সংশোধন ও ধ্বংস - বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে কিছু কথা : স্বাতী মৈত্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১১ এপ্রিল ২০১৯ | ১৬৬০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
ভারতবর্ষের জিডিপির ৩.৮৩% শিক্ষাক্ষেত্রে খরচ করা হয়। এর মধ্যে গবেষণার বরাদ্দ ০.৩%। অস্থায়ীকরণের ফলে এক সন্ত্রস্ত, সদা আশঙ্কিত শিক্ষক শ্রেণী তৈরি হয়েছে, যা শিক্ষা এবং গবেষণার মানের সরাসরি ক্ষতি করতে বাধ্য। সরকারি তথ্য অনুযায়ী উচ্চশিক্ষায় গ্রস এনরোলমেন্ট রেশিও জনসংখ্যার ২৫%, যা বিশ্বব্যাপী গড় ৩৫%র থেকে ১০% কম। এই এনরোলড ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে কতজন শেষ পর্যন্ত ডিগ্রী লাভ করেন, এবং কতজন কলেজ-ছুট হন, তার কোন তথ্য নেই। বিড়লা-আম্বানির পরামর্শ মেনে খোলা বেসরকারি ইঞ্জনিয়ারিং কলেজগুলোতে আস্তে আস্তে তালা ঝুলছে, এআইসিটিইর নির্দেশে ২০২০ সাল থেকে আর কোন নতুন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ খোলবার অনুমতি দেওয়া হবেনা। বাজারের সমীক্ষা অনুযায়ী ২৫% ইঞ্জিনিয়ারিং গ্র্যাজুয়েট সঠিক শিক্ষা পেয়ে পাশ করছেন। এরই মধ্যে গত তিন বছরে অনাদায়ী শিক্ষা লোন লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে ২০১৮ অর্থবর্ষে সেটা ৯%তে দাঁড়িয়েছে। বেকারত্বের হার যেহেতু ৬%, ৪০ বছরে সব থেকে বেশি, অতএব এই অনাদায়ী লোনের পরিমাণ যে আরও বাড়বে তা বলাই বাহুল্য। এ কথাও বলা বাহুল্য যে এঁদের মধ্যে কেউই 'রাইট অফ' পাবেন না - সেটা কেবল বৃহৎ পুঁজিপতিরা পেয়ে থাকেন।
বুরহান ওয়ানির 'বিচার-বহির্ভূত হত্যা' সম্পর্কে কিছু কথা -প্রথম পর্ব : কবিতা কৃষ্ণন- অনুবাদ স্বাতী মৈত্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৪ জুলাই ২০১৬ | ২৯৬৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
২০১০ সালের অক্টোবর মাস। বুরহান ওয়ানি - তখন ১৬ বছরের - তার বড় ভাই খালিদ ওয়ানি ও আরেক বন্ধুর সাথে বাইকে চেপে ঘুরতে বেরিয়েছিল তাদের ট্রাল এলাকায়, যেমন এই বয়সী ছেলেরা করেই থাকে যে কোন জায়গায়। জম্মু আর কাশ্মীর পুলিশের স্পেশাল অপারেশন গ্রুপের একটা পিকেটে তাদের আটকানো হয়, এবং বলা হয় সিগারেট নিয়ে আসতে। খালিদ যায় সিগারেট আনতে, বুরহান ও তাদের অপর সাথী অপেক্ষা করে থাকে। সিগারেট দেওয়ার পর কোন কারণ ছাড়াই ট্রুপের লোকজন ছেলে তিনজনের উপর চড়াও হয়। তাদের মারধোর করা হয়, খালিদের প্রিয়তম বাইকটা ভেঙ্গে দেওয়া হয়। খালিদ এরপর অজ্ঞান হয়ে যায়। সেদিন হয়তো সবথেকে বেশি আহত হয়েছিল ১৬ বছরের বুরহান, তবে সেই আঘাত অদৃশ্য - এমন এক আঘাত যেটা হয়তো যে কোন সেলফ-রেসপেক্টিং তরুণই বোধ করবে যদি তাকে অকারণে মার খেতে হয়।
হুমায়ুনপুর : স্বাতী মৈত্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | ১৬৭২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৮
হুমায়ুনপুরের ইতিহাস নিয়ে অনেক গল্প আছে। শোনা যায় ১৬৭৫ সালে রূপা রাম আর রতিয়া সিং টোকাস এই গ্রাম স্থাপন করেন। আরও একটি কাহিনী বলে ১৬৭৫ নয়, ১৬৮৩ সালে চৌধুরী দেবী সিং ফোগাট এই গ্রামের পত্তন করেন। আরেকটা গল্প আছে, সে তো আরও রোমাঞ্চকর — বাদশা ঔরঙ্গজেবের বিরুদ্ধে জাট বিদ্রোহের নায়ক গোকুলা জাট স্বয়ং নাকি এই গ্রামের পত্তন করেন! তবে এ নেহাতই কিম্বদন্তী, লড়াকু জাট নেতা গোকুলা দিল্লীতে তাঁর জীবদ্দশায় কোনোদিন পা রাখেননি। ইতিহাস বলছে যে শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ার পরে আগ্রাতেই বাদশা ঔরঙ্গজেবের আদেশে তাঁকে হত্যা করা হয়। মূল ধারার ইতিহাসের বইয়ের পাতায় দিল্লী শহরের অলিগলির এ হেন লোকশ্রুতি-মিশ্রিত ইতিহাস কমই উঠে আসে।
হুমায়ুনপুরের জমির মালিক আজও কিছু জাট পরিবার। নগরায়নের কবলে পড়ে এক এক করে তাঁদের জমি চলে গেছে সফদরজং এনক্লেভের দখলে — বড় বড় অট্টালিকা উঠেছে, দক্ষিণ দিল্লীর অভিজাত মানুষজনের ঠাঁই হয়েছে সেখানে। পাশে গড়ে উঠেছে আরকে খান্না টেনিস স্টেডিয়াম, হৌজ খাস ডিসট্রিক্ট পার্ক, হৌজ খাস ডিয়ার পার্ক, অভিজাত দিল্লীবাসী সেখানে হাওয়া খেতে আর শরীরচর্চা করতে আসেন। কখনো কখনো ইতিহাসপ্রেমী কেউ হয়তো চলে আসেন হুমায়ুনপুরের পুরাতন ঐতিহ্যের টানেও, হৌজ খাসে ঘুরতে ঘুরতে ডিয়ার পার্কের ভিতরে কালি গুমটি বা বাগ-এ-আলম গুম্বদটাও দেখে যান। এইসবের মাঝে হুমায়ুনপুর গ্রামের এঁদো গলি বড় বেমানান, যেন অন্য একটা জগৎ। সন্ধ্যাবেলা গেলে এখনো দেখতে পাবেন খাটিয়ায় বসে হুঁকো টানছেন বিশাল পাগড়ি পরা একেকজন প্রৌঢ় চৌধুরী।
মহেশ লাইব্রেরী : স্বাতী মৈত্র
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২৩ আগস্ট ২০১৮ | ৩১৭৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৩
স্বাধীনতার সত্তর বছর পরে, নব্য উদারবাদী অর্থনীতির স্বর্ণযুগে বসে, ছাপাখানার প্রথম যুগের এই বহুভাষী সংস্কৃতি হয়তো আজকের দিনে বোঝা একটু কঠিনই। পুঁজির ভাষা ইংরেজি। ক্ষমতার ভাষাও। তার সাথে অবশ্যই রয়েছে রাষ্ট্রশক্তির প্রচ্ছন্ন মদতে হিন্দি আগ্রাসন, যার ফলস্বরূপ উত্তর ভারতের নানান হিন্দুস্তানি ভাষা এক এক করে জমি হারিয়েছে। এই প্রসঙ্গে লিখতে গিয়ে রোশন কিশোর লাইভমিন্টে একটি লেখায় বলেন, “হিন্দি, অথবা সরকারি হিন্দি … আস্তে আস্তে বিন্ধ্য পর্বতের উত্তরে অসংখ্য লোকের কথ্য ভাষাকে গ্রাস করেছে। একজন সাধারণ দিল্লীবাসীর ক্ষেত্রে সেই ভাষা হয়তো পাঞ্জাবি, হরিয়ানভি, বা উর্দু।