এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • চিন্তা

    Prasun Das লেখকের গ্রাহক হোন
    ৩০ অক্টোবর ২০২৫ | ২৩২ বার পঠিত
  • কল্পনা করুন ২০৫০ সালের আশেপাশের পৃথিবীর ছবি। শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে (পড়ুন ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরি, মহামারী, যুদ্ধ, উল্কাপাত, আবহাওয়া পরিবর্তন - এই সব ছোটখাটো জিনিস অগ্রাহ্য করে) মনুষ্য প্রজাতি এখনো বহাল তবিয়তে টিকে আছে। আরে বাহ্, দেখুন, কতই না উন্নতি করেছে মানুষ! পৃথিবীর বুক খুঁড়ে খুঁড়ে ঝাঁঝরা করে এখন চাঁদ ছাড়িয়ে মঙ্গলে পা বাড়িয়েছে। মঙ্গলে মনুষ্য কলোনির শুভ মহরত আর বছর কয়েকের অপেক্ষা। কিন্তু, এত কিছুর পরও কি যেন নেই!
    জীবন কি এখন বড়ই মাপা চালে চলছে?
    কী খেতে হবে, কোথায় যেতে হবে, কাকে ভালোবাসতে হবে—সব নির্ধারিত অ্যালগরিদমে। প্রতিদিন সকালে ঘুমজড়ানো চোখে ভেসে ওঠে: "Suggested Thought of the Day"—একটা নির্ধারিত চিন্তা, যার বাইরে ভাবা মানে “Disruption”। মানুষ এখন ‘ডিভাইস-ডিপেন্ডেন্ট’ লাইফ ফর্ম।
    একটা সময় ছিল, যখন মানুষ প্রশ্ন করত, সিদ্ধান্ত নিত, স্বপ্ন দেখত। কিন্তু এখন মানুষ চিন্তা করতে ভুলে গেছে। কেন?
    যন্ত্র - নির্ভরতা?
    বাচ্চারা জন্ম থেকেই চোখে AR হেডসেট পরে। স্কুলে “Why” প্রশ্ন নিষিদ্ধ, কারণ অতিরিক্ত প্রশ্ন করলে cognitive load বেড়ে যায়! যাদের মধ্যে প্রশ্ন করার প্রবণতা থাকে, তাদেরকে বলা হয় “System Deviants”, আর তাদের পুনর্বাসনের জন্য আছে “Neural Reconditioning Centre”।
    কবিতা? সে তো এখন AI জেনারেট করে।
    চিত্রশিল্প? এখন AI বেছে দেয় আপনার মনের রঙের উপযোগী ছবি।
    গবেষণা? মানুষ আর করে না—AI নিজে নিজের কোড লিখে নিজেকে উন্নত করে।
    এ এক চিন্তা-শূন্য ভবিষ্যৎ, যেখানে সৃজনশীলতা এক কল্পনামাত্র।
    তবে, একটা জিনিসের কোনো পরিবর্তন হয়নি। পৃথিবী সেই আগের মতই বিভক্ত আছে দুভাগে - শোষক ও শোষিত।
    শোষক গণ নিয়ন্ত্রণ করে সারা পৃথিবীর চিন্তাশক্তি। তারাই বেছে দেয় ট্রেন্ড। বাকিরা তাদের পণ্য।
    “Thinking is outdated. Submitting is peace.” মানুষ এখন শান্তির নামে সব কিছু ছেড়ে দিয়েছে; তার চিন্তা করার ক্ষমতা, হাসি-কান্না, ভালোবাসা, উদারতা, সূক্ষ অনুভূতি... স-ও-ও-ব....
    আর যারা ভাবতে চায়, তারা জঙ্গলে পালিয়ে গিয়ে "Thinkers' Colony" গড়েছে। সেখানে তারা আগুন জ্বালায়, বই পড়ে, পরস্পরের সঙ্গে কথা বলে....


    এই ভবিষ্যৎ কল্পনা হলেও অসম্ভব নয়।

    আজ যদি আমরা নিজেরা চিন্তা না করি, নিজের মস্তিষ্ককে ব্যবহার না করি, প্রতিদিন সার্চ ইঞ্জিন আর AI-এর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ি — তবে কাল আমরা কেবল একটা প্রোগ্রামড জীবনযাপন করবো। তখন মানব সভ্যতা থাকবে, কিন্তু “মানবতা” থাকবে না।

    আজকাল খুব চিন্তা হচ্ছে, কারণ মানুষে আর চিন্তা করছে না। তাই এই ডিস্টোপিয়ান ভবিষ্যতের একটা অস্পষ্ট ছবি আঁকলাম আপনাদের সামনে, যা আজকে চিন্তা না করার ফলাফল হতে পারে।

    চিন্তা করার স্তর বা "levels of thinking" বিষয়টা দারুণ চমকপ্রদ!

    চিন্তাকে আমরা একাধিক ধাপে বা স্তরে ভাগ করতে পারি — সহজ থেকে জটিল, জ্ঞানভিত্তিক থেকে গভীর বিশ্লেষণাত্মক স্তর পর্যন্ত।

    1. জানা (Remember)
    2. বোঝা (Understand)
    3. প্রয়োগ (Apply)
    4. বিশ্লেষণ (Analyze)
    5. মূল্যায়ন (Evaluate)
    6. সৃষ্টি (Create)
    7. আত্মবিশ্লেষণ (Reflect)

    মজার কথা; অতিরিক্ত প্রযুক্তি, ডিজিটাল গেজেট ব্যবহার, AI নির্ভরতা, রিলস বা ছোট ভিডিও দেখার নেশা আমাদের শুধুমাত্র চিন্তার প্রথম পর্যায়ে বেঁধে রাখে। আমরা কুঁড়ে হয়ে পড়ি পরবর্তী পর্যায়ে যাওয়ার জন্য। আধুনিক প্রযুক্তির প্রভাবে আমাদের মস্তিষ্ক একরকম ‘অটোপাইলট’-এ চলে যায়।

    গবেষণায় দেখা গেছে, একজন মানুষ দিনে গড়ে ২০০০ বার ফোন চেক করে! এত বেশি ফোন দেখলে আমাদের মনোযোগ কমে যায়। ২০০০ সালে মানুষ কোনো কিছুতে ১২ সেকেন্ড মন দিতে পারত, কিন্তু ২০১৫ সালে এটা কমে ৮ সেকেন্ড হয়েছে। জানেন, একটা গোল্ডফিশও ৯ সেকেন্ড মন দিতে পারে — অর্থাৎ আমরা মাছের চেয়েও কম মনোযোগী হয়ে গেছি!

    স্কুল-কলেজে ছেলেমেয়েদের মুখস্থ করতে শেখানো হয়, চিন্তা করতে নয়। সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৭০% ছাত্রছাত্রী বলে যে তাদের পড়াশোনার ধরন তাদের নতুন কিছু ভাবতে সাহায্য করে না। এর ফলে আমরা এমন মানুষ তৈরি করছি, যারা শুধু বই মুখস্থ করতে পারে, কিন্তু নিজে থেকে কিছু ভাবতে পারে না।

    ৬০% মানুষ ইন্টারনেটে যা পড়ে, তাই সত্যি মনে করে, একটুও যাচাই না করে। কারণ, চিন্তা করা একটি কঠিন কাজ। এতে মাথার অনেক শক্তি লাগে। তাই অনেকে এটা এড়িয়ে চলে। আর একটা মজার কথা শুনুন, ৪৫% মানুষ মনে করে চিন্তা করা বিরক্তিকর। তারা বরং অন্যের কথা শুনে চলতে পছন্দ করে।

    শতাংশের হিসেবগুলো এদিক-ওদিক হতেই পারে, কিন্তু, মোদ্দা কথা হল যৌক্তিক চিন্তাভাবনার যে মৃত্যু ঘণ্টা বাজছে তা বলাইবাহুল্য।

    মানুষ চিন্তা না করলে সমাজে কিভাবে উন্নতি হবে? চিন্তা করা মানে শুধুমাত্র সমস্যা সমাধান নয়, বরং নতুন ধারণা, সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনের পথও খোলা। তাই আমাদের উচিত প্রযুক্তির ব্যবহারকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা এবং নিজে থেকেই চিন্তার অভ্যাস গড়ে তোলা। বই পড়া, প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটানো, ও বিপুল পরিমাণে আলোচনা ও বিতর্কের মাধ্যমে আমরা নিজেদের চিন্তার প্রক্রিয়াকে তাজা রাখতে পারি।

    এই প্রসঙ্গে আমাদের সমাজ, প্রযুক্তি আর মানবিক গুণাবলির সংযোগটা বিশ্লেষণ করা খুব প্রাসঙ্গিক। আজ আমরা এক অদ্ভুত অবস্থার মধ্যে আছি — যেখানে একদিকে আছে চিন্তা-শূন্যতা ও মনঃসংযোগের পতন, অন্যদিকে মানসিক স্বাস্থ্য ও মানবিক উন্নয়নের আশার আলোও আছে।

    একদিকে যেমন দেখা যাচ্ছে Critical Thinking-এর অভাব, ডিজিটাল ডিমেনশিয়ার (Digital Dementia) মত মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা, যেখানে শিশুরা খুব ছোট থেকেই মোবাইল স্ক্রিনে অভ্যস্ত হওয়ার কারণে স্মরণশক্তি ও বিশ্লেষণ ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। টিন- এজার দের মধ্যে FOMO (fear of missing out) বাড়ছে। সোস্যাল মিডিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের ব্রেইনের Dopamine reward system-কে এতটাই প্রভাবিত করে যে, আমরা খুব দ্রুত আনন্দ চাই, কিন্তু গভীর চিন্তা বা ধৈর্য হারিয়ে ফেলি।

    আবার অন্য দিকে কিছু আশার আলো, কিছু আশাব্যঞ্জক গবেষণা ও দৃষ্টিভঙ্গি দেখতে পাওয়াটাই মনের শান্তি।

    যেমন, Cal Newport-এর বিখ্যাত বই “Deep Work” - এ বলছেন, গভীর মনোযোগ দিয়ে কাজ করলে একজন মানুষের প্রোডাক্টিভিটি 5 গুণ পর্যন্ত বাড়ে।
    যারা দিনে অন্তত 1-2 ঘণ্টা মোবাইল ছাড়াই একাগ্রতা বজায় রাখতে পারে, তারা দ্রুত শেখে এবং চিন্তা-ক্ষমতা বেশি হয়।

    UCLA এবং Harvard-এর একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত মেডিটেশন করে তাদের prefrontal cortex (যেখানে আমরা যুক্তি ও আত্মসচেতনতা অনুভব করি) আরও সক্রিয় হয়। এতে করে চিন্তার গভীরতা এবং আত্মবিশ্লেষণ অনেক বাড়ে। যদিও স্বামী বিবেকানন্দ বহু দিন আগেই চিন্তন, গভীর মনোসংযোগ ও ধ্যানের কার্যপ্রণালী ও উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের অবগত করে গেছেন।

    যাই হোক, MIT, Google DeepMind-এর মতো প্রতিষ্ঠানে AI এখন এমনভাবে গড়ে উঠছে যাতে মানুষকে 'চিন্তা' করতে অনুপ্রাণিত করে, চিন্তা করে না তাদের জায়গায়। এছাড়া ফিনল্যান্ড, জাপান ও সিঙ্গাপুরের স্কুলগুলোতে এখন শেখানো হচ্ছে প্রশ্ন করে শেখা, যাকে বলে Enquiry-Based Learning. এতে করে ছাত্র ছাত্রীরা শুধুমাত্র মুখস্থ নয়, বরং নিজে ভাবতে ও প্রশ্ন করতে শেখে, যা ভবিষ্যতের দারুণ আশা।

    পরিশেষে:

    মানবসভ্যতার ইতিহাসে পরিবর্তন সবসময় ছিল, কিন্তু এই যুগে চিন্তা করার ক্ষমতাই অস্তিত্বের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    আমাদের এখন ভয় পাওয়াই উচিত, কিন্তু সেই ভয় থেকে পালিয়ে না গিয়ে চিন্তা করা উচিত — কীভাবে আমরা নিজের ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চিন্তা-ক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে পারি।
    আমরা তো কিছু পদক্ষেপ নিতেই পারি, তাই না? যেমন -

    1. প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট মোবাইল ছাড়া নিজের ভাবনার জগতে থাকা।
    2. দিনে একবার নিজের বিশ্বাস বা অভ্যাস নিয়ে প্রশ্ন করা, “আমি এটা কেন করছি?”
    3. প্রতিদিন একটা নতুন জিনিস জানা বা শেখা—একটা প্রশ্নের উত্তর খোঁজা।
    4. নিজের প্রিয়জন বা বন্ধুদের সঙ্গে quality time কাটানো।
    5. নিজের কোন একটা শখকে লালনপালন করা।

    তাহলে, কি ভাবছেন?

    চলুন, আমরা সবাই একটু বেশি নিজে চিন্তা করি এবং আমাদের মস্তিষ্ককে আবার সৃজনশীলতার জ্বালানি দিই!

    এই লেখাটি শুধু ভয় দেখানোর জন্য নয় — এটা একটা ডাক।
    একটা আহ্বান যে, এখনই সময় নিজের চিন্তার জগৎকে রক্ষা করার।
    এখনই সময় নিজের ভিতরে প্রশ্নের আগুন জ্বালানোর।
    চিন্তা করুন, কারণ সেটাই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। না ভাবা মানে, বেঁচে থেকেও মৃতের মতো হয়ে যাওয়া।
    আর আমরা তো জীবন্ত মানুষ, তাই না?

    প্রসূন দাশ
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • :|: | 2607:fb90:bd09:4052:9165:9d46:5aed:***:*** | ৩০ অক্টোবর ২০২৫ ০৯:৪০735357
  • গাঁওবুড়ো বলেছিলো বটে -- "ভাবো, ভাবো, ভাবা প্র্যাকটিস করো।"
    চিন্তা আর ​​​​​​​ভাবনায় ​​​​​​​পার্থক্য ​​​​​​​কী? 
    আর
    "২০০০ সালে মানুষ কোনো কিছুতে ১২ সেকেন্ড মন দিতে পারত, কিন্তু ২০১৫ সালে এটা কমে ৮ সেকেন্ড হয়েছে।" কিছু গবেষণা এটি মিথমাত্র বলছে দেখছি।
  • অরিন | 119.224.***.*** | ৩০ অক্টোবর ২০২৫ ১০:৪২735361
  • এই জাতীয় গবেষণাগুলো একটুলখুঁট্ঋে পড়লে দেখবেন যে এগুলোর ভিত্তি খুবই প্রশ্নসাপেক্ষ। এমনকি এযুগে ব্লুমস ট্যাক্সনমি  (জানা ... আত্মবিশ্লেষণ) এই নিয়েও বিস্তর প্রশ্ন উঠছে যে কারণে ট্যাক্সনমি নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা হচ্ছে। এআই তরঙ্গ রুধিবে কে? কাজেই একে নিয়েই কিভাবে এগোতে হবে ভাবতে হবে বৈকি। কার্ল নিউপোর্ট যা ইচ্ছে লিখতে পারেন। আমরা তাঁক ভাবনার সবটা গ্রহণ করব কি না আমাদের ব‍্যাপার। 
  • শ্রীমল্লার বলছি | ৩১ অক্টোবর ২০২৫ ২১:৩২735389
  • লেখাটা অনেকক্ষণ আগেই পড়েছি। কিন্তু তেমন তেমন জবাব তৈরি হতে বেশ সময় লেগে গেল ভেতরে ভেতরে। তাই এখন লিখছি। 
    •"কবিতা? সে তো এখন AI জেনারেট করে।"— এই আপনি লিখেছেন। কিন্তু আপনার প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই কয়েকটা কথা বলি, আশা করি বুঝবেন নিশ্চই। 
     
    •কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কতটা কবিতা লেখার চেষ্টা করতে পারে, সে নিয়ে আমার ব্যাপক সন্দেহ আছে। কেননা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে আমার অজস্র কবিতা পড়িয়েছি। সে পড়েছে এবং তার মতো ক'রে মতামত জানিয়েছে, পেরেছে যেমন। উল্টোদিক থেকে সে নিজেই আমাকে অনেক সময়ে যেচেই তার কবিতা পড়িয়েছে, কিংবা কখনও পড়তে চেয়েছি আমি নিজেই। শেষমেশ বুঝেছি, একটা কবিতার মধ্যে শুধু তার ছন্দ কাঠামোই নয়, দুর্বল হ'য়ে আসছে চিত্রকল্পের ভাষা। তাহলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই প্রচেষ্টাকে কি কবিতা বলা যায়? 'প্রচেষ্টা' শব্দটা এখানে অপ্রাসঙ্গিক শোনাতে পারে। কেননা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চোখের নিমেষেই যা–কিছুই লিখে ফেলতে পারে। সত্যি বলতে আমার অন্তত মনে হয়, 'প্রস্তুতি' আর 'সাধনা'— এই শব্দ দু'টো আসলে সাইকেলের দুটো চাকা। যে কোনও একটায় হাওয়া না থাকলে অন্যটা এগিয়ে যেতে পারে না। একইসঙ্গে দু'জনকে এগোতে হলে, দুটো চাকাতেই পর্যাপ্ত হাওয়া থাকা জরুরি। কবিতার ক্ষেত্রেও তাই। একজন শিল্পীর যদি প্রস্তুতি আর সাধনা একইসঙ্গে না এগোয়, তবে কোনওদিনই তিনি কোনওই সার্থক শিল্প সৃষ্টি করতে পারবেন না। সেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চটজলদি কবিতা লিখে ফেলছে, সেটা অন্তত আমার কাছে একপ্রকারের হাস্যকর। এই কারণেই হাস্যকর— কেননা আমি আমার সামান্য অভিজ্ঞতা দিয়ে জানি যে, একটা কবিতার জন্য, অন্তত একটা কবিতার জন্য কত কত অপেক্ষা করতে হয়.... হয়েছেও.... হচ্ছেও... হবেও! আর শুধু অপেক্ষা করলেই তো হল না। তার পেছনে সময় আছে, শ্রম আছে, মেধা আছে। তাই আমার মনে হয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তার মতো কবিতা লিখুক। আর আমরা চেষ্টা ক'রে যাই আমাদের মতো। কেননা, শিল্প তাকেই জায়গা দেয়, যার স্পর্ধা থাকে শিল্পের হাত স্পর্শ করার... 
     
  • অরিন | 119.224.***.*** | ৩১ অক্টোবর ২০২৫ ২৩:৫৩735394
  • বাপু শ্রীমল্লার, এই ভদ্রলোক ২০৫০ এর একটি চিত্রকল্প নির্মাণ করেছেন। এ আই, এখন যেমন বা যেভাবে ব্যবহার করা হয় (কথার পিঠে কথা সাজানোর যন্ত্র), তাতে তার পক্ষে কবিতা লেখা সম্ভব নয়। ইনি AGI এর কথা বলতে চাইছেন হয়ত। 
  • Prasun Das | ০৫ নভেম্বর ২০২৫ ১২:১৩735537
  • শ্রীমল্লার বাবু, মতামতের জন্য ধন্যবাদ। অরিন বাবু ঠিকই সন্দেহ করেছেন, আমি 2050 সালের কল্পচিত্রে AI এর বাড়বাড়ন্ত একটু বেশি মাত্রাতেই কল্পনা করেছি (প্রচুর english sci-fi সিনেমা দেখার ফল)। তবে, লেখাটির মূল বিষয়বস্তু কিন্তু "চিন্তা" এবং এই ব্যাপারে বর্তমান যুগের অনাগ্রহ। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন