এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  আলোচনা  রাজনীতি

  • সাভারকর চর্চা, সবে মিলেঃ ৬ (লেনিন, হিন্দুত্ব এবং ভবিষ্যপুরাণ)

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | রাজনীতি | ০১ নভেম্বর ২০২২ | ১৬০৭ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • সাভারকর চর্চা, সবে মিলেঃ ৬ (লেনিন, ভবিষ্যপুরাণ, হিন্দুত্ব)

    সম্পূর্ণ এবং নিঃশর্ত মুক্তি

    আগামী আদেশ পর্য্যন্ত কোন রাজনৈতিক কাজকর্মে অংশ না নেওয়া এবং রত্নাগিরি জেলার বাইরে পা না রাখার শর্তে ইংরেজের জেল থেকে ১৯২৪ সালে মুক্তি পাওয়ার পর সাভারকর সপরিবারে রত্নাগিরিতে একটি বাড়ি ভাড়া করে থাকতে লাগলেন।

    এই শর্ত পাঁচ বছর পরে ১৯২৯ সালে রিভিউ করে প্রথমে দু’বছর পর্য্যন্ত (১৯৩১) বাড়িয়ে দেওয়া হল। তখন থেকে ২ বছর পর পর রিভিউ হতে লাগল, ১৯৩৩, ১৯৩৫; কিন্তু বোম্বের গভর্নর এবং দিল্লির হোম সেক্রেটারি বিনায়ককে ছাড়ার ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হতে পারছিল না।

    তারপর এসে গেল ১৯৩৭ এবং এই সময় The Government of India Act, 1935 পাশ হয়ে ১ এপ্রিল, ১৯৩৭ সাল থেকে বলবৎ হল। তাতে রাজ্যগুলো অটোনমি পেল। তখন অল্পদিনের জন্যে বোম্বে প্রদেশে খানবাহাদুর ধনজী শা’র নেতৃত্বে এবং হিন্দু মহাসভার জমনাদাস মেহতার (তখনও উনি তিলকের মৃত্যুর পর ১৯৩৩ সালে অনুগামীদের তৈরি ডেমোক্র্যাটিক স্বরাজ পার্টির নেতা) সমর্থনে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় এল। জমনাদাস অনেকদিন ধরেই সাভারকরের মুক্তির জন্যে হস্তাক্ষর অভিযান ইত্যাদি চালাচ্ছিলেন। উনি প্রস্তাব রাখায় বোম্বাইয়ের তৎকালীন গভর্নর ব্রেবোর্ন ভবিষ্যতে ‘ভাল ব্যবহার’ এর শর্তে বিনায়ক সাভারকরকে ১০ মে, ১৯৩৭ তারিখে নিঃশর্ত মুক্তি দিলেন। [1] সাভারকর এবার বোম্বাইতে ভাই নারায়ণ রাওয়ের কাছে চলে এলেন।

    এখন রাজনৈতিক গতিবিধিতে কোন বাধা রইল না। তাই অনেকে এসে তাঁর বাড়িতে দেখা করে নিজেদের দলে টানার চেষ্টা করল। সুভাষচন্দ্র বসু তখনও কংগ্রেসের নেতা, এবং মানবেন্দ্রনাথ রায়, তখনও র‍্যাডিক্যাল হিউম্যানিস্ট হন নি, মাত্র ১৯৩৬ সালে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে নিজের ইন্ডিপেডেন্ট ইন্ডিয়া সাপ্তাহিক শুরু করেছেন, সাভারকরের বাড়িতে গেলেন।
    সাভারকর ওদের ফিরিয়ে দিলেন। কারণ, হিন্দু মুসলমান প্রশ্নে সুভাষচন্দ্রের অবস্থান সাভারকরের বিপরীত। জীবনীকার ধনঞ্জয় কীর জানাচ্ছেন সাভারকরের অভিমতে সুভাষচন্দ্র ‘কংগ্রেস ক্যাম্পের কুটিল নেতা’। [2]

    ফরওয়ার্ড ব্লক গঠনের পরে ১৯৪১ সালে হিন্দু মহাসভার ভাগলপুর অধিবেশনের সময় সাভারকর লিখলেন—
    ‘কিন্তু কংগ্রেস, ফরোয়ার্ড ব্লক এবং ভারতের ওই সব সংগঠন, যারা ভৌগলিক রাষ্ট্রবাদের মিথ্যে ধারণাকে মানে, তারা বাস্তবিক রাষ্ট্রবাদের এই অবধারণার বিরুদ্ধে পাপের অংশীদার’[3]

    এখানে ‘বাস্তবিক রাষ্ট্রবাদ’ বলতে সাভারকরের সাংস্কৃতিক হিন্দু রাষ্ট্রবাদকে বোঝানো হয়েছে।

    মাঝখানে রত্নাগিরিতে সপরিবারে থাকার সময় উনি ইংরেজ সরকারের থেকে মাসিক ৬০ টাকা ভাতা পেতেন। এটা নিয়ে অহেতুক চেঁচামেচি হয়। কারণ, সম্পূর্ণ মুক্তি না পেয়ে প্রোবেশনে থাকার সময় রাজবন্দীদের সরকারি ভাতা দেবার নিয়ম আগে থেকেই আছে। অনেক রাজবন্দী পেয়েছেন, এবং তাতেই তারা ইংরেজের দাস হয়ে যান নি।

    কেউ কেউ এর পরেও ইংরেজের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের পথে বা বাড়িয়ে ফের জেলে গেছেন। আমরা বরং দেখব, তারপরে সাভারকর কী করলেন? তাঁর ইংরেজের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করার উদ্দীপনা আগের মতই অটুট রইল, নাকি সাভারকরের প্রশংসক ইতিহাসবিদ রমেশ চন্দ্র মজুমদারের কথামত – কালাপানির দীর্ঘ যন্ত্রণাদায়ক জীবন অনেক বিপ্লবীকে ভেতর থেকে বদলে দিয়েছিল?

    সাভারকর নিজে কী বলেছেন?

    ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তীর অভিযোগ -- সাভারকরেরা দুইভাই আমাদের স্ট্রাইক করতে গোপনে উস্কে দিয়ে নিজেরা সরে দাঁড়ালেন।[4]

    সাভারকর যে ব্যখ্যা দিয়েছেনঃ

    বন্দীরা আশা করেছিল সিনিয়ররা স্ট্রাইকে নেতৃত্ব দেবে। কিন্তু সাভারকররা যদি খোলাখুলি হরতালের পক্ষে দাঁড়াতেন ‘তাহলে – ‘জেলার ব্যারি আমাদের মত পুরনো বন্দীরা যে সব জেল আইনের সুবিধেগুলো ভোগ করছি সে সব কেড়ে নেওয়ার মওকা পেয়ে যাবে’।
    ‘এছাড়া আমার জন্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলে যে ইন্ডিয়াতে চিঠি লেখার অধিকারটুকু বাতিল হতে পারে। আর আমাকে শাস্তি দিলে বন্দীদের মুক্তির জন্যে আমার কাজ করা বন্ধ হয়ে যাবে, সেটা স্ট্রাইক এবং বন্দী সবার জন্যেই ক্ষতিকর’।[5]

    সাভারকর যদিও তাঁর আন্দামানের স্মৃতিকথায় দাবি করেছেন যে উনি মনে করতেন জেলে ভুখ হরতাল এবং স্ট্রাইক করে কোন লাভ নেই। ওসব মেয়েলি ব্যাপার। আসল লক্ষ্য হওয়া উচিত যেন তেন প্রকারেণ জেল থেকে বেরিয়ে এসে ফের লড়াই করা।

    শ্রীকৃষ্ণ কংসের কারাগারে কী করেছিলেন? শিবাজী আফজল খাঁ এবং ঔরংজেবের বিরুদ্ধে কী কৌশল অবলম্বন করেছিলেন?

    কিন্তু দেখলেন কিছু গোঁড়া এতসব উদাহরণেও ভুলছে না। তবে উনি ধৈর্য্য ধরে সবাইকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে নিজের লাইনে আনতে পেরেছিলেন।

    রমেশ চন্দ্র মজুমদার সন্দিহান। বলছেন, অন্ততঃ তরুণদের একটা অংশ এই যুক্তি মানে নি।

    আর আজ যদি খতিয়ে দেখি, তো মনে হয় সেলুলার জেলে রাজবন্দীদের অবস্থার যতটুকু পরিবর্তন হয়েছিল তা সেই সময়ের হরতাল ও অনশনেরই ফল। নইলে জেলার ব্যারির অত্যাচারের খবরে কেউ গা করত না। ভাইসরয়ের টনক নড়ত না।

    ছাড়া পাওয়ার পর গণেশ শংকর বিদ্যার্থী এবং আরও কেউ কেউ সাভারকরের মাফিনামা দেওয়া নিয়ে অনেক কড়া কড়া কথা বললেন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় চাপান-উতোর চলল। সাভারকর নিজের স্বপক্ষে উপরের কথাগুলোই বললেন।

    আমরা সাভারকরের ১৩ বছর রত্নাগিরি নিবাসের সময়ে এবং ১৯৩৭ সালে ছাড়া পাওয়ার পরের কাজকর্ম দুটো পর্যায়ে আলাদা করে খতিয়ে দেখব।

    সাভারকরের দুটো গুরুত্বপূর্ণ লেখা পুণের যারবেদা জেলে থাকাকালীন সাভারকরের দুটো গুরুত্বপূর্ণ লেখা ইংরেজিতে প্রকাশিত হয়। দুটোই নাগপুর থেকে ভি ভি কেলকর ১৯২৩ সালে প্রকাশ করেছিলেন। প্রথমটি ‘এসেনশিয়ালস অফ হিন্দুইজম’ , অন্যটি ‘হিন্দুইজম’ যা পরের মুদ্রণে শুধরে ‘হিন্দুত্ব’ নামে প্রকাশিত হয়। বই দুটির লেখক – এ মারাঠা! যা আসলে সঙ্গত কারণেই সাভারকরের গুপ্তনাম।

    কারণ সাভারকরের মতে হিন্দুইজম নামটা গণ্ডগোলের এবং তাতে হিন্দুধর্ম নিয়ে কথা বলা হয়। আর সাভারকরের তৈরি ’হিন্দুত্ব’ সংজ্ঞা ধার্মিক হিন্দুর বদলে সাংস্কৃতিক এবং পলিটিক্যাল বা রাষ্ট্র সম্পর্কিত ধারণার কথা বলে। তাতে অবধারিত ভাবে উঠে আসে এক জাতি, এক রাষ্ট্রের অবধারণা।

    আমরা সাভারকরের হিন্দুত্ব সংজ্ঞা এবং তার করোলারি নিয়ে পরের দুটো কিস্তিতে বিস্তারিত আলোচনা করব।

    এখানে তার আগে আমরা তিনটে বিতর্কিত বিষয় নিয়ে কথা বলব। ব্যারিস্টার সাভারকরের প্রথম ইংরেজি জীবনী প্রসঙ্গ, লেনিন-সাভারকর প্রসঙ্গ এবং ভবিষ্যপুরাণ প্রসঙ্গ।

    ব্যারিস্টার সাভারকর নামক পাতলা ইংরেজি বইটির লেখক চিত্রগুপ্ত কে?

    একটা কথা গোড়ায় বলে নিই। নিঃসন্দেহে বিনায়ক দামোদর সাভারকর একজন অক্লান্ত পরিশ্রমী লেখক। জীবনভর প্রচুর লিখেছেন — মারাঠি ও ইংরেজিতে। লন্ডনে পড়তে গিয়ে প্রথমে অনুবাদ করেন ইতালিয় বিপ্লবী মাজ্জিনির আত্মজীবনী। মাজ্জিনি - তাঁর ‘ইয়ং ইতালি’ দল এবং অস্ট্রিয়ান সাম্রাজ্যের থেকে ইতালির মুক্তিসংগ্রাম - ছিলেন তাঁর রোল মডেল। তারপরে ১৯০৯ সালে বেরোয় তাঁর ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বইটি; লেখক ‘অ্যান ইন্ডিয়ান ন্যাশনালিস্ট’। কিন্তু ১৯২৬ সালে বেরোয় ‘ দ্য লাইফ অফ ব্যারিস্টার সাভারকর’, লেখক জনৈক চিত্রগুপ্ত। বইটির প্রথম প্রকাশক মাদ্রাজের কে জি পাল অ্যান্ড কোম্পানি।
    এতে সাভারকরের ছোটবেলা থেকে বেরনো পর্য্যন্ত বর্ণনা রয়েছে। বইটি কোন সিরিয়াস ইতিহাস চর্চা নয়, বরং অতি- নাটকীয় ঢঙে সাভারকরের ছেলেবেলা থেকে লণ্ডন প্রবাস এবং বোম্বাইয়ের আদালতে ৩০ জানুয়ারি ১৯১১, অর্থাৎ দ্বিতীয় মামলাটির রায় পর্য্যন্ত সময়ের বর্ণনা। লেখার স্টাইল জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যের, আজকালকার ‘অমর চিত্রকথা’র মতন। তাতে সাভারকর ছোটবেলা থেকেই হিন্দু নায়ক। বালক বয়সে তাঁর গ্রামে উনি ছোটদের একটি দল গঠন করে বোম্বাইয়ে মুসলমানদের হিন্দুদের উপর কথিত আক্রমণের প্রতিবাদে নিজের গাঁয়ে একটি পরিত্যক্ত মসজিদে রাত্তির বেলায় গিয়ে ভাঙচুর করে নিজেদের সার্থক মনে করেন। সেই বালকের দল যুদ্ধ যুদ্ধ খেলত। একদিকে হিন্দু, অন্য দিকের নাম কখনও মুসলিম, কখনও ক্রিশ্চান। সাভারকর সবসময় হিন্দুবাহিনীর সেনাপতি হতেন, এবং বলা বাহুল্য হিন্দুরা সর্বদা বিজয়ী হত। এতে আরও আছে যে রাজনৈতিক কাজকর্মে ব্যস্ত সাভারকর কলেজের ক্লাস ফাঁকি দিতেন, কারণ ওই এডুকেশন সিস্টেম হাতপায়ের বেড়ির মত। কিন্তু সাভারকর প্রত্যেক পরীক্ষায় সফল হতেন।

    বিলেতি কাপড় পোড়ানোর আন্দোলনে লিপ্ত থাকার অভিযোগে তাঁকে ফার্গুসন কলেজ হোস্টেল থেকে কয়েক দিনের জন্যে সাসপেন্ড করে। কিন্তু ঐ বইয়ের হিসেবে তাঁকে বরাবরের মত কলেজ থেকে বের করে দেওয়া হয়।
    বিনায়ক কিন্তু লণ্ডনে ব্যারিস্টা্রি পড়তে যাচ্ছেন। বইটিতে লেখা হল আসল উদ্দেশ্য ব্যারিস্টার হওয়া নয়, বরং ওখানকার ভবিষ্যতের ব্যারিস্টারদের দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ করা।
    উদাহরণ বাড়াচ্ছি না। বইটির পিডিএফ savarkor.org থেকে ডাউনলোড করা যায়।

    সত্যি কথা, লেখক চিত্রগুপ্ত কে – সেটা নিয়ে সাভারকরের জীবিত থাকার সময়েই অনেক অনুমান করা হয়েছে। সাভারকর কিন্তু হ্যাঁ বা না কিছুই বলেন নি। চুপ করে থেকেছেন।
    জীবনীকার সম্পতের অনুমান এই চিত্রগুপ্ত হয় সাভারকরের ইন্ডিয়া হাউসের সাথী আইয়ার অথবা চক্রবর্তী সি রাজাগোপালাচারী।

    দুটো অনুমানই ভুল মনে হয়।

    কারণ, আইয়ার একটি দুর্ঘটনায় ১৯২৫ সালে মারা যান। বই প্রকাশ হয় ১৯২৬ সালে, তাহলে তাতে লেখক হিসেবে প্রয়াত আইয়ারের নাম দিতে বাধা কোথায়?

    আর রাজাগোপালাচারীর ১৯২৬ সালের আগে সাভারকরের সঙ্গে সাক্ষাত হয়েছিল এমন কথা সাভারকরও বলেন নি। সম্পত রাজাগোপালাচারীর ২৭শে জুন, ১৯৩৭ সালের যে বক্তব্যের কথা বলছেন তাতে উনি তো কুড়ি বছর আগে কোন জীবনী লেখার কথা বলছেন! মানে ১৯১৭ সালে! বই প্রকাশ হয় ১৯২৬ সালে।

    তারপর সাভারকরের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের সময় (১৯৮৭) বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয় বোম্বাইয়ের সাভারকর সদন থেকে “বীর সাভারকর প্রকাশন” দ্বারা। তাতে একটি নতুন ভূমিকা সংযোজিত হয়।

    ভূমিকাটি লিখেছেন সাভারকরের অনুযায়ী ডঃ রবীন্দ্র বামন রামদাস। ঘোষণা করেছেন যে ওই চিত্রগুপ্ত আর কেউ নন, সাভারকর স্বয়ং। এটাও বলা হয় যে সাভারকর জীবৎকালে কেন এটি স্পষ্ট করেন নি সেই রহস্য থেকেই গেল।

    ব্যস, এমন অকাট্য প্রমাণ! সাভারকর বিরোধীরা সরব হলেন। পক্ষে বিপক্ষে তর্জা শুরু হল।

    সিনিয়র জার্নালিস্ট পি সাইনাথ ২০১৮ সালে একটি বক্তৃতায় ধিক্কার দিয়ে বললেন এমন খোলাখুলি নিজেকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বড় করে দেখানো! লজ্জার কথা।

    পবন কুলকার্ণী ২০১৭ সালে সাভারকরের জন্মদিন ২৮ মে সংখ্যায় ‘দি ওয়্যার’ ওয়েবসাইটে একই অভিযোগ করে বললেন সাভারকরের কি একটু সংকোচও ছিল না? নিজের ঢাক নিজে পেটানো! জীবনীর আড়ালে আত্মজীবনী ও আত্মপ্রচার!

    বইটি পড়ে আমার ব্যক্তিগত মত সাভারকর যদি নিজে না লিখে থাকেন তাহলেও ওনার অনুমতি এবং মার্গনির্দেশে বইটি লেখা হয়েছে। কারণ, এমন কিছু পারিবারিক গল্প ও অ্যানেকডোট রয়েছে যা বিনায়ক ছাড়া কোন বাইরের লোকের জানার কথা নয়।

    আর স্বাধীন ভারতে বইটির লেখক হিসেবে কোন কিছু বলার আগে সাভারকর গান্ধী হত্যা মামলায় জড়িয়ে পরে রাজনৈতিক স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে যান। সেটা বইটার অথরশিপ স্বীকার না করার একটা সম্ভাব্য কারণ হতে পারে।

    লেনিন-সাভারকর বিতর্ক

    ২০১৮ সালের মার্চ মাসে ত্রিপুরায় বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর যখন বেলোনিয়া এবং অন্য জায়গায় লেনিনের স্ট্যাচুর মুণ্ডচ্ছেদ করা হচ্ছে এবং বিভিন্ন চ্যানেলে ও পত্রিকায় দলের মুখপাত্রেরা এটিকে উচিত কার্য বলে প্রশংসা করছেন তখন ইন্ডিয়া টুডে (৭ই মার্চ, ২০১৮) জনৈক প্রভাস কুমার দত্তের একটি লেখা প্রকাশ করে। তাতে বলা হয় যে সাভারকরের নেতৃত্বে ইন্ডিয়া হাউস নাকি প্রায় বিশ্ব বিপ্লবের কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। তাতে আইরিশ, চৈনিক, রুশ, মিশরীয়, তুর্কি, ইরান এবং অন্যদেশের বিপ্লবীরা সম্মিলিত হতেন।

    তখন নাকি লণ্ডনের অ্যানার্কিস্ট সমাজবাদী নেতা গাই অ্যালড্রেডের প্রয়াসে লেনিন ১৯০৯ সালের মার্চ মাসে ইন্ডিয়া হাউসে চারবার এসেছিলেন এবং সাভারকরের সঙ্গে অনেক আলোচনা করেছিলেন। কী নিয়ে আলোচনা সেটা জানা যায় নি। লেখকের সূত্রঃ Savarkar.org 22/5/2017

    এরপর hindi.opindia.com এ ২৮/০৫/২০২০, সাভারকরের জন্মদিনে লেখা হল সাভারকর পলাতক রুশ বিপ্লবী লেনিনকে ইন্ডিয়া হাউসে তিনদিন শেল্টার দিয়েছিলেন। সাভারকর সারাদিন কাজে, ব্যস্ত ছিলেন। রাতে খাওয়ার সময় লেনিনকে জিজ্ঞেস করলেন -- ক্ষমতায় এলে রুশদেশে সাধারণ মানুষের আর্থিক অবস্থার কীভাবে উন্নতি করবেন? লেনিন নাকি জবাবে বলেছিলেন যে আগে ক্ষমতায় আসি, তারপরে ভাবব।
    তখন নাকি মদনলাল ধিংড়াও (যিনি মাস দুয়েক পরে কার্জন-উইলিকে হত্যা করবেন) সেই আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন।
    এ জাতীয় অনেক অর্বাচীন লেখা আজকাল বিভিন্ন সাইট ও পত্রিকায় টুইটারে দেখা যাচ্ছে।

    এই প্রচারের স্পষ্ট উদ্দেশ্য, আইন পড়তে লণ্ডনে যাওয়া তরুণ সাভারকর তখনই কত পরিপক্ক আন্তর্জাতিক নেতা তা প্রমাণ করা, বলা বাহুল্য কেউ এর সমর্থনে কোন তথ্য দেওয়ার দরকার মনে করেননি।

    লেনিন তখন কোথায় ছিলেন?

    ১৯০৫ সালের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর থেকে রাশিয়ার সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে অন্তর্দ্বন্দ্ব তীব্র হয় এবং মেনশেভিক ও বলশেভিকদের মধ্যে বিতর্ক উগ্র রূপ নেয়। ১৯০৮ সালে লেনিন বগদানভের দার্শনিক প্রবন্ধের জবাবে অভিজ্ঞতাবাদ ও সত্যের আপেক্ষিক রূপ এবং ব্যক্তিনিরপেক্ষ রূপ, অন্তিম সত্য বলে আদৌ কিছু হয় কিনা — এইসব নিয়ে একটি গ্রামভারী কিন্তু অত্যন্ত সুলিখিত বই লেখায় ব্যস্ত। বইটি হল “মেটিরিয়ালিজম অ্যান্ড এম্পিরিও ক্রিটিসিজম—ক্রিটিক্যাল কমেন্টস অন এ রিয়্যাকশনারি ফিলজফি’।

    লেনিন ১৯০৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্য্যন্ত জেনেভায় বসে বইটি লেখেন। নভেম্বরে লণ্ডন গিয়ে একমাস ব্রিটিশ মিউজিয়াম লাইব্রেরিতে আধুনিক বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনো করেন। উদ্দেশ্য- অস্ট্রিয়ান ফিজিক্সের অধ্যাপক এর্নস্ট মাখ ও অ্যাভেনারিয়াসের পজিস্টিভিস্ট অবস্থানকে বোঝা এবং সমালোচনা দাঁড় করানো।

    তারপর ডিসেম্বরে প্যারিস গিয়ে এপ্রিল ১৯০৯ পর্য্যন্ত ওখানে বসে প্রুফ দেখেন। বইটি ১৯০৯ সালের মে মাসে রাশিয়ায় প্রকাশিত হয়।[6]

    তাহলে ১৯০৯ সালের মার্চ মাসে লেনিন ইন্ডিয়া হাউস যান কী করে?

    এই উদ্ভট থিওরির অন্য আপত্তিগুলোঃ

    সাভারকর দেশি বিদেশি অনেক বিপ্লবীদের নিয়ে লিখেছেন বা উল্লেখ করেছেন – কিন্তু লেনিনের সঙ্গে আলাপ? কোথাও এমন দাবি করেন নি।

    ইন্ডিয়া হাউসে সাভারকরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এম বি পি টি আচার্য, যিনি পরে কাবুলে ১৯২০ সালে মানবেন্দ্রনাথ রায়ের সঙ্গে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা করেন, এবং লেনিনের সঙ্গে দেখা করেছেন, তিনিও সাভারকরের সঙ্গে ইন্ডিয়া হাউসে লেনিনের পরিচয় নিয়ে কিছু লেখেন নি।

    রয়-লেনিন থিসিসের এম এন রায়, যিনি কমিন্টার্নের প্রতিনিধি হিসেবে মেক্সিকো, চীন এবং কাবুল গিয়েছেন, ১৯৩৭ সালে সাভারকর মুক্তি পেলে দেখা করতে তাঁর বাড়ি গিয়েছেন — তিনিও কোথাও এমন কিছু লেখেন নি।

    মাজ্জিনি ধরণের গুপ্ত সংগঠন এবং ব্যক্তি হত্যার থেকে লেনিন অনেক দূর। তাঁর ছোটবেলায় দাদা আলেকজান্দার জারের হত্যার প্রয়াসে ধরা পড়ে মারা যান। তখন থেকেই লেনিনের আস্থা গণ-অভ্যুত্থানে, ব্যক্তি সন্ত্রাসে নয়। এটা লেনিন স্বয়ং লিখে গিয়েছেন।

    লণ্ডনে জারের পুলিশের ভয়ে লেনিনের সাভারকরের ইন্ডিয়া হাউসে শেল্টার নেবার দরকার নেই, বরং বিপদ। কারণ ব্রিটিশ বিরোধী কাজকর্মের জন্যে ইন্ডিয়া হাউস তখন থেকেই স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের নজরে রয়েছে। আর লেনিন ও স্ক্রুপস্কায়া ১৯০২-০৩ থেকেই বহুবার লণ্ডনে যান, পড়াশোনা করেন। দলের সম্মেলন হয়। ওঁদের নিজস্ব সংগঠন সাভারকরের থেকে অনেক বেশি সক্ষম।

    ভবিষ্যপুরাণ এবং হিন্দু শব্দের উৎপত্তি নিয়ে সাভারকর

    হিন্দু কে? খালি সনাতন বৈদিক ধর্মের অনুযায়ীদের হিন্দু বলা, সাভারকরের মতে, মস্ত ভুল।[7]

    তাহলে হিন্দু কে?

    “ আসিন্ধু সিন্ধু-পর্যন্তা যস্য ভারত-ভূমিকা,
    পিতৃভূঃ পূণ্যভূশ্চৈব স বৈ হিন্দুরিতি স্মৃতঃ”[8]

    [ অর্থাৎ, সিন্ধুনদ (ব্রহ্মপুত্র এবং তার উপনদী সমেত এলাকাকেও সিন্ধু বলা হত) থেকে সিন্ধু (সাগর) পর্য্যন্ত বিস্তৃত এই ভারতভূমি, যার পিতৃভূমি (পূর্বপুরুষের ভিটে), এবং পূণ্যভূমি(সাংস্কৃতিক ভূমি), সেই হিন্দু। (প্রকাশকের হিন্দি থেকে বাংলা আমার)।]

    সম্পত কিন্তু এর অনুবাদ করেছেন from the Sindhu to the Sindhu (Indus to the seas) [9]

    মনে হয়, হিন্দি অনুবাদকেরা খেয়াল করেছেন যে সিন্ধুনদ থেকে সমুদ্র ধরলে উত্তর পূর্ব ভারত বাদ পড়ে যায়, তাই ব্রহ্মপুত্রকে টানাটানি। সাভারকর কিন্তু তাঁর মূল লেখায় সিন্ধু ও পঞ্চনদের কথাই বলেছেন।

    আমরা জানি, সিন্ধুর উপ এবং শাখা-নদীগুলোর নাম সিন্ধু, চন্দ্রভাগা (চেনাব), ঐরাবতী (রাভী), বিতস্তা (ঝিলম), শতদ্রু (সতলেজ), বিপাশা (বিয়াস), এবং অধুনা বিলুপ্ত সরস্বতী — এই হল সপ্তসিন্ধু। কিন্তু সাভারকরের সপ্তসিন্ধু বর্ণনায় পাচ্ছি সিন্ধু, শতদ্রু, চেনাব, বিতস্তা, গঙ্গা, যমুনা, সরস্বতী! [10] এখানে গঙ্গা-যমুনা কীভাবে জায়গা পেল বুঝতে পারছি না। কোন পাঠক ধরিয়ে দিলে খুশি হব।

    এই শ্লোকটি কোন শাস্ত্রগ্রন্থে নেই, সাভারকরের রচনা। কিন্তু দ্বিতীয় সংস্করণে (১৯৪২) প্রকাশক বলছেন – এই শ্লোকটি এখন ধার্মিক গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতির মান্যতা পেয়েছে।[11]
    প্রকাশন সংস্থা – বীর সাভারকর প্রকাশন, সাভারকর সদন, বোম্বাই।
    প্রকাশকের নাম এস এস সাভারকর। তিনি কে - কোথাও বলা নেই।

    সংস্কৃত সাহিত্যের মনোযোগী কোন কোন পাঠকের মনে হয়েছে যে শ্লোকটি কোন মৌলিক রচনা নয়, এটি মনুস্মৃতির শ্লোক ২.২২ কে একটু পালটে দেওয়া মাত্র।
    মনু ওই শ্লোকে কোন দেশে বা এলাকায় তাঁর মনুস্মৃতি মান্য সেটা বোঝাতে গিয়ে বলেছেন আর্যাবর্ত কোথায় বা কতদূর বিস্তৃত।

    “আ সমুদ্রাৎ তু বৈ পূর্বাদা সমুদ্রাচ্চ পশ্চিমাৎ।
    তয়োরেবান্তরং গিয়োর আর্যাবর্তং বিদুর্বুধাঃ “।। (মনুস্মৃতি ২/২২)।

    ‘পূর্ব এবং পশ্চিম সাগরের অন্তর্বতী যে ভূমি দুই পর্বতের মধ্যে অবস্থিত, তাহাকেই বিদ্বদজ্জনের আর্যাবর্ত বলিয়া থাকেন।
    (মহামহোপাধ্যায় গঙ্গানাথ ঝা’র অনুবাদ থেকে বাংলা)

    সাভারকরের ‘হিন্দুত্ব’ গন্থে ভবিষ্যপুরাণ গ্রন্থটির বিশেষ ভূমিকা। হিন্দুত্বের শব্দ এবং ধারণাটিকে শাস্ত্রসম্মত সিদ্ধ করতে উনি অনেকবার ভবিষ্যপুরাণকে অথরিটির মর্যাদা দিয়ে উদ্ধৃত করেছেন। সবচেয়ে বেশি আশ্রয় নিয়েছেন ভবিষ্যপুরাণের তৃতীয় ভাগ প্রতিসর্গ পর্বের।

    সেগুলো নিয়ে যথাসময়ে আলোচনা করা হবে।

    বর্তমানে আমরা শুধু সপ্তসিন্ধুকে হপ্তসিন্ধু বলা, ‘স’ কে যাবনিক উচ্চারণে ‘হ’ করা নিয়ে তথ্যগুলো দেখব।

    ভবিষ্যপুরাণ হচ্ছে প্রচলিত ১৮টি পুরাণের মধ্যে সবচেয়ে অর্বাচীন। কিন্তু এটি একমাত্র পুরাণ যা শুধু অতীত (পুরানো দিনের কথাই নয়), ভবিষ্যতের কথা বলে।

    ভারতে একগাদা পৌরাণিক

    যদিও বলা হয় এই পুরাণটিও মহাভারতকার বেদব্যাস লিখেছিলেন কিন্তু এর প্রথম দুটো খণ্ডে মনুস্মৃতির থেকে সৃষ্টি রহস্য এবং তিনটে যুগের বর্ণনা রয়েছে। তাতে কলিতে মেয়েদের অবস্থা এবং চরিত্র নিয়ে একগাদা যা বলা হয়েছে সেসব এখানে লেখা সম্ভব নয়।
    যেমন মেয়েদের জঙ্ঘায় লোম অথবা স্তনের বা তার বৃন্তের গঠন দেখে বোঝা যায় যে সে আজ্ঞাকারী বা কামুক বা পতিহন্তা!
    চতুর্থ পর্বে প্রায় কয়েকশ’ ব্রত পালনের নিয়ম ও তজ্জনিত পুণ্যের সূচী রয়েছে।
    ইন্টারেস্টিং হল তৃতীয় খণ্ড বা প্রতিসর্গ পর্ব। কারণ শুধু এতেই ভারত রাষ্ট্রের রাজাদের কথা ত্রেতা, দ্বাপর হয়ে কলিকালে মুসলমান এবং ইংরেজ শাসনের কথা বলা হয়েছে। এই পুরাণ অনুসারে রঘুবংশের সব রাজা (রাম এবং কুশ সমেত) দশ হাজার বছর ধরে রাজত্ব করেছেন।
    তারপর মহমদ বলে এক ঘৃণ্য অসুরের সময় থেকে ভারতে ম্লেচ্ছদের রাজত্ব এবং যাবনী ভাষার প্রচলনের কথা বলা হয়েছে। এটাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘মহম্মদ’ ধরে প্রচার করা হয়। আমার মনে হয় মহম্মদ ঘোরী। পৃথ্বীরাজ চৌহানের কথাও রয়েছে।
    বর্ণনা করা হয়েছে কীভাবে বেদমন্ত্রের প্রভাবে হিন্দুবীর যজ্ঞ করে আক্রমণকারী শক,হুণ, যবন,রোমক এবং দ্বীপবাসী চীনাদের ভস্ম করে দিলেন।
    (প্রতিসর্গ পর্ব, পঞ্চম অধ্যায়, ৭ এবং ৮)।

    আমি এখানে উদ্ধৃত করব এই বইটি থেকেঃ

    ভবিষ্যপুরাণম্‌
    (মূল সংস্কৃত ও বঙ্গানুবাদ সমেত)

    শ্রীমৎ স্বামী পরমাত্মানাথ ভৈরব (গিরি) কৃত অনুবাদ ও সম্পাদনা
    নবভারত পাবলিশার্স
    ৭২ ডি, মহাত্মা গান্ধী রোড, কোলকাতা - ৭০০০০৯
    প্রথম নবভারত সংস্করণ, ১৪২০ সন, (২০১৩ সাল)

    ভূমিকায় স্বামীজি বলছেন আধুনি বস্তুবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে মনে হতেই পারে ‘প্রতিসর্গ পর্ব’টি অত প্রাচীন নয়। যেমন এতে রবিবার অর্থে সানডে, ফাল্গুন অর্থে ফেব্রুয়ারি ইত্যাদি বলা আছে।

    ‘রবিবারে চ সন্ডে চ ফাল্গুনে চৈব ফর্বরী।
    ষষ্টিশ্চ সিক্সটি জ্ঞেয়া তদুদাহারমীদৃশম্‌’।।( প্রতিসর্গ পর্ব, ৫ম ভাগ, ৩৭)।

    অর্থাৎ ম্লেচ্ছদের ভাষায় রবিবার হয় ‘সানডে’, ফাল্গুন হয় ‘ফেব্রুয়ারি’ এবং ষষ্টি বা ষাট হয় ‘সিক্সটি’। এসব নাকি বেদব্যাস ৫০০০ বর্ষ আগে দিব্যদৃষ্টিতে দেখে লিখে গেছেন।

    যাকগে, আমরা আগে প্রাচীন শাস্ত্রে (ভবিষ্যপুরাণে) স কী করে ম্লেচ্ছদের হাতে হ হয়ে গেল সে বিষয়ে সাভারকরের বক্তব্য শুনি।

    সংস্কৃতের সিন্ধু প্রাকৃতে হিন্দু হয়ে গেল (উপ-শিরোনাম) ---- যেমন ভবিষ্যপুরাণে আছে

    ‘সংস্কৃতস্য বাণী তু ভারতবর্ষ মুঝ্যতাম।
    অন্যে খণ্ডে গতা সৈব ম্লেচ্ছাহ্যা নন্দিনোভবত।।
    পিতৃপৈতর ভ্রাতা চ ব্রাদর পতি রেবচ।
    সেতি সা যাবনী ভাষা হাশ্চশ্চাস্যস্তথা পুনঃ।
    জানুস্থানে জৈতু শব্দঃ সপ্তসিন্ধুস্তথৈব চ।
    হপ্তহিন্দুর্যাবনী চ পুনর্জ্ঞেয়া গুরুণ্ডিকা।।
    (প্রতিভাস পর্ব, অধ্যায় ৫)।
    শ্লোক সংখ্যা বলা হয় নি। [12]

    না, দুঃখের সঙ্গে বলতে বাধ্য হচ্ছি ওরকম কোন শ্লোক বইটিতে বা ওই অধ্যায়ে নেই। তাহলে সাভারকর কোত্থেকে উদ্ধৃতি দিলেন?

    উনি আসলে চারটে শ্লোক থেকে মিলিয়ে এটির নির্মাণ করেছেন। সেগুলো হল ২১, ২২ এবং ৩৫, ৩৬ ।

    প্রসঙ্গ সমেত পর পর দিচ্ছি।

    ভবিষ্যপুরাণ বলছেনঃ ম্লেচ্ছগণের ভাষা সরস্বতীর অভিশাপ, মহা অধম ভাষা। (শ্লোক ১৯-২০)।
    তেষাং বৃদ্ধিকলৌ চাসী সংক্ষেপেন প্রকীর্তিতা।
    সংস্কৃতস্যৈব বাণী তু ভারতবর্ষ মুহ্যতাম্‌। (২১)।
    সংস্কৃত হল এমন এক বাণী যাতে সমগ্র ভারত প্রফুল্লিত হয়।

    অন্যখণ্ডে গতা সৈব ম্লেচ্ছা হ্যানন্দিনোঃ ভবন।
    এবং তে কথিতং বিষ্ণুভক্তব্দিজৈসহ।। (২২)

    ম্লেচ্ছ ভাষার কথা আগেই বলেছি; এতে শুধু ম্লেচ্ছরা আনন্দ পায়।
    ম্লেচ্ছভাষা চারপ্রকার। ব্রজভাষা, মহারাষ্ট্র ভাষা, যাবনী ও গুরুণ্ডিকা। (৩১-৩২)।
    এই ভাষায় পানীয়কে বলে ‘পানি’, বুভুক্ষাকে ‘ভুখ’। (৩৩)।

    পিতৃপৈতর ভ্রাতা চ বাদরঃ পতিতেব চ।
    সেতি সা যাবনী ভাষা হ্যশ্চশ্চাপেস্তথা পুনঃ।। (৩৫)।
    এরা পিতাকে বলে ‘পিতর’ (পেটার?), ভ্রাতাকে বলে ‘বাদর’ (ব্রাদার?), অশ্বকে বলে ‘আস্য’ (হর্স?)।

    জানুস্থানে জৈনু শব্দঃ সপ্তসিন্ধুস্তথৈবচ।
    সপ্তহিন্দুর্যাবনী চ পুনর্জ্ঞেয়া গুরুন্ডিকা।। (৩৬)
    যবনী ভাষায় জানুকে বলে জৈনু, আর সপ্তসিন্ধুকে বলে ‘সপ্তহিন্দু’!

    এবার ফিরে যান সাভারকরের ছ’লাইনের শ্লোকটিতে। প্রায় প্রতিটি শব্দ উপরোক্ত ২১-২২ এবং ৩৫-৩৬ থেকে তোলা। কিন্তু একটা তফাৎ রয়েছে।

    শেষ লাইনে সাভারকর লিখছেনঃ হপ্তহিন্দুর্যাবনী চ পুনর্জ্ঞেয়া গুরুণ্ডিকা।।
    অথচ ৩৬ নম্বর মূল শ্লোক বলছেঃ সপ্তহিন্দুর্যাবনী চ পুনর্জ্ঞেয়া গুরুন্ডিকা।।
    অর্থাৎ মূলে আছে সপ্তহিন্দু, কোনমতেই হপ্তহিন্দু নয়। তাহলে এই যে জোর করে ‘স’ কে ‘হ’, এটা কি অনিচ্ছাকৃত?

    (চলবে)

    [1] ধনঞ্জয় কীর,’বীর সাভারকর’, বোম্বাই ১৯৬৬, পৃঃ ২২১।
    [2] ঐ, পৃঃ ১৯৮।
    [3] সাভারকর, হিন্দু রাষ্ট্র দর্শন, পৃঃ ১০২; Savarkar.org/en/pdfs
    [4] আর সি মজুমদার, ‘পেনাল সেটলমেন্টস ইন আন্দামান’, পৃঃ ২৩২।
    [5] ঐ ।
    [6] Lenin, Collected Works, Vol.14, Progress Publishers, Moscow. 1972. Pp-17-362 & Marxist.org
    [7] সাভারকর, ‘হিন্দুত্ব’, হিন্দি সংস্করণ, প্রভাত প্রকাশন, দিল্লি, পৃঃ ৭৮।
    [8] সাভারকর, ‘হিন্দুত্ব’, হিন্দি সংস্করণ, প্রভাত প্রকাশন, দিল্লি, পৃঃ ৮৬।
    [9] সম্পত, ‘সাভারকর’, ইকোজ ফ্রম দ্য ফরগটন পাস্ট’, ভল্যুম ১, পৃঃ ৪১৬।
    [10] সাভারকর, ‘হিন্দুত্ব’, হিন্দি সংস্করণ, প্রভাত প্রকাশন, দিল্লি, পৃঃ ১২।
    [11] হিন্দুত্ব বইয়ে দ্বিতীয় সংস্করণের ভূমিকা, পৃঃ iv
    [12] সাভারকর, হিন্দুত্ব, প্রভাত প্রকাশন, নিউ দিল্লী, ই-বুকে পৃঃ ১২।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ranjan Roy | ০১ নভেম্বর ২০২২ ১৫:৫২738726
  • অবশ্যই,  সিন্ধু নদ!
  • Kishore Ghosal | ০১ নভেম্বর ২০২২ ২৩:৫৮738730
  • দুর্ধর্ষ লিখছেন। অনেক অনেক বিষয়  যা ঝাপসা ছিল, বেশ স্পষ্ট হচ্ছে। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।  
  • অখণ্ড ভারত | 178.249.***.*** | ০৫ নভেম্বর ২০২২ ১৩:২১738783
  • Ranjan Roy | ১১ নভেম্বর ২০২২ ০৬:৫৩738885
  • অখণ্ড ভারত/ জয়দীপ
      এই টইতে আমরা শুধু সাভারকরের জীবন ও কর্ম, তাঁর হিন্দুত্বের অবধারণা, এবং ইতিহাস নির্মাণে হিংসার ভূমিকা নিয়ে তাঁর মতামত জানতে এবং বুঝতে আগ্রহী।
      আগে দরকার পক্ষে বিপক্ষে প্রচারিত তথ্যগুলোকে নেড়েচেড়ে চাল ও কাঁকর আলাদা করা। তাই এই কিস্তিতে কোন তথ্যগত ভুল থাকলে সেটা নিয়ে বলুন, সাগ্রহে শুনব। 
    এখানে আদৌ লেনিনের বা মার্ক্সের মত ও পথ নিয়ে কথা হচ্ছে না, বরং 'লেনিন যেতেন সাভারকরের থেকে পরামর্শ নিতে' --যা সাভারকরের জীবনী লেখক বা ওয়েবসাইট দাবি করছে-এবং ভবিষ্যপুরাণে  'সপ্তসিন্ধু'কে যবন ভাষায় 'হপ্তহিন্দু' বলা হয় --এই জাতীয় গল্পের তথ্যকে নেড়েচেড়ে দেখা হচ্ছে।
     সেখানে আমার লেখায় কোন ভুল থাকলে সেটা ধরিয়ে দিন।
     
    আপনার বক্তব্য এখানে অপ্রাসংগিক।
    আপনি একটা আলাদা টই খুলে সেখানে একেশ্বর বাদ নিয়ে আপনার বক্তব্য লিখুন, পড়ব।
     
     
  • শিবাংশু | ১২ নভেম্বর ২০২২ ২৩:৩১738906
  • এই 'ভবিষ্যপুরাণ' নামক সংকলনটির সময়কাল বিষয়ে কিছু পাওয়া যাচ্ছে কি? পুরাণ ও স্মৃতি এবং তাদের সঙ্গে যথাক্রমে 'বেদব্যাস' ও 'মনু'র সম্পর্ক নিয়ে আমার বইয়ে কালানুক্রমিক কিছু  আলোচনা আছে। যতোটুকু জানি ভবিষ্যপুরাণ একেবারে  অর্বাচীন একটি সংকলন। 'পবিত্র শাস্ত্রগ্রন্থ' হবার যৌক্তিকতা তার আদৌ আছে কি না সেটাই প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়। এ বিষয়ে গ্রহণযোগ্য কোনও তথ্য পাইনি। ঐ সংকলনটির ভরসায় ছায়ার সঙ্গে কুস্তি ব্যাপারটা আরও অনেক বিষয়ের মতো'ই দুর্বোধ্য।
  • Ranjan Roy | ১৯ নভেম্বর ২০২২ ২১:৪৭738958
  • শিবাংশু
     আপনার পোস্ট আজ দেখলাম।
    অষ্টাদশ পুরাণের মধ্যে ভবিষ্যপুরাণ একমাত্র পুরাণ যা শুধু অতীত নয় ভবিষ্যতের কথাও বলে। এর প্রতিসর্গ পর্বে দেহলী এবং কলিকাতা নগরের নামের উল্লেখ রয়েছে। এবং ভারতে ইংলণ্ডেশ্বরের রাজত্বের কথা বলা হয়েছে।
     
    "কলিকাতাপুরী নাম্না প্রসিদ্ধাভূন্‌ মহীতলে।
    কৌশিকস্তস্য তনয়ঃ পিতৃস্তুল্যং কৃতম্‌ পদম্‌।।  ভবিষ্যপুরাণম্‌, প্রতিসর্গ পর্ব, ৫/২/১৪ (পৃঃ ৬২০)
    শান্তি বর্মা ভাগীরথী তীরে শান্তিপুর নগর রচনা করেন। (৫/২/২৩)।
    ভূপসেনকে জয় করে কুতুকোদ্দীন (কুতবুদ্দীন?) দেহলী নগরের রাজা হন।
    সহোদ্দীন (সাহাবুদ্দীন?) দেহলী নগরে এসে ক্তুকোদ্দীনকে জয় করে মূর্তিসকল খণ্ডন করেছিলেন। (পৃঃ ৬৩০)।
     
    মুকুল বংশের ম্লেচ্ছরাজা তিমির লিংগ (তৈমুর লংগ) 
    দেহলী নগরে এসে মহাবধ করে শাল্গ্রাম শিলা কেড়ে নিয়ে উটের পিঠে চাপিয়ে ঘরে ফিরে যান,\।(পৃঃ ৬৩৬)
     
    সেই ম্লেচ্ছ কবীর নামে প্রসিদ্ধ হয়ে স্বামী রামানন্দকে নিজ গুরু মেনে শ্রীরামের ধ্যানে মগ্ন হলেন। (পৃঃ ৬৮০)। 
    তৈমুর লঙ্গের পুত্র সরুষ, তার পুত্র বাবর, তার পুত্র হুমায়ুন এবং তার পুত্র আকবর জন্মালে আকাশবাণী হয়েছিল। (পৃঃ ৭০৫)।
    আকবর পঞ্চাশ বছর রাজত্ব করে শিষ্যগণের সঙ্গে বৈকুণ্ঠ গমন করেন। (পৃঃ ৭০৯)।
    গুরুন্দ বানরমুখী ছিলেন। বৌদ্ধমত ছেড়ে ইশুমত (যীশুমত?) গ্রহণ করে কলিকাতা নগরী স্থাপন করতে উদ্যত হলেন। (পৃঃ ৭১৪)।
     
    কয়েকটি উপ অধ্যায়ের শিরোনাম হিন্দিতে রয়েছে যেমন-- "সমস্ত নৃপো কা সংগ্রাম ঔর নাশ" (পৃঃ   ৫৫৫)। এবং 
    "অজমের কে তোমর নরেশো কা বর্ণন" (পৃঃ ৬০২)।
     
     এসব দেখে এবং ফরবরী সানডে উল্লেখ দেখে মনে হয় এই পুরাণ , বিশেষ করে এর প্রতিসর্গ পর্ব কলিকাতা এবং শান্তিপুর নগরী হওয়ার পরে তথা দেশে ইংরেজি শিক্ষা শুরু হওয়ার পরে রচিত। অর্থাৎ দুশো বছরের বেশি প্রাচীন নয়। 
    এতে পুরাণের যুগ এবং রাজবংশ ও সমসাময়িক  শাসকদের বর্ণনা এমন ঘেঁট্টে ঘ' হয়েছে যে একে প্রামাণিক ধরে বারবার সাভারকরের সিন্ধু -হিন্দু যুক্তি বেশ দুর্বল হয়ে গেছে বলে আমার মনে হয়।
  • শিবাংশু | ২৩ নভেম্বর ২০২২ ০৮:৫৯738968
  • @রঞ্জন,
    অনেক ধন্যবাদ।  
    সামান্য চর্চায় যেটুকু বুঝেছি, ভারতীয় পুরাণসাহিত্য এক চর্যাগত প্রপঞ্চ। সমসাময়িক যাপন, লোকবিশ্বাস, কিংবদন্তি, ব্রাহ্মণ্য স্বার্থ রক্ষা ইত্যাদির সমন্বয়ে গড়ে ওঠা রাজা ও পুরোহিতদের কল্পকথা। সমাজের বৃহত্তর অংশকে নিয়তিবাদী তত্ত্বের চাপ দিয়ে নিপীড়ন করার প্রয়াস তার ছত্রে ছত্রে। তবে এদেশের ইতিহাসকে উদ্ধার করার গুরুত্বপূর্ণ কর্মে পুরাণচর্চার কোনও বিকল্প নেই।  
     
    তুর্কিরা আসার পর এই মূল্যবোধের দুনিয়ায়  ব্যাপক পরিবর্তন এসে যায়। আর্যাবর্তের মূলভূমিতে এর প্রসার ক্রমশ ব্যাহত হতে থাকে। তেরো-চোদ্দো শতকে উত্তরপূর্বে সুদূর কামাখ্যা দেশে সংকলিত কালিকাপুরাণই সিরিয়াস পুরাণচর্চার শেষ অধ্যায়। কালিকাপুরাণেই প্রথম ব্রাহ্মণ্য ধর্মকে 'হিন্দু' বিশেষণে উল্লেখিত হতে দেখা যায়। তার পরবর্তী কালের গালগল্পগুলিকে 'পুরাণ' নাম দেওয়ার প্রয়াস বস্তুত এক ধরনের 'এন্টায়ার পলি সায়েন্স'। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে প্রতিক্রিয়া দিন