হীরেন সিংহরায়ের নতুন বই। গুরুচণ্ডা৯ থেকে বেরোচ্ছে। সামনেই, অর্থাৎ অদূর ভবিষ্যতে। বাংলা সাহিত্যে, সাহিত্যেই কি শুধু, বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বৈঠকী আড্ডা। যদিও তার সে তেজ আর নাই, মুজতবা লিখেছেন, “ফের বহু সিন্ধু পেরিয়ে দেশে এসে দেখি, সেই আড্ডার বিন্দুটি খরতাপে বাম্পপ্রায়।“ আড্ডার ঠেক পালটে পালটে গেছে, পাড়ার রক আর ‘পস্তলা-দস্তলার’ চাতাল থেকে সে চলে গেছে সাঙ্গুভ্যালি চায়ের কেবিন, কল্লোলের আড্ডা থেকে কফি-হাউসের টেবিল, সেই কফির কাপের তুফান হয়তো ঘুরতে ঘুরতে, বইতে বইতে পৌঁছে গেছে দেশে দেশান্তরে। সেই নতুন দেশে পৌঁছেও বাঙালি ঠিক খুঁজে নিয়েছে তার বেরাদরদের। ঠেকে ঠেকে জমে উঠেছে নিতুই নব আড্ডা। আর বাঙালি দেখে না শিখুক, আড্ডার ঠেকে নিয্যস শিখেছে গালগল্পের মাঝে হাইজাম্প ও লংজাম্পের কায়েদা। ... ...
গোড়ার দিকে লেখা এই গল্পগুলিতে লেখকের পরবর্তী বিবর্তনের সমস্ত পূর্বাভাষই চোখে পড়ে। মানুষের শাশ্বত জীবনজিজ্ঞাসা থেকে শুরু করে প্রেম, শোক, অনটন, শিল্পানুরাগ, মৃত্যুচেতনা, হারানো যৌবনের হাহাকার -এরকম নানান সংকট নিয়ে এই গল্পসংকলন। কথকের মতো যেন লেখক গল্প বলেন। বাঁকে বাঁকে রহস্যের হাতছানি। সঙ্গে জীবনের বেদনা ও আনন্দ, শিল্পের মায়া ও সৌন্দর্য। জোনাকির আলোর মতো চমকিত চিত্রকল্প। ... ...
এসে গেল গুরুচণ্ডা৯-র নতুন উদ্যোগ 'এ মাসের বই'। প্রতি মাসে নির্বাচিত কিছু বইকে তুলে আনা হবে পাঠকের দরবারে,থাকবে সেইসব বইয়ের উপর বিশেষ ছাড়। সঙ্গে চলুক বইগুলো নিয়ে আড্ডা-তর্ক-গল্প-আলোচনা। ... ...
আমাদের কৈশোর-যৌবনে, দশমীর পরে, পাড়ায় বন্ধুদের ও পরিচিতদের বাড়িতে বাড়িতে বিজয়া করতে যাওয়া প্রাইম অ্যাট্রাকশন ছিল জলখাবার, বিশেষতঃ মিষ্টি। কাজেই মনে হতে পারে সেই ট্র্যাডিশন আজও চলিতেছে। কিন্তু তা বোধহয় নয়। অন্ততঃ মহেন্দ্রনাথ দত্ত পড়লে তাই মনে হয়। "বিজয়ার দিন পাড়ার বুড়ো ব্রাহ্মণদের কিঞ্চিৎ প্রণামী দিয়া প্রণাম করিতে হইত। বিজয়ার দিন নারিকেলছাবা দেওয়া হইত। বিজয়ার কোলাকুলিতে সন্দেশ বা অন্য কোন খাবার চলিত না।" নো মাংসর ঘুগনি, নো রসগোল্লা। বোধহয় নারকোল নাড়ু নারিকেলছাবা-র জায়গা নিয়েছে। নারিকেলছাবা জিনিসটা কী, কে জানে! ... ...
কুরেশির বিশ্লেষণে যেমন আছে তথ্যের সমাহার তেমনই আছে যুক্তির জোর। বস্তুত, বইটাতে তিনি যা লিখেছেন তার অনেক কিছুই জানা। অবশ্য, সবার নয়, যাঁরা জানতে চান তাঁদের – অনেকেতো জানতে চানই না। এ বই, বিশেষত শেষের দিকে, “জনসংখ্যার রাজনীতি” বিষয়ক অষ্টম অধ্যায়টা পাঠকের মনকে বিশেষভাবে বিচলিত করবে। এই অধ্যায়ে কুরেশি হিন্দুত্ববাদের প্রবক্তাদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রচারিত জনসংখ্যা বিষয়ক গালগল্পগুলোকে ভেদ করে প্রকৃত সত্যকে তুলে ধরেছেন। আশা করা যায় যে, এখানে উপস্থাপিত তথ্য ও সেগুলোর ব্যাখ্যা ক্রমবর্ধমান সাম্প্রদায়িক বিভাজন রোধ করার কাজে লাগবে। ... ...
`রাত আড়াইটের সময় ট্রেন জলগাঁও পৌঁছাল। জলগাঁও থেকে ফর্দাপুর পঞ্চাশ মাইল। অজন্তা সেই সময় জঙ্গলাকীর্ণ। মুকুলকে চার মাইল দূরে ফর্দাপুরে থাকতে হবে। ১৯৬৫ সালে যখন নারায়ণ সান্যাল অজন্তা আসছেন তখন এই রাস্তায় বাস চলে। ১৯১৭-তে বলা বাহুল্য কোনো বাস নেই। বাইশ বছরের মুকুল অজন্তা দেখার উত্তেজনায় টগবগ করে ফুটছেন। তিনি এক মুহূর্তও নষ্ট করবেন না। রাত আড়াইটেতেই তাঁর টাঙা চাই। সে অবশ্য পাওয়া গেল না। ভোর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হল। টাঙাওয়ালা ভাড়া নিল ছাব্বিশ টাকা। হাওড়া থেকে জলগাঁও ট্রেন ভাড়ার প্রায় দ্বিগুণ। টাঙা থেকে দেখা পশ্চিম ভারতের গ্রামের চমৎকার বিবরণ মুকুলের বইতে আছে। নেরি নামের এক গ্রামের কথা আছে যেখানে মাত্র কিছুদিন আগেই প্লেগ হওয়ায় গ্রামের সবাই বাড়ি ফেলে পালিয়েছে। সাজানো-গোছানো লালিত্যময় সে গ্রাম। দরজায় নকশা আঁকা। খাঁ খাঁ করছে। ... ...
একটা নতুন বই। এমন মারাত্মক, আশ্চর্য, আর গোপন - যে কেউ সেই বই পড়ছে তার জীবনটাই বদলে যাচ্ছে চিরকালের মত। প্রথম পাতাটা খুলতেই আলোর ঝলকানিতে চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে, সেই বই তার পাঠককে এক নতুন জগতে নিয়ে যাচ্ছে, মনে হচ্ছে যারা এই বইটা পড়ে নি, তারা কী হতভাগ্য, তারা কী বোকা! ওসমান নিজে এই বইটা পড়েছে, সে এখনও ইস্তাম্বুলে কলেজের ছাত্র, মনে মনে জানানকে পছন্দ করে, জানান এই বইটা পড়েছে, জানানের প্রেমিক এই বইটা পড়েছে। জীবন আর ভালোবাসার বিষয়ে যা যা জানা সম্ভব, আর ভবিষ্যতে যা যা জানা যাবে, সব ওতে লেখা আছে। ... ...