'লেনিনে'র গান ছড়িয়ে পড়ল খোদ 'লেনিনে'র দেশে সোভিয়েত প্রশাসন 'লেনিনে'র হাজার হাজার এলপি রেকর্ড ভারত থেকে রাশিয়া নিয়ে গেল। শান্তিগোপালের লেনিনে'র গান ছড়িয়ে পড়ল খোদ 'লেনিনে'র দেশে। একই সঙ্গে উত্তর কলকাতার প্রশান্ত ভট্টাচার্যের সুর বাংলার সীমা ছাড়িয়ে পড়ল রুশ দেশের কমিউনে। সত্তরের দশকের সেই উত্তাল দিনগুলোতে তরুণ প্রশান্তই শান্তিগোপালের 'লেনিনে'র ... ...