এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • স্তুবাই গ্লেসিয়ারে স্কী

    PRABIRJIT SARKAR লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৪ এপ্রিল ২০২৪ | ৪৭৩ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • মাথায় নেই ঘী
    করতে গেলাম স্কী!

    এক্কালে হঠাৎ হঠাৎ আমার মাথায় ভুত চাপত। তখন ভীতুর ডিম আমি দুঃসাহসী হয়ে উঠতাম। ব্যাপারটা খুলে বলি।

    আমি একটা কনফারেন্সে পেপার পড়ার ডাক পেলাম। থাকা খাওয়া দেবে আর প্লেন ভাড়া। যেখানে যেতে হবে সেটা অস্ট্রিয়ার ইন্সব্রুক শহরের কাছে একটা গ্রাম। কলকাতা থেকে যাওয়া অনেক হাঙ্গামা। কনফারেন্স যারা সংগঠন করছে তারা বলে দিল তুমি মিউনিক হয়ে একটা শাটল ট্যাক্সি ধরে এস ওই গ্রামে। তখন কলকাতা থেকে KLM ইউরোপ যেত। ঢাকায় খুব গোলমাল বলে মনে হয় ঢাকা যাবার যাত্রী বেশি হত না।  ওরা শর্ত দিল কলকাতা থেকে আমস্টারডাম হয়ে মিউনিক আর ফেরার সময় মিউনিক থেকে আমস্টারডাম। সেখান থেকে ঢাকা হয়ে বাংলাদেশ বিমানে কলকাতা। তাহলে সবচেয়ে কম পড়বে টিকিটের দাম। তাই সই। ইকোনমি ক্লাসে দু দিনের জন্য গিয়ে আসা যায় না। কদিন থাকতে হয়। ভিয়েনা Klagenfurt একবার স্লোভেনিয়া থেকে ট্রেনে গেছিলাম। ইন্সব্রুক যাই নি। তাই ভাবলাম দুদিন আগে গিয়ে ঘুরব। খাবার ব্যবস্থা না হলেও থাকার জন্য দু দিন আগে আসলে থাকতে দেবে। সেইমত এসে ইন্সব্রুক চক্কর মারলাম আর বার্গার খেয়ে দিন কাটালাম। তখন একটা বিজ্ঞাপন দেখে আমার মাথায় ভুত চাপল। বাস কোম্পানি একটা অফার দিচ্ছে। একটা গ্লেসিয়ার যাবার যাতায়াত করার টিকিট কাটলে স্কি পাস আর স্কি করার সরঞ্জাম  ব্যবহার করতে দেবে। সব ওই যাতায়াত করার টিকিটে হবে। মনে হয় তখন স্কি এর অফ সিজন। কেটে ফেললাম টিকিট। বাপ দাদার জন্মে স্কি করি নি। চলে এলাম গ্লেসিয়ারে। নাম যদ্দুর মনে পড়ে স্তুবাই গ্লেসিয়ার। একটা লিফটে করে এলাম। চারিদিকে বরফ। একটা জায়গায় ডেঞ্জার সাইন দেওয়া। একটা লেক  বরফ ঢাকা আছে। পা দিলে অতলে তলিয়ে যাবার সম্ভাবনা। স্কি এর বুট আর লাঠি নিলাম। পায়ের তলায় লম্বা তক্তা দুটো নিলাম না। এমনি ঘুরে বেড়ালাম বরফ রাজ্যে। তারপর দেখলাম একটা জায়গায় ছোট ছোট চেয়ার উপরে উঠে যাচ্ছে। কাছে গিয়ে চলন্ত একটায় চড়ে বসতেই সেটা সোজা বহু উপরে নিয়ে গেল। ওখান থেকে স্কি করে অনেকে আরো উপরে যাচ্ছে বা ওখান থেকে স্কি করে নামছে। আমি আসে পাশে স্কি বুট পরে হাঁটা হাঁটি করলাম।  একটা ডাস্টবিনের উপর ক্যামেরা রেখে টাইমার দিয়ে নিজের ছবি তুললাম (নীচে সেই ছবি)। তারপর ঐ চলমান চেয়ারে বসে নামতে গেলাম। এক প্রহরী এসে সিস্টেম অফ করে বলল স্কি করে নামতে হবে। ওঠা যায় এই চলমান চেয়ারে করে কিন্তু নামা যাবে না। তাকে অনেক বোঝালাম আমি স্কি করতে জানি না। যে চেয়ারগুল নেমে যাচ্ছে তার একটায় বসে নেমে গেলে কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হবে! সে সিস্টেম অফ করে চলে গেল তার চেম্বারে। কোন কাকুতি মিনতি শুনল না। নিয়ম মানে নিয়ম। কোন ভাবেই লঙ্ঘন করা যাবে না!

    অগত্যা আমি বরফের ঢালে বসে গড়িয়ে দিলাম বডি। বেশ কিছুটা নেমে গেলাম। তারপর হাঁটা। ধুপ ধাপ পড়ছি। উঠে আবার হাঁটা। পরের ঢালে আবার ওই ভাবে গড়িয়ে নেমে গেলাম। ছোট বেলায় ঢাকুরিয়া লেকের কাছেই থাকতাম। ওখানে একবার স্লিপে চড়ে ছিলাম। মামা জোর করে উপরে তুলে বসিয়ে ছেড়ে দিল। আমি ভয়ে কেঁদে কেটে এক সার। এরপর কোনদিন ওর ত্রি সীমানায় যাই নি। সেই আমি বরফের রাজ্যে একটার পর একটা স্লিপে গড়িয়ে নামছি। পাশ থেকে স্কি করে লোকজন  সা  সা করে নেমে যাচ্ছে। আমার পাগলামি দেখার সময় ও নেই। পাক্কা এক ঘন্টার চেষ্টায় নেমে এলাম। এতক্ষন বরফের রাজ্যে থেকে গলা বসে গেল। কনফারেন্সে সেই বসা গলায় কোন রকমে পেপার পড়লাম।

    ফেরার পথে ঢাকা এয়ারপোর্টে বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকতে হল। সেখানে আরেক অভিজ্ঞতা। বিমান কোম্পানির অফিসাররা ঘুরে বেড়াচ্ছে আর প্যাসেঞ্জার খুঁজে বেড়াচ্ছে। প্লেন ছাড়ার সময় হয়ে যাচ্ছে অথচ প্যাসেঞ্জাররা টিভি দেখতে ব্যস্ত। তাদের জনে জনে কোথায় যাবেন জিগ্যেস করে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। আমায় ও বেশ কবার ধরতে এল। শেষে একটা খাবার জায়গায় গিয়ে বসলাম। কিছু খাবার নিলাম।  কয়েকজন আলাপ জমাল। ভারতীয় বাঙালি শুনেই বলতে শুরু করল আপনারা আমাগো zল আটকাইয়া রাখসেন ইত্যাদি।
     
    যাই হোক প্লেনে উঠলাম। খুব নীচ দিয়ে যাচ্ছিল। বর্ষা কাল। চারিদিক সবুজ আর প্রচুর খাল বিল। প্লেন এত দুলছিল যে বাথরুমে হিসু করতে গিয়ে দুহাত দিয়ে ব্যালেন্স রাখতে জেরবার। আসল জায়গায় ধরে জলের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলাম না। প্যান্ট ভিজে গেল। এই ভাবে ল্যাজে গোবরে হয়ে কলকাতা ফিরলাম।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • হীরেন সিংহরায় | ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ০৩:০২530325
  • এক ফেব্রুয়ারি হাফ টার্মের ছুটিতে সপরিবারে নয়শোয়ানসটাইনে লুডভিগের দুর্গ ( যেটা ডিজনি কপি করে সিনডারেলার রূপকথার প্রাসাদ বানান) দেখতে  গিয়ে নিতান্ত সমতলে স্কি করার দুরমতি হয়েছিল। কয়েক বার আছাড় খাবার পরে সে বাসনা চিরতরে ত্যাগ করি। কিন্তু আমার চার বছরের মেয়ের  মাথায় সেই যে স্কি করার নেশা ঢুকে ছিল সেটি আর যাবার নয়। আমরা তাকে দুর হতে দেখি। 
  • PRABIRJIT SARKAR | ১০ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:৩৯530408
  • স্কী করব ভাবতে ভাল লাগে। অভ্যাস না থাকলে বুড়ো বয়সে খুবই দুর্গতি।
     
  • বিপ্লব রহমান | ১১ এপ্রিল ২০২৪ ১২:৫৩530464
  • হা হা হা :)) দারুণ অ্যাডভেঞ্চার! 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন