মাস কয়েক আগে একটি ম্যাচ দেখছিলাম। খেলায় 'ভারতের' জেতার কোন সম্ভবনা ছিল না। ক্রিকেটীয় কারণে তো নাই। তবু যুযুধান, সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা দলটি জিতে গেল। এমন ঘটনা অতীতেও ঘটেছে। একে নিতান্ত মিরাক্যাল বলা যায়।
কলকাতা মানে পশ্চিমবঙ্গ আর পশ্চিমবঙ্গ মানে কলকাতা - এমন একটা ধারণা অনেকের আছে। বলা ভালো এর বাইরে কোন ধারণাই তাদের নেই। আর ফেসবুক নামক ম্যানিপুলেটেড পরিসরটি এধরণের ভাবনাকে আরও কৃত্রিমভাবে লালন করতে সহায়ক হয়। আমি যা দেখব, দেখতে চাই - শুধু সেটুকু দেখানো হবে। ২০১১ সালে ' পরিবর্তন' চাই শ্লোগান যখন উঠেছিল, তখনকার সময়টা বেশ মনে করতে পারি। গ্রাম- শহরে, আনাচে- কানাচে একটা চাপা ফিসফাস শুনতে পেতাম। আশাকরি সবাই শুনেছেন। যারা ক্ষমতার মোহে অন্ধ এবং আজও ক্ষমতাচ্যুতির ক্ষত ভুলতে পারেননি, তাদের কথা আলাদা। বর্তমানে হাজার হাজার কোটি টাকায় বিক্রি হওয়া গণতন্ত্রের চতুর্থস্তম্ভ অনেক বেশি আমাদের চারদিকে ভিজুয়াল থাকে। চাইলে বা না চাইলে দেখে ফেলি। অথচ এই পরিসরটা যতই চারদিকে কিলবিল করুক না কেন - এটা কোন জাগতিক জগৎ নয়৷ অপাতি মানুষের জন্য, অপাতি মানুষদের বানিয়ে তোলা জগৎ। অথচ পাতি মানুষের বা মানুষের দৈনন্দিন জাগতিক পরিসর হল আসল পরিসর। যেখানে এই বানিয়ে তোলা ঘটনাগুলোর, ছবিগুলোর যোগ বর কম।
কে চাল চুরি করল? কার কত শ্রীবৃদ্ধি হল? কে গোমূত্র পান করল? কে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামককে গুম করে দিল? কে বলতে গিয়ে চারটি বানান ভুল করল - পাতি মানুষের জাগতিক পরিসরে এর প্রভাব খুব একটা নেই। নিজের পাওনার কিছুটা ' ডোল' হিসেবে পেলেও তারা মোটামুটি সন্তুষ্ট। যদিও যে যত পায়, তার চাওয়া তত বেড়ে যায়। অপরদিকে, অপাতি মানুষ আর ইহ জাগতিকতার ওপরের কোন এক ভার্চুয়াল জগতের ঝলমলে পরিসরে উল্লিখিত বিষয়ের মতো হাজার বিষয় নিয়ে চর্চা- চর্যা চলে। অপরদিকে জাগতিক পরিসর এতটাই আসল সে কিন্তু এতটা সঙ্কট বোধ করেনা, যতটা তার উপরের পরিসরে থাকা লোকজন তাকে নিয়ে আতঙ্কিত।
শুশুনিয়া পাহাড়ের চারশমিটার ওপরের দোকানী থেকে সাধারণ হাটের মেছোনী সবাই জানে -'ও একটু অমন হয়' । ওটা হওয়ার জিনিস৷ আপনি - আমি সেটা নিয়ে যতই আতঙ্কিত বোধকরিনা কেন? কোটি টাকার মিডিয়া, বানিয়ে তোলা ফেসবুক আর কলকাতা কেন্দ্রীক অপাতি পরিসর যতই ভাবীদিনের গেরুয়াকরণের ছবি দেখে আমোদিত বা আতঙ্কিত বোধ করুক না কেন - পাতি মানুষের জাগতিক পরিসরে তার খুব একটা প্রভাব আছে বলে মনে হয়না। জাগতিক পরিসর কিন্তু সেই সঙ্কট বোধকরে না। তাদের সঙ্কট বোধ করানোর চেষ্টা উঁচুতলার এবং অপাতি পরিসর করে চলে। তাতে সহায়ক হয় মিডিয়া সহ অজাগতিক নানা বিষয়গুলো।
যে অপাতি পরিসর রামের আসন্ন আগমন অনুভব করে তুরীয় আনন্দ বোধকরছেন - জাগতিকতা কিন্তু কিন্তু তার অনুসারী নয়। পুনশ্চ এরপরও যদি পরাজাগতিকতা অক্রিকেটীয় কোন কারণের মতো জাগতিক হয়ে ওঠে, তাকে রাজনৈতিক কোন কারণ বলার কোন মানে হয়না। তা নিতান্ত মিরাক্যাল।
অপিচ, মিরাক্যাল ঘটার কোন লক্ষণ কোথাও দেখা যাচ্ছে না।
আপকে মুঁহ মেঁ ঘি-শক্কর। মানে ওই ফুল-চন্দন আরকি।
যে আসে আসুক বিজেপি যেন না আসে!
কিন্ত গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের গুন্ডামি, মনোনয়ন পত্র ভরতে না দেয়ার রাগ গ্রামাঞ্চলে একটা ফ্যাক্টর হবে মনে হয়।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের গুণ্ডামি সাধারণ ভোটারদের কাছে ফ্যাক্টর হলে সিপিএম চৌতিরিশ বছর থাকত?
অত লুঠপাট করেও ব্রিটিশ কি করে ২০০ বছর ছিল কে জানে!!
কিংবা গুজরাটে কি করে বিজেপি জিততেই থাকে? হাজার দুয়েক মৃতদেহ মানুষের কাছে কোন ইস্যুই নয়।
২০১৯-এর গুণ্ডাগার্দির ব্যাখ্যা বা জাস্টিফিকেশন কি ১৯৯৯ বা ২০০৯-এর ঘটনাক্রম দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়?
সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা দল জিতলে মিরাকল কেন হবে ? না থাকা দল বলতে চাইলেন ?
আরেকটা জায়গা স্পষ্ট নয়। বলছেন , গ্রামেগঞ্জে সোশাল মিডয়ার প্রভাব তেমন নেই,মিডিয়ার আছে। তো মিডিয়া কি গৈরিক ঝড়ের হাওয়া তুলচছে না ? নতুন ফ্রি তে চালু হওয়া বেশ কিছু চানেল একেবারে গৈরিকই। সেক্কষেত্রে ? হতে পারে ,ঝড়টা তাঁদের কৃত্রিমবভাবে তোৈরি ,কিন্তু তার প্রভাবভোটে পড়বে না ? তাহলে তো মিডিয়ার প্রভাবও নেই বলতে হয়।
সোমনাথ
একমাত্র ফ্যাক্টর বা প্রধান ফ্যাক্টর বলিনি তো, অনেকগুলো মিলে একটা ইমপ্যাক্ট। আর একেক সময়ে একেকটি প্রধান হয়। পঞ্চায়েত নিয়ে আবেগ ও ক্ষমতার স্থানীয় স্তম্ভ হিসেবে হিসেবে অনুভুতির জন্ম বামজমানায়।
এবার ধর্মীয় মেরুকরণ বড় ফ্যাক্টর মনে হয়।
পাইয়ের তোলা প্রশ্নগুলো আমারও।
আমি কী চাই সেটা অন্য প্রশ্ন, কিন্ত বিশ্লেষণ বিষয়ীনিরপেক্ষ হতে হবে।
2011 সালের মিডিয়া প্রপাগান্ডা সমান ভাবেই 2021 সে ফিরে এসেছে। Karma কথাটা অনেকে বলছেন।
' পাতি ' মানুষ, মোটামুটি পড়াশুনা করে graduate হয়ে সবজি নিয়ে রাস্তায় বসছে, মোবাইল রিচার্জ বা তেলেভাজা র দোকান খুলছে রোজ দেখছি। অনেকে স্টেশনারি বা মুদির দোকান দিয়েছিল। দোকান এত বেশি হয়ে গেছে যে বিক্রি বাট্টা হচ্ছে না তাই বিক্রি করে দিয়ে আবার অন্য কিছু করছে। এভাবে যতদিন না তার সামান্য পুঁজি নিঃশেষ হয়ে যাবে ছেলেটি এভাবেই চেষ্টা করে যাবে। শিক্ষিত 'পাতি ' যুবকটি কিন্তু দু টাকা চাল ডালের ভিক্ষাতে সন্তুষ্ট নয়। খেটে খাবো, মাথা উঁচু করে বাঁচবো এটা যদি সে বলে তাহলে তার এটা বেশি চাওয়া বলে মনে করি না।
রাইট! এই এক্সপেক্টেশনই আগে রাজ্যে ও কেন্দ্রে সরকার বদলেছে। এবারও পারে। ভবিষ্যতে আশাভঙ্গ হলে কেন্দ্রেরও ওই হাল হবে।
'যে যুবকটি গ্রেজুয়েট হয়েছে, সবজি বিক্রি করছে সেও ' পাতি' মানুষই। নিজস্ব মতামত তার তেমন একটা নেই। আর 'পাতি' গ্রেজুয়েটদের হাল কেমন কলেজে পড়াতে গিয়ে হাড়ে হাড়ে টেরটি পেয়েছি। যে আশাবাদ তার উপর আরোপ করাহয়, সেটা কতটা তার নিজস্ব আশা এটাই সংশয়ের।