এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • কবি বেগম সুফিয়া কামাল

    Sayanti Mandal লেখকের গ্রাহক হোন
    ৩১ জুলাই ২০২২ | ৪৬৯ বার পঠিত
  • সারাদিন ধরে আকাশপথে মিলিটারি বিমানের আনাগোনা। কখনো বা গুলির শব্দ। সারাদিন ধরে কার্ফু জারি। বাড়ি থেকে বেড়োনোর যো নেই। বাজার দোকানের মতো প্রয়োজনীয় কাজগুলো সারতে হয় কার্ফু উঠলেই। দিনশেষে কখনো বা খবর আসে সরকারি ভবনগুলো অধিকারের, কখনো বা খবর আসে মিলিটারি বুলেটের আঘাতে কতজন মারা গেল। আপনজনের খবর পাওয়া যায় না দিনের পর দিন। ছেলেমেয়েরা সব দূরে দূরে। তাজা তাজা ছেলেরা সব গেছে মুক্তিযুদ্ধে। দিন যায় অপেক্ষায়, আতঙ্কিত চিত্তে। …… এইভাবেই একাত্তরের দিনগুলির বর্ণনা দিয়ে গেছেন বেগম সুফিয়া কামাল তার একাত্তরের ডাইরিতে।

    জন্ম বাংলাদেশের বরিশালে নবাব পরিবারে। মামাবাড়িতেই বেড়ে ওঠা। রক্ষণশীল সে পরিবার। অন্দরমহলেই ছিল তাদের যাবতীয় কার্যকলাপ। বাইরে বেড়োনো ছিল নিয়ন্ত্রিত। মেয়েদের তখনও লেখাপড়ার প্রচলন হয় নি সেখানে। তিনিও প্রথাগত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত ছিলেন। তবে পড়ার আগ্রহ তাকে আটকে রাখতে পারেনি। বড় মামার লাইব্রেরীর বইগুলি তার ক্ষুধার্ত মনকে রসদ জুগিয়েছে। পরবর্তীকালে ভাইয়ের অসুস্থতার কারনে মায়ের সাথে কলকাতায় আগমন। বেগম রোয়েকার প্রভাব পড়ে সেখানেই। আজীবন তার কাজে বেগম রোকেয়ার প্রভাব থেকে গেছে। সাখাওয়াত মেমোরিয়ালে ভর্তির প্রস্তাব এলেও গ্রহণ করতে পারেন নি। ফিরে আসতে হয় ঢাকা শহরে।

    প্রতিভা যদিও সুপ্ত থাকে না। কবিতা লেখার শুরু হয় গোপনে। বিবাহের পর কিছুটা স্বামীর প্রভাবেই নতুন করে সাহিত্য চর্চা আর সমাজসেবায় উৎসাহিত হন। ১৯২৬ সালে তার প্রথম কবিতা ‘বাসন্তী’ প্রকাশিত হয়। এরপর ত্রিশের দশকে তিনি পুনরায় কলকাতায় অবস্থান করেন। সেসময় রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের সংস্পর্শে এসে তার সাহিত্যচর্চার বিকাশ ঘটে।  কাব্যগ্রন্থ “সাঁঝের মায়ার” প্রকাশ ঘটে।

    ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর সুফিয়া কামাল পরিবারসহ ঢাকায় ফিরে যান। ততদিনে তার প্রথম স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। স্বামী কামালুদ্দিন আহমেদের সাথে তার দ্বিতীয় বিবাহ। ঢাকাতে তিনি ভাষা আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন। এরপর একে একে নানান সামজিক কর্মকাণ্ড। নারী আন্দোলনের সাথেও সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। নারী জাগরণ ও নারীমুক্তির অন্যতম পথিকৃৎ তিনি। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে, সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রাম করেন।

    তিনি মূলত ছিলেন কবি। বাড়িতে উর্দু ছাড়া অন্য কিছুর চর্চা না হলেও তিনি বাংলা ভাষাতেই কবিতা লিখেছেন। কবি হিসেবে পেয়েছেন দেশ বিদেশের নানা সম্মান। তৎকালীন সাম্যবাদী সোভিয়েত দেশেও তিনি আমন্ত্রিতো হন। মুক্তিযুদ্ধের  সময় রেডিও ঢাকা থেকে তার কবিতা পাঠ হয়। ক্ষতবিক্ষত পূর্ব পাকিস্তানের বুকে সেই দিনের কবিতা পাঠ ছিল তার কাছে চরম বেদনার। সমগ্র একাত্তর সালটি কাটে এই কঠিন সময়ের মধ্যে। আর কত প্রাণ গেলে, কত মায়ের বুক খালি হলে স্বাধীন বাংলা হবে এই আর্ত জিজ্ঞাসা তার ডাইরির প্রতি পাতায়। অসহায় সেই দিনযাপনের চিত্র একাত্তরের ডাইরি।

    # কবি বেগম সুফিয়া কামাল
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে প্রতিক্রিয়া দিন