( ১২) কলতান ভিতরে ঢুকে ডানদিকে প্রথম ঘরটায় গিয়ে দাঁড়াল। বেশ অগোছাল ঘর। একটা সিঙ্গল বেডের ডিভান আছে বেশ টানটান বিছানা সমেত। মনে হচ্ছে বেশ কিছুদিন ব্যবহৃত হয়নি । বেশ বড় একটা দু পাল্লার আলমারি আছে । একটা ওয়াড্রোব রয়েছে একপাশে। ভিতরে নিশ্চয়ই জামাকাপড় আছে । ওটার ওপরে রাজ্যের জিনিসপত্র, ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম থেকে স্ক্রু ড্রাইভার পর্যন্ত সবকিছু দেখা যাচ্ছে । ঘরের মেঝেও অপরিচ্ছন্ন। বোঝাই যাচ্ছে অনেকদিন ঝাঁটপাট পড়েনি। কলতান মেঝের ওপর সার্চলাইটের মতো চোখ বুলিয়ে দেখতে লাগল । এদিক ওদিক দেখতে দেখতে খাটের একদিকের পায়ার কাছে ... ...
কলতান দ্রুত সামলে নিল। সরাসরি বলল, ' স্পটটা বলুন... ' --- ' নীলাদ্রি কমপ্লেক্স... ওদের ফ্ল্যাটে... ' বিক্রমবাবু বললেন। --- ' আপনি কোথায় ? ' --- ' বাড়িতে... ' --- ' খবরটা কে দিল আপনাকে ? ' --- 'ওসব কথা পরে হবে। আপনি এখন কোথায় ? ' কলতান নির্জলা মিথ্যে কথা বলল --- ' বাড়িতে। ঠিক আছে, পরে কথা হবে... ' কলতান লাইন কেটে দিল। ইলিনার বডি চিৎ হয়ে পড়ে আছে ড্রয়িং রুমের ফ্লোরে। এই ফ্লোরটা প্রায় ফাঁকা। মাত্র তিনটে ফ্ল্যাট বিক্রী হয়েছে এখন পর্যন্ত। তার মধ্যে একজনের ফ্ল্যাটে তালা মারা। শোনা ... ...
( ১০) কলতান তাকিয়ে রইল গোপেশ্বরের দিকে। গোপেশ্বর মুখে হাসিটি ধরে রেখে ডান হাতটা ওপরে তুলল, যার মানে হয় ঠিক আছে, সাবধানে যাবেন। হাতটা ওপরে রইল প্রায় দশ সেকেন্ড। কলতানের চোখ আটকে গেল গোপেশ্বরের ডান হাতের আঙুলগুলোর দিকে। নতুন কায়দার ভঙ্গীমা। হাতের কড়ে আঙুলটা নীচের দিকে মোড়া, ওপরে তোলা বাকি চারটে আঙুল। গোপেশ্বর একটু পরে হাত নামিয়ে, হাসিমুখে বাঁদিকে একবার ঘাড় কাত করে পিছন ... ...
( ৯ ) দুপুর বারোটায় কলতান নিউটাউনে ইলিনার ফ্ল্যাটে গিয়ে ইলিনাকে পেয়ে গেল। --- ' ওয়েলকাম মিস্টার গুপ্তা। আসুন আসুন... ভেরি সরি স্যার, ইউ গট টু গো ব্যাক দ্যাট ডে... ' কলতান ভিতরে ঢুকে ঘরে এসে বসল। --- ' না না ... ঠিক আছে, বাইরে যাবার দরকার তো হতেই পারে। যার সঙ্গে গিয়েছিলেন তিনি কি আপনার ফ্রেন্ড ? ' --- ' ফ্রেন্ড ... তা বলতে পারেন। ইন ফ্যাক্ট আই হ্যাড হ্যাপেনড টু মিট হিম আ কাপল অফ টাইমস ইন জার্মান কনসুলেট হোয়েেন আই ওয়েন্ট দেয়ার ফর দিস ইসু... ' --- ' হুইচ ইসু ম্যাম ... এই পুলিশ কেসের ব্যাপারে কি ? ' --- ' হা, সেটাই। হোয়াট এলস ইট কুড বি ? ' --- ' নেভার মাইন্ড ম্যাম... ওক্কে। বুঝতে পেরেছি ... ...
( ৮ ) বারো চোদ্দবার রিং হবার পর গোপেশ্বর হাজরার গলা শোনা গেল। --- ' কি হল রে নরেন ? চান করতে ঢুকেছিলাম... কি হয়েছে কি ? ' নরেন সংক্ষেপে সব বলল। গোপেশ্বর সব শুনে বলল, ' এ তো আচ্ছা ফ্যাসাদ হল। লোকটা কি পুলিশের লোক মনে হচ্ছে ? তুই আমার কথা বলতে গেলি কেন ? কায়দা করে ভাগা না মালটাকে ... ' --- ' আরে না না... তুমি বুঝতে পারছ না। সেরকম লোক না। দেখলেই বুঝতে পারবে। পুলিশ টুলিশ ... ...
( ৭ ) ছবি শেষ হওয়ার পর কলতান বাইরে এসে দাঁড়াল কুলচাকে নিয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে। কিন্তু জনস্রোতে মিশে কে কোথায় মিশে গেল হদিশ পাওয়া গেল না। কলতান ভাবল, এন্ট্রি এবং এগ্জিট দুটো পয়েন্ট ই তোলা থাকলে ভাল থাকত। যাক, যা পাওয়া গেল তাই ভাল। এন্ট্রি থাকলেই এগ্জিট থাকবে এ তো জানা কথাই। ওরা দুজনে বাইকে এসে উঠল। কলতান গাড়ির স্টার্টারে পা দাবাতে ... ...
( ৬ ) পরদিন সকাল প্রায় দশটায় অ্যাডভোকেট বিক্রমজিৎ নিয়োগীর ফোন এল কলতানের মোবাইলে। --- ' হ্যাঁ বলুন ... মিস্টার নিয়োগী ... ' --- ' না ... এমনি খবর নিচ্ছিলাম ... ' --- ' ইলিনা স্নাইডার সেনের কেসটার কথা বলছেন তো ? একদিনে আর কি খবর হবে ... থানার সঙ্গে আপনার আর কমিউনিকেশন হয়েছে নাকি ? ' --- ' না, ওখানে আর কি কমিউনিকেট করব ? কেস তো এখন কোর্টের আন্ডারে। একমাস পরে আবার হিয়ারিং-এর ডেট পড়েছে। ওখানে পুলিশও একটা পার্টি। তারা চাইবে বেলটা রিজেক্ট করিয়ে ইলিনাকে কাস্টডিতে নিতে। পুলিশ এ ব্যাপারটায় এত ইন্টারেস্ট নিচ্ছে কেন বুঝতে পারছি না। পুলিশের ট্রান্সপ্যারেন্সি যে কোন লেভেলের তা তো আপনি জানেন। আপনাকে বলেই কথাটা বললাম .... ' --- ' কথাটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। সিচুয়েশানটা খুব খারাপ ... ...
( ৫ ) কুলচা একটা মাল্টিন্যাশানাল কোম্পানিতে চাকরিতে ঢুকেছে। মুম্বইয়ে পোস্টিং। আট দিন পরে জয়েনিং। গোছগাছ শুরু করে দিয়েছে এখন থেকে। বেশ উত্তেজিত অবস্থায় আছে। সকালের দিকে কলতানকে ফোন করে বলল, --- ' তানমামা ... খবরটা শুনেছ তো ? ' --- ' চাকরির খবরটা তো ? ' --- ' হ্যাঁ .... ' --- ' হ্যাঁ ... দিদি বলেছে কাল। সত্যিই সুখবর। কনগ্র্যাচুলেশান কুলচা ... ' --- ' মোস্ট ওয়েলকাম তানমামা... ' --- ' তবে কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ। কথাটা অন্যভাবে নিস না ... ' --- ' মানে ? ' --- ' আমার আর কোন ওয়াটসন থাকল না ... ' --- ' ও এই কথা ? তোমার আবার কোন ওয়াটসন লাগে নাকি ? তুমি আমাকে স্নেহ ... ...
( ৪ )উকিলবাবু বিক্রমজিৎ নিয়োগীর চেহারা ফর্সা, বেশ গোলগাল নাদুস নুদুস ধরণের। উচ্চতা মাঝারি। মাথায় টাক পড়ে গেছে। গোঁফ দাড়ি কামানো মাখনের মতো মসৃন মুখমন্ডল। চোখ দুটো উজ্জ্বল বুদ্ধিতে চিকচিক করছে। মিটি মিটি হাসি ভরা মুখ। আইনের নানা বইয়ে ঠাসা ঘরের তিনদিক ঘিরে কাঁচের আলমারি।বিক্রমজিৎবাবু চেয়ারের হাতলে ডান কনুই রেখে গালে হাত দিয়ে মিটিমিটি হাসি ভরা মুখে কলতানের মুখের দিকে তাকিয়ে বসেছিলেন চিকচিকে চোখে।কলতান বলল, ' বডির ভিসেরা টেস্ট হয়েছিল ? জানেন কিছু ? '--- ' স্টম্যাকে পয়জন ডিটেক্টেড হয়েছে যখন ভিসেরা টেস্ট নিশ্চয়ই হয়েছে ... '--- ' মানে, আপনি পি এম রিপোর্ট দেখেননি ? '--- ' হাতে পাইনি ... ... ...
( ৩ ) সল্টলেকের দেবপ্রভ রাহা । কলতানের ফোন ধরে বললেন, ' হ্যালো ... প্লিজ হোল্ড অন ... ' বলে কার সঙ্গে যেন কথা বলতে লাগল । বেলা সাড়ে বারোটা বাজে । নিশ্চয়ই দেবপ্রভ এখন অফিসে আছে । যেটুকু আওয়াজ শোনা যাচ্ছে , মনে হচ্ছে কাউকে কোন কাজের ব্যাপারে কিছু নির্দেশ দিচ্ছে । যাকে বলছে তারও গলার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে । সে মনে হচ্ছে, দেবপ্রভর সঙ্গে কোন একটা ব্যাপার নিয়ে তর্কাতর্কি করছে । কলতান ফোন ছাড়ল না । ফোন ধরে রইল । প্রায় চার মিনিট পরে ওদিক থেকে আওয়াজ এল ... ...