পর্ব ১০ শেষ ঘণ্টায় জয়িতার একটা ক্লাস থাকে। এক একদিন জয়িতা ভাবে ক্লাসটা বাদ দেবে। কিন্তু ছেলেমেয়েরা এসে যায়। তাদের আগ্রহের কাছে কোন অজুহাত জয়িতা নিজেকে দিতে পারে না। অল্প কয়েকদিনেই জয়িতা কলেজের বেশ জনপ্রিয় লেকচারার হয়ে উঠেছে। যদিও জয়িতার মনে হয় তাঁর জন্য জয়িতার লেখিকা সত্ত্বাও অনেকটা কারণ। জয়িতার লেখা পাঠক মহলে বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু আজ জয়িতার একটু তাড়াই ছিল। অনিচ্ছা সত্ত্বেও ক্লাসে এল। তাড়াতাড়ি শেষ করে বেড়িয়ে যাবে। জয়িতা অনেকক্ষণ একটানা পড়ানোর পর একটু থামল। অন্ধকার হয়ে এসেছে। কিন্তু এখন তো সন্ধ্যে হয় নি। জানালার দিকে চোখ পড়তেই বুঝতে পারল বাইরে ঘন কালো মেঘ জমেছে আকাশে। মনে হচ্ছে বৃষ্টি নামবে। জয়িতা ... ...
পর্ব ৯ ছুটির দিনে দুপুরে জয়িতার অনেক সময়। খাতাপত্র নিয়ে জয়িতা জানালার ধারে বালিশটা কোলে টেনে নিয়ে আরাম করে বসল।নভেম্বরের মাঝামাঝি।অল্প অল্প ঠাণ্ডা পড়েছে। জানালা দিয়ে নরম রোদ এসে বিছানাতে পড়েছে। জয়িতাদের বাড়িটা গলির মধ্যে। নিচে রাস্তা দিয়ে ফেরিওয়ালার হাঁক শোনা যাচ্ছে মাঝে মাঝে। পায়ের কাছে কম্বলটা টেনে নিল জয়িতা। একটু ঘুম ঘুম পাছছে। কিন্তু ঘুমোলে চলবে না। একটা লেখা শেষ করতে হবে। সামনের মাসিকে বেরবে। জয় বেশ কয়েকবার তাগাদা দিয়েছে।গতকালতো বেশ রাগারাগিও করে গেছে-লেখাটাকি এই মাসে পাব?-পাবিনা কেন। ওতো হয়েই গেছে। একটু বাকি আছে। যদিও জয়িতা শুরুই করেনি।-কত ছেলেমেয়ে একটা লেখা বেড়োনোর জন্য অনুরোধ উপরোধ করে জানিস?-তাদের ফিরিয়ে দিস কেন? নতুন ছেলেমেয়েরা ... ...
পর্ব ৮ গাড়ি পার্ক করতে জয়িতার অনেকটা সময় চলে গেল। পিছন ফিরে তুতুল কে দেখল জয়িতা। তুতুল একটা চকোলেট মন দিয়ে চুষে যাচ্ছে। জয়িতা দ্রুত হাতে পরপর কাজগুলো করে যাচ্ছে। সমস্যা হল তুতুল এখন হাঁটতে শিখেছে। কিছুতেই সে পেরাম্বুলেটারে বসবে না। কিন্তু মার্কেটিং করতে মেয়েকে এমনি ছেড়ে দিলে এক দণ্ড এক জায়গায় থাকবে না। জোর করেই জয়িতা তুতুলকে নিয়ে পেরাম্বুলেটারে বসিয়ে সিট বেল্ট বেঁধে দিল। সপ্তাহের সব জিনিস প্রায় শেষ। জয়িতা কাজের দিনে কিচ্ছু সময় পায়নি।ইদানিং জয়িতা একটা লাইব্রেরিতে কাজ নিয়েছে। সেখান থেকে মাঝখানে যে বেড়িয়ে আসবে সে উপায় নেই। কাজের শেষেও জয়িতা আর এক মুহূর্ত সময় নষ্ট করে না । ... ...
“দ্যাশের মাথারা দ্যাশটাকে ফালা কইর্যা দিলো। ভিটা মাটি জমি জিরেত সব বেবাক নায় হয়ে গেল। অহন পোলাপান নিয়ে আমারা যায় কুনখানে’’।তবু ছেলেমেয়েরর হাত ধরে তারা বেড়িয়ে পড়েছিল। সবকিছু ফেলে সামান্য কিছু সম্বল মাথায় নিয়ে। যারা কোনোদিন নিজের ভিটের গণ্ডিটুকু ছেড়ে কোথাও যায় নি তারাও চলেছে। কত পথ যে হাঁটতে হবে তার ঠিক নেই। পৌঁছোতে হবে ভারতে। এখন থেকে ওটাই নাকি “আমাগো দ্যাশ……’’।স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছরের উৎসবে মেতে উঠেছে সারা দেশ। তার উত্তাপ অনুভব করছি কমবেশি সকলেই। কার দেশপ্রেম কত বেশি তার একটা প্রতিযোগিতা। অনেকটা ভাব এরকম স্বাধীনতার মর্ম আমার থেকে বেশি কেউ বোঝে না। বীর সব স্বাধীনতা সংগ্রামীরা আমারই আত্মার আত্মীয়। নেহাত ঐ সময় ভাগ্য দোষে জন্মাইনি তাই, ... ...
সারাদিন ধরে আকাশপথে মিলিটারি বিমানের আনাগোনা। কখনো বা গুলির শব্দ। সারাদিন ধরে কার্ফু জারি। বাড়ি থেকে বেড়োনোর যো নেই। বাজার দোকানের মতো প্রয়োজনীয় কাজগুলো সারতে হয় কার্ফু উঠলেই। দিনশেষে কখনো বা খবর আসে সরকারি ভবনগুলো অধিকারের, কখনো বা খবর আসে মিলিটারি বুলেটের আঘাতে কতজন মারা গেল। আপনজনের খবর পাওয়া যায় না দিনের পর দিন। ছেলেমেয়েরা সব দূরে দূরে। তাজা তাজা ছেলেরা সব গেছে মুক্তিযুদ্ধে। দিন যায় অপেক্ষায়, আতঙ্কিত চিত্তে। …… এইভাবেই একাত্তরের দিনগুলির বর্ণনা দিয়ে গেছেন বেগম সুফিয়া কামাল তার একাত্তরের ডাইরিতে। ... ...
পর্ব ৭ জয়িতা তুতুলের কপালে হাত দিয়ে উষ্ণতা মাপার চেষ্টা করলো। তুতুল জ্বরের ঘোরে চোখ বন্ধ করে আছে। কোল থেকে নামালেই কাঁদছে। জয়িতা অসহায় ভাবে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। ঘড়ির দিকে একবার তাকাচ্ছে, একবার মেয়ের দিকে। অর্ণবকে ফোনে ধরার চেষ্টা করেছে, পায় নি। অর্ণব গেছে স্ট্যানফোর্ডে সেমিনারে। গতকাল অর্ণব বেড়িয়ে যাবার সময় তুতুল ভালোই ছিলো। আজ সকাল থেকে অল্প গা গরম। জয়িতা ভেবেছিলো সেরে যাবে। ... ...
পর্ব ৬ অর্ণব বেড়িয়ে যাবার পর জয়িতা একটু অবসর পায়। কিছু জিনিস শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু আজ আর বেড়তে ইচ্ছে নেই জয়িতার। বাইরে যেরকম বরফ পড়ছে। মনটাও কেমন যেন গুম মেরে আছে। আগে হলে অর্ণবের বেড়িয়ে যাবার পর পরই জয়িতা রেডি হয়ে বেড়িয়ে পড়ত। যে স্টোরে জয়িতা কাজ নিয়ে ছিলো সেটা তাদের বাসা থেকে একটু দূরে। জয়িতা ট্রাম ধরে নিত। এদেশের ডিপারটমেন্টাল স্টোর গুলো বেশ বড় । কত যে জিনিস সেখানে পাওয়া যায় তার শেষ নেই। জয়িতা বুদ্ধিমতী ... ...
“এসো হে বৈশাখ এসো এসো” - সকালের ঘুমটা গেল চটকে কবির।এ তো দেখছি সুরের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। কি কুক্ষণেই যে লিখেছিলাম। কটা বাজে দেখার জন্য কবি মোবাইলটা অন করলেন। পিং পিং পিং পিং ……মেসেজ ঢুকেই যাচ্ছে। “ নিশি obosan প্রায়”…। “নববরশের নবোদিত suriya……,”। এঃ হেঃ এ যে বানান ভুলে ভর্তি মেসেজ। ... ...
পর্ব ৫ সকালে জয়িতার দম ফেলার সময় থাকে না। অর্ণব আটটার মধ্যে বেড়িয়ে যায়। ইউণিভার্সিটির ক্লাসের এরকম রুটিন পড়েছে এই সেমিস্টারে। সকালে ব্রেকফাস্ট খেয়েই অর্ণব বেড়িয়ে যায়। লাঞ্চ নিয়ে যায়। জয়িতাকে তাই দুটোই করতে হয়। দ্রুত হাত চালায় সে।কাজের ফাঁকে চোখ যায় জানালায়। বাইরে গুড়ি গুড়ি বরফ পড়ছে।চারপাশ সাদা হয়ে আছে। জয়িতা প্রথম বরফ দেখেছিলো সিমলা তে। সেকী আনন্দ, বরফের গোলা বানিয়ে খেলা করেছিলো। ... ...
অসাধারণ। ... ...