ভাঙা কিছু, ছড়ানো কিছু
------------------------------
শেমশের বাহাদুর সিং
ছেঁড়া ছড়ানো চায়ের
দলা পা'য়ের নীচে
পাতারা
আমার কবিতা
চুল, ঝরে পড়া, নোংরায় রুখু, এখানে সেখানে
তবু গর্দানে চিটে থাকা
এমনি আমার ভাবনা
আমার থেকে আলাদা রূপে, মাটিতে
মিশে আছে
দুপুরের রোদ ছায়ায় অপেক্ষারত ঠেলাগাড়ির
মতন আমার পেশি
খালি বস্তাগুলো রিফু করা হচ্ছে..যা
আমার চোখের শূন্যতা
শীতও এক হাসিরেখায় দাঁড়িয়ে
সেও আমারই বন্ধু।
কবুতরগুলি একটি গজল গুনগুনিয়ে উঠল
আমি বুঝে উঠতে পারিনি, তার রদীফ-কাফিয়ে কেমন ছিল
এতো ন্যূন মাত্রার, এতোটা হাল্কা, এতোই মিঠা
সে যন্ত্রণা।
আকাশে নদীবালি আয়নার মতো কেঁপে উঠছে।
আমি তাতেই কাদার মতো ঘুমিয়ে আছি
আর চিকচিক করে উঠছি কোথাও...
কি জানি কোথায়।
আমার বাঁশিটি একটি নৌকার স্টিয়ারিং-
যার স্বর ভিজে গেছে
ছপ-ছপ-ছপ আমার হৃদয়ের গতি...
ছপ-ছপ ছপাৎ
সেই দোকান আমিই খুলেছি যেখানে 'পয়জন' লেবেলে
ওষুধের শিশিগুলি হেসে ওঠে
ওদের ইনজেকশনের ঝুঁটিতে ভালোবাসা চিপকে আছে।
ও আমাকে দেখে হেসে উঠছে, যে আমার ঠোঁটে এক ক্ষীণরূপে দাঁড়িয়ে আছে
কিন্তু তার চুল আমার পিঠের নীচে চাপা পড়ে আছে
আর আমার পিঠে সময়ের মৃদু তারের নখে
খামচে দিচ্ছে।
আমাকে তৃষ্ণার পাহাড়ে শুইয়ে দাও যেখানে
এক ঝর্ণার মতো ছটপট করছি।
আমাকে সূর্যের আলোতে পুড়তে দাও-
যাতে আঁচ আর শিখায় তুমি
ফোয়ারার মতো নেচে ওঠো।
আমাকে জংলি ফুলের পাপড়িতে ওস-এর মতো টুপ ঝরে পড়তে দাও
যাতে ফুলের চাপা পড়ে থাকা সুগন্ধি আমার পলকের
ঘুমের জ্বলন তুমি ভিজিয়ে তুলতে পারো,যদি সম্ভব হয়।
হ্যাঁ, তুমি আমার সঙ্গে কথা বলো,যেমন আমার দরোজার লজ্জিত জোড়
বারবার প্রশ্ন করে ওঠে..আমার বুকের
অগনন কামরাগুলির সাথে।
হ্যাঁ, তুমি ভালোবাসো আমাকে যেমন মাছেরা তরঙ্গকে ভালোবাসে
যেখানে ওরা ফেঁসে যেতে আসে না
যেমন করে হাওয়া আমার বুকে ধাক্কাপ্রেমে
জেগে ওঠে
তবুও যাকে অতল তলে দাবিয়ে রাখতে পারে না
তুমি ভালোবাসো আমাকে যেমন আমি বাসি।
আয়না, রোশনাই-এ একাত্ম হও আর আকাশে
আমাকে লেখো আর পড়ো।
আয়না, হেসে ওঠো আর মারো আমাকে।
আয়না, আমিই তোমার জীবিত প্রতিবিম্ব।
একটি ফুল ভোরছোঁয়া হো হো হাসি পরে
রাতের কালো কম্বল সরিয়ে
আমার শরীরে লীন মেখে নিল।
তাতে কাঁটা ছিল না- শুধু খুব কালো
দীর্ঘ একটা চুল যা মাটি অব্দি ছড়িয়ে দিয়েছিল এক ছায়া
যেখানে আমার পদক্ষেপ হারিয়ে গিয়েছিল।
সেই ফুল নক্ষত্রদের মুক্তো চিবিয়ে
নিজের পাপড়িতে মেখে ঝরে পড়ল
আমার জীবিত আতরদানিতে।
আর তখনই আমি দেখলাম আমি শুধুমাত্র একটি শ্বাস, যা ওই টলটলে বিন্দুটিতে রয়ে গেছি
যা তোমার বুকে ফাঁস হয়ে স্বপ্নে আটকে আছে
টনটনে এক মিহি যন্ত্রণায়।
আমি তাঁর হাঁটুমোড়ায় কোনো প্রার্থনা হতে পারিনি,
কেননা আমার ঝুঁকে পড়ার আগেই
তাঁর পা'য়ের গন্তব্য আমার চেয়ে থাকার অংশটুকু নিয়ে
কোথায় যেন হারিয়ে যায়।
যখন তুমি এলে, এক খোলা ছেঁড়া চিঠি
তোমার হাতে উঠে এল।
তাকে উল্টে পাল্টে দেখলে—ওতে কিছুই ছিল না
তুমি ছুঁড়ে দিলে—তখনই নিচে পড়ে থাকা আমি
তোমার কাছে 'আমি' প্রতিভাত হয়ে উঠল।
তুমি তা কুড়িয়ে নেওয়ার জন্য ঝুঁকেও ছিলে-
কিন্তু কিছু একটা ভেবে ওখানেই ছেড়ে দিলে।
আমি এভাবেই তোমাকে পেলাম।
আমার স্মৃতি-খপ্পরগুলিকে তুমি অপরাধী করে তুলেছ-আর তার সুদ বাড়িয়ে আমার থেকে উসুল করেছ পীড়া। তখনই আমি বলে উঠেছি
আগামী জীবনে। আমি এমনভাবে হেসে যাব যেভাবে
সন্ধ্যার জলে ডুবতে থাকা পাহাড় বিষাদ-ভূমিকায় হেসে ওঠে।
আমার কবিতা তুমি নিজেই প্রশংসা করেছিলে-
আসলে তাতে তুমি নিজের কথাগুলো শুনিয়ে যাচ্ছিলে।
তুমি আমাকে যে রং-এ রাঙিয়েছ, আমি সেই রং
আর যখন তা ফুটে ওঠেনি তুমি তা জ্বালিয়ে দিয়েছ।
সেই দাউদাউ তুমিই প্রত্যক্ষ করে যাও।
এ ঘটনও আমার ভালো লাগা ছুঁয়ে থাকে।
একটি সুগন্ধি যা আমার পলকে ইশারার মতো আটকে থাকে, যা তোমার নামের ছোট্ট এক বানান,
এক ছোট্টছোঁয়া প্রেম,তির্যক বানান।
আহ্, তোমার দাঁতে দূর্বাঘাসের ছোট্ট শীর্ষ
সেই পিকনিকে যা চিপকে ছিল
আজ পর্যন্ত আমার ঘুমে দুলে ওঠে।
যদি আমি ঈর্ষা টোনে কিছু হয়ে উঠতে চাইতাম
তবে বারবার, প্রতিটি ঘন্টায় এক একটি জন্ম নিতাম
কিন্তু আমি তো এই শরীরমাত্রায় অমর-
তোমারই ইচ্ছাধীনে।
বহু তীর বহু নৌকা, বহু পার এদিকে উড়তে উড়তে এলো, ঘুরে ঘুরে পেরিয়েও গেল আমাকে নিয়ে,
সব সমস্তকিছু।
তুমি ভেবেছিলে তুমিও আছো। না, না, না।
সেই যাত্রায় কেউ ছিল না। শুধুমাত্র ঘটিত কিছু
দুর্ঘটনা ও ঘটনার উদাস রংমোড়া ছিল কিছু। আর কিছু না।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।