মামার কীর্তিসাগরময় মণ্ডলসুন্দরবন লাগোয়া প্রত্যন্ত গ্রামে বেড়ে ওঠা ভগীরথ রেলের চাকরি পেয়ে কোলকাতার হেডঅফিসে জয়েন করে। তারপর মাস তিনেকের একটা ট্রেনিং পর্ব চুকিয়ে পোস্টিং পেল বারানসীর রেল কারখানার অফিসে। অফিসটা শহর থেকে অনেকটা দূরে। রেল কলোনির মধ্যে। চারিদিক পাঁচিল ঘেরা, সুন্দর করে সাজানো গোছানো কলোনি। চওড়া রাস্তার ধারে ছোটবড়, একতলা-দুতলা নানান টাইপের কোয়ার্টার। বাংলোও আছে অনেক। বাংলো এবং কোয়ার্টারগুলো সুন্দর পাতাবাহারি গাছ অথবা ছোট ছোট ফুলগাছের পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। সামনে বাগান করার জন্য ফাঁকা জায়গা। বাংলোর ক্ষেত্রে বাগানের জায়গা অনেক বড়। প্রতিটি বাগানে নানারকম মরশুমি ফুলের বাহারি সম্ভার। সে এক নয়নাভিরাম দৃশ্য। কলোনির ভিতরে আছে হাসপাতাল, সিনেমা হল, সুইমিং পুল, ... ...
সুখের লাগিয়া যে ঘর বাঁধিনু….সাগরময় মন্ডলদুপুর থেকে শরীরটা ভালো নেই। মাথাটা ভারি ভারি ঠেকছে। তাই অন্য দিনের মতো বিকেল বেলা ব্যালকোনিতে না বসে ব্যালকোনি লাগোয়া ঘরের জানালটা খুলে দিয়ে বালিশে হেলান দিয়ে খাটের উপর আধশোয়া সঙ্গীতা। ডান পা-টা বালিশে হেলানো। সঙ্গীতা রায়। কমলেশ রায়ের সহধর্মিনী আর পিনাকশঙ্কর রায়ের মা। কমলেশ বেসরকারি অফিসের উচ্চ পদের মোটা মাইনের চাকরি থেকে স্বেচ্ছা অবসর নিয়েছেন। বাড়িতেই থাকেন। না থেকে উপায়ও নেই, বিশেষ করে মাস ছয়েক আগে সঙ্গীতার সঙ্গে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার পর। আধশোয়া অবস্থায় সঙ্গীতা ... ...
বকুলরা জাতে বাগ্দী, তথাকথিত নিচু জাত। খালে বিলে মাছ ধরা, মাঠে গরুর পালের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে গোবর কুড়োনো, গোবর থেকে ঘুঁটে বানিয়ে তা বিক্রি করা ওদের পেশা। বাগদী ঘরে জন্মালেও বকুলের রূপ ছিল অসামান্য। তার রূপের ছটায় অনেকেই ঘায়েল হয়েছিল, কিন্তু তার দাদা বউদির পাহারাদারি ডিঙিয়ে কেউ কাছে ভিড়তে পারেনি। একমাত্র মোহন ছাড়া। মোহনরা সদগোপের ঘরের ছেলে এবং গ্রামটিও সদগোপ প্রধান। সুতরাং অন্যান্য জাতের তুলনায় তাদের প্রতিপত্তিও বেশি। তাদের অবস্থাও মোটামুটি সচ্ছল। লেখাপড়ার পাট নেই বললেই চলে, কোন রকমে ক্লাস ফোর পাশ দিয়েই চাষের কাজ আর গরুবাছুর নিয়েই দিন কাটায়। তবে সে খুব ভালো অভিনয় করতে পারে। পাড়ার শৌখিন যাত্রাদলে ... ...
ভেবলি সাগরময় মণ্ডল ১ গুরুচরন কবিরাজের ডিসপেনসারির মাটির দাওয়ায় বসে গদাই বায়েন একমনে বিড়ি টানছিল। ঘরের ভিতরে জনা দুই রুগী, কবিরাজমশায়, সহকারী বিলাস আর কবিরাজকন্যা ভেবলি। তারা রুগী আর রোগ নিয়ে কথাবার্তা বলছে। বিড়ি টানতে টানতে গদাই বায়েন হঠাৎ করে কাসতে শুরু করে। সে এমন কাসি যে থামতেই চায় না। কাসির চোটে তার মুখ-চোখ লাল হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে চোখদুটো ঠিকরে বেরিয়ে আসবে। কাশতে কাশতে গদাই মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। ব্যাপারটা ঘর থেকে দেখতে পেয়ে ভেবলি তাড়াতাড়ি ডিসপেনসারির জলের জাগটা নিয়ে গদাইএর চোখে মুখে দিতে গেলে পিছন থেকে বিলাস তাকে নিরস্ত্র করে। জলের জাগটা কেড়ে নিয়ে তাকে ধমক দেয় -- এই ভেবলি, তুই থাম। তুই ... ...
উভচর সাগরময় মণ্ডল ১ পুকুরঘাটে একগাদা এঁটো বাসন ঝনঝন করে নামিয়ে রেখে, উবু হয়ে বসে, ঘাটের পাশ থেকে এক খাবলা বালি তুলে, সঙ্গে নিয়ে আসা ঘুঁটের ছাইয়ের সঙ্গে বালি মিশিয়ে নিয়ে কমলার মা বাসন মাজতে বসলো। এটা নিত্য দিনের কাজ। সকাল, বিকেল, রাত্রি তিন বেলা এই পুকুর ঘাটে আসতে হয়। হয় বাসন মাজতে, নয় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে। কারণ সেকালে গ্রামের কোনো বাড়িতেই শৌচালয়ের ব্যবস্থা ছিল না। একমাত্র ভরসাস্থল ওই পুকুর পাড় আর পুকুর ... ...