ভোটের আমি ভোটের তুমিভোট দিয়ে যায় চেনাপ্লাস্টিকে মোড়া তামান্না পড়ে আছেউঠোনের মাটিতে,ঝড়ে ভাঙা একটা মুমূর্ষু কদম গাছেরমতো ডালপালা ছেতরানোথেঁতলানো বুকে মা সাবিনা। টাকার তাড়া হাতে নিয়ে সামনে নাচায়চাতুরীর ঘোমটা টানাঅরাজনৈতিক রাজনীতিবিদ, তামান্নার রক্তের দাম ।ঘরের ভাঙা দেয়ালে ভাসে ডাক্তার, পুলিশ আরো কত বুকে আঁচড় কাটা অ্যাঁকাব্যাঁকা ছবি। কেউ কাটে মাটি দেশের বুক ফালাফালাখালি করে,কেউ বোমা বানানোর পাঠশালা চালায়গুরুতর গম্ভীর কেতায়,ওরা কাজ করে কাজ করে ...গ্রামে গ্রামে ভোট করায় নিষ্ঠাভরে,ভোটের আমি ভোটের তুমি ...ভোটের জন্যই তো জন্ম তোমার আমার।তবেই না দুনিয়ার বাইরে ছিঁড়ে ফেলে দেয় তামান্নার মতো ফুল,সবক শেখায় সবক ... হ্যাঃ ... তোরা আর ভুল করবি... ভুল?সমুদ্রপাড়ে জগন্নাথের মন্দিরে রথের দড়িপড়ে আছে অতি দীর্ঘ ... ...
( ৩৭ ) পুজো এগিয়ে আসছে। শেষ রাতের দিকে গাছের পাতায়, মাঠের ঘাসে, বাড়ির ছাদে হিম পড়ছে। কুমোরটুলির কারিগরদের এখন নিশ্বাস ফেলার ফুরসত নেই। বৃষ্টি অবশ্য এখনও পুরোপুরি ধরেনি। মাঝে মাঝে এক পশলা ঝরবার পরে আকাশ ঝলমলে হয়ে উঠছে। আলো জড়ানো চমরী গাইয়ের মতো মেঘের টুকরো অলস ভ্রমণে বেরিয়েছে আকাশের নীলাভ চত্বরে। বাতাসে কেমন সদ্য দোয়ানো দুধের গন্ধ। ইন্দ্রাণী তিনতলার ছাদে উঠল সকাল নটার সময় জামা কাপড় মেলার জন্য। আলসের ওপর দুহাত রেখে বেথুন কলেজের ওপর দিয়ে দূরের বাড়িগুলোর দিকে তাকিয়ে রইল। এখান থেকে অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায়। তাদের সুকিয়া ... ...
( ৩৬ ) শিয়ালদা স্টেশনের সামনে চায়ের দোকানে অশোক পালের ঠিকানা নেওয়া লোকজন তিন চারদিন পর থেকেই আসতে শুরু করল। স্পন্ডিলাইটিস থেকে ফিটের ব্যামো, বাচ্চা কাচ্চা না হওয়া থেকে চোখের বিভ্রম মানে হ্যালুসিনেশান সব ধরণের বিপত্তিতে পড়া মানুষ একজন দুজন করে হাজির হতে লাগল অশোক পালের ঠিকানা খুঁজে খুঁজে। রেইকি শুশ্রূষা ছাড়াও তার জানা আরও নানাবিধ টোটকার বিদ্যা প্রয়োগ করতে লাগলেন অশোক পাল। আটাত্তর নম্বর বাসের ঘোলানিবাসী ... ...
( ৩৫ ) রাত্রে সাবিত্রীর ব্যাপারটা তুলল রাত্রি। সব শুনে সাগর বলল, ' ভদ্রমহিলা মেন্টাল অ্যাংজাইটিসের মধ্যে আছেন। অপারেশানটা কালকেই সেরে ফেলতে পারলে ভাল হত। কিন্তু বেপাড়ার ব্যাপার। তিনটে ছেলে লাগবে চেম্বার নিয়ে। মোনাবাবুকে বলা যেত একটু দেখে নেবার জন্য। ওদিকেই তো ওদের আসল ঠেক। কিন্তু এখন সময়টা একটু গোলমেলে। ওদের মধ্যে গ্রুপবাজি চলছে। কাউকেই ঠিক ভরসা করা যায় না। আমাকেই ব্যাপারটা ... ...
( ৩৪ ) সুমনা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল ভদ্রলোকের দিকে। পরিচিত মানুষ ছাড়া একজন মহিলার দিকে কেউ এভাবে তাকিয়ে থাকে না। ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একটা অস্পষ্ট স্মৃতি, আবছা মুখের রেখা আঁকা হতে হতে আবার মুছে যেতে লাগল। মনে হচ্ছে একে কোথাও দেখেছে, কিন্তু তেমনভাবে দেখেনি। কেমন যেন চেনা মানুষ মনে হচ্ছে, কিন্তু ঠিক ধরা যাচ্ছে না স্পষ্ট। প্রায় আধ মিনিটের বিভ্রান্তির ... ...
( ৩৩ ) অশোক পালের ব্যবসা মোটেই ভাল চলছে না। এসব কাজ শহরে না চলারই কথা। সাগরের দোকানে বসে সেদিন বলল, ' গৌহাটিতে চইল্যা যাব ভাবত্যাসি। এহানে কিসু হবার নয় এসব ... ' সাগর বলল, ' না না... চলে যাবে কেন ? ওটা থাক। তার সঙ্গে অন্য কিছু কর ... ' --- ' কি করব বল তো ... ' --- ' আচ্ছা ... আমাকে দু একদিন ভাবতে দাও। দেখছি আমি ... ' --- ' দ্যাহ দেহি ... কি করন যায় ... ' --- ' আমার কিন্তু মনে হয় তোমার ওই রেইকির ব্যাপারটা ভাল চলবে। লোকে একটু জেনে গেলে মনে হয় পসার হবে তোমার ... ' --- ' কি জানি ... আমার কপালের উপর আমার কোন ভরসা নাই। সাগর, তোমার কাছে একশ'টা টাকা হইব ? ' --- ' অ্যাঁ ... কি বললে ... একশ টাকা ? ' --- ' হ্যাঁ, হাতে একটা পয়সা নেই। ক'টা ওষুধ কিনতে হবে ... দিয়ে দেব ... ...
( ৩২ ) কলেজ স্ট্রিট চত্বরে ছাত্র পরিষদ আর এস এফ আই-এর মধ্যে হঠাৎ বিরাট ধস্তাধস্তি লেগে গেল। সে এক ধুন্ধুমার কান্ড। ওর মধ্যেই ইউনিভার্সিটির গেটের একপাশে একটা টুলের ওপর দাঁড়িয়ে প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সী বক্তব্য রাখতে লাগল। ওদিকে এস এফ আই- এর ওরা প্রেসিডেন্সি কলেজের ওদিকে টুল পেতেছে। লক্ষী সেন বলে একজন ছাত্রনেতা টুলের ওপর দাঁড়িয়ে তারস্বরে গরম গরম কথা বলতে লাগল। প্রেসিডেন্সির ওখানে জমাট ভিড় ছাত্রছাত্রীদের। বক্তৃতার মাঝে মাঝে তুমুল আওয়াজ তুলছে বক্তার সমর্থনে। তুলনায় প্রিয়রঞ্জনের জমায়েতে মনে হচ্ছে ভাঁটার টান। বিক্ষিপ্ত সমর্থন ধ্বনি উঠে তারপর ঝিমিয়ে যাচ্ছে। এইসময়ে রাস্তার ওপারে কলেজ স্কোয়্যারের গেটের মুখে মহীনের ঘোড়াগুলি বলে ... ...
( ৩১ ) প্রায় পনের দিন পরে সাগর একবার দেখা করতে এল অলোকেন্দু মিত্রের সঙ্গে। অলোকেন্দুবাবু তার নিজের ঘরে সেই পুরনো আর্মচেয়ারটায় বসে বসেছিলেন হাতে দৈনিক স্টেটসম্যান কাগজটা ধরে। তার চোখ রয়েছে খবরের কাগজের পাতায়। কিন্তু কতটুকু পড়ছেন কিছু বোঝা যাচ্ছে না। সাগর ঘরে ঢুকে মৃদুস্বরে বলল, ' স্যার ... ' অলোকেন্দু চোখ তুলে তাকালেন। ----- ' আরে এস এস ... তোমার কথাই ... ...
( ৩০ ) আর দুদিন পরে অলোকেন্দু মিত্র শেষ পর্যন্ত সত্যিই একা হয়ে গেলেন। অর্ধ শতাব্দী ধরে তাকে আগলে রাখার মানুষটি তাকে ফেলে রেখে না ফেরার দেশে চলে গেলেন। রবিবারের দুপুরবেলা। অনুরোধের আসর চলছে। বাসন্তীদেবীর প্রাণের ট্রানজিস্টর নিস্তব্ধ নিস্তরঙ্গ, খাটের ওপর একলাই পড়ে আছে। এ বাড়িতে সে বাড়িতে দুঃখী কন্ঠে সতীনাথের গান বেজে চলেছে ... জানি একদিন আমার জীবনী লেখা হবে ... আকাশে মেঘ আর রোদ্দুরের খেলা চলছে সকাল থেকে। বাসন্তীদেবীর শরীর নামান হল বাড়ির ... ...
( ২৯ ) মোনা মজুমদার সাগরের দোকানে এসে বসল। অশোক পাল মশায়ও সেই সময়ে দোকানে বসে ছিলেন। সাগর বলল, ' এস এস ... ক'দিন ছিলে কোথায় ? ইলেকশানের প্রিপারেশান নিচ্ছ নাকি ? এখনও তো প্রায় একবছর দেরি আছে ... ' --- ' আরে না না ... ইলেকশন নিয়ে আমার কোন মাথাব্যথা নেই। আমি কোন নেতা নই। যাদের মাথা ঘামাবার তারা ঘামাক। আমি ক'দিনের জন্য হাসনাবাদে গিয়েছিলাম একটু জমিজমার ... ...