( ১৯ ) সিঁথির বাড়িতে নিতাইবাবুরা ভালই আছেন। যদিও বরানগরের দিকে রাজনৈতিক গন্ডগোল লেগেই আছে। এখান থেকে আরম্ভ করে বেলঘরিয়া পর্যন্ত নক্শালদের ঘাঁটি। এরা সি পি এম পার্টির চক্ষুশূল। দু দলে মিলে খোলা রাস্তাটা যখন তখন যুদ্ধের ময়দান বানিয়ে ফেলছে। এ ব্যাপারটা নিয়ে অবশ্য একটা অস্বস্তি আছে ওনাদের। নিতাইবাবুর এখনও দুবছর চাকরি আছে। বাড়িতে এখন স্বামী স্ত্রী দুজনই শুধু থাকেন। শ্রীলেখার বিয়ে হয়ে ... ...
( ১৮ ) অমল ফিরল মিনিট দশেক পরে । সঙ্গে পাঁচ বছরের ছেলে । রাত্রিকে দেখে বলল, ' আরে ... হোয়াট আ প্লেজ্যান্ট সারপ্রাইজ ! কতক্ষণ ? ' রাত্রি অমলের দিকে তাকিয়ে বলল, ' এই ... কিছুক্ষণ হল ... কথা দিয়েছিলাম ... রাখলাম ... 'এ কথাটার অবশ্য কোন সরস প্রতিক্রিয়া এল না । কিছু থাকলেও এত লোকের মাঝে তা সম্ভব ছিল না । অমল নৈর্ব্যক্তিকভাবে বলল, ' হ্যাঁ ... সেটা ঠিক । আজকাল কারও কথার দাম নেই । খুব খারাপ ... খুব খারাপ ... 'ঘটনাক্রমে অমলের মনে অন্য কিছু থাকার একটা সম্ভাবনা ... ...
( ১৭ ) নিখিল ব্যানার্জী বললেন, ' কেমন আছেন কালীবাবু ? ' ---- ' এই আছি আর কি ... মনে সুখ নাই ... ' ---- ' কেন কালীদা ? ' ---- ' এই সব কিসু কেমন বদলায়ে যাচ্ছে। ভাল লাগে না। ' ---- ' পরিবর্তন তো জীবন এগিয়ে চলার লক্ষণ। এর সঙ্গে তো মানিয়ে নিতেই হবে ... ' ---- ' তা ঠিক কিন্তু সব পরিবর্তন যে ভালর জন্যই হয় তা তো নয়। পরিবর্তনের ফলে অনেক সময় অনেক ভাল জিনিসই দূরে ছিটকায়ে যায় ... ' ---- ' যেমন ... ' ---- ' যেমন ... সাগর মন্ডল। ও কি আর আগের মতো ... ...
( ১৬ ) বিভূতিবাবু ভাবেন ঠিক কত বয়স হল তার। বোধহয় বাহাত্তর হল। আর বছর তিনেক বাঁচলেই যথেষ্ট। তারপর ভাবলেন, বাঁচা মরা যদি মানুষের হাতে থাকত তা'লে তো আর চিন্তা ছিল না। শুধু বাঁচা মরা কেন কোন কিছুই কি মানুষের হাতে আছে। সেই হিসেবে জীবন এবং জগৎ দুটোই সমান অর্থহীন এবং অসার। বিভূতিবাবু বাট্র্যান্ড রাসেলের নামই শোনেননি। কিন্তু তার মতোই বিভূতি দত্তর মনে হল এ জীবনের ... ...
( ১৫ ) রাত্রি বাস ধরার জন্য রূপবাণী বাস স্টপে দাঁড়িয়ে ছিল বেলা এগারোটা নাগাদ। এস এন ব্যানার্জী রোডে কর্পোরেশান অফিসে যাবে বাড়ির ট্যাক্সের টাকা জমা দিতে। এসব কাজ শিবতোষবাবুই করেন। আজ রাত্রি ছুটি নিয়েছে স্কুল থেকে। কোন কারণ নেই। এমনিই ইচ্ছে হল। সাগর বাড়ি নেই। বড়বাজারে গেছে দোকানের জিনিসপত্রের অর্ডার দিতে। রাত্রি কর্পোরেশানের কাজটা মিটিয়ে উল্টোডাঙায় ... ...
(১৪) মোনাবাবু একটা সিগারেট ধরালেন। চুপচাপ ধোঁয়া ছাড়তে লাগলেন যেখানে নিত্যানন্দ বসেছিল সেই চেয়ারটায় বসে। দোকানে আরও দুজন খরিদ্দার ঢুকেছে। সাগর তাদের সঙ্গে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। বেলা একটা বেজে গেছে। সাগরের দোকান ফাঁকা হয়েছে। সাগর দোকান বন্ধ ... ...
( ১৩ ) ঝিরিঝিরি ঝর্ণা কলকল করে নামছে পাথরের ওপর থেকে। হলদি ঝর্ণায় অবশ্য তেমন জমছিল না প্রথমে। একগাদা লোক গেছে। জোরে জোরে কথা বলে শান্ত হাওয়া এলোমেলো করছে। একদল নাকি রান্নাবান্না করে খেয়েছে ওখানে দুপুরবেলায়। কথাবার্তা শুনে কলকাতারই লোক মনে হচ্ছে। প্রকৃতির নীরব প্রশান্তিতে আঁচড় কেটে দিচ্ছে। বিভূতিবাবু অসন্তোষ প্রকাশ করতে লাগলেন। ---- ' ওঃ ... এ আপদগুলো এখানে ... ...
( ১২ ) দেখতে দেখতে শীতের বেলা এসে গেল। দুপুরবেলার রোদ মধুর খেজুর রসের মতো লাগে। সুভাষ অতীশরা কিন্তু শিমূলতলায় যাবার ব্যাপারটা ভোলেনি। একতলার ঘরে আবার মিটিং বসল। রওয়ানা দেবার দিন ঠিক হয়েছে দোসরা জানুয়ারি। টিকিট কাটাও হয়ে গেছে। অখিলরা কেউ যাবে না। বিভূতিবাবুদের পরিবারের শুধু বিভূতিবাবু সস্ত্রীক যাবেন। হ্যাঁ, আর যাবে মধুমিতা। রমাদেবীর বোনের মেয়ে। বেড়াতে খুব ভালবাসে। কুড়ি একুশ বছর বয়স। মাসখানেক আগে একবার এসেছিল মাসির ... ...
( ১১ ) পারস সেদিনের মতো আবার একটা চিরকুট বার করে সাগরের হাতে দিল। লেখা রয়েছে ---- ' পুলিসের কাছে যাওয়ার সাস্তি বাপ বেটা দুজনেই পাবি সাবদান হয়ে জা তিস হাজার টাকা নিয়ে ধর্মতলায় মেটো গলিতে দাড়াবি রফিকের চা দুকানের পাসে লাল জামা পরা লোক জাবে বুধবার বিকাল পাচটায় আবার তানায় গেলে লাস পড়বে সাবদান ' সাগর অনেকক্ষণ ধরে কাগজটায় চোখ বুলোল। বলল, ' হমম্ ... বোধহয় মেট্রো গলিতে যেতে বলছে। এটা নকশালদের কারবার মনে হচ্ছে ... ...
( ১০ ) সাগরকে তার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গীমায় দেখা গেল। গঙ্গাকে আদেশের সুরে বলল, ' ওর বাড়িতে খবর দাও। আর আপনারা এখানে দাঁড়িয়ে গুলতুনি না পাকিয়ে একটা ট্যাক্সি ডেকে আনুন। একে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। আর জি করেই যাওয়া ভাল। তাছাড়া আর কোন জায়গার বা আছে কাছাকাছির মধ্যে ? ' ভিড়ের মধ্যে উসখুস শুরু হল। যা হয় আর কি ... বেশির ভাগই কেটে পড়ার ... ...