চারিদিকে সুগাঢ় মেরুন গোলাপের মাঝে,সে জুঁইফুলের মতো ফুটে ছিল।কিচ্ছু বলেনি সে,একটা কথাও না,কিন্তু তার ফুটে থাকা প্রতিটি মুহূর্ত চপেটাঘাত ছিল;অনুচ্চারিত প্রতিটি শব্দ বলছিল,"না তুমি সব জয় করতে পারোনি,এক খন্ড জমি আছে,যেখানে আমি ফুটে আছি।" সে অভিজাত সমাজে খুব সুন্দর, সুগন্ধী,বিরল কিংবা দামী বলে খ্যাত ছিল না,শুধু কিছু অশিক্ষিত মূর্খ লোক ছিল,আর ছিল আমার মতো কয়েকজন পাগলাটে কবি,যারা জনপ্রিয় নয়,স্নিগ্ধ সৌন্দর্য্য খুঁজত,তারা মাঝে মাঝে জল দিত তাতে,আর পরে কয়েকজন বিপ্লবী এসেছিল,ওরা পূজা করত ওর,বিপ্লবের প্রতীক হিসেবে।কিন্তু না,অভিজাত ফুলের মর্যাদা ও পায়নি। সে তো চায় না তা,সে শুধু ফুটে থাকতে চায়,নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই আগ্রহী,লোকে কি বলে তা নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় কোথায়!যাদের অঢেল ... ...
মানুষ স্মৃতি সঞ্চয় করে পরে দুঃখবিলাস করবে বলে, পুরোনো ঘা চাঁটবে বলে,পরে কখনো অবেলায়, সময় পেলে, যদি কাজ কিছু না থাকে হাতে, যদি বিষন্ন বিকেল, কিংবা অতি সুখ হানা দেয় ঘরে। মনে হয় যদি এখন তত ভালো নেই, আগের দিনগুলো যদি আসত ফিরে! যদিও তখনও সে এই অভিযোগই করত। শুধু তখনের সময় কেটে গেছে, পরিস্থিতিও পাল্টেছে এখন, সেই মানুষটাও পাল্টে ... ...
ভিড়ের প্রতিটা মুখ তার মতো ছিল, আমি বারবার খুঁজে হয়রান হয়ে গেছি, কোথায় খুঁজিনি তাকে! নদীর মোহনায়, ইউক্যালিপটাস গাছের বিরল ছায়ায়, দুর্দান্ত গোবির বুকে, কিংবা মালয়েশিয়ার পাম বাগানে, কিন্তু না, সে কোথাও ছিল না। যখন প্রথমবার তাকে দেখেছিলাম, তেমন গুরুত্ব দিইনি, ভেবেছিলাম, "এ মুখ তো সবার হয়।" পরে খুঁজতে গিয়ে যখন সবার মুখে তার ... ...
আমি একযুগ তার চুলে মুখ ডুবিয়ে বসেছিলাম,উঠে দেখি পৃথিবী পাল্টে গেছে,সেই মানুষ, গাছপালা, সমাজ, সংস্কার সব পাল্টে গেছে।আমি যাকে আমার প্রেয়সী বলতাম,যার চুলের গন্ধ আসমানী মেশকের গন্ধ লাগত,তার শুধু চুলগুলো এখনো আমার হাতে ধরা,হাড়গুলোও ক্ষয়ে গেছে কবে,আমি জানতে পারিনি।আমাকে সে প্রায়ই বলত,"তুমি আমাতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে না তো!"প্রতিবারে আমি বলেছি, "আমি সূর্যের মৃত্যু পর্যন্ত, ব্রহ্মান্ডের শীতল মৃত্যু পর্যন্ত শুধু তোমাকে ভালোবেসে কাটিয়ে দেব।"আমি কথা রেখেছি,কিন্তু যে প্রতিজ্ঞা আদায় করে নিয়েছিল,সে কোথায়?আমি ধীরপায়ে সেইদিকে এগিয়ে যাই,যেখানে একযুগ আগে আমরা থাকতাম,মনে হচ্ছে সেখানে সবই ওর স্মৃতি,আমি পাগল হয়ে যাব।আমি চিনতে পারছি না কিছুই,পথ নেই; যেখানে ছিল,সব পাল্টে গেছে!এখন আমার আফসোস হচ্ছে,ওর শেষ চিহ্নগুলোও ... ...
তবুও যেতে হয়, কত রাত একসাথে তারা দেখা বাকি খোলা আকাশের নিচে শুয়ে, কত সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত দেখব বলে ভেবেছিলাম, আর দেখা হল না। আমি ভেবেছিলাম তুষার ছুঁয়ে দেখব, পাহাড়ের কোলে শুয়ে হার না মানা জেদি গাছটাকে দেখব কিছুদিন, কয়েকটা নাছোড়বান্দা মাকড়সা দেখে আশান্বিত হব। কিন্তু দেখো, কিছুই হল ... ...
চারিদিকে এত আলো, আমি মরি না কেন? সবসময় শুধু খারাপ, কুৎসা, কলঙ্ক দেখতে পাই, সব ভালো আমার চোখের পাতার উপর পিছলে চলে যায়, আমি দেখতে পাই না। পৃথিবীর রূপ, রস, গন্ধ - যা কিছু ভালো আমি অনুভব করি না। ওই যে সর্পিল স্রোতা বলে না! আমি ইউটোপিয়ার স্বপ্ন দেখি, ভাবি সবকিছু নিখুঁত সুন্দর, ভালো হবে না কেন? সবকিছু যখন ঈশ্বরের তৈরি! তারপর দেখি ঈশ্বর নিজেও ষড়যন্ত্রকারীদের ... ...
এখনো মেয়েরা গর্ভধারণ করছে, কেন? এখনো কেন আমরা এমন যন্ত্র আবিষ্কার করতে পারলাম না, যেটায় ওই কাজটা হয়ে যায়! আমার নিঃশ্বাস নেওয়াটা বড্ড অসহ্য লাগছে, আমার কাছে টাকা নেই, নইলে আমিও এয়ার পিউরিফায়ার কিনে নিতাম। আমি এসি লাগিয়েছি ... ...
মানুষ নিজেকে বড্ড গুরুত্বপূর্ণ ভেবে নিয়েছে, ভেবে নিয়েছে খুব জরুরি। এতদিন পর্যন্ত এত জন্তু-জানোয়ার এল গেল, কেউ কখনো শুধায়নি, "আমাদের কে সৃষ্টি করল,কেনই বা করল?" "এত ছায়াপথ, তাতে এত নক্ষত্র, তার এত গ্রহ, তার আবার উপগ্রহ, কারোর মধ্যে তো প্রাণ দেখি না। তাহলে নিশ্চয় আমাদের উপর বিশেষ নজর আছে, বিশেষ কিছু আছে। তারা সবাই এসেছে, খেয়েছে-দেয়েছে, বাচ্চা পয়দা করে, মরেও গেছে। কিচ্ছুটি যায় আসেনি। প্রকৃতি কী খেয়ালে এদের বুদ্ধি একটু বেশি ... ...
আমি ভাবি মৃত্যুর পরবর্তী ধাপ কী? জানি এর কোনো উত্তর হয় না। কেননা যে মরে গেছে সে বলতে পারেনা, আর যে পারে সে মরেনি। যদিও আমরা বহুদিন ধরে বলেছি, পরজন্ম আর আখেরাতের কথা, কিন্তু তার পিছনে ধর্মীয় স্বার্থ চরিতার্থ করা ছাড়া আর একটিমাত্র কারণ আছে, নিজেকে স্বান্তনা দেওয়া। কিন্তু সেগুলো তো বাস্তব নয়, আমাদের কল্পনাপ্রসূত ... ...
এখনো শহরে হঠাৎ হঠাৎ বৃষ্টি নামে, কচি কচি হাতে নৌকা বেরিয়ে এসে, ভেসে যায় নিরুদ্দেশের ঠিকানায়। বড়-বুড়োরা সারাদিন গম্ভীরমুখে মোবাইলের স্ক্রিনে চেয়ে থাকে, যেটুকু বেঁচে থাকা, সজীবতা, ওই কচি মুখগুলোতে ফুটে উঠে। বুঝতে পারি, মানুষ এখনো বিলুপ্ত হয়নি। এখনো কিছু কিছু মানুষ স্বপ্ন দেখে, তারা ভাবে পৃথিবীর সব খারাপ মুছে ... ...