( ১৫ ) রাত্রি বাস ধরার জন্য রূপবাণী বাস স্টপে দাঁড়িয়ে ছিল বেলা এগারোটা নাগাদ। এস এন ব্যানার্জী রোডে কর্পোরেশান অফিসে যাবে বাড়ির ট্যাক্সের টাকা জমা দিতে। এসব কাজ শিবতোষবাবুই করেন। আজ রাত্রি ছুটি নিয়েছে স্কুল থেকে। কোন কারণ নেই। এমনিই ইচ্ছে হল। সাগর বাড়ি নেই। বড়বাজারে গেছে দোকানের জিনিসপত্রের অর্ডার দিতে। রাত্রি কর্পোরেশানের কাজটা মিটিয়ে উল্টোডাঙায় ... ...
(১৪) মোনাবাবু একটা সিগারেট ধরালেন। চুপচাপ ধোঁয়া ছাড়তে লাগলেন যেখানে নিত্যানন্দ বসেছিল সেই চেয়ারটায় বসে। দোকানে আরও দুজন খরিদ্দার ঢুকেছে। সাগর তাদের সঙ্গে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। বেলা একটা বেজে গেছে। সাগরের দোকান ফাঁকা হয়েছে। সাগর দোকান বন্ধ ... ...
( ১৩ ) ঝিরিঝিরি ঝর্ণা কলকল করে নামছে পাথরের ওপর থেকে। হলদি ঝর্ণায় অবশ্য তেমন জমছিল না প্রথমে। একগাদা লোক গেছে। জোরে জোরে কথা বলে শান্ত হাওয়া এলোমেলো করছে। একদল নাকি রান্নাবান্না করে খেয়েছে ওখানে দুপুরবেলায়। কথাবার্তা শুনে কলকাতারই লোক মনে হচ্ছে। প্রকৃতির নীরব প্রশান্তিতে আঁচড় কেটে দিচ্ছে। বিভূতিবাবু অসন্তোষ প্রকাশ করতে লাগলেন। ---- ' ওঃ ... এ আপদগুলো এখানে ... ...
( ১২ ) দেখতে দেখতে শীতের বেলা এসে গেল। দুপুরবেলার রোদ মধুর খেজুর রসের মতো লাগে। সুভাষ অতীশরা কিন্তু শিমূলতলায় যাবার ব্যাপারটা ভোলেনি। একতলার ঘরে আবার মিটিং বসল। রওয়ানা দেবার দিন ঠিক হয়েছে দোসরা জানুয়ারি। টিকিট কাটাও হয়ে গেছে। অখিলরা কেউ যাবে না। বিভূতিবাবুদের পরিবারের শুধু বিভূতিবাবু সস্ত্রীক যাবেন। হ্যাঁ, আর যাবে মধুমিতা। রমাদেবীর বোনের মেয়ে। বেড়াতে খুব ভালবাসে। কুড়ি একুশ বছর বয়স। মাসখানেক আগে একবার এসেছিল মাসির ... ...
( ১১ ) পারস সেদিনের মতো আবার একটা চিরকুট বার করে সাগরের হাতে দিল। লেখা রয়েছে ---- ' পুলিসের কাছে যাওয়ার সাস্তি বাপ বেটা দুজনেই পাবি সাবদান হয়ে জা তিস হাজার টাকা নিয়ে ধর্মতলায় মেটো গলিতে দাড়াবি রফিকের চা দুকানের পাসে লাল জামা পরা লোক জাবে বুধবার বিকাল পাচটায় আবার তানায় গেলে লাস পড়বে সাবদান ' সাগর অনেকক্ষণ ধরে কাগজটায় চোখ বুলোল। বলল, ' হমম্ ... বোধহয় মেট্রো গলিতে যেতে বলছে। এটা নকশালদের কারবার মনে হচ্ছে ... ...
( ১০ ) সাগরকে তার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গীমায় দেখা গেল। গঙ্গাকে আদেশের সুরে বলল, ' ওর বাড়িতে খবর দাও। আর আপনারা এখানে দাঁড়িয়ে গুলতুনি না পাকিয়ে একটা ট্যাক্সি ডেকে আনুন। একে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। আর জি করেই যাওয়া ভাল। তাছাড়া আর কোন জায়গার বা আছে কাছাকাছির মধ্যে ? ' ভিড়ের মধ্যে উসখুস শুরু হল। যা হয় আর কি ... বেশির ভাগই কেটে পড়ার ... ...
( ৯ ) তোড়ে বৃষ্টি হবার পর আকাশ অবসন্ন হয়ে পড়ল। ফোঁটা ফোঁটা জল পড়তে লাগল। রাস্তা, ফুটপাথ ভিজে ভিজে। লোকজন বেরিয়ে পড়ছে ছাউনির তলা থেকে। রাত্রি বলল, ' চল ...কফি হাউসে যাবে বলছিলে ...' অমল কি যেন ভাবতে লাগল রাস্তার দিকে তাকিয়ে। রাত্রি আবার বলল, ' কি হল ... চল... ' ---- ' কোথায় ? ' ---- ' কেন ... কফি হাউসে ... ' ---- ' ও হ্যাঁ ... নাঃ থাক ... দরকার ... ...
( ৮ ) জোড়াসাঁকো থানার ওসির টেবিলের উল্টোদিকে সাগর আর পারস বসে আছে। পারস অনেক ভাবনা চিন্তা করে সাগরের সঙ্গে থানায় যাওয়াই ঠিক করল শেষ পর্যন্ত। ওসি সমরেন্দ্র কুন্ডুর বয়স পঞ্চাশ বাহান্ন বছর হবে। কর্ত্তব্য পালন করার থেকে দায়িত্ব এড়াতেই বেশি ভালবাসেন। আগে মুচিপাড়া থানায় ছিলেন। তখন ও সি হননি। সাগরকে অন্তত পনের বছর ধরে চেনেন। তিনি সাগরকে দেখে একটু ধাক্কা খেলেন তাতে ... ...
( ৭ ) সাগর কানুদের বাড়িতে গিয়ে কড়া নাড়ল। সঙ্গে পাঁচটা ছেলে আছে। মাণিক,বাদল, শম্ভু ছাড়াও মজিদ আর বাবলু আছে। এই সময় বদলের মধ্যেও মোনা মজুমদার কিন্তু সাগরের খোঁজখবর রাখে কারও না কারও মারফত। মাণিকরা বেশ খানিকটা দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছে। ওখান থেকে সাগরের ওপর দৃষ্টি রাখছে। সাগর দরজায় কড়া নাড়ল। প্রীতিময় বেরিয়ে এসে বলল, ' ও আপনি এসেছেন ... ' ---- ' আসার তো কথাই ছিল। ' ---- ' হ্যাঁ। সে তো ... ...
( ৬ ) সাগর ঘরে ঢুকে রাত্রিকে বলল, ' একটু বস, আমি একটু কথা বলে আসছি ... ' ---- ' ঠিক আছে ... ঠিক আছে, আমি আছি ... ' সাগর পারসকে নিয়ে পাশের ছোট ঘরটায় ঢুকল। পারস বলল, ' আপনার সময় নষ্ট করতে চাই না। একটা বিপদে পড়ে আপনার কাছে এসেছি ...' ---- ' সেটা বলার দরকার নেই। বিপদে না পড়লে কেউ আমার কাছে আসে না। তা বিপদটা কি ধরণের শুনি। মানে, আমার সাধ্যের মধ্যে থাকলে অবশ্যই সাহায্য করব ... ' ---- ' আপনি পারবেন জানি বলেই আপনার কাছে এসেছি। আপনার জানা নেই, ডাফ স্ট্রিটে বিমল চক্রবর্তীর সেই কেসটা আমার নিজের চোখে দেখা। বংশীলালরা আমাদের রিস্তেদার হয়। কিন্তু ওরকম হারামিদের সঙ্গে আমরা কোনদিন সম্পর্ক রাখিনি। আমরা কোনদিন ... ...