সম্প্রতি ঘুরে এলাম মন্দারমনি-তাজপুর থেকে। যে সমস্ত বন্ধুদের সঙ্গে বহুকাল ধরে দেশ-বিদেশের নানান চলচ্চিত্র দেখেছি এবং চলচ্চিত্র নিয়ে আজও একটু-আধটু লেখালেখি করার সুবাদেই হয়তবা সেইসব বন্ধুরা এরকম কোথাও গেলেই মজা করে জিগ্যেস করে কি রে জ্যাম্পানোর দেখা পেলি কিংবা রুবিনির সঙ্গে দেখা হল? সত্যিই তো, কে যেন বলেছিল, কখনো শিল্পের থেকে মহার্ঘ্য হয়ে ওঠে জীবন, আবার কখনো জীবনকে ছাপিয়ে ওঠে শিল্প! একটা স্তরে শিল্প ও জীবনের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক থাকতে হয়। এটা যেরকম শিল্পীর ক্ষেত্রে ... ...
গ্লোবের পুনরুজ্জীবন ঘটেছে! কয়েকদিন আগে খবরটা পড়ে প্রায় দুদশকেরও আগের অনেক স্মৃতি হুড়মুড় করে এসে পড়তে লাগলো। সত্যি বলতে গ্লোব বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ঠিক কবে জানা নেই, কিন্তু গ্লোবও বন্ধ হয়ে গেছে, এরকম শুনেছিলাম। সিঙ্গেল স্ক্রিনের প্রতিনিয়ত গঙ্গাপ্রাপ্তির দিনে খবরটা তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু বলে মনে হয় নি। নিউ মার্কেটের দিকেও পরবর্তী কালে খুব যে একটা যাওয়া হত এমন নয়। জামাকাপড় কিনতে হলে দক্ষিণ কলকাতাতেই আর কখনো ঐ অঞ্চলে ছবি দেখতে গেলে নিউ এম্পায়ারে (লাইট হাউসও ততদিনে বন্ধ হয়ে গেছে), এই ছিল মোটামুটি ব্যাপারটা। তথাপি হগ সাহেবের মার্কেটের দিকে যে দুয়েকবার গেছি, খুঁজে দেখেছি মার্কেটের উল্টো দিকের সেই সরু বিল্ডিং-পথ, যার আরেকটি ... ...
অনেকেরই জানা যে আন্দ্রেই তারকভস্কি (১৯৩২-১৯৮৬)-র প্রথম ছবি 'দা স্টিমরোলার এন্ড ভায়েলিন'(১৯৬১)। কিন্তু এর পূর্বেও তিনি যে দুটি ছবি পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এটা হয়ত ততটা সুবিদিত নয়। Gerasimov Institute of Cinematography বা VGIK নামে সুপ্রসিদ্ধ চলচ্চিত্র শিক্ষাকেন্দ্রের ছাত্র ছিলেন তারকভস্কি। বস্তুত প্রসিদ্ধ প্রতিষ্ঠান প্রতিভাবান মানুষ তৈরি করে না কি প্রতিভাবান মানুষদের জন্য প্রতিষ্ঠান প্রসিদ্ধি পায় এ বলা খুবই মুশকিল। উল্লেখ থাকুক তারকভস্কি ছাড়াও ... ...
সারা গা চেটে দিচ্ছে কেউ এরকম একটা কিছু দেখতে দেখতে অনিমেষ শুনতে পায় রুপা জোরে জোরে ধাক্কা দিচ্ছে, ‘অনি ওকে পাওয়া যাচ্ছে না, অনি’। ঘুম ভাঙার সময় ধাতস্থ হতে একটু সময় লাগে, অনি একটু উঠে রুপার দিকে ধীরে ধীরে তাকানোর চেষ্টা করে, রুপার মুখে মাস্ক পরা, ‘কি ব্যাপার?’। ‘আরে পনেরো মিনিট ধরে তোমায় ডাকছি, বাড়ির চারপাশটাও ঘোরা হয়ে গেছে কোথাও নেই’, রুপা বলে। অনি এতক্ষণে পুরো তাকিয়ে হাত দিয়ে চোখের পিচুটি যথাসাধ্য মুছে আধখোলা সদর দরজাটার দিকে তাকায়। খবরের কাগজটা পর্দার তলা দিয়ে দেখা যাচ্ছে, কাগজ দিতে তো না করা হয়েছে, কি আশ্চর্য! রুপা গজগজ করতে করতে পাশের ঘরে চলে ... ...
‘ধুইন’ ছবিটি বর্তমানে MUBI-তে দেখানো হচ্ছে - পঙ্কজ বিহারের দ্বারভাঙার ছেলে। ছোট একটি নাটকের দলে সে অভিনয় করে। ছবি শুরু হয় তাদের দলের একটি পথ-নাটিকা দিয়ে। অভিনয়ের জন্য সে প্রাত্যহিক অর্থ পায়। পঙ্কজের বাবা তেমন কিছু করেন না। সাংসারিক টানাপোড়েনের মধ্যেও পঙ্কজের স্বপ্ন মুম্বাইতে গিয়ে বড় অভিনেতা হওয়ার। মৈথিলী ভাষায় নির্মিত অচল মিশ্রর (Achal Mishra) ছবি 'ধুইন'-র (Dhuin) এই হল বিষয়বস্তু। 'ধুইন' পূর্ণ-দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্রও নয়, আবার ছোট ছবিও নয় ... ...
মানিব্যাগ প্যান্টের ব্যাক পকেটে রেখে বাঁ হাতে ফিট ব্যান্ডটা চড়িয়ে মোবাইলটা হাতে নিয়ে অনিমেষ দেখে মূলত অতনুর তাড়নাতে সাবসক্রাইব করা নতুন নিউজ সাইটটা থেকে দুটো ফিড এসেছে। ওই হুয়ের টেড্রোস গেব্রেইসাস, চায়নায় সংক্রমণের অবস্থা এই সব। কয়েকদিন আগে এই নিয়ে প্রচুর বাগবিতণ্ডা হয়ে গেছে অতনুর সাথে। মাও-এর চীন, গ্যাং অফ ফোর, দেং-এর রিফর্মড চীন, ঠাণ্ডা যুদ্ধ পরবর্তী পৃথিবীর অবস্থা থেকে শুরু করে আজকের ট্রেড-ওয়ার ইত্যাদি ইত্যাদি। হয়ত আনঅ্যাভয়েডেবেল তবুও মাথা ধরে গিয়েছিলো অনিমেষের। ফিডগুলো সরিয়ে মোবাইলটা সোজা পকেটে চালান করে দিয়ে অনিমেষ অফিসের ব্যাগটা পিঠে তুলে নেয়। রূপা খাবারের ব্যাগ ঢুকিয়ে দিয়েছে। জুতোয় পা গলায় , সোফায় রাখা জামাকাপড় গুলো ... ...
গতকাল জাঁ লুক গদারের 'কিং-লিয়ার'-এর কথা বলেছিলাম। এই মর্মে আরেকটি 'কিং-লিয়ার'এর কথা মনে পড়ে গেল! না বললে অন্যায় কিছু হবে না কিন্তু না বলে থাকতেও পারছি না। এই শতাব্দীর প্রথম দশকের মাঝামাঝিই হবে। উৎসব - 'কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব' ('কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব' পরে নাম হয়েছে মা-মাটি-মানুষের আমলে, তখনও কাস্তে-হাতুড়ি-তাঁরার যুগ)। বামুনকে যেমন পৈতে দিয়ে চেনা যায়, সিনে-আতেলদের তেমনি চেনা যেত সরকার প্রদত্ত ডেলিগেট কার্ড নামক মাদুলি দিয়ে! সে এক মহা ঝক্কির ব্যাপার। তিনদিন যেতে হত। ... ...
কি কান্ড, ঘুম থেকে উঠে জানতে পারি তিনি বেঁচে আছেন। অবশ্য মারা গেছেন এ খবরোতো আসেনি কখনও কানে, একথাও মনে এলো। এককালে যার ছবি তখনও পর্যন্ত দেখা না থাকলেও কৌলীন্য হারানোর ভয়ে বন্ধু মহলে 'হ্যাঁ দেখেছি' বলে বিজ্ঞের ঘাড় নাড়াটা ছিল বাধ্যতামূলক তাঁরও বয়স হয়ে গেল একানব্বই! হীরকখণ্ড থেকে ঠিকরে বেরোনো বহু-কৌণিক আলোই আসলে হীরে, হীরকখণ্ডটির কথা কে আর জানতে চায়, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন! প্রখ্যাত ফরাসী পরিচালক জাঁ লুক গদারের (৩ই ডিসেম্বর,১৯৩০-) চলচ্চিত্রও তাই!! ... ...
গত রাতে ঘুমোতে গিয়ে সোমেশ্বরের প্রথম মনে আসে, ‘পিকিং’ বলে এককালে পার্কস্ট্রিটে যেখানে রেস্তোরাঁটা ছিল তার সামনে দাড়িয়ে রয়েছে পরাগ। না, পার্কস্ট্রিটই কি? পিকিং-এর মতনই তো দেখতে দোকানটা, ঐ যে চারমাথার মোড়টা! ‘চল, কোথাও গিয়ে বসি, কথা আছে’, পরাগই বা এখানে এলো কোথা থেকে! তাহলে কি এটা অফিসের মোড়, ওয়েলিংটন স্কোয়ার! কবে যে পিকিং উঠে গেল টেরই পাওয়া গেল না, কি ছিল আর কি হল মানুষ শুধু সেটাই মনে রাখে, সরকারি নথির মত নয় ব্যাপারটা। ‘কোথায় যাবে! সামনের ঐ সেলুনটায় গেলে হয় না? চুল কাটতে হবে।‘ – মাথায় হাত বোলায় সোম। ... ...
টিকা না বলা কথার মৃত্যু হয় না / জারজ সময়ে মৃত্যুমেধ যজ্ঞের ঘোড়া, / দূর থেকে কাছে আসে শুধু! / আদ্যিকালের মানুষ জলদগম্ভীর আকাশের দিকে চেয়ে বসে থাকে, / অনেক জন্মের সাধ তাঁরও তো ছিল! / রুক্ষ মাঠে পাতা ট্রাম, / শেষ কামরায় শেষ রাতে প্রভূত কামনায় বিস্ফারিত চোখ শুধু কথা রাখে! ... ...