( ৫ ) দিন তো আর বসে থাকে না। মানুষের জীবনের ঘটনাগুলো চাকায় বেঁধে সে অবিরাম গড়িয়ে চলে। কৌশিক দত্ত আর মনোময় মৈত্র একদিন দুপুরবেলার দিকে শংকরকে আই এফ এ অফিসে নিয়ে গিয়ে সইসাবুদ করিয়ে আনল।নিয়মকানুন না মেনে উপায় নেই। মেঘলা দিন, বাদুলে হাওয়া বইছে থেকে থেকে। সারা ময়দান জুড়ে পড়েছে মেঘের ছায়া। ধর্মতলা আর ময়দানের আশেপাশে এলেই নানা সুরভিত স্মৃতির হাওয়ায় দোল খায় শংকরের মন। নীল রঙা কাঠের পাঁচিলে ঘেরা তিনটে মাঠের মায়া..... লম্বা অ্যাঁকাব্যাঁকা টিকিট ... ...
( ৪ ) সৌভাগ্যক্রমে এম আর আই রিপোর্টে তেমন গন্ডগোলের কিছু পাওয়া গেল না। ডান হাঁটুর পাশের দিকে লিগামেন্টে কিছুটা স্ফীতি আছে। ডক্টর মিত্র তিন চার রকম ওষুধ দিয়েছেন। অন্তত তিনমাস খেতে হবে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল হাঁটুর ব্যায়াম। সেটা নিয়মিত করে যেতে হবে। সিজন শুরুর আগে অন্তত একমাস বল পায়ে মাঠে না নামাই ভাল।সেটা অবশ্য কার্যত অসম্ভব বলেই মনে হচ্ছে। অপারেশনের কোন প্রয়োজন নেই এই মুহুর্তে। পরে সুবিধেমতো লিগামেন্টের একটা ছোট সার্জারি করে নিতে পারলে ভাল হয়। কিছুটা ফ্লুইড জমে আছে হাঁটুর সামনের দিকে। যদিও ওষুধ খেয়ে সেটা ... ...
( ৩ )সবুজের সঙ্গে বাড়ি ফিরে শংকর দেখল কৌশিক দত্ত এবং আর এক ভদ্রলোক বসে আছে। দ্বিতীয় ভদ্রলোককে শংকর চেনে না।কৌশিকবাবু বললেন, ‘ আরে ....এই তো এসে গেছে। এই দেখ কেমন ঘাঁটি গেড়ে বসে আছি। মাঠ থেকে সোজা এখানে আসছি। গরজ বড় বালাই ....’শংকর বলল, ‘ হ্যাঁ ... ভাল করেছেন। মাঠে দেখেছি আপনাদের।’— ‘ হ্যাঁ ওখানে আর ডিস্টার্ব করিনি তোমায়। ‘কৌশিক দত্ত আপনি থেকে তুমিতে চলে গেলেন।তার সঙ্গের ভদ্রলোকের দিকে শংকর তাকিয়ে আছে দেখে কৌশিকবাবু বললেন, ‘ ইনি হলেন ডক্টর দেবাশিস মিত্র। অর্থোপেডিক সার্জেন। আমার মাসতুতো ভাই। ফেরবার সময় একেবারে জোর জবরদস্তি চেম্বার থেকে তুলে নিয়ে এলাম। গরজ বড় বালাই ... ...
( ২ ) মাঠে মেডিক্যাল টিম বলতে তেমন কিছু নেই। এই ধরণের ম্যাচে থাকেও না। দলের অবৈতনিক ফিজিক্যাল ট্রেনার এবং দুজন রিজার্ভ বেঞ্চের প্লেয়ার মাঠে ঢুকে যতটা সম্ভব শুশ্রূষা করার চেষ্টা করতে লাগল। উৎকন্ঠায় অস্থির হয়ে ক্লাব সভাপতি প্রদীপ ঘোষ মাঠে ঢুকে গেলেন। কিন্তু রেফারির নির্দেশ মেনে তাকে আবার বাইরে চলে যেতে হল।একটানা ঠান্ডা পেন কিলার স্প্রে করতে লাগল ট্রেনার প্রত্যুষ সাহা। একটা পেন কিলার ট্যাবলেটও খাওয়াল শংকরকে। বরফ ঠান্ডা স্প্রের প্রভাবে শংকরের ব্যথা অনেকটা নরম হয়ে আসল। বরানগর ইউনাইটেড অপ্রত্যাশিত অগ্রগমনের উৎফুল্লতা হারিয়ে ফেলতে চাইছে না। জানে শংকর মাঠ ছাড়লে তাদের ডিফেন্সের কি হাল হবে। তারা ওকে খেলাতে মরীয়া। ... ...
( ১ ) কৌশিক দত্ত মনোময় মৈত্রকে কনুইয়ের হাল্কা ঠেলা মেরে বললেন, ‘ প্লেয়ারটার স্পট জাম্প দেখেছ ? মনে হচ্ছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো স্টপারে খেলছে। এয়ারে এখন পর্যন্ত একবারও বিট হয়নি।’— ‘ হ্যাঁ সেটাই দেখছি ..... গ্রাউন্ডেও দারুণ স্ট্রং । দুর্দান্ত অ্যান্টিসিপেশান .... একটাও ট্যাকল মিস হচ্ছে না.... ‘ গাল চুলকোতে চুলকোতে আনমনে বললেন মনোময়বাবু। কৌশিক দত্ত মাঠের খেলা থেকে চোখ না সরিয়েই বললেন , ‘ এরকম একটা পেলে হত .... ‘— ‘ তাই তো .... ‘ মাঠটা লম্বায় বড় হলেও চওড়ায় একটু কম। এখন পর্যন্ত এদের গোলকিপারকে ... ...
( ৪২ ) বিভূতিবাবু অনেকদিন পর গঙ্গার দোকানে এসে বসেছেন । আজ আকাশ মেঘলা । বৃষ্টি হতে পারে মনে হচ্ছে ।বিভূতিবাবু বললেন, ' কি রে গঙ্গা কেমন বুঝছিস ?অন্য কিছু দেখা যাচ্ছে ? '---- ' আমাদের আর অন্যরকম কি হবে ? যেমন ছিলাম তেমনই আছি ... শুনছি এরা নাকি গরীব মানুষের পার্টি ... দেখা যাক ... '---- ' যা বলেছিস ... আমরা হলাম ছাপোষা গেরস্থ। না হোমের না যজ্ঞের । কে এল কে গেল কি আসে যায় আমাদের ... নে একটা চা বল ... '----- ' হ্যাঁ , এই প্রশান্ত ... দুটো চা বলে আয় তো ... '---- ' জন্মেজয়বাবুর ... ...
( ৪১ )আজ সরস্বতী পুজো। কিশোরী বালিকারা বাসন্তী রঙের শাড়ি পরে উজ্জ্বল গাঁদা ফুলের গুচ্ছের মতো রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।হেদুয়ার ওপর দিয়ে সারা দিনমান বসন্তের বাতাস বয়ে যাচ্ছে থেকে থেকে। অলস নিষ্কর্মা গুচ্চের লোক হেদোর বেঞ্চে বসে বসে হাওয়া খাচ্ছে আর ঠ্যাং দোলাচ্ছে। দুর্বারদের ঘর বন্ধ। ওরা কেউ নেই। মাঝখানে একটা সি এল নিলে শনি রবি নিয়ে চার দিন ছুটি হয়ে যাচ্ছে একটানা।রাত্রি সকাল আটটায় বেরিয়ে গেল। স্কুলে পুজো আছে। সাগর বাড়িতে রইল। ছেলে স্কুলে গেল সকাল নটা নাগাদ। স্কুলে পুজো হচ্ছে। সাগর ওকে এখন একাই যেতে দেয়। তাকে একটু পরে গিয়ে দোকান খুলতে হবে।সরস্বতী পুজোর দিনে উন্মন হাওয়া দোলে ... ...
( ৪০ ) সময়ের চাকা ঘুরে চলেছে বনবন করে। কখন যে দুর্গা পুজো পেরিয়ে শীতকাল এল এবং স্কুলগুলোর অ্যানুয়াল পরীক্ষা টরীক্ষা চুকিয়ে দিয়ে ছিয়াত্তর বিদায় নিল। সাতাত্তর এসে গ্যাঁট হয়ে বসল আমীর থেকে ভিক্ষুক সবার জীবনে। ইন্দ্রাণীর ঐকান্তিক চেষ্টা ফলপ্রসূ হতে চলেছে মনে হচ্ছে। বছরের মাঝামাঝি খবর হবে মনে হচ্ছে। ইন্দ্রানীর মনে খুশির হিল্লোল বয়ে যাচ্ছে। বেশ হাসি খুশি মেজাজ। চাপা স্বভাবের মাণিকলালবাবুর মনের কথা ঠিক ধরা যাচ্ছে না বটে, তবে তার হাবভাবে একটা স্বস্তির চিহ্ন স্পষ্ট। ভাবখানা হল, আমিও পারি তালে। কাবেরী পাল্টে গেছে অনেকটাই। ডাক্তার সন্দীপ চ্যাটার্জির দেওয়া প্রেসক্রিপশান যে ... ...
( ৩৯ ) বিভূতিবাবুর জ্বর আজ নিয়ে চারদিনে পড়ল। নীতিন বিশ্বাস পুরণো দিনের ডাক্তার। পঁচাশি বছরে পদার্পণ করেছেন গত মাসে। এখনও আগেকার দিনের মতো লাল রঙের মিক্সচার দেন। সঙ্গে পেন্টিডস ফোর হানড্রেড জাতীয় কোন বড়ি। স্টেথোস্কোপ কানে লাগিয়ে শরীরের ভিতরের যাবতীয় নাড়িনক্ষত্রের খোঁজখবর পেয়ে যান। কোন এক্সরে টেক্সরের ধার ধারেন না। চতুর্থ দিন দুপুরের পর থেকে শরীরের তাপ খানিক কম মনে হচ্ছে। বিভূতিবাবু কিছুক্ষণ উঠে বসেও থাকলেন। একটু পরে অবশ্য অবসন্নতা বোধ করায় আবার শুয়ে পড়লেন। তবে পরের দিন ... ...
( ৩৮ )অশোক পালের ঘরে খাটটা শেষ পর্যন্ত পেতে দিয়ে গেল দোকানের দুজন লোক এসে। তার ওপর তোশক, চাদর, বালিশ ফেলল পালগিন্নী। বেশ খুশি খুশি লাগছে তাকে। আজ আর মেঝেতে শুতে হবে না।একটু পরে বাইরে থেকে আওয়াজ এল, ' এটা অশোক পালের বাড়ি ? 'পালবাবু বললেন, ' হ দাঁড়ান, যাইত্যাসি ... 'বাইরে বেরিয়ে দেখলেন একজন রোগা চেহারার বছর পঁয়ত্রিশের শার্ট প্যান্ট পরা লোক দাঁড়িয়ে আছে। সঙ্গে একটা এগারো বারো বছরের ছেলে। দোহারা চেহারা। নিরীহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। দুজনেরই পায়ে ছেঁড়া চটি।অশোক পাল বললেন, ' হ বলেন ... কি সমস্যা ... বসেন বসেন ... এহানে বসেন ... 'দুটো বেতের মোড়া রয়েছে ... ...