এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  আলোচনা   অর্থনীতি

  • নিঃশব্দ বিপ্লবঃ অভিজিৎ ও এস্থারের ‘পুয়োর ইকনমিক্স’

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | অর্থনীতি | ১০ জানুয়ারি ২০২৩ | ১০৮৩ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • নিঃশব্দ বিপ্লবঃ অভিজিৎ ও এস্থারের ‘পুয়োর ইকনমিক্স’
    [ তিনবছর আগে গোটা দেশ যখন স্বেচ্ছা-গৃহবন্দী হয়েছিল, তখন সময়ের সদুপযোগ করে সদ্য নোবেলবিজয়ী এস্থার ডাফলো এবং অভিজিৎ বিনায়ক ব্যানার্জির ‘পুয়োর ইকনমিক্স’ বইটি পড়ে ফে্লেছিলাম। এটি তার পাঠ -প্রতিক্রিয়া। কিন্তু কোথাও হারিয়ে গেছল। আজ চোখে পড়ায় ধূলো ঝেড়ে পেশ করলাম।]  
    প্রস্তাবনাঃ
     ‘ঘরের ছেলে’ অভিজিৎবাবুর নোবেল প্রাপ্তিতে কোলকাতা আমোদিত, আহ্লাদিত হয়েছিল। অনেক লেখা অনেক গল্প জনসমক্ষে এল; বামপন্থীরা কাঁধ নাচালেন – কারণ অভিজিৎ জে এন ইউয়ে ছাত্রাবস্থায় কয়েকদিন জেলে ছিলেন, কানহাইয়া কুমারদের পূর্বসূরী বটেক!
    কেউ কেউ অভিজিতদের ‘আর সি টি’ বা ‘র‍্যান্ডমাইজড কন্ট্রোল ট্রায়াল’ পদ্ধতি নিয়ে নাক কোঁচকালেন—এর জন্যে ইকনমিক্সে নোবেল?  এ তো মেডিক্যাল রিসার্চে বহু-ব্যবহৃত পদ্ধতি!
    যারা একটু তলিয়ে ভাবেন তাঁরা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। কারণ, সমাজ পরিবর্তনের গ্র্যান্ড ন্যারেটিভ কই ? পলিটিক্যাল ইকনমির যে সুমহান ঐতিহ্য, যাতে অ্যাডাম স্মিথ ‘ওয়েলথ অফ নেশন্স’ নিয়ে চিন্তা করেন, মার্ক্স ক্যাপিটালিজমের গতিশীলতার মূল সুরকে তাত্ত্বিক কাঠামোয় বাঁধেন, কেইন্স অর্থনীতিকে বাঁচাতে বাজারের কাছে আত্মসমর্পণ না করে রাষ্ট্রের ভূমিকাকে গুরুত্ব দেন, শুম্পেটার টেকনোলজির ফলশ্রুতির দিকে আঙুল তোলেন এবং অমর্ত্য সেন এন্ডাওমেন্ট (উপলব্ধ তহবিল) এবং ক্যাপাবিলিটির ( আর্থিক সামর্থ্যের) অভাবে কীভাবে গরীব খাদ্যের প্রাচুর্যের মধ্যেও অনাহারে মারা যায় তার রহস্যভেদ করেন , সেখানে এই দম্পতি পাতার পর পাতা জুড়ে লিপিবদ্ধ করে চলেছেন অসংখ্য এম্পিরিক্যাল এভিডেন্স ! কীসের ? না গরীব দেশে গরীবেরা কীভাবে বেঁচে থাকে। ইন্দোনেশিয়া থেকে কেনিয়া, চেন্নাই থেকে উদয়পুর।
    আরে! আমরা তো ভাবছিলাম “ গরীবী হটাও” গোছের কিছু  ‘ওয়ান শট’ সমাধান পাব, কোন ম্যাজিক বুলেট! কিন্তু ওঁরা আমাদের নিরাশ করে বলেন যে ওঁদের কাছে এসব কিস্যু নেই । তাহলে ‘পুয়োর ইকনমিক্স’ এ কী আছে ? আছে এমন কিছু, ধরা যাক পাঁচটি শিক্ষা, যাতে গরীবেরা আরও একটু ভালভাবে বাঁচতে পারে । হ্যাঁ, এভাবেই একটু একটু করে গরীবেরা সমাজে , অর্থনীতিতে, রাষ্ট্র পরিচালনায় সশক্ত কন্ঠস্বর হয়ে উঠবে। গণতন্ত্রের নড়বড়ে কাঠামো মজবুত হবে এবং হাজার বছর ধরে কচ্ছপের মত টিকে থাকা দারিদ্র্য ক্রমশঃ উপে যাবে । যাবে কি ? সে তো মার্ক্স এবং লেনিনও ভরসা দিয়েছিলেন রাষ্ট্রযন্ত্রের ‘জাগারনাট’ পুষ্টির অভাবে ক্রমশঃ রোগা হতে হতে হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে ; গেল কি ?
    যদি মার্ক্স এবং লেনিনের কথায় ভরসা করে দেড়শ’ বা একশ’ বছর অপেক্ষা করেছেন, আর অভিজিতের কথায় পঞ্চাশ বছর অপেক্ষা করতে রাজি নন ? বাঙালী বলে ? এই তো সাড়ে তিনবছর আগে মোদীজির কথায় ভরসা করে পঞ্চাশ দিন অপেক্ষা করেছিলেন, কালাধন ধরা পড়ল বলে ।
    তা অভিজিৎ -এস্থার কী বলছেন দু’মিনিট দাঁড়িয়ে শুনতে দোষ কি ?
    ওরা বইটিতে কথা বলছেন দুটি ভাগে—এক, গরীবের জীবন এবং দুই, দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো।  শেষে আছে রাজনীতি এবং নীতি নির্ধারণ। আমরাও সেভাবেই ওঁদের অনুসরণ করব।
     ২   গরীবের জীবন এবং বেঁচে থাকার ডায়াগনোসিসঃ
    বলা ভাল , অভিজিতেরা গরীবী দূর করতে কোন একটি গ্র্যান্ড ন্যারেটিভে বিশ্বাস করেন না । অধ্যাপক রবার্ট সোলো’র ভাষায়ঃ ওরা দু’জন “ allergic to grand generalizations about the secret of economic development. Instead they appeal to many local observations and experiments to explore how poor people in poor countries actually cope with their poverty”।[1] এবং দু’জনের আগ্রহ-- ‘গরীবেরা কী জানে , কী চায় বা চায় না , ওরা কী আশা করে, কীভাবে নিজেদের খরচাপাতি বা জীবিকা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়’ (বঙ্গীকরণ আমার)।
    ওদের সোজাসাপটা কথা , গরীব মানুষের মাপকাঠি সব দেশে এবং সমাজে সমান নয় । আমেরিকার গরীবকে দেখে ভারতের গরীবকে বোঝা যাবে না । তাই সবার জন্যে এক দাওয়াই হতে পারে না । রোগী দেখে লক্ষণ, রোগের স্টেজ, রোগীর স্বাস্থ্য এবং বয়েস দেখে যেমন ওষুধের কম্বিনেশন এবং ডোজ ঠিক করতে হয় তেমনই তৃণমূল স্তরের বাস্তবতার অধ্যয়ন ছাড়াই কোন দাওয়াই বাতলে দিলে সেটা সবাইকে বাটার সাত নম্বর জুতো পড়ানো হয়ে যাবে ।
    অতএব কোন সুইপিং কনক্লুশনে পৌঁছনোর আগে এঁরা ব্যস্ত ছিলেন হার্ডকোর ডেটা বা তথ্য সংগ্রহে। লেগে গেছে কয়েক দশক। তথ্য এসেছে আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে। দুনিয়ার গরীবের জমাবড়া তৃতীয় বিশ্বেই যে !
    এঁদের চিন্তার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বিশ্বের দরিদ্রতম ব্যক্তি। বিশ্বের পঞ্চাশটি গরীব দেশের বিশ্লেষণে গড় দারিদ্র্যরেখা হল ভারতীয় মুদ্রায়  দিন প্রতি ১৬ টাকা আয়ে বেঁচে থাকা মানুষেরা। যাঁরা এর নিচে আছেন তাঁদের দেশীয় সরকার গরীব বলেই গণ্য করে।[2]
    এবার এঁরা খুঁজতে থাকেন গরীবেরা কোথায় থেমে যায়, কোথায় আর একটু ‘জোর লগাকে হেঁইসা’ করা দরকার। তাই এঁরা ঢুকে যান গরীব পরিবারের অন্দরমহলে; বুঝতে চান ওরা কি কেনে, ক’টি বাচ্চা চায়, তাদের এবং নিজেদের স্বাস্থ্য নিয়ে কী ভাবে, স্কুলে পাঠায় কিনা, কখন ছাড়িয়ে আনে, এবং এসব ব্যাপারে কীভাবে সিদ্ধান্তে আসে।
     এরপর আসে  ইন্সটিট্যুশনাল ফ্যাক্টর, মানে বাজার এবং রাষ্ট্র এদের জন্য কী ভূমিকা পালন করে। এরা সঞ্চয় করতে পারে কিনা, ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে কিনা, লোন পেতে পারে কিনা, আদৌ ধার করে কিনা। অসুখ-বিসুখে কী করে, স্বাস্থ্যবীমা জীবনবীমা? সরকার কখন এদের সাহায্য করতে ব্যর্থ হয় ।
    বিভিন্ন এনজিও যা করে তাতে আদৌ এদের কোন লাভ হয় কিনা, নইলে কোন বিকল্প আছে কি ? মাওবাদীদের মত বন্দুক তুলে ধরা?
    না ; এরা  বিশ্বজুড়ে পরিবারভিত্তিক অনুসন্ধান চালিয়েছেন বটে, কিন্তু ধেয়ানে রয়েছে বিশ্বজোড়া দারিদ্র্য দূরীকরণে কোন প্রেক্ষিত তৈরি করা, কোন সামান্য সিদ্ধান্তে পৌঁছানো। তাহলে অন্যদের সঙ্গে তফাৎ কি ? ফারাক হল এঁরা বাইরে থেকে চাপিয়ে দেওয়া কোন উজ্বল- উদ্ধার মন্ত্রে বিশ্বাসী ন’ন। এঁরা সমাধান খুঁজতে চান গরীবের হাত ধরে। রাষ্ট্রভাষায় বললে—সমাবেশী সমাধান বা ইনক্লুসিভ সল্যুশন।
    ফলে গরীবদের মুখে শুনতে চান ঠিক কোথায় ওরা আটকে যায় , কেন ছোট  ছোট দোকান বা পেশা ( ভারতে অসংগঠিত বা ইনফর্মাল সেক্টরেই ৯০% লোক রোজগার পায়) কিছুদিন পরে হয় বন্ধ হয়ে যায় বা একই জায়গায় থেমে থাকে। কেন অধিকাংশ গরীবের স্বপ্ন ছেলেমেয়েদের সামান্য পড়াশুনো শিখিয়ে কোনরকমে একটি সরকারি দপ্তরে লাগিয়ে দেওয়া?
     দারিদ্র্যের ফাঁদ এবং বেরিয়ে আসার উপায়ঃ
    এ বিতর্কের শেষ নেই , তবে এরা মোটামুটি দুটো মেরুতে বিভক্ত। অভিজিত ক্লান্ত, কেন এরা গরীবদের বস্তিতে ডায়রিয়া বা ডেঙ্গু ঠেকানোর স্থায়ী উপায় খোঁজার বদলে ‘বিগ কোশ্চেন’ নিয়ে ব্যস্ত।
    একটি মতঃ
     জাতিসংঘের পরামর্শদাতা জেফ্রি স্যাক্সের মত বিশেষজ্ঞরা বলবেন যতই চেষ্টা করা যাক , দারিদ্র্যের ফাঁদে আটকে থাকা গরীবদের জন্যে সাধারণ ওয়েলফেয়ার স্কীম, ব্যাংক লোন, স্টার্ট আপ –এসব হল ভস্মে ঘি ঢালা, কারণ এর প্রান্তিক আয়বৃদ্ধি এত কম এবং দারিদ্র্যের পিছুটান এত বেশি যে এরা পয়সা ফেরত করতে পারবে না , পুঁজিনিবেশ—আয় –উন্নতির চাকা দু’পাক ঘুরে থেমে যাবে । দরকার কিছু ক্রিটিক্যাল এরিয়ায়  বড় বিনিয়োগ করে দম-লগাকে-হেঁইসা  এবং ওদের কাদায় আটকে পড়া অবস্থা থেকে টেনে বের করা। এত টাকা দেবে কে ? কেন ? গৌরী সেন, মানে উন্নত দেশগুলো, মানে ফরেন এইড![3]
    অন্য মতঃ
    “পভার্টি ট্র্যাপ” বলে কিছু নেই , বিদেশী সাহায্য কোন কাজে আসে না, বরং গরীবদের করে  আলসে আর বাড়িয়ে তোলে ঘুষখোরি ও দুর্নীতি। দরকার খোলা বাজার, দরকার কিছু ইনসেন্টিভ; ব্যস, বাকি গরীবেরা সব করে নেবে।[4]
    কোন মতটি ঠিক?  এভিডেন্স কী বলে? অভিজিতরা বলবেন কোন পক্ষেই অমন পষ্টাপষ্টি  সাক্ষীপ্রমাণ নেই । বইটি বলে দেবে কোথায় কী পরিস্থিতিতে বিদেশী সাহায্য কাজে দিয়েছে , কোথায় ধনেপ্রাণে ডুবিয়েছে।
    এঁরা বলছেন যে ডিবেটটাই ভুল, ইস্যু এটা নয় যে পয়সা কোত্থেকে আসছে, বরং দেখা দরকার কোন খাতে এবং কীভাবে পয়সা খরচ করলে গরীবের লাভ হবে। কারণ, বিদেশী হোক বা স্বদেশী, কোন সরকারই গরীব-গুর্বোর পেছনে বেশি পয়সা খরচ করে না , বরং ঢক্কানিনাদই সার। ভারতে গরীবদের কল্যাণমূলক যোজনার প্রায় সবটাই আসে সরকারের নিজস্ব সূত্রে, বিদেশী সাহায্য থেকে নয় । আফ্রিকাতেও বিদেশী সাহায্য সরকারের বাজেটের মাত্র ৫.৭%।[5]
    কিন্তু ‘দারিদ্র্য’ যে একটা অশ্লীল ব্যাপার এবং একে যে চিরস্থায়ী বা ঈশ্বরের ইচ্ছে বা কর্মফল বলে মেনে নেওয়া যায় না – এনিয়ে কোন দ্বিমত নেই । তাহলে ?
    WHO বলছে ২০০৮ সালে বিশ্বে প্রায় ১ মিলিয়ন লোক ম্যালেরিয়ায় মারা গেছে, অধিকাংশ আফ্রিকার ছেলেমেয়ে।[6]
    দশ ডলার খরচা করলে একটা গোটা পরিবারকে কীট-পতঙ্গ নিরোধক মশারি (ইন্সেক্টিসাইড-ট্রিটেড বেড নেটস) দিয়ে তার ব্যবহার শিখিয়ে দেওয়া যায় । কিন্তু গরীব পরিবার দশ ডলার খরচ করবে , নাকি খোলা জায়গায় ভগবান ভরসায় শুয়ে মশার কামড় খেয়ে মরার চান্স নেবে? যদি বিনিপয়সায় দেওয়া যায় তাহলে?
    এখানে মালি এবং কেনিয়ার গরীব মানুষদের মধ্যে মিনিমাগনা বিলিয়ে, কিনতে উৎসাহ দিয়ে , সাবসিডি দিয়ে বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে সেই আর সি টি (র‍্যান্ডমাইজড কন্ট্রোল ট্রায়াল) পদ্ধতিতে অনুসন্ধান চালিয়ে বোঝা গেল, দানছত্র নয় , সবচেয়ে ভাল ফল পাওয়া গেছে যখন ওদের বোঝানো গেছে যে আজকের দশ ডলার বিনিয়োগ সুনিশ্চিত করবে আগামী দিনে পরিবারে কেউ মরবে না এবং ছেলেমেয়েগুলো একটু উঁচু ক্লাস অব্দি পড়বে , ফলে একটু ভাল চাকরি পাবে আর গোটা পরিবারে চাকরিকরা লোক বেড়ে গেলে পরিবারটিও একটু সুখের মুখ দেখবে।
    কিছু কৌতুহলজনক রিসার্চ
    আমরা কি জানতাম স্কুলের পড়ুয়ারা গরীব বাচ্চারা কী পরিণাম কৃমির উৎপাতে ভোগে? বা, এটাও ড্রপ-আউটের একটা বড় কারণ, শুধু দারিদ্র্য নয় ? আর একটু খেয়াল করে তাদের স্কুলে নিয়মিত ওষুধ খাওয়ালে (পোলিও ড্রপ ক্যাম্পেনের মত ) তাদের স্বাস্থ্য এবং স্কুলে যাওয়ার প্রতিশত বাড়বে, ফলে পরিবারটির আয়বৃদ্ধি  এবং আর্থিক সুরক্ষার সম্ভাবনাও?
    অথবা, ভারতে দু’বেলা পেট ভরে দু’মুঠো খেতে পায় না এমন পরিবারের সংখ্যা ১৯৮৩ (১৭%) থেকে কমে ২০০৪ সালে ২% হয়েছে?[7]
    বা, সিয়েরা লিওনে ভোজনে ১০% ক্যালোরি বৃদ্ধির ফলে কৃষিশ্রমিকের উৎপাদকতা ৪% বেড়েছে ? জন স্ট্রসের এম্পিরিক্যাল স্টাডি কিন্তু তাই বলছে।[8]
    ১৯৯৬ সালের বিশ্ব খাদ্য সম্মেলনে  রাষ্ট্রসংঘের  ফুড এন্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন (এফ এ ও) হিসেব কষে বলল-- সে’ বছর যা খাদ্য উৎপাদন হয়েছিল তাতে গোটা দুনিয়ার প্রত্যেকটি লোক রোজ ২৭০০ ক্যালোরি ভোজন পেতে পারে ।
    তাহলে আজও কেন তৃতীয় বিশ্বের নানা জায়গায় অনাহারের ঘটনা চোখে পড়ে? অভিজিতের উত্তর হল – বন্টনের সমস্যা; খাদ্যাভাব নেই কিন্তু অসম বন্টন। আমরা যদি খাদ্যশস্য জ্বালিয়ে বায়োফুয়েল বানিয়ে আমার সুইমিং পুল গরম করি তাহলে সবার পাতে খাবার কম পড়বেই।[9]
    অমর্ত্য সেনের ক্যাপাবিলিটি (আর্থিক সামর্থ্য) এবং এনডাওমেন্ট ( হাতের নাগালে যে তহবিল) মনে পড়ছে বটে!
    এইধরণের বিভিন্ন তৃণমূল স্তরের সাক্ষ্য দেখাচ্ছে যে ফুড সাবসিডি দিলে বা আয় বাড়লে গরীব মানুষ যে ভাল খাবে এমন নয় । খাবার শস্তা হলে বা হাতে পয়সা আসলে ওরা অন্য অনেক জিনিসে খরচ করবে; কারণ রোজকার জীবন খাবার ছাড়া অন্য অনেক কিছু জন্যে হাত পেতে বসে আছে। এটা শুধু কেনিয়া বা ইন্দোনেশিয়া নয়, ভারতের ক্ষেত্রেও সমান সত্যি।
    তাই দরকার ফুড পলিসি নিয়ে নতুন করে ভাবা প্র্যাকটিস করা। গর্ভবতী মা এবং শিশুর উপর বিনিয়োগ করলে, অর্থাৎ বিভিন্ন মাইক্রো-নিউট্রিয়েন্ট যুক্ত খাবার নিয়মিত দেওয়ার ব্যবস্থা করলে, দীর্ঘকালীন সামাজিক লাভ অমূল্য। কেনিয়ায়, উগান্ডায়, মোজাম্বিকে, কলম্বিয়ায়, এবং মেক্সিকোতে এ নিয়ে কাজ শুরু হয়ে গেছে।  অন্য অনেক দেশের মত ভারতে দরকার আয়রন এবং আয়োডিনযুক্ত খাবার দেবার নীতি। কিন্তু আমাদের খাদ্যনীতি এখনও সেই কয়েক দশক আগের মন্ত্র আঁকড়ে রয়েছে—গরীবের জন্যে শস্তা দরে খাদ্য চাই , দু’টাকা কিলো চাল, ব্যস।[10]
    হাতের কাছে ঝুলে থাকা ফলগুলিঃ
      অভিজিতেরা ভাবলেন আগে বিশ্বজুড়ে দরিদ্র মানুষের জন্যে সুলভ স্বাস্থ্য পরিষেবার কথা ভাবা যাক । মানুষ আগে বাঁচবে (ভারতে জন্মের পর ছ’বছর বয়সের আগে শিশুমৃত্যুর দর বেশ বেশি), নীরোগ এবং সুগঠিত দেহ নিয়ে বড় হবে, তারপর বাকি কাজ। এগুলোকে এরা বলছেন ‘লো-হ্যাঙ্গিং ফ্রুট’, একগাদা সহজলভ্য ফল; যেমন পরিষ্কার বিশুদ্ধ পানীয় জল, টিকা লাগানো, মশারি খাটানো (ফ্যালসিফোরাম ম্যালেরিয়ায় ভারতের গ্রামাঞ্চলে , যেমন ছত্তিশগড়ে মৃত্যু—আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা)।
      কিন্তু ২০০৫ সালের শীতকালে উদয়পুরে নার্সদের মধ্যে কাজ করতে গিয়ে ওঁরা দেখলেন নাগালের মধ্যে হলেও ফল পেড়ে আনা তত সহ্জ নয় । শুধু ইকনমিক ফ্যাক্টর নয় , সোশ্যাল এবং অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ডেলিভারি সিস্টেম এক বড় জগদ্দল পাথর।এছাড়া রয়েছে কুসংস্কার এবং বৈজ্ঞানিক শিক্ষার অভাব।
      গ্রামের দিকে অনেক মা বিশ্বাস করেন না যে ওআরএস দ্রবণ বা এককাপ জলে এক চিমটি নুন, এক চামচ চিনি গুলে শিশুর প্রাণ বাঁচানো যায় । আর যদি একটু পটাশিয়াম ক্লোরাইড এবং অ্যান্টাসিড মেলানো যায় তো সোনায় সোহাগা।[11]
       তবু আশা মরে না। লাতিন আমেরিকার বেশ কিছু দেশে এবং ভারত ও শ্রীলংকার অধ্যয়ন বলছে ‘একজন ম্যালেরিয়ায় ভোগা শিশুর তুলনায় একজন ম্যালেরিয়া-মুক্ত পরিবেশে বড় হয়ে ওঠা শিশু তার সমগ্র কর্মজীবনে প্রতি বর্ষ ৫০% বেশি আয় করে’। [12]
    মিনি-মাগনা পরিষেবা কি ফালতু? গরীবেরা কী ভাবে?
    উইলিয়াম ইস্টারলির মত অনেক মুক্ত-বাজারের উপাসকেরা তাই ভাবেন বটে।[13]
      এদের চুটকি গল্পগুলো, যেমন আফ্রিকায় ভর্তুকি পাওয়া মশারি কেটে বিয়ের ওড়না, ভারতে টয়লেট পট দিয়ে ফুলগাছের গামলা এবং চল্লিশ বছর আগে নিরোধ দিয়ে বাচ্চাদের হাতে বেলুন, বৃহত্তর অধ্যয়নে ধোপে টেঁকেনি। তাহলে কী সেই ফ্যাক্টর যা গরীবকে সুলভ ইমিউনাইজেশন বা টীকাকরণের ব্যাপারে নিরুৎসাহ করে?
     উদয়পুরে এনজিও সেবামন্দিরের  কাজ খতিয়ে দেখাঃ অন্ধ-বিশ্বাসের ভুমিকা
    ওখানে গাঁয়ের লোকের বিশ্বাসঃ বাচ্চারা মারা যায় কুলোকের নজর লাগলে। আর টিকা লাগাতে বাচ্চাদের ঘরের বাইরে বের করলে ‘নজর’ লাগার সম্ভাবনা বেশি। তখন এনজিও চেষ্টা করল টিকা লাগাতে ক্যাম্পে এলে দু’কিলো ডাল আর স্টেনলেস স্টিলের বাটি ফ্রিতে পাওয়ার টোপ দিয়ে দেখা যাক ।
    এঁরা স্টাডি করে দেখলেন এত সব করেও বাচ্চাদের টিকে নেওয়া ৬% থেকে বেড়ে হল ৩৮%। অভিজিৎ খুশি; একটি বাচ্চার টিকে নেওয়া শুধু ওকে একা নয় , আরও অনেককে  সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচায় (করোনা –২০২০ সালের লকডাউন এফেক্টের কথা ভাবুন)। তা হলে ৩৮%কে বিশাল উপলব্ধি বলে ধরা উচিৎ।
     কিন্তু সুলভ হলেও গরীব মা-বাপ সন্তানের সুরক্ষায় এগিয়ে আসে না কেন ? অধ্যয়ন বলছে ব্যাপারটা বিশ্বাসের। লোকে বুঝতে পারছে না কেন একটা অসুখের টিকা একাধিকবার নিতে হবে। বিশ্বাস করছে না যে এতে কিছু হবে।
      এছাড়া একটা অসুখের টিকে নিয়ে কি হবে? অসুখ যে অনেকগুলো। তারপরে একটা টিকা নেওয়ার পর যদি একবার অসুখটা হয় লোকে ভাবে সরকার বা এনজিও ওদের বোকা বানিয়েছে।
      অনেক পর্যবেক্ষণের পর অভিজিতদের সিদ্ধান্তঃ গরীবেরা অসুখের তাৎকালিক বা নতুন আক্রমণে ডাক্তারের কাছে দৌড়ে যায় , প্রায় সম্পন্নদের মতই খরচাপাতি করে। কিন্তু ক্রনিক বা পুরনো রোগে এরা খরচ করতে চায় না , প্রাথমিকতা বদলে যায় । [14]
     এ’নিয়ে রাজনৈতিক ডান এবং বাম দু’দলেরই এক রায়--- ফ্রি টিকাকরণ কোন কাজের নয় ।
    ডানের যুক্তি—অপব্যয়, গরীবেরা কোর্স পুরো করে না ।
    বামের যুক্তি—এইসব ডাল এবং বাসনের ঘুষ দিয়ে ফ্রি ইম্যুনাইজেশন এবং এনজিও’র প্রোগ্রাম একরকম গরীবকে ছোট করে। আমাদের উচিত ওদের ওপর নিজেদের এজেন্ডা না চাপিয়ে ভাল করে বোঝানো; পরে ওরা নিজেরাই এগিয়ে আসবে।
    অভিজিত বলছেন – দু’পক্ষই সমস্যাটিকে নিয়ে একবগগা চিন্তা করছে।
    এক, এই এক্সপেরিমেন্ট দেখাচ্ছে যে নজর-লাগা নিয়ে অন্ধবিশ্বাসটি তেমন দৃঢ়মূল নয় । নইলে ৩৮% বাপ-মা ডাল না নিয়ে ঘরে বসে থাকত।
    দুই, সব বিশ্বাস সমান দৃঢ় নয় । মেয়ের বিয়ে যে নিজের জাতে দিতে হবে এ’নিয়ে ওই এলাকার লোক ভীষণ কট্টর; বস্তাভরে ডাল বা বাসন দিয়েও টলানো যাবে না ।[15]
    পদ্ধতি ও প্রয়োগ
    এবার অভিজিত-এস্থারের পদ্ধতি নিয়ে দুটো কথা বলা দরকার। কারণ, ওঁরা নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন তাঁদের গবেষণার ফল বা থিওরির জন্যে নয়, বরং তাঁদের রিসার্চের মেথডলজির জন্যে। মুখ্যতঃ মেডিক্যাল সায়েন্সে বহু-ব্যবহৃত Randomized Control Trial (RCT) নামের পদ্ধতিটিকে ইকনমিক্সের মত সোশ্যাল সায়েন্সে সফল ভাবে প্রয়োগের জন্যে।
    ব্যাপারটা কী সেটা অভিজিতের মুখেই শোনা যাক।
    অভিজিত বলছেন –এক,  বর্তমানে এই উন্নত টেকনোলজির সময়ে অনেকগুলো অনুন্নত দেশের থেকে আগের থেকে বেশি উচ্চ গুণমানের ডেটা পাওয়া যাচ্ছে।
        দুই, ওঁরা ব্যবহার করছেন এক powerful tool যার নাম Randomized Control Trial, সংক্ষেপে (RCT)। এর ফলে গবেষকেরা-- যাঁরা স্থানীয় পার্টনার নিয়ে কাজ করছেন, -- তাঁরা তাঁদের থিওরিগুলো যাচাই করার উদ্দেশে বড় বড় পরীক্ষায় হাত দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।
     RCT পদ্ধতিতে--ধরুন উপরোক্ত মেডিকেটেড মশারি পরীক্ষা-- বিভিন্ন ব্যক্তি বা জনগোষ্ঠীকে ভিন্ন ভিন্ন ‘ট্রিটমেন্ট’ বা প্রয়োগ দেওয়া হয়।‘ট্রিটমেন্ট’গুলো আলাদা হতে পারে অথবা একই প্রোগ্রাম বা কার্যযোজনার ভিন্ন রূপ বা সংস্করণ হতে পারে।
      যেহেতু আলাদা আলাদা স্যাম্পল বা ব্যক্তিকে একটি গ্রুপ থেকে- কোন পূর্বনির্ধারিত শর্ত ছাড়া- প্রায় এলোমেলোভাবে বেছে নেওয়া হয়েছে এবং আলাদা আলাদা ট্রিটমেন্ট দেওয়া হয়েছে , তাই ওদের মধ্যে কোন তফাৎ দেখা গেলে তাকে ওই ট্রিটমেন্ট এরই প্রভাব বলে মানতে বাধা কোথায়?
     ওঁরা মানছেন, একটি বিচ্ছিন্ন পরীক্ষণের থেকে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাওয়া সঠিক নয়। এটাও বোঝা মুশকিল যে একটি সমাধান অন্য ভৌগলিক সামাজিক পরিবেশে কতটুকু কাজে আসবে। কেনিয়ার সমাধান কি ম্যাডাগাস্কারে প্রযোজ্য?
    তাই দরকার অনুরূপ পরীক্ষণ, আরও ভিন্ন ভিন্ন লোকেশনে।
    এবার বিভিন্ন অ্যান্টি-কোভিড টিকা নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট আমাদের মনে আসবেই।
    এইভাবে ওঁরা এগিয়ে চলেন, বুঝতে চেষ্টা করেন—গরীবেরা বাস্তবিক কী ভাবে বাঁচে, তাদের সত্যি কী চাই এবং কী চাই না।
     ওঁরা ২০০৩ সালে বানালেন Poverty Action Lab যা আজকে Abdul Latif Jameel Poverty Action Lab বা J-PAL।  
    উদ্দেশ্য হল সরকারি পলিসির বাঁধা গতের বাইরে উৎসাহী গবেষক, বিভিন্ন এনজিও এবং সরকারের সঙ্গেও হাত মিলিয়ে উপরোক্ত পদ্ধতির (RCT) সাহায্যে রিসার্চ করতে সুযোগ এবং সুবিধে দেওয়া।
    তার ফল? এই সংস্থার অধীনে ২০১০ নাগাদ ৪০টি দেশে ২৪০ টি পরীক্ষা চালিয়েছে।
    এখানে উল্লেখ করতে চাই যে ফ্রান্সের টমাস পিকেটির আলোড়ন তোলা বই  “ক্যাপিটাল ইন দ্য টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি”তে উনি ভারতের ইকনমিক ডেটার জন্যে অভিজিত বিনায়ক ব্যানার্জির ঋণ স্বীকার করেছেন।
    গরীব ও কিছু বিতর্কিত প্রশ্ন
    ওঁদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা নিয়ে এক্সপেরিমেন্টগুলো প্রশ্ন করছে কিছু মান্য ধারণাকে। যেমন, আমেরিকায় ছাত্রদের পরীক্ষায় হাই-গ্রেড পাওয়া গোছের দীর্ঘকালীন লক্ষ্যের জন্য পুরষ্কার দেওয়ার পরীক্ষা সফল হয় নি, কিন্তু বই পড়ার জন্যে পুরষ্কারের প্রয়োগ ভাল সাফল্য দেখিয়েছে।
    ভারতের শিক্ষাক্ষেত্রে কাজ করা নামকরা এনজিও “প্রথম” এর সঙ্গে বড়োদরার সরকারী স্কুলে কম্পিউটারের সহায়তায় পড়াশুনোর পরীক্ষণটি সফল হয়। ক্লাস থ্রি-ফোরের বাচ্চাদের জোড়ায় জোড়ায় এক একটা কম্পিউটার দিয়ে বলা হয় ম্যাথসের প্রব্লেম সল্ভ করতে। তাহলে পাবে একটা দারুণ গেম, যেমন মহাকাশে বর্জ্য পাঠিয়ে দেওয়া।
      অংকের সমস্যাগুলো ক্রমশঃ কঠিন থেকে কঠিন করে দেওয়া হল। দেখা গেল শুধু এগিয়ে থাকা ভাল ছেলেই নয়, পিছিয়ে থাকা ছেলেরাও সমান ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।
    অভিজিতের সিদ্ধান্তঃ কম্পিউটারের মাধ্যমে পড়ার সুবিধেটা ঠিক কী?
    “Each child is able to set his or her own pace through the program”.[16]
    ওঁর মন্তব্য-- শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষকের গুণবত্তা, টেকনোলজিকে অবহেলা এবং গাদা গাদা স্কুল খোলার ফলে অধিকাংশ ছেলেমেয়ে তেমন কিছু শিখছে না। তাতে সমালোচনা হচ্ছে যে অভিজিত বড়লোক ও গরীবঘরের ছেলেমেয়েদের জন্যে দু’রকমের শিক্ষার কথা বলছেন।  
    ওনার তীব্র আপত্তিঃ ধনীর দুলাল এলিট স্কুলেই পড়ে, দ্বৈত ব্যবস্থা রয়েছেই। উনি শুধু চাইছেন এমন ব্যবস্থা হোক যে ক্লাসের শুধু প্রথম দুটো বেঞ্চে বসা বাচ্চারাই নয়,মাস্টারমশাইরা গোটা ক্লাসের বাচ্চাদের শেখানোর দায়িত্ব অনুভব করুন।
    এখানে যোগ করছি যে দিল্লির আপ সরকার তাদের সরকারি স্কুলের মানোন্নয়নে ডাফলো-অভিজিতের পরামর্শ নিয়েছে।  
    গরীব ও জনসংখ্যা
    অভিজিত ঢুকে পড়েছেন ম্যালথাস এবং তার পালটা জনসংখ্যা বিতর্কে। দেখাচ্ছেন যে যাঁরা বলছেন গরীবেরা কন্ট্রাসেপ্টিভ জানে না (ডিমাড সাইড) বা যাঁরা বলছেন ওদের হাতে হাতে নিরোধ ধরিয়ে দিলেই কেল্লা ফতে –তাঁরা মূলতঃ একই চিন্তার শরিক।
    অভিজিত তাঁর স্টাডির ভিত্তিতে প্রশ্ন তুলেছেন—বড় পরিবারে দোষ কী?
    ইন্দোনেশিয়ায় কয়েক হাজার পরিবারের সার্ভে (১৯৭৬, ১৯৮০, ১৯৮৬) এবং কলম্বিয়ার প্রোফ্যামিলিয়া প্রোগ্রাম দেখিয়েছে যে ক্লিনিক এবং কন্ট্রাসেপ্টিভের যোগান অবশ্যই জন্মের হার কমায়, কিন্তু খুব সামান্য অনুপাতে।
    বাংলাদেশের ‘মতলব’ প্রোগ্রামটিকে কন্ট্রাসেপ্টিভ বিতরণ মডেলের সাফল্যের শো-কেস হিসেবে তুলে ধরা হয়। কিন্তু অভিজিত দেখাচ্ছেন যে ওটা সাফল্যের মূল কারণ নয়। আসল কারণ একেকজন ফিল্ড ওয়ার্কারের পর্দানশীন পরিবারে বাই-উইকলি ভিজিটের মাধ্যমে ভাল করে বোঝানো ও লেগে থাকা।
    ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের অর্থশাস্ত্রী ল্যান্ট প্রিচেটের মতে এই প্রোগ্রামে প্রতি মহিলা বার্ষিক খরচ সরকারের সাধারণ  পরিবার নিয়ন্ত্রণ প্রচারের চেয়ে ৩৫ গুণ বেশি! আরও বলার মত যে ১৯৯১ থেকে প্রোগ্রাম এরিয়াতে প্রজনন দর নামা বন্ধ হয়ে গেছল এবং ১৯৯৮ নাগাদ প্রোগ্রাম এরিয়া, কন্ট্রোল এরিয়া এবং বাকি বাংলাদেশে প্রজনন দর খুব কাছাকাছি ছিল।
    অর্থাৎ, দীর্ঘকালীন সরকারি পরিবার নিয়ন্ত্রণ প্রচার গোটা দেশেই সচেতনতা বাড়াচ্ছিল। ‘মতলব” প্রোজেক্ট তার প্রোগ্রাম এরিয়ায় তার কিছু গতিবৃদ্ধি করেছিল মাত্র।
    ইন্দোনেশিয়ার মাইক্রো-অধ্যয়ন থেকে অভিজিত বলছেন যে গরীবের চোখে সন্তান হল  আর্থিক প্রগতির জন্যে সহায়ক—একই সঙ্গে বীমা পলিসি, সঞ্চয়ের মূর্ত রূপ এবং লটারি টিকেট, সব মিলিয়ে একটি সুবিধেজনক ছোট্ট প্যাকেজ। তাই অনেক গরীবের কাছে সন্তান বৃদ্ধি মানে গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক বিনিয়োগ।
    গরীব হওয়া মানে দৈনন্দিন “ঝুঁকি” নিয়ে বাঁচা—শুধু আয় এবং খাবারের সমস্যাই নয়, রয়েছে স্বাস্থ্য, রাজনৈতিক হিংসা এবং অপরাধ ও দুর্নীতির শিকার হওয়া। কোন হেজ-ফান্ড ম্যানেজারকে এত “ঝুঁকি”র মোকাবিলা করে বাঁচতে হয় না।[17]
    গরীব ও সংস্থাগুলো
    বইটির দ্বিতীয় ভাগের শীর্ষনাম ‘Institutions’ । এতে রয়েছে গরীবদের ঋণ দেওয়া, মাইক্রো ক্রেডিট সংস্থার সীমাবদ্ধতা, রাজনীতির ভূমিকা এবং আরও অনেক কিছু। এখানে এই সামান্য পরিসরে কিছু বিষয়কে আলগোছে ছুঁয়ে যাচ্ছি।
    ব্যাংকের সিস্টেমটাই এমন যে গরীবকে ঠিক ঋণ দেওয়ার যোগ্য ধরা হয় না। এ নিয়ে শুধু আম জনতা নয়, আমার মত ছাপোষা ব্যাংক কর্মচারিও একমত। উপায় নিজেদের মধ্যে হাত ধরাধরি।
    বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রফেসর নোবেল-পাওয়া মহম্মদ ইউনুসের  মাইক্রো-ফাইনান্সভিত্তিক সেলফ-হেল্প -গ্রুপ অবধারণা এবং গ্রামীণ ব্যাংক গঠন সারা বিশ্বেই গরীবদের জন্য এক বিকল্প বিত্তীয় সহায়তার মডেল নিয়ে এসেছে। তবে এর সমালোচনাও কম হয় নি ।
    অভিজিত ভারতের সবচেয়ে বড় মাইক্রো-ফাইনান্স সংস্থা SKS Microfinance এবং ঘানার অনুদান-যুক্ত ফসল বীমার অধ্যয়ন থেকে সিদ্ধান্তে পৌঁছেচেন যে  ফসলের উপযুক্ত দাম না পাওয়ার ভয়ে যে কৃষকেরা দামী সার ব্যবহার করে ইনপুট কস্ট বাড়ানো এড়িয়ে চলত, তারাই সাবসিডি-যুক্ত বীমার প্রিমিয়াম দিতে রাজি হচ্ছে। কারণ, ফসল মারা গেলে ধনেপ্রাণে যাবে, তারচেয়ে একটু শস্তা প্রিমিয়াম দিয়ে  বীমা করালে ভবিষ্যত সুরক্ষিত হয়।
    তাই কিঞ্চিৎ চড়া সুদের হার সত্ত্বেও মাইক্রো ফাইনান্স গরীবের ভাল বিকল্প।
    তবু ধন্দ ঘোচে না। গরীবকে ধার দেওয়া বা পুঁজি যোগানো কি এতই সরল?
    শহুরে এবং গেঁয়ো গরীব
    উদয়পুরের সার্ভে বলছে গ্রামের গরীবদের এক-তৃতীয়াংশ ঋণ নেয়।
    তাদের ২৩% নেয় আত্মীয়দের থেকে, ১৮% সুদের কারবারীদের থেকে, ৩৭% দোকানদারের থেকে এবং মাত্র ৬.৪% ব্যাংক বা কো-অপারেটিভ গোছের কোন ঋণ দেওয়ার প্রতিষ্ঠান থেকে।
    কারণটা কী? কাছাকাছি ব্যাংক না থাকা?
    তাহলে হায়দ্রাবাদের শহরের গরীবদের হাল দেখুন।
    সুদের কারবারীদের থেকে  নেয় ৫২%, বন্ধু এবং প্রতিবেশিদের থেকে ২৪%, আত্মীয়দের থেকে ১৩%,  মাত্র ৫% নেয় ব্যাংক থেকে।
    ১৮টি দেশের ডেটা বলছে ছবিটা সর্বত্র একই—ব্যাংকের থেকে ঋণ নেয় শহুরে গরীবদের ১০% আর গ্রামের ৫%।
    এরপর উনি বিস্তারিত আলোচনা করেছেন মাইক্রো-ক্রেডিট সংস্থাগুলোর কী আছে যা মেইন্সট্রিম ব্যাংকের নেই এবং কেন ধনীদের ঋণ দেওয়ার ব্যয় ব্যাংকের জন্যে কম।
    গরীবের সঞ্চয়ের গোপন কথাঃ
    অ্যাকাডেমিক অর্থনীতির চর্চায় উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দুটো ফ্যাক্টর হল সঞ্চয় (সেভিংস) এবং বিনিয়োগ (ইনভেস্টমেন্ট)। খাইখরচা মিটিয়ে বাড়তি সঞ্চয় যদি শিল্প বা ব্যবসা-বাণিজ্যে বিনিয়োগ করা হয় সেটা পুঁজি হয়ে যায়।
    কিন্তু গরীব যে প্রতিকূলতার মধ্যে বাঁচে তাতে কতটুকু উদ্বৃত্ত হবে? সে কী করে সঞ্চয় করবে? সেটা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্যে রিস্ক ফান্ড হবে? নাকি ছোটখাট ভেঞ্চার ক্যাপিটাল?
    এই অধ্যায়টি (চ্যাপটার ৮, পৃঃ ১৮৩) খুব ইন্টারেস্টিং।
    ইঁটের পরে ইঁট গাঁথা
    মরক্কোর ট্যাঞ্জিয়ার্স শহরের নতুন পাড়ায় সারি সারি অসমাপ্ত বাড়ি। কোলকাতায় অভিজিতের দাদু কখনই গোটা বাড়ি একসঙ্গে বানাতে পারেন নি। হাতে একটু টাকা জমেছে আর একটা একটা করে কামরা তোলা হয়েছে।
    যাঁরা আরও অস্বচ্ছল , তারা একটা গোটা ঘরও একবারে বানাতে পারেন না।
     অভিজিতের পরিবারের ড্রাইভার মাঝে মধ্যে এক দিন ছুটি নিয়ে এক এক ব্যাগ সিমেন্ট, বালি ও ইঁট কিনে কয়েকটা ইঁটের পরে ইঁট--  একবারে অন্ততঃ একশ’টা-- গেঁথে রাখতেন।
    কোন ব্যাংক গরীবের এই মাইক্রো-সেভিংকে পাত্তা দেয় না। যাঁরা ধৈর্য্য ধরে ভবিষ্যতে বাড়ি তৈরির আশায় বর্তমানের অনেক উপভোগ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করছেন তাঁদের এই কৃচ্ছসাধন আমাদের চোখে ধরা পড়ে না।
     গরীব কেন আরও বেশি করে সঞ্চয় করে না?
    সোজা উত্তর হল—টাকা বা উদ্বৃত্ত নেই বলে। কিন্তু সে তো বর্তমান, অন্য সবার মত  গরীবেরও একটা ভবিষ্যত তো আছে, তাই সঞ্চয় করা উচিত। কিন্তু যার ভবিষ্যতের স্বপ্ন নেই বা তাতে আস্থা নেই?
    গ্যারি বেকার, ১৯৯৭ সালের নোবেল প্রাইজ, বলছেন— যার যত সম্পত্তি থাকবে, সে তত ভবিষ্যতের স্বপ্নে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হবে। তাই দারিদ্র্য মানুষকে অধৈর্য করে তোলে, সে আর ভবিষ্যতের স্বপ্নে বিশ্বাস করে না[18]
    অভিজিতের মতে এইসব হল সেই ভিক্টোরিয়ান যুগ থেকে গরীবদের “আদার” মনে করার ঐতিহ্য—যাতে ওদের ধৈর্য্যহীন এবং ভবিষ্যতের চিন্তা করতে অপারগ ধরে নেওয়া হয়। ফলে তাদের জন্য থাকে  ‘পুওর হাউস’ নামক দুঃস্বপ্ন এবং ডিকেন্স বর্ণিত ‘ডেটর্স প্রিজন’ বা ধার শোধ করতে না পারলে কয়েদখানা।
     এঁরা কেউ গরীব পুরুষ ও নারীর মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা উদ্যমী এবং শিল্প বা পুঁজিপতিকে দেখতে পান না। ব্যাংক বা কোন বিত্তীয় প্রতিষ্ঠান এদের অ্যাকাউন্ট খুলতে উৎসাহী নয়। তাই এদের নিজের টাকা জমাতেও অনেক ঘুরপথে যেতে হয়, খরচা বেড়ে যায়।
      ভারতের এবং অন্যদেশের সেলফ-হেল্প গ্রুপ অবশ্যই সদস্যদের ক্ষুদ্র সঞ্চয়কে জড়ো করে বড়োসড়ো জমাপুঁজি গড়ে তোলার সহায়ক।
    গরীবের সঞ্চয়ের মনস্তত্ত্ব
     কেনিয়ার একটি অঞ্চলের স্টাডিতে দেখা গেল মঠের সন্ন্যসিনীরা দেবোত্তর ক্ষেতে রাসায়নিক সার ব্যবহার করে দুনো ফসল তুলছেন। কিন্তু অধিকাংশ চাষিরা হাতে গরম সাফল্যের উদাহরণ দেখেও সার কেনা এড়িয়ে যাচ্ছে। যদিও সার কেনা যায় একটু একটু করে , অল্প পয়সায়।
    তফাতটা হল ফসল বিক্রির পর বাড়িতে টাকা এলেই কোন না কোন ভাবে খরচা হয়ে যায়—খাবার, জামাকাপড়, ওষূধ, স্কুলের ফী এবং অন্যান্য। তাই বছর ঘুরে চাষের সময় এলে দেখা যায় হাতে একটিও পয়সা নেই।
    ব্যতিক্রমী উদাহরণঃ উইক্লিফ ওটিয়েনো নামের চাষি। সে ফসল বিক্রির টাকা হাতে এলেই আগামী ফসলের জন্যে সার কিনে ফেলে। জানে যে ঘরে রাখলে টাকাটা আগামী মরশুম অব্দি ধরে রাখা যাবে না।
    এই মডেলেই এস্থার, ক্রেমার ও রবিনসন শুরু করলেন একটা প্রোগ্রাম যাতে  চাষিরা হাতে টাকা আসতেই বাজার দরে রাসায়নিক সারের ভাউচার কিনতে রাজি হয়। সেই ভাউচার আগামী দিনে তাদের সার কেনার মাধ্যম হয়ে যায়।
    আফ্রিকার একটি এনজিও, ICS Africa, এই প্রোগ্রামের প্রয়োগে ঠিক সময়ে চাষিদের ঘরে ওই ভাউচার নিয়ে হাজির হল। দেরি হলেই ঘরের টাকা খরচ হয়ে যেত। যতদিন ভাউচার পৌঁছে দেওয়া গেল, ততদিন সারের ব্যবহারে ৫০% বৃদ্ধি হল[19]
    সঞ্চয় ও আত্মনিয়ন্ত্রণ
    দেখা যাচ্ছে, গরীবের সঞ্চয়ের সমস্ত বাধাই বাইরের নয়, কিছু নিজেদের ভেতরের ব্যাপারও আছে। যদি আমি ভাবি--  দূর! ওই ফ্রিজ কেনার জন্যে টাকা জমানোই সার। আমি জমাতে থাকব আর ফ্রিজের দাম বাড়তে থাকবে। তারচেয়ে অমুক খরচটা করে ফেলা যাক—তাহলেই চিত্তির। লক্ষ্মীর ঝাঁপি আর ভরবে না।
    গরীবের সামনে প্রলোভন যথেষ্ট—ভাল খাবার, সিগ্রেট, মদ এবং প্রমোদে ঢালিয়া দিনু মন। ফলে পিগি ব্যাংক একদিন ভেঙে ফেলা হয়।
    সমস্যাটা হচ্ছে এটা বোঝার যে ঠিক কতটা সঞ্চয় করতে থাকলে “দারিদ্র্যের ফাঁদ” থেকে বেরিয়ে পড়া যাবে।
    (আমার এবং আমার পিতৃদেবেরও এই সমস্যা ছিল)।
    কিন্তু তাইল্যান্ডের ১৯৯৯ এবং ২০০৫ এর একটি অধ্যয়নের ভিত্তিতে S-curve এর P বিন্দু দেখিয়ে অভিজিতের এই মন্তব্যে আমরা কি একটু নাক কোঁচকাবো—The poor stay poor here because they do not save enough?[20]
    কিন্তু অভিজিতের এই অব্জার্ভেশনের সঙ্গে-- Saving behavior crucially depends on what people expect will happen in the future- খুব একটা দ্বিমত হওয়ার অবকাশ নেই বোধহয়।
    যদি বিশ্বাস হয় যে অমুক পরিমাণ টাকা মাসে মাসে সঞ্চয় করতে পারলে তমুক সাল থেকে আমার ‘পভার্টি ট্র্যাপ’ থেকে বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা আছে তাহলে সেই মানুষ তার অনাবশ্যক খরচাগুলো—চা, ফাস্ট ফুড, সিগ্রেট, অ্যালকোহল—ছেড়ে দেবে।
    কিন্তু আমাদের পক্ষে এসব বলা সোজা। আমাদের আছে সুনিশ্চিত আয়, তাই আমরা ভাবতে পারি নতুন সোফা/৫০ ইঞ্চি ফ্ল্যাট স্ক্রিন টিভি, আর একটা গাড়ি কেনার কথা। আর বিত্তীয় সংস্থাগুলো আমাদের ইচ্ছে পূরণ করতে তাদের পসরা সাজিয়ে বসে আছে—সেভিংস অ্যাকাউন্ট, পেনসন, হোম ইকুইটি লোন ইত্যাদি।
    গরীবের গোলপোস্ট যে অনেক দূরে। তাই সঞ্চয় করার প্রেরণা দুর্বল। চাই একটু আশা, একটু সাহায্য, একটু মৈত্রীপূর্ণ ব্যবহার ও ওদের দরকার মত সহায়তার স্কীম। অর্থাৎ গোলপোস্টকে একটু কাছে সরিয়ে আনা।
    “Moving the goalpost closer may be just what the poor need to start running toward them’.[21]
    কেন সরকারি চাকরি, ব্যবসা নয়?
    প্রায় ১৮টি দেশের সার্ভেতে একটা প্রশ্ন গুঁজে দেওয়া হয়েছিল—ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে কী হবে? অধিকাংশ গরীব পরিবারের একই উত্তর—সরকারি চাকরি।
    এমনটি কেন? আমরা কি গাঁয়ে গঞ্জে ছোটখাটো দোকান বা স্ব-রোজগার দেখি নি যা সামান্য পুঁজির সাহায্য নিয়ে (পারিবারিক বা সহকারি/ গ্রামীণ ব্যাংক থেকে) দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছে। পরিবার প্রতিপালন করছে? ঢের দেখেছি। বিভিন্ন এনজিও এবং মাইক্রো-ফাইনান্স এজেন্সির মতে এক বিলিয়নেরও বেশি লোক এইধরণের কাজে বা ব্যবসায়ে নিযুক্ত। তাহলে?
    অভিজিতের স্টাডি তুলে ধরেছে দুটি নির্মম সত্য।
    এক, এই ধরণের ছোট ব্যবসায় বা পেশায় মার্জিনাল রিটার্ন অনেক বেশি( এক কাপ চায়ের লাভ জানলে আপনারা ভির্মি খাবেন—রঞ্জন), কিন্তু টোটাল রিটার্ন অনেক কম। ফলে পুঁজি নির্মাণ (accumulation of capital) বা core fund তৈরি হয় না। সা
    দুই, আর মান্য ঝড়ে (কারও অসুখ হলে) পুঁজি ভাঙতে হয়। রিজার্ভ ফান্ড তৈরি হয় না, বিকাশ হয় না। ফলে গরীবের রিস্ক সামলাতে বীমা হল সরকারি চাকরি। এটাই গোটা পরিবারকে পভার্টি ট্র্যাপ থেকে বের করতে পারে।
    সমাধান?
    ছোট ছোট শহরেও ভাল পরিকাঠামো এবং ভাল চাকরির গরীব-বন্ধু ইকো-সিস্টেম তৈরি করা।
    কিন্তু উনি মেনে নিচ্ছেন ততদিন মাইক্রো ক্রেডিট জাতীয় সংস্থাগুলো গরীবদের জমির উপর চাপ কমিয়ে অন্য ভাবে বেঁচে থাকতে সহায়ক হবে।[22]
    করাপশন -কোয়ায়েট রেভোলুশন
    আচ্ছা, দুর্নীতি ও দারিদ্র্য দূরীকরণের মধ্যে সম্পর্কটা ঠিক কী? এ নিয়েও দুটো মত প্রচলিত।
    প্রথম মতঃ আসল সমস্যা হল দারিদ্র্য দূরীকরণের সঠিক নীতি নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে সঠিক রাজনীতি ও দল নিয়ে মাথা ঘামানো। কারণ সরকার যদি দুর্নীতিগ্রস্ত বা লুঠেরা হয় তাহলে নীতি যত ভালই হোক, ডেলিভারি সিস্টেম বাজে হবে। এবং গরীবের জন্য ধার্য বাজেটের টাকা গরীব অব্দি পুরোপুরি পৌঁছবে না।
    দ্বিতীয় মতঃ জেফ্রি স্যাখস এর মত লোকেরা ভাবেন—দুর্নীতি হল ‘দারিদ্র্য ফাঁদে’র কারণ। দারিদ্র্য দুর্নীতিকে মদদ জোগায় আর দুর্নীতি দারিদ্র্যকে পোক্ত করে। ওঁর দাওয়াই হল অনুন্ননত দেশের গরীবদের যদি একটু পভার্টি ট্র্যাপের থেকে বের করে দেওয়া যায় তাহলে দুর্নীতি ধ্বসে যাবে।
    এর মানে হল একটি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশেও বড় আকারে গরীবি উন্মূলন খানিকটা সম্ভব। উদাহরণ দেওয়া হয় উগান্ডার।
    Transparency International 2010 রিপোর্টে দুর্নীতির সূচকে উগান্ডার স্থান ছিল ১৭৮ দেশের মধ্যে ১২৭, নাইজেরিয়ার থেকে ভাল বটেক, তবে সিরিয়া, নিকারাগুয়ার সমান এবং ইরিত্রিয়ার নীচে। তাহলে কি দুর্নীতির মাত্রা না কমিয়ে উগান্ডার শিক্ষার উন্নতি সম্ভব?
    হল কি, রেইনিক্কা ও স্বেন্সনের রিপোর্টে দেখা গেল উগান্ডার স্কুলগুলো নির্ধারিত বাজেটের ৮০% মাত্র পাচ্ছে এবং হেডমাস্টাররা শুরু করলেন ফরম্যাল কমপ্লেইন। লজ্জায় পড়ে সরকার নড়ে চড়ে বসল এবং স্কুলগুলো টাকা পেল। এতদিন কেউ গা করেনি!
    তাহলে কি সরকার না বদলে অথবা বিরাট সামাজিক পরিবর্তন না করেও সযত্ন পরিকল্পনার মাধ্যমে দুর্নীতিকে খানিকটা আটকানো যায়?
    অভিজিত বলছেন—আমরা আমাদের চাহিদা বা উচ্চাকাঙ্খাকে খাটো করছি না। কিন্তু এইরকম ছোট ছোট উন্নতি এবং প্রগতির নীট যোগফল একদিন হয়ত এক নিঃশব্দ বিপ্লব নিয়ে আসবে।
    উপসংহার
     শেষে বলতে চাই যে বইটি অতীব সুপাঠ্য এবং টান টান লেখা। যুক্তিপরম্পরা যত্ন করে সাজানো আর বিভিন্ন বিপরীত মতকে যত্ন করে তুলে ধরা হয়েছে। কোথাও সবজান্তা বা হামবড়াই ভাব নেই।
    আর আমার মত গোলা পাঠকের ভয় দূর করে কোন ডিফারেনশিয়াল ইকোয়েশন, ম্যাট্রিক্স, বা ক্যালকুলাস নেই। থ্রি ডায়মেনশনাল ডায়াগ্রাম নেই। মেরেকেটে তিন চারটে গ্রাফ রয়েছে তাও স্কুলপাঠ্য বইয়ের মত সহজে বোঝা যায়।
    নিঃসন্দেহে বইটি অমর্ত্য সেন, মার্থা হবসবাউম বা রোলস এর গ্র্যান্ড পিকচারের পরিপূরক।

     
     

    ৩ গরীবের শিক্ষা

    [1] পুয়োর ইকনমিক্স , ব্যানার্জি ও ডাফলো, পেছনের কভারে।

    [2] পুয়োর ইকনমিক্স , ব্যানার্জি ও ডাফলো, পৃঃ ix.

    [3] জেফ্রি স্যাক্স, “ দ্য এন্ড অফ পভার্টিঃ ইকনমিক পসিবিলিটিজ অফ আওয়ার টাইম”, পেঙ্গুইন প্রেস, ২০০৫।

    [4]  উইলিয়াম ইস্টারলি, “ দ্য এলুসিভ কোয়েস্ট ফর গ্রোথ”, কেম্ব্রিজ ২০০১; এবং দাম্বিসা মেয়ো, “ ডেড এইড” , লন্ডন, ২০০৯।

    [5]  ব্যানার্জি ও ডাফলো, “পুয়োর ইকনমিক্স”, পৃঃ ৫।

    [6]  ঐ , পৃঃ ৬।

    [7] ব্যানার্জি ও ডাফলো, “পুয়োর ইকনমিক্স”, পৃঃ ২৬

    [8] জন স্ট্রস, “ ডাজ বেটার নিউট্রিশন রেইজ ফার্ম প্রোডাক্টিভিটি?”, জার্নাল অফ পলিটিক্যাল ইকনমি, ৯৪(১৯৮৬), পৃঃ ২৯৭—৩২০।

    [9] রজার থারো এন্ড স্কট কিলম্যান, “হোয়াই দ্য ওয়ার্ল্ড’স পুয়োরেস্ট স্টার্ভ ইন অ্যান এজ অফ প্লেন্টি?”, নিউ ইয়র্ক, ২০০৯।

    [10] ব্যানার্জি ও ডাফলো, “পুয়োর ইকনমিক্স”, পৃঃ ৪০।

    [11] ব্যানার্জি ও ডাফলো, “পুয়োর ইকনমিক্স”, পৃঃ ৪১।

    [12] আদ্রিয়েন লুকাস, “ম্যালেরিয়া ইরাডিকেশন এন্ড এডুকেশনাল অ্যাটেনমেন্ট”; আমেরিকান ইকনমিক জার্নালঃ অ্যাপ্ল্যায়েড ইকনমিক্স (২০১০); ৪৬-৭১।

    [13] উইলিয়াম ইস্টারলি, “ হোয়াইট ম্যান’স বার্ডেন”, নিউইয়র্ক, ২০০৬।

    [14] জিষ্ণু দাস এন্ড ক্যারোলিনা স্যাঞ্চেজ-পারামো, “শর্ট বাট নট সুইট-নিউ এভিডেন্স অন শর্ট ডিউরেশন মর্বিডিটিজ ইন ইন্ডিয়া”,পলিসি রিসার্চ ওয়ার্কিং পেপার, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক,(২০০৩)।

    [15]  ব্যানার্জি ও ডাফলো, “পুয়োর ইকনমিক্স”, পৃঃ ৬৪।

    [16] Poor Economics , page 100.

    [17]  পুয়োর ইকনমিক্স,পৃঃ ১৩৬।

    [18] Gary Becker and Casey Mulligan, “ The Endogenous Determination of Time Preference, “Quarterly Journal of Economics 112(3) (1997): 729-758.

    [19] পুওর ইকনমিক্স, পৃঃ ১৯৩, র‍্যাণ্ডম হাউস ইন্ডিয়া, ২০১১ এডিশন।

    [20] ঐ, পৃঃ ২০১।

    [21] Poor Economics, pp-204

    [22] ঐ, পৃঃ ২৩৫।
     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • মোহাম্মদ কাজী মামুন | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০০:৪৫739325
  • 'পুওর ইকোনোমিকস' নামটা দেখে চোখ আটকে গেল। এই বইটা আমায় প্রথমে অর্থনৈতিক বিষয়ে ভাবতে শিখিয়েছে,পরে লিখতে। খুব সমৃদ্ধ আলোচনা,দাদা। 
     
  • এস এস অরুন্ধতী | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০০:৩৫739329
  • খুব ভালো আলোচনা করেছেন। 
    আপনার থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমি ও আরেকটি বই এর আলোচনা ব্লগে দিচ্ছি। আকবর আলি খান সাহেবের 'পরার্থপরতার অর্থনীতি।'
     
  • Indra Mukherjee | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:৪২739344
  • পাঠ প্রতিক্রিয়া যদি এত ভালো হয় তাহলে মূল বই নাজানি কতখানি ভালো ।
  • যদুবাবু | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৯:১৬739345
  • এটা কি করে মিস করে গেছিলাম কে জানে!

    রঞ্জনদা, খুব ভালো লিখেছেন। কিন্তু এখন যখন দেখেইছি, দু কথা লিখে যাই। পুওর ইকনমিক্সের পরেও, জেপ্যাল ল্যাব তো আরও আরও অনেক বেড়েছে - ২০০৩ সালে জে-প্যালে ছিলেন ৪ জন ফ্যাকাল্টি, মোট প্রোজেক্ট ৩৩, সেখান থেকে ২০১৭ সালে, ১৬১ জন affiliated Professors 902 evaluations in 72 countries! র‍্যান্ডমিস্তা-দের (ডিটনের দেওয়া ডাকনাম) মিটিওরিক গ্রোথ যাকে বলে। একদম চোখের সামনেই। 

    আমার যেটা সবসময়েই মনে হত এঁদের কাজ নিয়ে সেটা এই যে আর-সি-টি স্ট্যাটের লোকে বহুবছর ধরেই জানতেন, সেই ফিশার কবে এগ্রিকালচারাল কাজে ব্যবহার করতেন! সেটা দিয়ে পলিসি ইভ্যালুয়েট করা গেলে যে একটা দারুণ ব্যাপার হতে পারে সেটাও লোকে ভেবেছেন, কিন্তু জে-প্যালের র‍্যাণ্ডমিস্তাদের সবথেকে বড়ো অবদান ঐ সাহস করে ঝাঁপিয়ে পড়া। পরীক্ষমূলক কাজ করা যে যায় অনেকেই ভেবেছিলেন কিন্তু এগোননি, কারণ ভয়ঙ্কর স্কেলে ব্যয়বহুল, সময়সাপেক্ষ ও ঝুঁকিপূর্ণ। এঁদের সেই গাটস-টা ছিলো। বিজ্ঞানের অগ্রগতি শুধু বুদ্ধির জোরে হয় না, সাহস লাগে, ধক লাগে এইটাও একটা শেখার ব্যাপার। আর লাগে রাজনৈতিক বিচক্ষণতা। ১৯৬০-৭০ সালেও একবার আর-সি-টি লাগিয়ে পলিসি ইভ্যালুয়েশনের 'ওয়েভ' এসেছিল, কিন্তু বেশী দূর এগোয়নি, কারণ তাঁদের জিওগ্রাফিক এরিয়া, স্কোপ ইত্যাদি সব-ই এত বড়ো ছিলো যে পলিটিক্যাল রেজিস্ট্যান্স বড্ড বেশী, অভিজিত-এস্থারদের 'স্মল + শর্ট টার্ম' ইন্টারভেনশন শুধু একাডেমিক নয়, পলিটিক্যালি-ও ক্লেভার মনে হয়। 

    ডাফলোর একটা কথা দারুণ লাগে, বলেছিলেন, “It’s not the Middle Ages anymore, it’s the 21st century … RCTs have revolutionized medicine by allowing us to distinguish between drugs that work and drugs that don’t work. And you can do the same randomized controlled trial for social policy”

    এই প্রসঙ্গে একটা ইন্টারেস্টিং কাজ দেখাই। পোস্ট করবো করবো ভেবে করা হয়নি আগে। ওদের-ই একটা স্টাডিঃ https://www.povertyactionlab.org/policy-insight/changing-resumes-reduce-hiring-discrimination। যাতে ওদের এম্পিরিক্যাল এভিডেন্স বলছে যে অ্যাপ্লিকেশন থেকে লিঙ্গ-জাতি-ওরিয়েন্টেশন-ধর্ম ইত্যাদি পরিচয় সরিয়ে অ্যানোনিমাইজ করলে বৈষম্য কমার বদলে উল্টে বেড়ে যায়, বিশেষ করে যেসব জায়গায় বৈষম্য কম ছিলো। অবশ্য বলেই রেখেছেন আরও কাজ দরকার, তাও এইটা কেন হচ্ছে ভাবা দরকার। 



     
  • a | 110.174.***.*** | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৯:০১739350
  • এই বিষয়ে আমার একটা দুটো কোশ্ন হ্যায় 
     
    ১। এই স্মল শর্ট ঠিক কতটা স্মল বা শর্ট হওয়া উচিত? একটা সিদ্ধান্তে পৌছতে একটা ন্যূনতম সাইজ তো লাগবে? 
     
    ২। এক দেশের বা একটি নির্দিস্ট সমস্যার সমাধানের জন্যে  নেওয়া ইন্টারভেনশন অন্য জায়গায় অন্য রকম করে কাজ করতে পারে না কি? সেক্ষেত্রে এইভাবে তথ্য থেকে তাত্বিক ব্যাখ্যায় কি আদৌ উপনীত হয়া সম্ভব? 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন