আমার ঘরের নিয়ম বড় কড়া,দরজায় শয়ে শয়ে দারোয়ান,ঘরের ভেতর আনাচে-কানাচে, অলিতে-গলিতে প্রহরী।মাছিটিও ঢুকতে পারে না তাদের পেরিয়ে। তাহলে?তাহলে আমি কোন রোগে ভুগছি,আমি মরে যাচ্ছি কেন? আমার প্রহরীরা খুব কড়া,প্রতিদিন আমার শরীর থেকে রক্ত বের করে দেয় বিশুদ্ধতার নামে,আমার গায়ের চামড়া তুলে দেয়,পুরোনোটা নোংরা হয়ে গিয়েছিল বলে। আমি আস্তে আস্তে মরে যাচ্ছি;কিন্তু ওরা তাতে আরো চিন্তিত।এখন রক্ত বের করে নেওয়ার প্রক্রিয়া বারে বাড়ছে,চামড়ার সাথে মাংসের স্তরের পুরুত্ব বাড়ছে প্রতিবারে। আমি ওদের কাছে আমার মৃত্যু ভিক্ষা করি,কিন্তু ওরা বিরক্ত হয়—'কি শিশুসুলভ বায়না!''মরার জন্যই কি ওরা এত সদাসতর্ক, শশব্যস্ত?' কিন্তু আমার জীবনীশক্তি ক্রমশ কমে আসছে,আমি আর এই অত্যাচার সইতে পারছি না।ওরা এখন আমাকে হাঁটতে সাহায্য করে, খাইয়ে দেয়।সেদিকে ... ...
আমার মৃত্যুর কারণ জানলে তুমি অবাক হবে।আমি এমনি এমনি মরিনি, আর দশটা লোকের মত না—আমি শিল্পীর মৃত্যু মরেছিলাম। তখন আমার বয়স ত্রিশ হবে।তবে আর সবাই যেমন হয়, তেমন নয়—আমি শিল্পী ছিলাম তো! খেতে পেতাম না,পায়খানায় যেতাম না টানা একমাস।পেট আর পিঠের মাঝে এক ইঞ্চি ফারাক ছিল।খিদে লাগত খুব,কিন্তু না-খেয়ে থাকাটাকেও আমি শিল্প বলে চালিয়েছিলাম।আমি তো শিল্পী—আমার সবকিছুই শিল্প।তবে জানতাম, তার দাম আমি পাব না।আমার কৃচ্ছসাধনের লাভ যাবে এক কঞ্জুস ব্যবসায়ীর পকেটে। তবু স্বীকার করতে পারিনি।আমি শিল্পী তো! একদিন খুব খিদে পেয়েআমার হাতের বুড়ো আঙুলটা চিবিয়ে খেলাম।তার আগে তিন রাত ধরে ভেবেছি—কোনো আঙুলটা সবচেয়ে কম দরকারি?বুড়ো আঙুল, কেবল টিপছাপ আর ফোন লক খোলে।কড়ে আঙুলে নাক ... ...
আমি সম্পূর্ণ কুসংস্কারমুক্ত, বিজ্ঞানমনস্ক। এমন কিচ্ছু নেই, যা আমার সামনে ঘটেছে বা আমার সাথে সম্পর্কিত অথচ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা খুঁজিনি। ওটা আমার অসহায়তা। সে যে কী জিনিস, যে না জানে বুঝতে পারবে না। আমদের প্রত্যেকের এক বা একাধিক অ্যাজেন্ডা থাকে(অবশ্যই যারা একটু ভাবে), আমরা সারাজীবন আমাদের আশেপাশের লোকেদের সমর্থন পেতে এবং নিজের দলে টানতে চেষ্টা করি। বেশিরভাগই সমর্থ হই না। তার কারণ, হয় আমাদের অ্যাজেন্ডা সময়োপযোগী নয়, বা হলেও তা লোকের কাছে ঠিকঠাক তুলে ধরতে পারি না। আমার দমবন্ধ লাগে, রাগ হয়;এরকম কত মত ছিল, যারা জনসমক্ষে আসতে পারেনি। অথচ যদি তারা দিনের আলো দেখত, পৃথিবী কত বছর এগিয়ে যেত। আমিও একটু একটু ভাবার চেষ্টা করি, ভুল বললাম বোধহয়;আমি সারাদিন শুধু ভাবি। এলোপাথাড়ি, একনাগাড়ে, নিরন্তর - শুধু ভেবেই চলি। যেটুকু আমি লিখছি ... ...
আমি, আমি এত আত্মবিশ্বাসহীন, যে আমার মুখে করুণ ভাবটা ফুটিয়ে করো সহানুভূতি পাব, তাও হয় না। হাস্যকর হয়ে পড়ে। প্রেম পাইনি সেটা আমার দুঃখ নয়, আমার দুঃখ আমি কোনোদিন পাব না। জীবনের এই মোড়ে দাঁড়িয়ে আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমার সেই যোগ্যতাই নেই। আমি মনে যা ভাবি, তার গভীরতা সাগরপ্রতিম, আকুলতা এক আকাশ। কিন্তু তা যখনই মুখে প্রকাশ করার বেলা আসে, আমি কেমন দিকশূণ্য হয়ে যায়, ভাষা যোগায় না মুখে। সবচেয়ে বড় কথা আমি পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারি না। যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমি ভাবি আজ গিয়ে এটা বলব, বলবই। কিন্তু সামনে যে থাকে, সে এত বেশি সপ্রতিভ, আমি কেমন যেন মিইয়ে যাই, আর বলা হয় ওঠে না। আমি আবার হাসির পত্র হয়ে যাই, জোকার হয়ে যাই। এমনকি আমার সমস্যা, কষ্ট, বেদনা, যন্ত্রণা সব মজার জিনিস হয়ে যায়। আমি ভাবতাম, হয়তো ... ...
আমার মৃত্যু আসছে, সেই রাস্তা দিয়ে, যেখান দিয়ে আমি আসি-যাই। খুব ধীর পায়ে, তবে আসবে নিশ্চিত। আমি প্রতিদিন দেখি যাওয়া আসার সময়, ও একটু একটু করে আমার বাসার দিকে রওনা হচ্ছে, প্রতিদিন একটু করে এগিয়ে যায়। আমার বুক ধড়ফড় করে, আমি ভয় পাই। কখনো ভীত বিড়ালছানার মতো গুটি পাকিয়ে শুয়ে থাকি, করণ কান্নায় ঘরের বাতাস ভারী করে তুলি। আমায় মরতেই হবে, এর থেকে বড় সত্য আর কিছু নেই, আমি ভয় পাই না মৃত্যুকে। কিন্তু মৃত্যুযন্ত্রণা তা তো ভীষণ - তাকে ভয় পাই আমি। ... ...
আমাকে এমন একদিন দুপুরে ডেকেছিল। সেদিন জ্যৈষ্ঠের কাঠফাটা রোদ, আমি ঘর্মাক্ত কলেবরে পৌঁছেছিলাম। নদীর ধারে পরিত্যক্ত চাঁচের ঘরটাতে।ও খানে হিমু কাকা দোকান করেছিল। সে মরে গেছে বাসে কাটা হয়ে। আমি যেতেই সে আমার ঠোঁটে তার ঠোঁট ডুবিয়ে দিয়েছিল। পুরো তিন সেকেন্ড আমি আমার অধর খুঁজে পাইনি। আমার চুল ওর হাতের মুঠোয় ধরা ছিল, আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই সুখ সমুদ্রে ভেসে গিয়েছিলাম। সুরঙ্গনা আমায় সাবালক করেছিল সেদিন। তারপর তিনটা মাস আমি ওর শরীর আবিষ্কার করেছিলাম ক্রমে। প্রতিটা পাহাড়, উপত্যকা, খাদ, মিয়েন্ডার, সমভূমি -- সব জানতাম আমি। আমি ওকে বলেছিলাম একদিন, "আমি তোমার স্বামীকে তোমার শরীরের ভূগোল পড়াব।" ও হেসে বলেছিল, "হারামজাদা, তুই কি তবে?" আমি বলেছিলাম, "আমি তো নাং। ভাতার হলে কি এত মজা আর হবে?" তারপর সে অনেকদিন কেটে গেছে। আমি এখন নিপাট ভদ্রলোক। সুরঙ্গনা এখনো ... ...
আমার ডানায় অনেক ঝুলকালি লেগে আছে।অনেকদিন ব্যবহার করিনি,অন্ধকারে পড়ে ছিল। আজকে যখন দেখলাম, এখনো কিছু মানুষ ওড়ে, আমারও ইচ্ছে হল - ডানা বের করলাম, একটু উড়ে আসি। এখন আমি সপ্তম আকাশের একটু নিচে, হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যায়। আমার ঘর নিচে পড়ে আছে, আমি তার কঙ্কালসার দেহ দেখতে পাচ্ছি, সেখান থেকে বিষাক্ত ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছে চারিদিকে, আরও দূষিত হচ্ছে বাতাস। আমার ফিরতে মন চাইছে না, এখানে আমি থেকে যেতে পারি অসীম কাল অবধি। আমি ভালোবাসি উড়তে। এখনও- আমার পায়ে নিম্নগামী টান, ডানাগুলো ওর সাথে পাল্লা দিতে পারছে না। নিচে দেখতে পাচ্ছি ঘরের স্বস্তির নিঃশ্বাস, আমার সিংহাসন এখনো খালি। হালকা নীল শ্বাস আমাকে আচ্ছন্ন করছে, আমার আবার দায়িত্ববোধ ফিরে এসেছে, আমি ডানা খুলে ফেললাম, পায়ের জোরালো চাপে ভেঙে ফেললাম একেবারে, গুঁড়োগুলো কালো বাতাসে মিশে গেল, হাহাকার শুনলাম ... ...
আমার শরীরে এখন আমি আমার দাদির গন্ধ পাচ্ছি। আমি কি তার মতোই হয়ে যাচ্ছি? আমি তো হতে চাইনি কোনোদিন! তবে!----- আমি তাকে ভালবাসি না তা নয়, তবে এতও নয়, যে আমার হৃদয় তার পায়ে সমর্পণ করব। সত্যি কথা বলতে যতটা ভালো না বাসলেই নয়, ততোটাই বাসি। আমার তার জন্য ভালোবাসা, শুধু কর্তব্য ছাড়া আর কিছু নয়। সে আমার আত্মীয়া, উপেক্ষা তো করতে পারি না! চারিদিকে যে এত পশু, পাখি, গাছপালা, ফুল আছে, আমি কি তাদের বেশি ভালোবাসি, তাও নয়। তাহলে আমি কেন মৃত্যুকে ভয় পাচ্ছি? আমি বোধহয় এইসবকে একত্রে ভালবাসি, সমষ্টি হিসেবে। আমি নিশ্চিত নই এখনো। ততদিন আমি বাঁচতে চাই। এখন বুঝতে পারছি, আমি অনিশ্চয়তাকে ভয় পাই। মানুষ সবকিছুকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করেছে। ফসল চক্র থেকে শুরু করে সাইকেলের চাকা, জলচক্র থেকে শুরু করে অদৃশ্য কার্বন চক্র। সব। আমরা কমবেশি ... ...
বিঃ দ্রঃ - এই কবিতায় আমি ধর্মের বিরুদ্ধে চরম বিষোদগার করেছি। বিশেষত ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে। এমন নয় যে আমি ইসলাম ধর্মকে বেশি ঘৃণা করি, অন্যকে কম। কাউকেই সামান্যতম পছন্দ করি না। তবে এটা মনে এল তাই লিখলাম ব্যাস। যদি মনে হয় আপনি উদারমনস্ক নন,তাহলে এটা দেখামাত্র ব্যাক বাটন প্রেস করুন। এবারে কেউ যদি। ব্যালেন্স করতে বলেন, তাও করব না, আমার কালি, আমার কলম, আমি যা খুশি লিখব। হতে পারে এর পরের কোনো কবিতায় অন্য কোনো ধর্মকে ধুয়ে ... ...
মানুষ এত সুন্দর হয় কেন? আমি দেখে ঘুমাতে পারি না রাতে। আবার আইন আছে ধরে আনা চলবে না। কেন? আমি যদি পুষি? আমি নাহয় টাকা দেব কিছু, নিয়মিত হপ্তাও দেব, যদি বলে। আমি দুচারজনকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, প্রথমে হাসছিল, তারপর তেড়ে মারতে এল। কেন, আমার কি ইচ্ছে হয় না, মনোরম জিনিস পেতে, আমাকে ভালো লাগলে গাছ তুলে আনতে পারি, পাখি ... ...