এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • জিমি আর কলতান ১

    Anjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ১০ আগস্ট ২০২৪ | ২১০ বার পঠিত
  • | | | | | | | | | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩
    ( ১ )

    দ্বৈপায়ন ভট্টাচার্যের বোনের বিয়ে। সাড়ে নটা নাগাদ বুফে টেবলগুলোর ধারে ভালরকম ভিড় লেগে গেছে। নিমন্ত্রিত অতিথিদের খাদ্যগ্রহণের এটা হল ব্যস্ততম সময়। এই ঢেউটা চলবে আরও প্রায় একঘন্টা। দেখে মনে হচ্ছে অন্তত শ ছয়েক লোককে নেমন্তন্ন করেছে এরা। খাওয়ার হলটা তেমন প্রশস্ত নয়। ফলে বুফে কাউন্টারে গিয়ে বারংবার খাবার নেওয়া এবং ভোজন প্রক্রিয়া খুব মসৃনভাবে হচ্ছে না। সামান্য অনিচ্ছাকৃত ঘাড়ের কাছে মাথার গুঁতো, পেটের পাশে কনুইয়ের গুঁতো এসব অব্যহতভাবে চলতে থাকল। কি আর করা যাবে। স্বাচ্ছন্দ্যযুক্ত, মনোমত বাড়ি পাওয়া তো সহজ নয়। এখন যেরকম অবস্থা দাঁড়িয়েছে বিয়ে ঠিক হওয়ার আগে বিয়েবাড়ি ঠিক করে রাখতে হবে। মোটামুটি একবছর আগে বায়না নিশ্চিত করে রাখতে পারলে ভাল হয়।

    এক ভদ্রমহিলা খাবার জায়গা থেকে খানিক তফাতে গেটের একপাশে অভ্যাগতদের বসবার জন্য যে জায়গা করা হয়েছে সেখানে একটা চেয়ারে বসে ছিলেন। ভদ্রমহিলার বয়স পঁয়তাল্লিশের আশেপাশে হবে। খুব সাধারণ একরঙা একটা সূতির শাড়ি পরে আছেন। চোখের দৃষ্টিতে একটা অদ্ভুত বিষাদ ও ব্যাকুলতা। উনি খুব সম্ভবতঃ দ্বৈপায়নদের কোন প্রতিবেশী হবেন। কনের হাতে উপহার তুলে দিয়ে উনি এখানে এসে চুপচাপ বসে আছেন। ভদ্রমহিলার পাশে একজন সালোয়ার কুর্তা পরা কুড়ি একুশ বছরের মেয়ে চুপচাপ বসে আছে। চঞ্চল দৃষ্টিতে মাঝে মাঝে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।

    উল্টোদিকের সারিতে ভদ্রমহিলার ঠিক মুখোমুখি চেয়ারে এসে বসল কলতান। ভিড়টা একটু কমলে খাওয়ার জায়গায় যাবে। আজ খুব ব্যস্ত দিন ছিল। সারাদিন খুব পরিশ্রম গেছে। কিন্তু দ্বৈপায়ন তার ছোটবেলার বন্ধু। ওদের পাড়া বেশি দূরে নয়, লেবুবাগানে। তাই না এসে পারল না কলতান। এমনিতে সে ইদানীং কোন অনুষ্ঠান বাড়িতে যায় না বললেই হয়। একটু পরে খাওয়া দাওয়া সেরে যদি দ্বৈপায়নের দেখা পাওয়া যায়, একবার দেখা করে কেটে পড়বে।

    কলতান চেনাজানা লোকের সন্ধানে এদিক ওদিক নজর ঘোরাচ্ছিল। হঠাৎ তার দৃষ্টি আটকে গেল তার উল্টোদিকে বসা ভদ্রমহিলার মুখের দিকে। দেখল ভদ্রমহিলা স্থির দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছেন। কলতান তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে দেখে তিনি স্মিত হাসলেন। চেয়ার ছেড়ে উঠে কলতানের পাশের দিকে এসে দাঁড়ালেন।
    ----- ' নমস্কার ... আমি আপনাকে চিনি ... এম জি রোড কলেজ স্ট্রীট ক্রসিং-এ আপনার বাড়িও চিনি ... ' ভদ্রমহিলা বললেন।
    ----- ' ও আচ্ছা আচ্ছা .... নমস্কার ... ' কলতান দাঁড়িয়ে উঠে দুহাত জড়ো করে। ' .... বসুন বসুন ... '।
    ----- ' হ্যাঁ ... ঠিক আছে ... '
    ভদ্রমহিলা বসেন পাশের চেয়ারে। কলতানও বসে পড়ে। ওদিকে বসা তরুণীটি কলতান দের দিকে তাকিয়ে আছে। ' বলছি যে ... আমার একটু কথা ছিল ... যদি আপনার সময় হয় .... '
    ----- ' হ্যাঁ ...বলুন না ... '
    ----- ' না ... মানে ... এভাবে ঠিক বলা যাবে না ... যদি আমার বাড়িতে কাল একসময়ে আসেন ... কিংবা আমিও আপনার বাড়িতে যেতে পারি ...'
    কলতান বলল, ' তাহলে সকাল দশটা থেকে সাড়ে দশটার মধ্যে আমার বাড়িতে চলে আসুন। কোন সমস্যা হয়েছে ? '
    ----- ' হ্যাঁ ... সেটার জন্যই ... '
    ----- ' আচ্ছা ঠিক আছে .... আপনি কাল আসুন ... শুনি আগে ... '
    ----- ' অনেক ধন্যবাদ আপনাকে... এভাবে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ হয়ে হয়ে যাবে ভাবতেও পারিনি .... '
    সেই বহুব্যবহৃত প্রবচনটা কলতানের মনে পড়ল ----- ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে।
    বলল, ' আপনার নামটা যদি বলেন ... '
    ----- ' আমার নাম কাকলি ঠাকুর। ওই মেয়েটা আমার মেয়ে। ওর নাম স্বর্ণালি ... '
    ----- ' আচ্ছা আচ্ছা... ঠিক আছে, ঠিক আছে ... কাল দেখা হবে ... '
    কলতান উঠে পড়ে বুফে কাউন্টারের দিকে যাবার জন্য।

    পরের দিন সোয়া দশটা নাগাদ কাকলি ঠাকুর তাঁর মেয়ে স্বর্ণালিকে নিয়ে কলতানের কাছে হাজির হলেন।
    ------ ' আসুন আসুন ... বাড়ি চিনতে অসুবিধে হয়নি তো ? '
    ------ ' না না .... আপনার বাড়ি আমি আগেই চিনতাম ... '
    মা এবং মেয়ে দুজনে পাশাপাশি বসল একটা সোফায়।
    ----- ' হ্যা ... বলুন ... কোন সমস্যা হয়েছে কি ? ' কলতান বলে।
    ----- ' হ্যা .... সমস্যা মানে .... খুবই মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে আছি ... '
    ----- ' একটু খুলে বলুন .... '
    ----- ' আমার হাসব্যান্ড স্বর্গত হয়েছেন মাস তিনেক আগে। পুলিশ রিপোর্ট অনুযায়ী উনি অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছেন। ফরেনসিক রিপোর্টে অন্তত তাই বেরিয়েছে। কিন্তু কেন জানিনা আমার মনে হয় অ্যকসিডেন্টটা ঘটানো হয়েছিল। '
    ----- ' আপনি কি মনে করেন ওটা মার্ডার ছিল ?'
    ----- ' আমার নিশ্চিত ধারণা ওটা মার্ডার ছিল।'
    ---- ' উনি কি রাজনীতি করতেন ? '
    ----- ' রাজনীতির ধার কাছ দিয়ে যাননি কখনও। ওসব বুঝতেনই না। একটা প্রাইভেট ব্যাঙ্কে চাকরি করতেন। সাদামাটা জীবন আমাদের .... '
    ----- ' আপনার কি মনে হয় ... মার্ডারের কারণ কি হতে পারে ? '
    ----- ' অনেক ভেবেও কারণ কিছু বার করতে পারিনি আজ পর্যন্ত ... '
    ----- ' কাউকে সন্দেহ হয় আপনার ? '
    ----- ' খুনের কারণটাই যখন বুঝতে পারলাম না,তখন সন্দেহ করব কাকে ? '
    ----- ' আই সি .... অ্যকসিডেন্টটা কি ধরণের ছিল ? '
    ----- ' কার অ্যক্সিডেন্ট। '
    ----- ' গাড়ি কি উনি নিজে চালাচ্ছিলেন ?
    ----- ' হ্যা ... আমাদের একটা সেকেন্ড হ্যান্ড কার ছিল। কোন ড্রাইভার রাখা হয়নি। উনি নিজেই চালাতেন .... '
    ----- ' গাড়ির নাম্বারটা মনে আছে ? '
    ----- ' হ্যা ... ওই ... ডব্লিউ বি .... ওয়ান জিরো জিরো সিক্স। '
    ----- ' কি গাড়ি ছিল ? '
    ----- ' মারুতি জেন '
    ----- ' সে গাড়িটা এখন কোথায় ? '
    ----- ' ঠিক জানি না। শুনেছি পুলিশ সিজ করেছে। তাদের কাস্টডিতে আছে। '
    ----- ' কিভাবে অ্যক্সিডেন্টটা হয়েছিল ? '
    ----- ' অ্যক্সিডেন্টটা হয়েছিল হাওড়ায়, কোনা এক্সপ্রেস হাইওয়ের কাছে। একাই গাড়ি চালিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। একটা ট্রাক কদমতলার দিক থেকে এসে গাড়ির পাশের দিকে ধাক্কা মারে। যা শুনেছি ... একদম স্পট ডেড ....'
    ----- ' ট্রাকের ড্রাইভারের কি অবস্থা হয়েছিল ? সে কি বেঁচে ছিল ? '
    ----- ' শুনেছি সে বেঁচে গিয়েছিল এবং অ্যক্সিডেন্টটা হবার পর সে পালিয়ে যায় ‌। তাকে নাকি এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। '
    ----- ' স্ট্রেঞ্জ ! অত বড় একটা ক্র্যাশ .... একজন স্পট ডেড... আর একজন ধাক্কা টাক্কা মেরে দিব্যি পালিয়ে গেল ! '
    ----- ' এ..ই .... আমার সন্দেহটা ছিল ঠিক এখানেই .... '
    ----- ' ঘটনাটা কখন ঘটেছিল ... দিনে না রাত্রে ?
    ----- ' ভর দুপুরবেলায় ... একটা দেড়টা হবে তখন .... '
    কলতান আবার বলল, ' স্ট্রেঞ্জ ! ওই সময় তো কোনা এক্সপ্রেস রীতিমতো বিজি থাকে। পাশের দিকে এসে ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারালে একসঙ্গে অনেক গাড়িতে ধাক্কা লাগাটা স্বাভাবিক। শুধু একটা পার্টিকুলার গাড়িতে কিভাবে ধাক্কা লাগল তাই ভাবছি ... অবশ্য মেকানিকাল ব্রেক ডাউনে সব কিছুই সম্ভব। তাই এটাকে প্রাইম ইমপর্টান্স দিচ্ছি না ... সে যাক ... আপনি এখন কি চাইছেন আমার কাছে ? ও আচ্ছা ... অ্যক্সিডেন্টের ডেটটা মনে আছে ? '
    ----- ' হ্যা ... এই বছরের তেরই মে। আমি আপনাকে অনুরোধ করছি আমার স্বামীর প্রকৃত মৃত্যুরহস্যটা আপনি দিনের আলোয় আনুন। এটা যদি সত্যি অ্যক্সিডেন্টাল ডেথ হয় কিছু বলার নেই। কিন্তু যদি .... '
    ----- ' হ্যা ... বুঝতে পেরেছি .... কেসটা নিতে গেলে আরও কিছু জানার দরকার। আপনার বাড়িতেও একবার যাবার দরকার আছে ... '
    ----- ' তা বেশ তো .... বলুন কবে আসবেন ? '
    ----- ' কাল সকালের দিকে যাব। আপনি বাড়ির অ্যড্রেস আর আপনার মোবাইল নাম্বারটা দিয়ে যান। আচ্ছা ...ট্রাকটা পুলিশ সিজ করেছিল ?'
    ----- ' করেছিল বোধহয় .... '
    ----- ' কোন থানা কেসটা ডিল করছিল ? '
    ------ ' ওই তো ..... ওই হাওড়া .... মনে হয় ... '
    কলতান বুঝতে পারল তাকে খড়ের গাদায় ছুঁচ খুঁজতে হবে। এ ভদ্রমহিলা কোন কিছুই ভালভাবে জানেন না।
    কলতান কাকলি দেবীর মেয়ে স্বর্ণালীর দিকে সন্ধানী দৃষ্টি ফেলল। চোখমুখ এবং চেহারা রীতিমতো আকর্ষণীয়। সজীব সতেজ লাবণ্যময়ী দেহসৌষ্ঠব। উজ্জ্বল ফর্সা রঙের শরীর। বিষাদপ্রতিমা হয়ে আঙুলের ভিতর আঙ্গুল ঢুকিয়ে কোন গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে মাথা নীচু করে বসে আছে।

    কাকলিদেবীদের বাড়ি বহু পুরোণো। দোতলা বাড়ি। বাইরের গেট দিয়ে ঢুকে বেশ প্রশস্ত একটা চাতাল। তার তিনদিক ঘিরে নীল রঙ করা কাঠ এবং লোহার রেলিং-এর বারান্দা। বারান্দার পিছনে ঘর। এ অঞ্চলে এ ধরণের বাড়ি অনেক আছে।
    কলতান বলল, 'বাড়িটা নিশ্চয়ই আপনাদের অ্যনসেস্ট্রাল প্রপার্টি ... '
    মিসেস ঠাকুর বললেন, ' হ্যা .... আমার শ্বশুরের বাবা করেছিলেন ..... '
    ----- ' আপনার শ্বশুরমশাই বেঁচে আছেন ? '
    ----- ' না ... বছর পাঁচেক আগে মারা গেছেন।'
    ----- ' ও আচ্ছা ... এ বাড়িতে এখন কে কে থাকেন ? '
    ----- ' আমরা তিনজন থাকি ... '
    ----- ' দুজন তো আপনারা মা আর মেয়ে। আর একজন কে ? '
    ----- ' আর একজন আমার ছেলে জিমি ... '
    ---- ' আপনার ছেলেও আছে নাকি ? বয়েস কত ? '
    ----- ' এ.. ই চারবছরে পড়েছে .... দাঁড়ান ডাকছি ... ' বলে, জিমি ... জিমি ... বলে ডাকতে লাগলেন কাকলিদেবী।
    কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সিঁড়ি বেয়ে, বোধহয় ছাদের দিকে থেকে লেজ নাড়াতে নাড়াতে ঝটপট নেমে এল সোনালী মসৃন ঝালরের মতো পশমী লোমে ঢাকা সতেজ শরীরের একটা গোল্ডেন রিট্রিভার কুকুর। এসে স্বর্ণালীর পাশে গিয়ে বসে কলতানের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। বোধহয় কলতানকে অপরিচিত আগন্তুক দেখে জরিপ করে নিতে চাইছে। কলতান বুঝতে পারল কুকুরটা স্বর্ণালীর খুব ন্যাওটা। মুখ তুলে রইল ওর দিকে। স্বর্ণালী বাঁ দিকে মুখ ঘুরিয়ে ঘাড় নীচু করে জিমির মুখে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়াল।
    কাকলিদেবী বললেন, ' এই হচ্ছে আমার ছেলে। এ বাড়িতে আমরা এই তিনটিই প্রাণী .... '
    কলতান হেসে বলল, ' ও:হো .... দারুণ দারুণ .... ওয়ান্ডারফুল .... খুব ভাল ... '
    তারপর বলল, ' আপনার হাসব্যান্ডের নামটা নামটা জানা হয়নি... '
    ----- ' মনোময় ঠাকুর ‌ '
    ----- ' আচ্ছা আচ্ছা ... বাড়ির ছাদে একটু যাওয়া যাবে ? '
    ----- ' হ্যা নিশ্চয়ই, চলুন .... '
    কাকলির সঙ্গে কলতান ছাদে উঠল। পিছন পিছন স্বর্ণালী এবং তার সঙ্গে সঙ্গে জিমি।
    ছাদটা আয়তাকার। একদিকে আলসের ধারে দাঁড়ালে নীচে আমহার্স্ট স্ট্রীট বা রাজা রামমোহন সরণী। পিছনে খানিকটা জায়গা ছেড়ে আর একটা এই ধরণেরই বাড়ি। আর দুপাশে দুটো বাড়ির ছাদের সঙ্গে এ বাড়ির ছাদের ফাঁক এতই কম যে দৈহিকভাবে সক্ষম যে কোন মানুষ এ ছাদ ও ছাদ করতে পারে। ছাদের একপাশে অ্যসবেস্টসের শেড দেওয়া একটা কাঠের নীচু ঘর রয়েছে। ওটা দেখিয়ে কলতান কাকলিকে বলল, ' এটা নিশ্চয়ই জিমির প্রাইভেট চেম্বার ? '
    ----- ' হ্যা.... রাত্তিরে এখানে থাকে। সারাদিন তো ছাড়াই থাকে। ও অবশ্য রাস্তায় বেরোয় না কখনও ... '
    ----- ' হমম্ ... '
    ওরা সবাই নীচে চলে এল। কলতান বলল, ' মনোময়বাবুর ব্যাঙ্কের অ্যড্রেসটা দেবেন .... আপনার মেয়ে এখন কি করছে ? '
    স্বর্ণালী নিজেই বলল, ' বোটানিতে অনার্স ... সেকেন্ড ইয়ার ... আশুতোষ কলেজে .... '
    ----- ' আচ্ছা আচ্ছা, ভাল ... '
    ----- ' তোমার মোবাইল নাম্বারটা দাও। মিসেস ঠাকুর আপনার নাম্বার তো দিয়েছেন ... এগুলো লাগবে। এ বাড়ির নাম্বারটা কত যেন .... '
    ----- ' একশ তেইশ বি .... '
    ----- ' ঠিক আছে। হ্যাঁ সেদিন দিয়েছেন ... ' কলতান মোবাইল ঘাঁটতে ঘাঁটতে বলে।
    ----- ' ব্যাঙ্কে মনোময়বাবুর ইনটিমেট কোন কলিগের নাম বলতে পারবেন ? '
    ----- ' হ্যা ... পার্থসারথি অধিকারী। ওদের মধ্যে খুব ইন্টিমেসি ছিল। পার্থবাবু আমাদের বাড়িতেও অনেকবার এসেছেন। '
    ----- ' হমম্ .... '
    কলতানের মোবাইলে নোট হল সবকিছু।
    এবার হঠাৎ বলল, ' আচ্ছা জিমির স্নিফিং এবিলিটি কেমন ? '
    স্বর্ণালী উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে উঠল, ' এক্সট্রিমলি স্ট্রং স্যার.... এই যে আপনার কাছাকাছি আসল ... আপনার গন্ধ ওর ব্রেনে স্টোর হয়ে গেছে। যতদিন পরেই হোক এবং যে কোন জায়গা থেকেই হোক আপনার ব্যবহার করা যে কোন জিনিস ও ঠিক চিনে নেবে।
    ----- ' ইজ ইট ? '
    ----- ' ইয়েস স্যার ... '
    ----- ' ফ্যানটাস্টিক ! কখন কাজে লেগে যায় বলা যায় না ... '
    ----- ' কি স্যার ? '
    ----- ' না .... এমনি বললাম আর কি। আচ্ছা এখন তা'লে আসি .... সময়মতো যোগাযোগ করে নেব আপনাদের সঙ্গে .... দরকার হলে ফোন করবেন। আসি তাহলে ... '
    যেতে গিয়েও একবার ঘুরে দাঁড়াল কলতান।
    ----- ' আচ্ছা ... একটা কথা জিজ্ঞেস করা হয়নি.... '
    কাকলি বললেন, ' হ্যা বলুন .... '
    ----- ' মনোময়বাবু মারা যাবার পর আপনারা বডি পেয়েছিলেন ? '
    ---- ' না, মানে ... আমরা বডি দেখার সুযোগ পাইনি.... ওই ব্যাঙ্কের লোকেরাই বডি কালেক্ট করে নিমতলা ঘাটে নিয়ে গিয়ে দাহকার্য করে। মৃতদেহ বাড়িতে নিয়ে এসেছিল, কিন্তু ওই দলা পাকানো দেহ নিজের চোখে দেখার মতো মানসিক অবস্থা সেই মুহুর্তে ছিল না আমাদের।
    এমনকি পার্থবাবুও বলেছিলেন যে বডি দেখে মনোময়ের বডি বলে ঠিকমতো চিনতে পারেননি .... '
    ----- ' কোন পোস্ট মর্টেম হয়েছিল ? '
    ----- ' না.... ওসব কিছু হয়নি। পুলিশই ওকে হাওড়ার একটা হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং ওখান থেকেই ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া হয় বলে শুনেছি।'
    ----- ' শুনেছেন ... মানে, আপনি নিজের হাতে ডেথ সার্টিফিকেট রিসিভ করেননি ?
    ------ ' না.... সত্যি কথা বলতে .... তা করিনি। পার্থবাবু কালেক্ট করেছিলেন। পরে আমাকে দিয়ে যান .... '
    ------ ' ডেথ সার্টিফিকেটটা চাই আমার। দুদিন পরে ফেরত দিয়ে যাব ‌।'
    ----- ' হ্যাঁ..... দিচ্ছি। '
    ----- ' আর ...পার্থসারথিবাবুর ফোন নাম্বারটা দিন .... নিশ্চয়ই আছে আপনার কাছে ? '
    ----- ' হ্যাঁ আছে .... দিচ্ছি।'
    ----- 'আপনি কার ইনসিওরেন্সের টাকা পেয়েছেন ?'
    ---- ' না টাকা এখনও পাইনি। ক্লেম সাবমিট করা হয়েছে। '
    ----- ' ফর্মের রিসিভড কপিটা একটু দেখান তো .... '
    ----- ' না মানে ... ওটা আমার কাছে নেই। আমার দাদার কাছে আছে। '
    ----- ' নিজের দাদা ? '
    ----- ' হ্যাঁ .... নিশ্চয়ই। উজ্জ্বল দত্ত। কালিঘাটে থাকে। '
    ----- ' ওটা একটু আনিয়ে রাখবেন। দরকার আছে। আর আপনার দাদার ফোন নাম্বারটা দিন।'
    ----- ' আচ্ছা ঠিক আছে ... '
    ----- ' মনোময়বাবুর মোবাইলটা নিশ্চয়ই পাওয়া যায়নি ..... '
    ----- ' না: ... সেটা কি আর থাকে ... নিশ্চয়ই গুঁড়িয়ে গিয়েছিল .... '
    ----- ' হ্যাঁ... সেটাই স্বাভাবিক। ফোন নাম্বারটা বলুন ... '
    ----- ' হুঁ... একটু দাঁড়ান। কিন্তু ওটা কি এখন কোন কাজে লাগবে ? '
    ----- ' কিছুই বলা যায় না কখন কোনটা কাজে লেগে যায় ..... ' কলতান হাসতে হাসতে বলল।
    জিমি এসে কলতানের কাছ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে লেজ নাড়াতে লাগল। দু একবার হাঁটুর কাছে নাক ঠেকিয়ে ওর নিজস্ব কিছু পরীক্ষা নীরিক্ষা করল।
    ও বোধহয় বুঝতে পেরেছে কলতান স্বর্ণালীদের পারিবারিক বন্ধু হতে চলেছে।

    ( ক্রমশঃ)

    ************************************************************************************
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | | | | | | | | | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kk | 172.58.***.*** | ১০ আগস্ট ২০২৪ ০৯:২১536112
  • জিমিকে আমার খুব পছন্দ হয়ে গেলো। চলুক গল্পটা, পড়ছি।
  • Anjan Banerjee | ১০ আগস্ট ২০২৪ ১২:৩৭536123
  • ভাল ভাল
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন