চক্র : রুমা মোদক
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ৩০ এপ্রিল ২০১৬ | ১৩০২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
সুমনের কোন গন্ধবাতিক নেই। যেখানে সেখানে যে কোন গন্ধ তার নাকে লাগে না। বিশেষত যে গন্ধ যেখানে লাগবার কোনো প্রশ্নই উঠে না। ভালো কিংবা মন্দ হোক যে কোন রকম। গন্ধ তার প্রাত্যহিকতাকে কোনো ভাবেই প্রভাবিত করে না। গন্ধকে প্রিয় কিংবা অপ্রিয় কোনো সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করার বাতিক ও তার নাই, যেমন ছিল দুলালের। দুনিয়ার তাবৎ ভালো গন্ধকেই তার লাগতো হাসনাহেনা ফুলের মতো। কিন্তু এই ঝামেলা সুমনের নাই, পাশের দোতালা বাসায় পোলাও রান্না হলে ঘি গরম মশলা ফোড়নের গন্ধই নাকে লাগে তার, মেসে শুঁটকি রান্না হলে শুঁটকির। রোজ রাতে মধুবন রেস্তোঁরার পাশ দিয়ে ফেরার সময় ড্রেনে জমে পচে উঠা বাসি খাবারের নাড়ি-ভুড়ি উল্টে আসা গন্ধ আর বারান্দায় শিককাবাব ভাজার পেটের তীব্র ক্ষুধা জাগিয়ে দেয়া গন্ধ মিলেমিশে যে খানিক গন্ধময় ঘোর তৈরি করে তার ক্লান্ত ক্ষুধার্ত শ্রান্ত দেহ ঘিরে, তাও খুব স্বাভাবিকই বোধ হয় সুমনের। মোটেই তা বাতিকগ্রস্ততার পর্যায়ে পড়ে না। কিন্তু আজ ২৫ মাইল সি এন জি চালিত যান আর বর্ষার কাদা প্যাচপ্যাচে রাস্তায় ১০ মাইল রিক্সায় আদিত্যপুর গ্রামে দুলালের বাড়িতে পৌঁছে প্রথমেই তার চোখ যায় বাড়ির শেষ মাথায়।
অনিরুদ্ধ আগুন : রুমা মোদক
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১১ অক্টোবর ২০১৬ | ১৩৮২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
চন্দ্রাবতী মায়ের প্রসঙ্গ তুলে খোঁটা দেয়, ‘বাবা তুমি কাপুরুষ’। এ শব্দটা মেয়ে শিখলো কোত্থেকে? মা ছাড়া বড় হওয়া গাঁও-গেরামের মেয়ে, কৈশোর না-পেরোনো বয়সেই অনেকখানি পরিণত। প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করা হয় না চন্দ্রাবতীকে, বরং আত্ম-আবিস্কারে মগ্ন হয় অঘোর গায়েন, সত্যি কি কাপুরুষ সে? দোষতো তার নিজের। কেনো নিজের অবস্থা বিবেচনা না করে সে আত্মসমর্পণ করেছিল প্রেম আর মোহের কাছে? তার বান্ধা পালা শুনে সুলেখা পাগল হয়েছিল বলেই কি নিজের অভাবী-আধপেটা জীবনে ওকে জড়ানো কোনো বিবেচনাসম্পন্ন কাজ ছিল? কিন্তু কীই বা করার ছিল? বয়সটা মোহাচ্ছন্নতার, অবাধ্য যৌবনের। কাপুরুষের মতো তখনো সুলেখার বারবার বিয়ে করার তাগিদকে অগ্রাহ্য করেছে সে, কালক্ষেপণ করেছে, ভৎর্সনা করেছে সুলেখাকে, ‘পাগলরে যদি বল নিজের ঘরে আগুন লাগাইয়া দিতে সে কি লাগাইবো?’ সুলেখাকে নিজের দুর্বহ জীবনের সাথে জড়াতে ঠিক বিবেক থেকে সায় পেতো না অঘোর -হয়তো এটা কাপুরুষতা। তবু সুলেখার সুখের কথা ভেবে কাপুরুষই থাকতে চেয়েছে সে, কিন্তু পারলো কই? ভালোবাসার ক্রমাগত আহবানের কাছে কত সময় কাপুরুষ থাকা যায়?
প্রসঙ্গটি বিব্রতকর : রুমা মোদক
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ২৭ এপ্রিল ২০১৭ | ১১৮৫ বার পঠিত
পার্বতী মেয়েটি বুদ্ধিমতী, ভীষণই বুদ্ধিমতী। তবে তার এই বুদ্ধিমত্তার সাথে যুক্ত হয়েছে গ্রাম্য অশালীন কৌতূহল আর অসহ্য বাচালতা। ‘রাজলক্ষ্মী’তে আসার পর পরই তা টের পেয়েছে মোনা, আর যতটা সম্ভব সাবধান থেকেছে আচরণে-কথায়। পারতপক্ষে সমীরের সাথে একা-একা কথাই বলেনি। সবার সাথে মিলে কথা বলার সময়ও যথাসাধ্য নির্বিকার থেকেছে, কখনও সাথে আসা আরও দু-বন্ধু নিশি-দ্যুতির চেয়েও বেশি। ভরা পূর্নিমায় সমীরদের শত বছরের পুরনো দালানের ছাদে বসে বন্যার ‘আজ জোছনা রাতে সবাই গেছে বনে’ শুনতে ইচ্ছে হলেও প্রাণপণে তা দমিয়ে রেখেছে। দমিয়ে রেখেছে বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে চলা পাহাড়ী ছড়ায় সমীরের হাতে হাত রেখে পা ভেজানোর ইচ্ছেটাও। তবু বিকেলের জলখাবারে সমীরের বৌদি টেবিলে ফুলকো লুচি আর ছানার ডালনা এনে দিলে ওরা যখন ভীষণ উচ্ছ্বসিত হয়– শোন, শোন এগুলো মোটেই তোদের আজিজ সুপারের লুচি নয়, খেয়ে দেখ কী ভীষণ মোলায়েম আর টেস্টি, আরে এগুলো হল আসল লুচি, আজিজ সুপারে যা খাই ওগুলো তো ক্লোন রে ক্লোন, লুচির ক্লোন– তখন সমীর মুখ টিপে হেসে– খাও খাও, নিজের বাড়ি মনে করে খাও– বলে যখন মোনার প্লেটে আরও দুটি লুচি তুলে দেয়, তখন আর কারো চোখে না হোক পার্বতীর চোখে সন্দেহ ছাপিয়ে ‘চোর ধরে ফেলা’র মতো সাফল্যের আনন্দ পড়তে ভুল হয় না মোনার। নিশি-দ্যুতির সাথে বিষয়টি নিয়ে আলাপও করে মোনা। ওরা উড়িয়ে দেয়– দুর, গৃ-হ-প-রি-চা-রি-কা এত পাত্তা দেয়ার দরকার আছে? পাত্তা তো মোনা দিনে চায়নি। কিন্তু ওর মুখে লেগে থাকা রহস্যময় হাসি, চপলা দৃষ্টি, সুযোগ পেলেই গা ঘেঁষে অযাচিত কৌতূহল কেমন যেন উদ্দেশ্যমূলক মনে হয়। পাত্তা না দিয়ে উপায় থাকে না। সমীরকে বলেও ফেলে একবার– তোমাদের কাজের মেয়েটি ভারি ইঁচড়ে পাকা তো..., সমীর সুযোগ পেয়েই টিপ্পনি কাটে– ও বাবা এরই মাঝে শ্বশুরবাড়ি নিয়ে কমপ্লেন শুরু হয়ে গেল? আপাত বিষয়টা হাসিঠাট্টার মাঝে ফুরিয়ে গেলেও শেষতক তো আর শেষরক্ষা হল না, পচা শামুকে পা কাটার মতো পার্বতীর কারণেই ঘটনা ঘোট পাকিয়ে গেল।
মামা ফকিরের কেরামতি : রুমা মোদক
বুলবুলভাজা | বাকিসব : মোচ্ছব | ১৮ নভেম্বর ২০১৮ | ১৬১০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
কবে থেকে মামা ফকিরের এই কেরামতি , গ্রামের সবচেয়ে বয়স্ক বৃদ্ধ মানুষটি জানান, যেদিন নোয়াখালিতে বাবুজি মহাত্মা গান্ধী আসেন আর মালগাড়ী কামরাভর্তি করে মরা মানুষ এনে ভৈরবের মেঘনা নদীতে ফেলে দেওয়ার খবর বাতাসে উড়তে উড়তে এই গ্রাম পর্যন্ত এসে পোঁছেছিল সেদিন কাকডাকা ভোরে মামা ফকির প্রথম আগুন আগুন! বলে চিৎকার করে। তার দৃষ্টি ছিল রায়বাড়ি বরাবর। গ্রামবাসী পরদিন ভোরে অবাক বিস্ময়ে দেখে রায়বাড়ির উত্তরাধিকার বাবু মহেন্দ্র নারায়ণ রায়, (এমএ ডিস্টিংশন, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়)-এর রক্তাক্ত দেহ তুলসিতলায় পড়ে আছে আর নাটমণ্ডপ সিন্দুক ভর্তি কাঁসার বাসন-কোসন, লক্ষনৌ থেকে আনা সেতার সব সুসজ্জিত রেখে তার পরিবারটি রাতের অন্ধকারে ভারত পালিয়েছে।
অরিত্রীর মৃত্যু শি্ক্ষাব্যবস্থাকে বাঁচাক : রুমা মোদক
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮ | ১০৫১ বার পঠিত
পরীক্ষা নামক ফাঁসির রজ্জুর সম্মুখে নার্ভাস শিক্ষার্থীটিকে পুনঃপুন চেক করার নামে ভয়াবহ মানসিক চাপ,পরীক্ষার হলে খাতা আটকে রাখা ইত্যাদি কতোরকম ভয়াবহ নির্যাতনের মধ্য দিয়ে যে একজন শিক্ষার্থীকে এই পরীক্ষা নামক ফাঁসির রজ্জু থেকে বেঁচে ফিরতে হয় তা বলা বাহুল্য মাত্র! যেনো দেশের এই বেহাল শিক্ষা ব্যবস্থার সব দায় শোধ করতে হবে নিষ্পাপ শিক্ষার্থীদের।
যতোক্ষন একটি ব্যবস্থা পরীক্ষাকেই ধরবে মেধা যাচাইয়ের মাপকাঠি,যতোক্ষন একটি ব্যবস্থা পরীক্ষাকেই নির্ধারিত করবে তার যোগ্যতা যাচাইয়ের দাঁড়িপাল্লা ততোক্ষন গাইড ব্যবসা, প্রাইভেট পড়ানোর ব্যবসা, কোচিং ব্যবসা কিছুই বন্ধ করা সম্ভব নয়।সম্ভব নয় "শিক্ষক" নামধারী কিছু চাকরিজীবীদের ষণ্ডামি। সম্ভব নয় বন্ধ করা ছাত্রের পরীক্ষায় ভালো নাম্বার পাবার প্রতিযোগিতায় যে কোন উপায় অবলম্বনের প্রবণতাও।এবং ততোক্ষন পর্যন্ত এঈ প্রবণতা অপরাধও নয়।
উঠে আসো আতঙ্ক আর ভয়ের রাত্রি পেছনে ফেলে : রুমা মোদক
বুলবুলভাজা | অপার বাংলা | ০৭ অক্টোবর ২০২০ | ২৯৭৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
এক নারীকে পুরোপুরি উলঙ্গ করে তার ওপর নির্যাতন করছে প্রভাবশালী মাস্তানরা।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের বড়খাল এর পাশে দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার,বাদল ও কালামের নৃশংস নির্যাতনের শিকার এই নারী,বহু বার পায়ে ধরে বাবা ডাকলেও শেষ রক্ষা হয়নি এই নারীর।তারা খুব নারকীয়ভাবে এই নারীর যৌনাঙ্গ ও সমস্ত শরীরে নির্যাতন করে।
যেখানে এই নারীর যৌনাঙ্গে টর্চ লাইট ও হাত ঢুকিয়ে দিয়ে খুব খারাপভাবে নির্যাতন করা হয়েছে,যা ৭১এর বর্বরতাকেও হার মানায়। সম্পূর্ণ ভিডিওটি প্রশাসনের কাছে প্রেরণ করা হবে বলে উল্লেখ করেছেন পোস্টদাতা।
এই একটি ঘটনার বহুমাত্রিকতা আসুন একটু তলিয়ে দেখি, এই সদম্ভ উল্লাসকারী ধর্ষকগুলির বয়স কত? আঠারো থেকে ত্রিশ। পরপর দুটি প্রজন্ম। তারা কেন করেছে এই ঘৃণ্য অপরাধ? আমাদের বিশ্বাসযোগ্য বিশ্বাসকে ভেঙেচুরে, ভাবতে পারেন এই জেনারেশন কাজটি করেছে তাদের ‘পবিত্র দায়িত্ব’ ভেবে! ভাবতে পারেন, নারীটির প্রাক্তন স্বামী তার ঘরে এসেছিল বলে তাকে শায়েস্তা করার ‘পবিত্র দায়িত্ব’ তারা স্বেচ্ছায় তুলে নিয়েছে কাঁধে। ভাবুন, পড়শির বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়া স্বেচ্ছাসেবী প্রজন্মের বৌদ্ধিক পতন।
দ্য প্যারাগন হাউজিং : রুমা মোদক
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : নববর্ষ | ১৫ এপ্রিল ২০২১ | ২২৪৫ বার পঠিত
সে কি আর নীতেশ রবিদাস জানে না? পৌরসভার নোটিশ পেয়ে কার কাছে না গিয়ে ধর্ণা দিয়েছে তারা। ব্রিটিশ আমল পার হয়ে পাকিস্তানি আমল, জয়বাংলা, কেউ তাদের ওঠাতে চায়নি। ফুলে ফেঁপে বড়ো হয়েছে তাদের পরিবার। বাঁশের বেড়া দিয়ে খোপ খোপ বিভক্ত হয়েছে পরিবার। চামড়া সেলাইয়ের কাজ ছেড়ে রংমিস্ত্রি, রিকশা মিস্ত্রি, কত পেশায় ছিড়িয়ে গেছে তারা। কিন্তু সন্ত ঋষি সন্তানদের ওঠানোর চিন্তা করেনি কেউ। দ্য প্যারাগন হাউজিংই প্রথম এদের উৎখাতের প্রসঙ্গ ওঠায়। কেউ তখন পাশে দাঁড়ায়নি একা বদরুল ছাড়া। তাও নিশীথের কারণে। সব জানা আছে নীতেশের। মনে আছে তখন আর কেউ এগিয়ে আসেনি।
এ নিয়ে সীতেশবাবুর সাথে তর্ক বাড়িয়ে লাভ নেই। সে এসেছে তারা এবার মা দুর্গার পূজা করবে এটা জানাতে। বাঙালি না হলেও দীর্ঘদিন এই বাঙালি সমাজে থেকে তারা মনেপ্রাণে বাঙালি সংস্কৃতি গ্রহণ করেছে। আর এ যেন সেই দুর্গোৎসব শুরুর ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি, খেয়ে পরে সবাই ভালো আছে তাই উদ্বৃত্ত টাকায় শারদীয় ঊৎসবের আয়োজন। মূল স্রোতে মিশে যাওয়ার চেষ্টা।
পরীমণির নিশ্চয় দোষ আছে : রুমা মোদক
বুলবুলভাজা | কূটকচালি | ১৪ আগস্ট ২০২১ | ৩২৬১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
যাত্রা, চলচ্চিত্র সব ধ্বংস করে দিয়ে আমরা পরীমণির কাছে আশা রাখছি সে ছ্যাঁচোরের মতো দু চার পয়সা রোজগার করে কোনরকমে চেয়ে চিন্তে জীবন কাটিয়ে সতীত্বের পরকাষ্ঠা দেখাবে। সব দায় পরীমণির। যখন তার সামান্য চোখের ইশারায় সে বুভুক্ষু পুরুষকে বাগে নিতে পারে ,তুড়ি মেরে আয় করে নিতে পারে অঢেল অর্থ, বিলাসী জীবন। শরীরের বিনিময়ে যে অর্থ বিত্ত সহজলভ্য, তা গ্রহন না করে নিজেকে সতী সাধ্বী রাখার দায় কেবল পরীমণির। এর সব দোষও হয়তো পরীমণির।
বদলে যাওয়া আনন্দের রং : রুমা মোদক
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : ইদের কড়চা | ০৩ মে ২০২২ | ২০২০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
আমার অনেক ইদ ছিল। কৈশোর থেকে যৌবন। সেই বৃত্তান্ত যদি বলি, বলতে হয় আমার ইদ হারিয়ে যাবার বৃত্তান্তও। দুটোরই বড় অবশ্যম্ভাবী আগমন জীবনে। তারও আগে যে সত্য স্বীকার্য – একটা বয়সে যে উৎসবে নতুন জামা জুতোর রং, নির্ঘুম অপেক্ষা, বালিশের নিচে জুতো নিয়ে ঘুমানো আর রান্নাঘরে মায়েদের রাতভর সেমাই পিঠা – তাই ইদ, তাই উৎসব। এই রাতজাগা আনন্দে যতদিন ঘুম টুটে টুটে যায়, ততদিন উৎসব রঙিন।