এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • চীনের কাহিনী ১ : নিউলান ও চ্রিনুর কাহিনী : তৃতীয় পর্ব

    Debanjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ০১ জুলাই ২০২৪ | ১৮৫ বার পঠিত
  • কিন্তু তাকে অবাক করে চ্রিনু বললো, "দেখো আমি দেখতে পারছি স্বর্গে আমার জন্য শুধুই দুঃখ, পৃথিবীতেও অনেক দুঃখ দেখতে পাচ্ছি।কিন্তু আমার মনে হচ্ছে পৃথিবীতে একটা কিছু আছে যেটা স্বর্গে নেই। এখানে আমি স্বাধীন। "

    তারপর তাদের দুঃখ যখন এক হয়ে গেলো তখন আর চার হাত এক হতে বাধা কোথায় ? সেইদিন রাতেই চ্রিনু আর নিউলানের বিয়ে হয়ে গেলো। তারপর তাদের জীবন বেশ সুখেই কাটতে লাগলো।নিউলান কাঠ কাটে, চ্রিনু সিল্কের কাপড় বোনে, সপ্তাহে একদিন পাহাড়ের নিচের গ্রামে হাট বসে, সেখানে তারা তাদের গরুর গাড়িতে গিয়ে তাদের কাঠ আর কাপড় বেচে। প্রচন্ড পরিশ্রমী তারা দুজনেই আর হবেই বা না কেন, দুঃখী মানুষের তো পরিশ্রম ছাড়া আর কোনো বন্ধু নেই ! এইভাবেই আরো কয়েকটা বছর কেটে গেলো, নিউলান আর চ্রিনু তাদের পুরোনো কাঠের ঘরটাকে খেটেখুটে একটা ছোট কাঠের বাড়ি করে নিয়েছে, আর করবে নাই বা কেন ততদিনে তাদের পরিবার বেড়েছে, ঘরে এসেছে একটি ফুটফুটে খোকা ও একটি ফুটফুটে খুকি।চ্রিনু তাদের নাম দিয়েছে ছেলেটিকে সিয়াওরি (ছোট্ট সূর্য্য) ও মেয়েটিকে সিয়াওইয়ুএ (ছোট্ট চাঁদ)। নিউলানের বুড়ো গরু শুধু ঘরের বাইরে বসে থাকে আর তাদের দেখে জাবর কাটে।

    একদিন খুব সকালে নিউলান কাঠ কাটবে বলে বেরোচ্ছে, এমন সময়ে নিউলানের বুড়ো গরু তাকে বললো, "নিউলান বনে চলো, তোমাকে নিয়ে কিছু কথা আছে।" নিউলান একটু অবাক হলো কেননা চ্রিনু ঘরে আসার পরে তারা বুড়ো গরুকে দিয়ে খুব বেশি খাটাতোনা, খাটাবার জন্য আরো দুটো গরু তারা কিনেছিলো। আরেকটা ব্যাপার ছিল যে এই কটা বছরে বুড়ো গরু খুব বেশি কথা বলেনি কিন্তু এখন সে আবার হঠাৎ করেই আবার কি বলতে চায় ? যাইহোক সেদিন তাকে নিয়েই নিউলান বনে চললো। আস্তে আস্তে তারা এলো সেই উত্তরের পাহাড়ি ঝর্ণাটার কাছে যেইখানে নিউলান প্রথমবার চ্রিনুকে দেখেছিলো। সেই সময়টাতে গরমকাল শেষ হয়ে সবে শীত শুরু হচ্ছে, চারদিকের পিচ আর লি ফুলের গাছের থেকে পাতা ঝরা শুরু হচ্ছে, কুয়াশাতে ঘেরা চারদিক, শীতের একটা কামড় হাওয়াতে।

    বুড়ো গরু নিউলানকে বললো, "শোনো আর আমি বেশিদিন তোমাদের মধ্যে থাকবোনা।আমি ছিলাম এক স্বর্গের বোধিসত্ত্ব, তোমাদের সাহায্য করার জন্য কিছুদিনের জন্য পৃথিবীতে এসেছিলাম। আমার আসল নাম লাউনিউ। কিন্তু আমার পৃথিবীতে থাকার সময় শেষ। যাইহোক তোমাকে ধন্যবাদ এতদিন ধরে আমাকে ভালোবাসার জন্য। কিন্তু আজ আমাকে চলে যেতেই হবে। যাওয়ার আগে শুধু একটি কথা বলে যেতে চাই, আমি চলে যাবার পরে আমার চামড়া তুমি রেখে দাও, তোমার সবচেয়ে বিপদের দিনে ওটা তোমার কাজে আসবে।" এতসব বলার পরেই লাউনিউ মারা গেলো।

    লাউনিউ চলে যাবার পরে বেশ কিছুক্ষন নিউলান একা একাই সেখানে বসে রইলো। এই পৃথিবীতে চোখ খোলবার পর থেকেই সেইভাবে কোনো মানুষের স্নেহ সে পায়নি তার জীবনের সব খেলার সঙ্গী ছিলো তার ওই লাউনিউ গরু। বোধিসত্ব কাকে বলে সে জানতোনা কিন্তু কয়েক চাঁদ আগে কোথা থেকে সে শুনেছিলো যে কিছু মানুষ থাকে যারা স্বর্গ সুখের অধিকারী হলেও মানুষের ভালো করবার জন্য নানা রূপে তারা বারবার স্বর্গের সুখ ছেড়ে মানুষের মধ্যে নেমে আসে। লাউনিউ সারা জীবনই তার উপকার করেছিলো তার একমাত্র খেলার সাথী আর বন্ধু তো ওই ছিল আর চলে যাবার সময়েও লাউনিউ তার জন্য কিছু করে গেলো ! ওহঃ কতোটা বোকা সে এতোদিনেও কেন বোঝেনি কেনো লাউনিউ তার সঙ্গে কথা বলতো মানুষের মতো !!! এখন নিউলানের মনে হচ্ছে এই প্রথমবার এই এত্ত বড়ো পৃথিবীতে সে পুরোপুরি একা। লাউনিউ যতদিন ছিল, সে যে এতটা একা এই দুনিয়াতে সে বোঝেনি আজকে যেন সে সব বুঝতে পারছিলো দুনিয়াতে সে কতোটা একা !!!!

    সেই একা বনভূমিতে খুব কাঁদলো নিউলান। দুঃখী মানুষ একা না হলে আর কাঁদবে কখন? বেচারা নিউলান তখনো জানতোনা তার ছোট্ট সুখের দুনিয়াটা লাউনিউ চলে যাবার পরেই খুব তাড়াতাড়ি শেষ হতে চলেছে। যাই হোক শেষপর্যন্ত সে লাউনিউকে কবর দিয়ে ফিরে আসছিলো, বাড়ির কাছাকাছি আস্তে হঠাৎ একটি চিৎকার শুনে সে দাঁড়ালো। নিউলান দেখলো যে ছোট্ট সূর্য আর ছোট্ট চাঁদ তার দিকেই দৌড়ে আসছে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত মতামত দিন