আমার ঘরের নিয়ম বড় কড়া,দরজায় শয়ে শয়ে দারোয়ান,
ঘরের ভেতর আনাচে-কানাচে, অলিতে-গলিতে প্রহরী।
মাছিটিও ঢুকতে পারে না তাদের পেরিয়ে।
তাহলে?
তাহলে আমি কোন রোগে ভুগছি,
আমি মরে যাচ্ছি কেন?
আমার প্রহরীরা খুব কড়া,
প্রতিদিন আমার শরীর থেকে রক্ত বের করে দেয় বিশুদ্ধতার নামে,
আমার গায়ের চামড়া তুলে দেয়,
পুরোনোটা নোংরা হয়ে গিয়েছিল বলে।
আমি আস্তে আস্তে মরে যাচ্ছি;
কিন্তু ওরা তাতে আরো চিন্তিত।
এখন রক্ত বের করে নেওয়ার প্রক্রিয়া বারে বাড়ছে,
চামড়ার সাথে মাংসের স্তরের পুরুত্ব বাড়ছে প্রতিবারে।
আমি ওদের কাছে আমার মৃত্যু ভিক্ষা করি,
কিন্তু ওরা বিরক্ত হয়—
'কি শিশুসুলভ বায়না!'
'মরার জন্যই কি ওরা এত সদাসতর্ক, শশব্যস্ত?'
কিন্তু আমার জীবনীশক্তি ক্রমশ কমে আসছে,
আমি আর এই অত্যাচার সইতে পারছি না।
ওরা এখন আমাকে হাঁটতে সাহায্য করে, খাইয়ে দেয়।
সেদিকে ওদের কোনোরকম শৈথিল্য নেই—
দশে দশ পায়;
কিন্তু এই বাড়াবাড়ি—
আমি আর পারছি না।
একদিন ওরা এসে বলল,
"আচ্ছা, তোমার এই শরীরটা একটিবার যদি আগুনে ঝলসে নেওয়া যেত?
ভালো হতো না?
একেবারে নিশ্চিন্ত হওয়া যেত।
একেবারে পুড়িয়ে দেব না—
এই ধরো বিশ শতাংশ।
তারপর ইথাইল অ্যালকোহল দিয়ে ধুয়ে দিতাম।
তারপর ঘা শুকালে আবার একবার।
ওই বিশ শতাংশই।
একটুও বেশি বা কম না।"
আমি আঁতকে উঠেছিলাম।
এ কিরকম পাগলামি?
তাই আমি আর্জি করেছি আদালতে, রাষ্ট্রের কাছে।
কিন্তু তারাও নাকচ করে দিয়েছে, একথা বলে—
"ওরা যা করছে তোমার ভালোর জন্যই করছে।
ওরা তো তোমায় ভালোবাসে, তোমার ক্ষতি চায় কি ওরা?"
আমার কিচ্ছু বলার ছিল না।
সব কথা বলা যায় কি?
একথা কি বলা যায়—
"আমি দুর্বল, আমি ভীতু, আমি অসহায়,
আমি নিজের মৃত্যু কামনা করি?"
বলা যায় না।
সবকিছুর কারণ দেখানো যায় না।
তাই—
আমি চাই স্বেচ্ছামৃত্যু সাংবিধানিক অধিকার হোক,
মানুষ নিশ্চিন্তে মরুক।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।