এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • জিমি আর কলতান  ১১

    Anjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৮ আগস্ট ২০২৪ | ১৪০ বার পঠিত
  • | | | | | | | | | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩
    রাত্রে খিচুড়ি খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল আশ্রমে। কাকলি খাওয়াদাওয়া করে ঘরে ফিরে গেল। কলতান দাঁড়িয়ে রইল। কারণ, স্বর্ণালি খেতে আসবে জিমিকে কাকলির জিম্মায় দিয়ে। জিমিকে খাওয়ানো হয়েছে ঘরেই।

    রাত সাড়ে দশটা নাগাদ কাকলিরা ঘুমিয়ে পড়ল দরজা ভেজিয়ে রেখে, বোধহয় প্রকৃতির ডাকে জিমির বাইরে যাবার সুযোগ রাখবার জন্য।

    ঠিক এগারোটার সময় কলতান নীচে নেমে গেল। গ্রামাঞ্চলে রাত এগারোটাতেই মাঝরাত মনে হয়। আশ্রমের প্রধান প্রবেশদ্বার বন্ধ। মন্দিরের দরজা বন্ধ। চারিদিক জনমানবশূন্য, নিস্তব্ধ। চতুর্দিকে অন্ধকার। এপাশে ওপাশে শালের জঙ্গলে রাতজাগা পাখি উসখুস করছে।

    প্রধান ফটকের আলোটা বোধহয় সারারাত জ্বালা থাকে। অফিসঘরের বাইরের বারান্দাতেও একটা কমজোরী আলো জ্বলছে। কলতান ঘড়ি দেখল ,এগারোটা বেজে পাঁচ মিনিট হয়েছে। অফিসঘরের মধ্যে দিয়ে মহারাজের কামরায় যেতে হয়। অফিসঘরের দরজা ভেজানো। তালা দেওয়া নেই। আশ্চর্যের ব্যাপার। বোধহয় তার জন্যই খুলে রাখা হয়েছে। কিন্তু ভিতর থেকে নিশ্চয়ই বন্ধ করা আছে। কলতান ভাবল, টোকা মেরে দেখা যাক। টোকা মারতেই দরজা ফাঁক হয়ে গেল ... মানে, খোলাই ছিল।

    ঘর ফাঁকা। মৃদু আলো জ্বলছে। কলতান ঢুকে পড়ল। ঢুকে বাঁ দিকে গেল। ঘরের দরজা বন্ধ। শুধু ভেজানো কিনা কে জানে। এটা বিশ্বম্ভরজির ব্যক্তিগত কামরা। যদি খোলা থাকে ঠেলে ঢুকে পড়াটা শিষ্টাচার হবে না। কিন্তু দরজা খোলাতে গেলে অন্তত টোকা মেরে তার উপস্থিতি তো জানান দিতে হবে।

    কলতান টোকা মারল এবং দরজা দুটো কেমন করে যেন হাট আলগা করে খুলে গেল। ভিতরে অন্ধকারে একটা তক্তপোষের চারদিকে চারটে প্রদীপ জ্বলছে। অন্ধকার, চোখে একটু সয়ে এলে নিস্তব্ধ রাত্রিতে কলতানের চোখের সামনে ফুটে উঠল ঠিক মন্দিরের ধবলকান্তি নীলকন্ঠের ধ্যানমগ্ন মূর্তির মতো এক গৌরকান্তি মানবদেহ চোখ বুজে ধ্যানস্থ হয়ে বসে আছে এবং সে সম্পূর্ণ নগ্ন। হতচকিত কলতান চমকে উঠে দেখল বিশ্বম্ভর মহারাজের পেটের বাঁ দিকে লম্বা গভীর অস্ত্রোপচারের দাগ একেবারে পরিষ্কার। শালকাঠের খাটের চারদিকে চারটে প্রদীপ জ্বলছে। দীপের আবছা আলো পড়ছে ধ্যানমগ্ন শরীরটির ওপর। একটা আধিদৈবিক পরিবেশ দোল খাচ্ছে ঘরের ভিতর।

    চমৎকৃত হবার আরও কিছু বাকি ছিল। কোথা থেকে জিমি কিসের আভাস পেয়ে কে জানে মহাব্যস্ত হয়ে ছুটে এসে ঢুকল এ ঘরে। বোধহয় কোনভাবে ওপরের দরজা খোলা পেয়ে গিয়েছিল। অপার্থিব জগতে বিচরণকারি বিশ্বম্ভর মহারাজের ধ্যানস্থ শরীরের সামনে দাঁড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে সে এক নাগাড়ে লেজ নেড়ে যেতে লাগল।
    ঘরে একটা মিষ্টি ঘুমপাড়ানি গন্ধ। কলতানের স্নায়ুতে সে গন্ধ একটু একটু করে ঢুকে পড়ছে।

    সারা দৃশ্যপট যেন এক অলৌকিক রহস্যের রূপ নিয়েছে। কলতানকে যেন কি এক নেশা টান মারছে ধীর গতিতে। কলতান তাড়াতাড়ি জিমিকে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এল। বিশ্বম্ভর বাবাজির কামরার দরজাটা বাইরে থেকে টেনে দিল। এই গন্ধটাই বিশ্বম্ভররূপী মনোময়ের মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণ সেটা পরিষ্কার বুঝতে পারল। কয়েক মূহুর্তের প্রভাবের ধাক্কায় এই অবস্থা। বহুদিনের প্রভাবে কি হতে পারে সহজেই অনুমান করা যায়।

    সবই কোন মহাগুরুর দেখানো পথ বলেই মনে হচ্ছে। তিনি বোধহয় বেছে বেছে ভক্ত তোলেন নিজের জালে। মুখের প্লাস্টিক সার্জারিটাও হয়েছে নিশ্চয়ই তার পরামর্শ মেনে। কলতানের মনে নানা অনুমান দানা বাঁধতে লাগল। বাইরের বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে কলতান তার পরবর্তী পদক্ষেপ সম্বন্ধে চিন্তা করতে লাগল। জিমি আবার বিশ্বম্ভরের ঘরে ঢোকার জন্য চঞ্চল হয়ে উঠেছে। কলতান ওকে কোনরকমে আটকে রেখেছে। জিমি তো অনেক আগেই তার সবচেয়ে কাছের লোককে চিনে নিয়েছে। শাক দিয়ে কি আর মাছ ঢাকা যায় ...

    ঠিক এই সময়ে ওপর থেকে ধড়মড় করে ঘুমচোখে মা আর মেয়ে নেমে এল, বোধহয় ঘরে জিমিকে দেখতে না পেয়ে।
    কাকলি দিশাহারা চোখে বলল, ' কি ব্যাপার ? '
    ---- ' কিছু না ... ঘাবড়াবেন না ... এটা কোন গোয়েন্দা কাহিনীর প্লট হতে পারে না ... অনেক আগেই জিমি সমস্যার জট খুলে দিয়েছে ... '
    ---- ' মানে ? '
    ---- ' মানেটা একটু পরেই বুঝতে পারবেন .... একটু দাঁড়ান... আমি এক্ষুণি আসছি .... জিমি কে ধরে রাখুন ....ওই ঘরে ঢুকবেন না এখন...'
    বলে কলতান ছুটে দোতলায় নিজের ঘরে চলে গেল। একমিনিটের মধ্যে ফিরে এল হাতে একটা স্প্রে টিউব ধরণের কিছু একটা নিয়ে।
    বলল, ' এটা একটা কেমিক্যাল নিউট্রালাইজার স্প্রে .... কাজ হবে কিনা জানিনা ... যাক চলুন... ' মহারাজের ঘরের বন্ধ দরজার সামনে এসে বলল, ' আপনারা ভেতরে যাবেন না ... '

    কলতান কামরার ভিতরে ঢুকে জানলা দুটো খুলে দিল। ঘরের টিউব লাইট জ্বালিয়ে দিল। ফুল স্পীডে ফ্যান চালিয়ে দিল। হাওয়া লেগে প্রদীপগুলো নিভে গেল। কলতান একটা কাপড় নিয়ে ঢেকে দিল মহারাজের শরীরের নীচের অংশ। নিউট্রালাইজার কেমিক্যাল স্প্রে করল বিশ্বম্ভরের নাকে মুখে বেশ কয়েকবার। রাসায়নিক প্রভাবে মহারাজের ধ্যান ভেঙে গেল। তিনি বোধহয় ভূমাস্তর থেকে ইহজগতে নেমে এলেন এবং চোখ মেললেন। চোখে এখনও ঘোর লেগে। তিনি সদ্য ঘুম ভাঙা মানুষের মতো ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলেন।
    কলতান দরজার মুখ ঘুরিয়ে বলল, ' এবার আসুন .... '

    কাকলি, স্বর্ণালি এবং জিমি ঘরে এসে ঢুকল। জিমিকে আটকানো হল না। সে লাফ মেরে তক্তপোষে উঠে গেল। বিশ্বম্ভরের কোলে উঠে পড়ল প্রায়। তার বুকের কাছে মুখ ঘষতে লাগল। এরপর কাকলি ,স্বর্ণালি বিষ্ফারিত চোখে দেখল যে বিশ্বম্ভর মহারাজ পরম স্নেহে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরেছেন জিমিকে। তিনি কিছুক্ষণ জিমির গলার কাছে মুখ গুঁজে রইলেন গভীর মমতায়। কাকলিদেবী প্রবল আবেগে তার মেয়ের হাত চেপে ধরলেন।

    কলতান ঘরের বাইরে এসে মোবাইলে লাভপুর পুলিশ স্টেশনের ফোন নম্বর ডায়াল করল এই রাত দুপুরে।
    ---- ' হ্যালো.... আমি কলতান গুপ্ত বলছি বীরভূমের এস পি-র রেফারেন্সে .... মাতলাপুরের সদানন্দ নিখিল ভূবন আশ্রমের ব্যাপারে ... '
    ---- ' হ্যাঁ.... আমাদের কাছে মেল এসেছে মিস্টার গুপ্ত .... কাল সকালে গেলে চলবে তো ? '
    ---- ' চলবে , সকাল আটটার মধ্যে কিন্তু ... '

    ( ক্রমশঃ )

    ***********
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | | | | | | | | | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন