২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলঃ কিছু প্রাথমিক ভাবনা : সৌভিক ঘোষাল
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৪ মে ২০১৯ | ১২২২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
এন আর সি এবং নাগরিকত্ব বিলের জোড়াফলাটি অবশ্য খুব সাম্প্রতিক বিষয় ছিল না এবং অনেকদিন ধরেই সেটি বলা হচ্ছিল। এই প্রচারের উগ্র বিভাজন স্বত্ত্বেও সাম্প্রতিককালে বেশ কিছু রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন, বিভিন্ন উপনির্বাচন ও স্থানীয় নির্বাচনে বিজেপির ধারাবাহিক পরাজয় ঘটছিল। এই সাম্প্রতিক নির্বাচনের পরাজয়গুলি বিরোধীদের মধ্যে আশা তৈরি করছিল এবং তারাও নির্বাচনী অঙ্কের বাস্তবতা মেনে অতীত বৈরিতা ভুলে অনেকটা কাছাকাছি আসছিলেন। এই জোট অনেক জায়গাতে নিজস্ব বৈরিতাকে অতিক্রম করতে পারে নি - যেমন পশ্চিমবঙ্গ বা দিল্লিতে আবার অনেক জায়গাতে পেরেওছে। যেমন কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র এবং সবথেকে গুরুত্বপূর্ণভাবে উত্তরপ্রদেশে। তবে প্রাক নির্বাচনী সার্বিক জোট হোক বা না হোক - প্রায় সকল অ এন ডি এ দলই একটি অবিজেপি সরকার তৈরির বিষয়ে একসঙ্গে থাকার, পোস্ট পোল সমঝোতার বার্তা দিয়েছিল। কোলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে ১৯ এ জানুয়ারীর মহাসমাবেশ থেকে এই সমঝোতার বার্তা ক্রমশ উচ্চকিত হয়ে উঠতে থাকে এবং দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ ধরনের আরো কিছু সমাবেশ বৈঠক যুক্ত কর্মসূচী লাগাতার চলতে থাকে।
পুলওয়ামা এবং তারপর: শোকের আবহে রাজনীতির দিনকাল : সৌভিক ঘোষাল
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | ১১৫৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
এত বড় ধরনের জঙ্গি হানা কীভাবে ঘটতে পারল,সেনা চলাচলের সময় সমস্ত সুরক্ষাবিধি ঠিকমত মানা হয়েছিল কীনা - এই সমস্ত প্রশ্নকে আমল না দিয়ে শাসক দলের দিক থেকে বেছে নেওয়া হল যুদ্ধোন্মাদনা তৈরির পথ। সেনাবাহিনীর প্রতি দেশবাসীর বৃহত্তর অংশের আবেগ এবং পাকিস্থানের প্রতি দীর্ঘলালিত বৈরিতার মনোভাবকে পুঁজি করে যুদ্ধের আবহ গড়ে তোলা হল।সার্জিকাল স্ট্রাইক -২ থেকে শুরু করে পুরোদস্তুর যুদ্ধের সম্ভাবনা নিয়ে চায়ের দোকান থেকে ফেসবুকের ওয়াল, ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকে নামজাদা টেলিভিশন চ্যানেলের নিউজরুম – সর্বত্র ব্যাপক উত্তেজনাপূর্ণ আলোচনা শুরু হয়ে গেল। অচিরেই শত্রুর তালিকা বাড়তে শুরু করল এবং পাকিস্থানের পাশাপাশি কাশ্মীরী আম জনগণকেও শত্রু তালিকায় ঢুকিয়ে ফেলা হল। কাশ্মীরী ব্যবসায়ীদের পণ্য বয়কটের ডাক দেওয়া হল, কাশ্মীরের মানুষজনকে দেশের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে রাজ্যে ফিরে যাবার হুমকি দেওয়া হল। আমাদের কোলকাতা শহরেও হুমকির মুখোমুখি হলেন এক কাশ্মীরী চিকিৎসক, যিনি বহুবছর এই শহরে ডাক্তারী করছেন। বিভিন্ন রাজ্যে কাশ্মীরী মেলা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে, কাশ্মীরের ছাত্র সহ বিভিন্ন মানুষদের হেনস্থা নিগ্রহ করা হচ্ছে – এরকম উদ্বেগজনক ভিডিও আমরা সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পেতে শুরু করলাম।
নোটবাতিলের আসল উদ্দেশ্য কী ছিল ? : সৌভিক ঘোষাল
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | ২১৭৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৩
কালো টাকার সমস্যা সমাধানের জন্য অন্যান্য অনেক রাস্তা নেওয়ার ছিল। এই কালো টাকা সত্তর বছর ধরে তৈরি হয়ে আসছে এবং এক মুহূর্তে কোনও এক জাদুদণ্ড বুলিয়ে তা নির্মূল করা সম্ভব নয়। গোটা ব্যবস্থাকে দায়বদ্ধ করে তোলার জন্য লোকপাল নিয়োগ করা সম্ভব। ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, আমলা, পুলিশ, বিচার ব্যবস্থা – এরা দায়বদ্ধ নয়। এদের দায়বদ্ধ করে তোলার মধ্যে দিয়েই কালো টাকাকে ধ্বংস করা সম্ভব।
...
বড় বড় ঋণ খেলাপী শিল্পপতিদের পাশাপাশি লাভ হয়েছে, হতে চলেছে কাদের ? পেটিএম কোম্পানির। শপিং মলগুলোর। বিগ বাজার, মোর, রিলায়েন্স ফ্রেস, স্পেনসার্স এর মতো একচেটিয়া খুচরো ব্যবসার কারবারিদের,যারা খুচরো ব্যবসায়ে ক্রমশ জাঁকিয়ে বসেছে গত কয়েক দশকে আর অধিকার করে নিতে চাইছে দেশের খুচরো ব্যবসার বিশাল বাজারটা,যার সিংহভাগ এখনো ছোট মাঝারি ব্যবসায়ীদের দখলে আছে। লেসক্যাশ ও ক্যাশলেস ট্রানজাকশান এর প্রায় বিকল্পহীন বন্দোবস্তের মধ্যে দিয়ে ছোট ব্যবসায়ীদের হটিয়ে খুচরো ব্যবসার বৃহৎ বাজারে একচেটিয়া ব্যবসায়ীদের জাঁকিয়ে বসার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।
...
পহেলি ঝাঁকি ও তারপর : ভারতের হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির সিকি শতাব্দী : সৌভিক ঘোষাল
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৭ ডিসেম্বর ২০১৭ | ১৩৫১ বার পঠিত
কমিশন উত্তর প্রদেশের তৎকালীন বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিংকে কড়া ভাষায় অভিযুক্ত করে। সঙ্ঘ পরিবার যা যা চেয়েছিল কল্যাণ সিং এর সরকার তাই তাই করেছে বলে কমিশন মন্তব্য করে। পরিকল্পিতভাবে সরিয়ে দেওয়া হয় সেই সমস্ত আধিকারিকদের যারা সঙ্ঘের কার্যকলাপে বাধাস্বরূপ ছিলেন। নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ইচ্ছাকৃতভাবে ঢিলেঢালা করে তোলা হয়। তারা হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট এর কাছেও মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয়। কলরাজ মিশ্র, উমা ভারতী, গোবিন্দাচার্য, শঙ্কর সিং বাঘেলা, বিনয় কাটিয়ার, সাক্ষী মহারাজ প্রমুখ বিজেপি নেতাদেরও কমিশন এই ঘটনার জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী করে। কমিশন অবশ্য নরসীমা রাও এর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকারকে এই ঘটনার জন্য দায়ী বলে মনে করে নি, যা খানিকটা অবাক করার মতো ব্যাপার।
সপ্তসিন্ধু দশদিগন্তের খোলা হাওয়া এনে দিতেন : সৌভিক ঘোষাল
বুলবুলভাজা | পড়াবই : মনে রবে | ০৯ আগস্ট ২০২০ | ২১৮৪ বার পঠিত
অনুবাদের পাশাপাশি এইসমস্ত অসামান্য প্রবন্ধের মধ্যে দিয়ে মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের দেখাতে থাকেন লাতিন আমেরিকার রক্তাক্ত ইতিহাস ও তার থেকে নতুন এক লাতিন আমেরিকাকে গড়ে তোলার স্বপ্ন কীভাবে সেখানকার সাহিত্যে ভাষা পাচ্ছে। লাতিন আমেরিকার বিদ্রোহী কবি কথাকারেরা ইউরোপীয় আখ্যান জগৎ থেকে সচেতনভাবে স্বতন্ত্র হতে চেয়েছেন। সেটা রচনার বিষয় ও প্রকৃতি উভয় দিক থেকেই। তাঁদের লেখায় রয়েছে এক বিশেষ ধরনের রাজনৈতিকতা, যা তাদের লেখার বিষয়বস্তু ও রীতিকে বিশিষ্টতা দিয়েছে। তাঁরা লাতিন আমেরিকার ইতিহাস জুড়ে যে শোষণ চলেছে ঔপনিবেশিক ও নয়া ঔপনিবেশিক যুগে, তাকে ও তার প্রতিক্রিয়াকে নানাভাবে ধারণ করতে চান তাঁদের গল্প উপন্যাসে। সম্পদের লুঠতরাজ, শ্রম শোষণ, স্বৈরতন্ত্র এবং সে সবের প্রতিক্রিয়াজাত দ্রোহ রাজনীতির ব্যাপারটি লাতিন আমেরিকান সাহিত্যে কীভাবে উঠে আসছে অনুবাদ ও প্রবন্ধের মাধ্যমে বাঙালি পাঠককে তার সাথে নিরন্তর পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন মানববাবু।
স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় খুলুক, পাশাপাশি জরুরি প্রয়োজনে অনলাইন শিক্ষার পরিকাঠামোকেও মজবুত করা হোক : সৌভিক ঘোষাল
বুলবুলভাজা | আলোচনা : শিক্ষা | ২১ জুলাই ২০২১ | ৩১৩০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
p>অনলাইন ক্লাস ইস্কুলের বিকল্প হতে পারবে না কোনওভাবেই - তা প্রথম থেকে জানা ছিল। কিন্তু অনলাইন ক্লাস যতটা সীমাবদ্ধ হয়ে থাকল গত পনেরো ষোলো মাসে - ততটা সীমাবদ্ধ হয়ে যাবারও বোধহয় কথা ছিল না।
বিশেষ করে যত ঘরে স্মার্ট ফোন আছে, ইন্টারনেট ডেটা প্যাক যতটা সস্তা হয়েছে আগের চেয়ে তার হিসাব নিকাশ করলে মনেই হয় যে অনলাইন ক্লাস যতটা সীমাবদ্ধ হয়ে থেকেছে, তার চেয়ে প্রসারিত হতে পারত।
কেন অনলাইন ক্লাস আরো খানিকটা প্রসারিত হতে পারল না সেই আলোচনা একটা স্বতন্ত্র বিষয়। সেখানে স্মার্ট ফোন, ইন্টারনেটের ডেটা প্যাক, কানেকশান ও গতির সহজলভ্যতা এসবের প্রশ্ন আছে, ছোটদের মনঃসংযোগের প্রশ্ন আছে, শিক্ষাদপ্তরের পরিকল্পনার খামতি নিয়েও প্রশ্ন যে একেবারেই নেই তাও নয়।
কেন এতদিনেও বিভিন্ন শ্রেণির বিষয়ভিত্তিক ক্লাস মেটেরিয়াল এক জায়গায় রাখার একটা ওয়েব সাইট ও অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ তৈরি করে ফেলা গেল না, যেখানে ছাত্রছাত্রীরা তাদের সময় সুযোগ মত ঢুকতে পারত আর দেখে নিতে পারত তাদের পাঠ্য বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনও ভিডিও, ছবি, চার্ট, ম্যাপ, গ্রাফ, লেখা ইত্যাদি তা বোঝা দুষ্কর।
ছাত্রছাত্রীদের প্রশ্ন রাখার আর উত্তর পাওয়ার জায়গাও সেখানে রাখা যেতে পারত, ওয়েব পোর্টালটিকে ইন্টার্যাকটিভ করে তোলার অনেক সুযোগ তো প্রযুক্তি করেই দিয়েছে। তবুও সেই সুযোগকে ব্যবহার করে নেবার দিকে শিক্ষা দপ্তর এগোলেন না।
এই অতিমারীকে মোকাবিলা করে এই সময়ে শিক্ষাকে কিছুটা হলেও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজটা যে এক একটি বিদ্যালয় ও তার শিক্ষক শিক্ষিকাদের বিচ্ছিন্ন উদ্যোগের বিষয় নয়, সেই উদ্যোগ যতই আন্তরিক হোক না কেন শেষ পর্যন্ত একটি কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা ও পরিকাঠামো এই বিপুল সমস্যার মোকাবিলায় জরুরি - তা শিক্ষা দপ্তর বুঝে উঠতে পারেন নি বলেই মনে হয়।
এই সমস্ত নানা ধরনের বিষয় ছাড়াও অন ক্লাইস ক্লাস সংক্রান্ত সমস্যাটা অনেকটাই অর্থনৈতিক।
পাঠ প্রতিক্রিয়া - নৈঃশব্দের সংলাপ : সৌভিক ঘোষাল
বুলবুলভাজা | পড়াবই : প্রথম পাঠ | ০৮ আগস্ট ২০২১ | ২৭১২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
বিশ্বসাহিত্যের ২২ জন বিখ্যাত লেখকের কয়েকটি সাক্ষাৎকারের সমাহার নৈঃশব্দের সংলাপ বইটি। এখানে লেখকেরা জানিয়েছেন তাঁরা কীভাবে লেখালেখি করেন, কী ধরনের লেখা পড়তে ভালোবাসেন, কোন কোন লেখক তাঁদের প্রভাবিত করেছেন, লেখার ক্ষেত্রে কত ধরনের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা তাঁদের করতে হয় ইত্যাদি নানা বিষয়। পড়লেন সৌভিক ঘোষাল।
আফগানিস্তানে তালিবান শাসনের নতুন অধ্যায় : প্রাথমিক গতিপ্রকৃতি : সৌভিক ঘোষাল
বুলবুলভাজা | আলোচনা : রাজনীতি | ২৩ আগস্ট ২০২১ | ২৫৬৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
ভারত সরকারের প্রাথমিক কর্তব্য এদেশের সমস্ত নাগরিককে সন্ত্রাস বিধ্বস্ত আফগানিস্তান থেকে সুষ্ঠভাবে দেশে ফিরিয়ে আনা। সেইসঙ্গে ভারতের সরকার ও বর্তমান শাসক দলের উচিত এই পরিপ্রেক্ষিতে সি এ এ আইনটিকে গভীরভাবে পুনর্বিবেচনা করা। এই আইন যখন মুসলিমদের শরণার্থী হিসেবে নাগরিকত্ব প্রার্থীর তালিকা থেকে বাদ দিয়েছিল, তখনই এর প্রতিবাদ হয়েছিল। বর্তমান পরিস্থিতি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে আফগানিস্তানের মুসলিমদের ভারত সহ বিভিন্ন দেশে তালিবানি সন্ত্রাসের পরিপ্রেক্ষিতে আশ্রয় ও পুনর্বাসন কতটা প্রয়োজন। তালিবানকে দেখিয়ে সমস্ত মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকে নিশানা করার ঘৃণ্য অপচেষ্টাও কোনও কোনও শিবির থেকে লক্ষ করা যাচ্ছে। যদিও বাস্তবে যে বিশ্ব জনমত তালিবানি বর্বরতার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছে, তার মধ্যে মুসলিম সমাজের মানুষজন রয়েছেন বিরাট সংখ্যায়। এই ঘৃণা বিদ্বেষের রাজনীতিকে শক্ত হাতে মোকাবিলা করা দরকার।
তালিবানি শাসনের প্রত্যাবর্তন দেখিয়ে দিচ্ছে রাষ্ট্রের সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক তৈরির চরম ক্ষতিকর চেহারাটি কেমন হতে পারে। বিশ্বের যেখানেই আধুনিককালে রাষ্ট্র ও ধর্মের নৈকট্য সৃষ্টির চেষ্টা হয়েছে, সেখানেই গণতন্ত্র ও আধুনিকতা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। ধর্ম ও বিশ্বাসকে ব্যক্তিগত পরিসরে আবদ্ধ রেখে রাষ্ট্রকে ধর্মমুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালনা কতটা দরকারি – বর্তমান আফগানিস্তান তা আরেকবার চোখে আঙুল দিয়ে দিচ্ছে।
মিলান কুন্দেরা ও প্রাগ বসন্ত সম্পর্কে দু চার কথা : সৌভিক ঘোষাল
বুলবুলভাজা | পড়াবই : মনে রবে | ১৭ জুলাই ২০২৩ | ১১২৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
১৯৬৫ সালেই লুডভিগ বলে চরিত্রটিকে কেন্দ্র করে মিলান কুন্দেরা তাঁর ‘দ্য জোক’ উপন্যাসটি লিখে ফেলেছিলেন। তবে রাষ্ট্রীয় সেন্সরশিপের আওতায় তা তখন প্রকাশিত হয় নি। ১৯৬৭ সালে সেটি প্রকাশিত হল। অনতি পরেই অবশ্য সেটি আবার নিষিদ্ধ হয়ে যায় চেকস্লোভাকিয়ায়। পরবর্তীকালে মিলান কুন্দেরাকে দেশও ছাড়তে হয়। আশ্রয় নিতে হয় প্যারিসে। আমৃত্যু সেটাই ছিল তাঁর শহর। একসময় তিনি চেক ভাষায় লেখালিখিও ছেড়ে দেন। লেখার ভাষা হিসেবে বেছে নেন ফরাসী।
চেক কমিউনিজম ও কুন্দেরার সম্পর্ক নানা পর্বে ওঠানামা করেছে। যে কুন্দেরা কমিউনিস্টরা চেকস্লোভাকিয়ায় ক্ষমতায় আসার আগেই নিয়েছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ, কমিউনিস্টদের চেকস্লোভাকিয়ার ক্ষমতা দখলের লড়াইতে ছিলেন প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারী, তিনি অচিরেই এর বিরোধী হয়ে উঠলেন। এতটাই কড়া সমালোচনা শুরু করলেন কমিউনিস্ট পার্টির যে ১৯৫০ সালেই তাঁকে পার্টি থেকে বহিষ্কৃত হতে হল ? ১৯৫৬ সালে আবার তাঁকে পার্টিতে ফেরানো হল। ১৯৬৭ – ৬৮ র পালাবদলের সময়ে তিনি হয়ে উঠলেন পার্টির এক প্রধান বুদ্ধিজীবী লেখক। তৎকালীন সংস্কার কর্মসূচীর পক্ষে চলল তাঁর সওয়াল ও লেখালিখি। কিন্তু সংস্কারকে যখন আবার আটকানো হল, কুন্দেরা আবার চলে গেলেন কালো তালিকায়। তাঁকে আবার কমিউনিস্ট পার্টি থেকে বহিষ্কৃত হতে হল। নিষিদ্ধ হল তাঁর উপন্যাসও। কুন্দেরার প্রথম উপন্যাস ‘দ্য জোক’ এর বিলম্বিত প্রকাশ, সাময়িক সাফল্য ও পুনরায় রাষ্ট্রীয় সেন্সরশিপের আওতায় পড়ার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে চেকস্লোভাকিয়ার রাজনীতির নানা পালাবদল। বিশেষ করে ১৯৬৮ র প্রাগ বসন্ত। প্রাগ বসন্তের সেই ইতিহাস বাদ দিয়ে কুন্দেরা, তাঁর লেখালিখি পড়াই সম্ভব নয়। বোঝা সম্ভব নয় কুন্দেরার রাজনৈতিক দর্শনকেও।
বাংলা ভাষার গঠন নিয়ে চর্চা ও কিছু প্রস্তাব : সৌভিক ঘোষাল
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ২২ অক্টোবর ২০২৩ | ৩৬৩৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
বাংলা ভাষা একটি মিশ্র ভাষা। তার মধ্যে বৈদিক, সংস্কৃত ও প্রাকৃত ভাষার অবদান যেমন আছে, তেমনি আছে খেরওয়াল বা সাঁওতালী সহ বেশ কিছু মুণ্ডা ভাষার অতি গুরূত্বপূর্ণ অবদান। বাংলা ভাষার ওপর বৈদিক, সংস্কৃত ও প্রাকৃতের মতো আর্য ভাষার প্রভাবের দিকটি নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে। কিন্তু অস্ট্রো এশিয়াটিক, দ্রাবিড় ও সিনো টিবেটিয়ান ভাষারও যে কম বেশি প্রভাব আছে বাংলা ভাষার গঠনে – তাই নিয়ে আলোচনা তেমন দেখা যায় না। অথচ ভাষাপ্রকৃতির দিক থেকে বিচার করলে বাংলা ভাষার গঠনে মুণ্ডা সহ এসব ভাষার প্রভাবের দিকটি কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ।