এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • অমোঘ লীলা প্রভু 

    সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৪ জুলাই ২০২৩ | ১৪৮১ বার পঠিত | রেটিং ৫ (৪ জন)
  • মুজতবা আলির পঞ্চতন্ত্রে বাংলার শাক্ত আর বৈষ্ণবদের 'বিবাদ' নিয়ে একটা চমৎকার চুটকি আছে। গপ্পোটা ছোট্টো। জনৈক শাক্তকে এক বৈষ্ণব বললেন, এই যে আপনারা বলি দেন, এতে পশুর ভিতরের 'শক্তি'টাকেই বলি দেওয়া হয় না কি? শুনে শাক্ত একটু হেসে বললেন, পশুটাকে যখন ধরে হাড়িকাঠে বাঁধা হয়, তখন আর তার 'শক্তি' কোথায়? পড়ে থাকে তো শুধু 'চৈতন্য'টুকু। ওটাকেই বলি দিই।

    গপ্পোটা ছোট্টো হলেও অসাধারণ, কারণ, এতে বাস্তবতাটা খুব সহজে ধরা পড়ে, যে, বাংলায় শাক্ত আর বৈষ্ণবদের তথাকথিত যে বিরোধ, তা ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান সমর্থকদের ছদ্ম বিবাদের চেয়ে বেশি কিছু ছিল না। এমনই বিবাদ, যে, তা নিয়ে চুটকি তৈরি হয়, এবং এক সৈয়দের ব্যাটা সেটা ঝপ করে লিখেও ফেলেন। তিনি আবার সেখানে স্পষ্ট করে বলেছেন, যে, এই বাংলায় শাক্ত-বৈষ্ণবের ঝগড়াঝাটির বৃত্তান্ত জানাটা খুবই দরকারি, নইলে এইসব গল্পের রস কিছুই বোঝা যাবেনা। এখন অবশ্য সে রস বোঝাও শক্ত। কারণ, 'আপনি কি শাক্ত না শৈব?' জিজ্ঞাসা করলে অধিকাংশ হিন্দু বাঙালিই হাঁ করে তাকিয়ে থাকবেন।  

    এসব কমে এলেও ল্যাজওয়ালা হিন্দুবীরদের উপদ্রব অবশ্য বেড়েছে এখন। আশা করা যায়, এই অবধি লিখতেই কোনো হিন্দুবীর ক্যাঁক করে ধরবেন, কই 'ওদের' ধর্ম নিয়ে কিছু বলার সাহস আছে? তা তাঁদের অবগতির জন্যই জানাই, ওই একই লেখাতেই মুজতবা শিয়াদের নিয়েও একটা চুটকি লিখেছেন। সেটা আবার নাকি স্বামী বিবেকানন্দের জবানেই পাওয়া গেছে। সেটা লক্ষ্নৌ শহরের গপ্পো, যা নাকি শিয়াদের রাজধানী। গপ্পোটা এরকমঃ লক্ষ্নৌতে মহরম চলছে, সবাই হাসান-হোসেন করে কেঁদে আকুল। সেখানে মজা দেখতে হাজির হয়েছে দুই রাজস্থানী ঠাকুর, যাদের বিদ্যাস্থানে একেবারে ভয়েবচ। তাদের শখ হয়েছে মসজিদে ঢুকবে। কিন্তু দারোয়ান আটকে দিয়েছে। কেন? না এই দেখুন এজিদের মূর্তি। ওকে পাঁচ ঘা না মেরে এগোতে পারবেননা। সে কী? কেন? না, এদের কান্ডের জন্যই তো এত লোকে কাঁদছে। 

    এই বলে দারোয়ান অন্যদিকে গেছে। ফিরে এসে দেখে, মারধোর কোথায়, দুই ঠাকুর-সাহাব এজিদের পায়ের তলায় গড়াগড়ি দিচ্ছে। কী হয়েছে? জিজ্ঞাসা করায় তারা কেবল কাঁদে, আর বলে, "কী কান্ড করেছ প্রভু, এখনও লোকে তোমার জন্য কাঁদছে"।

    এ গপ্পের রস যদি না পান, তো ইসলামী গপ্পেও আপনি ভয়েবচ। লোকে শুধু বৈষ্ণব-শাক্ত জানবে, কিন্তু শিয়া-সুন্নি জানবেনা, এ করেও বাংলার কিছুই বোঝা যাবেনা। এটা অবশ্য মুজতবা বলেননি, আমি বললাম। সে অবশ্য চুটকি দুটোও আমারই লেখা আপাতত, মুজতবার আদি গপ্পের থেকে একটু আধটু-আধটু বদলে যেতে পারে। কিন্তু সেটা এখানে বিষয় না, কথা হল কান্ডটা ভেবে দেখুন, শাক্ত-বৈষ্ণবদের বিবাদ নিয়ে লঘুস্বরে চুটকি কাটছেন এক সৈয়দ, শিয়া আর ঠাকুরদের নিয়ে রসিকতা করছেন এক স্বামীজি, কোত্থাও কিচ্ছু তাল কাটছেনা, এইসব ইয়ার্কিতে ধর্মাচরণে কোনো বাধা আসছেনা, ব্যক্তি আক্রমণ বা গোলমালের তো প্রশ্নই নেই। এটাই বাংলা। এটাই বাংলার ধর্মাচরণের ঐতিহ্য।

    এসব কথা আসছে কেন? কারণ, ইসকন বা কীসবের যেন নাম করে কিছু হিন্দিভাষী হিন্দুবীর এই ঐতিহ্যটাকেই ভাঙতে চাইছেন। এক প্রভুর বক্তৃতায় কতকিছু শুনলাম। যারা মাছ খায়, তারা শিকাগো যেতে পারে, ব্রাদার্স অ্যান্ড সিস্টার্স বলে বক্তৃতাও দিতে পারে, কিন্তু সিদ্ধপুরুষ হতে পারেনা। আরও জানা গেল, যত মত তত পথ, অর্থাৎ কিনা সব পথই মায়াপুর যাচ্ছে। ইকিরে ভাই, এতো সোজা নাকি। যত-মত-তত-পথ যিনি বলেছিলেন, তিনি বিদ্যাসাগরকে সিদ্ধপুরুষ আখ্যা দিয়েছিলেন। কেন? না সিদ্ধ মানে তো নরম। তা, মায়াপুরে কর্পোরেট মন্দির থাকলেই এসব জানা যায় নাকি? এর জন্য বাংলা জানতে হয়। হারেকৃষ্ণ না বলে হরেকৃষ্ণ বলতে শিখতে হয়। তারপর কথামৃত-টিত। কিংবা ধরুন চৈতন্য ভাগবত। এক লাইন তো বাংলা বলতে পারেননা, মাথায় তিলক কেটে মাইকে লেকচার ঝাড়ছেন, ইনি এসব পড়েছেন?

    আসলে এসব বিচ্ছিন্ন কিছু না। গোবলয়ের মারদাঙ্গা রাজনীতির প্রসার, গোবলয়ের নিরামিষভক্ষণকে মাথার উপরে বসানো, রামকৃষ্ণ বা চৈতন্যের মালিকানাও গোবলয়ের হাতে তুলে দেওয়া এবং হিন্দি ভাষার একাধিপত্য, সবকটা মিলিয়েই একটা বিরাট প্রকল্পের অংশ এটা। আমিষ খেলেই বিধর্মী, কিংবা হিন্দি না বললেই বাংলাদেশী, এসবও আসবে ক্রমে। ভারতবর্ষের কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানই এর থেকে মুক্ত না। বস্তুত কোনো 'সর্বভারতীয়' প্রতিষ্ঠানই না। কিন্তু হিন্দুত্ববাদী ভ্রাতা ও ভগিনীগণ, প্রতিষ্ঠানকে আপনারা দখল করতে পারেন, কিন্তু লোক? তারা পাঁঠার মাংস খাবে, বাংলাও বলবে, কথামৃতও পড়বে। গরুও খাবে, শনি-মঙ্গলবারও করবে। বেশি খাপ না খোলাই ভাল।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Sobuj Chatterjee | ১৪ জুলাই ২০২৩ ০৮:৩৯521216
  • দারুন লেখা।
  • সৃষ্টিছাড়া | 2405:201:8003:9f5a:6920:3682:a067:***:*** | ১৪ জুলাই ২০২৩ ০৮:৪০521217
  • আমি হিন্দু নই, তবু সৈ ব র লেখনীতে কেমন অনুপ্রেরণাদাত্রীর আঁশটে গন্ধ, যথেষ্ট সাম্প্রদায়িক
  • Amit | 163.116.***.*** | ১৪ জুলাই ২০২৩ ০৯:২৪521218
  • খুব সাবধান। চাদ্দিকে বিশাল ষড়যন্ত্র - সিয়া মোসাদ কেজিবি র আইএসআই থেকে বলিউড থেকে  কলিউড থেকে ভোজপুরিউড - সব্বাই একসাথে মিলে 24X7X365 X ইনফিনিটি বছর ধরে নিরীহ বাঙালির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে- করেই যাচ্ছে। বাঙালির ভাষা , জমি , ধর্ম (কর্ম না হলেও চলবে) , খাবার , দাবার ,গান থেকে গালাগালি পজন্ত সবকিছুর ওপর হিন্দিভাষীদের দখল নেওয়ার বিশাল প্রকল্প চলছে  ভারত পাকিস্তান আম্রিগা সরকারের সিক্রেট ফান্ড থেকে। সেই আদ্যিকালের কোল্ড ওয়ার এর পর থেকে এতো বড়ো গ্লোবাল লেভেলে ষড়যন্ত্র দুনিয়ার কোথাও হয়নি-হবেওনা। বাংলার জমি দখল এভারেস্ট জয়ের থেকেও বড়ো প্রাইজ। কলম্বাস আম্রিগা ​​​​​​​জয় ​​​​​​​করে ​​​​​​​এতো ​​​​​​​আনন্দ ​​​​​​​পাননি ​​​​​​​যতটা ​​​​​​​হিন্দি ​​​​​​​খোট্টাগুলো ​​​​​​​বাংলা ​​​​​​​জয় ​​​​​​​করে ​​​​​​​পাবে। 
     
    এর ​​​​​​​বিরুদ্ধে ​​​​​​​সব্বাই সজাগ ​​​​​​​হোন। সুন্দরবন থেকে জলপাইগুড়ি - টাকমাথা ​​​​​​​থেকে দাড়িওয়ালা কাউকে ​​​​​​​কোথাও হিন্দি ​​​​​​​বলতে ​​​​​​​দেখলেই ​​​​​​​কেলিয়ে ​​​​​​​পাট ​​​​​​​করে ​​​​​​​দিন যে যেখানে পারেন। দেখবেন আবার জোশের মাথায় জলপাইগুড়ি থেকে আবার দার্জিলিং গিয়ে নেপালিদের পিটিয়ে দেবেন না। ​​​​​​​কেস কেঁচে যেতে পারে- গোর্খারা আবার কিসব কুকরি নিয়ে ঘোরে। 
     
    সজাগ থাকার ​​​​​​​অপারেটিং ​​​​​​​ম্যানুয়াল ​​​​​​​চাইলে ​​​​​​​সুকুমার ​​​​​​​রায় ​​​​​​​এর ​​​​​​​পাগলা ​​​​​​​জগাই ​​​​​​​র ​​​​​​​কোবতে ​​​​​​​টা ​​​​​​​সঙ্গে ​​​​​​​রাখুন। মনে ​​​​​​​রাখবেন এ ​​​​​​​লড়াই ​​​​​​​বাঁচার লড়াই। ​​​​​​​জমি ​​​​​​​ছাড়বেন ​​​​​​​না। ​​​​​​​
     
  • :-)) | 2405:8100:8000:5ca1::20:***:*** | ১৪ জুলাই ২০২৩ ০৯:৫০521219
  • ইস্কনকে বলতেই চুতিয়াদাদু অমিতচাড্ডি রে রে করে নেমে পড়েছে। এ মালগুলো মুজতবা পড়েই নি বোঝা তো দূরের কথা।
  • | ১৪ জুলাই ২০২৩ ১০:০৯521222
  • চমৎকার লেখা। 
    কিন্তু লক্ষ্ণৌ বানানটা এমন অদ্ভুত লিখেছ কেন? ক'এ মুর্ধণ্য ষ'এ ণ'এ ঔকার। 
     
    (কিছু গাধাটে টাইপ লোকের হেব্বি জ্বলেছে দেখছি laugh
  • রমিত চট্টোপাধ্যায় | ১৪ জুলাই ২০২৩ ১৪:১৫521225
  • এই লেখাটা খুব ভালো লাগলো। সঠিক জায়গাটা ধরা গেছে। এইসব ফালতু লোকজন এখন ইসকনের ভেক ধরে ধর্মীয় ইনফ্লুয়েনসার এ পরিণত হয়েছে। আর ভুলভাল ভাট বকে চলেছে। বাংলার সবই নাকি ভুল আর গোবলয়ের গাড়োল গুলো হিন্দুত্ব শেখাবে ভারতবর্ষ কে।
  • দীপ | 42.***.*** | ১৪ জুলাই ২০২৩ ১৭:১৭521228
  • দীপ | 42.***.*** | ১৪ জুলাই ২০২৩ ১৭:১৯521229
  • অবশ্য গালাগালি ও প্রোপাগান্ডায় কেহই কম নহে!
  • হিন্দিভাষীদের দখল নেওয়ার বিশাল প্রকল্প চলছে | 165.225.***.*** | ১৪ জুলাই ২০২৩ ১৯:৪৭521232
  • প্রকল্পগুলো চিরকালই আছে, পাল আর সেন যুগের পর থেকেই। একটু নজর করতে হয়! 
  • Rupanwita Biswas | ১৪ জুলাই ২০২৩ ২১:৩২521233
  • সুন্দর লেখা।
  • lcm | ১৪ জুলাই ২০২৩ ২১:৫২521234
  • শৈব হল শিবের উপাসক, বৈষ্ণব হল বিষ্ণুর উপাসক, আর শাক্ত হল শক্তির উপাসক। শক্তি নামে কোনো পপুলার দেবতা থাকলে ব্যাপারটা সিম্পল হত।
    যাগ্গে, আমি একটা বানাবো,
    দৌবল = দুর্বলের উপাসক।
  • :|: | 174.25.***.*** | ১৪ জুলাই ২০২৩ ২২:২৮521235
  • গ্রামাটিক্যালি সঠিক নাম হতে গেলে একটা রেফ লাগবে মনে হয়। দৌর্বল। এই নাম রাখলে আর কিছু না হোক বাচ্চাদের রেফের উচ্চারণটা সবল হবে অন্তত। তাই গুড লাক। সদলবলে এগিয়ে যান। 
  • দীমু | 182.69.***.*** | ১৪ জুলাই ২০২৩ ২২:৩৪521236
  • শকুনির ভাল নাম ছিল সৌবল - সুবলের ছেলে। দৌর্বলটাও লোকে সেরকম না ভেবে বসে laugh
  • হে হে | 2405:8100:8000:5ca1::47:***:*** | ১৪ জুলাই ২০২৩ ২২:৪৭521237
  • চাড্ডি ইকোসিস্টেম দ্যাবতা বা দ্যাবতার পুরুতকে নিয়ে ঠাট্টা ইয়ার্কি একদম সহ্য করতে পারে না। মার মার করে চাড্ডি খিঁচে দৌড়ায়। অস্ট্রেলিয়ায় সকাল হলে অমিতচাড্ডি আবার এসে নেদে যাবে।
  • কালনিমে | 42.***.*** | ১৫ জুলাই ২০২৩ ০০:০৪521241
  • এই বাবাজিটা যে চাড্ডি, তাতে সন্দেহ নেই। তবে এই 'নিরামিষাশী হিন্দু' -এই ধারণা শুধু বাঙালি সংস্কৃতি বিরোধী নয়, অসম, বিহার, ওড়িশা, পাঞ্জাব,  সহ সারা ভারতের হিন্দুদের খাদ্যাভ্যাস কে অপমান করে। এই  গেরুয়া পরা ন্যাড়া বাচাল গুলোর বাঁদরামি বেড়েই চলেছে দিন দিন।
  • &/ | 151.14.***.*** | ১৫ জুলাই ২০২৩ ০১:৩৯521243
  • তিলক কেটে দু'হাত তুলে কৃষ্ণনামে নাচতে নাচতে ইসকনে গিয়ে ঢুকতে বলল? তারপর? চালাবে কে? বলরামের মামাশ্বশুর?
  • Sumit Roy | ১৬ জুলাই ২০২৩ ১১:৪৮521303
  • "কারণ, 'আপনি কি শাক্ত না শৈব?' জিজ্ঞাসা করলে অধিকাংশ হিন্দু বাঙালিই হাঁ করে তাকিয়ে থাকবেন।" এটার কারণ বাঙালির পরিচয়গুলোর মধ্যে ধর্মীয় আইডেন্টিটি ক্ষীণ হয়েছে,তাই নিজের আচরণের সাথে ধর্মের কন্সিস্টেন্সি নিয়ে তারা ভাবে না। তাই শাক্ত কি বৈষ্ণব তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। মানে নিজের আচার-আচরণ ধর্মের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলেও সেটা বাঙালির মধ্যে স্ট্রেস তৈরি করছে না, কারণ নিজেদের পরিচয়গুলোর মধ্যে ধমীয় পরিচয়ের অংশ কম, আর তা বেশি থাকলেও শাক্ত-বৈষ্ণব লাইনে বিভেদ সূচিত করার জন্য যথেষ্ট নয়। গোবলয়ের লোকেদের সমগ্র পরিচয়ের মধ্যে ধর্মীয় পরিচয়টা হয়তো বেশি স্থান ধারণ করে, যা তাদেরকে ধর্মীয়ভাবে বেশি গোড়া বানায়।

    এরকম ক্ষেত্রে মানুষের পক্ষে যেকোন ইনকন্সিস্টেন্সিকে মেনে নেয়াটা বেশি স্ট্রেসফুল হয়। বিবেকানন্দের সাধু হওয়া কিন্তু মাংস খাওয়া - এটা অমোঘ লীলা প্রভুর মনে বিশাল ইনকন্সিস্টেন্সির জন্ম দিয়েছিল। থিওলজিকাল ডিস্কাশনে হয়তো এই ইনকন্সিস্টেন্সি দূর করা সম্ভব (যদিও ইসকনি থিওলজি হয়তো তার জন্য যথেষ্ট হবে বলে মনে হয়না), হয়তো শাক্ত ধারা বা শাক্ত সাধনা সম্পর্কে তার জ্ঞান কম, কিন্তু সেটা দ্বিতীয় আলোচনা। প্রথম আলোচ্য হচ্ছে, তার মধ্যে এই 'ইনকন্সিস্টেন্সি' সেই জিনিসটা তৈরি করছে যাকে ফেস্টিঙ্গার নাম দিয়েছিলেন কগনিটিভ ডিজোনেন্স। এই ইনকন্সিস্টেন্সি তিনি মানতে পারছিলেন না আর তাই এগুলো বলেছেন। এখন এই জিনিসটা দুটো কারণে হচ্ছে - প্রথমত, ধর্মীয় পরিচয়ের গুরুত্ব বেশি হওয়া,যেকারণে গোড়ামি বাড়ছে,এখন তিনি সাধু মানুষ,ধর্মীয় পরিচয় তার পরিচয়ের মেজরিটি গঠন করবে,এটাই স্বাভাবিক। তাই তিনি যা বলছেন,তা গোবলয়ের অন্যন্য লোকদেরকে রিপ্রেজেন্ট করবে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। কিন্তু গোবলয়ের লোকেদের পরিচয়ে ধর্ম তুলনামূলক বেশি জায়গা নিয়ে থাকবে বলেই মনে হয়। আর দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে অজ্ঞতা।

    এখন বাঙালির কাছে এখন মাংস খাওয়া-খাওয়ি সহ বিভিন্ন বিষয়ে অত কিছু আসে যায়না এটা এক জিনিস,আর মুস্তবার সময়ে শাক্ত আর বৈষ্ণবরা একসাথে চলত বা নিজেদের মধ্যে কৌতুক করত সেটা আরেক জিনিস। এখন বাঙালির তেমন কিছু আসে যায়না কারণ তার পরিচয়ে ধর্মের অংশ কমে গেছে,তাই আচারের সাথে ধর্মের কন্সিস্টেন্সি নিয়ে তারা বেশি ভাবিত না। কিন্তু অতীতে বৈষ্ণব ও শাক্ত সহাবস্থান করত, উভয়ই রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ, চৈতন্যকে শ্রদ্ধাভক্তি করত - সেটা তখনকার বাঙালিরা ধর্মীয় পরিচয়কে নিজেদের পরিচয়ের একটা বড় অংশ মনে করার পরও (নাহলে শাক্ত,বৈষ্ণব পরিচয়গুলোও গুরুত্বহীন হতো),নিজেদের আচার ও ধর্মের মধ্যে কন্সিস্টেন্সি মেইনটেইন করার পরও করতো।এর কারণ ছিল উভয়ে উভয়ের বিশ্বদর্শন, ধর্মদর্শন,ধর্ম সম্পর্কে জানতো ও অনুসরণ না করলেও শ্রদ্ধা করতো,একে অপরকে বুঝতো।আর এই জিনিসটাই পার্থক্য করে দেয়। বর্তমানে ইস্কনিরা নিজেদের পথকেই একমাত্র পথ মনে করে, নিজেদের পথকে একমাত্র পথ মনে করে, নিজেদের ধর্মকেই একমাত্র হিন্দুধর্ম ও চর্চাযোগ্য বলে মনে করে। অন্যান্য মত সম্পর্কে জানার আগ্রহও নেই। আর এই অবস্থাতেই বিবেকানন্দ, রামকৃষ্ণের আচার দেখে ইনকন্সিস্টেন্ট মনে হওয়া ও কনিটিভ ডিজোনেন্সের উদ্ভব হওয়া স্বাভাবিক।

    আর এর সাথে যুক্ত হয়েছে যেটাকে রডনি স্টার্ক এবং রজার ফিঙ্কে বলছেন "রিলিজিয়াস ইকোনোমি"। এখানে ধর্ম বাজারের মতো একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। এখানে ধর্ম হয়ে যায় এমন সংস্থা যা অনুসারীদের জন্য একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করে। ধর্মীয় বাজার যত বেশি বৈচিত্র্যময় এবং প্রতিযোগিতামূলক হয়, সেই সমাজের ধর্মীয় জীবন তত বেশি প্রাণবন্ত এবং সক্রিয় হতে থাকে। অনেকগুলি ধর্মীয় গোষ্ঠী প্রত্যেকে তাদের নিজস্ব "পণ্য", মানে মতবাদ, আচার, সম্প্রদায়, নৈতিক নির্দেশিকা ইত্যাদি সরবরাহ করে, ও অনুসারী পাবার জন্য প্রতিযোগিতা করে। ধর্ম এখানে প্রোডাক্ট, অনুসারীরা সেই প্রোডাক্টের মার্কেট। আর ধর্মগুলো বা ধর্মের বিভিন্ন গোষ্ঠীগুলো একে অপরের সাথে মার্কেট ধরার বা নিজেদের মার্কেট শেয়ারের জন্য প্রতিযোগিতা করে। এভাবে তাদের গ্রোথ হয় ও রেভিনিউ বাড়ে। এরকম প্রতিযোগিতাপূর্ণ প্রতিবেশে প্রত্যেক গোষ্ঠীর ধর্মগুরু প্রতিযোগিতার মধ্যে থাকে, অন্যদের আঘাত করে আর অনুসারী বাড়ানোর চেষ্টা করে। ইস্কনেও তাই হচ্ছে।
  • a | 110.175.***.*** | ১৬ জুলাই ২০২৩ ১৭:২২521325
  • একটা কমিক স্কিটে শুনেছিলাম হিন্দুত্বের স্পেক্ট্রামে বাঙ্গালিরা ইসলামিক এন্ডে পড়ে। এটা বেশ মনে ধরেছিল, আর এ যে কত গর্বের কথা সেটা বলাই বাহুল্য। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে প্রতিক্রিয়া দিন