@ প্রশ্নআপনার দুটো দীর্ঘ ইংরেজি কোটেশনের কোন তথ্যসূত্র দেন নি তো? মানে কার লেখা, কবের কথা বলা হচ্ছে?
তবু বলছি, প্রথমটি ডাহা মিথ্যে। দ্বিতীয়টি সত্যি।
দেখুনঃ
১ সাভারকর ১৯৩৭ সাল অব্দি রত্নাগিরি সাল পর্য্যন্ত রত্নাগিরি জেলার বাঈরে পা বাড়াতে পারতেন না। তাহলে ফের জেলে যেতে হত। অতএব ধরে নিতে পারি সাভারকর তখন উত্তর ভারতে পুরনো সাথীদের (বিশেষতঃ আন্দামান ফেরতদের) সঙ্গে দেখা করছেন। এদিকে শচীন সান্যালও ১৯৩৭ সাল অব্দি জেলে ছিলেন । কিন্তু কেন?
সান্যাল অবশ্যই রাসবিহারী বসুর ডান হাত। কিন্তু তিনি সাভারকর ও রাসবিহারী বসুর (জাপানে) যোগসূত্র? এর চেয়ে হাস্যকর মিথ্যে কিছু হতে পারে না।
{ এব্যাপারে মহারাজের "জেলে তিরিশ বছর" এবং শচীন্দ্রনাথ সান্যালের (তিন ভাগে) "বন্দী জীবন" দেখা যেতে পারে।
তখন নেতাজি, ত্রৈলোক্য মহারাজ এবং শচীন সান্যাল একজুট হয়েছেন। নেতাজি দেখা করলেন সাভারকরের সংগে , সমর্থনের আশায়। শচীন্দ্র দেখা করলেন সাভারকরের দাদা বাবা রাও এবং আর এস এস এর প্রতিষ্ঠাতা কেশব হেড়গেওয়ারের সঙ্গে--আশা বিপ্লব প্রচেষ্টায় সমর্থন পাবেন। তিনজনই হতাশ করলেন। সান্যাল এবং মহারাজের লেখাতেই রয়েছে।
উপরের পোস্টে দেখিয়েছি --জাপান এবং জার্মানি থেকে রাসবিহারী বোস এবং নেতাজি সেই সময় সাভারকরকে সময় থাকতে ইংরেজের পক্ষ ছেড়ে জাপানের সমর্থনে স্বাধীনতার লড়াই করতে বলছেন! এ ব্যাপারে নেতাজি জিন্না ও সাভারকরকে একাসনে বসিয়েছেন।
তারপরও যদি বলতে থাকেন সাভারকরের পরামর্শে নেতাজি এবং রাসবিহারী জাপানে লড়াই করেছেন তো আমি নাচার!
আরও রয়েছে। আন্দামানে যখন মহারাজ এবং শচীন্দ্র বন্দী (১৯১৬) তখন সাভারকর, বারীন ঘোষ এবং উপেন্দ্রনাথের ৫ বছর হয়ে গেছে। সবাই অপেক্ষাকৃত আরামে আছেন, সাভারকর ক্লার্ক -২ হয়েছেন। (ওঁর আন্দামানের স্মৃতি নিয়ে লেখা দেখুন।) হেমচন্দ্র তেলঘানির চার্জে, বারীন অফিসের দায়িত্ব ইত্যাদি)।
মহারাজ ও শচীন্দ্রের আফশোস --এরা কেউ বন্দীদের নির্যাতনের প্রতিবাদের হরতালে যোগ দিলেন না।
কিন্তু দ্বিতীয় কোটেশনটি সত্যি। বিশের দশকে গান্ধীজি এবং শচীন সান্যালের মধ্যে অহিংসা বনাম হিংসার পথ নিয়ে তীব্র বাদানুবাদ চলে--একের পর এক। গান্ধীজি দুজনের প্রত্যকটি চিঠি ইয়ং ইন্ডিয়া পত্রিকায় প্রকাশ করেন।
২
১। ত্রৈলক্য চক্রবর্তী ও শচীন্দ্রনাথ সান্যাল কতদিন নজরবন্দী ছিলেন?
২। নজরবন্দী থাকাকালীন তাঁদের জীবনধারণ কোন আয়ে চলত?
৩। সাভারকার নজরবন্দী দশা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর পেনশন পেতেন?
সাভারকারের বিরুদ্ধে শচীন্দ্রনাথকে খাড়া করলে শচীন্দ্রনাথের আত্মা শান্তি পাবেন? ইতিহাস কি বলে?
-------
১ এবং ২ঃ দুজনেই ইংরেজ জমানায় জেলেই কাটিয়েছিলেন তিরিশ বছরের মত।ওঁদের লেখা জেলের স্মৃতিগুলো দেখুন। বাংলা, ইংরেজি এবং শচীন্দ্রেরটি হিন্দিতে উপলব্ধ।
প্রথমজন তো আন্দামানে পাঁচ এবং মান্দালয়ে চার বছর তারপর বঙ্গের বিভিন্ন জেলে। নজরবন্দী হয়ে নিজের জেলার বা ঘরে থাকার সুযোগ কোথায়? এই ছাড়া পাচ্ছেন ফের কোন না কোন কারণে কয়েক মাস বা দুএক বছরের মধ্যে ফের জেলে।
বিয়ে করেননি। একটা পেট চালিয়েছেন বন্ধুবান্ধব এবং অনুশীলন সমিতির সহযোগিতায়। কোলকাতার একটি স্কুলে ক'মাস পড়িয়েছিলেন, মাইনে নেন নি।
শচীন সান্যালের কয়েক ভাই , বৌ বাচ্চা ও মা। চাকরির চেষ্টা করলেন, কিন্তু কোনদিন আন্দোলনে যাবেন না লিখে দেওয়ার শর্ত থাকায় যোগ দিলেন না। ওঁর এক ভাই, সরকারি চাকুরে, পরিবারের দায়িত্ব তুলে নিলেন। ইনিও বারবার গ্রেফতার হলেন। দ্বিতীয় বার ফের কালাপানির শাস্তি পেলেন । ওঁদের বসতবাটি সরকার বাজেয়াপ্ত করে নিল।
জেলেই টিবি হয়ে মারা গেলেন।
আমি ওঁদের দুজনের লেখায় কোথাও ইংরেজ সরকারের থেকে মাসোহারা পাবার কথা পাইনি, যদ্দূর জানি, মুচলেকা না দিলে ওটা পাওয়া যায় না।
আপনি কোথাও উল্লেখ পেলে জানাবেন। তখন আমার ভুল শুধরে নেব।
৩ আমি জানি না। কোথাও পাইনি। তবে ওনার নজরবন্দী থাকার সময়েই ওঁর জন্য সাহায্য সমিতি বানিয়ে কিছু চাঁদা (প্রায় ১৪,০০০ টাকা) তোলা হয়েছিল। সেটা সেই সময়ের হিসেবে অনেক টাকা। ( বিক্রম সম্পতের লেখা সাভারকরের জীবনী "এ কন্টেস্টেড লিগ্যাসি", প্রথম অধ্যায়)।
আর ছোট ভাই ডঃ নারায়ণ রাও সাহায্য করতেন।
সাভারকর সঞ্চয়ী ছিলেন। খামোখা খরচা করতেন না। নিজের পরিচিতদের মধ্যে সুদে টাকা ধার দেওয়া শুরু করেছিলেন। কিন্তু কিছুদিন পরে অনেকে তাঁড় টাকা মেরে দেয়। তখন প্রয়াসটি বন্ধ হয়ে যায়। (সূত্রঃ সাভারকরের অধিকৃত ওয়েবসাইট)।
স