
সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোনএ কোনো ইয়ার্কি নয়। আমি সাক্ষাৎ ঈশ্বরকে দেখেছি। একদম জলজ্যান্ত, যেমত কম্পিউটারে জিফ, যেমত টিভির পর্দায় টুইন-টাওয়ার। একদম সেইরকমই প্রত্যক্ষ জ্ঞানে।
ব্যাপারটা বোঝানোর জন্য একটু ইতিহাস বলা দরকার। ব্যাপারটা গুরু সংক্রান্ত। গুরু শুরু হয়েছিল একদম এলোমেলোভাবে। ২০০৩-৪ এরকম সাল নাগাদ। সাইটে কিছু লেখাপত্র ছিল টুকরো-টাকরা। আর ছিল ভাটিয়ালি বলে একটা বস্তু। যেখানে লোকজন যা খুশি পরপর লিখে যেতেন। এখনও যান। জিনিসটা পড়তে হয় নিচ থেকে উপরে। অনেক সময় খেই থাকে, অনেক সময় থাকেনা। কিন্তু তালে-গোলে জিনিসটা চলতেই থাকে। এর জন্য কোনো ঈশ্বরদর্শন হয়নি। দরকারও পড়েনি।
এর পর এল, টইপত্তর বলে এক বিভাগ। ভাটিয়ালি নামক এলোমেলোপনাকে একটু ছিপ দিয়ে গেঁথে ফেলা আর কি। সেখানে নানা সুতো খোলা যেত। লোকে সেখানেও লিখতেন। এখনও লেখেন। প্রথমে একটি নাম ঠিক করতে হয় বিষয়ের। তারপরে বিষয় নিয়ে না বিষয় ছাড়া অনন্ত ভাট। খোলার পর থেকে সেও গড়গড় করে চলতে শুরু করল। কিন্তু ঈশ্বর তখনও অধরা।
মোটামুটি একই সময় এল বুলবুলভাজা-আলোচনা-কূটকচা৯। সেসবও এখনও বেরোয়। বস্তুত বহুগুণ বেশি বেরোয়। সেগুলো মূলত সম্পাদিত লেখাপত্তর। তাতে সম্পাদকের হস্তক্ষেপ লাগে। তখনও লাগত এখনও লাগে। কিন্তু না, সম্পাদক ঈশ্বর নন। বড়জোর হাতে পাবলিশ-আনপাবলিশ বাটন নিয়ে বসে থাকা এক কেরানি মাত্র।
কেলোটা বাধল এর পরে। যখন আমরা ভাবলাম, লেখালিখি হচ্ছেই যখন, তখন ব্লগ-টগ করে ফেলা যাক। করে ফেলা গেল। হয়েই যখন গেল, লোকজন লিখতেও শুরু করলেন, তখন ভাবা গেল, এবার বাংলা বাজারে যে প্রতিষ্ঠানবিরোধী বা অপ্রাতিষ্ঠানিক বা উল্টো-পাল্টা প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, তাদের তর্কাতর্কি মতামত প্রদানের একটা পরিসর তৈরি করে ফেলা যাক। সেরকম এক আধজনকে বলেও ফেললাম। বড়সড় কেউ না। দু-একটা ছোটো পত্রিকা। ছোটোখাটো গুষ্টি। এইসব। তাদের মধ্যে কেউ-কেউ বললেন, 'অন্যদের সাইটে আমরা লিখিনা'। এতে কোনো সমস্যা ছিলনা। ছোটো প্রতিষ্ঠান বলে কি রেলা থাকতেই নেই? আমারই রেলা আছে, তো অন্যদের কেন থাকবেনা। কিন্তু সমস্যা হল, যখন জিজ্ঞাসা করা হল, 'তবে কি নিজেদের সাইটে লেখেন?' বললে বিশ্বাস করবেননা, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উত্তর এল, 'না, ফেসবুকে লিখি'।
সেই প্রথম আমার ঈশ্বর দর্শন হল। ফেসবুক, টুইটার, এরা আর 'অন্যের সাইট' নয়, এমনকি 'অন্য'ও নয়, পুরো একান্ত আপন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরা আর ব্যক্তি-মালিকানাধীন-বহুজাতিক নয়, যাদের বার্ষিক রোজগার বহু দেশের জিডিপির চেয়েও বেশি বলে শুনি। যেমত সংবিধান, যেমত ক্রিকেটের ভগবান শচিন তেন্ডুলকার, তেমনই ফেসবুক, ইদানিং ঈশ্বরপ্রতিম। আগে লোকে কম্পিউটার বলতে উইন্ডোজ বুঝত, তারও আগে ঠান্ডা-পানীয় বলতে কোকাকোলা বুঝত, ভারতে প্রতিলিপির প্রতিশব্দ তো বহুদিনই জেরক্স, কিন্তু এরা সর্বজনগ্রাহ্য ছিলনা। কোকের বিরুদ্ধে, বহুজাতিকের বিরুদ্ধে যুদ্ধটা কেউ কেউ চালিয়েই গেছেন, মুখে হোক, কাজে হোক। কিন্তু আজকের ফেসবুক বা টুইটার বা হোয়াটসাপ, এসবের চেয়ে বহুগুণ বেশি। এরা সর্বজনগ্রাহ্য। সর্বত্রগামী। ছোটো-খাটো গুষ্টি, গোটা দুনিয়ায় যারা র্যাডিকাল বলে পরিচিত, তারা কেউ বোকা নন। কিন্তু তাদের কাছেও সোশাল মিডিয়া মুক্তির দিশা। আপনার প্রতিটি পদক্ষেপ এরা মেপে রাখে, আপনাকেই বাঁশ দেবার জন্য ব্যবহার করে, তাতে কী? তবুও আপনি আপনার যাবতীয় র্যাডিকালপনা নিয়ে ঝাটিংগার পাখির মতো, সোৎসাহে ঝাঁপ দেবেন আগুনের বুকে,সর্বব্যাপী আনুগত্য এতটাই। একে ঈশ্বর বললে ঈশ্বরের অপমান করা হয়, অতিমারীর মতো অতীশ্বর জাতীয় কোনো শব্দবন্ধ বানাতে পারলে ভাল হত এর জন্য। কারণ বিশ্বের এতাবৎকালের কোনো সাকার বা নিরাকার ঈশ্বর, এই আনুগত্য তৈরি করতে পারেননি। কোনো ঈশ্বর নজরদারিকে দুশো কোটি লোকের কাছে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের মতো স্বাভাবিক করে তুলতে পারেননি। কোনো ঈশ্বর, বিরোধিতাকে এভাবে আত্মসাৎ করে নিতে পারেননি।
এই ঈশ্বরের সামনে, বলাবাহুল্য নাস্তিক্যকে সম্পূর্ণ অকেজো মনে হয় কোনো কোনো সময়ে। সারাজীবন নাস্তিক্যের চর্চা করে, গত পনেরো বছরে এই ঈশ্বরের জন্ম এবং উত্থান দেখলাম। ধরুন গুরুতেই, যখন লগিন চালু হল, গুরু ডেটা নিয়ে নিচ্ছে কিনা এই নিয়ে প্রচুর প্রশ্ন-তর্কাতর্কি হয়েছে। বহু লোকে জেহাদ ঘোষণা করে লগিন করেননি। ব্যাপারটা পছন্দ করিনি, কারণ নাম-মেল-আইডি-ছবি এই কটা জিনিসে কী মহাভারত অশুদ্ধ হয় বুঝিনি। কিন্তু মেনে নিয়েছি, কারণ ওটুকুও জানাবনা, লোকে বলতেই পারে। অথচ এও দেখেছি তাঁদের বেশিরভাগেরই অন্য সোশাল-মিডিয়ায় লগিন করতে কোনো অসুবিধে হয়নি, তারা কতরকম তথ্য রাখে, আর তথ্য নিয়ে কী করে জানার পরেও। দোষ তাঁদের নয়, ওটাই ঈশ্বরের গুণ। প্রতিষ্ঠানবিরোধী ও র্যাডিকালরা, এমনকি যাঁরা সংসদকেও একেবারেই ব্যবহার করা যায়না মনে করেন, তাঁদেরকেও দেখি একচেটিয়া পুঁজির মঞ্চকে ব্যবহার করতে। ব্যবহার করাই বলেন নিশ্চয়ই,জানা নেই। যদিও এটুকু জানা আছে, যে, মাধ্যম তাঁদের ব্যবহার করে অনেকগুণ বেশি। দোষ তাঁদেরও নয়। বাকিদের আর কী বলব। আমি এত লম্বা লেখা লিখে, নিজেও সোশাল মিডিয়ায় জাজ্বল্যমান। অন্য কিছু করার চেষ্টা করছি, কিন্তু প্যারাডক্স এই, যে, স্রেফ সেই কারণেই সোশাল মিডিয়া থেকে বেরিয়ে আসতে পারিনি। দোষ আমারও নয়। এটাই ঈশ্বরের গুণ। অনিবার্য, অপ্রতিরোধ্য ও সর্বত্রগামী হয়ে ওঠা। তিনি হাতের লাঠি ওঁচালে জলও দুভাগ হয়ে যায়, কে না জানে।
আমি এই ঈশ্বরকেই দেখেছি। সাক্ষাৎ ও জ্বলজ্যান্ত। যেমত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। সোঁ সোঁ করে মিসাইল আছড়ে পড়ছে বাগদাদে। ওয়েপনস অফ মাস ডেস্ট্রাকশন। সেইরকম।
dc | 103.195.***.*** | ১১ অক্টোবর ২০২০ ১৪:০৮98274এ তো জানা কথাই :-) ফেবু, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, এরা হলো তেত্রিশ কোটি দেবদেবীর বিভিন্ন রূপ। এই তো গতোকালই পড়লাম, ও এস ১৪ আর অ্যানড্রয়েড এবার থেকে চারপাশে বিভিন আওয়াজ, যেমন সাইরেন বা ডোরবেল, শুনতে পেলে অ্যালার্ট দেবে। অর্থাত সারাক্ষন কান খাড়া করে আমাদের সব কথাবার্তা শুনে চলেছে।
পড়ে নিন কিভাবে সেট করতে হবেঃ
https://www.imore.com/how-set-and-use-sound-recognition-iphone-and-ipad
তবে কিনা ঈশ্বরেরও বাবা (বা maa) থাকে, আমাদের ঈশ্বর ফেবুরও আছে।
ফেবুর বাবা কে?
কে আবার, স্বয়ং ইনটারনেট ! ডার্পা, ভিন্ট সার্ফ, আর বব কান :-)
anandaB | 50.125.***.*** | ১১ অক্টোবর ২০২০ ২২:২৩98305শেষ পাঁচটি লাইন পড়ার আগে পর্যন্ত খুব অপরাধবোধে ভুগছিলাম এই ভেবে যে এ মা আমি কি নিকিরি এখনো লগইন টাও করে উঠেতে পারলাম না :)
তারপর ভেবে দেখলাম না , ঠিকই তো আছে , এক তো আমার নাম ধাম ইত্যাদি এমন কিছু গোপনীয় নয় . উৎসাহী কেউ (যদি আদৌ কেউ থেকে থাকেন ) অতি সহজে জেনে ফেলতে পারেন এই ভুবনজোড়া অন্তর্জাল সাম্রাজ্যে
আর সবচে বড়ো কথা গুরুতে লগইন করলে সেই ঈশ্বর এরই শরণাপন্ন হতে হবে (ওই সেই প্যারাডক্স )।...তো গুরু যদি কোনোদিন অন্য কিছু সমাধান দেয় তো বেশ হয়
tophaa | 2a0b:f4c2:1::***:*** | ১২ অক্টোবর ২০২০ ০৩:৪০98311তোফা।
সম্বিৎ | ১২ অক্টোবর ২০২০ ০৬:৫৪98313আমি ঈশ্বরের দরবারে ছিলাম।
টুকটাক লেখা আগে গুরুতেই লিখেছি। কিন্তু নিয়মিত লিখতে শুরু করি ফেসবুকে। দেড় বছর হল আমি ঈশ্বরের দরবার থেকে স্বেচ্ছা-নির্বাসিত। ডেটা প্রাইভেসি একটা কারণ, কিন্তু একমাত্র নয়। কারণ সর্বগ্রাসী ডেটা ক্যাপচার থেকে মুক্তি? হা হা, ওরে মুক্তি কোথায় পাবি? আমার ফেসবুক ত্যাগের কারণ সোশাল মিডিয়ার অ্যাডিকশন আমাকে গ্রাস করছিল। ফেসবুক ত্যাগ করে আমি দিনে অন্ততঃ একঘন্টা এক্সট্রা পাই বই পড়ার বা নিজের পছন্দের কাজ করার।
কিন্তু অন্যদিকে, আমার পাঠককুল যত ছোটই হোক, ফেসবুকের পাঠকদের মিস করি। (জাঁহাপনা, 'পাঠক' এখানে জেন্ডার-নিরপেক্ষ।) গুরুর পাঠকের চরিত্র ফেসবুকের থেকে প্রায় সম্পূর্ণই আলাদা। একই লেখা ফেসবুকে ও গুরুতে দিয়ে ভিন্ন - কখনও বা সম্পূর্ণ বিপরীত - পাঠপ্রতিক্রিয়া পেয়েছি। লিখি তো পড়াব বলেই। কাজেই সেই লেখা পড়লে এবং পাঠপ্রতিক্রিয়া পেলে তৃপ্তি পাই। লেখা দিয়ে বাংলা ভাষায় যুগান্ত এনে দেব, এমন কোন মহান উচ্চাশা আমার নেই। এমন কোন কথাও জানিনা যা অন্য হাজার-হাজার লোক জানেনা। কাজেই লিখলেও ক্ষতি নেই - ইনফর্মেশন ওভারলোড বাড়ান ছাড়া, আর না লিখলেও ক্ষতি নেই - ব্যক্তিগত ইতিহাসের ভান্ডারে অকিঞ্চিৎকর কন্ট্রিবিউশন না রাখা ছাড়া।
ঈশ্বরের দরবারে না গিয়ে রিডারশিপ কী করে বাড়ান যায়, সেটা ঈশানদের ভাবতেই হবে। কারণ লেখক সেখানেই যাবে, পাঠক যেখানে। ধূলামন্দিরের দিন শেষ। পাঠক এখন ঈশ্বরের দরবারেই বেশি ভিড় জমান।
একক | ১২ অক্টোবর ২০২০ ০৭:২৬98314ঈশ্বর থেকে সরে আসার মনে হয় দুটি সহজ পথ আচে। এক, কোথাও পূজা না দেওয়া। লেখা শুধুই নিজের জন্যে লিকে দেরাজে রাখা বা সেল্ফ পাব্লিশ। মুশকিল এই যে তাতে সো অহম গ্রাস করে আপনি কখন প্রণম্য মূর্খে পরিণত হবেন, সে টের ও পাবেন না।
দু নং পথ, এক্কেরে ওল্ড স্কুল পলিথেইস্ট বনে যাওয়া। শেতলা থেকে ইতু সব করুন। আপনার দেওতারা কেও ব্রহ্ম নয়, অতয়েব, এই দেবতা ওই দেবতাকে বাঁশ দেবে, সেই দেবতা এই দেবতার দিকে হাতুড়ি উঠিয়ে তেড়ে যাবে এসব নাট্যকে নাইট্য হিসেবেই এঞ্জয় করুন, বড়জোর পালাগান করুন তা নিয়ে, কোন বাপের ভয় নেই কারন কে যে বাপ ঠিক নেই। দুহাতে লিখুন, যেখানে সুজোগ থুড়ি আকাঙ্খিত রসিক পাঠক মেলে সেখানেই লিখুন। এবার যার যেটা পোষাবে। :)))
rathin | 198.98.***.*** | ১২ অক্টোবর ২০২০ ১০:১১98324আমি ফেসবুক ছেড়েছি কিন্তু গুরুতে এখনও ঢুকিনি।
গুরুতে না ঢুকেও গুরুতে লিখতে পারছেন ?
S | 2a03:4000:21:8a8:dead:beef:ca1f:***:*** | ১২ অক্টোবর ২০২০ ১১:২৮98326আমি ফেসবুকে, টুইটারে নেই। প্রাচীন যুগে অর্কুটে ছিলাম (নামটাই মনে করতে পারছিলাম না)। অবশ্যি লোকে সেখানে নিজের লেখা পোস্ট করতো না। সিলিকন ভ্যালী দেখলো যে এত ভালো মজা, লোকে নিজেরাই নিজেদের সব তথ্য সেখানে দিয়ে দিচ্ছে ছবি সমেত। কোনও ফেক কলটলও করতে হচ্ছেনা। ফেসবুক এসে গেল। দেখলো তাতেও যথেষ্ট ইনফর্মেশান নেওয়া যাচ্ছে না, মনের ভাবও যদি লোকে একটা প্রাইভেট কোম্পানিকে জানিয়ে দেয় তাহলে বেশ হয়। সেখানে ওয়াল না কি আছে, সেটা পেয়ে সবাই লেখাক, প্রাবন্ধিক হয়ে গেল। ফেসবুক জেনে গেল আপনি আজ সকালে কি বাজার করবেন থেকে কাকে ভোট দেবেন। তারপর অনেকে বললো যে অতবড় লিখতে পারিনা, পড়তেও সময় লাগে। তখন টুইটার এলো। লোকে ১৪০ ক্যারেক্টারেই মনের ভাব থেকে পাবলিক পলিসি সব দিতে লাগলো। সোশাল মিডিয়া থেকে ছবি নিয়ে বজ্জাত লোকেরা ফেক টেক তৈরী করত, এদিক সেদিক পোস্ট করে দিত লোকে। তখন ইনস্টাগ্রাম এলো। সেখানে মহিলারা নিজেরাই নিজেদের অশ্লীল ছবি পোস্ট করে।