সার্থক মেয়ে জনম আমার -- : শ্রাবণী রায়
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৫ জানুয়ারি ২০১১ | ৯৬৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর পরিসংখ্যান বলে এই দলিত মহিলাটি রাজ্যের ভার নেওয়া থেকে দলিত মহিলাদের ধর্ষণের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়ে ২০০৮ সনে অন্য সমস্ত রাজ্যকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। এই পরিসংখ্যানের বাইরে অজস্র কেস আছে যার কোনো রিপোর্ট হয়নি বা পুলিশ রিপোর্ট নেয়নি! অজস্র সংগঠন, দেশের আইন,অ্যাক্টিভিস্ট, আমাদের মত সাধারণ নাগরিক বিশেষ করে মহিলা যারা প্রত্যেকে হয়ত অনুভব করছি মেয়েটির দুর্দশা, তারা অসহায় কোন অশুভ শক্তির কাছে,ব্যবস্থার কাছে নাকি নিজেদের কাছে কে জানে? পনেরই জানুয়ারী শ্রদ্ধেয় বহেনজী তাঁর জন্মদিন পালন করছেন, এবার হয়ত লাড্ডুর সাইজ আরো বড় হবে। কেন্দ্রের বন্ধুদের দাক্ষিণ্যে কোর্টের কাছে বেকসুর ছাড় পাওয়ায়, ভক্তরা গলায় পরাবে আরো মূল্যবান টাকার মালা। কাগজে কাগজে আজ তাঁর ছবিতে ছয়লাপ, দলিতদের মসীহা, তাদের উন্নতির শক্তিরূপে। ওদিকে দলিত সতের বছরের কিশোরী মেয়েটি আজো অপেক্ষা করে মুক্তির, শুধু জেলের খাঁচা থেকে নয়, মুক্তি এদেশে এই নারী জন্মের শৃঙ্খল থেকে।
তখন ছোঁয়া অষ্টাদশীর - পর্ব এক : শ্রাবণী রায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ১৪ মার্চ ২০২৫ | ৬৪৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
টেনের রেজাল্ট বেরোনোর পর থেকেই জয় এই শহরের হীরো হয়ে গেল, যে বাড়িতে যাও, সেখানেই শুধু তাকে নিয়ে আলোচনা। একদিন দাদার কাছে এসেছিল ইলেভেনের ফিজিক্সের কী ডিফিকাল্টি বুঝে নিতে। রাস্তায় জিজ্ঞেস করতে দাদাই বাড়িতে এসে ভালো করে বুঝে নিতে বলেছিল। সে কী বিপত্তি, মা দাদা বৌদি সব এসে জড়ো হল।
তার মধ্যে দাদার চিৎকার,
"দ্যাখ, এভাবেই ওরকম রেজাল্ট হয়, জয় এসেছে পড়া বুঝে নিতে আর তোকে ডেকে ডেকেও বই নিয়ে বসানো যায়না।"
মাও মহা উৎসাহে যোগ দেয়,
"শুধু কী তুই, কারুর কাছেই তো পড়তে চায়না, কী যে হবে ওর! এই তো জয় শরাফ স্যরের কাছে অংক করছে, শহরের সব ভালো ভালো ছেলেমেয়েরা তার কাছে অংক করে ইঞ্জিনিয়ারিং মেডিক্যাল পায়। আর এই মেয়ে একদিন গিয়ে বলে, শরাফ স্যর নাক খোঁটে, ওর কাছে পড়বনা। বালাসুন্দরমের কাছে কেমিস্ট্রী পড়বেনা কেন না সে এম কে ইয়াম আর এন কে ইয়ান বলে, কে বি গুপ্তা নাকি বই মুখস্থ করায়। হাজারটা বায়নাক্কা এর, এমন মেয়ে দেখেছিস জয়?"
চশমার সরু স্টাইলিশ ফ্রেমের আড়ালে ঝকঝকে উজ্জ্বল চোখের, আপাতগম্ভীর মুখে কি চাপা হাসির আভাস?
কিন্তু সে ছাই ভালো করে দেখার উপায় আছে এদের জ্বালায়! কী যে ভাবছে ওর সম্বন্ধে, ধরণী দ্বিধা হও ব্যাপার স্যাপার, ঝিমলি মানে মানে সরে পড়ে সেখান থেকে। ভাবছে কি, হয়ত ভাবছেই না, বয়ে গেছে তার, ওর মত বিচ্ছিরি, লেখাপড়ায় ফাঁকিবাজ, কোনোকিছুতেই ভালো নয় মেয়ের কথা ভাবতে!
তখন ছোঁয়া অষ্টাদশীর - পর্ব দুই : শ্রাবণী রায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২২ মার্চ ২০২৫ | ২০৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
“মা বাইরে তাকিয়ে দ্যাখো না, বৃষ্টি হচ্ছে?”
“হচ্ছে, কিন্ত জোরে নয়, উঠে পড়।“
“আর পনের মিনিট, মা। তুমি দশ মিনিট পরে আবার জানালায় যেও। যদি দেখ প্রাইমারির ছেলেমেয়েরা ফিরছে, তাহলে ডেকো না, তাহলে রেনি ডে। যদি না ফেরে তাহলে ডেকো।
“রেনি ডে হলেই বা কী? সকাল সকাল উঠে পড়, বাড়িতেই পড়বি। আর এক মাস পরে তোর ফার্স্ট টার্ম না?
এ কথার জবাব দিতে গেলে সকালের মিষ্টি আলতুসি ঘুমটা মাটি হয়। ঝিমলি মুখের ওপর চাদরটা টেনে দিয়ে পাশ ফিরে শুল।
মা গজগজ করতে করতে মশারি খুলতে থাকে। ক্লাস ইলেভেন টুয়েলভের পড়া, এত কম পড়ে কী করে হয় কে জানে। স্কুলটুকু বাদ দিলে সারাদিনই তো হয় ঘুরে বেড়াচ্ছে নয় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছে, অথবা গল্পের বইয়ে মুখ দিয়ে বসে আছে। এত বন্ধু যে কোত্থেকে আসে? আবার কারুর না কারুর জন্মদিনের পার্টি লেগেই আছে। আজকাল নাকি এরপরে সব আলাদা হয়ে যাবে বলে, জন্মদিন পালনের বেশী ঘটা। রাত্রি দশটা এগারোটায় সবাই ঘুমোতে গেলে, তিনি আলো জ্বালিয়ে বই খাতা নিয়ে নাকি পড়তে বসেন । অত রাতে কী ছাই পড়া হয় অমন করে কে জানে!
তখন ছোঁয়া অষ্টাদশীর - পর্ব তিন : শ্রাবণী রায়
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : উপন্যাস | ২৯ মার্চ ২০২৫ | ১৬০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
হিমালয়ঘেরা এই শহরটাতে পুজো আসার সাথে সাথে চারদিক থেকে হিমেল হাওয়ার দল উঁকিঝুঁকি মারে।সারাদিন নানা শোরগোলে আর লোকের ভিড়ে, পুজোমন্ডপের চারধার বেশ সরগরম থাকলেও সন্ধ্যে হতে না হতেই ঠিক শীত না, তবে হিম ভাব। আরতি শেষে ফাংশন শুরু হলে প্রথম দিকটায় ভিড়টা চারিদিকে মাঠের ঘাসে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও আস্তে আস্তে ঘন হয়ে আসে শামিয়ানার নীচে। একটু রাতে বাড়ি ফেরার সময় হাল্কা একটা পাতা পোড়ার গন্ধ মেশে হাস্নুহানার মাতাল গন্ধে। টুপটাপ হিম ঝরে গন্ধরাজের পাতায়, আর ঝিমলির মন কেমন করে, কারণ ভালো বোঝা যায়না, তবু করে। অন্তত ওই সরস্বতী মন্দির থেকে বাড়ির আধো অন্ধকার পথ চলার ক্ষণে তো করেই। পুজোয় তার তেমন কিছু করার ছিলনা। এমনিতেও সে কোনো বছরই পুজোর ফাংশনের দিকে ঘেঁসেনা খুব একটা, ওই অনন্ত রিহারসাল পর্ব তার মোটেই পছন্দ নয়। আসলে বাঁধাধরা সময়ে কোন কিছু করতেই ঝিমলির ভালো লাগেনা। সেই কারনে এতকাল কোথাও ঠিকমত টিউশনই পড়ে উঠতে পারল না। এবার বারো ক্লাস বলে জোর করে শরাফ স্যরের কাছে অংক করতে পাঠানো হচ্ছে, খুব নিমরাজী হয়েও যাচ্ছে, এন্ট্রান্সের গরজ বালাই!