প্রদোষে প্রাকৃতজন: মহাকালের প্রশ্ন : অদিতি ফাল্গুনী
বুলবুলভাজা | অপার বাংলা | ২৮ মার্চ ২০১৩ | ২২৭৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৩
সাত কি আট শতাব্দীর যে লিগ্যাসি আজ ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট-ময়মনসিংহ-বরিশালের রাস্তায় আগুন হয়ে জ্বলছে, সেই অগ্নি নির্বাপণের সদুত্তর আমাদের কারো কাছেই নেই। বাঙালীর প্রদোষকাল আজো শেষ হয় নি। শওকত আলী আমাদের সেই মহত্তম লেখকদের একজন যিনি শ্যামাঙ্গ ও লীলাবতীর এই সংলাপের ভেতর দিয়ে বর্তমান বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আত্ম-পরিচয়ের সঙ্কট তুলে ধরেছেন। এই বই দুই বাংলার বাঙালী হিন্দু ও বাঙালী মুসলিম উভয়ের অবশ্যপাঠ্য গ্রন্থ। বাঙালী মুসলিমের যে অংশ আজ এদেশকে আফগানিস্থান বানানোর স্বপ্নে দিশাহারা, তাকে পড়তে হবে আত্ম-পরিচয়ের প্রশ্নে। যে বাঙালী হিন্দু ওপারে গিয়ে সর্বভারতীয় আশ্রয়ে কোনমতে মাথা গুঁজে আত্মতৃপ্ত হয়ে ভাবছেন, ‘যাক, ওপারের মুসলিম গুন্ডাদের হাত থেকে পালিয়ে বেঁচেছি’ তারও এই বই পাঠ জরুরি আত্ম-বিশ্লেষণ ও আত্মশুদ্ধির জন্য। দু’জনকেই দু’জনের সঙ্কট-সমস্যা বুঝতে হবে। তবেই মিলতে পারবে শ্যামাঙ্গ আর লীলাবতীর ধর্মান্তরিত ও অ-ধর্মান্তরিত সন্তানরা। কারণ মা প্রকৃতি ত’ আমাদের চেহারায় এমন ছাপ দিয়েইছেন যা কিছুতেই মালা-দাড়ি, তিলক-টুপিতে ঢাকার যো নেই।
ধৃত-রাষ্ট্রের বালিকারা : অদিতি ফাল্গুনী
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব ২০১৩ | ১৫ অক্টোবর ২০১৩ | ১৫২৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৭
নাহ্...আর ভাবিবে না দুলালী বেওয়া! আর কিছু মনে করিবে না! টোকানি তখন ছয় বছরের। টোকানির হাত ধরে সে, রঞ্জিতা মুর্মু আর ধিরতুর বউ শান্তি কুমারী বর্মন মিলে ছুটেছিল চোদ্দ মাইল মূল সড়কের সামনে। সেখানে তার বড় বেটি কুড়ানী যে ছিল। ভ্যানগাড়ির উপর হাত-পা মেলে। মুখে রক্ত। টোকানি হাতে তালি দিয়ে বলেছিল, ‘বুবু- বুবু এ্যাংকা ঘুমায় রছে, মাও!’ আর তখন মেয়ের সদ্য ওঠা দুই কিশোরী বুকের মাঝে মুখ গুঁজে সে যেমন চিৎকার করেছিল, তেমন চিৎকারই কি ভেসে আসছে বর্মন পাড়া থেকে? কার্তিকের দুপুরে চিল ছানা হারিয়ে ফেলা সোনালী রঙা মা চিলের আর্তনাদের মত? টোকানি ঘুমে কাদা। মেয়েকে ঘুম থেকে তুলে মা-মেয়ে এক সাথে ছুটবে নাকি দুলালী একাই যাবে? আল্লা চাহে ত’ টোকানির কোন ক্ষতি হবে না। কোন বাঘডাঁশ এসে তার এই হাঁসের ছানার মত মেয়ের পালকে কামড় দেবে না! আল্লাহ চাহে তো? বাইরে থেকে শেকল তুলে দিয়ে সেই মাঝ রাতে সে ছুটেছিল শান্তি-ধিরতুদের বাড়ি। শান্তি দুলালীর ছোট বেলার সই। মাটির শিব গড়ে ভাল বরের পূজা করতে করতেই ধিরতুকে তার ভাল লেগেছিল। শান্তির বিবাহ ঠিক হয়েছিল অংপুর শহরে ‘নিউ লক্ষ্মী বস্ত্রভান্ডার’-এর আড়তদার লক্ষ্মীনারায়ণ বর্মনের সাথে। কিন্তু অন্ধ হলেও দারুণ ফর্সা ধিরতুর কম্পনহীন সবুজাভ-নীলচে চোখের মণি, একহারা দীর্ঘ গড়ন টেনেছিল শান্তিকে। গায়ে হলুদের সন্ধ্যায় হবু শাশুড়ি সন্ধ্যামালতী মাসীর পায়ে পড়ে সে কেঁদেছিল। পাজি দুলালীরা এ নিয়ে শান্তি কুমারীকেও কম কথা শুনায় নি, ‘তুই এ্যালা গান্ধারির মতো চোখে একখান কাপড় বান্ধিব্যি শান্তি? তোর বরের যে চক্ষু নাই! গান্ধারির মত একশ’ চ্যাংড়ার মা হবি?’ শান্তি কুমারী এ কথার উত্তরে হাত জোড়া করে কপালের কাছে নমস্কার করে বলতো, ‘ওনারা স্বর্গের দেবী।’
শাহবাগ, দ্রোহ অথবা ইউজিন পেতিয়ে’র গান (Les Chanchons de Revolution) - প্রথম পর্ব : অদিতি ফাল্গুনী
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : নববর্ষ ২০১৪ | ১৫ এপ্রিল ২০১৪ | ১৭০৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
সিন নদীর পারে সেবারের জুলাইটা ছিল সত্যিই অন্যরকম। ইউজিন, তোমার কি মনে পড়ে? জুলাই বরাবরই এই ফরাসী দেশে ভিন্ন আভা, ভিন্ন দীপ্তি নিয়ে আসে। প্রায় পৌনে একশ বছর আগের জুলাইয়ের চোদ্দ তারিখের গল্পটা পিতামহ পিতামহীরা শোনায় নি কি? দিকে দিকে খবর রটে গেছিল যে বাস্তিল দুর্গের উপর কামান থেকে গুলি ছোঁড়া হবে সাধারণ, নিরস্ত্র মানুষের উপর। আর সে খবরে এত দিনের ক্ষুধার্ত, ক্লান্ত ও বিপন্ন মানুষ যত ভয় পাবার বদলে বরং উল্টো হঠাৎই অতিকায় দৈত্যের মনের জোর নিয়ে ছুটলো সো-জা বাস্তিল দুর্গ বরাবর। ১৪ই জুলাইয়ের দু’দিন আগেই রাজা ভার্সেই থেকে সৈন্যবাহিনী নিয়ে এসে জনতার উপর আক্রমণ চালিয়েছিল। জনতাও এর উত্তরে সাথে সাথেই পাল্টা আক্রমণের জন্য প্রস্তÍত হয়ে গেছিল। শহরের ঘণ্টা বেজে উঠলো। জনগণের পক্ষ থেকে সতর্ক ঘণ্টা। জনতা দরকারে রাষ্ট্রীয় অস্ত্রভাণ্ডারও দখল করতে প্রস্তÍত। একটি গার্ড রেজিমেন্ট জনতার পক্ষে অবস্থান নিল। ঠিক তার দু’দিন পরেই অর্থাৎ চোদ্দ তারিখেই যেই না খবর রটলো যে বাস্তিল দুর্গ থেকে মানুষের দিকে গুলি ছোঁড়া হবে, অমনি সব ধেয়ে গেল দুর্গ বরাবর। তারপর বাকিটা ইতিহাস। গিলোটিনে অভিজাতদের মাথা। লিবার্তে-ফ্রাতের্নিতে-ইগালিতে...সাম্য-মৈত্রী-স্বাধীনতা...মানুষ স্বাধীন হয়েই জন্মায়...তথাপি সে সদা শৃঙ্খলিত! তবু, ইউজিন...যেমনটা তোমার পিতামহ বলতেন আর এ-ও জানা কথাই...প্রতিটা বিপ্লবের পরই আসে একটি করে প্রতিবিপ্লব...হাজার অন্যায়ের প্রতিবাদেও কারখানায় শ্রমিক ধর্মঘট করতে পারত না। নারী রয়ে গেল আগের মতই নিরক্ষর, গৃহকর্মের দাসী। তবে বিপ্লবটা কোথায়? তবু ১৭৯২ থেকে ১৮৭০...গুনে গুনে ৭৮টা বছর পরে আবার এই জুলাই...সে যেন একইসাথে রক্তবর্ণ অথচ পিঙ্গলাভ মেঘ, যা যে কোন ঝড়ের আগে দেখা যায়।
শাহবাগ, দ্রোহ অথবা ইউজিন পেতিয়ে’র গান (Les Chanchons de Revolution) - শেষ পর্ব : অদিতি ফাল্গুনী
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : নববর্ষ ২০১৪ | ১৫ এপ্রিল ২০১৪ | ১৬৭৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
...তবু বিপ্লবের পিছু পিছু পায়ে পায়ে নিঃশব্দে হেঁটে আসে যে প্রতিবিপ্লব ক্ষুধার্ত ডাইনির মতো, সে সহসাই পেছন থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে বিপ্লবের কাঁধে ছুরি বসায়। বাঘনখে বিদ্ধ করে তার হৃৎপিণ্ড। তাই কি হয় নি? মার্চের ২২ তারিখেই অভিজাতদের কিছু দাঙ্গাবাজ গায়ে পড়ে হামলা করলো কমিউনের লড়াকু শ্রমিকদের সাথে। শ্রমিকরা আত্মরক্ষা করার চেষ্টা করতেই ওরা ছুরি, পিস্তল, লাঠি রেখে পালালো। কমিউনের সেনাপতি লুলিয়ার লোকটিকে তোমাদের যে ভাল লাগত না, সেটা ত’ ঠিকই ছিল ইউজিন! অভিজাতরা তাড়াতাড়িই যে আবার দখল করে নিল দুর্গ মঁ-ভালেবিঁ। ব্যর্থতার শাস্তিতে বহিষ্কৃত হবার সাথে সাথে কমিউনের পিছু নিল সে। ভার্সেই থেকে আসা অভিজাতদের শেষ বাহিনীর পক্ষে কাজ করলো লুলিয়ার। হায়, শ্রমিক নারীরা পর্যন্ত লড়াইয়ে এগিয়ে এলো। নিজেদের দরিদ্র, নিরন্ন বস্তি রক্ষায় পুরুষের পাশাপাশি তারাও কামান চালালো। গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়লো রাস্তায়। নিকোলা আর জাঁকের স্ত্রী, প্রেয়সিরা খুন হলো রাস্তায়। মৃত স্বামীর শবদেহের পিছু হাঁটতে হাঁটতে শিশু সন্তানের কাণে শ্রমিক মেয়েরা শ্লোগান দিয়েছে, ‘ভিভা পারি কমিউন!’ তবু ভার্সেইয়ের সেই বিপুল সৈন্যবাহিনীর সাথে শেষরক্ষা হলো কি? শ্রমিক নেতা ফ্লুঁরাসকে পেছন থেকে খুন করলো বুর্জোয়া সেনাপতি দেসার্ত, বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের হাত থেকে যার জীবন বাঁচিয়েছিল ফ্লুঁরাসই। ফ্লুঁরাসের মৃতদেহ টুকরো করার দৃশ্য ভার্সেইয়ের গোলাপ বাগানে উপভোগ করলো বুর্জোয়াদের স্ত্রী ও রক্ষিতারা। ৬ই এপ্রিল শহীদ শ্রমিকদের শবযাত্রায় কফিনের পিছু পিছু দুই লাখ শ্রমিকের শবযাত্রার ঢল...শুধু পূর্ব প্রস্তুতি ছিল না কমিউনের...ভার্সেই সৈন্যরা এপ্রিলের ৭ তারিখ দখল করে নিল নিউলি-তে সিন নদীর ঘাট। মে মাসের শেষ নাগাদ জার্মানরা বন্দী ফরাসী সৈন্যদের ছাড়ার পর বুর্জোয়াদের শক্তি আরো বাড়লো। ফরাসী বুর্জোয়াদের সাথে হাত মেলালো জার্মান বাহিনীও...আটটা দিন...আট/আটটা দিন সে কি খাণ্ডবদাহন! লোশেজের কবরখানা ভরে উঠলো নর-নারী-শিশু-বৃদ্ধের লাশের স্তুপে। ত্রিশ হাজার মানুষ হত্যার পর শুরু হলো পাইকারি গ্রেপ্তার। লড়াইয়ের শেষ দুই দিনে হেরে যাবে বুঝে শ্রমিকেরা নিজের হাতে নিজের প্যারি প্রিয়তমার দেহে জ্বালালো আগুন। বুর্জোয়া ভার্সেই যেন পায় নিছকই এক অগ্নিদগ্ধ শহর। তিন দিন ধরে দাউ দাউ করে জ্বললো আগুনের লকলক শিখা।
বাংলাদেশস্থ ফিলিস্থিনি রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎকার : অদিতি ফাল্গুনী
বুলবুলভাজা | অপর বাংলা | ০৩ আগস্ট ২০১৪ | ১৫৬০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
শাহের মোহাম্মদ গত প্রায় আট বছর ধরে বাংলাদেশে ফিলিস্তিনি দূতাবাসে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। প্যালেস্টাইনের আলামা গাজি শহরে ১৯৪৯ সালের ১৬ই ডিসেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮৫ সালে বেইজিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনের পরই কূটনীতিকের পেশায় যোগ দেন তিনি। বাংলাদেশের আগেও চীন, লাওস, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কোরিয়ায় রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। গত ২২ জুলাই গুলশানস্থ ফিলিস্তিন দূতাবাসে তাঁর এই সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করা হয়।
মালালা বিতর্কঃ ভিন্ন স্বর : ওয়াক্কাস মীর, অদিতি ফাল্গুনী, কল্লোল
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ০২ নভেম্বর ২০১২ | ২০৯৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
এটা ধর্মের ব্যাপার নয় - এটা পুরোটাই ক্ষমতা দখলের রাজনীতি। ধর্ম এখানে একটি অজুহাত মাত্র। যদি এই লোকগুলি নিরীশ্বরবাদী হতো তাহলেও এই হিংসার ঘটনা ঘটতো। এই সব হিংসার জন্য শুধু ধর্মকেই দায়ী করতে গিয়ে তারা ভুলে যাচ্ছেন যে মানুষকে নিজের দখলে আনতে হলে সব ইডিওলজিকেই হিংসার পথ ধরতে হয়েছে, অবশ্যই ধর্ম তার থেকে বাদ নেই। এটা শুধু কোনো ধর্মের দোষ নয়।নিশ্চয়ই এটা নিয়ে তর্ক ও আলোচনার সুযোগ রয়েছে কিন্তু শুধু ধর্মকে কাঠগড়ায় চাপালে মূল কারণটাকে আমরা বাদ দিয়ে ফেলব। বিশেষত; যখন আমাদের বোঝাতে হবে পাকিস্তানের আম জনতাকে যে এটা আমাদের এক যুদ্ধ। যেটা পরিষ্কার করে বলতে হবে যে টিটিপি যা করছে তা ধর্ম নয়, এটা ধর্মের বিকৃতি। আরো যেটা বোঝানো জরুরি যে টিটিপি এখন ধর্মকে ব্যবহার করছে, কেন না সেটা এখন তাদের পক্ষে সুবিধাজনক।
হেরুকের বীণা : অদিতি ফাল্গুনী
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ০২ অক্টোবর ২০১১ | ১২০৮ বার পঠিত
স্বপ্নের মতো অন্তর্লীন কোন বিষণ্ন পৃথিবীর অধিবাসে সক্রীড়ক ক্লান্ত সময়। সে এক অনাদি নগরী ছিল। নগরী নয়। নগরপল্লী। টিলার পর্য্যঙ্কে স্থাপিত সুভিক্ষ নগরী। ভোগের, ব্যসনের, দ্যূতক্রীড়া ও অত্যুজ্জ্বল পানোৎসবের রাজধনী যে সুভিক্ষ নগরী, তারই বহির্রেখার অন্ধকারভাগে তার অবস্থান। তাই নগরী নয়, নগরতলি। লোকে ডাকে ধরন্ত পল্লী।