এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • কবিতা ও কিছু কথা

    Sudip Ghoshal লেখকের গ্রাহক হোন
    ২১ ডিসেম্বর ২০২২ | ৬৩৭ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (২ জন)
  • কবিতা ও কিছু কথা

    সুদীপ ঘোষাল 

    কবিতা ছড়িয়ে আছে জীবনে,প্রকৃতির মাঝে।তবে সবসময় সে ধরা দেয় না।প্রত্যকের অন্তরে জাগ্রত একজন, সদা কথা বলে নিজের সঙ্গে। তার জন্য  আবেগ আর, সাধনার প্রয়োজন।  কবিতালেখক, লিখতেই পারেন কিন্তু কবিতা হল কি না পাঠক বলবেন।প্রেম করা যায় না,হয়ে যায়। একজন কবির মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, মনের ভিতর ভীষণভাবে অনুরণনশীল বস্তুর বহিঃপ্রকাশ কবিতা লেখায় সমৃদ্ধ হচ্ছে কী?
    লেখার সময়ে সচেতন ভাবে লেখনীর মধ্যে কবিতার ভাব অনুভব করি না! অবচেতন মন থেকে উঠে আসা দিনলিপির বোধকে প্রকাশ করি কি শব্দচয়নে? শব্দচয়ন সঠিক হচ্ছে কি? কবিতা লেখার  কি কোন নিয়ম হয়। কবিতার কি ব্যাকরণ হয়? নানা মুনি নানা মত? অনেকে বলেন, প্রচুর পড়াশোনা না করলে কবি হওয়া যায় না। আবার বাস্তবে দেখি নিরক্ষর এক কবি রাষ্ট্রপতির কাছে পুরষ্কার নিচ্ছেন তাঁর স্বভাবজাত কবিতা রচনার কারণে। তিনি কবিতার লাইন বলেন আর একজন তাঁর কবিতা লেখেন। কাউকে আঘাত না করেই বলি, কবিতা সকলের জন্য নয়। স্বভাবজাত আবেগ না থাকলে কাক কখনও কোকিল হয় না।মনের ভিতর জেগে ওঠা অনুভূতিকে শব্দের বিন্যাসে সুন্দর ক'রে গেঁথে ফেলি পাঠকের উদ্দেশ্যে।সময়োপযোগী প্রতিবেদন হোক বা পুরাতনী ইতিহাস, সবকিছুতেই চেষ্টা করি পাঠকের কাছে পৌঁছাতে।
    অনেকেই বলেন, কবির দায়িত্ব নয় পাঠকের দৃষ্টিকে দেখা বা লেখা।তাঁর উদ্দেশ্য শুধু লিখে যাওয়া। কে কতটা নিতে পারল বা বুঝতে পারল, সেটা সম্পূর্ণ পাঠকের ব্যক্তিগত ব্যাপার।
    আমি ভিন্নমত পোষণ করি। 
    কবিতা না বুুুুঝতে পারলেও কিছু করার থাকে না। কবিতা বোঝানোর দায়িত্ব কিন্তু কবি নেবেন না। পাঠকই শেষ কথা। 

    কবি অতি সুক্ষ্ম তরঙ্গের স্পন্দন শোনার অপেক্ষায় মৌন হয়ে  অপরূপ প্রকৃতির, কোলে আশ্রয় নিতে চায়।চাওয়া,পাওয়ার উর্ধ্ব জগতে ভাসতে ভাসতে ছাই হয় নশ্বর দেহের অহংকার।

    স্থূল  পদার্থ নিয়ে কবির মত পরমাণু বিজ্ঞানীরা অপেক্ষায় থাকেন না।অণু পরমাণু নিয়েই তাঁরা ব্যস্ত।তা না হলে হিমালয়ের চূড়া কিংবা জমি জায়গা নিয়েই তারা টানাটানি করতেন বেশি।
    আকাশকে আমরা পৃথিবীর মানুষ, স্বার্থপরের মত খন্ড খন্ড করেছি।এটা কাটোয়ার আকাশ, ওটা দিল্লীর, ওটা রাশিয়ার আকাশ। অখন্ডতার বাণী আমরা ভুলে যাই।কবি বলেন,আকাশ চিরদিন অখন্ডই থাকে।তাকে খন্ডিত করার অকারণ অপচেষ্টা না করাই ভালো।তবু কাঁটাতার হয়,সীমানা ভাগ হয়। অদ্ভূত মূর্খতার অন্ধকারে ডুবে আছে প্রাণীকুল।
    কবির আলোর অন্তরে বাদ্য বাজে, 'অনন্ত নাদ' এর ভেরী।সূক্ষ্ম তরঙ্গে মিশে যায় তার অস্তিত্ব,ভুলে যায় তার  অবস্থান। এ অনুভূতি ঝর্ণার মত,কবিতার মত,ভালোবাসার মত, নদীর প্রবাহের মত। জোর করে সে গতি পাল্টায় না।

      কবিগুরুর মানবের আত্মার স্বরূপ হচ্ছেন সর্বজনীন মানব বা পরম পুরুষ। যিনি সব মানুষের হৃদয়ে সন্নিবিষ্ট থেকে মহত্ত্বের শ্রেয়োবোধের প্রেরণা দিচ্ছেন। চিত্রার ‘এবার ফিরাও মোরে’ কবিতায় তার পরিচয় আছে।
    ‘কে সে? জানি না কে? চিনি নাই তারে
    শুধু এইটুকু জানি— তারি লাগি রাত্রি-অন্ধকারে
    চলেছে মানবযাত্রী যুগ হতে যুগান্তর-পানে
    ঝড়ঝঞ্ঝা বজ্রপাতে জ্বালায়ে ধরিয়া সাবধানে
    অন্তরপ্রদীপখানি।... মানুষের অন্তরে এক মহামানবত্বের প্রেরণা, যা তাকে অনুপ্রাণিত করে মহত্ত্বের পথে নিয়ে যায় তাকে অনুভব করেন কবি। তবে মহামানবের কর্ণে তার আহ্বান পৌঁছায় সবার আগে। তাঁরা সংসারের সীমা ছেড়ে ছুটে আসেন। নতুন নতুন ত্যাগ ও দুঃখ বোধ প্রকাশিত হয়। মানুষের অন্তর্নিবিষ্ট মহামানবই কবির ‘সদা জনানাং হৃদয়ে আছে। মহামানবকে লাভ করার সাধনাই কবির ধর্ম সাধনা। এর নাম মানবধর্ম। কবিগুরুর আত্মদর্শন  বিভিন্ন কবিতায় রূপায়িত হয়েছে। গীতমাল্যের  কবিতায় মহামানবকে লাভ করার জন্য ত্যাগ ও দুঃখবরণ করে মানবাত্মার অভিসারের কথা বলা হয়েছে। দুঃখকে আত্মসাৎ করার আনন্দের কথা ‘আত্মপরিচয়ে’ বলেছেন তিনি। দুঃখের মধ্য দিয়ে সুন্দরের পরমসত্তার আবির্ভাব ঘটে। 
    কবি বলেন সৃষ্টির সবাই ভয়ে কাজ করি। অস্তিত্ব বিনাশের ভয়ে।পৃথিবী ঘোরে ভয়ে,তা না হলে সে ধ্বংস হবে। সূর্য তাপ দেয় ভয়ে, তা না হলে তার অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।

    সৃষ্টি মানুষের প্রশ্বাস,স্থিতি মানুষের ক্ষণিক ধারণ ,প্রলয় মানুষের নিশ্বাস।

    কবি হলেন আলোর অনুসন্ধানী,তার  ভয় নেই, তাই অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াই নেই।  লোভ নেই, তাই অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা নেই।অকাল বার্ধক্য নেই।
     আছে শুধু আনন্দ,ছেলেমানুষি,বোকামি,সরলতা,সোজা পথে হাঁটার সোজা রাস্তা...
     
    কবিবন্ধুর মত , লোভলালসা  নির্বিশেষে অখন্ডতার অসীম ভালোলাগায়  মনসায়রে আপনি ডুব  দিতেই পারেন...

     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Angsuman Ghosh | ২১ ডিসেম্বর ২০২২ ১১:৫০514749
  • খুব সুন্দর বিশ্লেষণ করেছেন।
  • ঝর্না বিশ্বাস | ২২ ডিসেম্বর ২০২২ ১৮:২৫514788
  • খুব ডিটেইলস এ লিখলেন...খুব ভালোলাগলো পড়ে...
    আমিও কদিন আগেই এখানে লিখেছিলাম "কবি ও কিছু কথা"।.. বস্তুত কবিকে নিয়েই..  
  • একক | ২২ ডিসেম্বর ২০২২ ১৯:৪৮514790
  • কবি আলোর অনুসন্ধানী হতে যাবেন কেন।  অন্ধকার কী দোষ কল্ল ঃ( মানবধর্ম ই বা মানতে হবে কেন!  
     
    বাদুড় ধর্ম গ্রহণ করে অন্ধকারে ঘুরে বেড়ালে হপে না??  
  • Sobuj Chatterjee | ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ ১০:৪৩514804
  • "কবি আলোর অনুসন্ধানী হতে যাবেন কেন।  অন্ধকার কী দোষ কল্ল ঃ( মানবধর্ম ই বা মানতে হবে কেন! "  - একমত। তার আবার কিসের দায়! 
    সেতো শর্তহীন ভাবে নদীর মতো বয়ে যাবে। 
  • আরশোলাধর্ম | 165.***.*** | ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ ১৮:৪৩514814
    • ২৬ মার্চ ২০১৫ ০১:০৩
     
    • আরশোলা আরশোলা কোথা যাও একা একা গোষ্পদে জমেছে গোধুলি
      কেন কর তাড়াহুড়া এ দুয়ারে তাঁর কড়া ভ্রুকুটিতে ঝিকিমিকি আলো
      সন্ধ্যা নামার মুখে রাতপাখি জেগে ওঠে ভয়েদের নানান পশরা
      আমার ভয়্সে শোনো গড্ডলিকার থেকে রেখে দিও পাঁজরের পিস
      আরশোলা আরশোলা চুপি চুপি রাতচরা নিঝুমের প্রিয় কলঘর
      খরতর সন্ধিতে পদে পদে প্রাণ দিও এঁটোকাঁটা বাসি অক্ষর
      রাত চরে দিন চরে পরমাণু ঘরে থেকে গোপনীয় সংশপ্তক
      বিস্ফোটে ধুলো ওড়ে ঢুলে পড়ে ঘোড়াগুলি রক্তেরা নিদ্রাকাতর
      আরশোলা আরশোলা নিবিড় পাতালমুখী লাভাস্রোত প্রতিবেশী প্রায়
      স্থিত, ধীর টিঁকে থাকা ভিক্ষার শষ্য আকাঁড়া
      তাড়াহুড়া করে আর কবে নীর চির স্থির, রাতগতে ব্যাঙের আধুলি।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে প্রতিক্রিয়া দিন