।। *বুড়ি ছুঁয়ে যাই*।। ।। *জলছবি*।। (১) । । প্রথম পর্ব। । মাধু, মাধু, এই মাধু।। কোথায় গেলি,শুনতে পাস না।অনেকক্ষণ থেকেই সেতারের তারগুলো অন্যমনস্ক হয়ে নাড়াচাড়া করছে মাধু, যার ইস্কুলের পোষাকী নাম মাধবীলতা। আচারের বোয়েমগুলো নামিয়ে আন তো মা। বেলা যে পড়ে এল। শীত আসি আসি করছে, পড়ন্ত বিকালের রোদ্দুর এর তেজ কম, মাধবীলতা ওরফে মাধু বসেছিল মাদুর পেতে সেতারটি নিয়ে রেওয়াজ করতে, কার্তিক পূর্ণিমার পরে একটা পাড়ারই অনুষ্ঠানে বাজাতে হবে মালকোষ, ও বাড়ির রবিদা বলেছে সামনের সপ্তাহে তবলার সাথে একবার ঝালিয়ে নিতে হবে, লোকে বলে মাধুর হাতে সুরের যাদু আছে। গেলবারও বাজিয়েছিল রবীন্দ্র ভবনে বৃন্দাবনী সারং, কাগজেও উঠেছিল মাধুর বাজনার ছবি। কিন্তু মনটা ... ...
একুশ, স্ফুরিত অগণন আশা / প্রকৃতির উপহারের মোড়ক / ভালবাসা। ... ...
*।। ছটপরব ।।* দীপাবলির পরের কুন ভোরসকালেই জাইগ্যা ওঠে দীপ্তি। পিপরাটোলির ঘরের বাইরে পাও রাইখ্যা দ্যাখে কাল যে মাটির দিয়াগুলান বারবার অসীম যতনে জ্বালিয়ে তুলিছিল দীপ্তি না বিক্কিরি হওয়া বাঁচাবুঁচা করৌঞ্জ এর তেলে, শীতের শিরশিরিয়ে ওঠা বাতাসের ছোবল বাঁচিয়ে, সেই মাটির প্রদীপ গুলো পইড়্যা আছে তেল শেষ হওয়া পরাজিত সৈনিকের মতো, তেল চুঁইয়া পইড়্যা আছে এইদিক উইদিকে, রঙ্গোলির রং বিখরে আছে চৌদিকি; ঐ বড় বাড়িটোর ফেলি দিওয়া আতসবাজির কাগজগুলান, দীপুটা কুড়িয়ে বাড়িয়ে আনি ওর পটাকা শেষ হওয়ার পর জ্বালিয়ে বারে বারে হাততালি দিয়ে নাচে। বাপটা বলিছে, আওয়াজ ওলা পটাকা না জ্বালাতি, সরকারের মানা, বড়লোকিরা শোনে না কিছুই। ... ...
।। স্বৈরাচারী।। প্রেসিডেন্টের চীৎকার আমি জিতেছি, কলম্বাস আমাদেরই। গনতন্ত্রী রা ঘাড় নেড়ে বলল ঠিক্ ঠিক্ ঠিক্; আমরাই জিতব, শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে গুনে যাব ভোট; কে জিতল আর হারল তাতে কি আসে যায়। স্বৈরাচার জিতছে, মনুষ্যত্ব হারছে সারা পৃথিবীতে, ভগবান মানুষ বানাতে বানাতে ক্লান্ত, তাই হা'ক্লান্ত ভগবানের স্টুডিওতে এখন শুধুই অসুর তৈরি হয় মানুষের আদলে;যে অসুরগুলো সমস্ত ভগবানের বানানো অসমাপ্ত মানুষগুলোর টুঁটি চেপে ধরবে আর উচ্চকিত গলায় চেঁচিয়ে বলবে, তফাত যাও তফাত যাও - এটা আমাদের পৃথিবী; এই পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে যাব আমরা হিংসার, অসূয়ার আর স্বার্থপরতার।। এক লোলচর্ম পক্ককেশ বৃদ্ধা গনতন্ত্রী দাদিমা রূপকথার গল্প শোনাবে ঐ শিশুপালদের; এই তেপান্তরের মাঠেও চাঁদের হাসির বাঁধ ভাঙ্গা ... ...
মন বলল কবিতা লেখো, / হাত টেনে নিল তুলোট কাগজ ... ...
।। *লক্ষীসরা* ।। বিজলি আজ খুব ব্যস্ত। তাহেরপুরে সক্কালবেলাতেই বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা নীহর পড়ে আজকাল। কাল নক্ষীপূজো, সরাগুলান আজ কালিনারায়নপুর হাটে নিয়ে যেতি হবে। এই নক্ষীপূজোতেই সরা বেচি দুপয়সার মুখ দেখতি পায় বিজলিরা। শান্তিপুরী সরা, জটূলিদাদুর মুখে শুনেছে বিজলি কত রকমের সরা আছে, ঢাকাই সরা, ফরিদপুরী সরা, সুরেশ্বরী সরা আর বিজলীর মা খুড়িমারা যেটা আঁকে সেই শান্তিপুরী সরা। আগে ঘরে ঘরে নক্ষী'মার মুর্তি পূজো হতো না, সরাপূজোই হোত বেশি ঘরে। ফরিদপুরী সরা চৌখুপি, মা নক্ষীর চিত্র আঁকা সবেতেই, এই সরা বেচেই দু পয়সা এই কোজাগরী পূজোর আগে। বাপটাকে বলতি হবে দুলাল কাকার ভ্যানটা নিয়ে সরাগুলান পৌঁছে দিতে। রাতে কি ছাঁইপাঁশ গেলে দিনভর ... ...
কে জাগে রে!! ছোটবেলায় দুগ্গা পূজো ছিল পাড়ার পূজো। পূবপাড়া, মাঝেরপাড়া, পশ্চিমপাড়া। আমাদের বাড়িটা পড়তো মাঝেরপাড়ায়। পূজোটা হত ইস্কুলবাড়িতে, আমাদেরই পূজো, তবে পাড়ার, ঢাকিরা থাকতো আমাদের বাড়ীতে সিঁড়ির তলার ঘরে। ঢাকিদের সাথে একটা বাচ্চা ছেলেও আসত কাঁসি নিয়ে নাড়ু। ... ...
।।কোজাগরী।। কে জাগে রে !! ছোটবেলায় দুগ্গা পূজো ছিল পাড়ার পূজো। পূবপাড়া, মাঝেরপাড়া, পশ্চিমপাড়া। আমাদের বাড়িটা পড়তো মাঝেরপাড়ায়। পূজোটা হত ইস্কুলবাড়িতে, আমাদেরই পূজো, তবে পাড়ার, ঢাকিরা থাকতো আমাদের বাড়ীতে সিঁড়ির তলার ঘরে। ঢাকিদের সাথে একটা বাচ্চা ছেলেও আসত কাঁসি নিয়ে নাড়ু। নাড়ুকে হিংসে হোত, ওকে তো ইস্কুলে যেতে হয় না, কেমন পঞ্চমী থেকেই বাপের সাথে দুগ্গা পুজোর মন্ডপে। স্কুলে প্যান্ডেলের বাঁশ পড়ত মহালয়ার পরের দিন, মন উড়ুউড়ু, কবে ষষ্ঠী আসবে, ষষ্ঠী হয়ে ইস্কুলে ছুটি, সেই এক মাসের। সপ্তমী অষ্টমী নবমী টা কেটে যায় কেমন স্বপ্নের মতো, সীতানাথ ওর ভাই পচাকে দুই বেনী প্যাঁচানো সাপ বেলুন কিনে দেয়, সবাই রোল ক্যাপ ফাটায়, ... ...
।। *অন্য এক পূজোর পাঁচালী* ।। সমরজিৎ জানা কোভিডকালে একরাশ শিউলি ফুলের গন্ধ হঠাতই ভেসে এল। মাছের ভেড়ি, নদীবাঁধে ঘেরা বাদাবনে বড়োপূজোর বাজনা প্রতিবারই যেন বেসুরো বাজে, কোনবার আয়লা, কোনবার আমফান, কোনবার বাঁধ ভাঙ্গা বৃষ্টি, হিঙ্গলগঞ্জের, মামুদপুরের, বায়লানীর পূজো কে সর্বদাই অন্যরকম বুভুক্ষুপীড়িত করে রাখে। এবার আবার কি এক ছোঁয়াছুঁয়ি অসুখ এসেছে, দুগ্গা দেখেছে ভেড়ির উপর যে বাবুরা পলিথিনের প্যাকেটে করে চাল ডাল আলু সয়াবিন এর নাগেট দিতে আসে, তারা বলে নাকে কাপড়টা দেবেন টোকেন নেওয়ার সময়। এই টোকেন এক আশ্চর্য সাত রাজার মানিক ধন, থাকলে মা পাবে রেশন, নইলে ফক্কা। এখনো গ্রামের মধ্যে পুরনো বাড়িটার চাল নেই, আমফানে উড়ি গ্যাছে, বাপটা ... ...