এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • ধারাবাহিক  ভ্রমণ কথাঃ  অচিনপুরের বালাই - ১

    Kishore Ghosal লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৭ নভেম্বর ২০২১ | ১০৭৮ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • “আপনে কোন স্টেশনে নামবেন, বাবু?”

    মাথা বোঝাই উস্কোখুস্কো চুল, একমুখ দাড়িগোঁফ। দুটো পা তার অচল। মুখে একগাল হাসি, চোখদুটো চিকচিক করছে, যেন খুব মজা পেয়েছে। ভাবলাম আলাপ-টালাপ শুরু করে ভিক্ষে চাইবে হয়তো, এ হচ্ছে তারই ভূমিকা। লোকটার প্রশ্নে একটু অবাক হলেও, বিরক্তি চেপে উদাসীন সুরে বললাম, এই ট্রেনের প্রান্তিক স্টেশনের নাম। আমার কথায় দাড়িগোঁফের জঙ্গলে ঢাকা, তার মুখের ভূগোলে হাসির সাম্রাজ্যবিস্তার ঘটে গেল মূহুর্তে।

    “কাদের বাড়ি যাবেন, আজ্ঞে?” এত খোঁজে তোমার কী দরকার বাপু? আমি চলেছি আমার অজানা এক জনপদে, আমার কাছে সে তো অচিনপুর। কিন্তু সেখানকার সব লোককেই কি তুমি চেন বুঝি? সেখানে কেউ কি তোমার অচেনা নেই? তাছাড়া আত্মীয়-কুটুম-বন্ধুর বাড়ি যাওয়া ছাড়া কোন জায়গায় কি যাওয়া যায় না? নিছক বেড়াতে, নিছক অচেনা জায়গার সঙ্গে চেনা-পরিচয় সারতে? লোকটা আমার মুখের থেকে একবারের জন্যেও তার দৃষ্টি সরায়নি। আমার সঠিক গন্তব্যের কথাটি না শুনলে তার যেন স্বস্তি হচ্ছে না।

    “কারও বাড়ি-টাড়ি নয়, এমনিই। জায়গাটা কেমন দেখতে এলাম”। ক্ষণেকের জন্যে লোকটার বিস্তীর্ণ হাসিটা একটু গুটিয়ে এল, চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল কয়েক মূহুর্ত, তারপর গলা উঁচিয়ে পেছনের দিকে কাউকে ডেকে বলল, “তোকে বলেছিলাম না, ফুলবন্তি, এ বাবু তেমন বাবু নয়”। আমি চমকে উঠে পিছনে ঘাড় ঘোরালাম। আমার পিছনের সারিতে জানালার ধারের সিটে বসে আছেন এক মহিলা। ওই মহিলাই নিশ্চয় ফুলবন্তী। কামরায় আর কাউকেই তো দেখতে পেলাম না। মহিলার পরনে গরীবগুর্বো ঢংয়ের জামা আর শাড়ি। মহিলা যাকে রূপসী বলে তা নয়, কিন্তু তার মুখের ভাবে এমন কিছু আছে, যা চট করে নজর কাড়ে। আমার সঙ্গে চোখাচোখি হতেই মহিলা হাত তুলে নমস্কারের ভঙ্গি করল, মুখে অস্বস্তির হাসি।

    শেয়ালদা থেকে লোকাল এই ট্রেনে চড়ে পড়েছিলাম, তেমন কিছু পরিকল্পনা ছাড়াই। দু আড়াই ঘন্টা সময়ে যদ্দূর যাওয়া যায় - গিয়ে, ফেরার ট্রেনে আবার ফিরে আসা। মাঝে - দেড় দুঘন্টা যতটা সময় মেলে - জায়গাটা একটু ঘুরেফিরে দেখা, জানা, চেনা। লোকে উইকএণ্ডে দীঘা বেড়াতে যায়, মন্দারমণি, বেথুয়া, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর। আমার উইকএণ্ড মানে টুরিষ্ট ম্যাপের বিপরীতে অচেনা অজানা জায়গায় হানা দেওয়া। এর মধ্যে আবিষ্কারের গন্ধ পাই। টুরিজ্‌মের থাবার আঁচড় না লাগা নতুন জায়গা, যার কৌলিন্য নেই, গোত্র নেই। আছে শুধু নাম। নাম কার না থাকে? নাম ছাড়া কাকেই বা চেনা যায়? যত ছোট গ্রামই হোক তার একটা নাম থাকে, যত ছোট্ট ফুলই হোক, তারও নাম থাকে। যত সামান্য মানুষই হোক একটা নাম থাকে তারও।

    এতক্ষণ বেশ ছিলাম, নিজের ঘোরে। যাত্রাপথের অচেনা সব স্টেশনের চেহারা আর নাম দেখছিলাম, সেখানকার লোকজন দেখছিলাম। দৌড়ে চলা রেলগাড়ির জানালা দিয়ে দেখছিলাম, পিছনদিকে ছুটে চলা সবুজ জাজিমে শুয়ে সোনা রোদ্দুরে হাসতে থাকা ঝলমলে সরষে ক্ষেতের পীতবরণ চাদর।

    মাঝে একটা স্টেশনে ট্রেন দাঁড়াল। মহিলা বেশ বড়ো একটা থলে আর পুঁটলি নিয়ে সিট ছেড়ে আমাদের দিকে এগিয়ে এল। আমার উল্টোদিকের সিটের কোনায় সসঙ্কোচে বসল, প্রতিবন্ধী মানুষটার দিকে তাকিয়ে বলল, “তোর এত আগ্‌গহ কিসের লেগে বল দিকি?” কথাটা বলে চোখের কোনে আমার দিকে তাকাল, ঠোঁটে লাজুক হাসির ছোঁয়া।

    কিন্তু মেঝেয় বসে থাকা পঙ্গু লোকটি নিরস্ত হবার মানুষই নয়, আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, “তোর চোক থেকেও চোক নাই ফুলবন্তি, বাবুর চোকের দিকে তাকিয়ে দ্যাক, অন্তরে যে ভরা কোটাল – সে তত্ত্বটা টের পাস?” আমার দিকে এক ঝলক তাকাল ফুলবন্তি, আমার চোখের গভীরে তাকাল হয়তো! চোখ দেখে কি মনের কথা বলা যায়? বাপরে, সে তো সাংঘাতিক – মানুষের মনে দিন-রাত কত রকম মতলব খেলে বেড়ায় – সে সবের ছায়াছবি কি ধরা পড়ে চোখের তারায়? আমি জিগ্যেস করলাম, “আপনার নাম কী, ভাই?”

    লোকটার মুখ হাসিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠল, চোখ নাচিয়ে ফুলবন্তিকে বলল, “কিচু বুজলি, ফুলবন্তি? “আপনে”, তায় আবার “ভাই” – এ লোককে চিনতে কিচু ভুল করেচি বল?” ফুলবন্তি আমার মুখের দিকে একবার তাকিয়ে মুচকি হাসল, বলল, “ওর আবার নাম কী, বাবু? কেউ বলে ল্যাংড়া বাউল। কেউ ল্যাংড়া ফকির। কেউ বলে নুলো খ্যাপা”। লোকটার মুখে হাসি যেন আর ধরে না, ফুলবন্তির মুখের দিকে তাকিয়ে, আদুরে হেসে জিগ্যেস করল, “আর তুই? তুই কী বলে ডাকিস সেটা বাবুকে বলে দে!”

    ফুলবন্তি এবার সত্যিই লজ্জা পেল, তার কালোকোলো দুই গালে লজ্জার হাসি, ঘাড় ঝামটা দিয়ে বলল, “মরণ, আমি আবার কী বলি? আমি বলি, বালাই – মনের বালাই”। ফুলবন্তির কথা শুনে আমি চমকে উঠি। ও বাবা, এ যে মনে এক, মুখে আর। ফুলবন্তির চোখের আলোয়, লজ্জা মাখা হাসিতে, তার মানুষটি যে মোটেই মনের বালাই নয়, সেটুকু বুঝতে আমার মতো অচিন মানুষেরও এতটুকু অসুবিধে হল না। ফুলবন্তির মুখের থেকে চোখ সরিয়ে বালাইয়ের মুখের দিকে তাকাতেই দেখি, সে আমার মুখের দিকেই তাকিয়ে আছে, চোখে-মুখে তার পাজির-পাঝাড়া ধরনের হাসি। আমার সঙ্গে চোখাচোখি হতেই সুর করে গেয়ে বলল, “জেবন বড়ো বালাই বাবু, জেবন বড়ো বালাই, মনটুকু সব উজোড় করে, করলে চুরি কালাই। অগো, শুষ্ক জেবন রইল পড়ে, সে বড়ো এক জ্বালাই!”

    ফুলবন্তি এবার সিট থেকে উঠে মুখ ঝামটা দিয়ে বলে উঠল, “থাক, ঢের আদিখ্যেতা হয়েচে। এবার নামতি হবে!” বালাইয়ের স্বর এবং গায়ন ভঙ্গি শ্রুতিমধুর সন্দেহ নেই, আর সেই গান শুনতে শুনতে আমিও খেয়াল করিনি, গাড়ির গতি কমে এসেছে – অচিরেই আমার যাত্রা শেষ – যাত্রা শেষ এই ট্রেনেরও।

    ফুলবন্তি থলি আর পুঁটলি নিয়ে এগিয়ে গেল দরজার দিকে। তার পেছনে বালাই চলল, দু হাতে ভর দিয়ে, পশ্চাতে মেঝে ঘসটে ঘসটে। তার পেছনে আমি, আমার কাঁধে ছোট্ট ব্যাগ। ট্রেন থেকে নেমে ফুলবন্তি থলে আর পুঁটলি নামিয়ে রাখল প্ল্যাটফর্মের মেঝেয়। তারপর ছোট্টছেলেকে যেমন মা কোলে করে আগলে নামায়, তেমনি বালাইকে নামাল প্ল্যাটফর্মে। প্ল্যাটফর্মে স্থিতু হয়েই বালাই আমার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে বলল, “আসেন বাবু, আসেন। আমাদের বাসাতেই চলেন। দেখতেই তো এয়েচেন, আমাদের ওদিকেই দেখতে পাবেন, অচেনা মাঠঘাট, অচেনা আকাশ, অচেনা সাগর-নদী, হাড়হাভাতে অচেনা মানুষজনের জেবনযাপন...”। স্টেশনের বাইরে যাওয়ার গেটের দিকে ফুলবন্তি এগিয়ে গেল, তার থলি আর পুঁটলি নিয়ে। আমি বালাইয়ের সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে বললাম, “তার দরকার কী, বালাই ভাই? স্টেশনের বাইরে কোন হোটেলে টুকটাক খেয়ে নিয়ে, একটা রিকশ নিয়ে যা দেখার দেখে নেব”।

    ফুলবন্তি ঘাড় ঘুরিয়ে হাসল ফিক করে, বালাইয়ের সঙ্গে চোখচোখে কিছু কথাও সেরে নিল। বালাই হাতে ভর দিয়ে চলতে চলতে বলল, “এখানে হোটেল তো নেই বাবু। বাইরে একখানি চায়ের দোকান আছে, হারানের। তা সেও ঝাঁপ ফেলে এখন ঘরে যাবে। দুপুরের দিকে তেমন খদ্দেরপাতি হয় না। ঝাঁপ তুলবে আবার সেই বিকেলে, চারটে নাগাদ – সেও আটটা সাড়ে আটটা বাজলেই হল - সারাদিনের মতো ব্যবসাপত্তর শেষ”। আমার দিকে মুখ তুলে আবার বলল, “ফুলবন্তির রান্না একবারটি খেয়ে দেখেন না বাবু, ভাত আর চুনো মাছের সরষে ঝাল, আহা মুখে লেগে থাকে, যেন অমেত্ত”। যাত্রীরা সবাই চলে গেছে, কালোকোট পরা রেলের ভদ্রলোক গেটের কাছে দাঁড়িয়েছিলেন, বালাই আর ফুলবন্তির সঙ্গে আমাকে দেখে তিনি বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন। বালাই একগাল হেসে তাঁকে বলল, “পেন্নাম বড়বাবু, সব খপর ভালো তো?” বড়বাবু বেজার মুখে জিগ্যেস করলেন, “কোথা থেকে ফিরছিস রে খ্যাপা? টিকিট আছে?” চোখ নাচিয়ে একগাল হেসে বালাই উত্তর দিল “আপনে থাকতে আমাদের টিকিট কাটা লাগবে - এ কেমন বিচার বলেন দিকি, বড়োবাবু”? ফুলবন্তী কিন্তু ওসব রহস্য কথার ধার দিয়েও গেল না, কাঁকালের পুঁটলি নামিয়ে, কোঁচড়ে বাঁধা প্লাস্টিরের মোড়ক খুলে দুটি টিকিট দেখাল। “পারানির কড়ি ফাঁকি দিয়ে আমি পথ চলতে পারি, কিন্তু ফুলবন্তীর কাছে যে সেটি হবার জো নেই, বড়োবাবু?” বালাই তার উজ্জ্বল চোখে হাসি ঝলমলিয়ে বলল।

    আমি দাঁড়িয়ে পকেট থেকে টিকিট বের করতে উদ্যত হতেই স্টেশনের বড়োবাবু বললেন, “থাক, থাক দেখাতে হবে না”। বালাই আমার পায়ে হাত রেখে হাসতে হাসতে বলল, “চলেন বাবু, চলেন, বড়োবাবুর পারমিশিন হয়েচে, আজ্ঞে”।

    স্টেশনের বাইরে বেরিয়ে সত্যিই অথৈ জলে পড়লাম। সেখানে কিস্‌সু নেই। জনবিরল চত্বরে শোভা বাড়িয়েছে কয়েকটি দুর্বল ছাগল। বাঁদিকে একটা চায়ের ঝুপড়ি, কেরোসিনের পাম্প-স্টোভ নিভে গেছে অনেকক্ষণ! তোবড়ানো সসপ্যান, কাচের গেলাস ধোয়া সেরে, উঠে দাঁড়াল যে, সেই কী হারান? আমাদের দিকে এক ঝলক তাকিয়ে বলল, “আজ ফেরা হল, বাউল? বেশ আছিস ব্যাটা, আজ এ মেলা, কাল...”। বালাই চলতে চলতেই একগাল হেসে উত্তর দিল, “তা বটে, কচুরিপানার মতো ভেসে বেড়াই এঘাটে, সেঘাটে...সব হারিয়েও আমরা হারান নাম পেলাম না, অথচ সব থেকেও তোমার নাম হল কিনা হারান?” হাতের কাজ সারতে সারতে হারান ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে হাসি মুখে বলল, “হারামজাদা, কথায় কে পারবে তোর সঙ্গে?”

    স্টেশনের বাইরের হাল দেখে আমি একটু থমকে গেলাম। কোথায় যাবো, কিছু কী আছে দেখার মতো? আমার থমকে যাওয়া দেখে, বালাই বলল, “থেমে থাকবেন না, বাবু, সব্বাই চলছে, চলতে থাকেন। ওই দ্যাখেন ফুলবন্তি কদ্দূর এগিয়ে গেছে...ওর তাড়া আছে...অনেকদিন পর ঘরে ফেরা...আওতা ঘরটা তাকে গুছিয়ে তুলতে হবে...রান্নাবান্না করবে... অতিথ সেবার যোগাড় আছে...চলেন বাবু...চলেন”।

    এসেছি যখন দেখেই যাই। ফেরার ট্রেনও তো সেই বিকেলের আগে নয়। বালাইয়ের পাশে হাঁটতে হাঁটতে খুব সঙ্কোচের সঙ্গে বললাম, “তোমাদের ছোট্ট সংসারে, উটকো আমার ব্যবস্থা না করলেই কি নয়, বালাই?” এই প্রথমবার বালাইয়ের মুখ কিছুটা গম্ভীর হল। একবার আমার মুখের দিকে তাকিয়ে, উদাস চোখে বলল “আমাদের সংসার ছোট্ট। সে কথাটি নিজ্জস সত্যি বাবু। কিন্তু সে কারণে তো আপনার সংকোচ নয় বাবু, আপনি ভাবতেচেন আমাদের অভাবের কথা, তাই না বাবু! কিন্তু আমাদের তো অভাব নেই, বাবু, সকলের সঙ্গেই আমাদের ভাব...ভাবের কথায় আমাদের চোখে পানি ঝরে! আমরা গরিব হতে পারি, কিন্তু অভাব আছে? কই না?” বালাইয়ের মুখ আবার আগের মতোই হাসিতে উজ্জ্বল। একটু থেমে থেকে সে আবার গেয়ে উঠল, “ভবে এসে ভাবের দেশে ঘুরি ফিরি আপন মনে, সাদা কালো ভাবের আলো, আমি জানি আর কালা জানে”।

    আর কোন গত্যন্তর নেই দেখে মনের দ্বিধা ঝেড়ে ফেললাম। অচেনা পথে বালাইয়ের সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে জিগ্যেস করলাম, “এসব গান তুমি মুখে মুখেই বানাও, বালাই?” বালাই হাসল, কিছু বলল না। হাঁটতে হাঁটতে আমরা পিচের রাস্তা ছেড়ে উঠে এলাম, উঁচু বাঁধের পথে। বাঁধে উঠে ডান দিকে চোখ ফেরাতেই সামনে ভেসে উঠল সীমাহীন দৃশ্য। বাঁধ বরাবর আমাদের পায়ে চলা রাস্তা। তার ডানদিকে অনেকটা নিচে বিস্তীর্ণ বালির চড়। তার পরেই ছোট্ট একটা আঁকাবাঁকা খাল। তাতে তিরতির করে বয়ে চলেছে অল্প জল। খালের স্বল্প জলেই নোঙর বেঁধেছে তিনটে মাছ ধরার নৌকো। তারপর আবার অনেকটা চড়া – তারপর আকাশের রঙে রঙিন হয়ে ওঠা সাগরের জল। বাঁধ বরাবর আর বাঁধের বাঁদিকে গাছপালা, বাড়িঘর, চাষের জমি, আর ডানদিকে বিশাল ব্যাপ্ত এক প্রেক্ষাপট। ভারি নিরিবিলি শান্তির ছবি।

    হাঁটতে হাঁটতে বালাইকে জিগ্যেস করলাম, “তুমি তো মুসলমান, তাহলে কৃষ্ণের নামে গান গাও কেন?” বালাই খুব হাসল কিছুক্ষণ, তারপর বলল, “ওই যাঃ, চিনলেন কী প্রকারে? চোখে পানি বলেছি বলে?” কোন উত্তর দিলাম না, বালাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে গেয়ে উঠল, “ছলছল চোখে আনিতে জল ছল করে যায় যমুনায়, নয়নমণিরে হারায়ে অভাগী হেথা কোথা বৃথা খুঁজিয়া বেড়ায়... আমার ওই এক কথাতেই আমায় চিনে ফেললেন, বাবু? তাহলে ব্যাপ্ত এই দিগন্তের মাঠঘাট-সাগর-নদী-প্রান্তর দেখেই আপনার এই অচেনা অজানা দেশও চিনে ফেলেছেন, বলেন?” দাড়ির আড়ালে মিচকে হাসির রেশ টেনে সে আবার বলল, “এত সহজে কী চেনা যায়, বাবু, আমার কালাকে...বসেন, দেখেন, সুখদুখের কথা কন কিয়ৎক্ষণ, তারপর না জানাজানি, চেনাচিনি...?”

    আমার শহুরে শিক্ষায় একটু লজ্জা পেয়ে আমি বালাইয়ের সঙ্গে চুপচাপ হাঁটতে লাগলাম। বাংলার বাইরে সর্বত্রই জলকে পানি বলে, তবু কী করে আমি ধরে নিলাম “পানি” বলা মানেই সে মুসলমান? বালাই আর কিছু বলল না, গুনগুন করে কোন গানের সুর ভাঁজতে ভাঁজতে এগিয়ে চলল দু হাতে ভর দিয়ে পশ্চাৎ ঘষতে ঘষতে...।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • reeta bandyopadhyay | ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ ১৪:২১502379
  • প্রথম কিস্তি পড়েই ভালো লাগলো ।
  • aranya | 2601:84:4600:5410:1071:25c4:6f93:***:*** | ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ ২৩:৫১502396
  • কালকূট মনে পড়ে 
  • Mousumi Banerjee | ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ ১৬:২৬502402
  • 'কোথায় পাব তারে'  প্রভাব ... বেশ হয়েছে লেখা
  • Nirmalya Nag | ০২ জানুয়ারি ২০২২ ০৮:৩৯502427
  • ভাল লাগল। তবে অমৃত কুম্ভের সন্ধানের বাউলের কথা মন্র এল।
  • Kishore Ghosal | ০২ জানুয়ারি ২০২২ ২৩:২১502448
  • সক্কলের কথাই ঠিক - সমরেশ বসু তথা কালকূট আমার অত্যন্ত প্রিয় গদ্যকার ছিলেন, আমার লেখায় তাঁর ফ্লেভার পাচ্ছেন - তাঁর ভক্ত পাঠক হিসেবে আমি ধন্য।  
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন