মানুষ ! ... ...
রামমোহন রায়ের বাড়ির অনুষ্ঠানেই ভারতবিখ্যাত নিকি বাইজি এসেছিলেন, ফ্যানি তাঁর পোশাকেরও বর্ণনা দিয়েছেন। সাটিনের পোশাক (শাড়ি নয়), সঙ্গে পাজামা। এবং সঙ্গে মাতাল করা নাচ। সে নাচ নাকি এতই উদ্দীপক, যে, বিলিতি মহিলারাও ওই পোশাক পরে নিজেদের জমায়েতে ওই নাচ নাচার চেষ্টা করতেন। এবং গরমের দেশে গলদঘর্ম হয়ে, কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়তেন। এতই গুরুতর বিষয় হয়ে গিয়েছিল, যে, এই পোশাক পরতে বারণ করে একটি নোটিসও জারি হয়েছিল। ... ...
নিজেই বূজতে পারার জন্য লেখা ... ...
মেয়েটির প্রশংসা করতেই হয় ... ...
সত্যিকারের যুদ্ধই ধরুন। এই এখন একটা যুদ্ধ চলছে। রাশিয়া বনাম ইউক্রেন। সেখানে সৈন্যের অভাব বলে, উভয় পক্ষই প্রাপ্তবয়স্কদের ধরে বাধ্যতামূলকভাবে যুদ্ধে নামিয়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক মানে, প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ। মহিলা নয়। কারণ, যুদ্ধ হল সিরিয়াস বিজনেস, সত্যিকারের 'খুনে-মানসিকতা' চাই। সেখানে মেয়েদের জায়গা নেই। আমেরিকায় এই বাধ্যতামূলক যুদ্ধে নামানোর পদ্ধতিটাকে বলে ড্রাফট। যেই আঠারো বছর হল, সমস্ত ছেলেকে সেনাবাহিনীর কাছে নাম লেখাতে হবে, যাতে দরকার হলেই তারা ডেকে নিতে পারে। মেয়েদের এটা করতে হয়না। বিশ্বের যে কটি দেশে এই বাধ্যতামূলক ড্রাফট আছে, তার মধ্যে হাতে-গোণা এক-আধটিই মেয়েদের ডাকে। বাদবাকি পুরোটাই ব্যাটাছেলেদের রাজত্ব। সত্যিই যদি যুদ্ধ বাধে, যেমন বেধেছিল ভিয়েতনামে, আমার ছেলে যুদ্ধে যেতে বাধ্য হবে, ওমুকের মেয়ে হবেনা। ... ...
সাল ১৯৯৯ এর ২ জুলাই। সবার পরনে উজ্জ্বল হলুদ রঙের টি-শার্ট। টি শার্টের চৌকো নকশার বুকে গোলাপি রঙের একটি ত্রিভুজ যার পাশে লেখা ''ওয়াক অন রেইনবো''। চৌকোনার ওপরে লেখা "দ্য ফ্রেন্ডশিপ ওয়াক 99" আর নীচে "এলজিবিটি-ইন্ডিয়া" । পার্কসার্কাস ময়দান থেকে এসপ্ল্যানেড অভিমুখে হাঁটতে শুরু করলেন ওঁরা ১৫জন। ১৪ জন পুরুষ এবং একজন মহিলা সাংবাদিক। মাঝপথে শুরু হোলো প্রবল বৃষ্টি, কিন্তু সেই দুপুরে, সেই নির্ঝরের মধ্যেই ওই ৬ কিলোমিটার পথে গড়ে উঠলো শুধু ভারতেরই নয়, তামাম দক্ষিণ এশিয়ার এক অভূতপূর্ব ইতিহাস। শুরু হলো সেই দৃপ্ত পথ হাঁটা, যা আজ 'কলকাতা রেইনবো প্রাইড ওয়াক' নামে বিখ্যাত। কয়েকঘন্টা পর আজ কলকাতার রংধনু মিছিলে সমতা, বৈচিত্র, একতা, সম্মান এবং সমনাগরিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে বুক চিতিয়ে হাঁটবেন হাজারো মানুষ। তার আগে ভারত তথা এশিয়ার সবচেয়ে পুরোনো প্রাইড মিছিলটিকে বরং একটু ফিরে দেখি আমরা ... ...
বড়রা সব বড্ড পন্ডিত বলে চিরকালই ছোটমানুষদের কাছ থেকে শিখি আমি। জ্ঞানবুদ্ধি হওয়া ইস্তক রুক্ষতম জীবনযুদ্ধের ঠিক মাঝখানে দাঁড়ানো শাহানারার সঙ্গে যখনই দেখা বা কথা হয়, ওর কাছ থেকে আমি আবারো নীরব ধৈর্য, প্রগাঢ় আত্মসম্মান, অপরিসীম ভদ্রতাবোধ আর এক অদ্ভুত প্রশান্তির পাঠ নিই। ... ...
জ্ঞানেন্দ্রর ধর্মত্যাগ, সম্পত্তি নিয়ে টানাপোড়েন সবই ইতিহাসের প্রভূত আলোচনার বিষয়। সবকটিই সেসময়ের ধর্ম তথা রাজনীতির সঙ্গে প্রবল ভাবে জড়িয়ে। জ্ঞানেন্দ্র পরবর্তী কালে স্ত্রীকে নিয়ে ইংল্যন্ডে যান। ইনিই কি তাহলে প্রথম বাঙ্গালী মহিলা যিনি বিদেশে যান? সেই দফার বিদেশ যাত্রাতেই ১৮৬২ সালের ২১ শে জুন জ্ঞানেন্দ্রমোহন লিঙ্কনস ইন থেকে ব্যারিস্টার হন। প্রথম ভারতীয় ব্যারিস্টার। পরে তিনি দুই কন্যাকে (বলেন্দ্রবালা ও সত্যেন্দ্রবালা) নিয়ে আবার ইংল্যন্ডে চলে যান আর সেখানেই মারা যান। জ্ঞানদানন্দিনী দেবী যখন একাকী বিলেত যান, তখন তিনি প্রথমে জ্ঞানেন্দ্র মোহনের আতিথ্যেই ছিলেন। তিনি বলেছেন, “স্ত্রী মারা যেতে তিনি খুব অস্থির হয়ে পড়েন, সেই সময় কৃষ্ণ বন্দ্যোঃ নামে এক পাদ্রী তাঁকে সান্ত্বনা দিতে দিতে খ্রিস্টান করে ফেললেন।” কী সরল ব্যাখ্যা! ... ...
আমার সাধনপুর স্কুলের তুহিনা পারভীন, গাঁ আর ধম্মের অনেক কুচ্ছিত গঞ্জনা সয়েও "হাঁটুর বের করা প্যান্ট" পরেই বহুদিন রেফারিগিরি করছে। কাল স্টেফানি ফ্র্যাপার্টকে দেখে তুহিনা বা ওর মতো অজস্র ভারতীয় মেয়ে রেফারির চোখভরা স্বপ্ন আরো অনেক চওড়া হয়েছে নিশ্চিত ... ...
মানুষ কী যে করে চলেছে হাজার বছর................... ... ...
পুরুষদের কুকর্মের খতিয়ান । ... ...
কৌন মাই কা লাল হ্যায় যো মা কা দুধ নহিঁ পিয়া ... ...
"হয়ে ওঠা" । পুরুষদের সম্পর্কে ভাবা হয় । নারীদের সম্পর্কে নয় কেন ? ... ...
গতকাল সিলেটে ৭নম্বর বারের জন্য T-20 এশিয়া কাল জয়ী ভারতীয় জাতীয় ক্রিকেট দলের এই ১১জন 'উইমেন ইন ব্লু'র সবার নাম হয়ত আমরা অনেকেই জানি না। তাঁদের নাম তো বটেই সংক্ষেপে একটু জেনে নেওয়া যাক ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটের শুরুর দিনগুলোর কথাও.... ... ...
বহু যুগ ধরে বাঙ্গালী মেয়েরা লক্ষ্মীর আরাধনা করে আসছেন, এই শারদীয়া মাসে দিকে দিকে তাঁর নামে শঙ্খধ্বনি হতেই থাকবে। তবু যতই তাঁরা লক্ষ্মীর জন্য হৃদয়মাঝারে ঠাঁই করে রাখুন, লক্ষ্মী কি সেই আসনে এসে বসলেন? ... ...
ক্রমশ কত কিছু শিখলাম। আমরা মফঃস্বল গঞ্জের ছেলেপুলেরা বুলি বলতে বুঝতাম মুখে যা ফোটে বা ফোটেনা। ওর মানে যে দলবদ্ধভাবে পিছনে লাগা, সে জানতে বহুদিন সময় লেগেছিল। কানাকে কানা খোঁড়াকে খোঁড়া বলিওনা, এ অবশ্য জানা ছিল, কিন্তু তারপরেও এলাকায় তিনজন বাপির একজন ছিল কালা-বাপি, আরেকজন মোটা-বাপি, তৃতীয়জন ল্যাংড়া-বাপি (নাম বদলে দিলাম, কী দরকার)। এ সবই শারীরিক বৈশিষ্ট্যসূচক। কালার শ্রবণযন্ত্রে একটু সমস্যা ছিল, ল্যাংড়া ঠিকঠাকই হাঁটত, কিন্তু কোনো সময়ে খেলতে গিয়ে মনে হয় চোট পেয়েছিল। তখন এশিয়াডের ম্যাসকট বাচ্চা হাতি আপ্পু খুব হিট। প্রত্যেক ক্লাসেই থাকত নিজস্ব একটি আপ্পু। আমাদেরও ছিল। এই দুর্মর রাজনৈতিক সঠিকত্বের যুগে বোঝা কঠিন, যে, ওগুলো কেবলমাত্র বৈশিষ্ট্যবাচক ব্যাপার ছিল। রোগা-মোটা-কালো-ফরসা-কালা-টেকো -- এই সব নিয়েই পৃথিবী, যে যেমন, সবাই, যাকে বলে, ডিফারেন্টলি কেপেবল। তা বলে সব কিছু ভারি নিষ্পাপ ছিল এমন না। বুলির সবচেয়ে কাছাকাছি প্রতিশব্দ ছিল ক্ষ্যাপানো। সেও হত বিস্তর। পচা (আবারও নাম পরিবর্তিত) বলে একটি লোক, কেন কে জানে পুই-পুই শব্দটা শুনলেই খুব রেগে যেত। ইট-পাটকেল অবধি ছুঁড়ে মারত। তাকে দলবেঁধে ছেলেপুলে "পচা পুই পুই" বলবেই। অনুচিত জেনেও বলবে। বদামি যাকে বলে। এর চেয়ে ছোটো আকারেও "ক্ষ্যাপানো" হত। "লেডিস" ছিল ছেলেদের ক্ষ্যাপানোর একটা মূল মন্ত্র। মানে, ব্যাটা মেয়েলি। আরেকটা ছিল "লেডিস ফিংগার"। এর সঙ্গে মেয়েদের কোনো সম্পর্ক নেই, কিন্তু ঢ্যাঁড়োশ না বলে যে কেন ইংরিজিতে বলা হত, জানা নেই। ... ...
সি ভিরুথাচলম। ১৯০৬- ১৯৪৮। অবশ্য এই নামে ওঁকে কম লোকই চেনে। ইনি বরং পরিচিত পুধুমাইপিঠান নামে। তামিল সাহিত্যের এক বিশিষ্ট লেখক। স্বল্পস্থায়ী জীবনে প্রায় শতখানেক ছোটগল্প লিখেছেন। সেই সঙ্গে প্রবন্ধ ইত্যাদি। সাহিত্য একাদেমি ওঁর ছোটগল্পের একটি সংকলন বার করেছে। সেটি দেখার সৌভাগ্য হয়নি। Saba Vimochana ওঁর লেখা একটি বিখ্যাত ছোটগল্প। ইন্টারনেটে এই গল্পের একটি K Sarvanan কৃত অনুবাদ পড়ে অসম্ভব মুগ্ধ হই। গল্পের জোরালো বক্তব্য ভাষার সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠে এসেছে। সেই ইংরাজি অনুবাদের থেকে বাংলায় অনুবাদের চেষ্টা এই গল্প। দুধের স্বাদ অবশ্যই ঘোলে মেটে না। তাই এই অনুবাদের অনুবাদ পড়ে যদি কেউ এই লেখকের সৃষ্টি সম্বন্ধে উৎসুক হন সেটাই এই অনুবাদকের প্রাপ্তি হবে। ... ...
সিদ্ধার্থ যদি দুহাজার বছর আগে না জন্মে এই দুর্মর পলিটিকাল-কারেক্টনেসের যুগে জন্মাতেন, সুজাতার হাতে পায়সান্ন খেয়ে তাঁর আর বুদ্ধদেব হওয়া হতনা। বদলে হাজতে বসে পুলিশের পিটুনি আর মোটা চালের ভাত খেতেন। বৌদ্ধধর্ম লাটে উঠে যেত, নির্বাণ লাভ আরও কয়েক জন্ম পিছিয়ে যেত, কারণ মাথায় যা মামলা চাপত, তাতে মিনিমাম ১৪ বছর জেল। একে তো নাবালিকা সুজাতাকে ফুসলানোর অপরাধে শ্লীলতাহানির কেস। তারপর "বিয়ে করে বৌ-ছেলেকে ফেলে পালিয়েছিস?" বলে প্রতারণার চার্জ । রিগ্রেসিভ-প্রগ্রেসিভ চুলচেরা বিশ্লেষণে অভ্যস্ত সমবেত ভদ্রমহোদয় ও মহিলাগণ মিডিয়া এবং সোশাল মিডিয়ায় হাঁ করে কেসের ধারাবিবরণী গিলতেন, তারপর "বেশ হয়েছে, আর পালাবি?" বলে হাততালি মারতেন। ... ...
মানুষের বাসনার ইতিহাস বড় বিচিত্রপথে প্রবাহিত। সমাজ ও ধর্ম তার যে অনুমোদিত রূপগুলি গড়ে তোলে তাকে ফাঁকি দিয়েই গড়ে ওঠে তার বিচিত্র প্রকাশ। ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে ঔপনিবেশিক শাসনকাল থেকেই তাতে অবদমনের মাত্রা আরো বেড়েছিল। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়েও এই অবদমন যে সামাজিক ও ধর্মীয় মতাদর্শের অংশ হিসেবে টিঁকে থাকে তা পিতৃতন্ত্রের হাতকেই আরও শক্ত করে। তাই তাকে চিনে নেওয়া আজ জরুরী। ... ...