কবিতা বিষয়ক কিছু বকবকম====================
১ ফরিদার কথা শুনে সমর সেনের কথা মনে পড়ল।
যখন খুব ভাল লিখছেন তখনই ওনার মনে হোল-- এসব কিস্যু হচ্ছে না। তাই কবিতা লেখা ছেড়ে দিলেন।
২ আমার কীরকম মনে হয় কবিতা আর সিনেমার মধ্যে একটা মিল আছে। সিনেমার তার দু'তিনটে আপাত সম্পর্কহীন শটের মাধ্যমে মন্তাজ গড়ে অন্য এক তৃতীয় পরিসরে আমাদের পৌঁছে দেয়।
ভাল কবিতাও তার আপাত তুচ্ছ বা আটপৌরে শব্দের কম্বিনেশন তৈরি করে এক তৃতীয় অর্থের বোধ করায়, প্রায় সিনেমার মন্তাজের মত। এর মাধ্যমে কবির নিজস্ব আকুতি সার্বজনীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অর্থাৎ কবিতা তার সৃষ্টির প্রাথমিক বিশেষ উপাদান নিয়ে শুরু হয়ে ক্রমশঃ নির্বিশেষ হওয়ার দিকে পাখা মেলে।
এই অন্য ভুবন নির্মাণ ভাল কবিতার বিশিষ্ট লক্ষণ বলে আমার ব্যক্তিগত মত।
উদাহরণঃ শঙ্খ ঘোষের থেকে।
বাবরের প্রার্থনায় "ধ্বংস কর যদি আমাকে ফিরে চাও'
আমার সন্ততি স্বপ্নে থাক'।
--পড়তে পড়তে আমরা ভুলে যাই বাবর/হুমায়ুঁ / মোগল সাম্রাজ্য।
পাঠক অনুভব করে এক পিতার বা সকল পিতৃহৃদয়ের সন্তানের হিতে আত্মবলিদানের কামনা।
তেমনই 'যমুনাবতী সরস্বতী ' লেখা হয়েছিল, আমার যতদূর মনে পড়ছে, বৌবাজারে রাস্তায় মহিলাদের প্রতিবাদ মিছিলে পুলিশের গুলিতে অমিয়া-প্রতিভা-গীতা-লতিকার মৃত্যুর শোক নিয়ে।
কিন্তু গোটা কবিতায় কোথায় ওঁরা?
কবিতা হয়ে গিয়েছে বাংলার প্রতিবাদী মেয়েদের পাশে দাঁড়ানোর ইস্তেহার এবং পুলিশ-প্রশাসনের দিকে আঙুল তোলার প্রতীক।
এভাবেই কবিতা পাঠককে অন্তরঙ্গ আলাপনের মাধ্যমে হাত ধরে এক মিথের বা স্বপ্নের বিশ্বে নিয়ে যায়।
রবীন্দ্রনাথের
"বীরের এ রক্তস্রোত, মাতার এ অশ্রুধারা
এর যত মূল্য সে কি ধরার ধূলায় হবে হারা?
স্বর্গ কি হবে না কেনা?
বিশ্বের ভাণ্ডারী
সে কি শুধিবে না ঋণ?
রাত্রির তপস্যা
সে কি আনিবে না দিন"?
এত ভালো প্রতিবাদী কবিতা, বিশেষ করে শেষ দুটো লাইন, অনায়াসে একটা জয় পরাজয়ের সামগ্রিক ছবির ইঙ্গিত করে।
তবে উনি ত রবি ঠাকুর বটেন!