আজ ষষ্ঠী, রাত ফিকে হলেই সপ্তমী। ভোট, ভাইরাস আর ভিড়ের ভয়েবচ সামলাতে না সামলাতেই এসে পড়েছে আরও একটা উৎসবের উপলক্ষ্য। আর এই বিস্তীর্ণ মানচিত্রের কোথাও কোথাও আলো ক্রমে আসিতেছে, আর তার পাশে মঞ্চের বাইরে মাটিতে, আলোর বৃত্তের বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন কেউ কেউ। নতুন নতুন গল্প শুরু হবে এখন-ই, সুতোর টানে আস্তে আস্তে জীবন্ত হয়ে উঠবে এক-এক করে চরিত্র। আসুন তাহলে এই ক'টা দিন, প্যান্ডেলের বাইরে দু'টো চেয়ার টেনে একটু বসা যাক নিরিবিলি আড্ডার মেজাজে, এই তো আমরা-ই ক'জন ... আসুন তার এক ফাঁকে পর্দা তুলে উঁকি মারি মঞ্চের ভেতরে ও বাইরে, ভিড় ছেড়ে চলুন এসে বসি ইন্টারনেটের এই ঠেকে। একটু একটু করে জমে উঠুক কথা ও বার্তা। এবারের শারদ সংখ্যা প্রকাশিত হবে আগামী কিছুদিন ধরে, উৎসবের পুরো মরশুম জুড়েই যতটুকু পুজোর গন্ধ গায়ে মেখে নেওয়া যায়। চোখ রাখুন গুরুর শরৎ ২০২১-এর পাতায়, প্রতিদিন নতুন লেখা জুড়ছে, জুড়বে। পড়তে থাকুন রয়ে সয়ে। ভাল লাগলে ভাগ করে নিন, না লাগলেও। ... ...
দুর্গাপুজোর সময় থেকেই আপনারা নিশ্চই এরকম অনেক ছবি দেখেছেন যেখানে মডেলরা বিভিন্ন দেবীর সাজে ছবি তুলেছেন। সেরকম কিছু ছবি দেখে আপনারা নাক সিঁটকেছেন, কিছু দেখে ভূয়সী প্রশংসাও করেছেন. কিন্তু আমি বাজি রেখে বলতে পারি, এই লেখার সঙ্গে যে ছবিগুলি আছে সেরকম আপনারা আগে কোথাও দেখেননি। কেন বলুন তো? এই ছবিগুলোর যিনি মডেল তিনি কোনো মহিলা নন বরং একজন পুরুষ। তাঁর নাম সৌরভ গোস্বামী। কী, একটু চমকে গেলেন তো? চমকানোরই কথা! এই চমক, এই ব্যতিক্রম দিয়েই শেষ হল এবারের উৎসব সংখ্যা। ... ...
গুচ্ছকবিতা - আনন্দগামী বাস থেকে ... ...
দুর্গাপূজার আগে আগে মিস্ত্রী আনা হতো ধান রাখার কড়োই তৈরি করার জন্য। তাদের পাণ্ডা ছিল শীতল কাকা। তারা এসে অনেকদিন থাকতো, খেতো, আর কড়োই বুনতো। এই কাজটা সবাই পারে না। একটা কড়োই বুনতে অনেকদিন সময় লাগতো। মড়াই বোনা বরং অনেক সহজ। মড়াইটা খড় পাকিয়ে বিচালি তৈরি করে বুনতে হতো, আর কড়োই বাঁশের বাতা দিয়ে। মড়াই নিয়মমতো ছোট-বড় করা যেতো। কড়োই একবার তৈরি হয়ে গেলে আর কিচ্ছুটি করা যেত না । -- " বুঝলা দাদুভাই, ষাট মণ, আশি মণ, নানা মাপের কড়োই হইতো। যতো বড় পরিবার, যতো সম্পন্ন গিরস্থি -- তত বড় কড়োই। " প্রথমে মাটিতে বাতা পুঁতে পুঁতে গোল করে পানের ডাবরের মতো একটা ফ্রেম বানানো হতো। তারপর তারমধ্যে আরো সরু সরু বাতা দিয়ে দিয়ে সুন্দর ডিজাইন করে কড়োই বোনা হতো। ঝুরি, চুপড়ি, ধামা বানানোর মতোই একটা পদ্ধতি। কড়োইয়ের ফ্রেম এতো বড় তাই দরজা দিয়ে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যাওয়া যেতো না। পাঁচিল দিয়ে ঘেরা বাড়ি হলে, দড়ি দিয়ে বেঁধে পাঁচিল টপকে অনেক কষ্ট করে ভিতরে নিয়ে যেতে হতো। অনেক লোকও লাগতো তার জন্যে। এইসব কঠিন কঠিন কাজ করার সময় তারা মুখে নানা আওয়াজ করতো। গান করতো। শীতলকাকা যখন কাঠের কাজ করতে আসতো, ঠাকুমারা চুপ করে তার কাজ দেখতেন। জল থেকে কাঠ বা তালগাছের কাঁড়ি তুলে এনে সেগুলো ‘বাইশ’ দিয়ে কি সুন্দর মসৃণ করে ছুলে ছুলে দরজা জানলার ফ্রেম বানিয়ে ফেলতো। যন্ত্রগুলোর নামও শেখাতো শীতলকাকা। বাটালি, বাইশ, করাত, ছেনি, হাতুরি আরো অনেককিছু থাকতো তার ব্যাগে। -- "একটাই প্রশ্ন শীতলকাকা প্রত্যেকবার আমাগো জিগাইতো। “আচ্ছা কওতো, একটা ব্যাগে একশোটা যন্ত্র আছে, তা থেকে ‘বাইশ’টা তুইলা নিলে কটা থাকব ?” বাইশ বিয়োগ কইরাই উত্তর দিতাম। কাকা ঘাড় নাড়াইয়া কইতো, “উহুঁ হয় নাই , হয় নাই। ভালো করে ভাবো।” আমরাও চিৎকার কইরা কইতাম, “নিশ্চয়ই হইসে, তুমি ভুল কইতাসো।” সে বলতো, “না রে বোকা নিরানব্বইটা হইব। একটা যন্ত্রের নামই তো ‘বাইশ’।” প্রত্যেকবার এই প্রশ্নটার মুখোমুখি হতেই হতো। অন্যেরা ঠিক বললেও, লানছু ঠাকুমা প্রতিবার গল্পটা শোনার জন্য, ভুল উত্তর দিতেন। কাকা ছিলেন তার নামের মতোই শান্ত শীতল। ... ...
সন্ধেবেলা এই তেলেভাজার ভ্যানটা নিয়ে আসে মা-মেয়েতে মিলে। দুটো সাতমহলার মাঝের গলিতে দাঁড় করিয়ে দেয়। সন্ধেবেলা তুষ্টিকে ফ্ল্যাট থেকে বার করে, বুটিকে নিয়ে আসে আজকাল নীলু। কুসুমের তেলেভাজার ভ্যান দাঁড়িয়ে থাকে উল্টো দিকে। সন্ধের পর মিন্টিকে ছেড়ে আর কোথাও বেরোতে চায় না শ্রেয়সী। মিন্টি অভিমান করে আজকাল। তবু আজ বেরোতেই হত। অনেকদিন বাদে উদয়ন এসেছে কলকাতায়.... ... ...
বলাই বাহুল্য, আমাদের নবতিপর ঠাকুমার ভালো নাম সুষমা হলেও শাকপাল্হার নামেই ডাক নাম ছিল ‘শুশনি’। বয়সে ছোট ছিল বলেই আমরা ‘ন্যাঙটা ভুটুঙ সাধের কুটুম’ তার ছোট বোনকে ‘ছুটকী ঠাকুমা’ বলেই হাঁকাহাঁকি করতাম। আমাদের দলে ভিড়ে বড়ঠাকুমাও সময় সময় তার ছোটবোনকে ‘ছুটকী' নামেই সম্বোধন করত। তা, ঘাসের ডগায় ‘কাঁকর-পড়া’ শুরু হলে, ‘বিরি বাইগন’ গাছে মাকড়শার জালের উপর হিলঝিল করে ‘কাঁকর’ পড়লে – সুবর্ণরেখা নদীধারে কারিকুরি পাখিরা এসে মেলা বসালে, হি-হি ঠান্ডা হাওয়া চালালে – আমাদের নবতিপর ঠাকুমাও কেমন যেন আনচান করে – - এই বুঝি সে আসে – আসে – - কে? কে ঠাকুমা? - কে আবার! তোদের ছুটকী ঠাকুমা। অ্যাই! অ্যাই ললিন! অ্যাই অ্যাই ছিমন্ত! যা না রে! টিক্কে আগেই যা, দেখবু ‘ধঁচা-বঁধা’ গাড়ি করি ছুটকি আসেটে। ... ...
বিনায়ক রুকুর ছবি ও কবিতায় দীপাবলী। ... ...
এমিল সিওরান আয়রন গার্ডকে সমর্থন করেছিলেন বলে তোমার পলিটিক্যালি কারেক্ট পাছা ফেটে যাচ্ছে? ব্লাডি ইউনিভার্সিটি কালচার! এরপরে ঘূর্ণির মতো একটা প্রবল বিতর্ক শুরু হয়ে যায়; উগো টোনিকে ফ্যাসিস্ট শুয়োর বলে। উত্তরে টোনি উগোকে একটা ধাক্কা দিয়ে বলে লিবারাল পুসি এবং উগোর যৌনাঙ্গ সম্পর্কে সন্দেহপ্রকাশ করে। উগো টোনির চোয়ালে একটা ঘুষি বসিয়ে দেয় এবং ওদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়। বাকিসকলে ওদের থামানোর জন্যে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অনেকেই বিরক্ত হয়ে বিদায় নেয়; এরপরে পার্টি ভেঙে যায়। সেইরাতে মনজা থেকে মিলানে ফেরার সময় শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ টোনিকে লক্ষ্য করছিলেন। গাড়ির ব্যাকসীটে জানলার ধারে চুপচাপ বসেছিল সে। মিলানে ঢোকার কিছুটা আগে হাইওয়ের ধারে গাড়িটা পেট্রোল পাম্পে দাঁড়িয়েছিল এবং সবাই গাড়ি থেকে নেমে এদিকওদিক ঘোরাফেরা করছিল। দূরে অন্ধকার রাতের প্রেক্ষাপটে মিলান শহরের আলোকোজ্জ্বল সিটিস্কেপ। টোনি সান্তোরো সেদিকে তাকিয়ে দ্রুত একটা সিগারেট টানছিল। হঠাৎ সে শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখের দিকে ফিরে বলল, ওরা আমাকে ইউরোসেন্ট্রিক বলে। ... ...
'নীল আর সাইদা' - খুব বেশি বিশেষ বন্ধু। অনেক অনেকদিনের আলোচনা শেষে আজ হয়ত একটি সিদ্ধান্ত হতে পারে ওদের সম্পর্কের নামকরণে। সাত সমুদ্দুর পেরিয়ে বন্ধু নীল এসেছে- আটপৌরে একটি রেস্টুরেন্টের কাপল টেবিলে বসে নীলের অপেক্ষাই করছে সাইদা… ... ...
যোনি কাকে বলে জানিস ? জানি-জানি, বললো অমিত, রোজ একঘেয়ে লেকচার শুনে-শুনে ওসব আংরেজি তাকিয়া-কালাম মুখস্হ হয়ে গেছে, ইসকুলে যদি রোজ কেউ অমন লেকচার দিতো তাহলে দেখতে, সব সাবজেক্টে চৌয়া-ছক্কা পেটাতুম । বল তাহলে, কাকে যোনি বলে ? ... ...
ডোকরার কাজে বিশেষ ধরনের মোম লাগে। মোম দিয়ে নকশার বিষয়টা বুঝতে পারছিলাম না আমরা। প্রবীণ শিল্পী অশৈল্পিক চারজনকে হাতে কলমে দেখিয়ে দিলেন। সরু সুতোর মতো মোম দিয়ে কচ্ছপের ছাঁচের পিঠে নকশা করলেন। জ্যান্ত কচ্ছপের পিঠে যেমন ছোপ দেখা যায় তার একটা ছাঁদ। মোম দিয়ে চোখ তৈরি করলেন। ছাঁচের নকশার জন্য বিভিন্ন আকার লাগে। গোল, তিন কোণা। শিল্পী প্রথমে সেই কেন্দু কাঠের টুকরো দিয়ে মোম পিষে লম্বা, চ্যাপ্টা করে নেন। তার পর মাপ অনুযায়ী কেটে নেন। কেন্দু কাঠের টুকরো দিয়ে মোম পেষাইয়ের পদ্ধতিটা বাবালা আর ইন্দ্রর চেনা লেগেছিল। ওদের কথায়, সোনার কাজে যে দলনা মেশিন ব্যবহার করা হয় তার সঙ্গে এর মিল রয়েছে। সেটি যন্ত্র, ডোকরার দলনা কেঠো। ... ...
"সুকান্তর রানার কবিতাটি পড়ে সে চমকে উঠেছিল। কোনোদিন তো ভাবেনি, পিঠে চিঠির পাহাড় আর টাকার বোঝা নিয়ে ছুটে চলা ডাকহরকরার কথা? পিঠে বোঝা নিয়ে সারা রাত দৌড়ে যায় সে, মানুষের চিঠি, টাকা গ্রাম থেকে গ্রামে পৌঁছে দেয় সূর্য ওঠার আগেই। তাকে কি কেউ চিঠি লেখে? যৎসামান্য অর্থে দিন-গুজরান, অভাব যার নিত্যসঙ্গী, সেই রানার নিজেও কি কোনোদিন ভেবে দেখেছে তার দুঃখের কথা? না কি তার সব বোধ, অনুভূতি গেছে অসাড় হয়ে? এ কবিতা পড়ে সলিলের চোখ খুলে গিয়েছিল। তখন থেকেই গান বাঁধার ইচ্ছে, রানারের ছুটে চলার গান। " ... ...
অ্যাক্রস্টিকের সঙ্গে অ্যাক্রোব্যাটের শব্দগত মিল দেখে অভিধান খোলা গেল। তাতে অ্যাক্রোব্যাটের মানে লেখা আছে মল্ল, মত পরিবর্তনকারী, দড়াবাজিকর, ব্যায়ামবিদ, ঘনঘন দলপরিবর্তনকারী, রজ্জুনর্তক, ব্যায়ামকুশলী। শব্দের মিলটা কিছু না, তবে অ্যাক্রস্টিক লেখার সঙ্গে মল্লযুদ্ধ, দড়াবাজি, রজ্জুনর্তন, ব্যায়াম - এইসবের অল্প মিল আছে। সমবেতভাবে মনে হল, পুজোর ফুর্তি, হাঁটাহাঁটি, জুতোয় ফোস্কা, বাঁকা এয়ারগানে বেলুন - এসব তো সুদূর, শব্দ, ছন্দ নিয়ে একটু রজ্জুনর্তনই না হয় হোক। ভাবের ঘরে চুরি হলে কী, আমাদের ভঙ্গীও কম নয়। পাঠক যদি আমোদ পান তাহলেই ধন্য। ... ...
কুফরি থেকে ফাগু দুই বা সওয়া দুই কিলোমিটার রাস্তা ঘোড়া চলাচলের জন্য নির্দিষ্ট। বোধহয় পৃথিবীর নিকৃষ্টতম রাস্তা এটা! পুরো রাস্তা এক – দু বিঘৎ পরিমাণ পাথরে ভরা। উঁচু-নিচু আঁকা-বাঁকা ছয় সাড়ে ছয় ফুট চওড়া রাস্তার দুধারে কোথাও কোথাও পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। কিছুটা রাস্তা গেলে দেখা গেল পাঁচিল আর নেই, তবে সে জায়গায় রাস্তা বলেও কিছু নেই। পাথরের চাঙর ভর্তি ঢালু ভূমি,আর পাইনের জঙ্গল। রাস্তা কর্দমময়। বেশ খানিকটায় ঘোড়ার পুরীষ আর কাদা মেশানো ঢলঢলে একটা স্তরে প্রায় হাঁটু ডুবে যায়। সীতারামের হাঁটু তক গামবুট থাকলেও সওয়ারিদের পায়ে সেই কাদা ছিটকে আসে। প্রতি মুহূর্তে ভয়। একটি ঘোড়া পড়লে সওয়ারীসহ বাকিগুলোও সেই কাদার নালায় পপাত ধরণীতল হবার সমূহ সম্ভাবনা ষোলো আনা। ... ...