তাঁদেরই অপরা-হুইসেল,শুনি
তাঁদেরই স্বরে বুনো তোলা !
তলান্ন, এই তরঙ্গপ্রাণ -১
কোথাও অনিমেষ চেয়ে থাকার কুসুম
কোথাও ফুটে ওঠার হৃৎ-চাকরি-
যতোটুকু ঘনিয়ে ওঠে
নীর-কারু এক ছাউনি
আমাদের ভ্রমণপথও
মিশে যায় ঠাকুরের গান ছেঁড়া পথে
আর রাস্তানো কৃতজ্ঞতার কথা
ফুল ও ফুলের আঘাত পিঞ্জর কথা
ঝরে পড়ে
টুপটাপ শব্দগুচ্ছে
জমে ওঠা কোহলে
যা সে ফেলে গেছে
ইতির সংকলিত মনে মনে
ফেলে গেছে তার হাতঘড়ি
সীমান্ত তারের সংগ্রহে,সময়ে
নদী তার ছায়া নিয়ে পড়ে আছে
গ্রাম্যজনের ছায়া নিয়ে, অসেতু , অপার নিয়ে
পড়ে আছে আমাদের ভরন্ত বেদনা
বেদনার এই, এই অন্তহীন, ক্ষিতিজে
শুধু অনিমেষ চেয়ে থাকার কুসুম
শুধু, তরল বিলীনে ঘটমান
ঝিম জরিমানা !
তলান্ন, এই তরঙ্গপ্রাণ-২
এখন নীল তারা টুনি জীবনী
এখন এই ক্ষুদ্রময়
জ্বলা নেভা
এখন স্তিম স্তিমিতের ভরন্ত মা ডাক
যেন তরলে ভারাক্রান্ত কেউ
মর্মের ক্ষীণ বন্দিশে অস্থায়ী
চলে যেতে চায়
দূর কোনো দূরের নিকটে
ঘাসেদের কান্না ছায়ায় এই তার চলা
শাদা এক পাতার বিক্ষোভ!
যেখানে সে লিখে রাখে
ছোঁয়া আত্মের টুপকথা
শিশির ক্ষরণের অর্ধ রাত
বাকি অর্ধে তো অনিদ্রা-পাখি
খুঁটে নেয় চৌদিকের রুহ ও রঞ্জন
খুঁটে নেয় কোনো এক আলোল্লা অনুপস্থিতি-
দোলা দোঁহার-সেই তাঁর
জ্বলা নেভার অনুপস্থিতি !
তলান্ন, এই তরঙ্গপ্রাণ-৩
যেভাবে তাকাও তুমি
সেভাবে এই অন্তর ফোটা দিন
হসন্তজখমে
বুঝেও যেন না বোঝার দিন-
মনে হয় ভুল করি
মনে হয় ছুটে যাই তুক ভুলের কাছে
নদী নিরুত্তরের কাছে
কোথায় পরম আর কোথায় পরম-প্রমাণ!
তার'চে তরল মশগুলে, দীনানুদীন
তার'চে তরঙ্গপ্রাণে
ভরা থাক
শালপথের উধাও হাওয়াটি
শ্বাসের প্রতিটি আছন্নে
সময় যেন সময়ে এসে
ডাকনামে ডেকে ওঠে
সময় যেন দূরে ওই আগুনে পলাশ
দূরে ওই গোধূলি গোধূলি
তলান্ন, এই তরঙ্গপ্রাণ-৪
কিছু তো পূর্ণ গঠনে কিছু দাও, কতো আর
তলে তলান্নে পড়ে থাকব
ছায়া ও শীতলের বিবাহ দাও
ভরন্ত পথের নেশা
চলন্ত চাঁদের চোখ
রক্তে যে ঘুণ্টি ওড়ায়
তার গুমঘর, তার আছাড়ি-পিছাড়ি কেতন
কেন বার বার
কেন প্রতিবার প্রতীকে জড়াও
নিঝুম মদ্যে এতোদিন তার রচয়িতা
ক্ষীণ লিরিকে এতোদিন
কেন আটকে থাকে
অনুপস্থিতির মধ্যে তুমি, সুন্দর
লোকে বলে
না-ফোটার দূরত্বে তুমি, স্থিতহাসি
লোকে বলে
লোকে লোকে সইয়ে এই যে আছি,থাকি
অপূর্ণ শরিকে হাতমুঠি পণ করে আছি
এও তবু সুন্দর !
তলান্ন, এই তরঙ্গপ্রাণ-৫
যেন আলো খুঁটে নেবে পাখি
যেন স্তিমিত হৃদের এক শোভা
প্রদোষে খুঁটে নেবে
আর আলোগ্রন্থির পাশে
ওই অল্প কাৎ
কার আর উচিত বেদনা !
কার আর একা ও একাকী-
শুধু চোখের শান্ত বেছে নেওয়া
শুধু মনের সুদূর মাফিক
পরি ও কল্পনা কিছু তো নয়
স্পর্শ ও স্পর্শের বাহিরে
কাহিনী ও কাহিনীসূত্রের বাইরে
এক আলো ভেজা কাক
স্বল্প কালো বিন্দু নিয়ে
রয়ে যায় শূন্যস্থানে
যেন মৌলভাবে কারো ঝিল্লিজখম
যেন সময়হীন
ঝরে পড়া
নীড়হারা সময়ের এক ক্লিক !
তলান্ন, এই তরঙ্গপ্রাণ-৬
কিছু কালো তার সর্ব বিশেষ লেগে আছে
কিছু তার ধোঁয়া ধোঁয়া
তুমি একা পেরিয়ে যাচ্ছ, সাঁকো
ওপারে মর্ম-ভাষিণী গ্রাম
পরিমাণ মতো নয়
বরং অপরিমেয়
এই ঋণ
এই দীন
এই বৃত্ত আলো, জলস্তর
যেন হৃদি এক আজন্ম নদী নাম !
যেন পিপাসার
এই তীক্ষ্ণ
তূরীয়
তরলে-টান
তোমারই আয়ত আধার জুড়িয়া
কিম্বা চলার জটিল ওই ছায়াস্তব, চাঁদ
নেশার নাজেহালে যেটুকু
নিসর্গ দোলায়
তার অকুণ্ঠ টেক্কায় - আজও সে সর্বস্বান্ত !
আজও কিছু তার লালনে এসে লাগে
আজও কিছু তার গতিশীল
নিশিমন নৌকার
ছলাৎ খু্ঁটে খুঁটে।..
তলান্ন, এই তরঙ্গপ্রাণ-৭
তোমাকে সর্ববিধ জানার আগে
যা কুড়িয়ে পাই
তা হল
স্বচ্ছ এক নুড়ি
করতলের গড়ানো খেলা
দেখে মনে হয় কারো অশ্রু-বর্ণ
মনে হয় যেন কেউ অবেলায় এসেছিল বালুতীরে,একা
তাঁরই ছোঁয়া-ছলাৎ তাঁরই বিন্দু-বেদনা !
কখন গড়িয়ে পড়া-এই প্রবেশক
জমাট বেঁধে গেছে
সে খেয়ালও ছিল না-
শুধু এই বেখেয়ালি
শুধু এই শোভাময় আনাগোনা
ইহলোকে রটনা উজ্জল করে রাখে
অঢেল অটুটে মদীয় ঋক
আঁটোসাঁটো করে রাখে
আর লোকালয় থেকে দূরে
ওই স্বচ্ছ নুড়ি
তোমার সর্ববিধ জানার আগেই,যাকিছু দেখি
দেখি শুধু এক অশ্রুময় শীলা !
তলান্ন,এই তরঙ্গপ্রাণ-৮
যা থাকে তা গোত্তা তরলেই থাক
এই স্ব প্রচুর ছেঁদা
দেহময়
এই ছড়ানো বিছানো কার হাহা
মনোময়
এসব ধরা-ছোঁয়ার কে এতো
সমূহ ঝুঁকি!
কে এতো চোখা হচ্ছে ছলাৎচ্ছলে
হে জীবন ডাক অনন্ত নয়
ছায়া ধিকিধিকি অনন্ত নয়
শিশুরা ডানা মেলে ফিরে আসে
পথরেখাটি তোমার যাতায়াত
শুধু রেখার নতুন গন্ধে
যে লেখে তার ক্ষরণ তাবিজ
পড়ে থাকে
যে পড়ে তার একার্তি ছলকায় !
তলান্ন, এই তরঙ্গপ্রাণ-৯
মেঘলা দিনে এমন হল
একটি পথ, দুটি মর্মে
সঙ্গ দিল
সঙ্গতরল যে প্রবেশক
মনের ভেতর
উথাল শোষক
গড়িয়ে দিল প্রশ্ন করা
মোক্ষ কী?
কে মোক্ষহারা ?
পথও তখন বোতাম খোলা
ঠিক পলাতক
মর্ম দুটি যখন কেবল
দীনের জাতক
হাত পুড়িয়ে, মাৎ পুড়িয়ে
দূর-প্রিয়তায়
মেঘলা দিনের মোক্ষ ফুটুক
অজ্ঞেয়তায় !
অজ্ঞেয়তায় !
তলান্ন, এই তরঙ্গপ্রাণ-১০
কোথায় কী যে জং লেগে আছে
আমাদের যাকিছু খর্বময়
তার অংশভুকে
প্রতীকের মেরু হাসি লেগে আছে
যেন তুমি আছো !
যেন তুমি ঘোরময় এক গ্রামে
রয়েছ পথের ক্লান্তির পাশে, লতাতন্তুজালে
পাথরে প্রতীকে মেরু হাসি লেগে আছে
চর্যা নিশ্চয় সুরগুলি
দহনের দোঁহাগুলি
ছুঁয়ে ছু্ঁয়ে এই যে ভাষা
ভাষার দু'পাশে এই যে তুমি-আমি
ভাবছি, যেখানে ভালোবাসা
সেখানে ভুবন
জঙ্গলে, রোদের গা'য়ে গা'য়ে
যে পথরেখা চলে গেছে সেই ভুবনের দিকে
তার দু'পাশেই
যেন তুমি খর্বময়
স্বভাবে কিছু জং নিয়ে
সে পথরেখার ধ্যানে জেগে আছো !
তলান্ন, এই তরঙ্গপ্রাণ-১১
যা দেখব, তোমার ছায়ায় বসে দেখি
আলোটগর ফুটে আছে অলক্ষ্যের পাশে
পাখিও নামছে, খুঁটছে
খুঁটে নিচ্ছে উঠোনের দানা,দেহাতি
বেড়া এক কলমিলতা
ফড়িঙ তার উঁকিঝুঁকি
দেহময় দীনের চিত্রলে
আঁক কাটা পথের মুখোমুখি-
ভাঙা হাটের গান নিয়ে ফিরে আসে
দ্বিতীয় জীবন
গুমশুম সন্ধ্যার মাথায় কে যেন জ্বেলে দেয়
অবিরল ওই পিদিম পলতা
আর জিন্দ বুলবুলায়
জলকে তরল করে রাখে
তরলে তন্তুতে এক তাঁতঘর
বুনে চলে ঝিম নিঝুমের দিন
মর্মচিড় মদ্দার নেশা পোক্ত দিন
দিনে দিনে জমে ওঠা
যে তুমি
ছায়ার টুকিটাকি
আনাচকানাচ মায়া জ্বালিও !
তলান্ন, এই তরঙ্গপ্রাণ-১২
অঝোর তোমার লিখিত ঋতুনাম,
নিভৃত আমার শস্যবীজ
অতঃপর
যখন যেভাবে ঝরো, ঝরে পড়ি আমিও মাটি-মর্মরে
চেটচেটে ও আঠালো
এই শুধু রক্তক্ষরণ
এই শুধু সকল প্রস্তুতি
কোথাও কিছু কি শিকড়ে ধরে রাখে !
তবুও সরল মরিয়া দিন
ফলে যায় দিকে দিকে
জিওল শ্বাসের দিন
ভাঙা ভাঙা ছায়া কুড়োয়-
আর ছ্যাতরানো
হৃদি আকর
আর
ছন্ন জীবন কথা
কোথাও কিছু কি শর্করায় ধরে রাখে !