এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • ছটি মাইয়া

    Samarjit Jana লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৫ নভেম্বর ২০২০ | ১১৭০ বার পঠিত | রেটিং ১ (১ জন)
  • *।। ছটপরব ।।*

    দীপাবলির পরের কুন ভোরসকালেই জাইগ্যা ওঠে দীপ্তি। পিপরাটোলির ঘরের বাইরে পাও রাইখ্যা দ্যাখে কাল যে মাটির দিয়াগুলান বারবার অসীম যতনে জ্বালিয়ে তুলিছিল দীপ্তি না বিক্কিরি হওয়া বাঁচাবুঁচা করৌঞ্জ এর তেলে, শীতের শিরশিরিয়ে ওঠা বাতাসের ছোবল বাঁচিয়ে, সেই মাটির প্রদীপ গুলো পইড়্যা আছে তেল শেষ হওয়া পরাজিত সৈনিকের মতো, তেল চুঁইয়া পইড়্যা আছে এইদিক উইদিকে, রঙ্গোলির রং বিখরে আছে চৌদিকি; ঐ বড় বাড়িটোর ফেলি দিওয়া আতসবাজির কাগজগুলান, দীপুটা কুড়িয়ে বাড়িয়ে আনি ওর পটাকা শেষ হওয়ার পর জ্বালিয়ে বারে বারে হাততালি দিয়ে নাচে। বাপটা বলিছে, আওয়াজ ওলা পটাকা না জ্বালাতি, সরকারের মানা, বড়লোকিরা শোনে না কিছুই। কি শব্দ কাল রাতি, ভোর তিনবাজে তক্ কালু ভৌ ভৌ করিছিল পটাকার শব্দে, কালুটা ভয় পায় শব্দ হওয়া পটাকাকে, ওর পুঁছে গতবার বেঁধি দিইছিল কিছু বদমাশ শ্যতান। দীপুটা বাপের খুব কথা শোনে, নয়নজেঠার কাছ থিক্যা পঁচাশ রুপাইয়ার ছুরছুরি আর চক্কর এনিছিল, বাপটা এখনও পয়সা দিই নি, আর পটাকা র শব্দ হলিই কালু ভোঁকে ভৌ ভৌ ভৌ।

    মা দীপাবলি র লগনসায় দিয়ার স্যাকড়া পঁচাস রুপাইয়া, বাত্তির প্যাকেট দশ রুপাইয়া, আর করৌঞ্জ এর তেল পুরানো জলের বোতলে একশ বিশ রুপাইয়া সের করমটোলি চকে দুই দিন ধরে বেইচ্যা পাঁচ সাত রোজির ভাতের চাল কিনবে, তাই দীপ্তির দীপাবলি শুধু দিয়া-ময়, এই দিয়ার লগনসা ধরার জন্য পিছলা তিন হপ্তা থিইক্যা নদীপাড়ের মিট্টি আনা, তারপর পা দিয়ে সানা, মিহিন্ করনা, ছোট কাঠের তক্তায় দিয়ার খোল বানানো, রোদে শুকানো তারপর রোদশুকনা কাঁচা দিয়ার ঢের বিলের পড়ে থাকা খড়ের গুড়ার ছোট ছোট গুছিতে পুড়িয়ে রাঙাপানা করা, মা'টা ঐ গুছির ভাটিতেই ভাতের হাঁড়ি বসায়, দীপ্তি আলু পোড়ায়, হরিমির্চ নমক দিয়ে মাইখলে যা স্বোয়াদ হয় না।

    দীপুটা বসে থাকে ভাতের গন্ধে, কি সুবাস ভাত আর আলুপোড়ার;

    মাঝে মাঝেই দীপ্তি টের পায় প্যাটের টানে সব উৎসব ই ফিকা পড়ি যায়। যেদিন ভাত খায় প্যাটপুরে, ডাল সিদ্ধ হয়, আলু পুড়ে সেদিনই দীপুদের উৎসব।

    কি একটা অসুখ আইছে করোনা, বাপটার কাজ গেল আজ সাতমাস হোল, সেই কুন গাজিয়াবাদের বস্তি থেকে হাঁটতি হাঁটতি আট দশ দিনে রাঁচি এইসি পৌঁছিছিল দীপুরা। রাস্তায় লঙ্গরে খাবারও দিছিল জাগায় জাগায়। আজকের পড়ি থাকা দিয়াগুলান মনে করাই দেয় তারিক চাচার কথা যে দীপ্তি দের সাথে হাঁটতি হাঁটতিই হঠাতই মরি গেল রাস্তায়, কেউ ছুঁয়ে ও দেখলোনি, বইললো করোনা হইছে, চাচিটা খুউব কেঁইদেছিল। দেখতিও পায়নি তারিকচাচা কে।

    তারপরের থিইক্যা দীপ্তিরা রাঁচিতেই আছে পিপরিটোলাতেই।

    পিপরিটোলার মটরছিম্মির আর সরগুজার ক্ষেতে রঙবিরঙ্গী তিতলির উড়াউড়ি, ঘাসের পাতায় লাইন ধরা শিশিরের বুন্দি; নদী পাড়ের বগুলা, চখাচখি দীপ্তির চোখে মায়াকাজল দেয় ; দীপ্তি র গাজিয়াবাদের ধুঁধলা আসমানের চেয়ে রাঁচির ঝকঝকে আসমান খুবই মনকেমন করা বচপনে দীপ্তি কে বার বার ওয়াপস্ নিয়ে যায়।

    দীপাবলি চলি গেল, ছট পরব আইসছে, ছটি মাইয়ার কিরপা পেলি বাপটার আবার কাজ জুটবি। মা'টা বরত্ রেখিছে ছটি মাইয়ার জন্যি, ভিখ মাঙ্গি ছট বরত্; মাঙ্গকে ছট করনা হ্যায়, এক আশা দিদি প্রীতি সুপ ডালা, নয়া কাপড়া দিয়ে গেছে কাল, নাহানা খানা,ক্ষরনা থেকেই আকাশ বাতাস গুঁইজবে ছটি মাইয়ার গান, আটা, গুড়, কপূরে বনবে ঠেঁকুয়া। আর গোটা সাবুদ ফল, সব্জি, চিনি কেলার কাঁধি, মিঠাআলু, গাছহলদি, আদিগাছ , মুমফলি, গন্না। নদী পারের দুই পাড়ি অনেক লোকির ভীড় হয়, এবারে বলছে সবাই এত ভিড়ে এবারে সরকারির মানা আছে। ছটি মাইয়ার আসতি তো মানা নেই।

    হে ভগওয়ান, হে ছটি মাইয়া; বাপটার কাজটো জুটিয়ে দে মা, আবার দীপু ইস্কুলে যাবে, মাঝে মাঝে ভাত ডিমের মিল দিবে; দীপ্তি আবার নূতন কিলাশে উঠবে, পড়াশুনা না শিখলে দীপ্তি আশাদিদি হবে কি করি ? ছটি মাইয়া এক নূতন উগতি হওয়া সূরজ কিরণে দীপু দীপ্তি দের সব কষ্ট মুছি দেবে। ফসল উগবে, মিল চলবি, ধানের শীষে দুধ; ফিঙা পাখি কাকতাড়ুয়ার উপর দুলবি, চাল হবি কিষানের ঘরে।

    এই এক উগতা হুয়া সূয্যি'মামার মতো নূতন খুশিয়াল আশার নাম ছটপরব।।

    সমরজিৎ জানা
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | ১৫ নভেম্বর ২০২০ ১৩:৫৬100250
  • শুরুতে খানিকটা বাঙালভাষা কেন? বাকী লেখার সাথে ত ঢাকাঘেঁষা ডায়ালেক্টের কোন যোগই নেই। 

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন