প্যাঁচা বলতে বুঝি লক্ষীর বাহন, ম্যালেরিয়ার যেমন মশা। তাই পরীক্ষার হলে মারি মাছি, শপিং মলে ফালতু ঘুরি অ্যাজ ইফ ধোবি কা কুত্তা। পাখি সলিড দেখলে এস এম এসে ফ্ল্যার্ট করি, হাতের মধ্যে পেলে আরশোলা দেখিয়ে ফ্ল্যাট করে ফ্ল্যাটে আনি। প্যান্ডেলে স্পার্ক পেলে হই তীর্থের কাক। ক্যালানি হাওয়া বুঝলেই ডাক। কাজেই ইহ দুনিয়ার কোনটা যে কার বাহন বলাটা চাপের। ধর্ম টু জিরাফ সব মালই ট্রান্সফারেবেল। আমাদের ভোকাবুল্যরি চিড়িয়াখানা অবধি। তবে সবই চান্স পেলে। বাসর রাতের বিড়ালই হোক আর উটকো মালের ঘড়ে চাপাই হোক। আদতে, কথার পিঠে কথা সাজাই, আমরা এখন একলা থাকি। ... ...
"সব সত্যি। মহিষাসুর সত্যি, হনুমান সত্যি, ক্যাপ্টেন স্পার্ক সত্যি, টারজান সত্যি, অরণ্যদেব সত্যি, ..." এমনকি ধরো মা দুগগার শাড়ীতে অসংখ্য চুমকি, বিসর্জনের পর সেগুলৈ যে কোজাগরীর আকাশে তারা হয়ে ফোটে - তাও তো সত্যিই। ভারী ইচ্ছে হয় একবার হাতে ছুঁয়ে দেখি কতটা সত্যি। ভাসানের আগে ছুঁলে দোষ নেই - সেটা আমি জানি। অনেকেই সে সময় টুকটাক পকেটে পোরে মহিষাসুরের বাজুবন্ধ কিংবা গণেশের উত্তরীয় থেকে খসে পড়া একফালি জরির পাড়। ... ...
শূয়োরের মাংসের নাম শুনলে আমার দেশের বাড়ির কথা মনে পড়ে যায়। ছোটবেলাটা প্রায় শুধু শূয়োর খেয়ে বড় হয়েছি। মাসির হাতের রান্না, মামীর হাতের রান্না এবং দিদিমার হাতের রান্না, তবে বেশিরভাগটাই দিদিমার হাতের রান্না খেয়েছি ছোটবেলায় এবং ওনার কাছেই বড় হয়েছি। ছোটবেলায় অবশ্য আমার মা কে জানতাম না। কারণ আমার মা আমায় ছোটবেলাতেই দেশে রেখে কলকাতায় চলে এসেছিলেন, তারপর দিদিমা এবং মাসিদের কাছে মানুষ হয়েছি। ... ...
আমার নানাবাড়ি আমাদের বাসার কাছেই। পুরনো দিনের বাড়ি, সামনে পেছনে অনেক জায়গা, পাশে নারকেল সুপারিগাছের সারি ঘেরা পুকুর। বাড়িতে হাঁস-মুরগী গরু-ছাগল। এক খালার হাঁপানির ধাত। তাই বাড়িতে ছাগলের দুধের বেশ কদর। ... ...
এ কাহিনি আমার নয়, আমার পিতৃদেব মাতৃদেবীর। ঘটনা আমার জন্মের কিছুমাস আগেকার। তথ্যগত কিছু ভুলত্রুটি তাই কিছু থেকে যেতে পারে, কারণ গল্পের পুরোটাই পরস্মৈপদী। পিতৃদেব ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পিডব্লুডির ইঞ্জিনীয়ার। দু-তিন বছর অন্তর অন্তর পোস্টিং বদলাত। চাকরিজীবনের তখন শুরুর দিক, আঞ্চলিক রাজনীতির নিয়ম মেনেই তখন "ভালো' জায়গায় পোস্টিং পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা ছিল না। এজন্য পিতৃদেবের মনে কোনও বিশেষ ক্ষোভও ছিল না, কারণ তখনও দোষ দেবার জন্য সিপিএমের ঐতিহাসিক জমানা শুরু হয় নি। ... ...
দুর্জনে বলে থাকে আমাদের পরিবারে মানুষের থেকে পশুদের বেশি কদর। আমরা নাকি মানুষের সুখ দু:খ মান অপমান কিছুই বুঝি না। পশুদেরটা বুঝি। অবশ্য এই দুর্জনরা সকলেই মানুষ। পশুদের বক্তব্য আমার কখনো শোনা হয়নি। ... ...
হে গাছ, তোমাকে বলছি শোনো, শুনতে পাচ্ছো কি, কীভাবে কুরে কুরে খেয়ে চলেছে শরীর, মধ্যরাতের কীট? কুকুরের চিৎকার শুনে, আমি বড়জোর কল্পনা করতে পারি মানুষের হাসি, যারা শেষরাতে ঘরে ফেরে, মাতাল। এর বেশি হলেই এসে যায় শ্মশান, যেখানে তুমিও পুড়তে থাকো নির্বিকার। আমাকে প্রশ্ন করো না এখন, একটা অদ্ভুত স্বপ্ন শেষে এই মাত্র জেগেছি! অগোছালো আমি তাকিয়ে আছি দূরে। জানি, প্রশান্তির কোন সংজ্ঞাই দিতে পারে না কেউ। তবুও বিশ্বাসী মানুষ, প্রিয় ঘুম। এতসব হট্টগোল শেষে পড়ে থাকে হাড়, আর সেদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে লালা ঝরায় পোষা কুকুর। তারপরও আমি ভালবাসি জাদুঘর, ভালবাসি সাপের খেলা, বোমারু বিমান, কসাইয়ের দোকান। বর্ণিল মোড়কে এভাবেই ফিরে আসে বাধ্যবাধকতা, আর টিভির পর্দায় সারাদিন ভেসে থাকে সুখ। ... ...
ভারতীয় জাতি-ব্যবস্থায় শুদ্রের (দলিত) স্থান সবচেয়ে নিচে ও এঁরা সব থেকে কম সামাজিক সুবিধা পেয়ে থাকেন। বহু প্রাচীন এই সমস্যা। উচ্চবর্ণের মানুষের কাছে অশুচী এই মানুষরা ব্রাত্য ছিলেন বাড়ি বা মন্দির থেকে শুরু করে যে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে। তার ওপর ছিল সামাজিক ও অর্থনৈতিক শোষণ। ... ...
বিস্ময়ে আপন্ন 'গ্রে' মরমে মুড়িয়া / নিম ডালে টক শো'র তাম্বুটি গাড়িয়া। / মুদিত যে কথা ক'টি স্ট্রাটেজি উদরে / আফটার দ্য ব্রেক রচি পাঁচালি আকারে।। ... ...
তাকে সনাক্ত করা গেলে, অন্তত একবার প্রমাণসহ দেখা মিললে, খুন করা হবে। এ সিদ্ধান্তে কোনো দ্বিধা নেই, সংকোচ নেই। সিদ্ধান্ত যখন নেয়া হয়েই গেছে, তখন ফেরার পথও নেই। খুন করার পরে, নিজের কাছে অথবা অন্য কারো কাছে, কোনো কার্যকারণ কিংবা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে যেতে হবে না। পৃথিবীতে সব কিছু সবাইকে জানতে হয় না, অনেক কিছু না জেনেই মানুষ বেঁচে থাকে এবং মরে যায়। তাই তাকে মরে যেতে হবে। তার মৃত্যুর কারণ পৃথিবীর মানুষ জানবে না। হয়তো সে নিজেই জানবে না কেনো তাকে মেরে ফেলা হলো কারণটি অথবা কারণগুলো তাকে জানতে দেয়া হবে না। ... ...
হলটায় রোজ রোজ একটাই সিনেমা চলে। মিনিটরা আরো মিনিটদের ডাকে, ঘন্টারা আরো ঘন্টাদের, দিন,সপ্তা,মাস,বরষ ডাকে। আরো সব দিন, সপ্তা,মাস, বরষকে। সবার চোখের মণি জুড়ে এই একটা সিনেমাই চলে। মানুষ গুলো তাতে হাঁটে, বসে, ঘোরে, ফেরে। মানুষগুলোর চারপাশে হাওয়ায় ধুলোর কণার মত কথা ওড়ে। ছোটছোট গোলগোল কথা, বড়মত কোণাচে কথা, ভাঙাভাঙা গুঁড়োগুঁড়ো কথা।ওড়ে। সিনেমাটায় ঠিক এত ঘন্টা এত মিনিট পরে একটা মেরুন রঙের ট্রাম চলে যায়, সেই সময়েই রাস্তা পেরোয় একটা হলুদ ছাতা, আকাশ জুড়ে বিষ্টি থরথর ক'রে কাঁপতে থাকে। ... ...
জীবনবন্ধু পালিতের বাড়ি ফিরতে রোজই একটু রাত হয়। নি:সন্তান, বিপত্নীক মানুষ, বয়স ষাট ছুঁইছুঁই। ছোট বেসরকারী ফার্মের ক্যাশিয়ার, সন্ধ্যে পেরোলে হিসেব মিলিয়ে বাড়ি ফেরেন। জীবনবন্ধু নামটা একটু খটমট, তাই আপিসে সংক্ষেপে ওঁকে জীবনবাবু বলে ডাকেন অনেকে। কেউ কেউ আড়ালে জীবুবাবুও বলেন। এমনকি কানাঘুষোয় শোনা যায়, সদ্য জয়েন করা ছোকরা পিয়ন কানাই নাকি একবার পালুবাবু বলেও ডেকেছিলো। এসবই জীবনবাবুর গভীর দু:খের কারণ। ... ...
সবাই জানত শুধু ঐ বাড়িটায় কোনো প্যাঁচা থাকে না। বাড়িটার আধোঅন্ধকার চৌহদ্দির বাইরে জড়াজড়ি হয়ে থাকা ঝুপসি আম পেয়ারা আর বেলগাছের সবুজ ডালপালায় সন্ধে নামতে না নামতেই পাটকিলে বুটিবুটি প্যাঁচাদের ঠেক বসে যেত। কিছু প্যাঁচা বসত করত হাড়পাঁজরা বের করে ঠাঠা হাসতে থাকা বাড়িগুলোর ঘুলঘুলিতে, আর ঠাকুরবাড়ির চাতালের ডানদিকে ভেঙে পড়া ঘরগুলোর কুলুঙ্গিতে। আমাদের মতো টিনের ট্রাঙ্ক আর চটের পেটফোলা ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে আসা রিফিউজিরা পাড়াটার জমিখানাখন্দনালা জবরদখল না করলে প্রায় খন্ডহর হয়ে ওঠা গোটা সাত আট ইঁটের বাড়ি... ... ...
অনাদিবাবু কোনো সওদাগরী আপিসের কনিষ্ঠ কেরানী নন। মুদি দোকানও নেই তাঁর। জমি বাড়ির দালালিও করেন না। স্কুলমাস্টারিও না। বয়েস এখনও পঞ্চাশ হয় নি। ... ...
সুগোল জাম্বুরা আর বিড়াল-বেলুনের সমার্থক ছিল দূর্গাবিষর্জন। আমার ইচ্ছে ছিল এই বিষয়টি নিয়ে কিছু কথা বলবার। কিন্তু আমার ছোট বোন, আমার পিঠেপিঠি টুনটুনি বোন এসে হাজির হয়। তাকে নিয়েও গল্প বলা যেতে পারে। কারণ, সে ভেবেছিল, ঈশ্বর হয়তো বাবার মতো মানুষ অথবা বাবাই ঈশ্বর। আশলে সেসময় এক-দুই-তিন করে ডিকবাজি দিচ্ছিল শৈশব। তাই আমি, আমার বন্ধু নুরুজ্জামান, ইউনুস কনটেকাটারের ছোট ছেলে জহুর তখন সবাই মিলে সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠিরে মার্তিল-মার্তিল। ... ...
মাথার ভিতরে কিছু হাত-পা উল্টানো মৃত দেখতে পোকা ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায় না যদিও সেই পোকা হাত-পা ঠিকঠাক করে উড়ে যায় সেপ্টেম্বরে দুপুরে। সম্পাদক হুড়া দিলে আমি সেপ্টেম্বরে দুপুরে রিকশায় উঠি তাড়াতাড়ি বাসায় যাব বলে। ... ...
এই ঘরটায় স্টেগো থাকতো, আর ঐ ঘরটায় আমি থাকতাম। স্টেগোকে নিয়ে যত ভাবতে যাই, স্মৃতি ততই প্রতারণা করে। কিন্তু হ্যাঁ, এ কথা স্পষ্ট মনে পড়ে যে এই চেয়ারে বসে থেকে থেকে তার বাঁকা পিঠ বাঁকতে বাঁকতে একদিন মচ্ করে এমনই বেঁকে গেলো যে তারপর থেকে সে স্টেগো হয়ে যায়। এর পর ওর ঘরে আর যারা যারা থাকতো, মানে ডিপ্লো আর ব্রন্টো, তাদেরও সরে যেতে হলো কারণ কে না জানে যে এক জঙ্গলে দুটি শের থাকতে পারে না। অবশ্য ডিপ্লো আর ব্রন্টোও তখনও ডিপ্লো আর ব্রন্টো হয়নি। কিন্তু খুব শিগ্গিরি হবে হবে করছে। ... ...
আকাশ ছিল না। উপুড় করা চ্যাপ্টা বাটি পৃথিবীর ওপর। যা আকাশ নয়। অথচ পাখি ছিল, ডানা ছিল। একঝাঁক পাখি-ক্লান্ত অধৈর্য- ডানা মেলার খোঁজে একদিন ধাক্কা দিতে শুরু করল সেই উপুড় অর্ধগোলকে। আকাশ ভাসে না তবুও। তারা তখন তাদের চঞ্চু দিয়ে, চঞ্চুধৃত বৃক্ষশাখা দিয়ে -যে যেমন পারল-ধাক্কা দিতেই লাগল অনড় আকাশে- মাটিতে পা, চঞ্চু ঊর্দ্ধমুখী-লক্ষ ডানা ঝাপটাচ্ছে একযোগে - অবশেষে ভাসল আকাশ। উঁচুতে, আরও উঁচুতে, পাহাড় পর্বতের মাথা ছাড়িয়ে অনেক অনেক উঁচুতে। নাগালের বাইরে। ... ...
আব্দুর রহমান সাহেব তীব্র বিরক্তি নিয়ে বসে আছেন। হাতে অফিসের ফাইল। ফাইলে গুরুত্বপূরনো হিসেব আছে। হিসেব মিলছেনা। কিন্তু মিলতেই হবে। মেলাটা জরুরি। মাল্টিন্যাশনাল একটি কোম্পানির একটি দেশের হেড হবার কিছু ঝামেলা আছে। সেই ঝামেলা এখন রহমান সাহেবের উপর দিয়ে যাচ্ছে। হিসেবের কারনে এক রাত রহমান সাহেবের ঘুম হয়নি। যে হিসেব নিয়ে তিনি যন্ত্রনাতে আছেন, তা তার সামলানোর কথা না, অধীনস্থদের সামলানোর কথা। হিসেবের গোলমাল এর পরিমান বেশি, তাই রহমান সাহেব ফাইল বাড়িতে নিয়ে এসছেন। রাতে ঘুম না হবার কারনে মাথায় ঝিমঝিমে একটা অনুভুতি হচ্ছে। বিরক্তির কারনে তার দুই ভ্রু কুঁচকে একসাথে লেগে আছে। ... ...
অনেক দূরের থেকে আসা শব্দ এলো। বলা কওয়ার ধার ধারেনি কোনোদিনই। তাও সে অবুঝ শব্দগুলো ধুলো পায়েই / আমার তোমার বসার ঘরে আয়েস করে বসলো যখন, সোফার ওপর পা তুলেছে। অপ্রস্তুত হলেও তুমি চায়ের জন্য খবর পাঠাও ভিতরঘরে। ... ...