এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বাকিসব  মোচ্ছব

  • আহিরণ নদীর বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না - ২ 

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    বাকিসব | মোচ্ছব | ০৬ অক্টোবর ২০২০ | ২১৪৭ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • (৩)

    তারপর কেটে গেছে দশ-দশটি বছর।

    কাঠঘোরা থেকে কোরবা যাওয়ার মোরাম ঢালা পথটি পাকা পিচঢালা হয়েছে।  মোটরবাস চলছে বিলাসপুর থেকে বারুদ ফ্যাক্টরি হয়ে কোরবা; আর কাঠঘোরা থেকে আরেকটি পথ ইংরেজি ‘ওয়াই’ অক্ষর বা গুলতির বাঁদিকের মত চলে গেছে প্রায় দু’শো কিলোমিটার এঁকেবেঁকে অম্বিকাপুর, সরগুজা জেলার সদর।  প্রথমটি গেছে আহিরণ নদীর বুকের উপর দিয়ে, অন্যটি হসদেও নদী পেরিয়ে।

    বারুদ ফ্যাক্টরির সুবাদে গাঁয়ের জনাতিনেক ছোকরা চাকরি পেয়েছে।  ওরা বাপ-ঠাকুর্দার পেশা চাষ করা ছেড়ে শহুরে কায়দাকানুন রপ্ত করেছে।  ধুতি পাজামা ছেড়ে ওরা ধরেছে টেরেলিনের চকচকে জামা আর কোরবা থেকে কেনা জীন্সের প্যান্ট, পায়ে বুটজুতো, তবে মোজা ছাড়া।  ওদের মোটা ফ্রেমের গো-গো রোদচশমায় নানান রঙের ঝিলিক।

    ওরা মাসিক কিস্তিতে হারকিউলিস সাইকেল কিনেছে, আর কিনেছে কোরবা বাজারের কপুর এন্ড সন্স থেকে ট্রানজিস্টার রেডিও , চার ব্যান্ডের।  সকাল সকাল ‘বাসি’ (পান্তাভাত) খেয়ে টিফিন কৌটোয় রুটি তরকারি বেঁধে নিয়ে ওরা যখন একসাথে পাঁচ কিলোমিটার দূরের বারুদকারখানার উদ্দেশে রওনা দেয় তখন পুকুর থেকে কলসি ভরে জল নিয়ে ফেরা রাইকিশোরীর দল লজ্জালজ্জা মুখে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে।

    ছেলেগুলো টের পায়, গর্বে পেখম মেলে সামনে তাকিয়ে যেন কাউকে চেনে না ভাব করে এগিয়ে যায়।  নিজেদের মধ্যে বলাবলি করে কোন একজনকে ছুটির দিনে সাইকেলে বসিয়ে সিনেমা দেখিয়ে আনা সম্ভব কি না !

    ও হ্যাঁ, কোরবা শহরে সিনেমা হল খুলেছে—পবন টাকিজ।  তাতে চলছে শত্রুঘ্ন সিনহার সিনেমা ‘বগুলা ভগত’।   ওরা দু’বার দেখে ফেলেছে।

    চলতে চলতে এদের কেউ মেয়েগুলোকে শুনিয়ে শত্রুঘ্ন সিনহার নকল করে ডায়লাগ মারে –“ বাবু এইসে তো বোলতা নেহি, পর জব বোলতা, তো এইসা বোলতা কি আচ্ছে আচ্ছে বোলনেওয়ালে কী বোলতী বন্দ হো জাতী”।

    কেউ কেউ হেসে ফেলে। কেউ কেউ মুখ বেঁকিয়ে বলে—এমন কে কা হোইস? দিমাগ সঠিয়া গয়ে কা?

    এদের হল কী? মাথাটাথা একেবারে গ্যাছে নাকি?

    ছেলেগুলো নিজেদের মধ্যে মেয়েদের ভাগাভাগি করে নেয়।

    ওই উঁচু করে খোঁপা বাঁধা, ও কিন্তু আমার, ওদিকে কেউ তাকাবে না ।

    আর চোখে ঘন করে কাজলটানা?

    দূর! ও তো কেলেকুষ্টি।

    তাতে কী? আমিই বা কোন জিতেন্দর! আর ফিগারটা! ফিগারটা দেখেছিস?

    এঃ ! তোর দেখি একেবারে এক্স-রে চোখ! চাদরজড়ানো মেয়েটার ফিগারও মেপে নিলি?

    ভাগ শালা! এ মেরে পটে হুয়ে হ্যাঁয়! নো গন্দী বাত!

    পটে হুয়ে হ্যাঁয়? শুনে গার্ডেন-গার্ডেন হয়ে গেলাম।  কখনও হাত ধরতে দিয়েছে?

    ও হল পঞ্চ সমারসায়ের বেটি।  সাবধান।

    ধেত্তেরি যত্তসব! খালি পিলি হাওয়াপানি কী বাত।  আসল ফিগার তো আমি চিনি। তোদের মত ন্যাকা নই।

    সবাই চুপ।  সবাই বোঝে দাউ শ্যামলাল কী বলছে! ও সম্পন্ন ঘরের ছেলে। ওকে ওর বাড়ি থেকে বিলাসপুরে পাঠিয়ে ওখানকার নর্মাল স্কুলে পড়িয়েছে।  সরকারি স্কুল হলে কী হবে, এখনও মরা হাতি লাখ টাকা! ইংরেজ জমানার স্কুল। ওখান থেকে পাশ করে কত লোক জজ-ম্যাজস্টর হয়েছে।

    শ্যামলাল বিলাসপুর থেকে ফিরল ডাঙ্গর হয়ে; শুধু স্কুলই নয়, অনেকগুলো বেড়া টপকে।   খুঁটির জোর আর বলিয়ে কইয়ে। ব্যস, নাইট্রোগ্লিসারিনের ফ্যাক্টরিতে সুপারভাইজারের চাকরি জুটে গেল। 

    প্রতি সপ্তাহে যায় পবন টকিজ, সিনেমা দেখতে।  কিন্তু ও এক সিনেমা বারবার দেখার বান্দা নয় ।  টিকিট কাটে দুটো করে, বুকিং ক্লার্ককে চা খাওয়ায়। সিট পায় সবচেয়ে পেছনে, দেয়ালে পিঠ দিয়ে বসা যায় ।  সঙ্গিনী রেললাইনের পাড়ে এক দশক থেকে বেজা-কব্জা করা জমিতে ছাউনি  তুলে বসবাস করা পরিবারের কোন মেয়ে।  সিনেমার টিকিট মাথা পিছু দু’টাকা।  মেয়েটি নেয় জামা খুললে পাঁচটাকা, নইলে দু’টাকা। আর আছে চা এবং ভাজিয়া মানে বেগুনি-ফুলুরির দাম।

    এইখানে শ্যামলালের সঙ্গে তফাত হয়ে যায় অন্যদের।  এরা এখনও পারিবারিক বাঁধনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখানোর সাহস পায় নি।

      তবে ছুরিকলাঁ গ্রাম ও ঠিক আগের মতন নেই । এখানে খুলেছে মিনি পিএইচ সি, পাব্লিক হেলথ সেন্টার , অর্থাৎ সরকারি ছোট দাওয়াখানা।  এখানে আপাততঃ একজন ডাক্তার আছেন, তিনি আয়ুর্বেদরত্ন সার্টিফিকেটধারী।  তাতে গাঁয়ের লোকের কিছু যায় আসে না । উনি গলায় স্টেথোস্কোপ ঝুলিয়ে কালো ব্যাগ হাতে নিয়ে ভটভটি চড়ে রোগি দেখতে যান, কালো ব্যাগ থেকে ব্লাডপ্রেসার মাপার যন্ত্র বের করেন, দরকার মত সুঁই লাগাতে পারেন । আর কী চাই!

    তবে ডাক্তার কাশ্যপের পসারে খুব একটা  ভাটা পরে নি।  ভগবান একচোখো ন’ন।  কথায় বলে জীব দিয়েছেন যিনি, আহার দেবেন তিনি।

    এই সোজা কথাটা বোঝে না বনরাজ সিংয়ের বৌ বুধবারিন বাঈ।

    সকাল থেকেই ওর গোটা চার আন্ডাবাচ্চা খিদেয় চেঁচাতে থাকে।

    --বাসি দে, বাসি দে ও ! দাই বাসি দে। 

    --খায়ে দে, খায়ে দে না ও!

    আর সইতে পারে না বুধবারিন।  গলা তুলে শাপ-শাপান্ত করতে থাকে ওর স্বামী ওর চার বাচ্চার বাপ বনরাজ সিং কে।  স্বামীদেবতাটি কাল কাজে যায় নি।  কোথায় কোথায় ঘুরে বেড়িয়েছে, ধনরাস গাঁয়ের ভাটাজমিনে নতুন গজিয়ে ওঠা দারুভাট্টিতে মহুয়া খেয়ে বাড়ি ফিরে বিছানায় চিত হয়ে ভোঁস ভোঁস করে নাক ডাকিয়ে ঘুমিয়েছে। গত সপ্তাহে অমনই একদিন জুয়ো খেলে চাল কেনার পয়সা খুইয়ে চোর-চোর মুখ করে সন্ধ্যেয় বাড়ি ফিরেছে।

    বনরাজ ছুরিকলাঁ গাঁয়ের রাজবাড়ির দূর সম্পর্কের তুতো ভাই।  কিন্তু ছোটবেলা থেকে ওর পড়ায় মন নেই ।  গতপ্রজন্মের সবাই আট কিলোমিটার হেঁটে মহকুমা সদর কাঠঘোরায় পড়তে যেত।  এখন তো ছুরি গাঁয়েই সরকারি স্কুল খুলেছে, দশ ক্লাস পর্য্যন্ত পড়ানো হয়।  স্কুলটি রাজবাড়ির পুরনো জেলখানায়। খালি পড়ে ছিল , যুবরাজ সাহেব সরকারকে দান করে দিলেন, সবাই ধন্য ধন্য করল।

    এত সুবিধে পেয়েও বনরাজ সিং চৌথির বেড়া পেরোতে পারে নি।  তবে ভাই বলে কথা, তায় জাতে রাজপুত, তাই যুবরাজ সাহাব ওকে স্কুলের চাপরাশির কাজে বহাল করেছেন।  ওর কাজ স্কুল ঝাঁট দেওয়া, আর ঘন্টা বাজানো। এছাড়া ও পঞ্চায়েত ভবনেও ঝাঁটপাট দেয়। আর কাঞ্জি হাউসে বেওয়ারিশ গরুবাছুর রাখা থাকলে তাদের জলটল দেয়।  কষ্টেসৃষ্টে ঘর চলে।  ওর বৌ বুধবারিন ঘরের কাজ ছাড়া সিন্ধি শেঠের দোকানে গিয়ে একবেলা চাল-গম পরিষ্কার করে।

    বনরাজ হাসিমুখে নিজের ভাগ্যকে মেনে নিয়েছে। ওর কারো প্রতি কোন নালিশ নেই ।  গাঁয়ের লোকের চোখে ও নিরীহ ভালমানুষ।  বাড়িতে বৌ-বাচ্চা কারও গায়ে হাত তোলে না ।  মদ খেয়ে টুন হয়ে ফিরলেও নয়।  দোষের মধ্যে ওর কোন কাজে মন নেই । মাঝেমধ্যেই কামাই করে বনবাদাড়ে ঘুরে বেড়ায়।

     এতক্ষণ ও কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘাপটি মেরে পড়ে ছিল।  কিন্ত এবার বাচ্চাদের চিৎকার তারসপ্তকে পৌঁছেচে।  বোতাম ছেঁড়া হাফপ্যান্ট ও ইজের পরা বাচ্চা গুলো এবার মা-বাবার উদ্দেশে অশালীন শব্দ ও বাক্যবন্ধ প্রয়োগের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। 

     ওদের মাটির দেয়ালের ওপাশে কয়েকটি চুন-সুরকির দেয়াল ও টালির চালের ব্যারাকঘর ।  তাতে কয়েকজন অল্পবয়েসি স্কুলটিচার ভাড়ায় এসেছে।

    --সক্কাল সক্কাল রামায়ণ শুরু হয়ে গেল।  কেন যে এমন বাচ্চা পয়দা করে!

    -- ভাত জোটাতে পারে না এদিকে বছর বছর ‘ক্যালেন্ডার ছাপ রহা হ্যাঁয়’।

    বনরাজ চাটাই থেকে ওঠে।  ছেলেদের উদ্দেশে হাঁক পাড়ে--  এ গা মহারাজ! অবে এ গজরাজ! চুপ হো যা! চুপ হো যা! ইয়ে শরীফোঁ কা মুহল্লা হ্যাঁয়।

    বাচ্চারা দ্বিগুণ উৎসাহে কোরাসে গলা মেলায়।

    --অবে শুয়ার কে অউলাদ! অবে চুতিয়োঁ কে পিল্লে! দুঁ কা এক ঝাপড়!

    পাশের ভাড়াটেদের ঘর থেকে খিল খিল হাসির আওয়াজ।  এঃ , রাজপরিবারের রিস্তেদার বোঝাই যাচ্ছে। নামের কী বাহার ! গজরাজ! মহারাজ!

     এবার শোনা যায় বাচ্চাদের মায়ের গলা। 

    ওর সারমর্ম হচ্ছে বাচ্চাদের গায়ে হাত তোলার আগে একটু ভাবা উচিত।  ভাত দেওয়ার কেউ নয় কিল মারবার গোঁসাই!

    রাজওয়াড়ার সঙ্গে  রক্তের সম্পর্ক দেখে আমার বাপ কসরেঙ্গা গাঁয়ের নকুল সিং আমার বিয়ে এই গাঁয়ে দিয়েছিল।  আমার বাপকে ঠকানো হয়েছে। কে জানত যে জামাই এমন আলসে হাড়হাভাতে, কামচোর!  সকাল বেলায় পা দিয়ে ভাতের হাঁড়ি ঠেলে যদি  দেখে গড়িয়ে পড়ল তবেই কাজে বেরোয়।  যুবরাজ সায়েবের দয়ায় এত কামাই করেও চাকরিটা টিঁকে আছে --ওইটুকুই রাজবাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক ।

    কথাগুলো নতুন নয়।  বনরাজ জানে এই গান শুরু হলে কোথায় গিয়ে শেষ হবে, এর স্থায়ী অন্তরা সবটাই।

    ও হাই তুলে আড়মোড়া ভাঙে, তারপর কাঁধের গামছা আর খেঁটে লাঠিটা নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।  আয়নায় তাকালে দেখতে পেত চোখের অক্ষম পিঁচুটি অনেকটা জমে আছে।

           মুশকিলে পড়েছে অলগুরাম সতনামী।  থাকে গাঁয়ের প্রান্তসীমায় দলিত মহল্লায় সতনামী পাড়ায়।  সাপ্তাহিক হাটবাজারের চৌক পেরিয়ে পঞ্চায়েতের কাঞ্জিহাউসের পাশে সতনামী পাড়া শুরু।   প্রায় চল্লিশ ঘর। তিনটে গলি, মাটি আর কাঁকর বিছানো।  দুপাশে গায়ে গায়ে বাড়ি, সব মাটির দেয়াল, জঙ্গলের কাঠ কেটে চৌকাঠ, বিম আর দরোজা।  উঁচু উঠোন, গোবরে নিকানো বারান্দা আর ভেতরের উঠোন।  ভেতরে কয়েকটি বাড়িতে আছে কোলাবাড়ি , শহুরে ভাষায় কিচেন গার্ডেন।  তাতে একটি কাঁচা কুয়ো, পাড় বাঁধানো।  সেখানে লংকা, ধনিয়া, বেগুন, টম্যাটো লকলকিয়ে বাড়ে।

        অলগুরাম মুরুব্বি মানুষ। ওর পেছনের আঙিনায় বাঁধা রয়েছে দুটো মোষ আর একজোড়া হাল-বলদ।  ওর ঘরের দেওয়ালগুলোতে চুন-সুরকি- ইঁটের গাঁথনি।

    আর ওর ঘরটি হল পাড়ার মধ্যে একটা চৌমাথায় সতনাম সম্প্রদায়ের জৈতখাম্বা , মানে বিজয়স্তম্ভের সামনে।   সতনাম সম্প্রদায় গুরু ঘাসীদাসের অনুগামী।  ছত্তিশগড়ে অনুসূচিত জাতির মধ্যে ওঁর স্থান ডঃ আম্বেদকারের চেয়ে কম নয়।   গিরোদপুরী গাঁয়ে জন্মানো এই সন্ত প্রচার করেন যে কেউ অছুৎ নয়।  মনুবাদীদের , মানে উচ্চবর্ণের চেয়ে নিজেদের খাটো বা হীন মনে করার কোন কারণ নেই ।  দরকার নিজের ইন্দ্রিয়ের উপর বিজয় প্রাপ্তির। তাই ওঁর নির্দেশ সাদা সরল জীবন যাপন কর।  হীন জীবিকা ছেড়ে দাও।  মাসাহার, মদ্যপান ইত্যাদি ছেড়ে দাও।  আর সৎ বা সত্যনাম এর প্রচার কর।  সতনামী সম্প্রদায় দলিতদের মধ্যে সবচেয়ে বড় সম্প্রদায় এবং এরা নিজেদের অন্য দলিত , যেমন রামনামী বা মুচিদের থেকে উঁচু মনে করে।

    এদের প্রত্যেক পাড়ায় রয়েছেএকটি করে ‘জৈতখাম’ বা জয়স্তম্ভ, মানে প্রায় দশফুট উঁচু একটি খুঁটি তাতে সাদা রঙ করা, মাথায় পতপত করে ওড়ে সাদা পতাকা।  বিশেষ বিশেষ দিনে এরা এর সামনে জড়ো হয়ে বন্দনা গায় ও নাচে। এইভাবে ছত্তিশগড়ে বিকাশ ঘটেছে “পন্থী” নামের একটি লোকনৃত্যশৈলীর।

    সাদা ধুতি ও সাদা গেঞ্জি গায়ে একজন মাদলবাদক ও বড় করতাল নিয়ে দু’জন -- এরা প্রায় দশজন-- মিলে গোল হয়ে বুক চাপড়ে মাথা ঝাঁকিয়ে একরকম পুরুষালী নাচ নাচে।  প্রথমে একজায়গায় দাঁড়িয়ে তাল দেয়, বুক চাপড়ে পা ঠুকে ; তারপর বৃত্তাকারে ঘুরে নাচে, লয় বাড়তে থাকে।

    গানটি হল “সত্যনাম সত্যনাম সত্যনাম সার, গুরুকে মহিমা অপার”।

    লয় দুনি ছাড়িয়ে চৌদুনে পৌঁছলে বৃত্তের মাঝখানে ওরা নাচের তালে তালে জনাকয়েক নর্তক আর্চ করে ছোট একটি বেদি বানায়, ওর বুক-পেটের উপরে উঠে দাঁড়ায় আরও কয়েকজন। এভাবে একটি ত্রিস্তর পিরামিড তৈরি হয়, আর তার শীর্ষবিন্দুতে উঠে দাঁড়ায় মাদল বাদক।  দর্শকদের আবেগ তখন চরমে।  মিনিট খানেক এই ‘দিব্য উন্মাদনা’ থাকে, তারপর ওরা একইভাবে নেমে এসে আগের মত বৃত্ত বানিয়ে লয় কমিয়ে মুখড়ায় ফেরে।

    অলগুরাম নাচতে পারে না ।  কিন্তু ওর ছেলে ফিরতরাম পারে । তাই গাঁয়ের নবযুবকদের টোলিতে ওর খুব কদর।  তবে অলগুরামের কদর কম নয়। আশপাশের দশটা গাঁয়ে কেউ ওর মত ইঁট বানাক দেখি। ও  কমবয়সে গাঁয়ের আদিবাসী হোমরাচোমরা আনন্দরামের ইঁটখোলায় কাজ করত।  গাঁয়ের সীমানা বা সরহদের বাইরে আহিরণ নদীর পাড়ে পড়তি জমির ইজারা নিত আনন্দরাম।   নামেই ইজারা, আসলে একটা থোক টাকা পঞ্চায়েতকে দিলেই হল। নদীর পারে শুনশান এলাকায় পড়ে থাকা জমিতে কে কতটা মেপে নিচ্ছে আর কেই বা মাপতে আসছে!

       তবে আহিরণের পাড়ে এঁটেল মাটিতে বালুর ভাগ মন্দ নয়; ইঁট তৈরির জন্যে একেবারে ফিট।  অলগুরাম প্রথম জীবনে বড় ওস্তাদ মিস্ত্রির কাছে কাজ শিখেছে।  মন দিয়ে কাজ করেছে --কাঠের সাঁচায় কাদা মাটির তাল  ভরে  ইঁট বানিয়ে থোক দিয়ে সাজিয়ে তাতে কাঠকয়লা ও ধানের তুষ দিয়ে আগুনে পোড়ানো।  এগুলোকে বলে বাংলা ভাট্টা, চিমনি ভাট্টার তুলনায় এতে খরচা অনেক কম, কোয়ালিটি বা ‘গুণবত্তা’র কথা যদি বলো তো কোন সরকারি কাজে এই ইঁট নেওয়া হবে না । কোরবার কাছে যে কোয়ার্টারগুলো উঠছে তাতেও সরাসরি যাবে না ।  কিন্তু গাঁয়ে গঞ্জে স্কুলবাড়ি, কাছারি, থানার কোয়ার্টার , পঞ্চায়েত ভবন, লোকজনের ঘর বাড়ি, কুয়োর পাড় বাঁধানো, মন্দির তৈরি—সবতাতেই এই ইঁট চলে।

    আবার সরকারি কাজে ঠেকেদাররা টেন্ডারে চিমনিভাট্টার কথা বললেও কাজের মাঝখানে চালিয়ে দেয় আনন্দরামের ইঁট; একবার তার উপর সিমেন্ট মশলা লেপা হয়ে গেলে কার সাধ্যি ভুল ধরে।

    এইখানেই অলগুরামের হাতের কাজ।   ওর হাতে তৈরি ইঁট ‘গুণবত্তা’র জোরে চিমনিভাট্টার সঙ্গে টক্কর দেয়।  ধীরে ধীরে আনন্দরামের বাংলাভাট্টার ইঁট একধরণের অলিখিত ব্র্যান্ডনেম হয়ে দাঁড়ায়।  যার হেডমিস্ত্রি হল অলগুরাম ।  ওর মজুরি বা ‘বনিভূতি’ অন্যদের তুলনায় বেশ বেশি।

     কয়েকবছরের মধ্যে অলগুরাম কিনে ফেলে একফসলী দশ একর জমিন; বাড়ির ছাদে খাপরার জায়গায় টালি লাগে। আর পেছনের উঠোনে একজোড়া হালবলদ ছাড়া দুটো দেশি গাই। 

    বাংলাভাট্টার কাজ শুরু হয় দীপাবলী উৎসবের সময় থেকে, ছ’মাস।  ফাগুন-চোতে কাজ শেষ; ইঁট পাকানো চলে। আর তখন থেকেই ঠেকেদারের দল দর- দস্তুর ‘বোলি’র জন্যে আসতে থাকে।   বাতচিৎ জম গয়া তো ট্রাক নিয়ে , ট্রাকটর নিয়ে মায় গরুর গাড়ি নিয়ে ইঁট তোলা শুরু হয়।  আষাঢ় এর বৃষ্টি নামার আগে সব শেষ করতে হবে।  নইলে ‘নুকসান’।  তাই ‘নীলনবঘনে আষাঢ়গগনে’ দেখা দিলেই মালিকের কপালে ভাঁজ পড়ে।

    তবে  মনসুনের  প্রথম দিকের  একটা দুটো পশলায় তেমন কিছু হয় না ।   ইঁট গলে না ।  কিন্তু তখন থেকেই রেট নামতে থাকে; মার্জিন কম থাকুক, নিয়ে তো যাক। বেশি লোভ করলে ইতোনষ্ট ততোভ্রষ্ট!

    ঘনবর্ষার দিনে দেখা যাবে মাঠ ফাঁকা।  আকাশ আর মাটি লেপে একাকার। তিনদিন ধরে ক্রমাগত ধারাবর্ষণ।  ক্ষেতে লাল-নীল-সবুজের সমারোহ, রঙিন লুগরা গাছকোমর করে মেয়েরা ধান রুইতে নেমেছে। কখনো কেউ গান ধরেছে ‘রিমির ঝিমির বরষে পানি’ ।   পুরুষ কন্ঠে শোনা যায় ‘বর্ষারাণী ঝুমকে বরষো’ ।

    তবে শুনশান ইঁটাভাট্টায় চোখে পড়বে  নিভে যাওয়া চুল্লির ভগ্নাবশেষ; বিক্রি না হওয়া কিছু ইঁটের পাঁজা।  আর যেখান থেকে মাটি কেটে তোলা হয়েছিল – ধরিত্রীর বুকের সেই বিশাল ক্ষত রাতারাতি ভোল ধরেছে  এক গেরুয়া জলের পুকুরের। অমন পুকুর পাড়ে পরিত্যক্ত ইঁটের পাঁজা কিন্তু প্রাণহীন নয় ।  ক্রমশঃ বুকে হেঁটে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে আসছে করেইত, চন্দ্রবোড়া ও ডোমহির (কেউটে)পরিবার।  মাঝে মাঝে বৃষ্টি একটু দম নিলে আকাশে ফোটে সাতরঙা ইন্দ্রধনুষ।  সেই মায়াবী আলোয় জেগে ওঠে জরৎকারু-জরৎকারী-আস্তিকের দল।  কখনও কোন মাঠের উপর দিয়ে ছাতা মাথায় শর্টকাট পথ ধরে বাড়িফেরা পথিকের চোখে পড়ে সেই বিরল দৃশ্য—সাপের শঙ্খলাগা।

    চমকে ওঠা লোকটি দু’হাত তুলে নমস্কার সেরে বাড়ি ফেরে আনন্দসাগরে ভেসে। বৌকে জানায় শিগিরই কোন ভাল কিছু ঘটতে চলেছে।  হয়ত ছেলেটার মন এলোমেলো ঘুরে না বেড়িয়ে ঘরের পোষা ময়না হয়ে দাঁড়ে বসবে।  হয়ত এ শীতকালে নদীর পাড়ে তরমুজের ক্ষেতি ভাল দাম পাবে।

    বৌ ভাবে হয়ত ভরা পোয়াতি ছোট মেয়েটার শ্বশুরবাড়ি থেকে নাতি হওয়ার খবর আসবে।

    কিন্তু আজকে অলগুরাম যখন নিজেদের ইঁটভাট্টার পাশ দিয়ে ছাতি মাথায় মাঠ পার করছিল তখন পড়ন্ত বড় ভাট্টার আড়ে চোখে পড়ল শঙ্খলাগা।  নাগ-নাগিন নয়; এ যে মানব-মানবী।  আর জোয়ান লেইকাটি যে চেনা চেনা লাগে!

    আজ নির্বিরোধী অলগরাম, বিবাদ ঝগড়া ঝঞ্ঝাট এড়িয়ে চলা ভালোমানুষ অলগু বাজের গুরুগুরু আওয়াজে গর্জে ওঠে—কউন হ্যাঁয় রে! কউন হো তুমন! কোন গাঁওকে? কা করথো ইঁহা?

    ওরা লুকিয়ে পড়ে ।  অলগরাম বুঝতে পারে পাঁজার আড়ে দু’জোড়া অদৃশ্য চোখ ওকে নজরে রেখেছে।   ও দ্রুত পায়ে পাঁজার দিকে এগোয়।  ওদিকে কোন হলচল নেই ।  অলগু একটু থমকে দাঁড়ায়।  তারপর ছাতাটা শক্ত হাতে বাগিয়ে ধরে দৌড়ুতে শুরু করে।  কিন্তু হঠাৎ একটা জলভরা গর্তে পা আটকে ও পিছলে পড়ে ।  এবার ও চিৎ অবস্থা থেকে কাত হয়ে দুহাতে ভর দিয়ে  ওঠার চেষ্টা করে; পারে না । মনে হয় ডানপায়ের গোড়ালি মচকেছে।  অসহায় মুখ দিয়ে একটা কাতরানি বেরিয়ে আসে।

    কিন্তু একজোড়া তরুণ হাত ওকে শক্ত করে ধরে তোলে।

    --উঠ যা কক্কা! কাবর চিখলা মা উছল-কুদ করথস? উমর লা কৌন খয়াল করহি?

    ওঠ কাকু! কেন যে এই পেছল কাদার মধ্যে দাপাদাপি করিস? বয়সের খেয়াল না করলে চলে? নে , আমার কাঁধে হাত রাখ; আস্তে আস্তে চল। বাড়ি গিয়ে কাকিকে বলিস চুণ-হলুদ গরম করে লাগিয়ে পট্টি বেঁধে দিতে।

    চলতে থাকে অলগুরাম। মেয়েটা কে? যেই হোক বড্ড ভাল। অনেক যত্ন করে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এই সপসপে ভিজে মেয়েটার গা থেকে কেমন একটা সোঁদা গন্ধ , কেমন একটা ভাপ উঠছে; যেন গরম ধূলো ভরা মাটিতে বৃষ্টির প্রথম ফোঁটা।

    --তঁয় কৌন হস ও নোনি? কা’কর বেটি?

    -- ময় দুরুপতী বাঈ, ছোটকি ছুরি কে।

    -- কৌন দুরুপতী? ও ভালু-মার দুরুপতী?

    খিলখিলিয়ে হাসে মেয়েটি; মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।  আর অলগুরাম দেখতে পায় ওর কপালে একটা আড়াআড়ি দাগ; পুরনো সেলাইয়ের।

    এবার অলগুরামের পাড়া দেখা যাচ্ছে।  মেয়েটা অন্য পথ ধরবে।

    --একঠন গোঠ লা সুন; ও টুরা কউন রইসে?

    একটা কথা শোন; ছেলেটা কে?

    --কউন টুরা?

    -- তোর সংগ যোউন রইসে?

    --তোর ঘর আ গয়ে কক্কা; ঘর যা।  দাওয়া-দারু কর।  ফালতু কে লকরধকর লা ছোড় ।

    দ্রুত পায়ে ছোটকি ছুরির পথ ধরেছে দ্রুপতী বাঈ; ঝেঁপে বৃষ্টি এল ।

    অবাক অলগুরাম ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু মাটির ভেজা দাওয়ায় উঠতে গিয়ে পায়ে বিদ্যুতের ঝিলিক, গুঙিয়ে ওঠে ও।  সেই আওয়াজ শুনেই বোধহয়, দৌড়ে এল ধনরাসিন বাঈ। 

       ধনরাস গাঁয়ের মেয়ে, তাই নাম পড়ল ধনরাসিন বাঈ।  সেই নামেই শ্বশুর শাস, দেড়শাস সবাই ডাকতে লাগল।  ক্রমে ক্রমে ও নিজেও ভুলে গেল যে ওর বাপ-মায়ের দেওয়া নামটি—পার্বতী বাঈ।

    স্ত্রীর কাঁধে ভর দিয়ে দাওয়ায় উঠে বালতি লোটার সদব্যবহার করে ভিজে ফতুয়া ছেড়ে খাটিয়ায় বসেছে অলগুরাম।   বৌকে মিষ্টি করে বলল—শুন না ও! মোলা বুখার বুখার লাগথে।  এইসন কর, এক গিলাস ঠান্ডি চায় পিলা দে মোলা!

    বৌয়ের চোখ কপালে! মানুষটা এখন মদ খাবে?  এটা তো দুপুরের খাওয়ার সময়। ও যে যত্ন করে লহসুন অউ মিরচি দিয়ে পোই ভাজি ( পুঁইশাক) আর তিওরার ডাল (খেঁসারি) রেঁধে রেখেছে তার কী হবে? ও নিজে এখনো না খেয়ে রয়েছে।  অভিমানে গলা ধরে আসে।

    অলগুরাম বৌয়ের মনের ভাব বুঝতে পারে, একটু ভয়ও পায় ।  ধনরাসিনের মনটা ভাল।  ওর খুব যত্ন করে। কিন্তু যদি একবার খেপে যায় পাড়ার অন্য বৌদের মতো চেঁচিয়ে কেঁদে কেটে একশা করবে না।  শুধু তিনদিন কথা বলবে না । 

    আর এটাই সবচেয়ে বড় শাস্তি।   সব কথা বৌয়ের সঙ্গে না বললে অলগুরামের যে পেট আইঢাই করে।  এখন মাঠের কাজ শেষ, ইঁট প্রায় বিক্রি হয়ে গেছে।  তবে হাতে সব পয়সা আসতে এখনও এক-দেড় মাস।  আর খেতের কাজকম্ম মনে হয় ঠিকই চলছে।  ইন্দ্রদেব প্রসন্ন হয়েছেন।  ধান রোয়া শুরু হয়ে গেছে।

    তাই একটু অনুনয়ের স্বরে বলে—নারাজ ঝন হোবে তঁয় , লাইনপাড়া কে ধীরহে গুরুজির কে ঘর মা বনি এক বোতল মহুয়া পরশু লায়ে হন।  দু –গিলাস পী লেব, ওলা দাওয়া-দারুকে কাম করহি।  পানি মা ভারি ভিগা গয়ে ও।   হাত- পাও- সর অত্তি পীড়তে,  ওকর বাদ ভাত খাবো।

    রাগ করিস না । লাইনপাড়ার ধীরহে মাস্টারের ঘরে তৈরি এক বোতল মহুয়া পরশুদিন এনেছিলাম। দু-গেলাস খেলে ওষূধের মতন কাজ করবে। জলে ভিজে একশা, হাত পা গা টাটাচ্ছে; ওর পরে ভাত খেয়ে নেব।

    দু’গেলাস শুদ্ধ মহুয়া টেনে মেজাজ ফুরফুরে হলে জানতে চাইল ছেলে কোথায়? 

    আরে ছেলেকে তো তুমিই মাঠে পাঠিয়েছ; ধানের চারা কী অবস্থায় আছে, ধান রোয়া কতটুকু বাকি আর রেজাদের বনিভুতি (মজদুরি) কত দিতে হবে সেসব দেখতে বলেছ, মনে নেই?

    চমকে ওঠে অলগু; মনে পড়ছে, অনেক কিছু মনে পড়েছে।

    আচ্ছা, ছেলেটা কোন জামাটা গায়ে চড়িয়ে বেরিয়েছে বলতে পারবে?

    কাঁসার থালায় ভাত বাড়তে বাড়তে ধনরাসিন অবাক চোখে ওর ছেলের বাপকে দেখে। হল কী লোকটার!

    কেন কী ওসব ছাড়, ঠিক করে বল, কোন জামাটা? লাল রঙাটা?

    না না ; গতবার দীপাবলীর দিনে কোরবা থেকে কিনে দিয়েছিলে না, সেই যে চকোলেট রঙা চকরা বকরা? সেইটা।

    ঠিক সে গোঠিয়া; তোলা পক্কা মালুম?

    ঠিক করে বল, মনে পড়ছে?

    অলগুরাম গুমসুম হয়ে যায়।

    ভিজে মাঠে পিছলে পড়ার আগে চোখে পড়েছিল ইঁটভাটার পেছন থেকে উঁকি মারছে একটা চেহারা , তার গায়ে চকোলেট রঙা জামা, চকরা বকরা।

    দু-তিন গরাস খেয়ে ও ডাল মাখা ভাতে জল ঢেলে দিয়ে উঠে পড়ে ।

    ধনরাসিন বাঈয়ের পিত্তি জ্বলে যায়।  বাড়া ভাতে জল ঢেলে দেওয়া?

    শান্ত হিমশীতল গলায় জিজ্ঞেস করে পতিদেবতাটি জুয়োয় হেরে এসেছেন কি না?

    জুয়োয় হারা অলগুর কাছে নতুন কিছু নয়।  ও জুয়ো খেলতে বসে হেরে যাবার আনন্দে।  ইঁটভাট্টার কাজ শেষ হলে ও কিছু টাকা আলাদা করে রাখে; খেলে হারবে বলে।

    বৌকে কিছু না বলে ও কাঁথা মুড়ি দিয়ে শোয়।   জ্বর আসছে হু-হু করে ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • অরিন | ০৭ অক্টোবর ২০২০ ০১:০৮732887
  • কি আশ্চর্য সুন্দর লেখা!


    আরণ্যক মনে পড়িয়ে দেয় |

  • রঞ্জন | 122.176.***.*** | ১১ অক্টোবর ২০২০ ০১:০৫732923
  • আপনাদের ধন্যবাদ । 

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন