এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • অপ্রকাশিত সংলাপ - ১

    Manali Moulik লেখকের গ্রাহক হোন
    ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ২০৬ বার পঠিত
  • পর্ব ১ | পর্ব ২
    [ মানুষ লেখে কেন? খুব সহজে এর উত্তর হলো, যা বলতে পারা যায় না তার জন‍্যই লেখা। অর্থাৎ যা প্রকাশ করার প্রয়োজন, অথচ মাথার মধ‍্যে ক্রমাগত আবর্তিত হতে থাকা সেই সংলাপগুলি অন‍্য মাধ‍্যমে প্রকাশ করা যাচ্ছে না, তার জন‍্যই লেখা। কয়েকটি পর্বে তেমনই কিছু শব্দের জলছবির আয়োজন। চরিত্রদুটি নেহাতই মানবমনের দুটি দ্বিধাবিভক্ত অংশ। কল্পনার স্বার্থে যারা পুরুষ ও নারী। আলো ও তমিস্রা। আসলে কেউই তারা কোনো বাস্তবচরিত্র নয়। কিছু কথা ও প্রশ্নমালার নিরাবয়ব রূপকমাত্র।]
     
    তমিস্রা : আজ সকাল থেকে বৃষ্টি পড়ছে, দেখেছো আলো? যেন অবিরত ধারাপতনের সঙ্গে জলতরঙ্গের খেলায় মেতেছে প্রকৃতি! 
     
    আলো : হ‍্যাঁ।
     
    তমিস্রা : এমন সজলঘন মেঘময় দিনেই ভানুসিংহের পদাবলী যেন বড়ো সত‍্য হয়ে ধরা দেয়,
          গগন সঘন অব                তিমির মগনভব
       তড়িৎ চকিত অতি​​​​          ঘোর মেঘরব।।
        শাল - তাল তরু         সভয়ত বধ সব
                পন্থ বিজন অতি ঘোর।।​​​​​​
    কী হলো? কথা বলছো না কেন, আলো? 
     
    আলো : কিছু মনে কোরো না, এই বৃষ্টির প্রকৃতি, মেঘমেদুর আকাশতল দেখলে কতো কবিতা আমাদের মনে আসে। কতো রোমান্টিক  কল্পনা... আজকের খবরের কাগজটা দেখেছো? 
     
    তমিস্রা : রোজই তো দেখি। আজ বিশেষ কী আছে? 
     
    আলো : পথশিশুদের আর শিশুশ্রমিকদের উপর একটা সার্ভে করা হয়েছিলো। কতো মানুষ আজও এই প্রেমময় বৃষ্টিতে পথে পচছে, প্লাষ্টিকের আড়ালে নিজেকে বাঁচাচ্ছে তারই একটা ভয় ধরানো খতিয়ান। এরপরেও আমরা কোমল মুহূর্ত উদযাপন করবো,তমিস্রা? 
     
    তমিস্রা : আলো, কেবল পথশিশু নয়, বৃদ্ধ, শ্রমিক,ভবঘুরে,মানসিক ভারসাম‍্য ও গৃহহীন এমন কতো ভাগ‍্যহতই তো রয়েছে। যাদের নিয়ে এই সার্ভেগুলি পড়লে ভয় করে সত‍্যি। কিন্তু তাদের দায়িত্ব তো রাষ্ট্রের। আমরা সামান‍্য মানুষ ; কী করতে পারি? 
     
    আলো : হয়তো কিছুই নয়। তবু ভুলে যাওয়া কি উচিত যে তারাও আমাদের সহনাগরিক? 
     
    তমিস্রা : কখনোই নয়। আমরা বড়জোর কয়েকজনকে খাদ‍্য-বস্ত্র দান করতে পারি। কোনো চ‍্যারিটেবল-ট্রাস্ট থেকে সহায়তা করতে পারি। কিন্তু সবসময়ে এসব ভেবে নিজেদের মুহূর্তগুলি মাটি করে আমরা কী দায়িত্ব পালন করতে পারি?
     
    আলো : দ‍্যাখো, তোমার কি মাঝে মাঝে এমন ভেবে ভয় করে না, যদি নিজেকে ওই জায়গায় দ‍েখতে হয়? 
     
    তমিস্রা : করে আলো, করে। জানিনা, কেন এসব উৎকট সংশয় আর ভয় আমার মনে আসে।  যেন আমার পরিজন, মা বাবাকে হঠাৎ ডেকে ডেকে খুঁজে পাচ্ছি না, আমার চতুর্দিকে যা যা আছে সব একনিমেষে আঁধারে ঢেকে গেছে...আমি একা....কাউকে পাচ্ছি না...তখন হাত পা কাঁপতে থাকে ! আমি প্রতিক্ষণে চেষ্টা করি সবকিছুর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকার। কিন্তু কেন এই যন্ত্রণা? আমি কি অযথা বেশী ভাবি? 
    আলো : মায়াকোভস্কি লিখেছিলেন, 
     "আমার যা প্রতিষ্ঠা, তাতে জীবিত অবস্থাতেই আমার একটা মূর্তি স্থাপিত হতে পারতো। সেক্ষেত্রে আমিই সেটা বিস্ফোরণে উড়িয়ে দিতেম গুঁড়ো গুঁড়ো করে।"   শুনেছি, শ্রেষ্ঠ নাস্তিকেও নিজের ছবিতে থুথু ফেলতে ডরায়। আমরা নিজেকে যতোখানি ভালোবাসি, ততোটা যে আর কাউকে নয়।
     
    [তমিস্রা কাগজটা সরিয়ে রাখে ]
     
    তমিস্রা : আচ্ছা বলো তো, খবরের কাগজ কি সাহিত‍্য? 
    আলো : হঠাৎ এ প্রশ্ন? 
    তমিস্রা : আসলে নিত‍্যকার কারেন্ট অ‍্যাফেয়ার্সের সিলেবাস ছাড়াও খবরের কাগজ ছাড়া আমাদের চলে না। অথচ বই বা পত্রিকার কথাসাহিত‍্যও আমাদের চাই। কিন্তু এই খবর কি আদৌ সাহিত‍্য পদবাচ‍্য? 
    আলো : দ‍্যাখো, খবরের কাগজ নিত‍্যদিন একই ভঙ্গিতে রোজকার সত‍্য(?) রোজ পরিবেশনা করে। আর সাহিত‍্য চিরন্তন সত‍্যকে পরিবেশন করে নিত‍্যনতুন ভঙ্গিতে। তাই খবরের কাগজ হলো প্রতিদিনের, আর সাহিত‍্যটা চিরদিনের। কবি বোদলেয়ার কি সাধে একে ' lothsome appetizer' বলেছেন? 
     
    তমিস্রা : তাহলে বলছো সত‍্য পরিবেশনার ভঙ্গির পার্থক‍্যই নির্ধারণ করে দেয় খবরের কাগজ আর সাহিত‍্যের পৃথক ভবিষ‍্যৎ?
     
    আলো : কিছুটা তাই। সেজন‍্যই তো কিছুদিন পরে এই খবরের কাগজ হয় মুড়ির ঠোঙা, বৃষ্টিভেজা ঘরের ছাউনি, কাঠের জানালার পাশে ঠেকনা দিতে তিনপুরু খবরের কাগজ ঠুসে দেওয়া হয়। নিম্নবিত্ত বাড়িতে খাবারের টেবিলে খবরের কাগজ পাতে। এমনকী ট্রেনে-বাসে বমির সমস‍্যা থাকলেও লোকে খবরের কাগজ দিয়ে সামাল দেয়। সাহিত‍্যের এমন দুর্দশা হতেই পারে না।         (হাসি)
     
    তমিস্রা : আমার মামাবাড়ির অতি পুরোনো বারান্দাটার কথা তো তুমি জানো? 
     
    আলো : সে আর বলতে! দেড়শো বছরের অন্ধকার আর ঝুলজমা ওই ঝুলবারান্দায় বসে তুমি করতে টেস্ট পেপার সমাধান! তারপর গুচ্ছের গল্পের বই পড়া আর ভাবনাবিলাস তো বটেই !  বাই দ‍্য ওয়ে,  মৈত্রেয়ী দেবীর 'ন হন‍্যতে'  ওখানে বসেই শেষ করেছিলে না? 
     
    তমিস্রা : নিশ্চয়ই!  বারবার মনে হচ্ছিলো জানো, ঈস্, কেন যে মির্চাকে ওইভাবে চলে যেতে হলো! 
     
    আলো : আবার প্রসঙ্গান্তরে যাও কেন?  কী বলছিলে ওই বারান্দা নিয়ে বলো।
     
    তমিস্রা : শেষবার মামাবাড়ি গিয়ে দেখি বারান্দার এককোণে ছেঁড়া আর স‍্যাঁতস‍্যাঁতে ভিজে একটা খবরের কাগজ পড়ে আছে। তারিখ দেখিনি। উপরের খবরটা হলো, মানসিক ভারসাম‍্যহীন কিশোরীর নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপন। এসব তো কতোই থাকে রোজ রোজ। কিন্তু ওই ঠান্ডা হাওয়ার বিকেলে, সোঁদা গন্ধের প্রকৃতিতে ওই খবরটাই চোখে পড়তে আমার কী ভীষণ কান্না পেল...আমি..নিজেকে সামলাতে পারিনি, আলো। ভীষণ কেঁদেছিলাম একা একা। 
     
    আলো : ও। কিন্তু একটা কথা কি ভেবে দেখেছো, এই 'মানসিক ভারসাম‍্যহীন' বা 'অস্বাভাবিক' শব্দটির অর্থ কী? কী বোঝায় এটা বলতে ? 
     
     তমিস্রা  :    যার মানসিক গঠনে ত্রুটি রয়েছে বা স্বাভাবিকের মতো নয়। তাই তো?
     
    আলো : বেশ। তবে এবার বলো,  'স্বাভাবিক'  বলতে কী বোঝায়?  
            
                                                                        (চলবে)
                          
     
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    পর্ব ১ | পর্ব ২
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Manali Moulik | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১১:৪৫734358
  • স্কুলজীবন থেকেই। সেভাবে ধরলে ক্লাস ফাইভ-সিক্স থেকে আবোল-তাবোলগুলিকে ধরলে দশ-এগারো বছর।
  • শ্রীমল্লার বলছি | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৫:২৯734368
  • "আবোল-তাবোলগুলিকে" এর মানে বুঝলাম না। বুঝিয়ে দিও। 
     
    লেখার সঙ্গে থাকতে থাকতে একজন লেখক বুঝতে পারেন– কোনটা আসলেই লেখা, আর কোনটা নয়। এই যে লেখাটা পড়লাম তোমার, এরই কথাই বলছি– লেখাটার মধ্যে স্পিরিট আছে। যতটা দর্কার, ততটাই। কমও নেই, আবার বেশিও না। 
     
    ধন্যবাদ দিও না আমাকে। আমি সত্যিই অসম্ভব বিরক্ত বোধ করি, যখন কোনও লেখকের লেখা পড়ার পরে মন্তব্য করি এবং শেষে তিনি আমাকে ধন্যবাদ জানান! কারণটা বলি, "ছবির দেশে, কবিতার দেশে" প'ড়ে থাকবে নিশ্চয়ই। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় একজায়গায় লিখছেন: 
    "আমেরিকার মধ্য-পশ্চিমে আয়ওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরিজি সাহিত্য বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এই পল এঙ্গেল। তিনি অক্সফোর্ডে পি-এইচ ডি করেছেন এবং রোডস স্কলার, কিন্তু অধ্যাপনার চেয়েও কবিতার প্রতিই তাঁর বেশি ঝোঁক। তিনি কবিদের বিশ্বভ্রাতৃত্বে বিশ্বাসী, তাঁর ধারণা পৃথিবীর যে-কোনো প্রান্তেই যে যে কবিতা লেখে, তারা সবাই সবাইকার আত্মীয়।" 
     
    এই, "পৃথিবীর যে-কোনো প্রান্তেই যে যে কবিতা লেখে, তারা সবাই সবাইকার আত্মীয়।" আমি এটাকে এভাবেও দেখি, আমরা যারা লেখালেখির চেষ্টা করি(কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস আর যা যা কিছু), আমরা প্রত্যেকেই আত্মীয় পরস্পরের। সেই অর্থে, তুমিও আমার আত্মীয়। এমনকী, এই গুরুতে যারা যারা লেখে, তারাও আত্মীয় আমার। 
  • Manali Moulik | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৬:৩৮734372
  •  অবশ‍্যই। খুব সুন্দর বক্তব‍্যটি।
    আর কথাপ্রসঙ্গে বলি , 'আবোল-তাবোল'  বলতে ছোটোবেলা থেকেই আমার কিছু বিটকেল সমস‍্যা ছিলো। এখনো রয়েছে কতোগুলো। দু-একটা অর্থহীন কবিতা (তৎসম শব্দ নকল করে) লেখার চেষ্টা করতাম। এছাড়া, রাগ। ওই রাগের প্রেক্ষাপটেই কিছু ভুলভাল ছোটো-বড়ো গল্প লিখতাম। যেমন, একটি ধারাবাহিকে তথাকথিত 'নেগেটিভ'  চরিত্রটির কার্যক্রম দেখে আমার মনে হয়েছিলো ওকে ভুলভাবে উপস্থিত করা হয়েছে। ওর যুক্তিগুলো অসলে তীক্ষ্ম  ও ঠিক। উল্টে তথাকথিত 'পজিটিভ' চরিত্রটাই প্রবঞ্চক ও ন‍্যাকা-ন‍্যাকা লাগতো। একথা রেগে গিয়ে বড়োদের বলতে খুব একচোট বকাঝকা খেলাম! তো 'নেগেটিভ'-কে কেন্দ্রীয় চরিত্র বানিয়ে আমি একটা গল্প লিখেছিলাম যার ঘটনাগুলো এক হলেও পরিণতি ও চরিত্রের কাজগুলি আলাদা আলাদা। আসলে অধিকাংশ চিত্রায়ণ হয়ে থাকে বৃহত্তর মানসিকতা ও ব‍্যাবসায়িক স্বার্থকে মাথায় রেখে, সেসব তখন বুঝতাম না বলেই এসব লিখে সময় নষ্ট করতাম!  মানে যেখানে যুক্তিহীন লাগতো, সেগুলিতে আলাদা নাম দিয়ে আমার মতো রিমেক করতাম আর কী! সবই ছোটোবেলার পাগলামি !
  • শ্রীমল্লার বলছি | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৭:০৩734375
  • পাগলামি কিন্তু যাই বলো, সারাজীবনই থেকে যায়। নইলে আর সব ছেড়ে কবিতার পেছনে ছুটে বেড়াব কেন? আবার দ্যাখো, কেউ গল্পের পেছনে ছুটে বেড়াচ্ছে, গল্পকে ভালোবেসেই। সত্যি বলতে কী জানো তো, পাগলামি একটা নেশা। বয়েস যত বাড়ে, নেশার মাত্রাও ততই বাড়তে থাকে। 
  • Manali Moulik | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৭:০৬734377
  • তা যা বলেছেন। কিন্তু এরকম নেশাকে আশু নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। নাহলেই হয়েছে!
     
  • শ্রীমল্লার বলছি | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৭:২৭734378
  • কী আর বলি! এই মন্তব্য প'ড়ে বিচ্ছিরি একটা হাসি পেয়ে গেল! আর বলছি, আমাকে 'তুমি' সম্বোধন কর্তে পারো। সমবয়সী আমরা। হপ্তাখানেক আগে চায়ের দোকানে একটা বিচ্ছিরি কাণ্ড ঘটে গিয়েছে আমার সঙ্গে! আমি ছিলাম চায়ের দোকানের বেঞ্চে ব'সে। চা খাচ্ছিলাম। আমার সামনে দিয়ে একজন জেঠু এসে (বয়েস আন্দাজ ৬৬-৬৭) সিগারেট চাইলেন দোকানদারের কাছে। সিগারেট নিয়ে বেরোতে যাবেন, এমন সময়ে আমার পায়ের সঙ্গে ওঁর পা ঠেকে যায়। উনিই বুঝতে না পেরে আমার পায়ে ওঁর পা ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন। যাইহোক, আমি প্রণাম করার আগেই, আমার দু'পায়ে চট করে হাত ছুঁইয়ে নিমেষের মধ্যেই উনি প্রণাম ক'রে নিলেন আমাকে। আমার চোখ মুখ লাল হয়ে গিয়েছিল! তারপর শত চেষ্টা করেও ওঁকে প্রণাম কর্তে পারলাম না। নিলেন না। যাওয়ার আগে শুধু বোলে গেলেন,"আমিই বুঝতে না পেরে আপনার পায়ে পা ঠেকিয়ে দিয়েছি। আপনি তো আর আমার পায়ে পা ঠেকাননি। তাই হিসেব মতো, আমারই উচিত আপনাকে প্রণাম করা। সেটাই করেছি।"  
    শেষে ওঁকে অনুরোধ কর্লাম যে, প্রণাম যখন নিলেন না, তখন প্লিজ আমাকে 'তুমি' সম্বোধন করুন! আপনি আমার জেঠুর বয়েসীই হন। শেষে আমার কথা রাখলেন! 
     
    কী আর বলি... যেটা বলছিলাম, আমাকে 'তুমি' সম্বোধন কর্তে পারো। ঘটনাটা ভাগ ক'রে নিলাম... এমন ঘটনা বিরল...! 
  • Manali Moulik | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২০:২১734381
  • বেশ। ঠিকই বলেছো। তবে আজকাল এমন ঘটনা সত‍্যিই বিরল। তুমি ভাগ করে নিয়ে ভালোই করেছো।
  • kk | 2607:fb91:4c1f:77b8:c9f0:dec3:f32f:***:*** | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২০:২৪734382
  • মানালির এই নেগেটিভ চরিত্রকে কেন্দ্রীয় চরিত্র করে গল্প রিরাইট করা আর কোনো গল্প পছন্দ না হলে নিজের মত করে সাজিয়ে নিয়ে লেখা, এই জিনিষ দুটো আমার খুব ভালো লাগলো। এর মধ্যে পাগলামি বা যুক্তিহীণতার কিছু আমি খুঁজে পাইনা। যেকোনো ঘটনা, চরিত্র বা ধারণারই একাধিক দিক থাকে, একাধিক তল থাকে, মাত্রা থাকে। আপনি সেই অন্য দিকগুলোর দিকে দৃষ্টি ফেরাচ্ছেন এটা তো ভালো ব্যাপার।
  • Manali Moulik | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২১:৪৪734384
  • kk : হয়তো তাই। কিন্তু ওই যে, দৃষ্টিভঙ্গি তো সবার সমান হয় না। এছাড়া ছোটোবেলার বয়সের তুলনায় গল্পগুলো একটু বেশীই পাকামি হয়ে যেতো। মনে পড়ছে, 'জাগরণ' নামে একটা কী প্রোগ্রামে ছিলো, এক জমিদারের দুই স্ত্রী। বড়ো যিনি, তিনি সুন্দরী,সর্বংসহা ও লক্ষ্মীশ্রী। অন‍্যদিকে ছোটোবউ ঝগড়াটে ও 'অলক্ষণ'। এবার তখন স্বদেশী আন্দোলন চলছে। ওদের বাড়িতে থাকা একটি ছাত্র সেখানে যুক্ত, এবার তাকে বিভিন্নভাবে একঘরে করার চেষ্টা করছে এই 'কমপ্র‍্যাডোর' পরিবারটি। ছোটোবউ তাকে সাহায‍্য করছে। এটা নিয়ে ক‍্যাওস লেগেছে। আপাতদৃষ্টিতে খুবই হাস‍্যকর মেলোড্রামা। ওখানে সেই বউটিকে কেন্দ্রীয় চরিত্র করে 'জাগরণী' বলে একটা গল্প লিখেছিলাম। যেখানে ওরা সাফল‍্য পাচ্ছে। তো এইসব আর কী ! 
  • &/ | 151.14.***.*** | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০২:০৭734393
  • শরৎচন্দ্রের গল্প উপন্যাসের অধিকাংশই তো রিরাইট করতে ইচ্ছে করে। প্রায় সবেতেই সর্বংসহা, লক্ষ্মীমন্ত মহিলা চরিত্ররা নিজেরা আপ্রাণ খেটেখুটে বাউন্ডুলে পুরুষ চরিত্রগুলোকে খাওয়াচ্ছেন, যত্ন করছেন, অথচ নিজেরা আদৌ দুমুঠো খান কিনা সে কথা জানা যায় না। তৎ সত্ত্বেও সেই পুরুষ চরিত্ররাই বারে বারে অসুস্থ হয়ে পড়েন, আর সেই সর্বংসহা মহিলারা এসে যত্ন করে বাঁচান। এই জিনিস বারে বারে গল্পে উপন্যাসে দেখিয়ে গেছেন, গ্লোরিফাই করে গেছেন। খুবই ইয়ে লাগে এগুলো দেখলে। মনে হয় দিই সব বদলে একাকার করে। ঃ-)
  • Manali Moulik | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১১:১৭734398
  • মনের কথা বললেন অ‍্যান্ড/অর। শরৎচন্দ্রের ''দর্পচূর্ণ' বলে একটি ছোটোগল্প রয়েছে, সেটি পড়ে আমার নারীভাবনা ভালো লাগেনি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাহিত‍্যের 'নারীভাবনা' গুলি শ্লথছন্দজনিত বিলাপ ধরনের। অনেক জগৎপূজ‍্য ব‍্যক্তির নারীভাবনাসহ কিছু সমাজচিন্তনের ধারা আমার একেবারেই ভালো লাগে না। যাক, ' আমি' কোন্ হরিদাসী পাল, এসব আলোচনা হয়তো উচিত নয়।
  • &/ | 151.14.***.*** | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০২:১৯734421
  • উচিত, উচিত, খুবই উচিত। এইসব সর্বংসহা, এ তিথি ও তিথিতে উপবাসিনী, নানা সামাজিক কুসংস্কারের নিয়মনিষ্ঠায় ঘেরা মহিলা চরিত্রেরা স্লো পয়জনের মতন সমাজের নারীদের শক্তিকে আবদ্ধ করেছে, স্লথ করেছে, কারাবন্দী করেছে। মেয়েদের ক্ষুধাতৃষ্ণা থাকবে? ছি ছি ছিছি। তাঁরা তো সর্বসুকল্যাণী, স্বামীপুত্রপিতাভ্রাতাদের খাওয়াবেন আর নিজেরা এককুচি ভাত আর পাঁচফোটা ডাল খেয়ে থাকবেন, নানা তিথিতে নির্জলা উপোস করবেন। এইরকম একটা ছক মেয়েদের জন্য কেটে দিতে চেয়েছে এইসব লেখাগুলো। এইসব জিনিস জনপ্রিয় হয়েছে তার অর্থ হল লোকজন এইগুলো পছন্দ করেছে, প্রশ্ন তোলে নি। পাঠক সাধারণ এইসব জিনিস অ্যাক্সেপ্ট করেছে তার মানেই হল এইগুলোই প্রত্যাশা তাদের। এসবের বদলে তারা 'স্ত্রীর পত্র' এর মৃণাল বা 'চার অধ্যায়' এর এলা বা 'আনন্দমঠ'এর শান্তি বা 'মৃণালিনী'র গিরিজায়া বা 'রিমঝিম' এর প্রিয়ম্বদা --- এঁদের মতন শক্তসমর্থ, নিজের বিশ্বাসের ভূমির উপরে দাঁড়ানো চরিত্র চাইলে এইসব শরচ্চন্দ্রীয় পাত পেড়ে পাখা নেড়ে খেতে বসানো সাহিত্য রিজেক্টেড হত তখনই।
  • Manali Moulik | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১০:০৯734426
  • সত‍্যি কথা। কিছুক্ষেত্রে এটাও দেখা যায় প্রথমদিকে নিজের চিন্তনের উপর দাঁড়িয়ে থেকেও শেষে আবার চক্রাকারে নিয়মে বাঁধা নারীর মতো হয়ে ওঠে কেউ কেউ।  সে যাই হোক, স্ট্রাকচারের তুলনায় ব‍্যক্তি সফ্ট টার্গেট। তাই এখন মেয়েদের আজকাল কী কী অন‍্যায়, কেমন হওয়া উচিত এসব নিয়ে অযাচিত মন্তব‍্য কেউ করলে তাকে ট্রোল করা সোজা। কিন্তু সম্পূর্ণ সমাজের ধারণাটাই এগুলো তাঁকেও শিখিয়েছে, তিনিও একই জিনিস পরিবর্তে শেখাচ্ছেন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে প্রতিক্রিয়া দিন