মমতাশংকরের সাম্প্রতিক শাড়ী মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ওঠা ঢেউ এর সাপেক্ষে স্বগত চিন্তার লিখিত রূপ মাত্র
শরীর, শরীর তোমার মন নাই কুসুম? এই প্রশ্ন কুসুমদের চিরকালই করা হয়েছে? আর আজকাল আমরা বলি, শরীর শরীর তোমার মগজ নাই কুসুম? ( এই লাইনটা এক ফেসবুক বন্ধুর দেওয়াল থেকে নেওয়া। তাকে কৃতজ্ঞতা। ) অর্থাৎ শরীর বনাম মগজ। একটা বাইনারি।
মগজ বলতে অবশ্য শুধু মাথার ভিতরের খানিকটা ‘বায়লজিক্যাল মাস’ নয়। মগজ মানে নিরন্তর চর্চার ফলে ক্রমঃ বিকশিত বোধ। এখানে এই নিরন্তর ( কখনও কখনও প্রজন্ম বাহিত) চর্চা কথাটা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই চর্চা কিন্তু শুধু স্কুল কলেজের বিদ্যাচর্চা নয়। চর্চা মানে হল আজন্ম পরিবার ও পরিবেশ থেকে পাওয়া অজস্র স্টিমুল্যান্ট যা আমাদের মাথা ঘামাতে, প্রত্যক্ষ পরোক্ষ শিক্ষায় সাহায্য করে।
প্রতিটা সময়ের কিছু মেগা ট্রেন্ড থাকে। মোটামুটি ভাবে বলা যায়, সংখ্যাগুরুর aspiration সেই ট্রেন্ডসমূহকে নির্দেশ করে। এর ব্যতিক্রম থাকতেই পারে, তবে সেটা সংখ্যালঘু। তাই বললাম, মোটামুটিভাবে। আজকের বাংলার সেই মেগা ট্রেন্ডের একটা হল মুখ্যত মগজজীবি হওয়া। এ আমাদের কলোনিয়ান উত্তরাধিকার, নাকি অন্য কিছু সেও বিতর্কের বিষয় অবশ্য। সে প্রসঙ্গ আপাতত ধামাচাপা দেওয়া থাক। এদিকে বাইনারির সমস্যা হল, সে শুধু বাইনারি তৈরি করেই চুপ করে থাকে না, বাইনারির একটিকে উপরে তোলে অন্যটিকে নিচে ঠেলে। সেই একই সূত্র ধরে মগজজীবি হওয়ার স্বপ্ন লালনের সঙ্গে জড়িয়ে যায় শরীরজীবি হওয়াটাকে খাটো নজরে দেখা।
কিন্তু মগজজীবি হওয়ার স্বপ্নটা কেবল শুরুর স্বপ্ন। যে মানুষটা আজ অনেক কষ্টে শরীরজীবি থেকে ( যাকে গোদা বাংলায় বলে “গতর খাটিয়ে খাওয়া”) থেকে মসীজীবি হল, সে আসলে নিজের অজান্তেই একটা ট্র্যাপে পড়ল। কারণ সে আদতে একটা পিরামিডের সবথেকে নিচের ধাপে পা রাখল। বস্তুত সে জানে না যে পিরামিডের মাথায় যারা আছেন বলে ভাবেন, তাঁদের কাছে সে গ্রহণযোগ্যই নয়। বেরাদরি তো দূরের কথা। এ সম্পর্কের দূরত্ব ব্রাহ্মণ-শূদ্র বা আশরাফ-আতরাফ তুল্য বললে হয়ত ভুল হবে, কিন্তু সম্পর্কের দূরত্ব যদি পরিমাপযোগ্য হত তাহলে যে কি বেরোত কে জানে!
আমরা যারা মধ্যবিত্ত, আমরা যারা বইপত্র পড়ি, অবসর সময়ে ওয়েবজাইনের পাতায় বিনোদন খুঁজি, আমরা সকলেই জ্ঞানে- অজ্ঞানে ওই পিরামিডের কোন না কোন স্তরের বাসিন্দা। আমরা বিশ্বাস করি যে মগজের বিকাশে, মগজের উৎকর্ষতায়। এমনিতে কোন সমস্যা ছিল না। প্রতিটি মানুষই নিজের নিজের পরিবেশ-পরিস্থিতি-অভিজ্ঞতা -ভাবনা-অনুভূতি সঞ্জাত বিশ্বাসে দিন চালাবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ওই মগজের প্রাধান্যের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের প্রতি একটা তাচ্ছিল্যও মাথায় খুঁটি গাড়ে। এই তাচ্ছিল্য কি আদতে কোন এক পূর্বপুরুষের উপরে ওঠার aspiration এর কারণে ফেলে আসা স্তরের প্রতি তাচ্ছিল্যের ধারণার প্রজন্মগত উত্তরাধিকার? হতে পারে। তবে মোটামুটিভাবে নিজেদের মানসিক নির্মাণে আমরা ওই মগজজীবি-নয় যে মানবগোষ্ঠী, তাদের এই পিরামিডের তলার পাদদানি বলে ভাবতেই ভালবাসি।
আমাদের কাছে ওই পিরামিডের মাথাটাই একমাত্র লক্ষ্য। যদিও খুব কম জনই সেখান অবধি পৌঁছান। তবু ধাপে ধাপে ওই পিরামিডের মাথায় চড়াই আমাদের বড় হওয়ার লক্ষ্মণ। যাকে বলে ‘ইন্ডিভিজুয়াল গ্রোথ’। আর এও আমাদের অনেকের বিশ্বাস যে জীবন মানেই বাড়া, বাড়ের বন্ধ মানেই আসলে ক্ষয়ে যাওয়া। আর এইখানেই মগজ হয়ে ওঠে আধিপত্যবাদের প্রতীক। কাস্তেতে শান দেওয়ার বদলে মগজে শান দেওয়া হয়, প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম। বহুর থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলার তাগিদে। সমষ্টির থেকে মুষ্টিতে গমন।
মেয়েদের ক্ষেত্রে, এই ধারার সঙ্গে পরতে পরতে জুড়ে যায় লিঙ্গনির্মাণও। মধ্যবিত্ত বাড়ির মেয়েদের সোশ্যালাইজেশন প্রক্রিয়ায় যৌন শুদ্ধতার উপর অপরিমেয় গুরুত্ব দেওয়ার কারণে শরীর ঘিরে তৈরি হওয়া এক প্রজন্ম বাহিত পাপবোধ। ওই পাপবোধও অনেকাংশেই হয়ত ভিক্টোরিয়ান নীতিবোধের উত্তরাধিকার। কিন্তু হয়ত একথা বললে খুব জেনেরালাইজেশন-গত ভুল করা হবে না যে আজকের মধ্যবিত্ত বাড়ির মেয়েদের চরিত্রগঠনের একটা বিল্ডিং ব্লক হল একটা কম বেশি ডিসগাইসড পাপবোধ। অনেকে যুক্তিবুদ্ধি দিয়ে এর কম-বেশি কিছুটা অতিক্রম করতে পারেন, পুরো মুছে ফেলা যায় কি? শুধু মেয়েদের না, ছেলেদেরও শরীর নিয়েও অনেক রকম পাপ-পুণ্যের ভাল মন্দের ধারণা থাকে। আমাদের প্রত্যেকেরই আমিত্ব তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়া আসলে এই সব বিবিধ ও বিচিত্র ধারণার মধ্যে গ্রহণ-বর্জন নেগোসিয়েশনের ফল।
অথচ সমাজের প্রয়োজন সকল লিঙ্গ-শরীরকেই। কখনো প্রজননের জন্য। কখনো যৌন-আনন্দের জন্য। কখনো বা বিনোদনের কারণে। কাজেই তাকে ছাই ইরেজার দিয়ে মুছেও ফেলা যায় না। অথচ আমরা, মধ্যবিত্ত মেয়েরা যে ক্রমাগত শরীরকে পাপের উৎস বলে ভাবতে শিখেছি? এই দুয়ের মধ্যে একটা দিব্য শ্রেণীগত সমঝোতা হল মগজজীবিত্বের মারফৎও। সেটা আরেকরকম একটা শ্রেণির যারা ইতিমধ্যেই পিরামিডের উপরের দিকে বিরাজমান, তাদের আধিপত্য বজায় রাখার কলও বটে। কারণ কে না জানে বহু প্রজন্মের চর্চার ধার অনেকটাই বেশি। কমলহীরের ঝলক তো আর প্রথম প্রজন্মে সাধারণত আসে না। যে ধারণাটা ছড়িয়ে দেওয়া হল যে এই দেখ ছেলেরা তো মগজ দিয়েই যুদ্ধ জিতে নেয়, কাজেই সেটাই তোমারও লক্ষ্য হওয়া উচিৎ। শরীর ব্যবহার করে “খারাপ” মেয়েরা, যারা ছেলেদের সঙ্গে মগজের যুদ্ধে পিছিয়ে পড়ে তারা। তোমরা যদি জিততে চাও তো এসো সমানে সমানে খেলো। মগজে শান দাও। দেখবে একদিন তোমারও হবে। এইটাই আমরাও বেশ বুঝে নিলাম। আমরাও মগজ চর্চায় ব্যস্ত হলাম। শরীর শরীর তোমার মগজ নাই কুসুম? আইস আমরা দাম্পত্য ব্যতীত আর সকল ক্ষেত্রে উভয় লিঙ্গের মেলামেশার সম্ভাবনা সেগুলোকে যৌনতা মুক্ত করে গড়ি। বেশ ভাল কথা। আমরাও সেই টার্ম মেনে নিলাম।
এই সকলই একেকটি অবস্থান। এবং প্রত্যেক মানুষের নিজ নিজ অবস্থান বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা আছে। কিন্তু সমস্যা সেখানেই আসে যেখানে একটি অবস্থানের জোরে অন্য অবস্থানকে দমিয়ে দেওয়া হয়। মমতাশংকরের সাম্প্রতিক শাড়ী নিয়ে মন্তব্যের পরের সামাজিক বিতর্ক প্লাবনে যে বিবিধ ঢেউ দেখা যাচ্ছে তার মধ্যে একটা হল এই মগজজীবিতার গুণগান। এবং সেই প্রসঙ্গে দেহ প্রদর্শনের নিন্দা। অজস্র পোস্ট ভেসে উঠছে চারদিকে যে আজকের মেয়েরা লজ্জা, শালীনতা সব ভুলে যাচ্ছে। আর সেই সঙ্গে উঠে আসছে যে মেয়েরা শরীর দেখিয়ে অ্যাটেনশন কুড়োন তাদের প্রতি নিন্দাবাদ। যে যুক্তি উঠে আসছে যে ১) দেহ প্রদর্শন কুরুচিকর। ২) দেহ প্রদর্শন আসলে পিতৃতন্ত্রের ট্র্যাপে পা দেওয়া। ৩) দেহ প্রদর্শন হল নিম্নস্তরের ব্যাপার। মগজের শক্তি আরও বেশি। ( প্রসঙ্গত মমতাশংকরের কথার বিশ্লেষণ এই এলোমেলো চিন্তার উদ্দেশ্য নয়। তাই সে প্রসঙ্গ উহ্য রইল। )
তৃতীয় বিষয়টি আগে ধরা যাক। সেই চিরাচরিত হাই-লো নির্মাণ। অথচ খতিয়ে দেখলে, এই হাই লো নির্মাণের মধ্যেও কি কোন পিতৃতান্ত্রিক দুরভিসন্ধি নেই? কর্মক্ষেত্র যৌনতা মুক্ত রাখার ডাক কি কোনভাবে একাধারে পুরুষের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের বক্তব্যকে আরও মান্যতা দেয় না? আর সেই সঙ্গে পিতৃতন্ত্রের প্রিয়তম বিষয় মেয়েদের যৌন শুদ্ধতাকেও বজায় রাখে না? তাহলে এই যে মগজকে উপরে রাখতে চাওয়া, এও কি আদতে নারীবাদের ঘোমটার আড়ালে পিতৃতন্ত্রের ধ্বজা ওড়ানো?
দেহ প্রদর্শন করে মেয়েরা কার থেকে সুবিধা নেয়? একজন নারী যদি উচ্চাসনে থাকেন, দণ্ডমুন্ডের কর্তা হন সেখানেও কি মেয়েরা দেহ প্রদর্শন করেন? নাকি করেন না? সকল উচ্চতর স্থানে মেয়েদের বসিয়ে দিলেই কি সমস্যার সমাধান হবে? যদি দেশের সকল আর্থিক দায়ভার মেয়েদের হাতে আসে, তাহলেও? তখনও কি আর মেয়েদের দেহ প্রদর্শনের দরকার হবে? আবার একজন পুরুষ যদি উচ্চাসনে বসেন, আর যদি তিনি দেহ প্রদর্শনে বা নারী-দেহের যৌনতায় মুগ্ধ হন, আর সেই কর্মস্থলে দুটি মেয়ের মধ্যে একজন যদি যৌনতার মাধ্যমে এগিয়ে যায়, অপারগ প্রথমা আদৌ দ্বিতীয়াকে দোষারোপ করেন কেন? কেন কেবলমাত্র পুরুষটিই খেলার নিয়ম বদলে দেওয়ার জন্য কাঠগড়ায় দাঁড়াবে না? উচ্চতর পদে থাকার জন্য কর্মস্থলের নিয়ম মেনে চলার দায়িত্ব তো তারই অধিক? বিনোদনের জগতের যে আজকালকার মেয়েদের উপর শরীর দেখানোর দায় চেপেছে, সে শরীরের ভোক্তা কে? শুধু যদি পুরুষ হন, তো তাঁদের বিরুদ্ধে আইন করা যাচ্ছে না? নাকি সে ক্ষমতা নেই বলে মেয়েদেরই খারাপ মেয়ে বলে দাগিয়ে দেওয়া? আর যদি মেয়েরাও সেই বিনোদনের দর্শক হন, তাহলে কি কোথাও হিসেবের গোলমাল হচ্ছে?
আর এই যে একটা কোন পরিস্থিতিতে একজন মেয়ে নিজস্ব নীতিবোধের কারণে পরিস্থিতির সুযোগ নিতে পারছেন না, অন্য মেয়েটি তার তুলনায় অন্যরকম নীতিবোধের কারণে সেই সুযোগ খপাৎ করে আঁকড়ে ধরতে পারছে, এর থেকে এটাও কি বোঝা যায় না যে প্রথমজনের নীতিবোধ যে রুলবুক মেনে তৈরি হয়েছে, সেটাই দুনিয়ার একমাত্র সত্য নয়? দ্বিতীয়জনকে শরীরপ্রবণ বলে গালি দিলে প্রথমার কিঞ্চিৎ গাত্রদাহ কম হতেই পারে, বা তাঁর আহত ইগো নিজের নীতি বোধকে উন্নততর ভেবে আনন্দ পেতেই পারে, কিন্তু তাতেও বিভিন্নতার ব্যাপারটার এবং পরিস্থিতির ফলাফল কোনটারই কোন তারতম্য ঘটে না। আর এই ভাবে ফলাফলের বিভিন্নতার জন্য গালি দিলে তো যৌনতা ছাড়াও আরও কত কত তুই না মুই কারণ খুঁজে পাওয়া যাবে। বরং ভেবে দেখব কি এই নীতিবোধ বস্তুত কিসের থেকে তৈরি হয়েছে? যৌন শুদ্ধতা কি সত্যিই কারোর নিরপেক্ষ চয়েজ নাকি সেও বহু শতাব্দীর সযত্ন নির্মাণ?
প্রসঙ্গত একথা ভাবার কোন কারণ নেই যে দ্বিতীয়া প্রবল নারীবাদী চেতনার দ্বারা চালিত হয়েই যৌনতার দ্বারা কাজ উদ্ধার করেছে। সেও হয়ত শুধুই সুবিধাটুকু, মেটেরিয়ালিস্টিক পাওনা গন্ডাটুকুই বুঝেছে। কিন্তু তাতেই যদি প্রথমা তাকে পিতৃতন্ত্রের অনুসারী বলে দাগিয়ে দেয়, প্রথমার অবস্থানই কি একমাত্র শুদ্ধ নারীবাদ? নাকি নারীবাদের ছাতার তলায় আরও বিভিন্ন ধারাও সম্ভব?
রুচি ব্যাপারটা একান্তই ব্যক্তিগত। রুচি নির্মাণের আনাটমি অতি জটিল। আইডেন্টিটি নির্মানের তুল্যই বলা যায় এক বিভিন্ন প্যারামিটারের ইন্টারসেকশন। জাত ধর্ম ইত্যাদি চিরাচরিত প্যারামিটারের সঙ্গে অতিরিক্ত জোড়ে স্থান-কালের বহুমাত্রিক অবস্থান। সেই সঙ্গে রুচি প্রবল পরিবর্তনশীল। সে জটিলতায় ঢুকে কাজ নেই। তবে একজনের নিজের রুচি যাই হোক না কেন, তাই দিয়ে তিনি শুধু নিজেকেই কন্ট্রোল করতে পারেন, নিজের চারপাশকে সেই রুচি দিয়ে ইনফ্লুয়েন্স করতে চেষ্টা করতে পারেন মাত্র, কে কতটা নেবে তা অবশ্যই তাদের ব্যাপার, কেউ না নিলে মন খারাপও লাগতে পারে, আবার নিজের অপছন্দ জোর গলায় বলতেও পারেন, কিন্তু সেটা একান্তই ব্যক্তিগত অপছন্দ। এই ব্যক্তিগত কথাটা, আমার মতে, আন্ডারলাইন্ড। দুনিয়ার সবাইকে সেই দিয়ে কন্ট্রোল করার চেষ্টা বাতুলতা। তাই রুচির প্রশ্ন তুলে কাউকে খারাপ মেয়ে বলে দাগিয়ে দেওয়া কতটা ঠিক? (হ্যাঁ এইটাও একটা ব্যক্তিগত অবস্থান, যেটা অবশ্যই আরেকজনের অবস্থান নাও হতে পারে। সেটাও অন্যজনের স্বাধীনতা। )
পিতৃতন্ত্রের ট্র্যাপ কথাটা আরও গোলমেলে। দেহ দেখালেই যদি সেটা পিতৃতন্ত্রের ট্র্যাপ হয়, তাহলে দেহ না দেখানোই কি সঠিক নারীবাদের একমাত্র সংজ্ঞা? দেহ আছে তাকে কি আমরা অস্বীকার করতে পারি ? নাকি অন্দরমহলের বাইরের জগৎকে যৌনতা মুক্ত রাখতে চেয়ে আসলে আমরা পিতৃতন্ত্রের তৈরি রীতিকেই মান্যতা দিচ্ছি? আমাদের জন্মই হয়েছে পিতৃতন্ত্রের ভিতর, কাজেই আমাদের চেতনে- অবচেতনে আচরণেও কম বেশি তার ছাপ থাকবে সেটা বোধগম্য, কিন্তু নিজের অবস্থানের বিপরীতের যে কোন অবস্থানকেই পিতৃতান্ত্রিক ট্র্যাপ বলে দাগিয়ে দেওয়াটা কেমন ব্যাপার?
মনে হয় প্রতিটা সময়ই আসলে বিভিন্ন বিপরীতমুখী ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার সমারোহ। আর এসবই সেইসকল বিভিন্ন ভাবধারার মধ্যে সংঘর্ষের ফল। অবশ্যই এক্ষেত্রেও প্রতিটি ছোট ছোট বৃত্তেই যে দল সংখ্যাগুরু, তাদের মতামতই অধিকতর মান্যতা পাবে। আর তা সে যতই যৌক্তিক হোক বা অযৌক্তিক হোক। বস্তুত বাংলার অনেক মেয়ের কান অবধি কথাটা গিয়ে পৌছাবেই না,বা পৌঁছালেও তারা পাত্তাও দেবে না । নিজের নিজের মতেই চলবে। কোথাও কোন ফারাক পড়বে না। পড়া উচিৎ ও না। তবু বিতর্কে উঠে আসা বিভিন্ন বক্তব্যের উপর নিজস্ব বিশ্লেষণ লিপিবদ্ধ করে রাখার তাগিদেই কথা কটা লিখে রাখা।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।