প্রকাশিত হলো দুই মলাটে বৈদ্যুতিন উনিজি কথামৃত। লিখেছেন সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়, এঁকেছেন নবীন শিল্পী কণিষ্ক। শিল্পীর সম্পর্কে বেশি জানা যায়নি, তিনি রাতের অন্ধকারে মেলবক্সে ছবির বান্ডিল ফেলে দিয়ে গেছেন। জানিয়েছেন উনিজির প্রতি অনুগত থাকতে চাইলে মাথা বর্জন করা ভালো, আর অনুগত থাকতে না চাইলে গর্দান যাওয়ার সম্ভাবনা, সুতরাং আগে থেকে মুন্ডু বিসর্জন দেওয়াই বিধেয়। নামিয়ে নিন, ছড়িয়ে দিন - উনিজি কথামৃত - পিডিএফ সংস্করণ। ... ...
দেখি দেখি চেনা চেনা লাগে। কী রে ব্যাটা বমকে গেছিস? চিনতে পারছিস না? ন্না মানে এই রকম দেখতে একজনকে চিনতাম, স্কুলে পড়তো। কিন্তু সে তো শুনছি, বিদেশে থাকে? নাম কী? ভোলা। ওরে ব্যাটা, আমিই সেই। এই দেখ ঘাড়ে লাল জরুল। সব নকল করলেও জরুল তো নকল হবে না। ঠিক ঠিক-- বলতেই হয়। ... ...
আমি খুব ধীরে মনের মধ্যে তাকাই। কেউ একটা ছবি আঁকছে সেখানে। জলরঙের মত ব্লেন্ডেড, কিনারা-বিহীণ ছবি। প্লেটের মধ্যিখানে মোটা একটা লাল রঙের ব্রাশ স্ট্রোক। টমেটো, রেড ওয়াইন, রসুন -- মারিনারা স্যস? সরু ফিতের মত সবুজ তাজা গন্ধ। বেসিল নিশ্চয়ই। আর ঐ গোল বলের মত জিনিষটা? ভাজা একটা পরত পেলাম সবার ওপরে, ভেতরটা ক্রীমি, মুখে মিলিয়ে গেলো। তোমার নাম 'আরাঞ্চিনি' না? ইতালিয়ান, ভাজা ভাতের চপের মত? অভিজ্ঞতা এবার আমার দিকে তাকিয়ে হাসে। শেকলহীণ নিশ্চিন্ততার হাসি। ... ...
আমার চোখে তখনো আলকাতরার বোঝা ভারী ওজন নিয়ে চেপে বসে আছে। কেমন যেন মনে হয় ফুসফুসের ওপরেও যেন অন্ধকার চেপে আছে। আমি জোরেজোরে শ্বাস নিতে নিতে আন্দাজে হাতড়ে চেয়ারে বসলাম। কিন্তু মাথাটা তখনও টলমল করছে। হেড ইনজুরির পর থেকেই আমার ব্যালান্সের অসুবিধা হয়। চোখে দেখতে না পেলে আরো বেশি। আমি বন্ধুদের গলা শুনতে পাচ্ছি । "এই তো চামচ পেয়ে গেছি", "হ্যাঁ হ্যাঁ, এই তো আমার জলের গ্লাস।" শুনতে শুনতে আমার মনে আরো ভয় ঘনিয়ে আসে -- সবাই সব পেয়ে যাচ্ছে। আমি যে অতলে সেই অতলে। আমি কি হারিয়ে যাচ্ছি? ... ...
অনেককাল আগের কথা। দেশ থেকে চাকরিবাকরি ছেড়ে সব পেয়েছি'র দেশ আমেরিকায় এসে ফের ছাত্র হয়ে পি এইচ ডি করতে ঢুকেছি আটলান্টা শহরে অবস্থিত জর্জিয়া ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজিতে, সংক্ষেপে জর্জিয়া টেকে। তাও আবার সস্ত্রীক। একটা এক কামরার এফিশিয়েন্সি অ্যাপার্টমেন্টে থাকি দুজনে। সেখানে আমাদের রুমমেট কয়েক হাজার আরশোলা৷ অ্যাপার্টমেন্টের ছাত থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে বলে সারাক্ষণ তলায় বসিয়ে রাখতে হয় একটা বালতি। শীতের কামড় থেকে বাঁচতে সেকেন্ড হ্যান্ড দোকান স্যালভেশন আর্মি থেকে কিনে আনি মৃত সাহেব-মেমের কোট। ... ...
শিরোনামে ব্যবহৃত দু’টি শব্দের প্রয়োগ যথাযথ হচ্ছে কিনা, তাই নিয়েই এই লেখা। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ভারতীয় শাখার প্রধান, আকার প্যাটেল তাঁর ‘প্রাইস অফ দ্য মোদী ইয়ার্স’ বইয়ে ‘ব্যাড মুসলিম’ পরিচ্ছেদে ২০১৫-র ৩০ মে থেকে ২০১৯-এর ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে ঘটা ৮৩টি ‘লিঞ্চিং’-এর ঘটনার উল্লেখ করেছেন। প্রকৃত সংখ্যাটা যদিও এখন আরও অনেক বেশি। এই ধরনের লিঞ্চিং-এর ঘটনা আমাদের কলকাতার বিভিন্ন বাংলা খবরের কাগজে নিয়মিতই প্রকাশিত হয়েছে ‘গণপিটুনি’ বা গণপিটুনিতে আহত বা মৃত্যুর ঘটনা হিসেবে। ... ...
উদ্ভ্রান্ত সেই আদিম দিবসে বাবার হাত ধরে আমিও যেতাম সেই সব রোমহর্ষক সংগ্রামে। তখন-ও ‘দিনেরাতে মুলে রাখে কান’ মোবাইল ছিল না পকেটে-পকেটে, তবুও ঘাবড়াইনি কোনোদিন, জানতাম রণে-বনে-জলে-জঙ্গলে পকেটে একটা নাম-ঠিকানা লেখা চিরকুট থাকলেই চলে, হারিয়ে গেলেও কেউ খুঁজে পেয়ে আমাকে ক্যুরিয়ার করে দেবেন। তবে কি না, ছোটোবেলায় হারাইনি কোনোদিন-ই, ইচ্ছে ছিল একবার অন্তত হারিয়ে গিয়ে বাবার নাম ধরে মনের আনন্দে চ্যাঁচাবো, সেই গোপালের ছেলে যেমন চিল্লিয়েছিল “অ্যাই গোপাল, গোপাল”! কিন্তু সে শখ আর পূর্ণ হল না কোনোদিন। তবে হারিয়ে একবার গেছিলাম, তাও আবার আধদামড়া, হিজল-দাগড়া বয়সে। সে-ও সেই অভিশপ্ত সপ্তমীর দিনটাতেই। সেই গল্প বলছি। ... ...
স্থান : গুরুচন্ডালির সম্পাদক ঈশেনের ঘর। চারিদিকে বই'র বিজ্ঞাপনের ছড়াছড়ি। পুরোনো খবরের কাগজ। টাইম টেবিল। নানান হ্যান্ডবিল। পায়ের কাছে একটা ছেয়ে রংএর বিড়াল খুব মুহ্যমান মুখ করে প্রবল নাক ডাকিয়ে ঘুমোচ্ছে। একটা কম্পিটারের সামনে বসে ঈশেন তারস্বরে নানান অস্তিত্ববাদী আওয়াজ করে যাচ্ছে। "উ: আ: আ হা।' আর কম্পিউটার থেকেও কেন কি জানি একটা একটানা ক্যাঁ ক্যাঁ আওয়াজ বেরোচ্ছে। পাশেই চিনি ছাড়া ব্ল্যাক কফি। দেওয়ালে একটা আত্মভোলা টিকটিকি। ঈশেনের পরনে হাঁটু পর্যন্ত ঝোলা পাঞ্জবী আর ঢোলা পাজামা। নাকের উপর গোল্লামার্কা চশমা কিমিতিবাদী সংকটে খালি ঝুলে পড়ছে। ... ...