গ্রহণ ও যুদ্ধ : সহস্রলোচন শর্মা
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ২১ জুলাই ২০২০ | ২৩৮৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
সময় যত গড়িয়েছে সাইরাকিউজ রণক্ষেত্র ছেড়ে ততই পিছিয়ে চলেছে এথেন্স বাহিনীও। আর কিছুদূর যেতে পারলেই নিশ্চিন্ত হবেন তাঁরা। সব কিছু ঠিকঠাকই চলছিল এতক্ষণ, এক্কেবারে পরিকল্পনা আনুযায়ী, নিখুঁত। হঠাৎ, চাঁদের আলোটা যেন কেমন কমে যেতে লাগল। অবাক বিস্ময়ে এথেন্স বাহিনী আকাশে চেয়ে দেখে—চাঁদের অনেকটা অংশই নেই, পুরো গায়েব। কিন্তু তা কী করে সম্ভব? আজ তো পূর্ণিমা। আকাশে তো পুরো চাঁদই থাকার কথা। সন্ধ্যায় তো পুরো চাঁদই দেখেছিল তাঁরা। তাহলে, ব্যাপারটা কী হল? আর যত সময় যাচ্ছে ততই ক্ষয় পেতে থাকছে চাঁদ। চারিদিকে অমাবস্যার আঁধার নেমে আসছে যেন! সবাই থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল। সৈন্যদল মুখ চাওয়া-চাওয়ি করতে লাগল। সেনাপতি নিসিয়াসের নেতৃত্বে বসল জরুরি মন্ত্রণা সভা। এদিকে ক্ষয়তে ক্ষয়তে ক্রমেই অদৃশ্য হলেন চন্দ্রদেব।
সুদর্শন দর্শন: পর্ব ১ : সহস্রলোচন শর্মা
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ২৭৬০ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
১৯৫৬ সাল, স্যরের নির্দেশমতো, উইক ইন্টারেকশন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করলেন সুদর্শন। পড়লেন এনরিকো ফের্মি, বারনিস ওয়েল্ডন সার্জেন্ট, হিডেকি ইউকাওয়া, সাং-ডাও লি, চেন-নিং ইয়াং প্রমুখ। এই সমস্ত পদার্থবিদদের রচনা মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়ে চলেছেন সুদর্শন। যত পড়ছেন ততই যেন একটা ভাবনা তাঁর মাথায় চেপে বসছে। পড়ছেন যতটুকু ভাবছেন তার চেয়েও গভীরে। উইক ইন্টারেকশনের বেনিয়মের মুখে লাগাম পরাতে মনে মনে বুনে চলেছেন এক নতুন যুক্তিজাল।
সুদর্শন দর্শন: পর্ব ২ : সহস্রলোচন শর্মা
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ১৫৯০ বার পঠিত
সুদর্শন-মারশাকের এই লেখা প্রকাশের পর থেকেই শুরু হল এক নতুন বিতর্ক। আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় অনেকেই ততদিনে এই V-A তত্ত্বকে ফাইনম্যান-জেল-ম্যান তত্ত্ব হিসবেই দেখতে শুরু করেছেন। অনেকেই আবার এটাকে সুদর্শন-মারশাক তত্ত্ব হিসেবেই জানেন। প্রশ্ন দাঁড়াল, V-A তত্ত্বের প্রকৃত জনক কে? সুদর্শন-মারশাক না ফাইনম্যান-জেল-ম্যান? পদার্থবিজ্ঞান মহল দ্বিধাবিভক্ত। যতদিন যায় বিতর্ক ততই বেড়ে চলে। যদিও ততদিনে প্রত্যেকেই নিজেদের অন্যান্য গবেষণায় মনোনিবেশ করেছেন তাঁরা প্রত্যেকেই। কিন্তু তবুও ধিকি ধিকি করে বহু দিন ধরে জিইয়ে রইল এই বিতর্ক। বিতর্ক কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না দেখে ৫ বছর পর, ১৯৬৩ সালে, এক প্রকাশ্য বিবৃতিতে ফাইনম্যান জানান, “V-A তত্ত্বের জনক সুদর্শন-মারশাক। আমি আর জেল-ম্যান তা প্রকাশ করেছি মাত্র”।
শিশিরকুমার মিত্রঃ বিস্মৃতপ্রায় বাঙালি বিজ্ঞানীর ১৩০ তম জন্মদিবসে : সহস্রলোচন শর্মা
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ২৪ অক্টোবর ২০২০ | ৩৫৯৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
কেন, দূরত্বের প্রশ্নে এতো বিস্ময় সৃষ্টি হলো কেন? মার্কনির পরীক্ষায় বিস্ময় উদ্রেক হওয়ার পিছনে নিহিত ছিল আর একটা কারণ। মার্কনির সমসময়ে আলোর সরলরৈখিক গতি, আলোর প্রতিফলন, আলোর প্রতিসরণ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল ছিলেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা জানতেন আলো হলো এক বিশেষ তরঙ্গদৈর্ঘ্য সম্পন্ন তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গ। তারা জানতেন সমস্ত তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গই আলোর মতো সরলরেখায় চলে। রেডিও ওয়েভ যেহেতু তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গ তাই সেই ওয়েভও সরলরেখায় চলে। কোনও প্রতিবন্ধকতা না থাকলে ৫-৬ কিমি দূরের কোনও আলো যেমন স্পষ্ট দেখা যায়, তেমনই ৫-৬ কিমি দূরে রেডিও ওয়েভ প্রেরণ করাটা কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। কিন্তু তাই বলে ইংলন্ডে আলো জ্বালালে কি তা কানাডা থেকে দেখা সম্ভব? ঠিক তেমনই ইংলন্ড থেকে রেডিও ওয়েভ প্রেরণ করলে তা কি কানাডায় পৌঁছন সম্ভব? তাছাড়া পৃথিবী পৃষ্ঠ হলো গোলকাকার। আর রেডিও ওয়েভ চলে সরলরেখায়। তাহলে বক্রপৃষ্ঠ বেয়ে সেই তরঙ্গ কি ভাবে পৌঁছল কানাডায়? স্থম্ভিত বিজ্ঞান মহল।
এক কাল্পনিক পুস্তক বিক্রেতার গল্প : সহস্রলোচন শর্মা
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১৮ জানুয়ারি ২০২৪ | ১৯৪৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৪
প্যারিস, ১৮০৬ সালের দ্বিতীয়ার্ধ। বিখ্যাত ফরাসি গণিতজ্ঞ এড্রিয়ান-মারি লেজানড্রার (Adrien-Marie Legendre) বাড়িতে তাঁর সাথে দেখা করতে এলেন অপরিচিত এক ব্যক্তি। লেজানড্রার হাতে একটা বই ধরিয়ে দিয়ে আগন্তুক বললেন, ‘বইটা যদি একবার পড়ে দ্যাখেন’। খানিক অবাক হয়ে লেজানড্রা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কি বই এটা?’ সসংকোচে আগন্তুক জানালেন, ‘আজ্ঞে, কাল্পনিক সংখ্যার (Imaginary number) উপর ... আমার নিজের কিছু মতামত’। ‘কাল্পনিক সংখ্যা!’ হালকা চমক লাগে লেজানড্রার। ‘বলে কি লোকটা!
শুক্র ভারতী : সহস্রলোচন শর্মা
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ১৫ অক্টোবর ২০২৪ | ৫৭৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
১৯২৮ সাল নাগাদ জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন, শুক্রের আকাশ ঘিরে রয়েছে ঘন ও পুরু কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসের আস্তরণ। মেঘের সেই স্তর ভেদ করে শুক্র পৃষ্ঠ থেকে কোনো আলোই মহাকাশের বুকে বেরিয়ে আসতে পারে না। ফলে শুক্র পৃষ্ঠের কোনো আলো এসে পৌঁছতে পারে না পৃথিবীর বুকেও। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন দাঁড়ায়, শুক্র পৃষ্ঠ থেকে যদি কোনো আলো পৃথিবীর বুকে এসে না পৌঁছয়, তাহলে শুক্র গ্রহকে আমরা দেখি কী করে? ঘোলাটে সাদা রঙের যে শুক্র গ্রহকে দেখে থাকি আমরা, আদতে তা হলো শুক্র গ্রহকে ঘিরে থাকা কার্বন ডাই অক্সাইড মেঘমালার বহিঃস্তর থেকে প্রতিফলিত সূর্যালোক। শুক্র পৃষ্ঠ বা শুক্রের মাটি থেকে কোনো আলো মহাকাশের বুকে ছড়িয়ে পড়ে না বলেই, শুক্র পৃষ্ঠ বা শুক্র ভূমিকে কখনই দেখতে পাওয়া সম্ভবপর নয়। শুক্র সম্পর্কে এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর পরই বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন, আলোকচিত্র নয়, একমাত্র রেডার চিত্র বা রেডিও ওয়েভই পারে শুক্র পৃষ্ঠের প্রকৃত চিত্র তুলে আনতে। কারণ, মেঘের স্তর ভেদ করে স্বচ্ছন্দে শুক্র পৃষ্ঠে পৌঁছে যেতে পারে রেডিও তরঙ্গ। শুক্র পৃষ্ঠে প্রতিফলিত হয়ে ফের মেঘের স্তর ভেদ করে বেড়িয়েও আসতেও সক্ষম সে তরঙ্গ। অথয়েব শুক্র পৃষ্ঠের খবরাখবর সংগ্রহের জন্য রেডার চিত্রই একমাত্র ভরসা। আর ঠিক সেই লক্ষ্য নিয়েই শুক্রের উদ্দেশ্যে পাইওনিয়র শুক্রযান দু’টো পাঠিয়েছে নাসা। শুক্র পৃষ্টের কাছাকাছি পৌঁছে, শুক্র পৃষ্ঠের উদ্দেশ্যে রেডিও ওয়েভ নিক্ষেপ করবে দুই শুক্রযান। শুক্র পৃষ্ট থেকে সেই তরঙ্গের প্রতিফলন সংগ্রহ করে পৃথিবীতে পাঠাবে তারা। পাইওনিয়র ভেনাস দু’টোর উপর তাই একটু বেশিই ভরসা করছেন বিজ্ঞানীরা। আর বিজ্ঞানীদের মোটেও নিরাশ করে নি পাইওনিয়র ভেনাস ১ ও ২। শুক্রের পরিমণ্ডলে প্রবেশ করে, বহু আকাঙ্খাকিত চমৎকার কিছু রেডার চিত্র পাঠিয়েছে তারা। সেই রেডিও চিত্র বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা জানালেন, শুক্র পৃষ্ঠের বিশাল আয়তনের দুই উচ্চভূমিকে শনাক্ত করতে পেরেছেন তাঁরা। ৫,৬০০ কিমি ও ১০,০০০ কিমি ব্যাসবিশিষ্ট সেই উচ্চভূমি দুটোকে সহজেই শনাক্ত করা যাচ্ছে। দুটো নতুন নাম দিয়ে এবার এই উচ্চভূমি দুটোর নামকরণের কথা ভাবলেন তাঁরা।