( ২৯ ) তমোনাশ ব্যানার্জীর সঙ্গে কলতানের প্রায় দশ বছরের পরিচয়। তমোনাশ এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার একজন লিয়াজোঁ অফিসার। তাকে ফোনে ধরল। কলতান তাকে ফোন লাগাল। চট করে লাইনটা পাওয়া গেল না। বেশ কয়েকবার ' তিনি এখন অন্য কলে ব্যস্ত আছেন...' শোনার পর অবশেষে যোগাযোগ করা গেল তমোনাশের সঙ্গে। তমোনাশের জবাব আসল, ' গুড ইভনিং মিস্টার গুপ্ত... আফটার কোয়াইট সাম টাইম... কেমন আছেন ? ' ----- ' ঠিক আছি। অনেক চেষ্টা করার পর আপনার লাইনটা পেলাম । ভাল আছেন তো ? '----- ' এ...ই চলে যাচ্ছে। তারপর ... ...
(২৮) কলতান উঠে গিয়ে দরজা দরজা খুলে দিল। দেবপ্রভ বলল, ' দরজা খুললেন কেন ? আপনি কিন্তু প্রাইভেট ডোমেস্টিক লাইফে এনক্রোচ করছেন। এটা কিন্তু কমপ্লিটলি ইল্লিগ্যাল। আপনাকে এর কনসিকোয়েন্স ফেস করতে হবে... ' --- ' ওক্কে, নো প্রবলেম। আই অ্যাম রেডি টু ফেস ইট। আপনারা রেডি আছেন তো ? ' কলতান বলল। ঋতাভরী ব্যালকনিতে গিয়ে ফোনে কার সঙ্গে নীচু গলায় কথা বলতে লাগল। ফোনে মিনিট পাঁচেক কথাবার্তা বলে ঘরে ফিরে এল। এসে কলতানের দিকে তাকিয়ে বলল, ' এখন আপনারা আসতে ... ...
(২৭) দেবপ্রভ, ঋতাভরী আর কলতান তিনজনই চুপচাপ বসে আছে। কেউ কোন কথা বলছে না। আসলে, এই মুহুর্তে কোন নতুন কথা উঠে আসছে না। কথা হয়ত তৈরি হচ্ছে ভিতরে ভিতরে। বেশ গুমোট পরিবেশ। কলতান তার মোবাইল খুলে কী একটা দেখতে লাগল মন দিয়ে। ঋতাভরী গালে হাত দিয়ে বসে কী ভাবছে। দেবপ্রভ একবার ভিতরে গেল। বোধহয় টয়লেটে। আবার ফিরেও এল। প্রায় মিনিট সাতেক কাটল। এবার যেটার জন্য কলতান অপেক্ষা করছিল সেটা ... ...
(২৬) কলতান দেবপ্রভর দিকে তাকিয়ে বলল, ' মিস্টার রাহা, আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন আমি এত কথা জানলাম কি করে... ' দেবপ্রভ সোফায় হেলান দিয়ে ধূমায়িত সিগারেট হাতে নিয়ে নিষ্পলকে দুর্বোধ্য দৃষ্টিতে কলতানের দিকে তাকিয়ে রইল। সিগারেটের ছাই ক্রমশ লম্বা হতে হতে টুপ করে খসে পড়ল তার কোলের পাশে। তার কোন খেয়াল আছে বলে মনে হচ্ছে না। কলতান ভাবল, হয় কোন অবসেসিভ ডিসঅর্ডার সেট ইন করেছে আর নয়ত এ ব্যাটা মহা ধুরন্ধর খেলোয়াড়। সে বলল, ' আপনাদের স্বচ্ছলতা কিছু কম নয়। রাজারহাটে আট কাঠা জমি ... ...
(২৫) দেবপ্রভর ফোন এল রাত এগারোটা নাগাদ। --- ' ভেরি সরি মিস্টার গুপ্ত। আমার ফিরতে অনেক লেট হয়ে গেছে। একটু আগে বাড়ি ফিরেছি। বলুন বলুন স্যার... কোন আর্জেন্ট দরকার ছিল ? ' --- ' আর্জেন্ট কিনা বলতে পারব না, তবে দরকার একটু ছিল... ফোনে তো সব কথা বলা যায় না... ' --- ' হ্যাঁ সে তো নিশ্চয়ই। কিভাবে তাহলে... ' --- ' কাল সকাল দশটার মধ্যে আপনার বাড়ি যাব। অবশ্যই বাড়ি থাকবেন... ' কলতানের বলার ভঙ্গী দেখে দেবপ্রভ বেশ থতমত খেয়ে গেল। সে বলল, ' আচ্ছা ঠিক আছে। বলছেন যখন.... ' তারপর একটু থেমে বললেন, ' অমৃতাংশুর বাড়ির ... ...
(২৪) সকাল নটা নাগাদ কলতানের বাইক রওয়ানা দিল নিউ গড়িয়ার উদ্দেশ্যে। প্রায় সোয়া এক ঘন্টা পর ম্যাগনোলিয়া রেসিডেন্সির গেটের সামনে এসে থামল। সিকিউরিটি গার্ড এগিয়ে এল তার দিকে। এ সেই আগের দিনের মানুষটি নয়। তার বোধহয় এখন ডিউটির সময় নয়। হাসি হাসি মুখে বলল, ' কোথায় যাবেন ? ' --- ' এল টেন বাই ফাইভ, এল ব্লক... ' কলতান সরাসরি বলল যেটা আগের দিনের সিকিউরিটির কাছে শুনে গিয়েছিল। --- ' মানে, টেনথ ফ্লোর ? ' --- ' হ্যাঁ হ্যাঁ.... ' --- ' কি নাম আছে স্যার? ' --- ' বিক্রমজিৎ নিয়োগী, অশ্বিনী তেওয়ারি ... ' --- ' একটু দাঁড়ান স্যার... লগবুক দেখছি... ' সে কিয়স্কে ঢুকে জাবদা খাতা খুলে চোখ বোলাতে ... ...
(২৩) একদিন কেন, তিনদিন হয়ে গেল, তমাল কিছু জানাল না এখনও। এর মধ্যে কলতান কোন তাগাদা দেয়নি। সে জানে তমালের মধ্যে নিষ্ঠার অভাব নেই। কাজ শেষ হলে নিশ্চয়ই জানাতে দেরি করবে না। কলতান অপেক্ষা করে রইল। সূক্ষ্ম কাজে একটু সময় লাগতেই পারে। ইলিনার পোস্ট মর্টেমের সরকারি রিপোর্ট কতদিনে আসবে কে জানে। কলতান ভাবল, যদিও এটা সরাসরি জানার কোন উপায় নেই কারণ সরকারিভাবে এটা গোপনীয় তথ্য, তবে তদন্তের স্বার্থে খোঁজ নেওয়া যেতে পারে। সেটা নিশ্চয়ই অবৈধ এবং অসংগত হবে না। ইনকোয়েস্টের সময় দুজন ইনভেস্টিগেটিং অফিসার ছিলেন কুশল চ্যাটার্জী এবং অরবিন্দ সেনগুপ্ত। এর মধ্যে কুশলবাবুকেই বেশি নির্ভরযোগ্য সহযোগিতাপূর্ণ মনে হয়েছে কলতানের। কলতান একটা ফোন ... ...
( ২২) রাত প্রায় এগারোটা বাজে। কলতান তমালের দেওয়া রিপোর্টগুলো খুলে বসল। ওয়াশরুম থেকে পাওয়া রক্ত, চুলের ডি এন এ মেলেনি। এটা অভিনব কোন ব্যাপার না, প্রত্যাশিতই ছিল কলতানের কাছে। চুলটা, ধরা যেতে পারে আততায়ীর। ইঞ্জেকশান সিরিঞ্জের নিডল থেকে টুসির পার্টিকল পাওয়া গেছে বলছে রিপোর্টে। ভাববার মতো বিষয়। আর যেটা এই মুহুর্তে কলতানের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটা হল গলায় আঙুলের ছাপের রিপোর্ট এবং একটা তোয়ালে রুমালে লেগে থাকা ঘাম থেকে পাওয়া ডি এন এ মিলিয়ে দেখা। রক্তটা হয় ইলিনার কিংবা আততায়ীর। এটা জানতে পারলে কাজ প্রায় শেষ। রক্তটা ওখানে কী করে পড়ল সেটা পরে ভাবলেও চলবে। রক্তের ধরণ দেখে মনে হচ্ছে বমির সঙ্গে বেরিয়েছে, তমাল ঘোষের রিপোর্ট ... ...
( ২১)সাড়ে আটটা বাজে। আজ আকাশ সকাল থেকেই ময়লা। আলো চাপা পড়ে আছে নীচে। টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছে থেকে থেকে। রাস্তায় অনেক গাড়ির হেডলাইট জ্বালা। কলতান জানলা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে সারাদিনের কর্মসূচী ঠিক করে নিচ্ছে।ঠিক করল, প্রথমে মনোজ সাহাকে একটা ফোন করা যাক।ওসি মনোজ সাহা ফোন তুলে বলল, ' হ্যাঁ বলুন মিস্টার গুপ্ত ... কী খবর ? অনেকদিন পর... ' --- ' হ্যাঁ একটু ব্যস্ত ছিলাম... '--- ' কেসটা নিয়ে ? '--- ' হ্যাঁ সে তো বটেই ... এখন এটাই তো আসল ইস্যু '--- ' কাজ এগোচ্ছে ? '--- ' এগোতে তো হবেই। থেমে থাকা আমার ডিক্সনারিতে নেই ... ...
( ২০) অশ্বিনী একটু থতমত খেয়ে কলতানের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল । ----- ' আঁ... কী বললেন স্যার ? '----- ' বলছি যে ছাব্বিশে আগস্ট সন্ধেবেলায়, এই ধর... মোটামুটি ছটা থেকে আটটার মধ্যে তুমি কোথায় ছিলে ? একটু ভালো করে মনে করে দেখ তো... ' ----- ' ও বাবা, এ তো বহুৎ কঠিন সওয়াল করলেন স্যার। আমার ইয়াদ্দাজ যদি এত জোরদার হত তাহলে কি আমি এখানে কাজ করতাম ? আমি আর কোথায় থাকব... ওই লইয়ারের চেম্বারে ডিউটি করছিলাম নিশ্চয়ই... আর কোথায় যাব? ----- ' তাই ? ... ...