এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • আমার না মানুষী সহবাসীরা 

    Somnath mukhopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৩ জানুয়ারি ২০২৪ | ৬২৩ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  •   
     
    মাননীয় পাঠক, আপনি কি শহরতলির বাসিন্দা? আপনার বাড়িতে কি এক চিলতে জমি বা বাগান আছে? সেখানে আপনার যত্নে বা অযত্নে ডালপালা মেলে বেড়ে ওঠা ঝোপঝাড় আর গাছগাছালিও নিশ্চয়ই আছে? তাহলে আপনি অশেষ ভাগ্যবান। ভাবছেন, কেন বলছি এমন কথা, তাইতো? এমনটা যদি সত্যি হয়, জানবেন আপনি জীববিজ্ঞানের এক আশ্চর্য প্রয়োগশালার কর্মমুখর পর্যবেক্ষক তথা গবেষক। একখণ্ড জমি, গুটিকয়েক গাছ, একটু ভালোবাসা আর প্রবল অনুসন্ধিৎসা থাকলে আপনি খুব সহজেই এক অকল্পনীয় প্রাণময় জগতের খোঁজ পেয়ে যাবেন। 

    জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও পরিবর্ধনের জন্য  এতো আলোচনা, এতো বিধিনিয়ম জারি করার হয়তো কোনো প্রয়োজনই হয়না যদি আমরা সবাই আমাদের একান্ত প্রতিবেশ সম্পর্কে আরও একটু আন্তরিক হ‌ই। আমার বাড়ির লাগোয়া বাগানে প্রতিদিনের নানান কাজের ফাঁকে যে সব না-মানুষী সহবাসীদের আনন্দময় সঙ্গ, সাহচর্য লাভ করি, নিয়মিতভাবে তাদের কথা তুলে ধরার জন্য‌ই এই ধারাবাহিক নিবন্ধ -- আমার না-মানুষী সহবাসীরা। আজ তার পঞ্চম কিস্তি।
     
    ***এই পর্যায়ের আগের চার কিস্তি

    ----------------------------------------
     
    মিস্টার নকুলের সঙ্গে কিছুক্ষণ
     
    রাত অতিথি গন্ধগোকুল  
     
    আবর্জনার আঁজনাইরা 
     
    মাকড়শা : জাল বোনে আনন্দে
     
     
    *** গুরুচন্ডালির পাতায় পাতায় ছড়িয়ে আছে আমাদের না-মানুষী সহবাসীদের বিষয়ে কত জানা অজানা কথা। এইসব কথা নিজে পড়ুন ও আপনার পরিচিত মানুষজনের কাছে পৌঁছে দিন। কেমন লাগছে এমন একটি ধারাবাহিক রচনা সে সম্পর্কে নির্দ্ধিধায় লিখে জানান।
     
    (১)
     

     
    বাতাসের দিক বদলের সঙ্গে সঙ্গে অন্য এক নিভৃত সৃজনের তাগিদ যেন আমাকে ভেতর থেকে নাড়া দেয়। সারাবছর টুকটাক গাছপালা নিয়ে থাকি বলে সবাই যে খুব খাতির করে তাতো নয়,উল্টে ঘরে বাইরে গালমন্দ খেতে হয়। এইসব ঝড় -ঝাপ্টা,বাধা- বিপত্তি,বাদ-বিসম্বাদ একপাশে সরিয়ে শীতাগমে মনে পুষ্পিত যাপনের বাসনা জাগে। “জাগিয়া উঠিল প্রাণ’’ বলে লাফালে , ঝাঁপালে তো চলবেনা। তারজন্য‌ও চাই নিবিড় প্রস্তুতি। এই কথাগুলো লিখতে লিখতেই হঠাৎ গিরিশ জীর কথা মনে পড়ে গেল। ভাবছেন তো উনি আবার কিনি ? আরে বাবা,বলছি , বলছি ! এতো অধৈর্য্য হলে চলবে? আমাকে যে এবার গল্পের রশি ধরে অনেকটা সময় পিছিয়ে যেতে হবে।
     
    ২০০০ সাল। সারা দেশের নানান প্রান্ত থেকে একদঙ্গল মাস্টারমশাই আর দিদিমণি এসে জড়ো হয়েছেন দেশের রাজধানী শহরে একমাস ব্যাপী এক শিক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশগ্রহণের জন্য। আয়োজনের বহরে সে এক এলাহী কাণ্ড! শিবিরের প্রথমদিন। সবাই জড়ো হয়েছি সুসজ্জিত অডিটোরিয়ামে। শিবির শুরু হবে অংশগ্রহণকারী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আত্ম পরিচিতি প্রদানের প্রথাসিদ্ধ পর্ব দিয়ে। সবাই যেন উৎসাহে টগবগিয়ে ফুটছে। আমাদের মধ্যে রয়েছেন অসম, মণিপুর, মহারাষ্ট্র, হিমাচল প্রদেশ , ওড়িশা, কর্ণাটক, গুজরাত, রাজস্থান ও কেরলের প্রতিনিধি শিক্ষক শিক্ষিকারা। বাংলা তো আছেই তার পাঁচ সদস্যের এক ছোট্ট দল নিয়ে। উদ্বোধনী সভা পরিচালনা করার জন্য হাজির শ্রী গিরিশ যোশীজী। তিনিই তখন ঐ সরকারি সংস্থার প্রশাসনিক প্রধান। ডায়াসে উঠে সকলের উদ্দেশ্যে নিয়মমাফিক কয়েকটি জরুরি কথা বলার পর‌ই শুরু হয় আত্মপরিচয় দানের অপেক্ষিত পর্ব। 
     

     
    আয়োজকদের পক্ষে হাজির প্রতিনিধিদের কাছে থেকে প্রধানত তিনটি বিষয়ে জানতে চাওয়া হলো – অংশগ্রহণকারীদের নাম, রাজ্য, এখানে আসার কারণ আর কীভাবে অবসর যাপন করা হয়? শেষ প্রশ্নের উত্তর হিসেবে ভেসে আসে - গান শুনি, ব‌ই পড়ি, ফিল্ম দেখি, ঘুমিয়ে কাটাই, কবিতা লিখি, ছবি আঁকি,নাচ করি ইত্যাদি ইত্যাদি। মাঝে মাঝেই গিরিশ জীর তীক্ষ্ণ প্রশ্নের সামনে পড়তে হয় উত্তরদাতাদের। তখনই উত্তরের সাজানো সুর কেটে যায় অনেকের। যথাসময়ে আমার পালা এসে পড়ে। আমি উত্তর দিই। আমার পছন্দের বিষয় নিয়ে কিছু আলোচনা চলে। প্রশ্নের সামনে দাঁড়িয়ে পিছিয়ে আসার প্রশ্নই নেই। সবাই সচেষ্ট নিজেকে " হাম কিসিসে কম নহী" প্রমাণে। প্রথম রাউন্ডে হারলে চলবে? 
     
    পরদিন সকালে সাজানো গোছানো সুন্দর ক্যাম্পাসের ভেতরে ঘুরে বেড়াচ্ছি, ঐ সকালেই মালিরা খুরপি ,কোদাল, বেলচা,ঝুড়ি হাতে নেমে পড়েছে বাগানের পরিচর্যায়। উদ্যানচর্চা আমার অবসরকালীন যাপনের অন্যতম পছন্দের বিষয় বলে আমি মালিদের সঙ্গে টুকটাক কথা বলে নিচ্ছি। তাঁরাও খুব খুশি এমন রসিক জনের সঙ্গে কথা বলে। এমন সময় আমার কাঁধে একটা হাতের পরশ টের পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি , আর কেউ নন।স্বয়ম্ গিরিশ জী। আমার সময় কাটানোর বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে ভারি খুশি হন তিনি। আসলে শীতকাল হলো আমার ফুলফোটানোর সময়।
     
    ( ২ )
     
      
     
    ইদানিং ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সারের খুব চল হয়েছে বাগান করার কাজে। অত্যন্ত কার্যকর এই জৈব উর্বরক । আমিও সেদিন সকালে কোদাল ঝুড়ি চালনি নিয়ে হাজির আমার চেনা কম্পোস্ট পিটে। ভেজা কম্পোস্ট কোদাল দিয়ে তুলে ঝুড়িতে ভরছি। নাড়া পেয়ে আবর্জনার আড়ালে থাকা আবাসিকদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায় – কেন্নো, বিছে, আঁজনাই, কেঁচোসহ আরও অনেক অনেক অণুজীবীদের আস্তানা ঐ কম্পোস্ট পিট। পাছে কেঁচোরা আহত হয় তাই হাত দিয়ে, দলা পাকিয়ে থাকা কেঁচোদের আলাদা করে রাখি , কেননা এই পরিচিত অঙ্গুরীমাল প্রাণিরাই যে মহার্ঘ্য জৈব সারের অন্যতম রূপকার! দিব্যি চলছে কাজ, হঠাৎ দেখি …!
     
       
     
     
     
    ( ৩ )
     
    সেদিন‌ও সকালে উঠেছি। সদর দরজার তালা খুলতে খুলতে হঠাৎ নজর পড়ে দক্ষিণ সীমানা প্রাচীরের ওপর ‌। আরে!! আমার গাছের ডাল নোয়ানোর লম্বা লাঠিটা ওখানে রাখলো কে? কাল বিকেলেও তো ওটাকে ওখানে দেখিনি! চাবির গোছা জায়গায় রেখে, লাঠিটাকে তুলে আনবো বলে ভাবছি। ও মা! এ কি কাণ্ড! লাঠিটাতো নেই! এই ছিল,এই নেই, এসব হচ্ছেটা কী? একটু তফাতে ডানদিকে, গাছের ফাঁক দিয়ে ভোরের নরম আলো গড়িয়ে পড়ছে যেখানে সেখানেই এখন লাঠির অধিষ্ঠান। চপ্পল পায়ে গলিয়ে দু পা এগোতেই দেখি, পাঁচিলের ওপর দিয়ে তুড়ন্ত গতিতে আমার সাধের লাঠিটি উধাও হয়ে গেল। আমি সাতসকালেই বেকুব বনে চুপচাপ ঘরে ঢুকে পড়ি। পাঠকরা কি আন্দাজ করতে পারছেন আজকের আসরে আমরা সবাই ঠিক কোন্ না- মানুষী সহবাসী বন্ধুর সাথে পরিচিত হবো? বেশ, আসুন আমরা সবাই তার সঙ্গে আলাপ করে নিই।


     
    ( ৪ )
     
    বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় সার্পেন্টিসরা
     

     
    মেগাচিরেলা ওয়াচলেরি – সম্ভবত সাপ সহ সমস্ত সরীসৃপ প্রজাতির পূর্ব পুরুষ। উত্তর ইটালিতে ডলোমাইট শিলার স্তরে পাওয়া জীবাশ্ম স্মারক চিহ্ন দেখে বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছেন যে এই প্রজাতির জলজ গিরগিটি থেকে বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় সার্পেন্টিস বর্গের প্রাণি তথা সাপেদের উৎপত্তি হয়েছে। ডার‌উইন সাহেবের বিশ্বাস ছিল এক জাতীয় চতুষ্পদী জলচর গিরগিটি বা টিকটিকি জাতীয় প্রাণিই ধীরে ধীরে পা হারিয়ে ফেলে সাপে পরিণত হয়। অবশ্য এই পরিবর্তনের পথটিও যে খুব সহজসরল ছিল তা কখনও নয়।  

       
     
    বিজ্ঞানীরা মনে করেন মধ্য জুরাসিক যুগে কিছু দু পা ওয়ালা টিকটিকির থেকেই হয়তো আজকের দীর্ঘায়িত অবয়ব বিশিষ্ট সাপেদের আবির্ভাব। ভয় বা শিহরণ জাগানো এই শীতল রক্তের সরীসৃপ প্রজাতির প্রাণিটিকে তার অনন্য শরীরী বৈশিষ্ট্যের কারণে বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় স্কোয়ামেট বর্গীয় বলা হয় ।
    ইংরেজি ভাষায় সাপকে বলা হয় snake । অভিজ্ঞ ভাষাবিদদের মতে প্রোটো জার্মান শব্দ snak-an থেকে আদি ইংরেজি শব্দ snaca হয়ে আজকের snake শব্দটি ভাষাগত মান্যতা পেয়েছে । সাপ বুকে ভর দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে চলে। যেদিন এই বিশেষ চলনভঙ্গিমা রপ্ত করলো তার আদিপুরুষেরা সেদিন থেকেই পৃথিবীর বুকে সাপেদের বাড়বাড়ন্ত শুরু হলো। আজকের পৃথিবীতে কেবলমাত্র শীতল আন্টার্কটিকা মহাদেশ ও সমুদ্র বিচ্ছিন্ন কিছু দ্বীপ ছাড়া যেমন আয়ারল্যান্ড, আইসল্যান্ড, গ্রীনল্যান্ড ইত্যাদি, পৃথিবীর সর্বত্রই এই শীতল রক্তের সরীসৃপদের দেখা পাওয়া যায়। সাপের প্রায় ৩০টি পরিবার বিজ্ঞানীদের কাছে স্বীকৃতি পেয়েছে। এদের আবার ভাগ করা হয়েছে ৫২০টি বংশ এবং প্রায় ৩৯০০ প্রজাতিতে। এর পাশাপাশি তাদের দৈর্ঘ্য বৈচিত্র্য‌ও নেহাতই কম নয়। এই পর্যন্ত পৌঁছে নিশ্চয়‌ই জানতে ইচ্ছে করছে পৃথিবীর সবচেয়ে ছোটো আর সবচেয়ে লম্বা সাপ কী ? এই বিষয়টি নিয়েও বিজ্ঞানী মহলে মতের টানাপোড়েন আছে। 

        
    তবে মাত্র ১০. ৪ সেন্টিমিটার বা ৪.১ ইঞ্চি লম্বা বার্বাডোজ থ্রেড‌ থেকে শুরু করে প্রায় ৬. ৯৫ মিটার বা ২২.৮ ফিট লম্বা রেটিকুলেটেড পাইথন বা অজগর হলো সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা সাপ। যদি এই দৈর্ঘ্যের কথা শুনে বিস্মিত হন, তাহলে জানাই সাপের অতীত পূর্বজ Titanoboa cerrejoneisis এর জীবাশ্ম নিদর্শ থেকে জানা যায় যে এইটি ১২.৮ মিটার বা ৪২ ফুট লম্বা ছিল ! ভাবুন কি অবাক কাণ্ড! 
     
      
     
    কিন্তু যাদের নিয়ে আমাদের এতো আলোচনা, আশঙ্কা , ভয়ের শিহরন সেই সাপেদের সিংহভাগই (৯০ শতাংশ) হলো নির্বিষ। আমাদের একান্ত সহবাসী এই প্রাণিটিকে নিয়ে যে ভয় আর শঙ্কার মেঘ জমে আছে আমাদের মনে তাকে দূর করতে পারলে কখনোই এরা আর ভয়ের বস্তু হয়ে থাকবে না।
     
     (৫)
     


    চলন দেখে যায় চেনা , অর্থাৎ প্রতিটি প্রাণির চলনের একটা নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য আছে যা দেখে প্রাণিটিকে প্রাথমিক ভাবে শণাক্ত করা যায়। কম্পোস্ট পিট থেকে কেঁচোগুলোকে আলাদা করে সরিয়ে নিয়ে দেখি তাদের ভিড়ে অন্যরকম চলনের এক প্রাণির নড়াচড়া। আর‌ও ভালোভাবে নজর করতেই মালুম হলো অঙ্গুরীমাল কেঁচোর সঙ্গে “আনজান কোঈ ঘুস্ গয়া”। কথায় বলে কেঁচো খুঁড়তে সাপ - এ যে দেখছি তেমনটাই! আগন্তুক প্রাণিটির তরঙ্গায়িত জিগজ্যাগ চলন থেকেই তা বিলকুল টের পেলাম । সাপ তো বুঝলাম কিন্তু কী সাপ? আবার খোঁজ, খোঁজ, খোঁজ। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে শেষ পর্যন্ত জানা গেল, তেনার নাম হলো Ramphotyphlops braminus । বাংলায় একে বলা হয় পুঁয়ে সাপ। 

    লম্বায় খুব ছোট হবার কারণেই যে এমন নামকরণ তা বোধহয় আর বুঝিয়ে বলার দরকার হয়না। সাপটিকে বোতলবন্দি করে ঘরে আনতেই চিরায়ত আতঙ্ক থেকে হৈ চৈ শুরু হয়ে যায়। সেসবে কান না দিয়ে ভালো করে কাছ থেকে সাপটিকে দেখি। একদম কেঁচোর মতোই দেখতে তবে উজ্জ্বল কালচে বাদামি রঙের শরীর ছোটো ছোটো আঁশ দিয়ে ঢাকা। নিতান্তই গোবেচারা নির্বিষ এক সাপ। লম্বায় মেরেকেটে ১৫ সেন্টিমিটার বা ৬ ইঞ্চি। মাথা আর লেজের গঠনের কোনো পার্থক্য না থাকায় অনেকেই একে দুমুখো সাপ বলে থাকে। তবে এটি একদম সঠিক তথ্য নয়। বার্বাডোজ থ্রেড এর মতো আমার বাগানের পুঁয়ে সাপটিও পৃথিবীর ছোট দৈর্ঘ্যের সর্প প্রজাতির একটি। আমার বাগানের আনাচেকানাচে এই সাপের দেখা মেলে। এই সাপের প্রজনন সম্পর্কে একটি বিশেষ তথ্য আপনাদের জানাবো। পুঁয়ে সাপ পারথেনোজেনেসিস বা অযৌন প্রজননের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে। বিষয়টি আমার অধিগত নয়, তাই এ নিয়ে আরও গভীর আলোচনায় যেতে চাইছিনা। এখানেই ইতি টানছি। আমার বাগানের না-মানুষী সহবাসীদের মধ্যে এইটি অবশ্যই স্বতন্ত্র।
     
    (৬)



    এবার আসি সেই দীর্ঘ লাঠির গল্পে। এতক্ষণে আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে আমার পরবর্তী সহবাসীটি একটি লম্বাটে চেহারার সরীসৃপ, নাম Coluber mucosus । বাংলায় এর নাম দাঁড়াশ। আমার বাগানের খুব নিয়মিত অতিথি সে নয় । শীতের শুরুতে এবং শীতের আমেজ কাটিয়ে একটু একটু করে গরমের পদধ্বনি শুনতে পেলেই বাগানে এর দেখা মেলে। এদের গায়ের রং হালকা মেটে বাদামি , হলদেটে বাদামি এমনকি হালকা জলপাই রঙের । পেটের দিকটা সাদাটে রঙের। ফিতে দিয়ে মাপার সুযোগ না পেলেও চোখের মাপ অনুযায়ী একটি দাঁড়াশ সাপ প্রায় ৮ - ৯ ফিট বা তার থেকেও লম্বা। এই সাপ গাছ বাইতে ওস্তাদ। আম গাছ বেয়ে বেশ তড়তড়িয়ে উঠে পড়ে পাখির বাসা থেকে ছানা খাবার জন্য। 
     
    সেবার এক কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেছিল বাবু দাঁড়াশ। বাড়ির সামনে সার দিয়ে থাকা উইপিঙ দেবদারু গাছের ঝোপালো মাথায় এক বুলবুলি পাখি নতুন ফ্ল্যাট তৈরি করে দিব্যি আছে। ঠোঁটে কাঠকুটো জড়ো করে খাসা এক বাসা বানিয়ে ডিম পেড়েছে। সকাল বেলা। রোজকার মতো কাগজ কলম নিয়ে বসে একটা লেখার মকশো করছি। হঠাৎ শুনি পাখিদের তীব্র আর্তনাদ। বুলবুলি এমনিতেই বেশ লড়াকু প্রকৃতির। ছোটোখাটো বিপদে পড়লে নিজেরাই সামলে নেয়। কিন্তু আজ কি হলো? বাইরে বের হতেই বিপদটা মালুম হয় আমার। বিপদগ্রস্ত বুলবুলিদের ডাকাডাকি হাঁকাহাঁকিতে আরও প্রতিবেশীরা সেখানে হাজির হয়েছে। এসেছে পাখিদের কোতোয়াল সাহেবরা। সবার চিৎকার চেঁচামেচিতে নাস্তানাবুদ হয়ে গাছের ওপর থেকে ধপাস করে নীচে পড়লেন বাবু দাঁড়াশ। আমি হাতের লাঠিটাকে মাটিতে জোরে ঠুকতেই নিমেষে পগাড় পার। পাখিদের কন্ঠে তখন জয়োল্লাস। 


          
    মাটি বা ঘাসের ওপর দিয়ে বুলেট ট্রেনের গতিতে চলতে পারে এই সাপ। কৃষকদের অতি উপকারী এই দিঘল চেহারার নির্বিষ সাপটি। এই সাপের প্রধান আহার্য হলো ইঁদুর, ছুঁচো,মাছ,ব্যাঙ। কৃষকের উৎপাদিত ফসলের পক্ষে ক্ষতিকর ইঁদুর খেয়ে মূল্যবান ফসল রক্ষা করতে এর জুড়ি মেলা ভার। এজন্য দাঁড়াশ সাপকে ইংরেজিতে Rat Snake বলা হয়। বেশ লড়াকু প্রকৃতির হ‌ওয়ায় প্রজননের সময় দুই পুরুষ দাঁড়াশ সাপের মধ্যে তীব্র লড়াই বেঁধে যায়। 
     

     
    কেউই অন্য ভাগীদারের উপস্থিতির বিষয়টিকে মেনে নেয়না। কখনো কখনো কয়েক ঘণ্টা ধরে চলতে থাকে এই সর্পীয় লড়াই। আমার বাগানে এমন লড়াই প্রত্যক্ষ করার সৌভাগ্য হয়েছে একাধিকবার। দাঁড়াশ সাপ প্রব্রজন পিয়াসী। প্রায় তিন একর এলাকা জুড়ে চলে এমন টহলদারি । ফলে মাঝে মাঝেই তেনাকে সেভাবে দেখতে পাইনা। অপেক্ষায় থাকি কবে তিনি ফিরে আসবেন। প্রথম প্রথম ভয় পেয়ে একটু শঙ্কিত হলেও এখন বিলকুল গা-সওয়া হয়ে গেছে।
     
    ( ৭ )
     
    আমার এবারের না মানুষী সহবাসী নাগকথার শেষ অতিথির সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেব । এই সহবাসীটি পরিচিত ঘরচিতি বা ঘরগিন্নি নামে। ইংরেজিতে ডাকা হয় Common Wolf Snake । আর বিজ্ঞানীরা এটিকে বলেন Lycodon aulicus। তার অন্য দুই সহবাসী বন্ধুর মতো ইনিও বেশ দিঘল চেহারার এবং লম্বাটে গড়নের। গায়ের আঁশগুলো মসৃণ, বেশ তেল চকচকে। গাত্রবর্ণ ধূসর , কালচে বাদামি বা চকোলেট রঙের। গায়ের ওপর ঘাড়ের নিচ থেকে সাদা রেখার রূপটান। তবে লেজের দিকে তা অনুপস্থিত। খসখসে দেওয়াল বেয়ে ওপরে উঠতে ভালোবাসে। গ্যারাজের পলেস্তারা হীন দেওয়ালে মাঝেই উঠে পড়ে,যেন রক ক্লাইম্ব করছে। 
     
           
     
    সেবার ঘটলো এক কাণ্ড! রাত তখন প্রায় নটা। বাড়ির পেছন দিকের কোলাপসিবল গেট আটকে তালা দেবো বলে তৈরি হচ্ছি। লোহার ভাঁজ পাল্লায় কষে টান দিতেই দেখি ঝুপ করে কি একটা পড়ল। ওমা! এ যে শ্রীমতী ঘরগিন্নি! একটু সতর্ক হয়ে পিছিয়ে আসি। কেননা নির্বিষ হলেও ইনি ভয় পেয়ে কামড় বসান। ওপর থেকে পড়ে গিন্নিও তখন খানিক বেকাবু। তাড়িয়ে দেবার জন্য কাঠের ভারী ডাশাটা হাতে নিতেই দেখি কোথা থেকে মিনি আর পুষি দুই মার্জার কন্যা অকুস্থলে এসে হাজির। জবুথবু হয়ে গুটিয়ে থাকা গিন্নির মাথায় থাবা দিয়ে জোরে আঘাত করে। তারপর রাত শিকার মুখে তুলে নিয়ে ডিনার টেবিলের দিকে পা বাড়ায়। খানিকটা দুঃখ হলেও স্বস্তি পাই এই ভেবে যে খাদ্য- খাদকের এই চিরন্তন সম্পর্কের ওপর খবরদারি করার ক্ষমতা আমার নেই। এমন দ্বৈত ভাবনার দ্বন্দ্ব নিয়েই দরজার কাঠের পাল্লাদুটো বন্ধ করি।
     
           
     
    ** এই তিন সর্প সহবাসী ছাড়াও আরও কেউ কেউ হয়তো আছেন। আছেন মনসামঙ্গল খ্যাত কালনাগিনী। নির্বিষ এই সাপটি অসম্ভব রকমের সুন্দর দেখতে। ছিপছিপে গড়নের এই সাপটি গাছে চড়তে পারে।একডাল থেকে অন্যডালে লাফিয়ে চলে বলে একে অনেকেই ডাকে উড়ন্ত সাপ বলে। যদিও কালনাগিনী উড়তে পারেনা।
          
     

    বর্ষাকালে বর্ষার জলের সঙ্গে ভেসে আসে আমাদের অতি পরিচিত ঢোড়া সাপ । বাগান থেকে মন্ডুক ধরে খেয়েদেয়ে অসাড় হয়ে পড়ে থাকে। ধীরে ধীরে আহার্যকে উদরস্ত করে আবার নর্দমার জলে ফিরে যায়। 

     
     
    কি আৎকে উঠলেন নাকি আমার সহবাসীদের কথা শুনে? না না ঘাবড়াবেন না। দিব্যি আছি এদের সবাইকে নিয়ে। একটা ছোট্ট জমিন আর একটু ভালোবাসা নিয়ে।
     
    ** পাঁচমুড়ায় তৈরি মনসার চালির এই অনবদ্য ছবিটি  ভ্রাতৃপ্রতিম অনির্বাণের সূত্রে প্রাপ্ত।
     
     
     
     
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ritabrata gupta | ১৩ জানুয়ারি ২০২৪ ১৭:৫৭527585
  • অনবদ্য  লেখা !  অসম্ভব  সুন্দর  লাগে .  নিজেই  মনে  মনে  বাগানে  পৌঁছে  গেলাম  যেন !  ধন্যবাদ  সোমনাথদা .  জবাব  নেই ! 
  • চৈতালি দত্ত | 2405:201:8000:b1a1:a5ff:1f02:de17:***:*** | ১৩ জানুয়ারি ২০২৪ ২১:৪৭527589
  • এই সিরিজের লেখাগুলো একদমই অন্যরকম। বাড়ির একচিলতে জমিকে ঘিরে এতো কাণ্ড! ভাবতেই অবাক লাগে। পরের কিস্তিতে কার সঙ্গে আলাপ হবে?
  • Aditi Dasgupta | ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ ১৮:২৪527605
  • একটু একটু ভয় কাটছে বোধহয়! 
  • Somnath mukhopadhyay | ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ ২১:৩২527612
  • ভয় করলেই ভয়। ভয় কাটলেই ভালোবাসা।আর ভালোবাসা থেকেই ভরপুর আনন্দে মজে যাওয়া।
    ছড়িয়ে পড়ুক সবার কাছে।
  • উন্মেষ | 43.252.***.*** | ১৫ জানুয়ারি ২০২৪ ২১:০৬527641
  • বাগানের গল্পের সাথে আপনার সাবলীল কলমে প্রাকৃতিক ইতিহাসের সুন্দর মেলবন্ধন হয়েছে। সর্পকুলের বিষয়ে আপনার কলম থেকে আরও অনেক লেখার অপেক্ষায় থাকলাম। সাপ নিয়ে যাবতীয় মিথ এবং ভয় এভাবেই দূর করা সম্ভব। 
  • Indranil Mutsuddi | 98.128.***.*** | ১৬ জানুয়ারি ২০২৪ ২০:৩৩527678
  • অনবদ্য লেখা  
  • যোষিতা | ১৬ জানুয়ারি ২০২৪ ২১:৪৪527679
  • বিষাক্ত সাপ নেই আপনার বাগানে? সাপে বড্ড ভ্য় পাই।
  • Somnath mukhopadhyay | ১৬ জানুয়ারি ২০২৪ ২৩:৩৮527680
  • ভয় পেয়ে পালিয়ে গেলে যে ভালোবাসা তৈরি হয়না।
  • যোষিতা | ১৭ জানুয়ারি ২০২৪ ০৩:০০527684
  • এই দেখুন
     
  • যোষিতা | ১৭ জানুয়ারি ২০২৪ ০৩:০৩527685
  • প্রচণ্ড ঘাবড়ে গেছলাম, ভয় পাচ্ছিলাম সাপকে স্পর্শ করে।
  • Somnath mukhopadhyay | ১৭ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:২৮527692
  • যাক্ ‌! আমার মতো এক সামান্য কলমচির লেখা অহি সম্পর্কে অনেকের আশঙ্কা দূর করছে দেখে খুব খুশি হলাম। এই ভয় ভাঙানিয়া নিবন্ধটি আরও আরও মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ুক। ভিডিওটি খুব ভালো। আমার ভয় কেটে গেল!
  • সপ্তর্ষি | 99.23.***.*** | ২৩ জানুয়ারি ২০২৪ ১২:১৬527920
  • দারুন ঘরোয়া ডকুমেন্টেশন 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে প্রতিক্রিয়া দিন