আমাদের গ্রামের "লার্জার দ্যান লাইফ" জীবনগুলি
: নীলাঞ্জন মিশ্র
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : বিবিধ | ১২ জুন ২০২২ | ২৬১৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
বুড়ি জানে হাতে একটু টাকা রাখতে হয়। এদিকটা না দেখলে হবেনা। গঞ্জনা জুটবে, না খেয়েও মরতে হতে পারে। ক্রয়ক্ষমতাই তো ক্ষমতা এখন! বুড়ি বোঝে। এদিকটা না সামলালে চলবেনা, অরণ্যের জীবন তো আজ আর পাওয়া যাবেনা। তাই সে এটুকু করে। বাদবাকি সবসময় তুমি দেখো, বুড়ি আর প্রকৃতি। বুড়ি যেনো কথা বলে, "কীগো কেমন আছ তোমরা সবাই? আমার মন ভালো নেই। বাঁশবাগানে চ্যাং মাছ নেই। খালে শাল মাছ নেই। প্যাঁচার ডাক শুনতে পাইনা। শেয়ালরা কেউ নেই।"
রানারের ডায়েরি : নীলাঞ্জন মিশ্র
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : সমাজ | ২৫ জুন ২০২২ | ১৫৬১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
চাষে প্রচুর বিষের ব্যবহার আর অন্যদিকে ঝড় বন্যার ফ্রিকোয়েন্সি বাড়তে থাকায় চ্যাং, বাসা, শাল, খলসি, সরপুঁটি ও জিওল রা প্রায় বিদায় নিলো। পুরানো কিছু পুকুরে কোনোরকমে বেঁচে আছে। মাগুরের দেশী জাত খুঁজে পাওয়া কঠিন। জমিদারী যুগে পুকুরের অন্য সম্মান ছিলো তার অন্যতম কারণ পুকুরের জল পানীয় হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এখন সে কাল গেছে। পুকুরের প্রতি খুব অবহেলা। পুকুর আগে পুরো সেচে দিতোনা। আর দিলেও হাপা করে কালো মাছ রেখে দিতো। এমন করে পুকুর সংস্কার করতো যে জলের মান নষ্ট হতোনা। এখন সেসব জ্ঞান গেছে। দিকে দিকে মেশিন। হাতে সময় কম। শ্রমিক কম। সবুজ বিপ্লবের পর থেকে কৃষিকে অলাভজনক করে তোলা হয়েছে বলে যুবসমাজের অনেকাংশের প্রবল অনীহা...
রানারের ডায়েরি : নীলাঞ্জন মিশ্র
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ২৩ জুলাই ২০২২ | ১১০৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
কুঁদলি/কুঁদরি/তলি, নোনা এইসব ছিল প্রান্তিক মানুষ, কুড়ানিদের খাবার। এখানে ওখানে যারা অস্থায়ী সংসার পেতে থাকত। কয়েকজন বা একা। চট বা মাদুরে জড়ান সংসার পাতত, মাটির ছোট উনুন তুলে কদিন রেঁধে বেড়ে খেত, আবার চলে যেত। হাট থেকে কুড়ানো সবজি ফল, ছাঁট। এখান ওখান থেকে সংগ্রহ করা মেটে আলু, ডুমুর, ওল, নোনা, কচু, হরেক রকম শাক, গুগলি, কাঁকড়া এসব দিয়ে তাদের খাবার তৈরি হতো। ভাতে ভাত সেদ্ধ অথবা সব মিলিয়ে একটা ঝোল।
রানারের ডায়েরি : নীলাঞ্জন মিশ্র
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ০৬ আগস্ট ২০২২ | ১২৮৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
এই তো একবছর হয়নি, আমার অজাতশত্রু বোন, আমার অজাতশত্রু ভাই পূর্ণ মেজাজে ডালপালা মেলে ধরেছে। তাদের পাতা ঝরে পড়ছে। পাতাগুলো ঝাঁটিয়ে রাখা হচ্ছে তাদেরই ছায়ার নীচে মাটিতে। এছাড়া মাটিকে আচ্ছাদিত করে আছে কিছু প্যারা ঘাস, লজ্জাবতী, দুর্ব্বো। ভাইয়ের গায়ে লতিয়ে উঠছে অপরাজিতা। ঝরাপাতা বাদামী থেকে কালো হয়ে উঠেছে। ঘাস-পাতা-গুল্ম আচ্ছাদিত মাটি রসে টইটম্বুর। সেখানে প্রতিনিয়ত মাননীয় মিলিপেড, সেন্টিপেড, কেঁচো, শামুক, পিঁপড়ে ও অন্যান্য (আমার নাম না জানা) পোকাদের চলাফেরা। তারাই তো মাটির স্বাস্থ্য, মসৃণতা এইসব বজায় রাখবেন – যাতে মাটি গ্যালন গ্যালন জল ধরে রাখতে পারে তার পেটের ভেতরে। আর ফুল-পাতা-ঘাস যা ঝরে পড়বে সবাইকে জারিয়ে করে দেবে মাটির খাবার। মাটি সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে।
রানারের ডায়েরি : নীলাঞ্জন মিশ্র
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ০২ অক্টোবর ২০২২ | ১১৩৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
একদিন নারায়ণ ফোন করে।
"স্যার, ভাবতে পারবেন না এত মাছ হয়েছে! রান্নাপুজোর দিন থেকে মাছ বিক্রি শুরু করেছি। পাড়া প্রতিবেশী জানতে চাইছে এত মাছ হচ্ছে কীকরে?
আপনি সুস্থ হয়ে আসুন৷ আমরা অপেক্ষা করবো। আপনাকে এক লাখ টাকা দেবো৷ আমার ক্ষেত খামার পুকুর সব সাজিয়ে দেবেন।"
শুনি আর ভাবি, সোমদা বিভিন্ন ব্লকে কিষাণ কিষাণীদের জন্য যে ব্যবস্থা করে দেয়(কৃষি প্রশিক্ষণ, ফার্ম ডিজাইন) তাতে তাদের যা রোজগার হয় সোমদার বেতন তার চেয়েও কম।
এই উৎপাদন কি অর্গ্যানিক? : নীলাঞ্জন মিশ্র
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : সমাজ | ০৬ নভেম্বর ২০২২ | ১৮১৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
প্রথমত একটা কথা খুব পরিষ্কারভাবে জেনে রাখা দরকার যে বিভিন্ন অঞ্চলে চাষবাস নিয়ে যে কাজ হচ্ছে তার মধ্যে খুব নতুন কিছু নেই। একার্থে মূলত আমাদের কার্যপদ্ধতি, অতীতের নানা কৃষিজ্ঞানকে স্মরণ ও অনুসরণ করার চেষ্টা করছে। আবার বর্তমান সময়ের নিরীখে যাকে বলে ইম্প্রোভাইজেশন, তা করছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ফসলচক্র নিয়ে ভাবনা ও পরীক্ষানিরীক্ষা৷ জলবায়ু পরিবর্তনকে মাথায় রেখে ফসল নির্বাচন, রোপণের সময় পরিবর্তন করা, যে অঞ্চলে এই অনুশীলন হারিয়ে গেছে তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা। আবার পুরানো অভিজ্ঞানের অনুশীলনের সঙ্গে প্রয়োজনমতো বর্তমানের কিছু প্রযুক্তিকে ব্যবহার করা। তবে "খুব নতুন কিছু নেই" বলে দিলে মনে হতে পারে "তাহলে এ আর এমন কী?"