আজকের কবিতার পক্ষে বারোটি পাল্টা প্রশ্ন/ কবির স্থানাঙ্ক বিষয়ক দুই চারিটি কথা - তৃতীয় পর্ব : কুশান গুপ্ত
বুলবুলভাজা | কাব্য | ০৩ মার্চ ২০১৯ | ১০৫১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
কবিতা থেকেই খুঁজতে চাই কার বাড়ি রানাঘাট, কার মেদিনীপুর, কার শিমুলপুর, কার বাড়ি অজয় নদীর ধারে। স্থানাঙ্ক জানা মানে শুধু স্থান নয়, অবস্থানও। কোন কবির কোন ঝোঁক, তাও বেরিয়ে আসতে পারে। কে কোন জাতীয় মদ খান, কার কোন পোশাক প্রিয়, কে চাইবাসা কতবার গেছেন, কে ধলভূমগড়, এই নিয়ে বহু চর্চা হয়েছে। গায়ত্রী চক্রবর্তী প্রসঙ্গ এখনো বিনয় প্রসঙ্গ এলে যেন আগে এসে পড়ে। কিন্তু, আগে তো কবির কবিতা পড়ি, কবিতা নিয়েই আলোচনায় প্রবৃত্ত হই। সেখানে কবিকে খুঁজতে চাওয়াই তো সঙ্গত। রবীন্দ্রনাথের ' কবি কোনখানে তোর স্থান' বলে একটি লাইন মনে পড়ে গেল।
আজকের কবিতার পক্ষে বারোটি পাল্টা প্রশ্ন/ কবির স্থানাঙ্ক বিষয়ক দুই চারিটি কথা - দ্বিতীয় পর্ব : কুশান গুপ্ত
বুলবুলভাজা | কাব্য | ১২ জানুয়ারি ২০১৯ | ৮৭৯৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০৬
হাজার বছর আগের কবিরা এমনকি আজকের ফেসবুকে স্টেটাস আপডেট দেওয়া কবিদের সঙ্গেই যেন কিভাবে এক অলীক আত্মীয়তায় রয়েছেন। তাই , কাহ্নু, কৃত্তিবাস, জয়, বিনয় , সুনীল, মৃদুল, জয়দেব(বসু), সোমনাথ যেন নিরবচ্ছিন্ন কালপ্রবাহে একই সূত্রে বাঁধা, কিন্তু তাদের দেশ একই।সে আমাদের বাংলাদেশ, আমাদেরই বাংলা রে।মনে পড়ে গেল সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের এই কবিতায় সত্যজিৎ রায়ের কথা। মনে পড়ে গেল বিভূতি ভূষণ। অপুর হাতে ধরা গ্লোব, সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের এই কবিতা আবৃত্তি করে অপু এই পুরস্কার জিতেছিল। সুদুরের পিয়াসী, কৌতূহলী, অপু এই গ্লোব সবসময় হাতে রাখত, সত্যজিতের ‘অপরাজিত’ সাক্ষ্য দেয়। কিন্তু এও মনে পড়ে গেল সত্যেন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের অভিযোগ: ' সত্যেন করতেন কিছু/যদি না ছুটতেন ছন্দের পিছু পিছু'।
আজকের কবিতার পক্ষে বারোটি পাল্টা প্রশ্ন/ কবির স্থানাঙ্ক বিষয়ক দুই চারিটি কথা - প্রথম পর্ব : কুশান গুপ্ত
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮ | ১৩০৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৯
অভিযোগ এই: আধুনিক কবিতা এতদূর দুর্বোধ্য হয়েছে যে তা প্রায় সিন্ধুর খরোষ্ঠী লিপির নিহিত অৰ্থ বা ব্যাঞ্জনা বের করার মত দুঃসাধ্য ও অসম্ভব ব্যাপার। এই অভিযোগ কতদিনের বলা মুশকিল, তবে জীবনানন্দ থেকেই সম্ভবত এই নিয়ে বেশি শোরগোল শুরু হয়। পরে এই একই অভিযোগে আক্রান্ত হন বারবার যে কবি তাঁর নাম শক্তি চট্টোপাধ্যায়। এমনকি বুদ্ধদেব বসুর মত আধুনিক কবি, যাঁকে কবিতাবিষয়ক অন্যতম উদারমনা শ্রেষ্ঠ বোদ্ধা ধরা হয়, পঞ্চাশ-ষাটের দশকের দিকে এসে এই জাতীয় কথা বলতে শুরু করেন, 'এদের কবিতা এত দুর্বোধ্য যে কিছুই বোঝা যায় না'। শুনেছি উপর্যুপরি দুর্বোধ্যতার অভিযোগে অভিযুক্ত স্বেচ্ছাচারী শক্তি আত্মপক্ষ সমর্থনে কোথাও বলেছিলেন যে প্রকৃত ও শিক্ষিত পাঠক সবাই না।কবিতার গূঢ় অর্থ ও কূটাভাস নির্ণয়ে এক্ষেত্রে পাঠককে প্রস্তুত হতে হয়, এগিয়ে আসতে হয়। যদি ভাবেন পাঠকের প্রতি এটি এক নিছক কাব্যিক ও শাক্ত প্রত্যাঘাত তাহলে অধিক তর্কে না গিয়ে হালকা একটি কথা বলি, রাগসঙ্গীতের প্রকৃত ও সমঝদার শ্রোতা কারা? ডোভার লেনে বসলে আমজাদ আলির সরোদ ধরার ভঙ্গি নাহয় ধরে ফেললেন, কিন্তু রাগ উপভোগ করতে পারবেন তো? নাকি অপরাধবোধে ঘুম পাবে? যদি একজন ফুটবল খেলার দর্শক খেলার সাধারণ নিয়মকানুন না জানেন তাহলে কি তার কাছে খেলাটি সমান উপভোগ্য হবে?
যেদিকে নদী : কুশান গুপ্ত
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১৯ জুন ২০২০ | ২৫২৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
শূন্যতা আসলে নিষ্ক্রিয়তার উপলব্ধি। সক্রিয় জীবনযাপনে নির্দিষ্ট একটা লক্ষ্য লাগে। ধরা যাক, যে লোকটা মাউন্ট এভারেস্টে উঠছে, খাড়া বরফের উল্লম্ব দেওয়ালে চেপে গেঁথে নিচ্ছে স্নো বুট, সে জানে এখানে তার অক্সিজেন সীমিত, মেপে পা ফেলতে হয়, বেঁচে থাকার সম্ভাবনাই মাত্র পঞ্চাশ শতাংশ। এখানে তাকে উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে একটা তুমুল এভালান্স, এখানে এমনকী তার মৃত্যুর পরে তাকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এই এতসব ঝুঁকি তাকে এমন একটা জিগীষা দিয়েছে, যা তাকে পৃথিবীর উচ্চতমে নিয়ে যেতে পারে। হ্যাঁ, তার মৃত্যু আশঙ্কা বেশী, কিন্তু ওই ঝুঁকি আছে বলে তার জীবন সুন্দর। এমনকী, এই আরোহীর মৃত্যুও, আহা, কত দুঃসাহসিক-লিরিক্যাল।
টুক্কা : কুশান গুপ্ত
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ২৩ অক্টোবর ২০২০ | ৩৯১৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
নাজমা বিকেল হলে দোতলার ছাতে আসবে। তারিক একথা জানে। তিতুও। এছাড়াও তারিক জানে, নাজমা স্কুলে কখন বেরুবে, আর, সেই সময়ে তার গায়ে থাকবে একটা অব্যর্থ লালচে টিউনিক। ওই সময়ে, নাজমা, তিতুকে সে বলেছে, একদম নীলমের মাফিক।
নীলম, নীলম। চাংকি পান্ডের হিরোইন। সাদা জামা, সাদা প্যান্ট, সাদা জুতো পরিহিত হিলহিলে চাংকি। ওর সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে হাসতে হাসতে নাচে নীলম। উজ্জ্বল নীলম। লাল ফিতে চুলে বাঁধা থাকে তার। গায়ে লাল ফ্রক। পায়ে যেমন জুতো থাকে সেরকম জুতো সে যদিও নাজমার পায়ে দেখেনি। সত্য বোসের বেটি পরে অমন হিলতোলা জুতা, অমন ফ্রক। কিন্তু, দশটায় টিউনিক গায়ে যখন নাজমা বেরুবে, তখন সে আদতে নীলম। ওই সময় তার পথের একপাশে বসে থাকবেই তারিক, হয় হরলালের পুকুরের ধারে, নয় রাস্তাটা যেখানে বাঁক নেয়, সেই তুঁতগাছের নীচে, কোনোদিন তিতু সঙ্গে থাকবে, কোনোদিন সে একা, কিন্তু ওই সময়ে নাজমার হেঁটে যাওয়ার দৃশ্য দেখবেই তারিক। একই দৃশ্য, তবুও কেন যে নতুন মনে হয়! তার যাওয়ার পরে সঙ্গে তিতু থাকলে তারিক বলবেই, কেমন দেখলি, আজ? আর হয়ত এমনই চাপাগলায় কথাবার্তা হবে তার ও তিতুর: