এই অকিঞ্চিৎকর কিঞ্চিতের কাছে একটি প্রাগৈতিহাসিক স্বপ্ন / এ পাড়ায় কি আমি একাই জেগে আছি / বা এই গ্রামে বা শহরে বা দেশে বা পৃথিবীতে / খানিকটা ধোঁয়ার মাঝে রাঙা বউ হারিয়ে যাওয়ার আগে / কুয়াশার মাঝে চোখের জ্যোতি হারিয়ে যাওয়ার আগে / ফানুশের পিছনে বাবা হারিয়ে যাওয়ার আগে / যেভাবে হালকা বাতাসে ভেসে উঠেছিল আমাদের সারাৎসার / আর থমথমে রাত্রি যাপন থেকে দেখে ছিলাম / ক্ষমারও এক সীমাবদ্ধতা আছে / সে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে পারে / এমনকি মহাজাগতিক সময় ... ...
গভীর রাত / অন্ধকারের ভেতর তলিয়ে যাওয়া শহর / রাস্তায় জ্বলতে থাকা আলোগুলো অদ্ভুত ভূতুড়ে / তার মধ্যে ভয়ে কুঁকড়ে / ইতিউতি ইতিহাস ঘাঁটতে ঘাঁটতে / এগিয়ে চলা মেয়ে আর গভীর একটা মিছিল / মিছিলের ভেতর হাঁটতে হাঁটতে সাধারণ সেই মেয়ে / অতি সাধারণ ঢঙে প্রশ্ন করে বসে যদি... // আমার বাবা আসলে কেমন? ... ...
আমগাছে ভরা বাড়ির ভিতরে বসে তিরতির করে বুক কাঁপছিল মা মরা রুকুর। / পাশের পুকুরে মাগুরের মাথায় ঘি জমলে ছটফট করছিল জলের মাছ। / / এদিকে আজকের মতো সন্ধ্যা করে এসেছে চারিদিকে। / বাড়ির সকলে গেছে শনিবারের পুজোয়, / ফিরতে অনেক অনেক রাত হবে। / / এমনি সময়ে ভানুমতীর খেল জানা তালেব দা এসে আঁধার ঘর আরো আঁধার করে বসে আছে। / যেন পাহাড়ের কালোমেঘ নেমেছে ঘরের মাথায়। / / তার কালো পুরুষ্টু চেহারা, সারা গায়ে সুন্দর রোম, নাভিতে ঘূর্ণি, কোঁকড়াচুলো, এক হাতে পেতলের বালা, কোমরের তাগায় ফুটো কড়ি বাঁধা আছে। / / রুকু সন্ধে দিয় এল, পরনে গামছা, চায়ের জল চাপিয়ে বসে রইল খালি গায়ে তালেবের কাছে। ... ...
সে-কবিতা কেন লিখে যাচ্ছি আজও এতদিন ধরে তাই ভাবি অনর্থক কেন আহ্বান করছি ধারাপাত শব্দ এযাবৎ অথচ অবাক আমি বুঝিইনি আকাশের দাবি সে-বিকেলে রাস্তার আলস্যে ছাউনির নিচে অপেক্ষা করেছে সাইকেল ... ...
তারুন্য পেরিয়ে এসে এখন আমি জানতে চাই কাকে বলে স্তন, / আর স্তনমন্ডল? / আমার কুকুরগুলো তোমার স্তনের দিকে তাকিয়ে থাকে / তাকিয়ে থাকে / বরফের ছাদের নিচে; মাকড়শা জাল বিছিয়েছে তোমার স্তনের ত্বকে।/ / আকর্ষণীয় না হোক, তবু আমার শরীর আছে । আমার শরীর থেকে/ তোমার শরীরে পৌছতে/ যে সেতু দরকার তা নির্মাণ করতে আমি মিন্ত্রী পাবো কোথায় ? / / টাকাপয়সা আর সামাজিক সম্পর্কের দাম আছে। কিন্তু আরও সময় নিতে/ আমি রাজি, / লিওনার্দোর মোনালিসা আর বতেরোর মোনালিসা যে আলাদা দুজন/ আলাদা সন্দেহজড়িত মেঘ আর উইনিং কন্ট্রাসেপশান, / এটা স্বীকার করে জানতে চাই/ ... ...
ঋতুটি শরৎ এখন পঞ্জিকার পাতায়। বর্ষার আমেজ কাটেনি বুঝি, সারাটি আকাশ কালো করে নামে বৃষ্টি। একটানা ভিজে শালবন, মহুয়ার কিশলয়। সতেজ হয়- লতানো পুঁইয়ের ডগা। এ বর্ষণ দেখার সৌভাগ্য আমার নেই। দূর পরবাসে বসে আমি ভাবি- আহ, কি সহজেই ভুলে গেলাম, ভুলে গেলাম প্রিয় ফুল কদমের কথা...! ... ...
অনবরত আল ধরে ধরে হাঁটা। জনবসতির চিহ্ন যেখানে মুছে গেছে সেখানে মাথা পেতে শুয়ে পড়া। ঘাসে একটু ওম। পোকামাকড়ের কিরকির শব্দ। কুয়োর নীচ থেকে দ্যাখা আকাশ। কতো লেজচেরা কালো কালো পাখি। চোখে জড়িয়ে আসছে ঘুমের আঠায়। এই মাঠ, ধানজমি, পাখি, পুকুর, আকাশ, অস্তরাগের মেঘ এই সমস্তটাই আমার সমাধি, নাভিতে মোম বসানো ছেলে বিড়বিড় করে এইসব ভাবে। ... ...
সন্ধেবেলা দয়াময়ীর এই কথাটুকু মনে পড়ল দয়াময়ীর দয়াময়ী ছাড়া কেউ নেই। আজানে তখন আকাশ ফেটে গেছে, গলে গলে নামছে অন্ধকারের প্রথম দিককার রঙ। পেয়ারা ফুলের মতো মুখ নিয়ে ও কান পেতে শুনল সরসর করে কোথাও কিছু একটা বাজছে। বোঝা গেল, একেবারে একা একটা তালগাছ মাঠের মাঝখানে হাওয়ায় পাতাদের কাঁপাচ্ছে। ভাত খেতে বসে ওঁর বুক উদাস হয়, একজন কেউ থাকলে ভালো হত। এই এতবড়ো নীলসাদা রঙীন বাড়ি,দেওয়ালে সদ্য চুনকামের গন্ধ বুকে উঠে আসে। চিরকাল মাটির ঘরে, পাতার ঘরে দিন কেটেছে। সরকারি প্রকল্পের একা একা বিধবার মতো ফাঁকা বাড়িতে অস্বস্তি হয়, সন্ধ্যামালতী ফুলের চেয়েও নরম মা দেখে যেতে পারল না এই ঘরদোর। নিজেকে নিজের জল গড়িয়ে নিতে হলে, ভাতের পাতে কাঁচালঙ্কা-নুন বারবার আনতে যেতে হলে ভালো লাগে না। এতো যত্নে করা রান্নাবান্না অর্থহীন হয়ে পড়ে যতোক্ষণ না কেউ সেই খাবার খেয়ে একমুখ হাসিতে তারিফ করে ওঠে। চিংড়ি মাছের মাথার চচ্চড়ি তারিফ না করলেও মুখ তুলে অন্তত বলুক বিচ্ছিরি হয়েছে খেতে, এ রান্না খাওয়া যায় না। পরের দিন সে সব মায়ামমতা ঢেলে এমন মোচাঘন্ট রাঁধবে সেদ্ধ ছোলার তুক কাজে লাগিয়ে যে, কর্তাকে থালা অবধি চেটে খেতে হবে। ... ...
ইমোশন দেখলেই তার উপচে পড়ছে কথকতা/ দৃশ্যকে পিঁড়ি পেতে ডাকে, বাবা বাছা করে/ আমদুধ মেখে দ্যায় কাঁসার থালায়/ অচেনা শব্দ এলে তার সঙ্গেই কত কথা... ... ...
ইরফানুর রহমানের ‘‘ব্রেড অ্যান্ড রোজেস’’ সিরিজ থেকে অনুমতিক্রমে নেওয়া এক গুচ্ছ অনুবাদ কবিতা। ... ...
ইরফানুর রহমানের ‘‘ব্রেড অ্যান্ড রোজেস’’ সিরিজ থেকে অনুমতিক্রমে নেওয়া এক গুচ্ছ অনুবাদ কবিতা। ... ...