
ডাক্তার শীতল ঘোষ নিজের জীবনকালেই মিথ হয়ে উঠেছিলেন।তার কাহিনী বড়ই দরদ ভরে লিখেছেন বন্ধুবর ডাক্তার মুখার্জি। ধন্যবাদ এরকম একটি অনবদ্য স্বাদুু রম্যরচনা উপহার দেবার জন্য।
সিদ্ধার্থ মজুমদার | 103.77.***.*** | ১২ নভেম্বর ২০২০ ১৬:১২100050খুব ভালো লাগলো। ডা. শীতল ঘোষের নাম টুকুই জানতাম। আপ নার লেখায় অসাধারণ একজন মানুঢ এবং সফল চিকিৎসকের কথা জানতে পারলাম। খুব নিপুণ ভাবে এঁকেছেন ডা. ঘোষের ছবিটি।
piyali Banerjee | 2402:3a80:ab6:eae9:0:48:11bd:***:*** | ১২ নভেম্বর ২০২০ ১৬:৪৩100052এরকম আরো জানতে চাই।এত আন্তরিক কথন পাঠ করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য লেখক ও প্রকাশক কে ধন্যবাদ
আবারও মুগ্ধ হলাম।
দেবীপ্রসাদ ঘোষ | 202.142.***.*** | ১৩ নভেম্বর ২০২০ ০০:৩২100073সিদ্ধার্থ বাবু ওঁর সাহচর্য পেয়েছিলেন ছাত্র হিসাব এবং পরবর্তীতে একই জীবিকায় থাকার সুবাদে। আমি সামান্য হলেও কিছু পরিচয় পেয়েছিলাম ওঁর প্রজ্ঞার, রোগী বা রোগী সংক্রান্ত কারণে।
বাবা ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী । উনি দ্বিতীয়বার যখন আমাদের বাড়ীতে আসলেন, এবার বাবাকেই দেখতে। ঢুকেই বললেন "স্বাধীনতা সংগ্রামীর বাড়ী তো" আসলে প্রথম বার আমাকে দেখতে এসে "তাম্র ফলক" দেখে জেনেছিলেন , বাবা স্বাধীনতা সংগ্রামী।
যাই হোক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর বাড়ী থেকে বেরিয়ে বললেন " না , বাবা ওঁর mitotic lever", নিদানপত্রে কিছু পরীক্ষার কথা লিখেছিলেন। বললেন পরীক্ষা গুলো করে শিয়ালদহর কাছে যে chember এ বসতেন সেখানে পরীক্ষার report নিয়ে দেখা করতে।
গেলাম সেখানে। report এ তো লেখাই ছিল, উনি fee নিলেন না । আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম "gall bladder CA হলো secondary হলো leverএ এর মধ্যে জানান দিল না তো?Silent gall bladder CA হয়?" উনি বললেন " কী বই পড়েছেন? কী করেন ?" বললাম "Baily and Love , পেশায় engineer."
উনি, সম্ভবতঃ 'জন' বলে যে ব্যক্তি সহকারীর কাজ করতেন , তাঁকে বললেন ভিতরের ঘর থেকে তিন volume এর একটা বই নিয়ে আসতে , বইগুলো পাবার পর বললেন" Bily Love কত দিয়ে কিনেছেন? এ বইএর একটা volume এর দাম আপনার বই এর তিনগুণ" বলে প্রতি বই যায়গা মত খুলে লাল পেন্সিল দিয়ে যায়গায় যায়গায় ঢ্যাঁড়া দিয়ে এগিয়ে দিয়ে বললেন "পড়ুন"। অপেক্ষা করলেন , পড়লাম, তারপর বললেন "5 percent case এ silent gall bladder CA হয়, দেখলেন তো!"
বিস্মিত হয়েছিলাম, চটজলদি unerring reference দেবার ক্ষমতায় । কী পড়াশুনা বাব্বাঃ।
Piu Mukherjee | 2409:4060:181:7c8b::1d92:***:*** | ১৩ নভেম্বর ২০২০ ১২:৪৬100116দারুন লাগলো .....
বেঁচে থাকলে বেশ হতো। রোগবালাইয়ে সঠিক চিকিৎসা পেতুম।
সমরেন্দ্র নাথ সেনগুপ্ত | 2401:4900:3149:67f0:921f:ee12:84c0:***:*** | ১৩ নভেম্বর ২০২০ ১৩:১৩100119সাল বা কোন হাসপাতাল - কিছুই এখন মনে নেই। কারন ঘটনা কি আমার কোনো এক বন্ধুর কাছ থেকে শুনেছিলাম। তাই সত্যি বা মিথ্যা - এ বিতর্ক অবান্তর।
হাসপাতালের করিডোরে একটি মাঝ বয়সী মানুষ কানের যন্ত্রনায় ভীষন কাবু হয়ে কিঞ্চিত ছটফট করছে। মেডিকেল সাইন্সে র ধন্বন্তরী শীতল ঘোষ নিজস্ব চেম্বারের পথে। হটাৎ মানুষ টি কে দেখে দাঁড়িয়ে গেলেন। ভাবলেন মাত্র ৫ সেকেন্ড। রোগীর সঙ্গে র মানুষ টিকে বললেন যে কিছু পাকা কাঁঠালের কোয়া নিয়ে আসতে। হ্যা তখন কাঁঠালের মরশুম ছিল। এই পরামর্শ দিয়েই উনি ওঁর চেম্বারের দিকে হাঁটা দিলেন।
সঙ্গে র মানুষ টি কিছুক্ষণ পর কাঁঠালের কোয়া নিয়ে এসে ডাক্তার ঘোষ কে দেখতে না পেয়ে জনৈক হাসপাতাল কর্মী কাছে থেকে জেনে ডাক্তার বাবুর সাথে চেম্বারে দেখা করলেন।
ডাক্তার বাবু বললেন যে দুটি কোয়া যে কানে ব্যাথা হচ্ছে সেখানে যেন চেপে ধরে রেখে ওঁর জন্য অপেক্ষা করতে। উনি দশ মিনিট পর যাবেন।
যেরকম বলা সেরকম কাজ এবং রোগীর ব্যাথা দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। রোগী আখের তুলনায় বেশি কষ্ট পাচ্ছ। ঠিক দশ মিনিট পর ডাক্তার বাবু এলেন ও কানের ওপর থেকে কাঁঠালের কোয়া দুটো তুলে নিলেন। সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন যে কি হয় - কি হয়।
কাঁঠালের কোয়া তুলতে দেখা গেল যে একটা মৌমাছি বেড়িয়ে এলো। ধীরে ধীরে রোগীর যন্ত্রনা র উপশম হোল।
এই হোল আমাদের সবার প্রিয় শেতল ঘোষ।
বড় অল্প হল যে । আরো লিখুন।
এ তো মনে হচ্ছে যেন কিংবদন্তী ডাক্তারের কল্পলোকের গল্পকথা।।
মতামত গুলো পড়ে জানার পরিধি আরো সমৃদ্ধ হল।।
sm | 2402:3a80:ab8:a3c:0:55:84ab:***:*** | ১৪ নভেম্বর ২০২০ ১৬:০২100204কিছু শোনা গপ্পো আছে।
এক, ভদ্রলোক এলেন শীতল ঘোষ কে দেখাতে।তখন কার দিনে ধরা যাক ,বিরাট ফি -- দেড়শো টাকা!
ভদ্রলোক দুটি একশো টাকার নোট দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।ডাক্তার বাবু , টাকা পকেটে ঢুকিয়ে কোন কিছুতে মগ্ন হয়ে গেছেন।
মিনিট দু তিন পর,ভদ্রলোক কে জিগলেন,দাঁড়িয়ে কেন?
ভদ্রলোক আমত আমতা করে বললেন,ডাক্তার বাবু পঞ্চাশ টাকার চেঞ্জ টা?
ওহ এই ব্যাপার।এই নিন।বলে একটি একশ টাকার নোট দু টুকরো করে,হাতে একটি টুকরো ধরিয়ে দিলেন।
পাগলা শীতল কে কি ই বা বলা যায়!
দুই, বহু বছর পর এক বেসরকারি হাসপাতালে,এক পুরাতন ছাত্রের সঙ্গে দেখা।
তীক্ষ্ণ স্মরণ শক্তির অধিকারী,শীতল ঘোষ মেধাবী ছাত্র টিকে এক মুহুর্তে চিনতে পারলেন।
কি করা হয় এখন?
স্যার নিউরোলজি তে ডি এম করেছি।
প্র্যাকটিস কেমন চলছে?
ওই,একরকম।
চুরি করতে জানেন?
মানে!
কিছু না।মায়ের গয়না কিছু চুরি করে বিলেত চলে যান।এম আর সি পি করে এসে প্র্যাকটিস শুরু করুন। বলেই হন হন করে হাঁটা দিলেন।
তিন ,
ওয়ার্ডে রাউন্ডে এসেছেন শীতল বাবু।দুর থেকে দেখলেন দুজন জুনিয়র ডাক্তার একটি বৃদ্ধ রোগীর রাইলস টিউব পড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।গলদ ঘর্ম অবস্থা।কিন্তু বার বার ট্রাই করে ও টিউব গলায় ঢোকাতে অসমর্থ হচ্ছে।
শীতল বাবু নিঃশব্দে পিছনে এসে গম্ভীর গলায় বললেন। ওমনি করে কষ্ট দিয়ে মারার কি দরকার।একেবারে গলা টিপে দিলেই হয়।
বলেই,কাছে এসে আস্তে আস্তে কেমন করে টিউব ঢোকাতে হবে নির্দেশ দিতে থাকলেন।এবার এক চান্সেই সাফল্য।
চার,রাউন্ডে বেরিয়েছেন ডাক্তার ঘোষ।পিছনে জুনিয়র ডাক্তার,স্টুডেন্ট, লেকচারার, এর বিশাল লেজ।
ওদিক থেকে আসছেন হেড ডিপ।তাঁর পিছনে ও অনুরূপ আর একটি বিশাল লেজ। হেড ডিপ শৌখিন লোক।গলায় হালকা পাউডার।গায়ে দামী পারফিউম এর সুগন্ধ।
করিডোরে, মুখো মুখি দুটি লেজ।কুশল বিনিময়।তার পর ধীরে ধীরে দুদিকে চলে যাওয়া।
দুদিকে চলে যাবার মুহুর্তে,শীতল বাবুর মোক্ষম কমেন্ট,জুনিয়র দের দিকে তাকিয়ে!
হেমামালিনি গেলেন!
reeta bandyopadhyay | ১৫ নভেম্বর ২০২০ ২২:৫৭100259আমার ঝুলিতে দুটি গল্প আছে, এই সুযোগে তা পরিবেশন করি। ষাটের দশকের মাঝামাঝি জ্বর এ ভুগে একসা হতে হতে মা আমাকে নিয়ে ডাক্তার বাবুর শেয়ালদা চেম্বারে হাজির.....কয়েকবার যাতায়াতের সুবাদে ওঁর সহকারী আমাকে চিনে গেছিলেন, আমাকে পাশের দরজা দিয়ে ঢুকিয়ে টুলে বসিয়ে দিতেন।এরপর আর বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হত না। ছোট হবার হরেক সুবিধা।
এমনি একদিন সবে আমাকে উনি কিছু জিজ্ঞাসা করেছেন, উওর দিতে যাব এমন সময় দরজা খুলে হন্তদন্ত হয়ে এক রোগী ঢুকেই হাউমাউ করে বলে উঠলেন, 'ডাক্তার বাবু আপনি তো আগের বার ৫০ টাকা ফি নিয়েছিলেন, এবারে যে ১০০ দিলাম, কিছু তো ফেরত দিলেন না। দাঁড়ান বলে ড্রয়ার এর ভিতর থেকে একটি১০০ টাকার নোট বার করে, মাঝখান থেকে ছিড়ে আদ্ধেকটা লোকটির হাতে ধরিয়ে দিলেন।সহকারী এসে হতভম্ব ভদ্রলোককে কোনমতে ঠেলেঠুলে বাইরে। এ আমার নিজের চোখে দেখা অভিজ্ঞতা।
পরের অভিজ্ঞতা অনেক পরিণত বয়সে। আশী পেরোনো শাশুড়ির হিমোগ্লোবিনের মাত্রা তলানিতে, ওনার ছেলে অন্য শহরে কর্মরত, বাড়িতে বৃদ্ধ শশুর আর দুটি বাচ্চা।রাত আটটায় আমি এলগিন রোডের চেম্বারে, হাতে রক্তের রিপোর্ট।এক ঝলক চোখ বুলিয়ে বললেন, এখনি ভর্তি হতে হবে...৪ এ নেমে গেছে... রক্ত দিতে হবে।
উদ্বেগ উত্তেজনয় মুখ দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল, আপনি ইয়ার্কি পেয়েছেন? এত রাতে আমি একা কি করে এই কাজটা করব? আপনি বুক করে দিন, ওরা আপনার কথা শুনব। আমার দিকে খানিকটা অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে ফোন তুলে কোঠারীতে নিজের পরিচয় দিয়ে আমার শাশুড়ির নামে বেড বুক করে দিলেন।
সে রাতে আমি লোকজন জোগাড় করে ভর্তি করতে পেরেছিলাম।আমার শাশুড়ির যে Myelodysplastic anemia হয়েছিল তা ওনার diagnosis ...ওনার চিকিৎসায় অনেকদিন বেঁচে ছিলেন।
সেদিন আমার অভব্যতাকে ক্ষমা করে উনি আমার অসহায় অবস্থায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন, কখনো ভুলতে পারবনা সে কথা। একই মানুষকে আমি ভিন্ন রূপে দেখেছি ।
Snehasis | 42.***.*** | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৬:০৬516225