এই বাজারে গুরু নিয়ে এসেছে সম্পূর্ণ এক সামাজিক মাধ্যম। শারদ সংখ্যা পড়তে ঢুকে পড়ুন গুরুতে। আর বেরোবেননা। শরৎ থেকে বসন্ত, বইমেলা থেকে নববর্ষ, জমে উঠুক মোচ্ছব, নজরদারির বাইরে। গুরুর পাতায় পাতায়। এবারের শারদ সংখ্যা প্রকাশিত হবে আগামী কিছুদিন ধরে, প্রতিদিন অল্প কয়েকটি লেখা। পড়তে থাকুন রয়ে সয়ে। ... ...
শাহজাহানের জমানাতেই আমি অন্তত প্রথম বাকরখানির মোটামুটি প্রামাণ্য রেসিপি পাচ্ছি। নুসখা-ই-শাহজাহানি-র ১২৬৩ হিজরি অর্থাৎ ১৮৪৬ সাধারণাব্দের একটি অনুলিপি বা কপি থেকে। মনে রাখা দরকার, এটি মধ্যযুগীয় বা প্রাচীন পুথির ক্ষেত্রে খুবই স্বাভাবিক। মূল কেতাবটি যুগে যুগে বিভিন্ন গ্রন্থাগারের জন্য কপি করা হত, এবং প্রায়শই প্রথম কপিটি হারিয়ে যেত। তাই আজকের দক্ষ সম্পাদককে তার বিভিন্ন কপি অনুসরণ করে একটি গ্রহণযোগ্য রূপ তৈরি করতে হয়। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। কিন্তু তাতে তো নামের উৎসের ধাঁধার সমাধান হল না। ময়দা, দুধ, ঘি, ডিম দিয়ে তৈয়ার এ রুটির নাম বাকরখানি কেন?শাহজাহানের জমানাতেই আমি অন্তত প্রথম বাকরখানির মোটামুটি প্রামাণ্য রেসিপি পাচ্ছি। নুসখা-ই-শাহজাহানি-র ১২৬৩ হিজরি অর্থাৎ ১৮৪৬ সাধারণাব্দের একটি অনুলিপি বা কপি থেকে। মনে রাখা দরকার, এটি মধ্যযুগীয় বা প্রাচীন পুথির ক্ষেত্রে খুবই স্বাভাবিক। মূল কেতাবটি যুগে যুগে বিভিন্ন গ্রন্থাগারের জন্য কপি করা হত, এবং প্রায়শই প্রথম কপিটি হারিয়ে যেত। তাই আজকের দক্ষ সম্পাদককে তার বিভিন্ন কপি অনুসরণ করে একটি গ্রহণযোগ্য রূপ তৈরি করতে হয়। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। কিন্তু তাতে তো নামের উৎসের ধাঁধার সমাধান হল না। ময়দা, দুধ, ঘি, ডিম দিয়ে তৈয়ার এ রুটির নাম বাকরখানি কেন? ... ...
মিষ্টিমহলের আনাচাকানাচে ঘোরাঘুরিতে একটা জিনিস মনে হয়েছে। প্রাচীন বাংলায় মিষ্টি বা মিষ্টান্নের প্রধান উপকরণ ছিল তিনটি। গুড়, দুধ আর ধান। গুড়ের সঙ্গেই ছিল শর্করা। মানে চিনি। এই চিনি কিন্তু এখনকার চিনির মতো নয়। তৈরি করাও বেশ শ্রমসাধ্য ছিল। দানা যুক্ত সার গুড় পাত্রে রেখে তার উপরে পাটা শ্যাওলা চাপা দেওয়া হত। সাত-আট দিনের মধ্যে চাপা দেওয়া গুড়ের উপরিভাগের কিছুটা অংশ চিনি হত। সেই চিনি তুলে নিয়ে বাকি গুড় আবার শ্যাওলা চাপা দিয়ে রাখতে হত। কয়েকদিন পরে বাকিটাও চিনি হত। এই চিনি শুধু খাওয়া হত। সেটাই ছিল মিষ্টি। নয়তো অন্য উপকরণ যোগে মিষ্টান্ন তৈরি হত। ... ...
কুড়ি বছর আগের ঘটনা সেটা, আমি তখন প্যারিসে থাকি। ল্যাটিন কোয়ার্টারে খুব ছোট্ট একটা এপার্টমেন্টে থাকতাম তখন আমি। মোটামুটি দিন চলে যাবার মত উপার্জন ছিল আমার, একেবারেই বেশি কিছু না। আমার লেখা একটি বই পড়ে সেটি নিয়ে আমাকে উচ্ছ্বসিত চিঠি লিখেছিল সে, আমিও ভদ্রতাবশত ধন্যবাদ জানিয়ে তার উত্তর দিই। তারপরপরই আমি আবার একটা ফিরতি চিঠি পাই। তাতে লিখেছিল, ওই সময়েই প্যারিস হয়ে কোথায় যেন যাচ্ছে সে; এই সুযোগে আমাদের দেখা হয়ে গেলে খুবই খুশি হবে। কিন্তু একই সঙ্গে তার সময়েরও আবার খুব টানাটানি, পরের বৃহস্পতিবারে ছাড়া আর কোনোদিন সময় বের করা খুব মুশকিল হবে। তাই জানতে চেয়েছে সেই বৃহস্পতিবারেই আমি তাকে ফয়ট’স-এ লাঞ্চের নিমন্ত্রণ করতে পারব কি না। ... ...
জীবনের সব লেনদেন মিটিয়ে মৃত্যুর মিছিল অনবরত যেখানে এসে থামে, সেই ‘উদ্ধারণপুরের বাতাসের সঙ্গে শ্মশান-ভস্মের মধুর মিতালি।... এপারে শিউড়ী, সাঁইথে, কাটোয়া কান্দী, ওপারে বেলডাঙা, বহরমপুর, লালগোলা, কৃষ্ণনগর -- সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে উদ্ধারণপুরের চিতাভস্ম। নামে মানুষের মাথায়, নামে ক্ষেত মজুরের বুকে, নামে সকলের তৃষ্ণার জলের আধার দীঘি সরোবরে। মিশে যায় শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে। সবার কাছে চিতাভস্মের সাদর আহবান পৌঁছে দেয় উদ্ধারণপুরের বাতাস। কেউ টের পায় না কবে কখন উদ্ধারণপুরের অমোঘ আহবান এসে পৌঁছে গেল হৃৎপিণ্ডের মধ্যে। সেই নির্মম পরোয়ান অগ্রাহ্য করার শক্তি নেই কারও’। ... ...
মানুন না মানুন,আমরা সকলেই সংস্কারপন্থী। কেউ সু-এর আর কেউ কু-এর। আর পঞ্জিকা এই দুই-কেই ধারণ করে। সেই কাল থেকে এই কাল পর্যন্ত। বিজ্ঞাপন এই সংস্কারের বাহন। আমাদের জীবনযাপনের দৈনন্দিনতায় যে ওঠাপড়া ছড়িয়ে থাকে, তার হিসেব পাওয়ার একমাত্র সহজলভ্য উপায় বিজ্ঞাপনসেবন। এতে শরীর ও মন স্বতঃই চাঙ্গা থাকে। অঙ্গে অঙ্গে রংমশাল জ্বলতে থাকে। কী ছিল বঙ্গে, তা কী হয়েছে এই অঙ্গে, এর এক সচিত্র ধারাবিবরণ বিজ্ঞাপন মারফত যেমন যেমন পাওয়া যায়, তেমন তেমন সাজিয়ে দিলাম। ... ...
বাঙালির ব্যবসার ইতিহাসে প্রথম যে বিদেশীরা সমুদ্র পাড়ি দিয়ে বর্ধিষ্ণু বাংলার বিখ্যাত বন্দর চট্টগ্রাম ও সপ্তগ্রামে গ্রামে ব্যবসা করতে আসে, তারা হল পর্তুগীজ। পর্তুগীজরা বাংলায় এসেছিল ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দে। কিন্তু তারও বছর কুড়ি আগে উত্তমাশা অন্তরীপ প্রদক্ষিণ করে এদেশে অর্থাৎ ভারতবর্ষে পৌঁছে গিয়েছিল ভাস্কো-ডা-গামা। যদিও এর অনেককাল আগে থেকেই বাংলার বণিকেরা পৌঁছে গিয়েছিল ইউরোপে। তা হলে বাঙালির ব্যবসার বিমুখতার কথাটা চালু হলো কবে? মোটামুটি ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে কথাটার সূত্রপাত অষ্টাদশ শতকের প্রথম থেকে। এর প্রধান কারণ বিদেশী বণিকদের কুচক্র। বাঙালি বণিকের জয় গান শোনা গিয়েছিল গুপ্ত যুগেরও আগে, ফা-হিয়েন এর ভ্রমণকালে, অর্থাৎ ৩৯৯ থেকে ৪১৪ খ্রিস্টাব্দের সময়ে। সমুদ্রবন্দর তাম্রলিপ্তের রমরমা তারও আগে। কালিদাস, পাল যুগের কবি সন্ধ্যাকর নন্দীর রামচরিত কাব্য, মনসামঙ্গল, কবিকঙ্কণ, ডাক ও খনার বচনে বাণিজ্যনিপুণ বাঙালির জয় গান শোনা গেছে। সবই তো আর কবির কল্পনা নয়। একটু ইতিহাস ঘাঁটলেই দেখা যায়, বাঙালি কোনোকালেই ব্যবসাবিমুখ, অলস বা ফাঁকিবাজ ছিলনা। ফা-হিয়েন এর লেখা থেকে জানা যায়, তাম্রলিপ্ত থেকে ১৪ দিনের পথে সিংহল পৌঁছে যেত বাঙালি বণিকের দল। মুক্ত ব্যবসায়ী বণিকেরা, তেজপাতা পিপুল মসলিনের সওদাগরেরা এই বন্দর থেকেই বিদেশ রওনা হতেন। পান সুপারি ও নারকেলের চাহিদাও ছিল প্রচুর। তখন থেকেই 'সোনার বাংলা' কথাটা চালু। সোনার বাংলা এমনি এমনি বিনা পরিশ্রমে গড়ে ওঠেনি। যুগ যুগ ধরে বাংলায় ব্যবসা করতে বিদেশীরা বিনা কারণে আসেনি। ‘সোনার বাংলা’র কথা তারা জেনেছিল বাংলার বণিকদের কাছ থেকেই। ... ...
ভিড়ভাট্টা যে হয়না তা নয় তবে ‘উত্তেজিত মাতাল’ সবিশেষ আসে না। এদের অনুশাসন কড়া। আর চাট বলতে মিলবে শুধুই ফল। তবে এ স্থানটি সঙ্গীত মুখর। মূলত মহঃ রফির গানে এই ঠেক ভরে থাকে। এপ্রসঙ্গে বলতে গিয়ে একটু পেছনো যাক। যদিও এ সব রচনা মাতলদের পদক্ষেপের মতোই। এগিয়ে পিছিয়ে চলে। একটা সময় খালাসিটোলায় আসতো জন। ফর্সা টুকটুকে চেহারা। নিজেই রফির গান গাইতো। সঙ্গে নাচতো। সে নাচ ছিল দেবদর্শন দুর্লভ। মাঝে মাঝে একটা অদ্ভুত বাংলা গান গাইত – ‘ আমার এল না এল শ্যাম/আমার হলো না মালা গাঁথা’। আর ছিল যাদব। গোটা ঠেকটা ঘুরে বেড়াতো। ... ...
জোছনার পিদিম জ্বলা দিগন্তে নির্জন পৃথিবী। তবু এই নির্জনতায় কেউ যেন কাউকে খোঁজে, বাতাসের কোট পরা অদৃশ্যমানতাকে জনে জনে জিজ্ঞেস করে। সবুজ লাউয়ের লতায় পেঁচানো কুঁড়েঘর হয়ে যায় নির্বাসিত এক গভীর দ্বীপ। আগত শীতের হিম আঙ্গুল ঘাড়ের দুই পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে। যেন ভয় নেই কোন, নেই আহত হওয়ার সতর্কতা, কোথাও কোন তিক্ততার আঁচড় ছাল ছিঁড়ে চিহ্ন রেখে যায় নাই- শুধু ভালবাসা আছে ঘাসে ঘাসে শিশির হয়ে, চাঁদের অপূর্ব দৃষ্টি হয়ে। এই বোধ নিয়ে জোনাকি উড়ে যায়, লক্ষ লক্ষ বরই ফুল হাসে পাতার ফাঁকে ফাঁকে, দূরে কোন অচেনা পাখি ডেকে ওঠে অচেনা মানুষের গাঁয়ে। কুয়াশার সাদা পর্দার ভিতরে বাঁশি বাজিয়ে বসন্ত নড়েচড়ে ওঠে। ... ...
কুসুমপুরের ঝোপঝাড় জলশূন্য ডোবা, পুকুর পেরিয়ে দমকা একটা মাঠের মধ্যে এসে পড়ে। এই মাঠ, কুসুমপুরের বিশাল ডাহি, সামান্য চড়াই উৎরাই, পাথুরে গেরুয়া ভূমি, মাথার উপর বিস্তীর্ণ আকাশ, দিগন্তে বিলীন এই বিশাল পৃথিবীতে আলো গাঢ় হয়ে আসছে। গাঢ় আলোর ভিতর কৃষ্ণবর্ণের মানুষ একা হাঁটছে; এখন এই রকম দৃশ্য। যেতে হবে বহুদূর। মাঠ পার হয়ে গাঁ পেরিয়ে জঙ্গল, সেই জঙ্গল পেরিয়ে আবার মাঠ জঙ্গল গ্রাম ডাহি এই রকমই তো পথ। কত বছর আগে এই গাঁয়ে এসেছিল বুড়ো তা আর স্মরণে থাকে না। সেই যে বার যুদ্ধের উড়োকল ভেঙে পড়েছিল নিশ্চিন্তার ওপারে তারও অনেক আগে। যুদ্ধের উড়াকল। হ্যাঁ। ঘড়ঘড় শব্দে সে আকাশে চোখ মেলে। মাথায় পাখা ঘুরিয়ে হেলিকপ্টার যাচ্ছে কলাইকুন্ডার দিকে। ... ...
বিজু স্কুলে এসে জানতে পারলো হেডস্যার আসতে পারেনি। তার নাকি জ্বর। কাল কোন এক স্যার চাল বিলির ব্যবস্থা করবে। কিন্তু আজ তারা খাবে কী? রান্না হবে কি দিয়ে? এইসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে বিজু যখন বাড়ি ফিরলো বাবাকে দেখে সে অবাক হয়ে গেল। বাবা দাড়ি কামিয়ে, চান করে, আলমারী থেকে জামা কাপড় বের করে, পরে, রেডি হয়ে বসে আছে। বিজুকে দেখতেই বাবা বললো তাড়াতাড়ি চান করে নে বিজু। একটু পরেই আমরা বেরিয়ে যাবো। গনেশ কাকু গাড়ি নিয়ে আসবে। বিজু তো অবাক। কোথায় যাবো আমরা বাবা? বাবা বলে সেও জানে না। কোন একটা জায়গা। শ্যুটিং দেখবো। বিজুর চোখ বড় বড় হয়ে যায়। ফিল্মের শ্যুটিং বাবা? বাবা ঘাড় নাড়ে, হ্যাঁরে ফিল্মের শ্যুটিং। বলেছে নাকি শ্যুটিং দেখাবে। খেতে দেবে। চল চল দেরি করিস না। ... ...
বহুবছর পরে 'দ্য প্যাশন অ্যাকোর্ডিং টু জি.এইচ.' পড়তে গিয়ে এই ঘটনাটা অংশুমানের মনে পড়বে: অংশুমানের মা চিরকালই ভীষণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন লোক; ফলে বর্ষাকালে তার খুব সমস্যা হতো। অর্ধেকদিনই খাবার সময় পোকামাকড় এসে পড়লে না খেয়ে উঠে যেত। একদিন রাতে, অংশুমানের মা তখন কলেজে পড়ে, দিদু থালায় ভাত বেড়েছেন দুজনের, হ্যারিকেনের আলোয় খেতে খেতে হঠাৎ একটা আরশোলা দিদুর পাতে এসে পড়ল। দিদু তখন ভাবলেন আরশোলাটাকে পাতের পাশে ফেললে মেয়ের চোখে পড়বে এবং সঙ্গে সঙ্গে থালা ফেলে উঠে যাবে, সারারাত খালিপেটে থাকবে মেয়েটা; ফলে তিনি কোনো শব্দ না করে ভাতসুদ্ধু আরশোলাটাকে মুখে ঢুকিয়ে নিয়েছিলেন। ... ...
প্রথমবার জেলে যাওয়ার পরই সুধারাণী বুঝে গেছিলেন তার বিবাহিত জীবনের পরিণতি কী হতে চলেছে। তার মেধাবী স্বামী শুধু পড়াশোনা করার জন্যই কলকাতায় যান নি। পড়াশোনার পাশে পাশে দেশকে স্বাধীন করার সংকল্পও নিয়ে রেখেছেন। গোপন বিপ্লবী জীবন কাটানোর মাঝেমাঝে হয়ত গ্রামে এসে কোনো এক রাতের জন্য স্ত্রীর সাথে দেখা করতেন, আবার সকাল হলে চলে যেতেন। পুলিশ খবর পেলে বাড়িতে হানা দিত। এভাবেই চলত দিনের পর দিন। কখনো বা স্বমীর অনুরোধে কোনো বিপ্লবীকে লুকিয়ে রাখতেন বাড়িতে। তার পরিচর্যা করতেন। একদিনের জন্যও হয়ত বিবাহিত জীবনের সুখ লাভ করেন নি। তবু কোনোদিনও কোনো অভিযোগ করেন নি। দেশের কাজ মনে করেই হয়ত হাসিমুখে সমস্ত কিছু সহ্য করে গেছেন। যখন কালাপানির সাজা হল তখন থেকে দেশের কাজের পাশাপাশি সংসারের হাল নিয়েও দুশ্চিন্তা শুরু হল৷ বৃদ্ধ শ্বশুর তখন পুরোপুরি ছেলের বৌ এর ওপর নির্ভরশীল। বিয়ের সময় সুধারাণী পড়তেন ক্লাস এইটে। পড়াশোনায় বেশ ভালোই ছিলেন। কিন্তু বিয়ের পর তখনকার প্রথা অনুযায়ী পড়াশোনা ছাড়তে হয়৷ এরপর স্বামী ঘরছাড়া থাকার সময়ে বাড়িতে থেকেই পড়াশোনা শেষ করেন। সংসারে টানাটানি দেখা দিল চাকরির চেষ্টা শুরু করেন। কিন্তু একেই তো চাকরির পক্ষে বয়স বেশি হয়ে গেছিল, তারওপর যখন সবাই শুনতেন ফণীভূষণের স্ত্রী, তখন আরোই ভয়তে চাকরিতে বহাল করতেন না। হয়ত কয়েকমাসের জন্য কোথাও পড়ানোর কাজে ঢুকেছেন, ফণীভূষণের স্ত্রী পরিচয় বাইরে আসার সাথে সাথেই চাকরিটা খোয়াতে হত। এভাবেই কোনোরকমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে সংসার। ... ...
গোপন কথাটি রবে না গোপনে এমন তো নয় যে আমেরিকা সারা বিশ্বের শান্তিরক্ষার ইজারা নিয়েছিল কোনোদিন। কিন্তু বাংলাদেশ নিয়ে যখন দুনিয়া উত্তাল তখনও আমেরিকা একবারও মুখ ফুটে কোনো প্রতিবাদের ধার কাছ দিয়েও যায়নি কেন? সামান্য হিপোক্রেসিও কি আশা করা যেত না? লেখক বাস তিনটি কারণ বলেছেন। প্রথম দুটি গৌণ। প্রথমত, নিকসন আর ইয়াহিয়া, দুজনের কেউই যখন নিজের নিজের দেশের প্রেসিডেন্ট নন, তখন থেকেই দুজনের মধ্যে একটা সখ্যতা ছিল। নিকসনের অন্তরঙ্গ কথোপকথনের যে টেপ পাওয়া যায় তাতে দুজনের সুসম্পর্কের কথা উল্লেখ হয়েছে একাধিক বার। দ্বিতীয়ত, নিকসন, ইন্দিরা গান্ধিকে রীতিমতন অপছন্দ করতেন। রাশিয়ার সাথে মাখামাখি, ইন্দিরা সোস্যালিস্ট ঝোঁক—শুধু এগুলিই নয়। মানুষ হিসেবেই ইন্দিরাকে নিকসন পছন্দ করতেন না। এর আগে একবার দুজনের মিটিং হয়েছিল দিল্লিতে মিনিট কুড়ির জন্য। ইন্দিরা নাকি যথেষ্ট উৎসাহ তো দেখানইনি, তায় তাঁর এক সহকর্মীকে হিন্দিতে প্রশ্ন করেন, “এ আরও কতক্ষণ টাইম নেবে?” নিকসনের আর-এক পরামর্শদাতার মতে নিকসন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে কোনো মহিলাকে হজম করতে পারতেন না। তো সে কথা বলতে কী, নিকসন গোটা ভারতীয় জাতিকেই অপছন্দ করতেন, বলেছিলেন ভারতীয়রা ‘Slippery and treachorous’। পাকিস্তান ও তার অধিবাসীদের ক্ষেত্রে কিন্তু প্রশংসাই বরাদ্দ ছিল। ... ...
দারিয়াবান্দা, কুতকুত (এইটা সম্ভবত আন্তর্জাতিক খেলা, অনেক বিদেশি সিনেমায় দেখছি তারাও কুতকুত খেলে! নিয়ম কানুনে হয়ত পার্থক্য আছে কিন্তু খেলে।) ফুলটোকা বা গোলাপ টগর, রুমাল চোর, কানামাছি, মোরগ লড়াই, ইচিং বিচিং, ওপেন টু বাইস্কোপ , আজকে আর কেউ খেলে না। এর মধ্যে দারিয়াবান্দা খুব জনপ্রিয় একটা খেলা। ব্যাডমিন্টন কোর্টের মত করে কোর্ট কাটা হত। একদল দাগে দাঁড়িয়ে থাকত অন্য দল ঘর গুলাতে। এক ঘর থেকে অন্য ঘরে যেতে হবে। দাগে যারা দাঁড়িয়ে রয়েছে তারা দাগে পা রেখে ঘরের ভিতরে যারা আছে তাদের ছোঁয়ার চেষ্টা করবে। এক ঘর থেকে অন্য ঘরে যাওয়ার সময়ও যদি ছোঁয়া যায় তাহলেও চলবে। এক ঘর থেকে অন্য ঘর এভাবে পুরোটা যেতে হবে আবার আসতে হবে। সবাই মরে গেলে অন্য দলের সুযোগ। এই খেলার একটা আলাদা বিশেষত্ব রয়েছে। দারিয়াবান্দা খেলা একটু নরম প্রকৃতির, মেয়েরাও অংশ নিতে পারত। এটার একটা পুরুষালি ধরণ ছিল। এতে হাত পা যেমন খুশি তেমন ছুঁড়ে বিপক্ষকে ঘায়েল করা যেত। কেউ হয়ত লাফ দিয়ে পার হওয়ার চেষ্টা করল, অন্য জন হয়ত সোজা লাথি মেরে ফেলে দিল! বেশ ভয়ংকর একটা ব্যাপার ছিল। এর নাম ছিল চিক। আমরা দারিয়াবান্দা খেললে কেউ কেউ মেয়েদের খেলা খেলছি বলে খেপানোর চেষ্টা করত। কিন্তু চিক খেলছি দেখলে! হুম, এবার হচ্ছে খেলা! কতদিন যে চিক খেলে হাত পায়ে ব্যথা পেয়েছি তার কোন ইয়াত্তা নেই। সেই ব্যথাও এখন সুখের মনে হয়। কী অদ্ভুত সময় পার করে এসেছি। এখন ভাবলে পরাবাস্তব কিছু বলে মনে হয়। ... ...